এই অবেলায় তুমি পর্ব -৩৬+৩৭+৩৮

#এই_অবেলায়_তুমি
#পর্ব_৩৬
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

সময় আর স্রোত কারো জন্য থেমে থাকে না।
আজ একমাস হলো আদি না কারো কাছে ফোন দিয়েছে আর না বাড়িতে এসেছে।
রুহিকে দেখলে এখন কেউ ভালো করে চিনবে না। কেমন যেনো নিশ্চুপ হয়ে গেছে। দরকার না পরলে বাড়তি একটা কথাও বলে না চোখের নিচে কালো কালি পরে গেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে বাসার কাজে হাত লাগায় যতটুকু পারে করার চেষ্টা করে। আবার কলেজ যাওয়া শুরু করেছে। পড়াশোনা ছাড়া সামনে ওর ভবিষ্যত অন্ধকার সে দেখতে পাচ্ছে। শুধু নূরের সাথে সম্পর্ক এখনো ঠিক হয়নি। সে এখনো নূরকে একটু ও সয্য করতে পারে না। তবে সেটা বুঝতে দেয় না কাউকে নিজের মনের মধ্যে লুকিয়ে রাখে নিজের রাগ,আর নূরের প্রতি এক আকাশ সমান ঘৃণা। আজ ওর জীবনের এই পরিনতির জন্য সে নূর কে দায়ী করছে।

নীল বাসায় এসেই ওর মেঝো মামীর সাথে দেখা করে। উপরে নূরের রুমের দিকে গেলো বাইকের চাবি ঘোরাতে ঘোরাতে সিঁড়ি দিয়ে উঠে নূরের রুমের সামনে গিয়ে দরজায় টুকা দিলো।
নূর দরজার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললো,’ বা বাহ্ অনেক ভদ্র হয়ে গেছিস দেখছি। বড় ভাইয়ের বউ মানে ভাবির দরজায় যে নক করে ঢুকতে হয় এত দিনে এসে শিখলি। যাক তোর পড়াশোনা এত দিনে সার্থক হলো।

নীল রুমে ঢুকেই মুখ ভেংচি কেটে বললো,’দেখ তোকে আমি জীবনও ভাবি বলতে পারবো না৷ আর রইলো ভাবি বলে নক করা একদমি না। আমি তো নক করেছি ছোটো বোনের রোমাঞ্চ তো আর বড় ভাই হয়ে সব সময় দেখতে পারি না। তোরা যেই ভাবে যেখানে সেখানে রোমাঞ্চ শুরু করছোস তোদের না হয় লজ্জা নেই কিন্তু আমার তো লজ্জা প্রচুর তাই নক করে ঢুকলাম।

নূরঃ নীলের বাচ্চা আমার সামনে থেকে সর। আর আমাকে সম্মান দিয়ে কথা বলবি। আপনি করে বলবি, ভাবি বলে ডাকবি…লজ্জাবতী গাছ হতে আসছে ইসস দরলেই যেনো লজ্জায় মিয়িয়ে যাচ্ছে।

নীলঃ ইসস্ রে তোরে দেখলে পুরাই শাঁকচুন্নিদের মতো লাগে। আর যাই বলিস ভাবি এত সুন্দর ডাকটা তোর সাথে যায় না। আর আমি এখনো বিয়ে করি নাই বাচ্চা পাইলি কই??
নূরঃ তোর থেকে সুন্দর আছি…
নীলঃ হিহিহি তাই তো। আয়নার মধ্যে দেখ।
নূর সত্যি সত্যি আয়নার সামনে গিয়ে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা শুরু করলো।
নূরের অবস্থা দেখে নীল হাসতে হাসতে পেটে হাত দিয়ে গিয়ে খাটের মধ্যে বসলো।

নূরঃ ব*দ*মা*শ ছেলে।

নীলঃ আচ্ছা সব বাদ এখানে আয় তোর জন্য গিফট নিয়ে এসেছি।
নূর ভ্রু কুঁচকে তাকালো। যে ছেলের কাছ থেকে এক কানাকড়ি ও নেওয়া যায় না। সে না-কি ওর জন্য গিফট এনেছে ভাবা যায়।
নীলঃ কি হলো আয়।
নূর সামনে গিয়ে খুশিতে আগের ঝগড়াঝাটি ভুলে হাত বাড়িয়ে দিলো।
নীল ওর হাতে মধ্যে টিকটিকি ছেড়ে দিলো।
নূরের চিৎকারে বাসার সবাই ওর দরজার সামনে।
নূর হাত জারছে আর এখান থেকে লাফ দিয়ে ওখানে যাচ্ছে আর চিৎকার করে বলছে এটা সরানোর জন্য।

নূরের অবস্থা দেখে নীল হাসতে হাসতে খাটে ঘরাঘরি খাচ্ছে।
টিকটিকি দেখে ভয়ে আদিবা সামনে এগুচ্ছে না। তবে নীলকে বলছে এটা ওর কাছ থেকে সরানোর জন্য। বাসার বাকি সবাই রাবেয়া আন্টির বাসায় গেছে। রুহি নিজেও টিকটিকি আরশোলা দেখলে ভয় পায়।

নীল উঠে এসে ওর সামনে থেকে টিকটিকি হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো।

নীলঃ আরে থাম এটা রবার্টের টিকটিকি।

তবুও নূর ভয়ে বললো,’ নীল ভাই আমার, দেবর আমার এটা বাহিরে ফেলেদে প্লিজ।

নীল নূরের দিকে তাকিয়ে বাহিরে ছুড়ে ফেললো টিকটিকি। আর দরজায় যেহেতু আদিবা আর রুহি ছিলো৷
টিকটিকি গিয়ে পরলো রুহির চুলের উপর। বেচারি ভয়ে একদফা নাগিন ডান্স দেওয়া শেষ।
নিজের বোনের এমন ডান্স দেখে নীল তো হাসতে হাসতে আজ ওর অবস্থা খারাপ।
রুহির কাহিনি দেখে নূর আর আদিবা ও হেসে দিলো।
রুহি সবার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিচে চলে গেলো৷ সবাই একটু অবাক হলো রুহির আচরণে। রুহি তো এতক্ষনে বাড়ি মাথায় তুলে ফেলার কথা সে-ই মেয়ে কি না। কিছু না বলে এভাবে চলে গেলো।

আদিবা একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।

নূর রাগী লুকে ওর দিকে তাকালো।

নীলঃ ওফ্ফ এভাবে তাকাইস না নূর একদম ডাইনী পিশাচিনীদের মতো লাগে। আমার মতো একটা ভদ্র ছেলেকে ভয় দেখাতে তোর খারাপ লাগছে না।
নূরঃ তোকে এখন ঘার মটকাতে পারলে আমি শান্তি পেতাম। কেনো আসছোস সেটা বল??
নীলঃ ওহ এখন তো এখানে আসতে হলে আপনার অনুমতি নিয়ে আসতে হবে মেডাম। বাড়ির ছোট বউয়ের কথায় তো চলতে হবে।
নূরঃ ডং বন্ধ করে সত্যি করে বল উদ্দেশ্য কি??
নীলঃ ছি! নূর ভাই বোনের কাছে আসবে আবার উদ্দেশ্য কি! বুকে হাত দিয়ে বললো কষ্ট পেলাম..

নূর বিরবির করে বললো, ‘ নাটক বাজ একটা। জীবনেও কোনো উদ্দেশ্য ছাড়া আমার কাছে আসবে না। আজ আসছে ভাই গিরি দেখাতে।

নীলঃ বিরবির না করে শুনিয়ে শুনিয়ে বললেই তো হয়।
নূরঃ দেখা শেষ। বোনকে দেখতে আসছিস দেখা শেষ। এবার বের হ..
নীলঃ তুই আমাকে অফমান্স করলি??
নূরঃ এটা অপমান হবে। আচ্ছা ভালো করছিস আসছোস। তোর বাইক আনছিস??
নীলঃ হুম কেনো??
নূরঃ চাবিটা দেখি তো কেমন??
নীলঃ চাবি দেখার কি আছে?
নূরঃ আরে আমার চাবিটার মতো কিনা দেখি..
নীল চাবি সামনে ধরতেই নূর চাবিটা হাতে নিয়ে বললো,’ তুই আমার রুম পাহাড়া দে। আমি আসছি..
নীলঃ আগে আমার চাবি দে..
নূরঃ দেখ আমার এখন তোর বাইকটা লাগবে।
নীলঃ দেখ নূর একদম পাগলামো করবি না৷ তোর ভয়ে আমি বাইক আনি না এই বাসায়। চাবি দে?
নূরঃ আমার এখন দরকার তো..
নীলঃ কি করবি??
নূরঃ ইরিনের বাসায় যাবো।
ইরিনের কথা শুনে নীল চুপ হয়ে গেলো৷ ওতো ইরিনের খবর নেওয়ার জন্যই এখানে এসেছে কিন্তু আসল কথাটাই ভুলে গেলো। এই বেয়াদব মেয়ের কাছে আসলে ভালো মানুষ ও পাগল হয়ে পাবনায় যেতে হবে। আজ একমাস ইরিনের দেখা নেই। মাঝ রাতে কল দিলেও মোবাইল বন্ধ দেখাচ্ছে।

নীলঃ এখন হরিণের বাসায় কেনো??
নূরঃ সেটা যেনে তোর কাজ কি??
নীলঃ তুই কি সোজাসুজি জবাব দিতে পারোস না।
নূরঃ দেখ আমার এখন যাওয়াটা জরুরি।
নীলঃ আমাকে বলা জায় না? আর ওই হরিণ কে এই কয়দিন দেখলাম না যে? কই থাকে? ফোন দিলেও ধরছে না!
নূর গোলগোল আঁখিদুটি নীলের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ তাহলে তুই সেই বেয়াদব ব*দ*মাস আগুন্তকঃ??….

নীল আমতাআমতা করে বললো,’ কিসের আগুন্তকঃ? আর কেনো যাইবি সেটা বল? হরিণের কি কিছু হয়েছে??
নূরঃ আচ্ছা এখন না হয় বাদ দিলাম ওদের বাসা থেকে এসে সব বের করতেছি! আর হয়েছে তো অনেক কিছুই..
নীলঃ দেখ নূর বোন আমার কি হইছে বল??
নূরঃ তাহলে তুই আমার সাথে চল। যেতে যেতে বলছি রাত হয়ে গেছে একা যাওয়া ঠিক হবে না তাই।
নীলঃ ঠিক আছে কিন্তু যদি ওর আম্মু কিছু মনে করে এত রাতে একটা ছেলে আরেকটা মেয়েকে দেখে।
নূরঃ আন্টি আমাকে চিনে। আর ভয় নেই তোকে তো বাসায় নিবো না।
নীল অবাক হয়ে বললো,’ তাহলে আমি কোথায় থাকবো??..
নূরঃ রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাইক পাহাড়া দিবি।
নীলঃ বাইক পাহাড়া দেওয়ার কি আছে? আর আমিও তোর সাথে বাসায় যাবো। তুই না নিলে আমি নিজেই এখন এখান থেকে একদম হরিণের বাসায় যেতাম।
নূরঃ কী!!!?
নীলঃ হা করে না থেকে চল।

নূর নীলের সাথে বের হওয়াই কেউ কিছু বললো না।

নীলঃ নূর আস্তে চালা না। এত জোরে এক্সিডেন্ট করবি তো।

নূরঃ চুপ করে আমাকে ধরে বসে থাক। আজ বিয়ের মিষ্টি খেতে যাচ্ছি।
নীল কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না থমকে গেলো বিয়ের মিষ্টি মানে? কার বিয়ে হরিণের?? নীলের মনে হলো শ্বাস আটকে আসছে, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। বুকের ভেতরটা পুড়ে যাচ্ছে। এই কয়দিন পাগল পাগল লেগেছে নিজেকে নিজের। নীল আর কিছু বললো না শুধু সামনের দিকে তাকিয়ে রইলো।

*********

মাহি শাশুড়ীর রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে আসলো। আজ সারা দিন অনেক জায়গায় ঘুরতে গেছে। আজ ফায়াজের কলেজ বন্ধ ছিলো তাই সারা বিকেল দুই জন রিক্সায় করে অনেক জায়গায় ঘুরে এসেছে। বিয়ের পর আজ প্রথম নয় ধরতে গেলে প্রতি রাতেই ওরা বের হয়। পাশাপাশি হাঁটা হয় শুধু হাতে হাত রাখা হয় না। মাহির রাতে নির্জন রাস্তায় হাঁটতে ভালোবাসে। ফায়াজ এটা শুনার পর থেকেই প্রতি রাতে মাহিকে নিয়ে নির্জন শহরটা ঘুরে বেড়ায়। চোখে চোখ রাখা হয় না, হাতে হাত রাখা হয় না। কিন্তু এক জন আরেক জনের নীরবে ভালোলাগা ভালোবাসা অনুভব করতে পারে।

রুমে এসে দেখে ফায়াজ কথা বলছে। মাহি কে দেখে বললো,’ আচ্ছা রুদ্র রাখি এখন পরে আবার কথা হবে ইনশাআল্লাহ।’

ফায়াজঃ পড়াশোনার কথা কি ভাবলে??
মাহিঃ আর কি ভাবার আছে??
ফায়াজঃ আর করবে না??
মাহিঃ না..
ফায়াজঃ কেনো??
মাহিঃ এমনি..
ফায়াজঃ পড়াশোনা ছাড়া যাবে না। কাল থেকে আবার ভার্সিটিতে যাওয়া শুরু করবে।

মাহি কিছু না বলে বালিশ ঠিক করে শুয়ে পরলো।
ফায়াজঃ এত তারাতারি ঘুমিয়ে যাবে??
মাহি রাগী লুকে ফায়াজের দিকে তাকালো।
ফায়াজঃ এভাবে এই লুকে আমার দিকে তাকিও না। তোমাকে এই রাগী লুক এ হ্যাব্বি কিউট লাগে। তুমি যখন মন খারাপ করে বা রাগ করে তাকাও তখন তোমাকে কতটা মায়াবী লাগে আমি বলে বুঝাতে পারবো না। কখন না জানি কনট্রোল হারিয়ে ফেলি। কখনো মনে হয় ভুল করে কিছু করে ফেলি পরে না হয় সরি বলে ক্ষমা চেয়ে নিবো। কিন্তু পরক্ষনে মনে হয় আমি তোমার মনে আগে আমার নামটা লিখে নিতে চাই৷ অন্য কারো জায়গাটা আমি চাই না নিজে আলাদা জায়গা করে নিতে চাই। যেখানে শুধু আমার রাজত্ব থাকতে অন্য কারো ছিটেফোঁটা ও না।

মাহি আবারও ফায়াজের প্রতিটি কথায় ভালোবাসা খুঁজে পেলো মুগ্ধ হলো। চোখের চাহনির মায়ার মধ্যে আটকে গেলো। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ফায়াজের দিকে।
মাহি শুয়া থেকে উঠে ফায়াজকে ফিসফিস করে বললো,’ আমি কি আপনাকে গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরতে পারি…?
ফায়াজের মনে হলো সে যেনো কানে ভুল শুনলো।
মুখে কিছু না বলে নিজেই মাহিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

রুদ্র বাসায় আজ তারাতাড়ি চলে আসলো।
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হলো নূরকে খোজার উদ্দেশ্যে।কিন্তু ড্রয়িং রুম, রান্না ঘর, মায়ের রুমে কোথাও নূরকে না পেয়ে। মিম কে ডাকলো।
মিম বললো আপু নীল ভাইয়ার সাথে কোথায় যেনো গেছে।

রুদ্র রুমে বসে আছে আর টেনশন করছে নূর এত রাতে কোথায় গেলো??
রুদ্রের ভাবনার মাঝেই রুমে ফোন বেজে উঠলো।
নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো ওর ফোন ওর হাতে তাহলে রুমে আর কার ফোন৷
টেবিলে বইয়ের উপর নূরের ফোন দেখে বুঝলো ফোন ছাড়াই চলে গেছে।
ফোন ধরবে কি ধরবে না ভাবতে ভাবতে রিসিভ করে কানে ধরলো।
নিজে কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে কেউ কিছু বলে উঠলো।
সাথে সাথে রুদ্র হাত মুষ্টি বদ্ধ করে চোখ বন্ধ করে নিলো।

চলবে….

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।#এই_অবেলায়_তুমি
#পর্ব_৩৭
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

নূরের অপেক্ষার প্রহর গুনছে রুদ্র। বাইরের অবস্থা যতই শান্ত ঠান্ডা দেখাক না কেনো, সে ঠিক নেই। ভেতর ভেতর নির্ভীক মনটা চিন্তায় উতলা হয়ে আছে। বার বার নীলের মোবাইল ফোন দিচ্ছে কিন্তু ফোন ধরছে না। সব আশা ছেড়ে দিয়ে রাগে- ক্ষোভে চূর্ণ হয়ে ক্রুর চোখে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। কখন নূর দরজা ঠেলে রুমে ঢুকবে।

নূর আর নীল বসে আছে ইরিনের বাসার ড্রয়িং রুমে।

ইরিনের আম্মু অনেক ধরনের খাবার নাস্তা ওদের সামনে রাখলো।
নূরঃ আন্টি এত কষ্ট করে কেনো এত কিছুর আয়োজন করছেন। আমি ইরিনের সাথে দেখা করেই চলে যাবো।
~ তা কি করে হয়। বিয়ের পর এই প্রথম জামাই নিয়ে আসলে আজ যেতে দিচ্ছি না।

নূর রেগে তাকানোর আগেই নীল রেগে নূরের দিকে তাকালো।

নূরও পাল্টা চোখ রাঙ্গিয়ে নীলের দিকে তাকালো। বেয়াদব ছেলেটাকে বার বার বলেছে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে। না সে আসবে এখন দিলো তো সব মান সম্মান শেষ করে।

~ আরে বাবা নাও না কেনো। কিছুই তো খাচ্ছো না। নূর আমার মেয়ের মতো নিজের শশুর বাড়ি ভেবে খাও।

নীল বিরবির করে বললো,’ সেটাই তো, শশুর বাড়ি ভাবতে হবে কেনো। এটা তো আমার পার্মানেন্টলি শশুর বাড়ি।

পিছন থেকে ইরিন বলে উঠলো,’ আম্মু কে এসেছে??

নূর জোর পূর্বক একটা হাসি দিয়ে পিছন ফিরলো।

ইরিনঃ দুস্ত তুই!! আর জিজুকে নিয়ে আসছিস?? আমি বিশ্বাস করতে পারতেছি না। ওহ মাই গড!! বলে নূরকে জড়িয়ে ধরলো।
নূর ফিসফিস করে বললো, ‘ গাঁধি ছেলেটার দিকে তাকা তাহলে বুঝবি কাকে নিয়ে আসছি।
নূরের কথা শুনে নূরকে ছেড়ে সামনের ছেলেটার দিকে তাকালো। পিঠ দেখা যাচ্ছে। সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই ঠোঁট দুটো অজান্তেই ফাঁক হয়ে গেলো। শিরদাঁড়া বেয়ে ছুটে চললো শীতল হাওয়া। সামনে বসে থাকা মানুষটিকে দেখে বুকের ভেতরটা টগবগ করে উঠলো। সেই মুখটা এখন চোখের সামনে যাকে দেখার জন্য যার কন্ঠ একবার শুনার জন্য নিজেকে পাগল পাগল লেগেছে। এখন সেই মানুষটা ওর সামনে চাইলেই এখন তাকে ছোঁয়া যাবে, স্পর্শে অনুভব করা যাবে।
ইরিন কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নীল একটু নড়েচড়ে বসলো।

পিছন থেকে ইরিনের আম্মু বলে উঠলো, ‘ ইরিন ওদের মিষ্টি দে।’
নীল বলে উঠলো, ‘ আন্টি আপনি কি মিষ্টি একটু বেশি পছন্দ করেন??’
ইরিনের আম্মু হেসে বললো,’ না বাবা আমি মিষ্টি একদম কম খাই। আর এটা তো ইরিন কে আজকে দেখতে এসেছিলো সেই মিষ্টি। ‘
নীল থমকে গেলো,কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেললো,ওকি আজ কানে বেশি শুনছে??
নূর অবাক হয়ে বললো,’ ওরা কি বলে গেলো আন্টি??’

~বিয়ের ডেট ঠিক করা হয়ে গেছে। ইরিনকে সবার পছন্দ হয়েছে৷ ছেলে আর্মি খুবই ভালো।
নূর আরেকদফা অবাক হলো বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে শুনে।
নীল ক্রোধ দৃষ্টিতে ইরিনের দিকে তাকিয়ে নিজের রাগ সংযোজন করার জন্য আবার নিচের দিকে তাকালো।
সারাদিন হাসি খুশিতে মেতে থাকা মানুষটা হঠাৎ রেগে গেলে নিজের মধ্যে থাকে না।
নূর নীলের দিকে তাকিয়ে আরেক দফা থমকে গেলো। হচ্ছে টা কি?

নূর মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো,’ এটা ঠিক না আন্টি আমি জানি না আর আমার বেস্টুর বিয়ে ঠিক। এটা মানতে পারলাম না আন্টি।

~ জানোই তো ওর বাবা নেই। ওর চাচারা বিয়ে ঠিক করেছে ছেলে ভালো তাই আর অমত করিনি।

নূরঃ ওহহ আচ্ছা আমি কি ওর সাথে রুমে গিয়ে পড়াশোনার বিষয়ে কিছু কথা বলতাম।

~ এটা জিজ্ঞেস করার কি আছে যাও।

নীল বলে উঠলো,’ আমি এখানে একা বসে কি করবো??

~ জামাইকে ও সাথে নিয়ে যাও।

ইরিন ওর মার দিকে তাকিয়ে রেগে বললো,’ কিসের জামাই?? কার জামাই??

নূরঃ আন্টি নীল আমার ভাই।

ইরিনের আম্মু তাজ্জব বনে গেলেন নূরের কথা শুনে। উনি কি ভাবলেন আর কি হলো। লজ্জায় রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো।

ইরিনের রুমে নূর আর নীল বসে আছে।

নীল চেয়ারে বসে এক দৃষ্টিতে ইরিনের দিকে তাকিয়ে আছে।

ইরিন মাথা নিচু করে রেখেছে।

নিরবতা ভেঙে নূর বললো,’ তা বিয়ে ঠিক হলো৷ একটা ফোন দিয়ে ও তো বলতে পারতি। এখনি এত পর করে দিলি। বিয়ের পর তো চিনবি এই না।

ইরিন কথা পালটানোর জন্য নূরকে বললো,’ এত রাতে তুই কেনো কষ্ট করে আসতে গেলি। কাল সকালে ও তো আসতে পারতি।

নূরঃ আমাকে নিয়ে আর তোর ভাবতে হবে না।

নীল পলকহীন ভাবে ইরিনের দিকে তাকিয়ে আছে।

ইরিন নীলের তাকানো লক্ষ করে। অস্বস্তিতে নূরকে বললো,’ কি খাবি? কি আনবো?

নীল এবার বললো,’ নূর তুই বারান্দায় যা…

নূরঃ কেনো??

নীলঃ যেতে বলেছি যা। এত বেশি কথা কেনো বলিস..

নূর নীলের দিকে তাকিয়ে বুঝলো৷ নীল ইরিনের সাথে একান্ত কিছু কথা বলতে চায়।

নূর উঠে বারান্দার দিকে যেতে নিলে ইরিন ও ওর পিছু পিছু যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।

নীল শান্ত দৃষ্টিতে ইরিনের দিকে তাকিয়ে বললো,’ ইরিন আমি তোমাকে যেতে বলিনি।’

ইরিনের পা আপনা আপনি থেমে গেলো। এই প্রথম হা এই প্রথম সে নীলের মুখে নিজের নামটা শুনে থমকে গেলো। এত বিশ্রি কেনো লাগছে নিজের কাছে নিজের নামটা। নীলের মুখে যে হরিণ নামটাই মানায়।
নূর ইরিনের দিকে তাকিয়ে আছে। সে নিজেও অবাক হলো। সেই প্রথম দেখা থেকে আজ পর্যন্ত নীল কখনো ইরিনের নাম ধরে ডাকেনি। এই হরিণ নাম নিয়ে প্রতি দিন ঝগড়া করেছে তাও এই নামেই ডেকেছে। আর আজ কি-না…

নীল আবার বলে উঠলো,’ নূর অনেক রাত হয়ে গেছে ভাই মনে হয় চলে এসেছে বাসায়। তুই হেবলার মতো দাঁড়িয়ে থাকলে সময় আরো নষ্ট হবে।

নূরের রুদ্রের কথা মনে পরতেই দ্রুত বারান্দায় এগিয়ে গেলো।
ইরিনের এবার হুঁশ আসলো৷ সে একবার বারান্দার দিকে তাকালো আরেক বার নীলের দিকে তাকালো। আচ্ছা আজ ও এত ভয় পাচ্ছে কেনো নীল কে?? নীল তো এখনো কিছুই বলেনি। ফ্যান চলছে রুমে তাও সে ঘামছে।

নীল গিয়ে ইরিনের সামনে দাঁড়ালো।
ইরিনের ভয়ে চুপসে যাওয়া মুখটার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে আরো কাছে গেলো।
নীলঃ তাহলে বিয়ে করে নিচ্ছো ইরিন সুলতানা।
ইরিনের চোখ ছলছল করে উঠলো কিন্তু না সে কিছু তেই কারো সামনে ভেঙে পরবে না। নিজের নামটা আজ ওর কাছে এত জঘন্য লাগছে কেনো?

ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে নীলের দিকে তাকিয়ে আর সেই হাসি ধরে রাখতে পারলো না। সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিলো।
নীলঃ তুমি কি আমাকে ভয় পাচ্ছো??
ইরিন মাথা নেড়ে বুঝালো সে ভয় পাচ্ছে না।
নীল এবার নিজের রূপ পালটে ফেললো। শক্ত কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ তাহলে আমার চোখের দিকে তাকাও। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলো।’
ইরিন শুনলো না নীলের কথা। নত মুখে বললো,’ আ…আমি আস..সছি।
নীলঃ আমার কথা শেষ হয় নি। এই একমাস কলেজ যাওনি কেনো? মোবাইল বন্ধ কেনো??
ইরিনঃ মোবাইল নষ্ট হয়ে গেছে। আর কলেজ তো আমি গিয়েছি মাঝে মাঝে।
নীলঃ আচ্ছা বুঝলাম হঠাৎ বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছো কেনো??
ইরিনঃ ছেলে ভালো…
নীলঃ তো??
ইরিনঃ ছেলে ভালো। পরিবার ভালো আর কি চাই।
নীলঃ ওহহ আচ্ছা। ছেলে ভালো, একদিন দেখেই বুঝে গেলে ছেলে ভালো আর এত বছরেও আমাকে বুঝতে পারলে না বাহ্।
ইরিনঃ আপনাকে বুঝার কি আছে। আর আমি কেনো বুঝবো? বুঝার মানুষের কি কম আছে?
নীলঃ আমি এখন তোমার সাথে তর্ক করতে চাই না। তুমি কালকেই আন্টিকে বলবে তুমি বিয়ে করতে চাও না।
ইরিন এবার নীলের চোখে চোখ রাখলো,’ কেনো বলবো?? কার জন্য বলবো? আর আপনার কথা কেনো শুনবো? আপনি কে হন আমার??আপনার আর আমার মধ্যে এমন কোনো সম্পর্ক বা অধিকার নেই যে আপনার এক কথায় আমি বিয়ে থামিয়ে দিবো।

নীল থমকালো আসলেই তো সে কে? তার কি অধিকার আছে বিয়ে থামানোর। ইরিনের প্রতিটি প্রশ্নে ওর আত্মসম্মানে লাগলো। কিছু না বলে সরে গেলো নিরবে। বলার অনেক কথা ছিলো কিন্তু থেমে গেলো একটি কথার মধ্যে “অধিকার ” এই শব্দটার কাছে তার এই ঠুকনো অনুভূতি গুলোকে ধামাচাপা দিয়ে দিলো।

ইরিন পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে।

নূর রুমে এসে দেখলো সব স্বাভাবিক আছে। ওতো কতো কিছু ভেবে ছিলো কিন্তু এখন তো দেখছে ওর ধারনার ১%ও কিছু হয়নি। এখন বেশি কিছু না বলে বাসায় গিয়ে ঠান্ডা মাথায় জিজ্ঞেস করতে হবে।

নূর আর নীল বেড়িয়ে গেলো ইরিনের বাসা থেকে। নীল একবারও আর ইরিনের দিকে তাকালো না। তাকানোর প্রয়োজন মনে করলো না। ইরিনের কথায় স্পষ্ট বুঝে গেলো। ইরিন আর যা-ই হোক ওকে ভালোবাসা তো দূর পছন্দ ও করে না। ভালো থাকুক না কিছু প্রিয় মানুষ ওদের প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে৷ সবাই যদি তার ভালোবাসার, ভালোলাগার মানুষটাকে পেয়ে যায় তাহলে না পাওয়ার যন্ত্রণা কেমন সেটা বুঝবে কিভাবে…?

নীলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে ইরিন ভেতরটা পুড়ে যাচ্ছে, চোখ জ্বালা করছে। ভেতর থেকে চিৎকার করে চাপা কান্না গুলো বেড়িয়ে আসতে চাচ্ছে।
ইরিন নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। সে ভেবে ছিলো হয়তো প্রশ্নের উত্তরে নীল জোর খাঁটিয়ে বলবে, ” হরিণ আমি তোমার সব। আমার অধিকার আছে কারন আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি বিয়েতে নিষেধ করে দাও।আমার দিকে তাকাও। আমি তোমাকে আমার সবটা দিয়ে আগলে রাখবে।তুমি বিয়ে করো না। ” কিন্তু না ইরিন বুঝলো নীল কখনো ওকে ভালোবাসেনি ওর মনের ভুল সব। সব ভুল…অঝোরে কেঁদে উঠলো ইরিন কেনো ভালোবাসলেন না আমায়?? কেনো?কেনো? আমি যে আপনার জায়গাটা অন্য কাউকে দিতে পারবো না। হয়তো সময় বদলে যাবে কিন্তু ভালোবাসা বদলাবে না।

রুদ্র ব্যালকনি থেকে দেখলো নূর গেইট দিয়ে বাসায় ঢুকছে।

নূর রুমে এসে দেখে রুদ্র রুমে নেই। তারমানে এখনো বাসায় আসে নি। হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মাথায় হাত ১টা বেজে গেছে।
ফ্রেশ হয়ে দেখলো বিছানার মধ্যে রুদ্র বসে আছে।
নূর একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো,’ কখন এসেছেন??’
রুদ্রঃ কোথায় গিয়ে ছিলে??
নূরঃ ইরিনের বিয়ে ঠিক হয়েছে ওদের বাসায় গিয়ে ছিলাম।
রুদ্রঃ ওহহ আচ্ছা।
নূরঃ হুম।

নূর রুমের এদিকে সেদিকে মোবাইলটা খুঁজছে।

রুদ্রঃ কি খুঁজছো??
নূর হেসে বললো,’ দেখুন না মোবাইলটা খুঁজে পাচ্ছি না।
রুদ্রঃ ওহহ আচ্ছা। দেখোতো এটা কি না..
নূর হেসে বললো,’ হে এটাই।
রুদ্র উঠে এসে নূরের চারপাশ ঘুরে পিছনে নূরের চুলগুলো কানের কাছ থেকে সরিয়ে ফিসফিস করে বললো,’ আমাকে দিয়ে বুঝি হচ্ছে না। আরো কয়জন লাগবে তোমার?
নূর রুদ্রের কথার কিছুই বুঝলো না।
নূরঃ আপনাকে দিয়ে হচ্ছে না মানে? বুঝলাম না..
রুদ্র তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,’ রাত জেগে কথা বলতে পারবে তো না-কি আমার জন্য প্রবলেম হবে? আমি কি অন্য রুমে চলে যাবো?
নূর রেগে বললো,’ কি বলছেন কি আপনি? মাথা ঠিক আছে তো..
রুদ্র এবার আর শান্ত থাকতে পারলো না রেগে চিৎকার করে বলে উঠলো,’ আমার মাথা একদম ঠিক আছে। আমি একটু ছাড় দিয়ে রেখেছি বলে এই নয় যে তোকে অন্য কারো সাথে রংঢং করে বেড়াতে দিয়ে রেখেছি। নিজের ঘরে স্বামী থাকতে যে নারী অন্য পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে আর যা-ই হোক সে কখনো রুদ্র চৌধুরীর বউ হওয়ার যোগ্যতা রাখে না।
নূরের চোখ জলে ভরে উঠলো। সে এই কাকে দেখছে? এ কোন রুদ্র!
নূরঃ আমি কি কোনো অপরাধ করেছি রুদ্র ভাইয়া?
রুদ্রঃ চুপ! একদম চুপ.. ছেলেটা কে ছিলো?
নূরঃ কোন ছেলে?
রুদ্র রেগে বলে উঠলো,’ একদম অভিনয় করবে না। অনেক অভিনয় করেছো।
নূর এবার আর চোখের জল ধরে রাখতে পারলো না। শব্দ করে কেঁদে বলে উঠলো,’ প্লিজ কোন ছেলে? কিসের ছেলে সেটা তো বলবেন? আপনি আমাকে শুধু শুধু রাগ কেনো দেখাচ্ছেন?
রুদ্র এবার নিজেকে শান্ত করলো। কিছু না বলে রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে নিলে। নূর রুদ্র কে আচমকা জড়িয়ে ধরলো ।
রুদ্র নিজেকে শান্ত করলো। নূরকে আসতে করে বললো ছেড়ে দিতে।কিন্তু না নূর আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
রুদ্রঃ ভালোবেসে একবার জড়িয়ে ধরতে আজ আমাদের মধ্যে এত দূরত্ব তৈরি হতো না।
নূর রুদ্রকে না ছেড়েই বললো,’ কি হয়েছে বলবেন প্লিজ?
রুদ্রঃ শুভ কে??
থম মেরে গেলো নূর। শরীর কাঁপছে অনবরত। আকস্মিত এত ভয় আসলো কোথায় থেকে? তাহলে আজ এত কিছু হয়েছে এই শুভ লোকটার জন্য। ছাড়বো না এই লোক কে৷ শুধু সকালের অপেক্ষা।
নূর রুদ্র কে নিজ থেকে ছেড়ে দিলো।
নূরঃ বাহিরের এক জন ফোন দিলো আর কি না কি বললো। আপনিও বিশ্বাস করে নিলেন। আপনি একজন ডক্টর হয়ে মুর্খের মতো আচরণ করেছেন বলে মনে হচ্ছে না আপনার??
রুদ্রঃ অপরিচিত লোক ফোন দিলে অবশ্যই জান, সোনা,কলিজা, ডার্লিং এই গুলো বলবে না।
নূরঃ আপনি আমাকে সন্দেহ করছেন?
রুদ্রঃ এটা সন্দেহ না নূর যেটা সত্যি সেটাই বলছি।
নূরঃ ভালোবাসেন আমাকে??
রুদ্র থেমে গেলো এর উওর কি বলবে? যদি নূর অন্য সময় এই প্রশ্ন করতো হাসতে হাসতে উত্তর দিতো রুদ্র। কতটা ভালোবাসে,তার ভালোবাসা কতটা গভীর তুলে ধরতো নূরের সামনে। রুদ্র নূরের চোখের জল মুছে দিয়ে বললো, শুয়ে পড়ো। অনেক রাত হয়েছে। ‘
রুদ্র সরে যেতে নিলে নূর রুদ্রের শার্টের কলার ধরে বললো,’ আমার প্রশ্নের উত্তর চাই??’

চলবে….

ভুলত্রুটি মার্জনীয়#এই_অবেলায়_তুমি
#পর্ব_৩৮
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

আজ ইরিনের বিয়ে।
নূর খুব সুন্দর করে সেজেগুজে রুদ্রের দিকে তাকালো।
নূরঃ আপনার কি এখনো হয় নি??
রুদ্রঃ আমি তো অনেক আগেই রেডি হয়ে আছি।
নূরঃ তাহলে হেবলার মতো তাকিয়ে আছেন কেনো। চলুন…
রুদ্রঃ তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।
নূর অবাক হয়ে রুদ্রের দিকে তাকালো। রুদ্র ওর প্রশংসা করলো। বিয়ের পর এই প্রথম বললো ওকে সুন্দর লাগছে। না না শুধু বিয়ের পর নয়। বিয়ের আগেও কখনো রুদ্র নূরকে সুন্দর বলেনি।
নূরঃ সুন্দর করে সাজলে তো সুন্দর লাগবেই।
রুদ্র নূরের সামনে দাড়িয়ে নূরের দুই গাল আসতে করে স্পর্শ করলো।
নূর চোখ বুঝে নিলো।
রুদ্রঃ তুমি আমার চোখে সব সময় সুন্দর, অপূর্ব সুন্দরী। না সাজলে আরো বেশি সুন্দর, মায়াবতী লাগে তোমাকে। এখন দেখো মেকআপ এর নিচে তোমার মায়াবী মুখটা লুকিয়ে গেছে।
নূর চোখ বন্ধ করে আছে৷ রুদ্র কাছে আসলেই নিজেকে বেসামাল, এলোমেলো মনে হয়।
রুদ্র তাকালো নূরের লজ্জা মাখা মুখটার দিকে। গায়ে শাড়ি জড়ানো,এক লজ্জাবতী নারী ওর সামনে লজ্জায় চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। আর কত অপেক্ষা। কবে এই লজ্জা রাঙা মেয়েটাকে বুকে টেনে নিতে পারবে। ধৈর্য যে আর কুলোচ্ছে না।
নিজের মুখটা এগিয়ে নিয়ে নূরের কপালের মধ্যভাগটায় দুঠোঁট চেপে দিলো। ছোটো করে চুমু খেলো। দু চোখের পাতায় পূর্ন মায়ায় আবারো ঠোঁট ছোঁয়ালো।
এক অদ্ভুত অনূভুতিতে নড়ে উঠলো নূর। শীত কাঁটা স্পর্শে যেনো সারা শরীর শিউরে উঠলো।
আসতে আসতে হাত গুলো নূরের কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের আরো কাছে নিয়ে আসলো। নূর লজ্জায় নড়তেও পারছে না। এত লজ্জা, এত লজ্জা আসলো কোথায় থেকে??
রুদ্র নূরের আরেকটু কাছে যেতেই দূরত্ব সুচালো নূর।ভীতু ভীতু মুখে রুদ্রের দিকে তাকালো।
রুদ্রের দৃষ্টি স্রেফ সামনে নূরের দিকে। আলতো করে নূরের হাতটা ধরলো রুদ্র। তারপর রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো নূরকে নিয়ে।

ইরিনকে খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে। লাল টুকটুকে শাড়ি নয়। নীল রঙের মধ্যে বেগুনি শাড়ি পাড় টা কালো। শাড়িটা ইরিনের সৌন্দর্য যেনো আরো হাজার গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। মুখে দিয়েছে হালকা সাজ। চুলের খোঁপায় বেলীফুলের মালা। আজ ইরিন কে দেখলে যে কোনো ছেলে ক্রাশ খেতে বাধ্য।
ইরিনের হঠাৎ মনে হলো। নীল কি ওকে দেখে বলবে, ” এই হরিণ তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। তোমার সাথে ওই আর্মি বেডাকে ভালো লাগবে না। তোমার পাশে শুধুই আমাকে মানায়।” নিজের ভাবনায় নিজেই হাসলো। একটু পর অন্য কারো বউ হবে এখন কিনা একজন পাষাণ, নিষ্ঠুর, পাথর মনের লোক কে নিয়ে ভাবছে।
ওই দিন পর আর মোবাইলে কোনো ফোন আসেনি৷ প্রতি দিন কলেজ যাওয়ার পথে রাস্তার আশেপাশে সব জায়গায় চোখ বুলাতো যদি এক নজর প্রিয় মানুষটিকে দেখতে পায়। সেই আশায় কিন্তু না সে আর একদিন ও আসেনি।সামনে কেনো পিছনেও আসেনি। এই কয়দিন ইরিন তো ঘুমাতে পারেনি। সারা রাত দুচোখ এক করতে পারেনি। বারান্দা দিয়ে রাস্তাটার দিকে তাকিয়ে থেকেছে যদি কল্পনার মানুষটিকে একবার দেখতে পায় সেই আশায়। কিন্তু আশেনি সেই কল্পনার পাষাণ্ড পুরুষটি।

নীল রুম অন্ধকার করে রুমের দরজা লাগিয়ে নিচে বসে আছে। চোখ গুলো অসম্ভব লাল হয়ে আছে হয়তো কান্না করেছে৷ কে বলেছে পুরুষ মানুষ কাঁদে না? যখন সে জানতে পারে তার প্রিয় মানুষটি, তার বেঁচে থাকা যার হাতে, তার সুখ যার চোখে, তার মনে বারোমাস বসন্তের পাখিরা গান গায় সেই মানুষটির ঠোঁটের হাসি দেখলে৷ যার অভিমানি মুখ, রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে চলে যাওয়ার মূহুর্ত গুলো মনে করে রাতের ঘুম আসে। সেই মানুষটি অন্য কারো। আর কিছুক্ষন পর সে অন্য কারো হয়ে যাবে কিন্তু নীল কিছুই করতে পারছে না।
দরজায় কড়া আঘাতে সেদিকে তাকালো। কিন্তু কিছু বললো না, উঠে দরজা খুললো না,আগের মতোই বসে আছে।

নূরঃ ওই বাটপার দরজা খুল। না হলে দুই নাম্বার চাবি দিয়ে দরজা খুলছি।

খট করে দরজা খুলে নীল বেড়িয়ে আসতেই নূর রুমে ঢুকে লাইট জ্বালালো।

নীল রুম থেকে বের হয়ে কি যেনো খুঁজছে।
নূর কিছু বলার আগেই দেখলো নীল হাতে করে চটিজুতা নিয়ে ওর দিকেই আসছে।
নূর এক হাতে শাড়ি ধরে খাটের অন্য পাশে চলে গেলো।

নীলঃ বের হ আমার রুম থেকে। না হলে চটিজুতার বারি খাবি অসভ্য মেয়ে।

নূরঃ নীল দেখ অনেক কষ্ট করে সেজেগুজে এসেছি৷ তোর কারনে কিন্তু আমার সাজটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
নীলঃ আমি কি করছি যে তোর সাজ নষ্ট হচ্ছে। বের হ আমার রুম থেকে।
নূরঃ তোর রুমে আমি থাকতে আসি নি। তারাতারি রেডি হয়ে বের হ।
নীল ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, ‘ কোথায় যাবো??’
নূর এক গাল হেসে বললো,’ ইরিনের বিয়ে আজকে। তোকে নিয়ে যেতে বলেছে।
নীলঃ আমি যাবো না। আমার একটা ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে। তুই যা।
নূরঃ মেয়েটার আজকে বিয়ে আর তুই ওর শেষ ইচ্ছে টা তো রাখ।
নীলঃ ও বলেছে যেতে??
নূরঃ হুম।
নূর হাতের শপিং ব্যাগটা নীলের হাতে দিয়ে বললো, ‘ আমি চাই তুই এটা পড়। পড়বি তো?? ‘
নীল হালকা হেসে নূরকে আলতো করে জড়িয়ে ধরলো। বুকের ভেতর যে কালবৈশাখী ঝর বইছে তা বাহিরের কাউকে বুঝতে দিলো না।

নীল রেডি হয়ে নিচে যেতেই রুদ্র বললো,’ কি রে বিয়ে কি তুই কবি নাকি?? শেরওয়ানী পড়ছোস পুরাই নতুন জামাই লাগছে।’
নীল শুষ্ক একটা হাসি দিলো।
কতটা কষ্ট পছন্দের, প্রথম ভালোবাসার মানুষের বিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে দেখা সেটা একমাত্র সে বুঝে। যে এই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গেছে।

নূরঃ ফুপিমণি ছেলেকে ফুউউ দিয়ে দাও। যত দোয়া দরুদ পারো পড়ে ফুউউউ দিয়ে দাও।

রুদ্র আর নীল নূরের দিকে তাকালো।
নীলঃ ফুউউ কেনো দিবে??
নূরঃ যেনো বিয়ে বাড়ির পেত্নী, পরি, ডাইনী,পিশাচিনীদের নজর না লাগে।
রুদ্র হেসে বললো, ‘ বাহ্ তাহলে আমাকেও ফুউউ দিয়ে দাও।
নূরঃ আপনাকে কেনো??
রুদ্রঃ তুমি কি বলতে চাও? আমি সুন্দর, হ্যান্ডসাম, স্মার্ট , মেয়েরা দেখলে আকর্ষণ হবে এমন পুরুষ না?
নূরঃ মোটেও আপনি এই গুলোর একটা ও না।
নীল বাঁকা হেঁসে বললো,’ ভাই তুমি কিন্তু ঘর ওয়ালির থেকে পারমিশন পেয়ে গেছো..
নূরঃ কিসের পারমিশন?
নীলঃ এই যে বললি কোনো মেয়ে আকর্ষণ হবে না আমার ভাইকে দেখলে। আজ শুধু দেখবি আর রুচির মতো ফোলবি।ভাই তুমি রেডি তো?
রুদ্র নূরের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে নীলকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।
নূর হাবলার মতো ওদের পিছু পিছু গেলো।

ইরিন শুধু মনে মনে নূরকে খুঁজছে আর যাই হোক সে এই বিয়ে করতে পারবে না। চোখের জলে সাজগোছ নষ্ট হয়ে গেছে।

নূর বসে আছে ইরিনের সামনে।

নূরঃ সরি কালকে খুব দরকারী কাজ ছিলো তাই আসতে পারিনি।
ইরিন রোবটের মতো বসে আছে।
নূরঃ কিছু তো বল..
ইরিন নড়েচড়ে বসলো ।
ইরিনঃ ওহ বুঝতে পেরেছি আমি।
নূরঃ তোর সাজ নষ্ট হলো কিভাবে? চোখের নিচে তো কালি পরে গেছে। ঘুম হয়নি ঠিক মতো বিয়ের চিন্তায়।

ইরিন নিচের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো। আহ্ বিয়ে সে তো বিয়ে নয় বিশ পান করছি যে নো। কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বললো না।

নূরঃ উনারা আসবে কখন?
ইরিনঃ কে..?
নূরঃ তোর হবু জামাই আর আমার জিজু।
ইরিনের চোখ জলে ভরে উঠলো।
ইরিনঃ হয়তো এখনি চলে আসবে।
নূর ঈগল চোখে পুরোটা সময় ইরিনকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো।
একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে নূর বললো,’ কাউকে ভালোবাসলে ইগো, আত্মসম্মান আগে নয়, কেউ কাউকে ভালোবাসলে এত কিছু মনে রাখে না। ভাবে না সে আমাকে ভালোবাসে কি না? একটা বার পরিবারের কথাও মনে পড়ে না। পরিবার এক সময় মেনে নিবে কিন্তু মানুষটি হারালে তাকে আর পাওয়া যাবে না। সে আমাকে ভালোবাসে কি-না সেটা বড় কথা নয়। আমি তাকে আমার মনের কথা বলতে পেরেছি সেটাই বড়। না বলতে পারলে জীবনের কোনো এক সময় মনে হবে একটা বার তাকে বলেই দেখতাম! ভীষণ আপসোস হবে তখন। সব ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না। আবার কিছু ভালোবাসা পূর্ণতা পেতে গিয়েও নিজের বোকামির জন্য হারিয়ে যায়।

ইরিনের গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পরছে। তার কি একবার নিজের মনের কথাটা বলার দরকার ছিলো? কিন্তু সে মেয়ে হয়ে কেনো বলবে? তার কি আত্মসম্মানবোধ কিছুই নেই?

ফোনের রিংটোন এর আওয়াজে ভাবনার জগৎ থেকে বের হলো ইরিন।

নূর মুচকি হেসে বললো, ‘ হবু জামাই ফোন দিয়েছে বুঝি? আচ্ছা তোরা নিজেদের সিক্রেট কথা বল।আমি আসছি..
ইরিন খপ করে নূরের হাতটা ধরে বললো,’ বেশি পাকনা হয়ে গেছিস না? চুপ করে এখানে বস।
নূরও আর উঠলো না। চুপ করে বসে আছে।
প্রথম রিং হতে হতে কেটে গেলো।
দ্বিতীয় রিং হওয়ার পর ইরিন ফোন কানে চেপে ধরতেই ওপাশ থেকে পাঁচ মিনিট কি কথা বললো নূরের জানা নেই। হঠাৎ ইরিনের হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেলো। বিকট শব্দে ফোনের গ্লাসটা ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো।
নূর অবাক হলো ইরিনের কাজে৷

ইরিনের আম্মুর শরীর খুব খারাপ হয়ে গেছে।
একদিক দিয়ে লোকে ছি!ছি! করবে। অন্য দিক দিয়ে মেয়েকে আর কোনো ভালো পাত্র বিয়ে করতে চাইবে না । বিয়ে ভেঙে যাওয়া মেয়েকে কোন ভালো পরিবার নিজের ছেলের বউ করে ঘরে তুলতে চাইবে।

নূর চুপচাপ সবার দিকে তাকিয়ে আছে।
রুদ্রঃ ছেলে কি বলেছে আসতে পারবে না?
নূরঃ হুম।

ইরিননের চাচারাও মিটিং বসেছে৷

ইরিন চুপটি করে ঘরের কোনে বসে আছে।

নূর নীলের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।

কিছু মহিলা বলা বলি করছে। নিশ্চই মেয়ের কোনো খারাপ রেকর্ড ছেলে পক্ষ পেয়েছে তাই বিয়ে করবে না বলে দিয়েছে ।
আবার কেউ বলছে, ‘ বাপ ছাড়া আর কতটুকুই ভালা হইবো। পুলা কি এমনি এমনি মানা করছে নাকি।
নানা জনে নানা ধরনের কথা শুনাচ্ছে।

হঠাৎ ইরিনের বড় চাচা বলে উঠলো,’ আমাদের পাশের বাড়ির হাবলুর বউ মারা গেছে কয় দিন আগে। ওই ছেলে রাজি থাকলে ওর সাথে ইরিনের বিয়ে দিবো।

নূর চমকে উনার দিকে তাকালো। এটা কোন হাবলু? সেই হাবলু নয়তো? যে আগে ইরিন কে রাস্তা ঘাটে বিরক্ত করতো?
আর এই ছেলে তো ভালো না। নিজের বউ কে মদ খেয়ে এসে পিটাইতে পিটাইতে মেরে ফেলছিলো৷ উনারা এমন ছেলের সাথে ইরিনের বিয়ে কিভাবে দিতে চায়? সম্পত্তির লোভে?

হাবলুকে জিজ্ঞেস করার সাথে সাথে খুশিতে নাচতে নাচতে পাঞ্জাবি পরে রেডি।
নূর মনে মনে ভেবে উঠলো,’ ওরা জানলো কিভাবে বিয়ে যে ভাঙবে? আর মনে তো হয় এই হাবলু আগে থেকেই রেডি হয়ে আছে। নূরের মাথায় কিছুই ঢুকছে না।
নূর পাশে তাকিয়ে দেখে নীল নেই।
গেলো তো মাথাটা গরম হয়ে। এই গাধা কে এই মূহুর্তে দরকার আর সে উধাও। এখন কি হবে? সব প্লেন যে একদম পানির মতো বেসে চলে গেলো। সে কিভাবে বিয়ে আটকাবে সব তো রেডি হয়ে গেছে। ও কি নিজেই ইরিনের জীবনটা নরক বানিয়ে দিলো। চোখ থেকে গাল বেয়ে বেয়ে জল গড়িয়ে পরছে। রুদ্র নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর নিজের ও খারাপ লাগছে এত সুন্দর, হাসিখুশী একটা মেয়ের কপালে কি না এমন ছেলে জুটলো। দেখতেই চার বাচ্চার বাপ লাগছে। আর কি বিশ্রী হাসি সাথে হলুদ দাঁত।ওয়াক থুঃথুঃ

দরজা খট করে খোলে রুমে কেউ প্রবেশ করলো।
ইরিন ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে। তার কপালে শেষ এই নেশাখোর ছেলেটা জুটলো। ওই হাবলুর তিনটা বাচ্চা আছে।
ইরিন দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো যুবকটি ওর দিকেই আসছে।
ইরিন হাতটা লুকিয়ে ফেললো।
যুবকটি ইরিনের সামনে এসে গালে থাপ্পড় দিতে গিয়েও থেমে গেলো। ইরিনের চোখের পানি গুলো দু’হাতে যত্ন করে মুছে দিলো।
ইরিন তাকিয়ে আছে ওর মনে হচ্ছে স্বপ্ন সব কল্পনা । যেই পুরুষ কে এত দিন মনে প্রানে চেয়েছে একবার সামনে আসুক। কিন্তু এই নিষ্ঠুর পুরুষ আসে নি। তাহলে জীবনের শেষ মূহুর্তে কেনো এসেছে? তামাশা দেখতে? এক অসহায় মেয়ের বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর বেঁচে আছে না মরে গেছে সেটা দেখতে। তাহলে আরেকটু সময় নিয়ে আসতো।
নীল ইরিনকে জড়িয়ে ধরলো । ইরিন জমে গেছে, কান্না বন্ধ হয়ে গেছে।
নীল আসতে আসতে নিজের হাতটা ইরিনের পিছনে লুকানো হাতটার উপর রাখলো।
ইরিন রোবটের মতো হয়ে আছে। নরছে ও না।
ইরিনের হাত থেকে ছুরিটা নিয়ে ওকে ছেড়ে দিলো।
ছুরিটার দিকে তাকিয়ে দূরে ছুড়ে ফেললো।
ইরিনের হাত ধরে রুম থেকে বেড়িয়ে সবার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
ইরিনের বড় চাচা রেগে বলে উঠলো,’ এই ছেলে তুমি কে? আমাদের ঘরের মেয়েকে এভাবে ধরে নিয়ে এসেছো কেনো?? দেখে তো ভদ্র ঘরের ছেলে বলেই মনে হচ্ছে।

এবার যেনো কানাঘুষা আরো বেড়ে গেলো।

নীল ইরিনের হাত ছাড়লো না। শক্ত করে ধরে বললো,’ আমি ওকে বিয়ে করতে চাই….
ইরিন চমকে তাকালো নীলের দিকে। সে কি করুনা করছে ওর অবস্থা দেখে?
ইরিন কিছু বলতে গেলে। নীল হাতটা আরো শক্ত করে ধরে বললো,’ আমি এখানে বড়দের সাথে কথা বলছি তুমি কোনো শব্দ উচ্চারণ করবে না।’

ইরিনের আরেক চাচা বললো,’ তোমার পরিচয় কি? আর দেখো না ইরিনের বিয়ে তো আমরা ঠিক করে ফেলেছি।

নীলঃ আন্টি কোথায়?

আরেক চাচা বললো,’ বেয়াদব ছেলে তো।চিনো আমাদের কে? ওর হাত ছাড়ও নইলে হাত কাইটা ফেলামু।
নীল উনার কথা শুনে নূরের দিকে হাসি দিয়ে তাকালো।

ভাই এই পুলা কেডা। দেখেন আমরা ভয় দেখাই আর পুলা হাসে। আমার তো কিছুই সুবিধার লাগছে না।যা করার তারা তারি করেন।

নূর ইরিনের চাচার সামনে গিয়ে বললো,’ নীল হলো চৌধুরী বাড়ির ছেলে। চৌধুরী বাড়ি সম্পর্কে আপনাদের ধারণা অবশ্যই আছে। আপনি কি কথা বাড়াবেন?’

চৌধুরী বাড়ির ছেলে শুনে চমকে উঠলো। চৌধুরী বাড়ির ছেলেদের সম্পর্কে সবাই জানে। এখন ওদের ফিরিয়ে দিলে যদি ওরা একদম ঘুরায় গিয়ে হাত দেয় তাহলে একদম সব যাবে। তাই অনিচ্ছুক হয়েও রাজি হতে হলো।

খুব জলদি বিয়ের কাজ শেষ হয়ে গেলো।

সবাই বউ নিয়ে রওনা দিলো বাড়ির উদ্দেশ্যে।হাজার বলেও নীলকে ওদের বাড়িতে না নিয়ে নতুন বউ নিয়ে চৌধুরী বাড়ির দিকে গাড়ি চলছে।

নীল, রুদ্র, ইরিনের মনে বাড়িতে গেলে কি ঝর হয় তা নিয়ে ভয় কাজ করছে। কিন্তু নূরের মুখে কোনো চিন্তার ছাপ নেই। গাড়িতে বিয়ের গান লাগিয়ে বিন্দাস এনজয় করছে।

চলবে…

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here