এক খণ্ড কালো মেঘ পর্ব -৩২

#এক_খণ্ড_কালো_মেঘ
#পর্ব_৩২
#নিশাত_জাহান_নিশি

বিক্ষুব্ধ হয়ে অয়ন্তী গটগট করে হেঁটে গিয়ে সেই পুলিশ অফিসারের শার্টের কলার চেপে ধরল! মনে জমতে থাকা অসীম রাগ, ক্ষোভ, আতঙ্ক এবং দুঃখে তার বর্তমান অবস্থা প্রায় হিংস্র বাঘিনীর ন্যায় হিংস্রতর। এই সময় তার মধ্যে কোনো ডর ভয় কাজ করছেনা। কোনো প্রকার বাঁধা-বিপত্তিও যেন তার গাঁয়ে লাগছেনা। পারলে এখন-ই সে অফিসারকে এ’টে’ম টু মা’র্ডা’র করে দেয়! জানের কোনো পরোয়া নেই তার। ভয়ঙ্কর জেদে ফোঁস ফোঁস করে সে হকচকিয়ে থাকা পুলিশ অফিসারের দিকে ধারালো দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। ধারালো গলায় বলল,,

“কী করেছিস তুই আমার হাজবেন্ডকে? এভাবে ম’রা’র মত পড়ে আছে কেন সে? যদি তার কিছু হয়ে যায়না? তোকে আমি সাক্ষাৎ মৃ’ত্যু’পুরী থেকে ঘুরিয়ে আনবে। কু’ত্তা’র মত মা’র’র তোকে।”

চঞ্চলসহ আশেপাশের কনস্টেবলরা যেন হাজার জোরাজুরি করেও অয়ন্তীর শক্ত হাতটি অফিসারের শার্টের কলার থেকে ছাড়াতে পারছিল না! কোথা থেকে যেন এত শক্তি এসে অয়ন্তীর গাঁয়ে ভর করল তা সঠিক বুঝা যাচ্ছেনা। অফিসারের বিস্মিত দৃষ্টি এখন তেজস্ক্রিয় দৃষ্টিতে পরিণত হলো! ক্ষুব্ধতা বাড়তে লাগল উনার। এক ঝটকায় তিনি অয়ন্তীর হাত থেকে উনার শার্টের কলারটি ছাড়িয়ে নিলেন। সেই কড়া ঝটকায় অয়ন্তী এক ফুট দূরত্বে গিয়ে ছিটকে পড়ল। অফিসারটি তার শার্টের কলার ঝেড়ে অকপটে গলায় অয়ন্তীকে বললেন,,

“বে’য়া’দব মেয়ে কোথাকার! পরিবার থেকে শিক্ষা পাসনি কার সাথে কীভাবে আচরণ করতে হয়? একজন রানিং পুলিশ অফিসারের গাঁয়ে হাত তুলেছিস তুই। এর ফল কী হতে পারে ভাবতে পারছিস তো?”

“পরিবার থেকে সঠিক শিক্ষা পেয়েছি বলেই আপনার শার্টের কলার ধরতে, আপনার সাথে কটু ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছি আমি। অন্যায় সহ্য করতে পারছিনা আমি। আপনার এই সস্তা হুমকি ধমকিকে মোটেও ভয় পাইনা আমি! বড়জোর কী করবেন আপনি আমার? সেলে ঢুকিয়ে দিবেন তাই তো? এতে আমার কোনো সমস্যা নেই! যা করার আপনি করতে পারেন। তবে সমস্যা এখানেই আপনার মত ঘু/ষ খাওয়া পুলিশ অফিসারকে জা’নে না মে’রেই আমাকে সেলে ঢুকতে হবে।”

রাগান্বিত হয়ে পুলিশ অফিসার অয়ন্তীকে চ/ড় মা/রা/র জন্য অগ্রসর হলেন! তক্ষণি চঞ্চল উদ্যমী হয়ে অফিসারের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। হাতজোর করে নিচু গলায় বলল,,

“ভুল হয়ে গেছে স্যার। প্লিজ ক্ষমা করে দিন। অয়ন্তী আসলে বুঝতে পারছেনা এখানে কী থেকে কী হচ্ছে। আসলে রাফায়াতকে অয়ন্তী অনেক ভালোবাসে তো। তাই রাফায়াতের এই মুমূর্ষু অবস্থা নিতে পারছেনা সে। প্লিজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড স্যার।”

কাঁদতে কাঁদতে অয়ন্তী এবার ১০২ নম্বর সেলের দরজায় দু’হাত দ্বারা ধাক্কাতে লাগল। বিভৎস অবস্থায় উল্টে পড়ে থাকা রাফায়াতকে সে বড়ো গলায় চিৎকার করে ডাকতে লাগল। হেঁচকি তুলে বলল,,

“রাদিফ এদিকে তাকাও প্লিজ। দেখো আমি এসেছি। উঠার চেষ্টা করো প্লিজ।”

রাফায়াতকে ডাকতে ডাকতে ক্লান্ত হয়ে উঠল অয়ন্তী। এদিকে অফিসার অয়ন্তীর নামে মিথ্যে অভিযোগ সাজাতে ব্যস্ত! কীভাবে তিনি অয়ন্তীকে সেলের ভেতর ঢুকাবেন সে কলকাটিতে ব্যস্ত। তাকে করা হে/ন/স্তা এবং অপ/মানের শোধ তিনি কীভাবে নিবেন সেই চিন্তায় উদ্ধত। চঞ্চলের কাকুতিভরা অনুরোধও যেন অফিসারের জেদের কাছে তুচ্ছ। পারছেন না তিনি চঞ্চলকে ধাক্কা মেরে উনার রুম থেকে বের করে দিতে।

কাঁদতে কাঁদতে অয়ন্তী এক পর্যায়ে সেলের দরজায় ধপাস করে বসে পড়ল। গলার জোরও ক্রমশ তার কমে আসছিল। অবশেষে রাফায়াতের থেতলে যাওয়া বি/ষা/ক্ত কর্ণকুহরে অয়ন্তীর কান্নার শব্দ ভেসে গেল। ভোররাত থেকে হারিয়ে ফেলা চেতনা শক্তি সে একটু একটু করে ফিরে পেতে লাগল। জায়গা থেকে নড়েচড়ে ওঠল সে। তলপেটে হাত রেখে প্রখর ব্য/থা অনুভব করল। শোয়া থেকে বসার শক্তিটিও সে হারিয়ে ফেলল। সমস্ত শরীরে লা/ঠি/কা/ঘাতের দাগগুলো তখন তরতাজা হয়ে উঠল। মোটা ভাজ এবং শক্ত আবরণ পড়ে গেল দেহে। শরীরময় অতিরিক্ত ব্য/থা হতে লাগল। রাফায়াতের নড়াচড়ার আভাস পেয়ে অয়ন্তী পুনরায় অশান্ত হয়ে উঠল৷ লোহার দরজার ভেতর দিয়ে হাত ঢুকিয়ে সে রাফায়াতকে হাতছানি দিতে লাগল। উত্তেজিত গলায় বলল,,

“রাদিফ এদিকে তাকাও। আমি তোমাকে নিয়ে যেতে এসেছি। তোমার অয়ন্তী তোমাকে নিয়ে যেতে এসেছে।”

কুঁকিয়ে উঠল রাফায়াত। অস্ফুটে গলায় সে তার উল্টোদিকে থাকা অয়ন্তীকে বলল,,

“প্লিজ হেল্প মি অয়ন্তী। প্লিজ হেল্প মি।”

বুকটা যেন ধক করে উঠল অয়ন্তীর। পাগলের মত করতে লাগল সে। বসা থেকে ওঠে দৌঁড়ে গিয়ে সে অফিসারের রুমের ভেতর ঢুকে পড়ল। ডান হাতটি সে অফিসারের দিকে বাড়িয়ে দিলো। কান্নার ঢেউ চোখে নিয়ে সে শান্ত গলায় অফিসারকে বলল,,

“সেলের চাবিটা দিন স্যার। ম’রে যাচ্ছে আমার রাদিফ। তাকে বাঁচাতে হবে আমার।”

উত্তেজিত হয়ে বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালেন অফিসার। অয়ন্তীর মর্মাহত চোখেমুখে তিনি তেজী দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। হাতে একটি কাগজ নিয়ে কাগজটিকে অয়ন্তীর মুখে ছুঁড়ে মারলেন! রোষাগ্নি গলায় বললেন,,

“তোকেও এখন সেলের ভেতর ঢুকাচ্ছি দাঁড়া! কে কাকে বাঁচায় পরে দেখা যাবে।”

দুজন মহিলা কনস্টেবলকে অফিসার হুকুম দিলেন অয়ন্তীকে এ/রে/স্ট করতে। ইতোমধ্যেই হঠাৎ অফিসারের রুমে মহা তাণ্ডব নিয়ে মির্জা ফখরুল হকের আবির্ভাব ঘটল! পাশে অবশ্য উনার দলবল এবং রাফায়াতের বাবাও আছেন। অফিসার রুমে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দেখে মির্জা ফখরুল হক সন্দেহ প্রকাশ করলেন। অফিসারের দিকে তিনি কঠিন প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,

“কী হচ্ছে এখানে?”

তৎক্ষণাৎ হকচকিয়ে উঠলেন পুলিশ অফিসার। ইশারায় কনস্টেবলদের বললেন অয়ন্তীকে ছেড়ে দিতে। অফিসারের ইশারা বুঝে দু’কনস্টেবল অয়ন্তীর হাত দু’খানা ছেড় দিলেন। পাশেই রাফায়াতের বাবা এবং নিজের দলের নেতাকে দেখে চঞ্চল যেন তার বুকে সাহস খুঁজে পেল। দৌঁড়ে গিয়ে সে মির্জা ফখরুল হকের মুখোমুখি দাঁড়ালো। আতঙ্কিত গলায় বলল,,

“রাফায়াতকে সেলের ভেতর আটকে রাখা হয়েছে বস। বে’ধ’ড়ক মা’র’ধ’র ও করা হয়েছে।”

খবরটি শোনা মাত্রই রাফায়াতের বাবা যেন অধৈর্য্যে হয়ে উঠলেন। কাঁদো কাঁদো মুখে তিনি মির্জা ফখরুল হকের দিকে তাকালেন। ভরাট গলায় বললেন,,

“কিছু একটা ব্যবস্থা করুন স্যার। না হয় আমার ছেলেটাকে তারা মে/রে ফেলবে।”

ডুকরে কেঁদে উঠল অয়ন্তী। দ্রুত পায়ে হেঁটে সে মির্জা ফখরুল হকের মুখোমুখি দাঁড়ালো। হাত জোর করে কান্নায় ভেঙে পড়ে বলল,,

“আমি চিনিনা আপনি কে। হয়ত রাদিফের কোনো শুভাকাঙ্ক্ষী হবেন। যেহেতু আঙ্কেলও আপনাকে ভরসা করছে আমিও হয়ত চোখ বুজে আপনাকে ভরসা করতে পারি। এই অ’স’ভ্য অফিসারটা আমার রাদিফকে বিনা দোষে এ’রে’স্ট করেছে স্যার। রাদিফের বিরুদ্ধে স্ট্রং কোনো প্রুফও নেই তার কাছে। হয়ত ঘু”ষ খেয়েছে নয়ত রাদিফের সাথে তার পূর্ব শত্রুতা ছিল। সেলে গিয়ে দেখে আসুন না একবার, আমার রাদিফকে মে/রে ঐ জা’নো’য়ারটা কী অবস্থা করেছে। মেঝেতে লুটিয়ে পড়েছে সে। শরীরে একরত্তি শক্তিও অবশিষ্ট নেই যে পায়ে ভর দিয়ে ওঠে দাঁড়াবে সে। প্লিজ আপনি আমার রাদিফকে হেল্প করুন স্যার প্লিজ।”

অয়ন্তীর কাকুতি মিনতিতে মির্জা ফকরুল হক না যতটা অবাক হয়েছেন তার চেয়ে অধিক অবাক হয়েছেন রাফায়াতের বাবা। অয়ন্তীকে তিনি আগে থেকে চিনতেন না। রাফায়াত তাকে কি’ড’ন্যাপ করে এনেছিল ব্যস এটুকুই জানতেন তিনি। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার অয়ন্তীর সাথে দেখা উনার। হঠাৎ রাফায়াতের জন্য অয়ন্তীর এত কনসার্ণ দেখে অবাক হলেন তিনি। চঞ্চলের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন তিনি। ইশারায় বুঝাতে চাইলেন মেয়েটি কে হয় রাফায়াতের? চঞ্চলও ইশারায় কিছু বুঝানোর পূর্বেই মির্জা ফখরুল হক হঠাৎ চঞ্চলের দিকে সন্দিহান দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। কৌতূহলী গলায় প্রশ্ন ছুড়লেন,,

“রাফায়াতের সাথে এর চক্কর টক্কর আছে না-কী?”

মাথা দুলিয়ে চঞ্চল হ্যাঁ সূচক সম্মিত জানালো। বিপরীত দিকে অয়ন্তী যেন অনর্গল গলায় বলেই চলল,,

“হ্যাঁ। আমি এবং রাদিফ দুজন দুজনকে অনেক ভালোবাসি স্যার! এখন দাঁড়িয়ে থেকে আর সময় নষ্ট করবেন না প্লিজ। রাদিফকে সেল থেকে বের করতে সাহায্য করুন আমায়। তাকে এক্ষুণি আমাদের হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।”

রাফায়াতের বাবা এবার মুখ চেপে কেঁদেই দিলেন! আর আটকে পারলেন না নিজের পিতৃত্ববোধকে। অসহায়ত্ব যেন ক্রমে ক্রমে বাড়তে লাগল উনার। স্পষ্ট গলায় এবার মির্জা ফখরুল হক অফিসারকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,

“সেলটা খুলে দিন৷”

“সরি স্যার! একজন খু;নির প্রতি আমরা কোনো মায়া দেখাতে পারিনা। দয়া করে আমাকে নিয়মের বাইরে যেতে বলবেন না।”

রুখে গেল অয়ন্তী পুলিশ অফিসারের দিকে। ঝাঁজালো গলায় বলল,,

“এই? খু/নি কে হ্যাঁ? খু/নি কে? আপনি জানেন আমার রাদিফ অনিক ভাইকে খু/ন করেছে? কোনো প্রমাণ দেখাতে পারবেন আপনি আমাকে? যাকে আপনি এত সম্মান দিয়ে কথা বলছেন তার সামনেই প্রমাণটা দেখান না যে আমার রাদিফ অনিক ভাইকে খু/ন করেছে।”

“প্রমাণ তো অনেক-ই আছে মিস অয়ন্তী! কোটে গেলে একে একে সব প্রমাণ জাহির করা হবে।”

“না। আপনার কাছে কোনো প্রমাণ নেই। শুধু সোনার একটি লকেট ছাড়া! ল’কে’টটি তাও প্রিয়ার ওকে? গ্রে/ফ/তার করতে হলে তাকে করুন!”

অয়ন্তীর মুখ থেকে বেঁফাস কথা বেরিয়ে যেতেই মির্জা ফখরুল হক সহ রাফায়াতের বাবা অয়ন্তীকে চেপে ধরলেন! মাথায় হাত চলে গেল চঞ্চলের। শুকনো ঢোঁক গিলতে থাকা অয়ন্তীর দিকে সে অসন্তোষ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। সন্দেহের একটু আঁচ পেতেই মির্জা ফখরুল হক এবার অয়ন্তীর দিকে তেড়ে এসে বললেন,,

“কীসের লকেট? কোন লকেটের কথা বলছ তুমি?”

এই মুহূর্তে অয়ন্তী ভয় পেয়ে গেলেও বুকে সাহস রেখে সে মির্জা ফখরুল হকের মুখোমুখি দাঁড়ালো। সোজাসাপটা গলায় বলল,,

“প্রিয়াকে সেইফ করতে গিয়ে আজ রাদিফ সেলের ভেতরে স্যার। অনিক ভাইয়ার লা’শে’র পাশে সেদিন এই পুলিশ অফিসারটি প্রিয়ার গলার সোনার লকেটটি কুঁড়িয়ে পেয়েছিল। তো ধরতে হলে তারা প্রিয়াকে ধরুক। আমার রাদিফকে কেন ধরবে?”

অফিসার এবার তার মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে রাখা দ্বিতীয় রূপটি দেখালেন! অয়ন্তীর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে উগ্রবাদী গলায় বললেন,,

“কারণ, তোমার রাদিফ আর প্রিয়া মিলেই সেদিন অনিকের খু/নটা করেছিল। তার প্রমাণ অবশ্য আমাদের কাছে আছে!”

পরিস্থিতি এবার পূর্বের তুলনায় আরও উত্তাল হয়ে উঠল। উপস্থিত সবাই যেন দোটানায় পড়ে গেল। কৌতূহল বাড়তে লাগল। তর্ক বিতর্ক হতে লাগল উভয়ের মধ্যেই। রাফায়াতের বাবাকে নিয়ে মির্জা ফখরুল হক অফিসারের মুখোমুখি চেয়ার টেনে বসলেন। এর ফাঁকে অয়ন্তী হঠাৎ অফিসার রুম থেকে বের হয়ে গেল। দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে সে রাফায়াতের সেলের কাছে চলে এলো। দুর্বল শরীর নিয়ে রাফায়াত দেয়ালে হেলান দিয়ে বসেছে মাত্র। টানা আধঘণ্টা যুদ্ধ বিগ্রহের পর সে শরীরে মোটামুটি শক্তি যুগিয়ে একটুখানি বসতে পেরেছে। অমনি সেলের দরজা ধরে ধপ করে বসে পড়ল অয়ন্তী। রাফায়াতের দিকে প্রফুল্লিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করল সে। উত্তেজিত গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“এখন কেমন আছো রাদিফ? শরীর ঠিক আছে তো?”

ঘোলাটে দু’চোখে রাফায়াত সেলের দরজায় বসে থাকা অয়ন্তীর দিকে স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। কিয়ৎক্ষণ অয়ন্তীর দিকে সে একই সরলরৈখিক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। অতঃপর দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে অস্ফুটে গলায় বলল,,

“আমাকে এখান থেকে বের করো অয়ন্তী। যা করার প্লিজ দ্রুত করো।”

“তুমি চিন্তা করোনা রাদিফ। খুব শীঘ্রই তুমি এখান থেকে মুক্তি পাবে। আমি অফিসারকে বলে দিয়েছি প্রিয়া খু/ন করেছে অনিক ভাইকে! তুমি নও!”

রাফায়াত যেন এবার তার সমস্ত চেতনা শক্তি ফিরে পেল। শরীরে যেন আগের মত বলও ফিরে পেল। পায়ে হেঁছড়াতে হেঁছড়াতে সে অয়ন্তীর মুখোমুখি এসে বসল। বিস্ফোরিত গলায় অয়ন্তীর দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,,

“এসব তুমি কী বলছ অয়ন্তী? প্রিয়ার কথা তুমি অফিসারকে বলে দিয়েছ?”

“হ্যাঁ বলে দিয়েছি! বেশ করেছি বলেছি। প্রিয়ার পাপের শাস্তি তুমি কেন পাবে হ্যাঁ? কী অবস্থা হয়েছে তোমার দেখো তো? আর দু/একদিন এই সেলের মধ্যে থাকলে তারা তোমাকে মে/রে ফেলবে রাদিফ। আমি বেঁচে থাকতে তোমার গাঁয়ে কেউ ফুলের টোকাও দিতে পারবেনা।”

“প্রিয়া অনিককে খু/ন করেনি অয়ন্তী। এত বড়ো জঘন্য কাজ প্রিয়া করতে পারেনা। তুমি ভুল করেছ অয়ন্তী। প্রিয়াকে তারা খুঁজে পেলে আমার চেয়েও বেশী ট/র্চা/র করবে তার উপর। খাবলে খুবলে খাবে তাকে। মেয়েরা জেলের মধ্যে সেইফ নয়।”

“আমি অত শত বুঝিনা রাদিফ। প্রিয়ার সাথে কী হয় না হয় এসব আমার দেখার বিষয় নয়। তোমাকে আমি সুস্থভাবে জেলের বাইরে দেখতে চাই ব্যস এটুকুই।”

রাফায়াতকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলোনা অয়ন্তী। বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো সে। পিছু ঘুরে অভিমান নিয়ে রাফায়াতকে বলল,,

“কে/ইস এখন আমার হাতে রাদিফ। জেঠা, জেঠি, অনিক ভাইয়ার শুভাকাঙ্ক্ষী, এমনকি পুলিশ অফিসারকে আমি যাই বলব এখন ঠিক তাই হবে। হ্যাঁ। তুমি ভাবতেই পারো আমি স্বা/র্থ/পর। যদি নিজের ভালোবাসার মানুষকে জানে বাঁচাতে অন্য কাউকে ফাঁসাতে হয় তো আমি স্বার্থ/পর! তোমার কাছে আমি আজীবন স্বার্থ/পর হয়ে থাকতেও রাজি রাদিফ। শুধু তুমি ভালো থাকো বেঁচে থাকো ব্যস এটুকুই কামনা আমার।”

পেছন থেকে রাফায়াত অয়ন্তীকে অনেক ডাকাডাকি করেও থামাতে পারলনা। অয়ন্তী তার সিদ্ধান্তে অটল রইল। পুলিশ স্টেশন থেকে বের হয়ে সে হসপিটালে ছুটে গেল। দুপুরের দিকে তার জেঠা জেঠিরা দেশে এসে পৌঁছালো। অনিকের বিভৎস লা/শ দেখে দুজনই বার বার বেহুশ হয়ে যাচ্ছিল। বিশেষ করে অনিকের মা। থামানোই যেন যাচ্ছিল না উনাকে। স্ট্রোক করার মত অবস্থা। চিঁড়ে রাখা অনিকের লা”শটিকে দা/ফন কা/ফন করে তারা অনিকের খু/নিকে শাস্তি দেওয়ার জন্য উদ্ধত হয়ে উঠল!

অয়ন্তীর জবানবন্দি অনুযায়ী প্রিয়াকে ফ্লার্ট থেকে এ/রে/স্ট করল পুলিশ! রাফায়াতের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ না থাকায় মির্জা ফখরুল হকের চাপে পড়ে এবং সমানভাবে অয়ন্তীর চাপে পড়েও রাফায়াতকে ছাড়তে বাধ্য হন অফিসার। এক্ষেত্রে সাবেক মন্ত্রী মিন্টু খানের কোনো কুটিলতা কাজে এলো না! বিভিন্নভাবে তিনি ফাঁসাতে চেয়েছিলেন রাফায়াতকে। তবে শেষ রক্ষে হলোনা। কারণ অনিকের গলায়, হাতে, পায়ে এবং শরীরে লেগে থাকা হাতের ছাপ-ই বলে দিচ্ছিল খু/ন রাফায়াত করেনি বরং প্রিয়া একাই এই খু/নটি করেছে। সর্বাঙ্গে প্রিয়ার হাতের ছাপ ছিল সুস্পষ্ট!

রাফায়াত ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফেরার পরেও সুখ শান্তি ছিলনা কারো মনে। কেউ যেন বিশ্বাসই করতে পারছিল না প্রিয়া অনিককে খু/ন করতে পারে। প্রিয়ার কুকীর্তিও একে একে সবার সামনে এলো। প্রিয়ার প্রতি সবার বিশ্বাস ওঠে গেল। সবাই যেন সত্যি-ই বিশ্বাস করতে লাগল প্রিয়াকে মানিসকভাবে এবং শারীরিকভাবে ঠকিয়েছিল অনিক। আর সেই ঠকে যাওয়ার প্রতিশোধ নিতেই অনিককে খু/ন করার মত সিদ্ধান্তটি নিয়েছিল প্রিয়া!

অয়ন্তীর প্রতি খুবই ক্ষিপ্ত রাফায়াত! অয়ন্তীর এই স্বার্থপরতা তার একদমই পছন্দ হয়নি। অকারণে প্রিয়াকে ফাঁসানো হয়েছে এখানে। কেউ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সেদিন প্রিয়াকে ব্যবহার করেছিল। প্রিয়ার হাতের ছাপ ব্যবহার করেছিল। যে করেই হোক আগামী দু/তিনদিনের মধ্যে এই ষ”ড়য”ন্ত্রের মূল হোঁতা কে খুঁজে বের করতে হবে তার। প্রিয়াকে কোটে তোলার আগেই যা করার করতে হবে তাকে।

সন্ধ্যা গড়িয়ে তখন রাত ঘনিয়ে এলো। রাফায়াত তার দুর্বল শরীর নিয়ে মাত্র বিছানা থেকে ওঠে দাঁড়ালো। তলপেটে এখনো মা’রা’ত্নক ব্যথা তার। লা/ঠির আঘাতে দেহে কালসিটে দাগ পড়ে যাওয়া ক্ষ/ত স্থানগুলো ব্যথায় টনটন করছে তার। এই অসুস্থ শরীর নিয়ে বাড়ি থেকে বের হতে একদমই ইচ্ছে করছেনা তার। তবুও যেন এই মুহূর্তে মির্জা ফখরুল হকের সাথে দেখা করাটা খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে তার। ব্যথাযুক্ত শরীর নিয়ে কুঁকিয়ে ওঠে রাফায়াত তার রুমের দরজা খুলে বের হতেই অয়ন্তীর মুখোমুখি পড়ে গেল! সঙ্গে সঙ্গেই সে হাসোজ্জল অয়ন্তীর থেকে তার মলিন মুখটা ফিরিয়ে নিলো। রূঢ় গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“তুমি এখানে কী করছ?”

রাফায়াতের রাগ হওয়ার কারণ যদিও অয়ন্তীর কাছে স্পষ্ট তবুও সে রাফায়াতকে আরও একটু রাগানোর জন্য বলল,,

“আমারও সেম প্রশ্ন। তুমি দরোজার বাইরে কী করছ? তোমার তো এখন বিছানায় থাকার কথা, না? রেস্ট নেওয়ার কথা।”

“অনেক ভেবেছ আমার কথা। আর নয়! এবার আমাকে একটু আমার মত করে থাকতে দাও।”

“অনেক হয়েছে নিজের মত থাকা! তবে আর নয়। এবার একটু তোমার ভালো মন্দের কথা আমাকেও ভাবতে দাও!”

#চলবে….?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here