#এই_অবেলায়_তুমি
#পর্ব_২৭
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
লাল টকটকে বেনারসি শাড়ি সাথে কানে,গলায় গহনা, দুই হাত ভর্তি চুড়ি,মুখে ভাড়ি মেকআপ। নূর আর মাহি বসে আছে।
একটু আগে ওদের ঠিক এক রকম ভাবে সাজিয়ে গেছে পার্লারের মেয়েরা।
মাহিঃ এখনো রাগ কমে নি….
নূর চুপচাপ অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।
মাহিঃ এত রাগ কেনো করছিস রুদ্র ভাইয়া খুবি ভালো ছেলে।
নূর অগ্নি দৃষ্টিতে মাহির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ এত ভালো হলে নিজেই করে নিতি।’
মাহিঃ এক মনে কি দুই জন কে জায়গা দেওয়া যায় পাগলি।
নূরঃ এত দিন তো রুদ্র ভাইয়াকে বিয়ে করার জন্য পাগল ছিলো। হঠাৎ কাল ফায়াজ স্যারের প্রতি এত ভালোবাসা কোথায় থেকে আসলো।
মাহিঃ হঠাৎ কখন কার প্রতি ভালোবাসা জন্মায় কেউ বলতে পারে না।
নূরঃ তোদের এই ঝামেলায় আমাকে কেনো জরালি..?
[সকালে ঘুম থেকে উঠার পর থেকে একে একে সবাই বউ রেখে ওর কাছে আসছে। ও যখন জানতে চায় ওর কাছে কেনো বউয়ের জিনিস..?
তখন ওর বড় আম্মু ওকে সব খোলে বলে৷ একে একে সবাই ইমোশনাল ব্লেকমেইল শুরু করে। পরে বাধ্য হয়ে মাহির দিকে তাকিয়ে বিয়েতে রাজি হয়৷ ও চায় না ওর মতো ওর বোনটা ও একি কষ্ট পাক। ভালোবাসার মানুষটিকে হারানোর কষ্টটা যে খুবি বাজে।]
হঠাৎ বাহির থেকে একটা শব্দ আসলো বর এসেছে সাথে সাথে মাহির চোখ দিয়ে টপটপ জল পরলো।
নূর উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো, ‘ আপু তুই কান্না করছিস কেনো..?
মাহি মুচকি হেসে চোখের জল মুছে বললো,’ এটা যে সুখের কান্না। ঠিক হয়ে বস। এখনি নিতে আসবে।’
নূর ভাবনায় পরে গেলো। এটা কি আসলেই সুখের কান্না..? আপুকে দেখে তো এত দিন মনে হয় নি রুদ্র ভাইয়া কে ভালোবাসে না! সব সময় মনে হয়েছে আপু খুব খুশি আর নিজের বিয়ের সব কিছু আপু নিজে কিনেছে। ভাইয়ার বিয়ের পাঞ্জাবিটা ও আপু পছন্দ করে কিনেছে। কাল রাতেও আমি আপুর চোখে ভাইয়ার জন্য অন্য কিছু দেখেছি। রাতের মধ্যে কি হলো যে ফায়াজ স্যারকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেলো। ওফ্ফ আর কিছু ভাবতে পারছি না। সব কিছু কেমন যেনো এক জায়গায় এসে আবার ঘুরে যাচ্ছে।
দরজার ঠকঠক আওয়াজে ভাবনা থেকে বের হলো নূর।
আনিতা বেগম এসেছেন সাথে শুভ্রতা, আদিবা,রুহি,ইরিন।
আদিবাঃ নূর তোমার বর কিন্তু অনেক কিপটে। আমরা এত কিছু করলাম। এত কষ্ট করলাম কিন্তু আমাদের এভাবে নিরাশ করলো।
ইরিনঃ তবে যাই বলেন ভাবি মাহি আপুর বর তো চাওয়ার আগেই দিতে রেডি।আজ একদমি স্যার মনে হয়নি একদম পারফেক্ট জিজু মনে হয়েছে।
নূর রেগে বলে উঠলো,’ শুধু মাত্র তোমাদের জন্য আমি বড় বোনের বিয়েতে মজা করতে পারছি না। একটা মাত্র বোন ছিলো তাও একটু মজা করতে পারলাম না।’
শুভ্রতাঃ আহারে বেচারি, একদম মন খারাপ করো না। আজ বাদে কাল তো আবার আসবে। তখন না হয় তুমি বাকি পকেট খালি করো৷
ইরিনঃ অন্যের জামাইর পকেট খালি করার ধান্দা মাথা থেকে টুপ করে ঝেড়ে ফেল নূর।তোর জামাই তো একদম কিপটে, বউয়ের একটা মাত্র বান্ধবী ছিলাম। সব দোষ ওই কানা চশমা টার।
মাহিঃ এই ইরিন কানা চশমা কে..?
ইরিনঃ হিহিহি কেউ না আপু।
——
মিমঃ আমি এই সব মানবো না। একদমি মানবো না। কোনো বিয়ে হবে না। আমি আমার আপুকে এমন কিপটে ছেলের কাছে বিয়ে দিবো না।
রুদ্র অসহায়ের মতো নিজের একটা মাত্র আদরের ছোট বোনের দিকে তাকিয়ে আছে।
মিমঃ এভাবে তাকিয়ে কি বুঝাতে চাও..? তুমি ফকির।
রুদ্র উপর নিচ মাথা নেড়ে বুঝালো সে ফকির।
মিম রাগে গজগজ করে বললো, ‘ তাহলে চৌধুরী বাড়ির মেয়েকে বিয়ে করতে এসেছো কেনো..?
নীল বলে উঠলো,’ মিম তাহলে তোর ভাই কোন বাড়ির মেয়েকে বিয়ে করতে যাওয়া উচিৎ..?
মিমঃ তুই চুপ থাক!
নীল বুকে হাত দিয়ে দেখলো এখনো বেঁচে আছে কি না। এত বড় কথা। হাঁটুর সামান মেয়ে ওকে তুই বললো। আল্লাহ নীল কালার বিশ দাও খেয়ে উপরে চলে যাই। তারাতাড়ি আশেপাশে তাকালো কেউ দেখেছে কি না। পাশেই কয়েক টা মেয়ে মিটিমিটি হাসছে।
আবিরঃ মিম এভাবে কথা বলে না বুনোটা আমার যাও। নূর আর মাহিকে স্টেজের মধ্যে নিয়ে আসতে বলো।
মিমঃ একদম না শুধু মাহি আপু আসবে আর কেউ না। ফায়াজ জিজুর কাছ থেকে দশ হাজার নেওয়া শেষ আর নিজের ভা.. বলতেও রাগ হচ্ছে। এখনো একটা পয়সা দিলো না। আবার বলছে সে নাকি ফকির!
রুদ্রঃ ভাইয়ার পকেট তো খালি। সব টাকা নীলের কাছে।
মিমঃ বিয়ে তোমার আর টাকা নীল… নীলের বুক ধুকপুক করছে এই মেয়েকি আবার সবার সামনে ওর নাম নিবে। শেষ নীল আজ তোর মান সম্মান সব শেষ করে দিলো এই পিচ্চি মেয়ে।
নাহ নীলের কল্পনায় এক গ্লাস পানি ঢেলে মিম বললো,’ বিয়ে তোমার আর টাকা নীল ভাইয়ার কাছে। ওকে বিয়ে করে বউটাও নীল ভাইয়াকে দিয়ে দিও।বলেই রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চলে গেলো।
নীল অস্বস্তিতে আসতে করে কেটে পরলো। ছি! বড় ভাইয়ের বউ ও নিয়ে কি করবে??। এই মেয়ে আদর পেয়ে দিন দিন বাঁদর হচ্ছে। এর একটা ব্যাবস্থা করতে হবে। কিন্তু হরিণ কোথায়..?
আনিতা বেগম দুই মেয়ের সামনে গিয়ে চোখ দুটো জলে ভরে উঠলো। কত ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছেন মেয়ে দুটো কে৷ নূর তো চোখের সামনেই থাকবে কিন্তু মাহি৷ মায়ের মন হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো। ফায়াজের আম্মু নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসবে তো? আগলে রাখবে তো?। কাল ফায়াজের আম্মুর কথার ধরন উনার পছন্দ হয়নি। ফায়াজ ছেলেটা নিসন্দেহে ভালো কিন্তু ওর আম্মু!।
মাহি আর নূর স্টেজে বসে আছে।
রুদ্র বার বার নূরের দিকে তাকাচ্ছে।
মাহি রুদ্রের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে মনে মনে বলে উঠলো,’ মনের কতটা কাছে এসেছিলে তুমি।সেখানে দূরত্তের মাপটা দিতে পারিনি আমি। এতটাই ভালোবেসে ছিলাম আমি। যে ভালোবাসা আজকে পূর্ণতা না পেয়ে অপূর্ণতায় ভুগছি আমি।’
ফায়াজ মাহির দিকে তাকিয়ে আছে। ইসস একটু পরে এই মিষ্টি মেয়েটা সারা জীবনের জন্য ওর হয়ে যাবে। আর কোনো বাঁধা আসবে না। লাল টকটকে বেনারসি পরে মেয়েটা ওর ঘরটা আলোয় আলোয় ছড়িয়ে দিবে। আজ যেই চোখে কাউকে না পাওয়ার কষ্ট ফুটে আছে।হাজারো জল এসে ভিড় জমাচ্ছে।সেই চোখ একদিন ওকে পাওয়ার জন্য এমন তৃষ্ণার্থ হয়ে উঠবে। এই চোখে ও কখনো জল আসতে দিবে না। খুব যত্ন করে আগলে রাখবে এই মেয়েটিকে।
বিয়ে পড়ানো শুরু হয়েছে।
মাহিকে কবুল বলতে বললে সাথে সাথেই কবুল বলে দিয়েছে। নূরকে কবুল বলতে বলছে অনেকক্ষন হয়ে গেলো কিন্তু কিছুই বলছে না৷ শুয়ে মাহির দিকে তাকিয়ে আছে।
মাহি হাসার চেষ্টা করে বললো, ‘ বলে দে নূর।’
নূরঃ কবুল!
আলহামদুলিল্লাহ বিয়ের কাজ শেষ।
এখন বিদায় পালা,
আনিতা বেগম মাহিকে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না করলো। নূর ও বোনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। কিন্তু মাহি কাঁদেনি একটু ও কাঁদেনি। নূর নিজের বোনের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মাহি নূরকে ছেড়েই গাড়িতে উঠে গেলো। কিছুক্ষনের মধ্যে গাড়ি চলে গেলো সবার নজরের বাহিরে।
রাতের দশ-টা না বাজতে রুদ্র রুমে যাওয়ার জন্য হাসফাস করা শুরু করলো।
রুদ্রের দিকে তাকিয়ে আবির মুচকি মুচকি হাসছে। আহারে বেচারা বউয়ের কাছে যাওয়ার জন্য কত কিছুই না করছে। কিন্তু বন্ধুর দল ওকে উঠতেই দিচ্ছে না। আজ বিয়ের রাত আজ তো একটু দেরি করে রুমে যেতে হবে।
কিন্তু আবির কিছু বলতেও পারছে না। নূর নিজের ছোটো বোন। মেয়েটা নূর না হলে এতক্ষনে রুদ্রের অবস্থা নাজেহাল হয়ে যেতো।
যাক লাস্ট পর্যায়ে রুদ্র ছাড়া পেলো।
নিজের রুমের সামনে এসে বাঁধলো আরেক ঝামেলা।সব কাজিনরা রুদ্রের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
রুদ্রঃ কি চাই এখানে..?
শুভ্রতাঃ এত তারা কিসের দেবরজী।
রুদ্র দুঃখী দুঃখী মুখ করে বললো,’ ভাবি তুমি ও।’
শুভ্রতাঃ এত কথা শুনতে চাই না। আমাদের সবাইকে খুশি করো না হলে বউ পাবে না।
মিমঃ ভাই এবার কোনো চালাকি হবে না।
নীলঃ এই তুই এত পকপক করিস কেনো। চুপ থাক।
মিমঃ চামচামি কম করো নীল ভাইয়া।
ইরিন সহ বাকি সবাই হেঁসে উঠলো।
নীলঃ হরিণ তুমিও হাসছো।
ইরিনঃ এত কিপটামু করেন কেনো…? জিজু তো আর প্রতি দিন বিয়ে করবে না।
নীল আর কথা না বাড়িয়ে পাঁচ হাজার টাকা বাড়িয়ে দিলো। কিন্তু না ওরা দশ হাজারের কমে নিবে না। বাধ্য হয়ে দশ হাজার দিয়ে দিলো।
টাকা হাতে নিয়ে শুভ্রতা,আদিবা,মিম,রুহি সবাই মিটমিট করে হাসছে।
রুদ্রঃ ব্যাপার কি নীল আমার শালিকা একবার বলতেই দিয়ে দিলি।আর ওরা সারা দিন এত এত ঝামেলা করলো তাও দিলি না।
নীল আমতা আমতা করে বলে উঠলো, ‘ সারাদিন তো অনেক ঘুরালাম তাই ভাবলাম আর কতো দেওয়া যেহেতু লাগবে দিয়েই দেই।
সবাই এক সাথে বলে উঠলো, ” ওওহহহ আচ্ছা ”
ইরিন লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। কে বলেছিলো নীল কে বলতে। এখন সবাই নিশ্চয়ই উল্টো পাল্টা ভাবছে।
নীলঃ ভাই নতুন বউ রেখে বাইরে কি করো ভাই..?
সবাই টাকা পেয়ে খুশিতে গদোগদো হয়ে চলে গেছে।
রুদ্র রুমে ঢুকে দেখে রুমে কেউ নেই ,ব্যালকনিতে গিয়ে দেখে ওখানে ও নেই, ওয়াশরুমে দেখলো তাও নেই। তাহলে বউ গেলো কোথায়..? ওরা কি তাহলে আমাকে বোকা বানালো নাকি বউ নিজেই পালিয়েছ রুম থেকে …?
——
বউ নিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ফায়াজ।
ফায়াজের আম্মু রোকেয়া বেগম ছেলের বউকে সব নিয়ম মেনে ঘরে প্রবেশ করালেন। ড্রয়িং রুমে পা রাখতেই রোকেয়া বেগম শক্ত কন্ঠে বলে উঠলো,” দাঁড়াও নতুন বউ!…
চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।#এই_অবেলায়_তুমি
#পর্ব_২৮
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
নিস্তব্ধ আকাশ, দূর দূরান্তর থেকে কুকুরের আওয়াজ ভেসে আসছে। ঝিঁঝি পোকারা খেলায় মেতেছে যেনো, হালকা বাতাস বইছে। নিস্তব্ধ চারপাশ মাঝ রাতে ছাঁদের কিনার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে এক যুবক হাতে পুড়ে যাওয়া সিগারেট এর কিছু অংশ। আকাশের দিকে মুখ করে ধোঁয়া ছারলো।
আচ্ছা আকাশে তাকালে কি কষ্ট কমে..?
নিজের ভেতরের সত্তাটা উওর দিলো,’ মোটেও না, আকাশে তাকালে মনের কোনে লুকিয়ে থাকা কষ্ট গুলো বেরিয়ে আসে।’
আজ নিজের জীবনের হিসেব মিলাচ্ছে আদি।
কাল রাতে যখন শুনে ছিলো নূরের বিয়ে তাও রুদ্রের সাথে। মনে হয়ে ছিলো কেউ হয়তো ওর বুকে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে ছিলো। তাই তো সকাল না হতেই বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়ে ছিলো আর এখন বাসায় এসেছে। আর যাই হোক নূরকে রুদ্রের সাথে দেখার শক্তি ওর নেই। আচ্ছা আমি যখন রুহি কে বিয়ে করে ছিলাম। তুই কেনো এসে আটকালি না..? তোর কি একটু ও কষ্ট হয়নি..?
আদি অনেক বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে আর এই দেশে থাকবে না।দুই একদিনের মধ্যেই দেশ ছারবে ও আর কখনো এই দেশের মাটিতে পা রাখবে না। দেশ ছেড়ে সব থেকে প্রথম রুহি কে ডিভোর্স দিবে। তারপর আর কারো সাথে কোনো যোগাযোগ রাখবে না।ও চায় না ওর জন্য রুদ্র আর নূরের জীবনে আর কোনো বিপদ আসুক।
———
ফুলে ফুলে সাজানো একটা রুমে বসে আছে মাহি৷ খুব সুন্দর করে যত্ন করে রুমটা সাজানো হয়েছে। বিছানার মাঝ খানে খুব সুন্দর করে মাহির নাম লেখা।
মাহি কয়েক বার হামি দিচ্ছে অনেক রাত হয়েছে খুব ঘুম পাচ্ছে। কিন্তু শাশুড়ী আম্মু খুব করা ভাবে বলে দিয়েছে বিছানার মাঝ খানে মাথা নিচু করে বসে থাকতে। যতক্ষন না ফায়াজ রুমে আসে।
কিছু সময় আগের কথা,
মাহি যখন ড্রয়িং রুমে পা রাখে সাথে সাথে ফায়াজের আম্মু রোকেয়া বেগম বলে উঠলো, ‘ দাঁড়াও নতুন বউ! ’
এমন শক্ত কন্ঠে কথা শুনে মাহির পা এমনিতেই থেমে যায়।
ফায়াজ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওর আম্মুর দিকে।
রোকেয়া বেগমঃ আমি এক আহাম্মক পেলে বড় করেছি। পুরাই বাপের মতো হইছে।এখনো আমি সব বলে দিতে হবে।
ফায়াজ লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে ফেললো। ছি! ছি! ছি
সদ্য বিয়ে করা বউয়ের সামনে ওর আম্মু ওর মান সম্মান চান্দে উঠায় দিলো।
রোকেয়া বেগমঃ যা বউ নিয়ে আবার দরজার বাহিরে যা।
কথা না বাড়িয়ে ফায়াজ ঘরের বাহিরে যেতে নিলে রোকেয়া বেগম আবার ধমক দিয়ে বলে উঠলো,’ তোকে কি একা যেতে বলেছি..? বউয়ের হাত ধর।
ফায়াজ বুঝতে পারছে না ওর আম্মু এতো রেগে আছে কেনো। তাও মায়ের কথা মতো মাহির হাত ধরলো।
দরজার বাহিরে দাড়িয়ে আছে ফায়াজ আর মাহি।
রোকেয়া বেগম ওদের সামনে গিয়ে বললেন,” এবার বউকে কোলে নিয়ে ঘরে প্রবেশ কর”
সাথে সাথে মাহির শরীর মনে হয় বিদ্যুৎ ঝটকা খেলো।এত গুলো মানুষের সামনে কোলে নিবে মানে। এই মহিলার কি মাথায় সমস্যা আছে।
ফায়াজ হাসি হাসি মুখ করে মাহির দিকে তাকিয়ে কোলে তুলে নিলো।
রোকেয়া বেগমঃ এটা এই বংশের নিয়ম। নতুন বউ কে প্রথম ঘরে প্রবেশ করানোর সময় বর কোলে করে বাসায় নিয়ে ঢুকে।
অনেক মহিলা এসে ছিলো নতুন বউ দেখতে কিন্তু রোকেয়া বেগম বলে দিয়েছেন বউ দেখতে যেনো সকালে আসে। এমনিতেই আসতে আসতে রাত হয়ে গেছে। বউ এখন নিশ্চয়ই ক্লান্ত । বউ দেখার হলে যেনো কাল সকালে এসে দেখে যায়।
দরজা খোলার শব্দে ভাবনা থেকে বের হয় মাহি।পাক্কা তিন ঘন্টা এই এক ভাবে বসে থাকতে থাকতে কোমর ব্যথা হয়ে গেছে।
ফায়াজ রুমে এসে মাহিকে এভাবে বসে থাকতে দেখে অবাক হয়ে যায়। এই মেয়ে কি তিন ঘন্টা ধরে এভাবে বসে আছে না কি..!?
ফায়াজঃ মাহি তুমি এখনো ঘুমাও নি.? আর এভাবে বসে আছো কেনো? কাপড় চেঞ্জ করো নি কেনো?
মাহি রা*গে না পারছে কিছু বলতে। দাঁতে দাঁত চেপে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।মা বলবে একদম উঠবে না যতক্ষন না স্বামী এসে ঘোমটা না সরায়। আর ছেলে বলছে ঘুমাই নি কেনো?
ফায়াজঃ মাহি কি হয়েছে?
মাহি এক ঝটকায় ঘোমটা সরিয়ে ফায়াজের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
মাহিঃ এত তারাতারি এসেছেন কেনো.? আরেকটু দেরি করে রাতটা শেষ করে সকালেই আসতেন।
ফায়াজ বুঝতে পারছে না আজ সবাই কেনো ওর উপর রাগ ঝারছে। কখনো মা, প্রেম করেছি মাকে একবার ও জানাইনি, বিয়ে ঠিক করে তারপর মা কে আর জানানোর কি দরকার ছিলো। এই নিয়ে মায়ের অভিমান। এখনো মা ছেলের বউয়ের মুখ দেখেনি৷ যতক্ষন কথা বলেছে অন্য দিকে তাকিয়ে বলেছে। আর মাহি ঘোমটা বড় করে দিয়ে রেখেছে যার কারনে তাকালেও বউ দেখার কোনো সম্ভবনা নেই।
বন্ধুরা রাগ বিয়েতে কাউকে দাওয়াত দিলো না। একবার বললো ও না। এই নিয়ে হাজার অভিযোগ।
আর এদিকে বউ রাগ দেরি করে কেনো রুমে আসলো।
মাহিঃ একটা কিছু হবে এই ভাড়ি শাড়ি খুলে পড়ার জন্য।
ফায়াজঃ শাড়ি আছে হবে..?
———
” মুখের উপর পানি জাতীয় তরল কিছু পড়াতে নূর ভয়ে চিতবার দিয়ে উঠলো, ‘ আম্মুউউউউউউউ চোর চোর বলে সামনে তাকিয়ে দেখে রুদ্র হাতে গ্লাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
নূরের মনে হলো সে ভুল দেখছে চোখ কচলে আবার তাকালো। না সত্যি তো দাঁড়িয়ে আছে। আবার দরজার দিকে তাকালো এবার ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলো।
রুদ্রঃ কি হয়েছে কাঁদছো কেনো..?
নূরঃ আমার থেকে দূরে থাকুন দূরে দূরে একদম দূরে।
রুদ্র খেয়াল করে দেখলো নূর কাঁপছে কিন্তু কেনো?? ও তো কিছুই করেনি।
নূর দরজার দিকে ইশারা করে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো দরজা বন্ধ আপনি রুমে আসলেন কিভাবে?
রুদ্র এবার বুঝলো নূরের কাঁপা কাঁপির কারন।
রুদ্রঃ বারান্দা দিয়ে এসেছি। আমার রুম থেকে পাইপ দিয়ে তোমার রুমে আসা যায়।
নূর,’ বেটা তো দেখি আমার টেকনিক কাজে লাগাইছে,মনে মনে…’
——
মাহি ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হলো। হলুদ শাড়ি পড়েছে। কানে,গলায়,হাতে কিছুই নেই সব খোলে ফেলেছে। মুখেও কোনো মেক-আপ নেই। এই সাধারনের মধ্যে মাহি কে অসাধারণ লাগছে ফায়াজের কাছে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিজের বউয়ের দিকে।
মাহি ফায়াজের দিকে তাকিয়ে অস্বস্তিতে অন্য দিকে ফিরে গেলো।
ফায়াজ আসতে আসতে মাহির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
মাহির বুক ধুকপুক করছে হঠাৎ মনে পড়ে গেলো কলেজের এক বান্ধবীর কথা। তখন মাহি সবে ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে উঠে ছিলো। তখন ওর একটা বান্ধবীর হঠাৎ বিয়ে হয়ে যাই।ওর নাম লিয়া ছিলো । প্রায় এক মাস পর ওই বান্ধবী কলেজ আসে। সবাই ওকে ঘিরে ধরলো। ছেলে কেমন? কি করে? বাসর রাতে কি হয়েছিল? সব যখন জিজ্ঞাসা করছিলো তখন লিয়া ওর বাসর রাতের গল্প বলতে শুরু করলো,
সবি ঠিক ছিলো লিয়া যখন ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হয়েছিল তখন ওর বর মুগ্ধ হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলো। তারপর আসতে আসতে ওর সামনে এসে না! না! না ও আর কিছু শুনেনি শুনতে চায় ও না। ছি! মানুষ কিভাবে নিজের বাসর রাতের মতো জঘন্য কথা অন্যকাছে বলতে পারে মাহির তো ওই কথা গুলো মনে পড়তেই লজ্জায় ডুকরে উঠছে।আচ্ছা ফায়াজ স্যার ও কি….
আর কিছু ভাবনার আগেই কপালে টুকা পড়লো। ওফ্ফ বলে কপালে হাত দিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে ফায়াজ মিটমিট হাসতেছে।
মাহি জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে তাকালো হাসছে কেনো…?
ফায়াজঃ তুমি ওয়াশরুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে এমন লজ্জায় লাল নীল হচ্ছো কেনো??
মাহি ফায়াজের কথা শুনে আরো লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলো। ইইসস এই লোক কি তাহলে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো.. আবার মাহির ভাবনার মধ্যে ফায়াজ বলে উঠলো,’ সরে দাঁড়াও আমি ফ্রেন্ড হবো৷ দুই রাকা’ত নামাজ পড়তে হবে।’
মাহিঃ আমি ওযু করে এসেছি। আপনি জান বলে ওয়াশরুমের দরজা ছেড়ে দাঁড়ালো।
———
রুদ্র সামনে এগোচ্ছে আর নূর ভয়ে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।
নূর অসহায় চোখে তাকালো রুদ্রের দিকে। এদিক ওদিকে তাকিয়ে দেখলো পালানোর জায়গা আছে কি না।কিন্তু না পালানোর কোনো রাস্তা নাই। সামনে রুদ্র পিছনে দেওয়াল।
রুদ্র নূরের গাল ধরে টান দিয়ে বললো,’ অনেক তো পালালে এবার কোথায় যাবে..? বাসর রাতে পালানোর শাস্তি কি হতে পারে বলো তো..??
নূর ভয়ে ভয়ে বললো,’ ভাইয়া আর কখনো এমন হবে না।’
রুদ্রঃ শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে। আর বউয়ের মুখে ভাইয়া ডাক খুব তেতো লাগে।কানে ধরে উঠ বস করো।
নূর অবাক হয়ে বললো,’ আমার এক ফ্রেন্ডের বিয়ে হয়ে ছিলো ওর বর ওকে প্রথম রাতে একটা সুন্দর গোল্ডেন আংটি গিফট করে ছিলো আর আপনি কেমন বর? প্রথম রাতেই বউকে গিফট দেওয়া তো ধুর কানে ধরে উঠ বস করতে বলছেন!
রুদ্র ও অবাক হওয়ার মতো মুখ করে বললো,’ তুমি কেমন বউ বিয়ের রাতেই পালিয়ে চলে আসছো।’
নূরঃ আমি পালিয়েছি কোথায়। এক বাড়ি পাশাপাশি ঘর। এটাকে পালানো বলে না।
রুদ্রঃ তাহলে কি বলে? আর দরজায় তো সবাই দাঁড়িয়ে ছিলো। এই রুমে আসলে কিভাবে??..
নূরঃ হিহিহি পাইপ দিয়ে।
রুদ্রঃ কীইইইই!!!
নূরঃ হা বন্ধ করুন মাছি ঢুকবে।
রুদ্রঃ কিন্তু এই ভাড়ি শাড়ি নিয়ে কিভাবে আসলে।
নূরঃ শাড়ি নিয়ে কেনো আসবো। শাড়ি তো আপনার রুমেই আছে।
রুদ্রঃ শাড়ি আমার রুমে আর তুমি এখানে!
নূরঃ শাড়ি নিয়ে হাঁটতেই পারছি লাম না। আর পাইপ দিয়ে কিভাবে আসবো তাই শাড়ি খোলে চলে এসেছি।
——
আদি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে হঠাৎ মনে হলো পাশে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।
আদি ফিরে তাকালো না। সে জানে মানুষটি কে।
~এত রাতে রুমে না গিয়ে এখানে কি করছো..??
…..
~ কি হলো কথা বলছো না কেনো??
আদিঃ না ঘুমিয়ে এখনো জেগে আছো কেনো??
~ঘুম আসছে না। তোমার কি মন খারাপ??
আদিঃ যেনে কি করবে?
~ নূরের জন্য মন খারাপ? এখনো ভালোবাসো ওকে?
আদিঃ যেনে কি করবে? ফিরিয়ে দিতে পারবে ওকে?
~ আমাকে কি একটু ভালোবাসা যায় না আদি।
আদিঃ ঘুমাও গিয়ে অনেক রাত হয়েছে।
~তুমি ঘুমাবে না?..
আদিঃ আমাকে নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না।
~ আমি তোমার অর্ধাঙ্গিনী আমি ভাববো না তো কে ভাববে।
আদিঃ খুব জলদি আমি তোমাকে মুক্তি দিচ্ছি।
~কিসের মুক্তির কথা বলছো? আমি তো কোনো মুক্তি চাই না!
আদিঃ আমি কোনো প্রতারকের সাথে থাকতে চাই না।
~শুধু কি আমি প্রতারণা করেছি। তুমি করনি?
আদিঃ তাই তো প্রতি নিয়তো এর মাশুল দিতে হচ্ছে।
রুহি আর কিছু বললো না। এই নিস্তব্ধ রাতে আকাশের দিকে তাকালো। চোখের কোনে পানিরা খেলা করছে আজ।
———
ইরিন ঘুমিয়ে আছে বার বার মোবাইল রিং হচ্ছে। বিরক্ত হয়ে কল রিসিভ করে কানে দিলো।
~হ্যালো কে….
ওপর পাশ থেকে কেউ বলে উঠলো, ‘ আজ তোমাকে আমার স্বপ্নে ভেসে বেড়ানো মায়াবতীর থেকেও বেশি মায়াবী সুন্দরী লেগেছিল। আমি চোখ ফিরাতে গিয়েও বার বার ব্যর্থ হয়েছি। তোমার মধ্যে যাদু করার তাবিজ আছে না হলে আমি কেনো এভাবে তোমার মায়ায় আটকে গেছি’ কথাটা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই কলটা কেটে গেলো।
ইরিনের সব ঘুম উড়ে গেলো। কে ছিলো এটা!? এই প্রথম এই আগুন্তকঃ ফোনে কথা বলেছে। প্রতি মাঝ রাতে কলটা আসতো কিন্তু নিঃশ্বাস এর শব্দ বাদে আর কিছুই শুনা যেতো না। ইরিন তো এটাও জানতো না। এটা ছেলে না কি মেয়ে। কিন্তু আজ কথা বলেছে ঘুমের জন্য ঠিক কন্ঠটা বুঝতে পারেনি।
ইরিন মোবাইল হাতে নিয়ে বার কয়েক আবার কল দিলো কিন্তু মোবাইল বন্ধ দেখাচ্ছে। কথাগুলো বার বার কানে বাজতেছে। ইসসস মারাত্মক কন্ঠ ছিলো। বুকের ভেতর ঝড় তুলে দিয়েছে। বিছানা থেকে নেমে বারান্দায় গেলো। তার মানে এই লোক আমার আশেপাশেই আছে। এটা ভাবতেই ভালো লাগায় ছেয়ে গেলো মন। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলো কয়েকটি তাঁরা মিটিমিটি ঝলমল করছে। বাগানের দিকে তাকিয়ে দেখলো ফুলগুলো হালকা বাতাসে দুলছে। মনের ঘরে কি তাহলে বসন্ত এসে গেছে!…
———
নূরের পা ব্যথা হয়ে গেছে উঠ বস করতে করতে। দাঁড়িয়ে হাঁপাচ্ছে। রুদ্র বিছানায় আয়েশ করে বসে ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে।
নূরঃ রা*গে বিরবির করে নিজেই নিজেকে বলছে আর পালা*বি বাসর ঘর থেকে। শখ মিটেছে পালানোর!।
রুদ্রঃ বিরবির না করে এদিকে আসো।
নূর লক্ষি মেয়ের মতো সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
রুদ্র নেমে নূরের সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো।
নূর মনে মনে ভাবছে এই ছেলেকি এখন প্রপোজ করবে না কি?
নূরের ভাবনায় এক গ্লাস জল ঢেলে দিয়ে রুদ্র ওর পায়ে সুন্দর একটা পায়েল পড়িয়ে দিলো।
রুদ্রঃ আম্মু বলে ছিলো বউকে কিছু উপহার দিতে। কিন্তু আমার কাছে তো দেওয়ার মতো কিছু নেই। তাই এই পায়েলটা দিলাম।
নূরঃ খুব সুন্দর ভাইয়া।
রুদ্রঃ পছন্দ হয়েছে?
নূরঃ হুম।
———
মাহি নামাজ পড়ে হালকা খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু ঘুম নেই ফায়াজের চোখে। গভীর ভাবে তাকিয়ে আছে মাহির দিকে। এই মেয়েকে একবার দেখার জন্য ঘামানোর আগে গিয়ে রাস্তার পাশে কত দাঁড়িয়ে থেকেছে শুধু এক নজর দেখার জন্য। আজ সেই মেয়েটা সারা জীবনের জন্য ওর হয়ে গেছে। হাতের পায়েলটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো, ‘ খুব শখ করে আমি আর রুদ্র দুটো পায়েল কিনেছি একি রকম। কিন্তু তুমি জেগে থাকতে পড়িয়ে দেওয়ার সাহস হয় নি। এখন তো ঘুমিয়ে আছো।বলেই পায়েল টা পড়িয়ে দিলো মাহির পায়ে।মাহির দিকে তাকিয়ে আছে আজ রাতে আর সে ঘুমাবে না তার প্রেয়সীকে দেখেই কাটিয়ে দিবে।
চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।#এই_অবেলায়_তুমি
#পর্ব_২৯
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
খুব সকালে মাহির ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ খুলেই সামনে ফায়াজের মুখটা দেখে চমকে উঠলো। আসতে আসতে সব চোখের সামনে ভেসে উঠলো। শুয়া থেকে উঠে বসতে নিলে চোখ আটকে যায় ফায়াজের এলোমেলো চুলে। চুলগুলো কেমন এলোমেলো হয়ে আছে। মুখটা কেমন ফেঁকাসে হয়ে আছে। মনে হয় রাতে ঘুমাতে পারেনি তাই এখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে।
হঠাৎ রুদ্রের মুখটা ভেসে উঠলো। বুকের ভেতর ঝড় তুফান শুরু হয়ে গেলো। চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসলো কোনো রকম শুস্ক একটা ঢুক গিলে মাহি বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দিতে লাগলো। তাও যেনো চোখ বাঁধ মানছে না। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে রুমটা ভালো করে চোখ বোলালো। রুমের সাথেই খুব সুন্দর একটা ব্যালকনি মাহি গুটিগুটি পায়ে ব্যালকনির সামনে গিয়ে ধারালো। ব্যালনিতে খুব সুন্দর কয়েক ধরনের ফুলের গাছ। গাছে বিভিন্ন ধরনের ফুল ফুটে আছে। মাহি ফুল বেশি একটা পছন্দ করে না। তবে নূর খুব পছন্দ করে। এখন যদি এই ব্যালকনিটা ওর চোখে পড়তো খুশিতে পাগল প্রায় হয়ে যেতো।
মাহি আকাশের দিকে তাকালো। আকাশের কালো চাদরটা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে। পূর্ব আকাশে সোনালী সূর্য আগমনের জন্য অপেক্ষা করছে। রাস্তার দিকে দৃষ্টি দিয়ে দেখলো এক দুইটা গাড়ি আসছে আবার অন্য গাড়ি চলে যাচ্ছে। একদম নির্জন-শান্ত কোলাহলমুক্ত হয়ে আছে চারপাশ। সকালের হালকা মিষ্টি বাতাস এসে অশান্ত মনকে শান্ত করে দিয়ে যাচ্ছে।
মাহি রুমে এসে ওযু করে নামাজে দাঁড়িয়ে গেলো। ফায়াজ এখনো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।
———
বুকের উপর ভাড়ি কিছু অনুভব হতেই রুদ্রের ঘুম ভেঙে যায়। আর মুর ভেঙে ভ্রু কুঁচকে নিজের বুকের দিকে তাকালো সামনে এটা কি!!
ভালো করে তাকিয়ে দেখে “পা” সাদা ধবধবে ফর্সা এক পা। প্লাজু অনেকটা উপরে উঠে আছে।
রুদ্র উঠে বসলো। নিজের শান্ত দৃষ্টি বিছানার মধ্যে ফেললো। সাথে সাথে চোখ ছানাপানা। কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।
নূরের মাথা রুদ্রের পায়ের কাছে। এক হাত খাট থেকে নিচের দিকে ঝুলে আছে। এক পা রুদ্রের বুকের উপর ছিলো আরেক পা বালিশের মধ্যে। চুল এলোমেলো, গায়ের কাপড়ের ঠিক নেই।রুদ্র হা করে তাকিয়ে আছে। এত বড় মেয়ে এভাবে ঘুমায়! পাঁচ বছরের বাচ্চাগুলো ও খুব পরিপাটি হয়ে ঘুমায়, ঘুম থেকে উঠে। আর সে তো কলেজে পড়া মেয়ে।
রুদ্র নিজের হাতটা নূরের মুখের দিকে এগিয়ে নিলো।ধুকপুক ধুকপুক করে বুকের সেই পরিচিত কাঁপুনি ক্রমশ বেড়েই চলছে।চুলগুলো মুখ থেকে সরাতেই খুবই অস্বাভাবিক ভাবে হার্ট বিট করছে।নূরের ঘুমন্ত মুখটা খুবই মায়াবী লাগছে। রুদ্র আসতে আসতে নূরের মুখের উপর ঝুঁকে আছে। নূরের কপালে গভীর চুম্বন একে দিয়ে বিছানা ছেড়ে নেমে ওয়াশরুমে চলে গেলো রুদ্র।
———
শাড়ি পরতে গিয়ে বার বার রেগে যাচ্ছে মাহি।শাড়িটার কুঁচি তুলছে কিন্তু কুঁচি ঠিক করে উঠছে না। কুঁচিটা ধরার জন্য আরেক জন দরকার। রেগেমেগে ফায়াজের দিকে তাকালো। এই লোক কি সারা রাত ঘুমায়নি৷ চো*র পাহাড়া দিয়েছে৷ পরে পরে না ঘুমিয়ে ওকে তো একটু সাহায্য করতে পারে। কখন জানি আবার কেউ এসে দরজায় কড়া নাড়া শুরু করে। মন তো চাচ্ছে এক জগ পানি নিয়ে উপরে ঢেলে দিতে।
আবার চেষ্টা করলো একটা একটা করে কুঁচি তুললো এখন নিচে কুঁচি গুলোকে সুন্দর করে বাজ করে দিলেই হয়ে যেতো।ওর ভাবনার মাঝেই কেউ হাঁটু গেড়ে বসে কুঁচিতে হাত দিলো।
মাহির শ্বাস যেনো আটকে আসছে ওর পায়ের কাছে ফায়াজ হাঁটু গেড়ে বসে আছে।
ফায়াজঃ নিজের সমস্যা মুখ ফোটে বলতে হয়। হেল্প লাগলে চেয়ে নিতে হয়। সবাই আমার মতো দয়াবান না যে নিজ থেকে এসে করে দিবে।ফায়াজের কথা শেষ হতেই দরজায় ঠকঠক আওয়াজ তুলে কেউ ডেকে উঠলো।
ফায়াজ দাঁড়িয়ে মাহিকে ভালো করে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত এক নজর দেখে গিয়ে দরজা খোলে দিলো।
রুমের দরজা খোলতেই কেউ বলে উঠলো,’ ভাই সত্যি সত্যিই দরজা খোলে দিলে। আমি তো ভেবে রেখে ছিলাম মনে হয় এক সপ্তাহ ও এই রুমের দরজা খোলবে না। তুমি আমার ভাই হয়ে এতো নিরামিষ। আমি তো দুি সপ্তাহ ও দরজা খুলতে দিবো না আমার জামাই কে। বলেই দাঁত কেলিয়ে হাসা শুরু করলো।
ফায়াজ বিরবির করে বললো,’ এই বেয়াদব মেয়ে আর ভালো হলো না।’
~কিছু বললে ভাই। আমি কি সিরিয়াস টাইমে চলে আসছি। ইসস আরেকটু পড়ে আসা দরকার ছিলো তোমাদের…
ফায়াজঃ ফাইজা তুই কি এখান থেকে যাবি নাকি আমার হাতের কয়েকটা খাবি..?
মেয়েটা ফায়াজকে আর কিছু না বলে সাইড কাটিয়ে রুমে ঢুকে গেলো। মাহির সামনে গিয়ে ঘুরে ঘুরে মাহিকে দেখা শুরু করলো।
ফাইজাঃ ওফ্ফ কি হট ভাবি! আমি কেনো ছেলে হলাম না! মেয়ে হয়েও ইয়া বড় ক্রাশ খাইছি তোমার উপর। ছেলে হইলে নির্ঘাত ভাই কিছু করার আগে আমি তোমাকে নিয়ে পালাই তাম।
মাহি ড্যাবড্যাব করে সামনের মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে। চিনা নেই জানা নেই মেয়েটা এইগুলো কি বলছে।
মেয়েটা আবার বলা শুরু করলো,’ আমি হলাম তোমার এক মাত্র ননদী ফাইজা।বাকি পরিচয় পরে বলবো আগে চলো মামী মা তোমাকে নিয়ে নিচে যেতে বলেছে।
মাহি ফায়াজের দিকে তাকালো। ফায়াজ চোখের ইশারায় বললো ওর সাথে যেতে।বলেই ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।
ফাইজা মাহির বেজা চুলের দিকে ইশারা করে বললো,’ ভাবি রাতে বুঝি ভালো ঘুম হয়নি!..বলেই মিটিমিটি হাসা শুরু করলো।
মাহি প্রথমে বুঝতে পারলো না।ফাইজার দৃষ্টি খেয়াল করে নিজের দিকে তাকিয়ে বুজলো এই বজ্জাত মেয়ে ওর বেজা চুলের দিকে ইশারা করে হাসছে।মাহি লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
ফাইজাঃ ওফ্ফ ভাবি লজ্জা পেলে না তোমাকে মারাত্মক সুন্দরী লাগে। এখন লজ্জায় লাল নীল না হয়ে নিচে চলো। পড়ে দেখা যাবে আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবো না। দু চারটা পাপ্পি তোমার গালে পড়ে যাবে।
মাহি ফিসফিসে বললো,’ তুমি যা ভাবছো তেমন কিছু না। ‘
মাহির কথা শুনে ফাইজা খিলখিল করে হেসে বলে উঠলো,’ তাহলে কেমন কিছু বলো শুনি..?
বাড়িতে আজ বড় করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বাড়ির সামনে রান্নার আয়োজন চলছে। মহিলারা রান্নার সব কিছু এগিয়ে দিচ্ছে।
ফাইজা হাটছে আর মাহিকে বলছে,’ জানো ভাবি বড় মামীর খুব শখ ছিলো ফায়াজ ভাইয়ার বিয়েতে অনেক বড় আয়োজন করবে। কিন্তু ভাই তো মামীর আশায় জল ঢেলে দিলো মামী প্রথম খুব মন খারাপ করে ছিলো। পরে মামা বুঝালো বিয়ের পরের দিন না হয় আমরা অনুষ্ঠান করবো। তারপর মামী একটু শান্ত হয়ে ছিলো। আজকে মামী অনেক মানুষ দাওয়াত করেছে।
মাহির মনটা খারাপ হয়ে গেলো। ওর জন্য ফায়াজ স্যারের আম্মু কষ্ট পেয়েছে এটা ভাবতেই বিষন্নতা ঘিরে ধরলো ওকে।
মাহিঃ তুমি কি ফায়াজ স্যারের আপন বোন..?
ফাইজার মুখটা ইয়া বড় করে বললো,’ এটা কি বলো ভাবি তুমি এটাও জানোনা ফায়াজ ভাইয়ার কোনো ভাই বোন নেই। তোমরা না ভালোবেসে বিয়ে করেছো!? আর ভাইয়া বুঝি তোমার স্যার ছিলো..?
মাহি ফাইজার কথা শুনে ঘাবড়ে গেলো।
“ওই ফাইজা তরে না বলছি নতুন বউকে নিয়ে আসতি।”
ফাইজা আর মাহি পিছন ফিরে তাকাতেই রোকেয়া বেগম হা করে সামনে তাকিয়ে আছে।
মুখ থেকে নিজের অজান্তেই বেরিয়ে আসলো “মাশাল্লাহ ”
————
সকালের নির্মল পরিবেশটা সূর্যের তীব্রতায় দুপুরের হয়ে উঠলো। নূর আর মুর ভেঙে ঘুম থেকে উঠে। ফ্রেশ হয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মাথায় হাত। অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকার কারনে ঘুম ভাঙতে এতো দেরি। তারাতারি রুদ্রের রুম থেকে বের হয়ে নিচে নামলো।
নূরকে দেখে আনিতা বেগম রেগে ওর সামনো এসে দাঁড়ালো।
নূরঃ কি হয়েছে আম্মু..?
আনিতা বেগমঃ এই গুলো কি পড়েছো.?
নূরঃ কেনো দেখতে পাচ্ছো না।
আনিতা বেগমঃ শাড়ি কোথায়..? আর জিন্স,টপস,গলায় ওড়না পেঁচানো এইগুলো কি। বিয়ের পরের দিন যে শাড়ি পড়তে হয় সেটাও যানো না।
নূর মাথা নিচু করে আবার উপরে চলে গেলো। কিছুতেই ও শাড়ি পড়বে না। দরকার হলে সারা দিন রুম থেকে বের হবে না।
———
রোকেয়া বেগম ফাইজার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই ফাইজা বলে উঠলো,’ মামী তোমার ছেলের বউ এনে দিয়েছি। এবার আমার টা আমাকে দাও।’
রোকেয়া বেগমঃ রান্না ঘরে আছে নিয়ে নে।
ফাইজা এক দৌড়ে রান্না ঘরের দিকে চলে গেলো।
রোকেয়া বেগম আবার মাহির দিকে তাকালো। রানী গোলাপি শাড়ি, সাথে দুই হাত ভর্তি চুড়ি,উজ্জ্বল ফর্সা গোলগাল মায়াবী চেহারা,টানাটানা চোখ। দেখতে ভীষণ মিষ্টি লাগছে সামনের মেয়েটিকে। উনার মন খুশিতে ভড়ে উঠলো। কিন্তু মুখে তা বুঝালো না।
রোকেয়া বেগমঃ ফায়াজ ঘুম থেকে উঠেছে..?
মাহি ভয়ে মাথা নিচু করে রেখেছে। আসতে করে বললো,’ জ্বি আম্মু।’
খুশিতে গদোগদো হয়ে উঠলো রোকেয়া বেগমের মন। উনার মেয়ে নেই ছেলের বউ আম্মু ডেকেছে সেই খুশিতে চোখ চিকচিক করে উঠলো।
রোকেয়া বেগমঃ রুমে যাও। আর একটু পর তোমার বাপের বাড়ি থেকে মানুষ আসবে।
———
নীল,মিম,নূর,শুভ্রতা,আদিবা,রেডি হয়ে নিলো মাহির শশুর বাড়ি যাওয়ার জন্য।
রুহির কি হয়েছে কেউ যানে না। কারো সাথে কথা বলছে না দরজা বন্ধ করে বসে আছে।
আদি আজ কয়েক দিন ধরে ঠিক মতো বাসায় আসে না।
জিসান, আবির,রুদ্র বলেছে সময় করে ওরা একদম মাহির শশুর বাড়ি চলে যাবে।
নূর শাড়ি পড়েছে আজ ও কালো শাড়ি, কালো চুড়ি, হালকা সাজ চুলগুলো ছেড়ে দিয়েছে খুব সুন্দর লাগছে। একদম কালোর দিয়ে সাদা শরীরটাকে সাজিয়ে নিয়েছে।
সবাই বেড়িয়ে পড়লো মাহির শশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে।
——
মাহির শশুর বাড়ির ড্রয়িং রুমে বসে আছে সবাই কিছুক্ষন আগে এসেছে ওরা।
নীলঃ নূরের বাচ্চা এমন শরীরের লগে চিপকায় আছিস কা.. দূরে দূরে থাক।
নূরঃ আমার ঠেকা পরছে তোর সাথে চিপকায় থাকতে। বেশি কথা না বলে চুপচাপ বসে থাক।
নীলঃ তুই আমার থেকে দূরে গিয়ে বস। সবাই কেমন করে যেনো তাকায় আছে।
নূর রেগে নীলের পাশ থেকে উঠে মিম কে নীলের সাথে আর নিজে মিম এর জায়গায় বসলো।
নীলঃ এক ডাইনী গেছে আরেক পেত্নী আইসা বসছে। তোদের জন্য কি আর জায়গা নাই বার বার আমার পাশে কী..!?
চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।