#এক_চিলতে_রোদ- ২
#Writer_Nondini_Nila
(কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ)
৩৯.(১ম অংশ)
ইহান চলে গেছিল পরদিন যথারীতি। প্রথম প্রথম প্রচুর কষ্ট পেতাম একারণে কিন্তু আস্তে আস্তে মানিয়ে নিচ্ছি নিজেকে। প্রহর গুনছি ইহানের ফিরে আসার। ওই ফারিয়া আছে বলেই আমার চিন্তা বেশি। কিন্তু তা আমি কারো কাছে প্রকাশ করিনা করাটা যুক্তি যুক্ত ও না। কারণ আমার এই ভয়ের জন্য ইহান সেই কাজটি করেছে যা আমরা কেউ এইভাবে করতে চায়নি। সেইদিন পার্টি থেকে আমাকে টেনে নিয়ে গেছিল। আমি থমকে গেছিলাম। পরদিন ইহানকে বিদায় দিলাম। ইহান চলে যাওয়ার পর আমরা ও ও বাসা ছেড়ে চলে আসতে ছিলাম। সেইদিন আরেকটা আশ্চর্য জনক ঘটনা ঘটে। আর তা হলো চাচাজান সেদিন আব্বুর সাথে কথা বলেছিল। আমরা সবাই অবাকের চরম সীমায় পৌছে যায়।
সেইদিন চাচাজান আব্বুকে একটা কথাই বলে গটগট করে উপরে চলে যায়। তার কথাটা ছিল এমন,
‘ জায়েদ আজ থেকে যা। আম্মা এতো রিকোয়েস্ট করছে তার কথাটা শুন অন্তত। আমার কথা তো সব সময় অমান্যই করলি।’
আব্বু স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। তিনি আর চলে যাননি। সেই রাতে আমরা কাটিয়ে পরদিন চলে আসি।
ইহানের সাথে এখন কথা ফোনের ভিডিও অডিও কলে প্রতিনিয়ত হচ্ছে। ওইখানে ওর ভালোই চলছে ফারিয়ার সাথে এক ফ্লাইটে নাই তাই আমি শান্তি তে আছি। নতুন ফ্রেন্ড ও হয়েছে ইহানের যাদের সাথে পরিচিতি করিয়েছে আমাকে। কলের মাধ্যমে। আমার এ এতো সুন্দর নামটা তারা ডাকতে পারে না। ঊষার জায়গায় তারা তাশা, ফাশা বলেছে। ইহান এসব শুনে গলা ফাটিয়ে হেসেছে।
আমি তখন রাগ দেখিয়ে কল কেটে দিয়েছি। পরে ইহান কল করে সরি বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছে। এবং কি ভিডিও কলে কান ও ধরে সরি বলেছে। তখন আর রাগ করে আমি থাকতে পারিনি। খিলখিলিয়ে হেসে উঠেছি। মাঝে মাঝেই আমি সুন্দর করে শাড়ি পরি রাতে। তারপর ইহানকে ভিডিও কল দিয়ে চমকে দেয়। ইহান আমার এমন লুক দেখে ফিদা হয়ে যায়। আর আফসোস স্বরে বলে,
‘ আমার বাচ্চা বউটার দিন দিন বুদ্ধি বাড়ছে।আমাকে শায়েস্তা করতে তিনি এখন মুখ না অন্য জিনিস দিয়ে আমাকে কাবু করে দেখছি। তোমার এই লুকে তো আমার তৃষ্ণা দিন দিন বাড়ছে। এখন মন হচ্ছে এইখানে আসা টাই ভুল। না বলে এখন শশুর বাড়ি গিয়ে একটা অঘটন ঘটিয়েই ফেলতাম।কেউ আমাকে থামাতে পারতো না। এইভাবে দহন জ্বালায় ঝলছে দিচ্ছ কেন এই পুরুষের বুকটা। তার তো এই দহনেই বুঝি মরণ হবে। তখন পারবে তো প্রেমিকের মৃত্যুর সুখ সহ্য করতে।’
আমি বিনিময়ে শুধু খিলখিলিয়ে হাসতে থাকি। ইহানের এমন দৃষ্টি দেখে আর আফসোস করতে দেখে আমার মুখে প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠে। আমাকে এইভাবে ছেড়ে গিয়ে যে যন্ত্রণা দিয়েছে তার সুদ তুলতে পেরেছি।
ইহান আমার দিকে ঘোর লাগা চোখে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল, ‘ এই দুই বছরে আর কখনো শাড়ি পরবে না তুমি। শাড়ি তুমি সেইদিন পরবে যেদিন আমাদের অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়ে মিলিত হবো। দুজনে দুজনের চোখের সামনে খুব নিকটে থাকবো। এতোটা নিকটে যে আমাদের শ্বাস প্রশ্বাস একজন আরেকজনের গুনতে পারবো। ছুঁয়ে দেবো দু’জন দু’জনের অঙ্গ। তুমি সেইদিন হলুদ শাড়ি, কপালে কালো টিপ, চুল গুলো অগোছালো করে পিঠে ছেড়ে রাখবে। আমার জন্য এলোমেলো চুলে, হলুদ কড়ি সেজে আসবে।’
আমি কপাল কুঁচকে বললাম, হলুদ কেন? আপনার তো কালো রং পছন্দ।’
‘ হুম। কিন্তু আমার বাচ্চা বউটাকে যে হলুদে বেশি মানায়। তুমি জানো আমি ফার্স্ট তোমার হলুদ শাড়িতে দেখেই প্রেমে পরেছিলাম। সেই রিমঝিমের গায়ে হলুদ এ আমি এক হলুদ পরীর সন্ধান পেয়েছিলাম। যে শাড়ি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিল। চোখে মুখে তার বিরক্তিকর ভাব। আমি তো সেই মুখটা দেখেই থমকে গেছিলাম। আমার হার্ট মিস করছিলাম প্রথম বার। প্রথম আমি আমার চোখে যাকে সব চেয়ে অপছন্দ করা মেয়েটার মায়ায় সরে গেছিলাম।’
‘ আপনি সেই রিমঝিম আপুর বিয়ে থেকে আমাকে পছন্দ করেন?’ অবাক হলাম।
‘ ইয়েস।’
‘ তারমানে ওই যে নাটক করতে বলেছিলেন ওইসব কিছু আপনার প্লাণ ছিল।’
‘ ইয়েস মাই ডেয়ার বউ। এতো বোকা তুমি আজ বুঝলে।’
‘ আজ ও বুঝতাম না আপনি না বললে। আমি ভাবতাম আপনি আমাকে সহ্য ই করতে পারেন না পছন্দ তো দূরের কথা।’
‘ এজন্য তো আমি তোমাকে গাধা বলি।’
‘ আপনি যেমন খারাপ ব্যাবহার করতেন কি করে বুঝতাম। আমি কি সর্বজান্তা নাকি। আগে সব সময় রুড বিহেভ করতেন আমার সাথে।’
‘ সেটা তো নিজেকে কন্ট্রোল করার জন্য। যাতে ধরা না পরে যাই আমি যে এই পিচ্চি মেয়েটার উপর দূর্বল হয়ে গেছে।’
সেইদিন অনেক কথা হয়েছে আমাদের কথা বলতে বলতে আমি ভোর করে ফেলেছিলাম। সকালে যে আমার ক্লাস পরিক্ষা ছিল সব ভুলে গেছিলাম। ফজরের আযান দিতেই টনক নড়লো আর কর কেটে ঘুমিয়ে গেলাম। পরদিন আমাকে টেনে তুলেছে আম্মু পরিক্ষা না থাকলে কেউ আমাকে উঠাতে পারতো না। লাল টকটকে ফোলা চোখ নিয়ে উঠতে আম্মু ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,
‘ একি রে তোর চোখ এতো লাল কেন? রাতে বেশি ঘুমান লি নাকি সারা রাত ঘুমাসনি কোনটা।
‘ ঘুমিয়েছি। বেশি ঘুমিয়েছি তাই।’
বলে ডুলতে ডুলতে বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা না করেই কলেজে চলে এলাম। আমার ঘুম ছুটছেন না খালি ডুলছি আমার এমন অবস্থা থেকে আমার নতুন ফ্রেন্ড আমাকে জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে আমার। আমি ওকে ইহানের কথা আগেই বলেছি তাই কালকের কথা বলার কথাটাও বলে দিলাম। ও হাসতে হাসতে শেষ প্রেম করে রাত জাগার ফলে এবার ভোগ করো। বলেছে। আমি প্রথম ও দ্বিতীয় ক্লাস ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কাটালাম। তৃতীয় ক্লাসে পরিক্ষা কোন মতে দিয়েই লুকিয়ে বাসায় এসেই পরলাম।আর এসেই কিছু খেয়ে একটা ঘুম দিলাম।
সেদিন রাতে ইহানের সাথে কথা বলা হলো বেশি। ঘুমিয়ে কাটালাম। পরদিন কথা বলতে গিয়ে আমার কেমন জানি মনে হলো ইহান অসুস্থ কিন্তু জিজ্ঞেস করলে ইহান বলল তার কিছু হয়নি। আমি মেনে নিলাম। পরের দিন কল করে ইহানের সাথে কন্টাক্ট করতে পারলাম না
নাম্বার বন্ধ বলছে আমি। ইহানের নতুন ফ্রেন্ড জ্যাক কে কল করলাম। তার সাথে কথা বলে জানতে পারলাম ইহান অসুস্থ তার জ্বর হয়েছে মারাত্মক ভাবে। ও হসপিটালে ছিল আর তখন ফোনের দিকে কারো নজর ছিল না। ইহানের জ্বর হয়েছে শুনে আমার অবস্থা তো বেহাল। দিক দিশা পাচ্ছি না। ইহানকে দেখতে পারছি না। সে কতোটা অসুস্থ বুঝতেও পারছিনা। এতো অসহায় লাগছিল কি বলবো রাতে আর খাবার গলা দিয়ে নামলো না।খারাপ লাগাটা ভালো করেই জেঁকে ধরলো আমাকে।
ইহানের সাথে কথা বলেও শান্ত হচ্ছি না। ইহান ফোন করে বারবার করে বলছে,
‘ আমি একদম ঠিক আছি। এতো চিন্তা করো না তো। ‘
‘ চুপ করুন আপনি। নিজের কেয়ার একটুও নেন না। আপনি এমন কেন? আমার কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পারছে না। কেন অসুখ বাধালেন। আপনাকে কেমন দেখাচ্ছে। খুব দূর্বল লাগছে অসুস্থ লাগছে শরীর শুকিয়ে গেছে।’
‘ আমার কিছু হয়নি। জ্বর এখন বেশি নাই। কালকেই একদম ফিট হয়ে যাবে। তোমার টেনশন দেখে মনে হচ্ছে আমি মরে গেছি।’
আমি ফুঁপিয়ে উঠলাম,
‘ আপনি খুব খারাপ আমাকে খালি কষ্ট দেন। মরার কথা বললেন কেন আর কথা বলবো না আমি আপনার সাথে। রাখছি ।’
কল কেটে কাঁদতে লাগলাম।#এক_চিলতে_রোদ- ২
#Writer_Nondini_Nila
(কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ)
৩৯.(২য় অংশ)
দেখতে দেখতে অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে। আমার ইন্টার পরীক্ষা দুইদিন পর। আমি এখন এক মনে পরায় নিজেকে রেখেছি। মাঝে মাঝেই কথা হয় ইহানের সাথে কিন্তু আগের মতো না। ইহান ই বলে না। ও আমার পড়া নিয়ে খুব সিরিয়াস।
তাই সম্পূর্ণ নজর এখন পরা লেখায় দিতে বলেছে। তাই নিজে থেকে কথা কমিয়ে দিয়েছে। ইহানের সাথে কথার মধ্যে আমি বলেছি কথা একটু হলেও প্রতিদিন বলতে হবে। ইহান রাজি হয়েছে। পরদিন রাতে,,,
‘ আমাদের বিয়ে কবে হবে বলেন না প্লিজ। আপনি তো আর দুই মাস পরই চলে আসবেন। তাই না।’
‘ হুম। আমি একবার আসি তারপর আর আমার এই বাচ্চা বউকে শশুর বাড়ি ফেলে রাখবো না। বিয়ে করে নিয়ে আসবো।’
‘ আমার না খুব আনন্দ হচ্ছে আমি কতোদিন পর আপনাকে দেখবো উফ আমার কেমন যেন সুন্দর অনুভূতি হচ্ছে।’
‘ তাই!’
‘ হুম আচ্ছা আপনার সাথে কি সত্যি জ্যাক ভাইয়া আসবে?’
‘ হ্যা। ওর নাকি বাংলাদেশে বেড়ানোর অনেক শখ তাই আসবে আমার সাথে। আর আমাদের বিয়ে খেয়ে নাকি ফেরত যাবে।’
‘ ওয়াও অনেক ভালো হবে।’
‘ আচ্ছা এবার পরতে বসো কাল তো পরিক্ষা।’
‘ হুম আচ্ছা রাখছি। কাল আমি পরিক্ষা দিতে যাওয়ার আগে কিন্তু কল করবো।’
‘ ওকে আমি এ্যাম ওয়েটিং ম্যাম। বাই গুড নাইট ’
আমি কল কেটে পরতে বসলাম।
আম্মু এসে জোর করে দুধ খাওয়ালো আমি নাক চেপে তা খেলাম। রাত বারোটা পর্যন্ত পরে ঘুম দিলাম। আবার সকাল চারটায় উঠে পরতে বসলাম। চোখে মুখে পানি দিয়ে।সাড়ে আটটা বাজতেই পড়া ছেড়ে উঠে গেলাম। রেডি হতে লাগলাম। তারপর ইহানকে কল করে কথা বলে নিলাম। আম্মু খাইয়ে দিলো তাই হালকা খেয়ে আব্বুর সাথে বেরিয়ে গেলাম। আব্বু গেটের কাছে দাঁড়িয়ে রইলো আমি ভেতরে চলে গেলাম। আব্বু আজ এখানেই ছিল আমি পরিক্ষার ফল থেকে বেরিয়ে ইমা আপু ও আব্বুকে দেখলাম। তাদের সাথে কথা বলে বাসায় চলে এলাম।
মাঝে মাঝেই আব্বু নয়তো ইমা আপু আম্মু কেউ না কেউ আমার সাথে গেছেই পরিক্ষার পৌঁছে দিতে। একদিন চাচাজান ও চলে এলো। আমি খুব খুশি হয়েছিলাম আব্বু আর চাচাজান মিলে গেছে বলে।
একমাস ধরে পরিক্ষা চললো। মাঝে কতো যে বন্ধ গেছে। বারোটা পরিক্ষা শেষে প্র্যাটিকাল হলো কয়েকটা সব শেষে আমি ফ্রী এখন শুধু আমার একটাই অপেক্ষা প্রিয় মানুষটির ফিরে আসার অপেক্ষা। আমি ইহানের অপেক্ষায় বসে আছি আর মাত্র চারদিন পর তিনি আসবেন আমি পারিনা নেচে দেয়।
আমি প্র্যাটিকাল আজ শেষ করে এলাম এসেই ঘুম দিয়েছি। উঠে আজ সারারাত ইহানের সাথে কথা বলবো ভাবছি। ঘুম ভাঙে আম্মুর ডাকে। আমি ঘুমঘুম চোখে আম্মু বললাম,
‘ কি হয়েছে আম্মু ডাকছো কেন? আজ পরিক্ষা শেষ আজ আর কোন ঝামেলা নাই তাই শান্তি মতো ঘুমাতে দাও।’
‘ তারাতাড়ি উঠ আর হাত মুখ ধুয়ে একটু সাজগোজ করে বাইরে আয়।’
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম, ‘ সাজবো কেন? কোথাও যাব নাকি আজ?’
আম্মু আমাকে টেনে ওয়াশ রুমে ঢুকিয়ে দিলো। আমি ফ্রেশ হয়ে এলাম আম্মু ভালো পোশাক বের করে দিল জিজ্ঞেস করছি এসব কেন পারবো আম্মু উওর না দিয়ে রেডি করিয়ে চুল বেঁধে ড্রয়িংরুমে নিয়ে এলো। আমি বিরক্তিকর মুখে এখানে এসে দেখি শুভ্র ও তার মা পাশে একজন ভদ্র লোক ও একটা মেয়ে ছোট বাবু কোলে বসে আছে। আমি এরা এসেছে কেন ভাবছি আম্মু সালাম দিতে বলল,
আমি কিছু না বুঝেই সালাম দিলাম।
শুভ্র মুচকি মুচকি হাসছে। আমার হঠাৎই মনে পরলো শুভ্র আরেকবার এসেছিল আর আমার আর তার বিয়ের কথা বলেছিল আমি তখন ইহানের সাথে ছিলাম। কতো রাগ করেছিল ইহান। আজ ও শুভ্র এসেছে গোষ্ঠি সুদ্ধ এসেছে এবার ও কি তাই জন্য। ভয় হতে লাগলো। আব্বু ও পাশের ভদ্রলোক টার সাথে কথা বলছে খুশি মনে এটা হয়তো শুভ্রর বাবা। আমি ঢোক গিলে আম্মুর দিকে তাকালাম। তখনি শুভরূমা টেনে তার পাশে আমাকে বসিয়ে দিল। দাঁতে দাঁত চেপে আমি সহ্য করতেই লাগলাম সব। চোখ ফেটে জল আসছে। শুভ্র মা আমার গালে হাত দিয়ে বলল,
‘ মাশাআল্লাহ। এখন আরো সুন্দর হয়েছে আমাদের ঊষা। আপনাদের মেয়েকে তো আমরা পছন্দ করেছি আরো দুই বছর আগে এখন আর কি বলবো এখন শুধু ঘরে তোলার অপেক্ষায় আছি। ভাইসাহেব( আমার আব্বুকে বলল) আমি আজকেই এনগেজমেন্টটা করিয়ে নিতে চাই। আমি আংটি নিয়েই এসেছি আর বিয়েটাও এবার তারাতাড়ি হারতে চাইছি। এবার তো ঊষা আর ছোট্ট টি নাই আঠারো বছর হয়ে গেছে।’
‘ আপনার তেমন ইচ্ছে। কিন্তু এতো তারাতাড়ি ওদের মতামত টা’
‘ আমার ছেলে তো রাজিই। এখন ঊষা মামনির আমার ছেলেকে পছন্দ হয়েছে কিনা বল তো মামনি!’
আমি অসহায় চোখে আব্বু ও একবার আম্মুর দিকে তাকালাম। আম্মু অগ্নি দৃষ্টিতে আব্বুর দিকে তাকিয়ে আছে। আব্বু আমাকে রাজি হওয়ার ইশারা করছে।আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। আব্বুর কথার বিরুদ্ধে আমি কখনো যেতে পারবো না। আম্মু আমাকে উঠে চলে আসতে বলছে। আমি দুটানা পরে গেলাম। আমি অশ্রু সিক্ত চোখে আমার বাম হাতের অনামিকা আঙ্গুলে তাকিয়ে আছি। সেখানে জ্বলজ্বল করছে একটা আংটি আংটির উপরে E লেখা ইংরেজি তে। এই আংটিটা দুইবছর আগে ইহান আমাকে পরিয়ে দিয়েছিল। আর আমার হাতের পিঠে চুমু খেয়ে বলেছিল,
‘ আজ থেকে তুমি হাফ ইহান চৌধুরী হলে। ফিরে এসে ফুল করে ফেলবো।’
আমি বিনিময়ে লজ্জা হাসি দিয়েছিলাম।
এক ফোঁটা জল গলিয়ে পরলো আব্বুর কথা শুনে,
‘ আপনাদের যেমন ইচ্ছা।’
আমি অবাক হয়ে তাকালাম আব্বুর দিকে আমার মতামতের তোয়াক্কা না করেই এই রকম করলো। আজ বাবাকে চিনতে পারছি না যেন আমি। শুভ্র মা হাসি মুখে পার্স থেকে আংটির কোটা বের করে আমার দিকে এগিয়ে এলো।আর আমার হাত উঁচু করে ধরলো।আমি চোখ বুজেই আছি ইহানের দেওয়া আংটি আমি কিছুতেই খুলবো না।
শক্ত হয়ে বসে আছি আড়চোখে শয়তান শুভ্রকে দেখলাম। লোকটা ইচ্ছে করে এমন করছে। আমার আর ইহানের কথা জানার পর ও এই ভাবে কষ্ট দিচ্ছে।
আম্মু হঠাৎ বলে উঠলো, ‘ আপনার কিছু মনে করবে না। আজ আংটি পরাবেন না। আমাদের আরো অনেক আত্নীয় স্বজন আছে তাদের মতামত ছাড়া বিয়ের মতো এতো বড় সিদ্ধান্ত হুট করছি নিতে পারছিনা। ক্ষমা করবেন আমাদের সময়ের প্রয়োজন।’
আম্মু বলেই আমার দিকে তাকিয়ে ইশারায় রুমে যেতে বললো। আমি কৃতজ্ঞ চোখে আম্মুর দিকে তাকিয়ে চলে গেলাম রুমে।
বাইরে কি হলো আর তার কোন খবর নাই। রুমে এসেই ইহান কে কল করলাম কিন্তু সে অনলাইনে নাই।আজ সারাদিন ই সে অফলাইন দেখা যায় সকালে কথা হয়েছে আসার পর থেকে আমি খাওয়ার পর ঘুম দিলাম আর কথা হয়নি।
আমি দরজা আটকে বসে আছি। ইহান রাত আটটায় আমাকে কল দিয়েছে আমি রিসিভ করেই কেঁদে দিলাম। আর বিকেলের সব বললাম।সব শুনে ইহানের রিয়াকশণ কি জানা হলো না আমি কল কেটে ভিডিও কল দিচ্ছি। ইহান রিসিভ করছে না। আমি বিরক্তি হয়ে আবার অডিও কল দিতে যাব তখন ইহানের সেই আগের পরিচিত বাংলাদেশের নাম্বার থেকে কল এলো আমি চমকে উঠলাম।
আমি রিসিভ করতেই ইহান বলল,
‘ দুই মিনিটের মধ্যে নিচে আসো। আমি অপেক্ষা করছি।’
তারপর কল কেটে দিল। আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি ফোনের দিকে উনি বাংলাদেশ চলে এসেছে আজকেই আর আমাকে জানায় নি। আমরা আমার পরিক্ষার পরই নিজেদের বাসায় চলে এসেছি। প্র্যাটিকাল পরিক্ষা আমি এই বাসায় থেকেই দিয়েছি। আম্মু আব্বু নিজেদের রুমে কি নিয়ে যেন করা কাটাকাটি করছে। এগুলো যে আমার বিয়ে নিয়ে আমার বুঝতে বাকি নাই। কারণ আম্মু এখানে বিয়ে আমাকে কিছুতেই দিবে না। তিনি তো জানেনই আমি অন্যজনের প্রেমে দেওয়ানা। আম্মু আমাকে অনেক সাপোর্ট করে। এমন মা পেয়ে আমি সত্যি খুব ভাগ্যবান।
আমি পা টিপে টিপে বাইরে চলে এলাম। ইহান গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল দারোয়ান কাকা নাই আমি আবসা অন্ধকারে মধ্যে দৌড়ে ইহানকে জরিয়ে ধরলাম। কত অপেক্ষার পর মানুষটার দেখা পেলাম তাই নিজেকে আর কন্ট্রোল রাখতে পারিনি ঝাঁপিয়ে পরেছি তার বুকে।
#এক_চিলতে_রোদ- ২
#Writer_Nondini_Nila
(কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ)
৩৯.(৩য় অংশ)
আচমকা এমন ছুটে এসে জরিয়ে ধরায় ইহান কিছুটা পিছিয়ে যায় তাল সামলাতে না পেরে। কিন্তু পরতে গিয়ে ও নিজেকে সামলে নেয়। ইহান ওইভাবেই ওকে টেনে গাড়ির কাছে নিয়ে যায়।
‘ এবার বলো ফোনে কি বলছিলে?’
আমি লজ্জা পেয়ে ইহানের থেকে একটু সরে দাঁড়ালাম।
‘ লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া অফ করে আসল কথা বলো!’
‘ আপনি এমন করে কথা বলছেন কেন?’
‘ তো কেমন করে কথা বলবো। আমার হবু বউকে কিনা অন্য কেউ দেখতে আসে আবার এনগেজমেন্ট করাতে চায়। এসব শোনার পর আমার অবস্থা কেমন হয়েছে ভাব। আমি যদি সারপ্রাইজ দিতে আজ না আসতাম তখন ওই বিদেশে থেকে আমার কি অবস্থা হতো ভাব!’
‘ হয়নি তো শেষ মুহূর্তে আম্মু সব আটকে দিয়েছে। এখনো তারা দুজন কি নিয়ে যেন কথা কাটাকাটি করছে মনে হলো বিয়ে নিয়েই। আম্মু তো সব জানে আম্মু বোধহয় এবার আব্বু কে জানিয়েই দিবে।’
‘ দিক ভালোই হবে। কিন্তু আমার এক জায়গায় ভয়। চাচু এসব জানার পর আবার হিতের বিপরীত হবে না তো। যদি না মেনে উল্টা সম্পর্ক নষ্ট করে দেয়।’
আমি বললাম, ‘ আমার মনে হয় না এমন করবে। আব্বু ও তো ভালোবেসে বিয়ে করেছে। তিনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারবে আমাদের। আমরা তো দুজন দুজনকে ভালোবাসি তাই না। তিনি আমাদের মাঝে ভিলেন হবেন না। আপনি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসেন না এবার।’
‘ ভেতরে চলো।’
বলেই গাড়িতে উঠে বসলো ইহান। আমি ও উঠে বসলাম।
‘ আমরা কোথায় যাব এখন। আম্মু আব্বু খুঁজবে আমাকে।’
‘ এতো দিন পর দেখা একটু ঘুরাঘুরি না করলেই নয়।’
‘ ওকে চলুন। বাসায় কিছু জিজ্ঞেস করলে আপনার কথা বলে দেব। কেমন।’
‘ আমি এতো ভীতু নাকি যে বলার কথা শুনে ভয় পাবো। তোমার যা খুশি বলো।’
‘ ওকে তাহলে চলুন শুনেছি রাতে নাকি প্রেমিক প্রেমিকাদের জন্য আইসক্রিম ওয়ালা থাকে সেখান থেকে না হয় আইসক্রিম খাওয়েইন।’
ইহান ড্রাইভ করছে এই গাড়িটা নতুন কিনেছে চাচাজান। আমাকে প্রথম দিন পরিক্ষা দিতে নিয়ে গেছিল আর আজ ইহানের সাথেও ওই গাড়িতেই যাচ্ছি। আমি ইহানের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে আছি। ইহান বিদেশে গিয়ে ক্লিন শেভ করেছে। আগে দাড়ি ছিল এখন নাই। এইভাবেও মানিয়েছে খুব লোকটাকে। আমি আড়চোখে তাকে দেখছি। আর মুচকি মুচকি হাসছি হঠাৎ বলে উঠলাম,
‘ জ্যাক ভাইয়া আসে নাই?’
ইহান এক নজর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ এসেছে তো।’
‘ তাকে একা রেখেই চলে এলেন বোর ফিল করবে তো!’
‘ তিনি এখনো জেগে থাকলে তো।এসেই ঘুম দিছে।’
‘ আপনি এখানে চলে এলেন যে আপনি ক্লান্ত না। কষ্ট করে আসলেন কেন? কাল আসতে পারতেন।’
‘ বাসায় থাকলে ও আমার ক্লান্ত দূর হতো না। আমার দু’চোখ ব্যাকুল তৃষ্ণার্ত থাকতো একজনকে দেখতে। এখানে এসে যতটা শান্তি পাচ্ছি ঘুমালেও পেতাম না।’
‘ আপনাকে না খুব সুন্দর লাগছে!’
ইহান ঠাস করে গাড়ি থামিয়ে ফেললো।আর আমার দিকে পূর্ণ নজরে তাকালো।আর বলল,
‘ কি বললে?’
আমি কথাটা বলে থতমত খেয়ে গেলাম।
‘ কিছু না।’
‘ শিকার করার সৎ সাহস নাই। ওকে নো প্রবলেম।’
ইহান গাড়ি থেকে নামতে গেলে আমি বললাম, ‘ নামছেন কেন?’
ইহান পেছনে ফিরে বলে, ‘ তুমি না বলে এই রোমান্টিক ওয়েদারে আইসক্রিম খাবে বয়ফ্রেন্ড এর সাথে তাই নিয়ে এলাম। নাম এবার।’
আমি গাড়ি থেকে নেমে দেখি সামনে একটা আইসক্রিম ওয়ালা দাড়িয়ে আছে। সেখানে দিয়ে কয়েকজন কাপেল যাচ্ছে আমি বললাম আর ইহান নিয়ে আসবে আমি ভাবিনি।
চকলেট ফেভারের আইসক্রিম নিলাম একটা ইহান নিলো না। আমি তাই জিজ্ঞেস করলাম,
‘ আপনি খাবেন না? আপনি কি আইসক্রিম খান না? ‘
ইহান বলল, ‘ খাই না কিন্তু আজ খাবো।’
‘ খাবেন কি করে আপনি তো নিলেন না!’
‘ নিতে হবে কেন? এই যে এই টা খাব।’
বলেই ইহান আমার খাওয়া আইসক্রিম হাত থেকে টান মেরে নিয়ে নিল। আর আমি যেখান থেকে খাচ্ছিলাম ইহান ও ঠিক সেই খান থেকেই খেতে লাগলো।
‘ ছিহ এটা কি করলেন? আপনি আমার খাওয়া আইসক্রিম খেলেন কেন? আর আপনি খেয়ে নিলেন এখন আমি খাব কি করে? আপনি এতো কৃপণ যে টাকা বাঁচাতে একটা কিনে শেয়ার করে খেতে চাইছেন।’
ইহান আমার হাত হাত টেনে আইসক্রিম ধরিয়ে দিয়ে বলল,
‘ কৃপণ না ওকে। এটা করলাম কেন জানো। শুনেছি স্বামী স্ত্রীরা ভাগাভাগি করে খেলে তাদের ভালোবাসা বাড়ে। আর আমরা এখন প্রেমিক প্রেমিকা আমরা ও ভাগাভাগি করলে আমাদের ভালোবাসা বাড়বে।’
‘ এ্যা কি অদ্ভুত লজিক।’
আমি খেতে না চাইলেও ইহানের জন্য আমাকে তার সাথে শেয়ার করেই খেতে হলো আইসক্রিম। আমরা অন্ধকার রাস্তায় ল্যামপোস্টের আলোতে হাঁটলাম। তারপর ইহান গাড়িতে এসে পেছনের সিটে বসে আমাকে নিয়ে। আমার কোলে মাথা রেখে সিটেই শুয়ে পরে।আর বলে চুল টেনে দিতে।
আমি বললাম, ‘ মাথা ব্যাথা করছে?’
ইহান বলে, ‘ হুম।’
‘ আচ্ছা চোখ বন্ধ করে থাকুন কিছুক্ষণ তারপর আমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবেন।’
‘ ওকে।’
ইহান চোখ বন্ধ করে নরম তুলতুলে হাতের স্পর্শে। ওইভাবেই ওর ঘুম চলে আসে। আর ও ঘুমিয়ে যায়।আমি ইহানের ক্লান্ত মুখটা দেখে ডাকতে পারিনা আর কিছুক্ষণ থাক ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরি। যখন চোখ মেলে তাকায় তখন সকাল। ইহান এখনো আমার পেটে মুখ গুজে ঘুমিয়ে আছে আর আমি সিটে হেলান দিয়ে। তারাতাড়ি ইহান কে ডাকলাম। এখন কয়টা বাজে কে জানে সূর্য ও উঠে গেছে। ভয়ে আমার হাত পা কাঁপছে আব্বু আম্মু কি করছে কে জানে আমাকে নিশ্চিত খোঁজে হয়রান হচ্ছে।
ইহানকে ধাক্কা দিতেই উঠে গেল।
তারপর ভ্রু কুঁচকে চারপাশে তাকিয়ে বলল, ‘ আমরা গাড়িতে কেন?’
‘ সব দোষ আপনার কাল যদি মাথা টিপে দিতে না বলতেন তাহলে এই কেলেঙ্কারি হতো না!’
‘ হোয়াট কি হয়েছে?’
‘ আপনার জন্য সারারাত আমরা দুজন এই গাড়িতেই ছিলাম বাসায় পৌঁছাতেই পারিনি। আল্লাহ জানে বাড়ির কি পরিস্থিতি। আমি এখন বাড়ি যাব কি করে। কি জবাব দেব।’
‘ কেন কাল না বললেন আমার সাথে গিয়েছো বলবে?’
‘ ওইটা তো এমনি মজা করেই বলেছিলাম।’
‘ কেন মজা করবে কেন? আমি তোমাকে নিয়ে খুব সিরিয়াস। মজা না ওকে তাই যা সত্যি তাই বলবো!’
‘ সারারাত এক সাথে কাটিয়েছি এটা জানলে কি মিন করবে বুঝতে পারছেন।’
আমরা তো জানি আমরা খারাপ কিছু করিনি।’
‘ তবুও আমি আব্বু আম্মু কে মুখ দেখাবো কি করে? আম্মু বলেছে আমার পাশে সব সময় থাকবো।আব্বু কে তিনি রাজি করাবেন তবুও তার বিরুদ্ধে গিয়ে এসব জানলে খুব কষ্ট পাবেন।’
‘ প্লিজ ঊষা কুল।আমি ম্যানেজ করে নেব চলো আমার সাথে। কিছু হবে না!’
আমাকে নিয়ে বাসায় আসবে তখন আবার গাড়ি থামিয়ে ইহান চা বিস্কুট নিয়ে এলো। আমার মন খারাপ সাথে চিন্তিত তাই আমি খেতে চাইলাম না কিন্তু ইহানকে মানাতে পারলে তো। জোর করেই খাইয়েছে।তারপর গাড়ি চলতে লাগলো বাসায় উদ্দেশ্যে।
গাড়ি থেকে নেমে ইহান আমার হাতের কব্জি কেটে ধরলো। নির্ভর দিয়ে হাত ধরেই বাসার ভেতরে যেতে লাগলো। বাইরে একটা গাড়ি দেখলাম। আমার বুক ধুকপুক করছে ইহান কলিংবেল দেওয়ার আগে বলল,
‘ চাচচুর কাছে আজ আমার এই বাচ্চা বউকে চাইবো। তাকে মানাতে যা করতে হয় সব করবো কিন্তু আমার এই সুখ আমি ছিনিয়ে নিতে দেবো না কাউকে।’
আমার কপালে ছোট করে ভালোবাসার পরশ দিয়ে কলিংবেল চাপলো।
#চলবে…
#চলবে….
#চলবে…..