#এক_চিলতে_রোদ-২
#Writer_Nondini_Nila
৮.
ইহানের পাশ কাটিয়ে খালি অটোর জন্য দাঁড়িয়ে আছি। দুই একটা অটো এলো কিন্তু থামলো না। শো শো করে আমার পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। আমার বাম সাইটে ইহান কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে। বিরক্ত কর মুখ করে। আমার তাকে বলেছি তার সাথে ওই বাইকে আমি যাব না। আমি অটোতে যাব। বলেই গাড়ির অপেক্ষা করছি। মেলায় থাকা লোকজন নিজের বাইক কার করে চলে যাচ্ছে যে যার মতো। রাত বলে গাড়ি ঠিক পাওয়া যায় না। আর যে কয়টা আসছে এতো মানুষ গাড়ির জন্য ওয়েট করছে যে আমি উঠার ই সুযোগ পাচ্ছি না।
বাইকের হণ বাজিয়ে আমাকে নিজের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করালো ইহান। আমি তার দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম তার বিরক্ত মাখা মুখ।
‘ তোমার মতো ঘাড়ত্যারা মেয়ে আমি খুব কম দেখেছি। সব মেয়েরা বাইকে চড়া পছন্দ করে আর তুমি এটাকে অবজ্ঞা করছো? আচ্ছা তোমার সমস্যা কি বলো তো?’
‘ আমি কতো বার বলবো আমি বাইকে যাব না। আমাকে অটো ঠিক করে দিন।’
‘ আমি কি এখন অটোর জন্য পাগলা দেওয়ানা হয়ে ঘুরবো। দেখতেই তো পাচ্ছো সবাই কেমন চালক পাখির মতো অটোর জন্য ওয়েট করছে। তোমার কি মনে হয় এরা থাকতে তুমি উঠার সুযোগ পাবে?’
‘ আপনি বাইকে বসে না থেকে নেমে চেষ্টা করুন না
তাহলেই সব হয়ে যাবে।’
‘ কিছু হবে না। এতো ঝামেলা না করে উঠে এসো রাত বারছে কিন্তু। তারাতাড়ি ফেরা উচিত। এমনিতেই এক ঝামেলা হলো ছেলেগুলো আবার এখানে না চলে আসে।দেখো আমার এখানে বর্তমান এ পরিচিত কেউ নাই তাই আমি একা কিন্তু ওদের সাথে তোমার জন্য মারামারি করতে পারবো না।’
‘ আমি কি বলেছি আমার জন্য মারামারি করেন। দরকার নাই।আপনি যে একটা ভীতুর ডিম আমি জানি। তাই তো ফাইট না করে দৌড় পালিয়ে এসেছিলেন।’
‘ তোমার সাহস তোমার কম না আমাকে ভীতু বলছো? আর তোমার জন্য আমি ফাইট করতে যাব কেন? কে হও তুমি? আমি এসবের জন্য কিছুটা দায়ী এজন্য জাস্ট সাহায্য করতে এসেছি। তোমার ফ্রেন্ড খুব করে রিকোয়েস্ট করেছে তোমাকে বাসায় ঠিক মতো পৌঁছে দিতে। এজন্য তোমাকে একা রেখে যেতে পারছি না। আমার তো মনুষ্যত্ব আছে এভাবে একটা মেয়েকে বিপদে পড়তে দেখেও ছেড়ে যাব। তাই এতো কিছু সহ্য করছি। না হলে কখন বাসায় গিয়ে লম্বা ঘুম দিতাম। তোমাকে নিয়ে ঝামেলা পোহাতাম না।’
ইহানের কথা শুনে হা হয়ে গেলো আমার মুখটা। আমি চুপচাপ সরে দাড়ালাম।একটা অটো আসছে আমি হাত বাড়িয়ে থামানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু নো রেসপন্স।রাগে আমার শরীর কাঁপছে। সাথে চোখ ছলছল করছে। এতো কথা বললো এখানে তো উনিই দোষী তখন দরদ দেখালো কেন আর কেনই বা নিজের সাথে নিয়ে গেলো না এসব কিছুই হতো না। এখন আমাকে এতো কথা শুনালো। কিন্তু বর্তমানে কিছু বলতে চায়না। এখন ও অসহায়। সব দাঁত চেপে সহ্য করতে হবে। কারণ এখানে থেকে বাসা অবধি এই লোকটার সাথেই যেতে হবে। আমি এই রাতে একা বাসায় যেতে পারবো না। তারপর সাহায্য আমার দরকার তাই ইহানের কথায় খারাপ ও রাগ হলেও আমি চুপচাপ সহ্য করলাম।
বাইকে না উঠার কারণ হচ্ছে। আমি ছোট থেকেই বাইক পছন্দ করতাম। আমার জন্য বাবা বাইক কিনে ছিলো। আমাকে ছোট বেলায় স্কুলে দিয়ে আসতো অফিসে যাওয়ার সময়। বাবা কার রেখে বাইক ইউস করতো। একদিন আমি বাবাকে না ধরে বসে ছিলাম আর পেছনে থেকে পরে মাথা ফাটিয়ে ফেলেছিলাম। সেই থেকে আমার বাইকে উঠতে ভয় করে। এখনো মনে হয় উঠলেই আমি ঠাস করে পরে যাব। তাও এটা আমার বাবা থাকলে উঠতাম আর তাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরতাম কিন্তু এই অপরিচিত একটা ছেলের সাথে বাইকে উঠলে তাকে আমার জরিয়ে ধরতে হবে না না এই বাইকে আমি কিছু তেই উঠবো না।
এক ঘন্টার মতো দাঁড়িয়ে থাকতে একদিকে খিদের যন্ত্রণা অন্যদিকে এই দাড়িয়ে থেকে পা ব্যাথা করছে এখন অসহ্য লাগছে। হঠাৎ সেই তিনজন ছেলেকে এদিকে আসতে দেখেই চমকে উঠলাম। আর বাম সাইটে ইহান যে খানেই ছিলো সেদিকে তাকিয়ে থমকে গেলাম। বাইক সহ ইহান নাই। আমি ভয়ে এদিকে ওদিকে তাকালাম কোথাও নাই।মুখে হাত দিয়ে ভাবছি উনি আমাকে এই খানে একা ফেলে চলে গেলো? এখন কি হবে ওই ছেলে গুলো তো এদিকেই এগিয়ে আসছে ভয়ে আমার বুক ধুকপুক করছে। কেন তার সাথে তর্ক করলাম এখন আমার কি হবে? আমি বাসায় যাব কি করে? ছেলেগুলো আমার কাছাকাছি চলে এসেছে আমার মাথা ঘুরতে লাগলো। খুব খারাপ কিছু হবে আজকে ভাবতেই শরীর কাঁটা দিয়ে উঠছে।
আমি মাথায় হাত পেছনে ছেলের গতিবিধি দেখছি। আমার থেকে এখন এক হাত দূরে আমি কোন দিকে যাব ভাবছি তখন একটা পুরুষালী ঠান্ডা হাত আমাকে টেনে নিলো। আমি পেছনে ঘুরার আগেই আমাকে টেনে অটোতে তুলে নিলো আর সাথে সাথে অটো ছুটে চললো অজানা গন্তব্যে। আমার সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে এই তো বিপদে আমার দিকে ধেয়ে আসছিলো এখন আবার কে জানি আমাকে টেনে অটোতে তুললো হায় আল্লাহ এখন কি হবে আমাকে কি কিডন্যাপ করা হলো? ইহান এভাবে বিপদে ফেলে গেলো? যাবেই তো আমি কে তার কিছু না হলে কি সাহায্য করা যায় না মানুষ হিসেবে!!
আমি ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে উঠলাম। লোকটার দিকে তাকিয়ে আর ভয় পেতে ইচ্ছে করছে না।
‘ হোয়াট হ্যাপেনস ঊষা? কি হয়েছে তোমার কাঁদছো কেন?’
পরিচিত কন্ঠ লাগলো আমি ঘাড় বাঁকিয়ে ইহানের কুঁচকানো ভ্রু দেখে চমকে কান্না থামিয়ে দিলাম। বড় বড় চোখ করে তাকালো আমাকে কিডন্যাপ করলো তাকে ইহানের মতো লাগছে কেন? পাগল হয়ে গেলাম নাকি?
‘ আপনিইইইই.
‘ আমি থাকবো না তো কে থাকবে? কার এতো ঠেকা তোমাকে সাহায্য করার? এই অটো খুঁজতে আমার কতো কষ্ট হয়েছে জানো উফ কি জেদি মেয়ে তুমি। বাধ্য হয়ে অটো খুঁজে আনতে হলো কি আর করবো দায়িত্ব যেহেতু নিয়েছি পালন তো করতেই হবে!!’
‘ কিন্তু আমি তো ভেবেছিলাম আপনি আমাকে ফেলে চলে গেছেন!’
‘ ভালো সেটা ভাবা স্বাভাবিক। আমি এমনটাই করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমি মনুষ্যত্ব হীন না। ‘
আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। কি ভয় পেয়ে গেছিলাম। বুকে হাত রেখে জোরে শ্বাস নিলাম। এখন পানি না খেলেই নয়। আমি বললাম,
‘ একটু পানি খাব না। না হলেই গলা শুকিয়ে মরে যাব আমি।’
ইহান নিজের ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে দিল। সাথে বিস্কুট।
‘ বিস্কুট কই পেলেন?’
‘ কি জানি কবে কিনেছিলাম মনে পরছে না। ব্যাগ হাতালে অনেক জিনিস পাওয়া যাব। কারণ কতো কিছু রাখি কিন্তু কখনো চেক করে দেখি না। খেতে পারো ভালো এটা!’
আমি কিছু না বলেই গেলাম। উনাকে জিজ্ঞেস করলাম না করে দিলো। আমি দুইটা বিস্কুট খেয়ে পানি খেয়ে নিলাম। এক ঘন্টা লাগবে যেতে আমি ব্যাগ থেকে ফোন বের করলাম। ফোন খুলে চমকে উঠলাম দুইশ মিসকল। মা অনেকবার কল করেছে সাথে তুলি ও অচেনা নাম্বার। আমি মাকে কল করলাম।
মা খুব চিন্তা করছিলো। আমি আমতা আমতা করে শুকনো ঢোক গিলে জ্বিবা দিকে ঠোঁট ভিজিয়ে মিথ্যা বললাম অনবরত। মা ফোন রেখে দিলো। মাকে বলেছি তুলিদের বাসায় লেট হয়ে গেছে এখন তুলির বাবা আমাকে পৌঁছে দিতে আসছে। তারপর
তুলিকে কল করে ইচ্ছা মতো বকলাম ওকে কিছু বলার সুযোগ দিলাম না। ফোন কেটে ইহানের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
‘ বাবারে কি ঝগড়ুটে মেয়ে!’
আমি নাক ফুলিয়ে বললাম, ‘ আপনি আমাকে ঝগড়ুটে বললেন?
‘ ইয়েস। আর ওই যে ওই নাম্বারটা আমার।’
বলেই ফোন ইশারা করলো ইহান।
আপনি আমার নাম্বার কোথায় পেলেন?’ অবাক হয়ে বললো।
‘ আজ কাল নাম্বার পাওয়াটা কি খুব কঠিন।’
‘ আপনি কোথায় পেলেন?’
‘ উফফ এটা তো তুলির থেকে নিয়েছি।’
মাথা যন্ত্রনা নিয়ে চুপ করে বসে ছিলাম। বাসায় আসতেই নেমে গেলাম। ইহান বাই বললো আমি তাকালাম ও না চলে এলাম। আম্মু কে কি বলবো আমি কে জানে এসব জানলে আম্মু আমাকে কি ভাববে একটা ছেলের সাথে এলাম খারাপ ভাববে খুব। কলিং বেল চাপ দিয়ে চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে আছি।
#চলবে……..