#এক_রক্তি_ভালোবাসা
#part_2
#Writer_রুবাইতা_রিমি
অদ্রিয়ান সিয়াকে দেয়ালে চেপে ধরলো আর হালকা রাগী গলায় বলে উঠলো।
-তোমার সাহস তো কম না আমার রাগীদৈত্য বলো এখন তোমায় বোঝাবো রাগী দৈত্য কাকে বলে ইডিয়েট একটা। আমি ভালো করেই বুঝতে পেরেছি কাল তোমায় চড় মেরেছিলাম বলে তুমি আজ আমার ভার্সিটিতে গিয়েছো?(হালকা রাগী গলায়)
সিয়া নিজ থেকেই আরও দেয়ালে মিশে গেলো ভয়ে তার গলা শুকিয়ে আসছে এরই মাঝে অদ্রিয়ান ধমকে উঠলো।
-কথা বলছো না কেন ইডিয়েট কোথাকারের!
মুহুর্তেই ঠোঁট উল্টে ভ্যা ভ্যা করে কান্না করে দিলো সিয়া।ফুপাতে ফুপাতে বলে উঠলো।
-আপনি অনেক বাজে সবসময় আমায় ধমকি দেন।আমি কাল কি করেছিলাম আপনি আমায় শুধু শুধু চড় মেরেছেন তাও একটা না দু দুটো জানে বাড়িতে গিয়ে আমি কতক্ষন কান্না করছিলাম আর আপনার জন্য আমি সবার সামনে মাতালের নাটকও করেছি যাতে ওই পাত্রপক্ষকে ফেরাতে পারি আর আপনি কি করলেন সেই আমায় বকলেন এ্যাহ্ এ্যাহ্ এ্যাহ্।আর আমি যদি ইডিয়েটই হই তাহলে কেন ভালোবেসেছিলেন এই ইডিয়েট টাকে দেখবেন এবার থেকে যে পাত্রপক্ষ আমায় দেখতে আসবে আমি তখন সুন্দর করে সেজেগুজে তাদের সামনে যাবো আর বিয়েতেও হ্যা করে দিবো(ফুপিয়ে ফুপিয়ে ঠোঁট উল্টে বলে উঠলো সিয়া)
মুহুর্তেই অদ্রিয়ান সিয়ার গালে ধরে নিজের দিকে করলো আর সিয়ার চোখের জল মুছে বলে উঠলো।
-ইডিয়েট কাল তোমায় চড় মেরেছিলাম কেন তা কি বোঝো নি নাকি একটা ছেলে তোমার দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো আর তুমি বোকা স্কুলে দৌড়াদৌড়ি করছিলে তোমার খেয়াল ছিলো না সেইজন্য তোমায় মেরেছিলাম।আর অন্য কাউকে বিয়ে করার সপ্ন এ জীবনে ভুলে যাও কারন তুমি শুধু আমার।আমার #এক_রক্তি_ভালোবাসা ‘র শ্যামপরী।(বলেই আলতো ভাবে সিয়ার কপালের সাথে ঠোঁট ছোঁয়ালো অদ্রিয়ান)
সিয়ার আর অদ্রিয়ানের পরিচয় দেওয়া যাক–
(সিয়াশা শায়রি,বয়স সবে মাত্র ১৭ বছর।এবার ক্লাস 10 এ।দেখতে একদম পরীর মতো নয় তবে পরীর চেয়েও কম নয় একদম সাদামাটা মায়াবী পরীর মতো যে কেউ তাকে একবার দেখলেই তার মায়ায় পড়ে যাবে।হরিনী চোখের মতো টানাটানা দুটি নয়ন,হালকা গোলাপি ঠোটঁ,হালকা শ্যামবর্ণ গায়ের রং।কোমড় অবধি লম্বাঘন চুল দেখতে একদম শ্যামপরীর মতো।বাবা মায়ের বড় মেয়ে সাথে সিয়ার একটা ছোট বোনও আছে লিয়া এবার ক্লাস ৮ এ পড়ে।সিয়ার বাবা একজন সরকারী কর্মকর্তা সিয়ার মা একজন গৃহনী)-এই হলো সিয়ার পরিচয় চলুন এবার অদ্রিয়ানের পরিচয় দেওয়া যাক।
(অদ্রিয়ান খান,এবার অনার্স ফার্ষ্ট ইয়ারে।বয়স ২১।দেখতে একদম শারুখ খানের মতো নয় তবে অতোটাও খারাপ ঘন ভ্রু,মাঝারি গাড় গোলাপি ঠোট,কপাল অবধি সিল্কি চুল সিক্সপ্যাগ বডি।দেখতে বেশ হ্যান্ডসাম।অদ্রিয়ানের বাবা ছোট থাকতে হার্টএ্যাটার্কে মারা যান এরপর অদ্রিয়ানের নানু তার মায়ের অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দেন এরপর থেকে অদ্রিয়ান তার দাদু,দাদিমা সাথে তার বাবার পরিবারের সকলের সাথেই থাকে)-এই হলো অদ্রিয়ানের পরিচয়।
(বিঃদ্রঃ আপনারা অনেকেই বলেছেন সিয়া যদি ক্লাস ১০ এ পড়ে তাহলে ভার্সিটি কিভাবে যায়!আরে আমি কি একবারও বলেছি যে সিয়া ভার্সিটিতে পড়ে।সিয়া অদ্রিয়ানের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো অদ্রিয়ানের ভার্সিটিতে That’s it)
___________________________
বিকালে।
সিয়ার মন বিষন্নতায় ভরে গিয়েছে আজ সিয়ার জন্মদিন আর কেউ তাকে ইউস ও করলো না।এটলিষ্ট তার বোন,মা,বাবা ফ্রেন্ডরা তো জানতো যে তার বার্ড ডে নাকি তারা ভুলে গিয়েছে।
রাতে ডিনারের সময় সিয়া সবার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু কেউ কোন কথা বলছে না চুপচাপ খেয়ে যে যার রুমে চলে গেলো।বিষয়টা সিয়ার মোটেও পছন্দ হয়নি কোনমতে খাবার খেয়ে নিজের রুমে গিয়ে ভাবলো।
-হাউ ইস পসিবল আব বাবা,মা আমার বোন,বন্ধুবান্ধব সবাই আমার বার্ড ডে ভুলে গেলে কিভাবে কিভাবে কিভাবে??(এসব ভাবতে ভাবতে সিয়া ঘুমিয়ে পড়লো)
মাঝরাতে।
গভীর অতল ঘুমে আচ্ছন্ন সিয়া।এলোমেলো ভাবে শুয়ে আছে সে।জানালার একটা দরজা খোলা যার দরুন সিয়ার অগোছালো লম্বা চুলগুলো এলোমেলো ভাবে সিয়ার মুখের উপরে আছড়ে পড়ছে।হর্ঠাৎ তার ফোনটা বেজে উঠলো।মুহুর্তেই সিয়া নড়চড়ে উঠলো কিন্তু ফোন থামছেই না একনাগাড়ে বেজেই চলছে ব্যাস সিয়া বিরক্ত হয়ে বেড সাইডে টেবিল হাতরে হাতরে ফোন খুজে ফোনটা রিসিব করলো।বিরক্ত বোধ নিয়ে বলে উঠলো।
-উফফ হ্যালো!
-মিস সিয়াশা শায়রি নিজের পরিবারকে বাচাঁতে চাইলে এক্ষুনি রিভার ব্রিজে চলে আসো।আর হ্যাঁ তোমার মা বাবা,বোন বাড়ির প্রতিটি সদস্য কিন্তু আমার কাছে বন্দি যদি তুমি এখানে না আসো তাহলে তোমার পরিবার ওভার।(বলেই ফোন কেটে দেয় ওপর পাশের ব্যাক্তি)
এদিকে মুহুর্তেই ঘুম উবে যায় সিয়ার এক লাফে ঘুম থেকে উঠে গেলো।কপালে ঘামের বিন্দু গুলো ড্রিম লাইটের আলোয় চিকচিক করছে।সিয়া উঠেই আগে চটজলদি সবার রুমে যায় কথামতেক বাড়ির কোথাও কেউ নেই।সিয়ার ভয় হতে শুরু হয় কোন কিছুই না ভেবে তারাতারি সেই লোকটার বলা রিভার ব্রিজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো সে।যত দ্রুত সম্ভব দৌড়ানো যায় সে দৌড়াচ্ছে।
ইন রিভার ব্রিজ।
হাপাতে হাপাতে পাগলের মতো এসে থামলো সিয়া।দেখলো চারদিকে অন্ধকার কোথাও কোন কিছুর সারাশব্দ নেই সিয়া ভয়ার্ত চোখে একবার সবকিছু পরখ করে নিলো।না কোথাও কেউ নেই সিয়ার এখন আরও ভয় হতে শুরু হলো।
যেই সিয়া কান্না করে দিলো ওমনি কতগুলো মরিচ বাতি জ্বলে উঠলো সাথে বাজি ফাটানোর আওয়াজও ফুটে উঠলো।সিয়া চমকে সামনে তাকাতেই কেউ তার মুখে একগাদা স্প্রে মেরে দিলো।চমকে উঠলো সিয়া দ্রুত ওড়না দিয়ে চোখ মুখ মুছতেই সামনে থেকে কতগুলো আওয়াজ শুনতে পেলো।
-Happy birthday, Happy birthday too you dear Siyasa।।।Happy Birthday too you💚💛
সামনে তাকাতেই সিয়ার চোখ ভরে উঠলো কারন সামনে তার পুরো পরিবার দাড়িয়ে আছে সবার মাথাতেই বার্ড ডে ক্যাপ।সিয়া ভাবতেও পারছে না সবাই তাকে এইরকম একটা গিফট প্রধান করবে।সিয়া মুখে হাত দিয়ে ফুপিয়ে কান্না করে দিলো।মুহুর্তেই লিয়া সাথে সিয়ার বন্ধুবান্ধব দৌড়ে এসে সিয়াকে বলল।
-Welcome birthday girl.Now your birthday uish and birthday Kaap princeass;
লিয়া সিয়াকে জরিয়ে ধরে ইউস করে উঠলো
-হ্যাপি বার্ডডে আপু(লিয়া)
সিয়া লিয়াকে জরিয়ে কাদঁতে লাগলো।ওমনি লামিয়া সিয়ার মাথা আলতো ভাবে গাট্টি মেরে বলে উঠলো।
-আরে পাগলনী শুভদিনর কাদঁতে নেই আর তুই কি ভেবেছিস আমরা তোর জন্মদিন ভুলে যাবো নো ডে।(মুচকি হেসে)
-আমরা ভাবলাম প্রতিবারই শুধু আমরা কেক কেটে তোকে ইউস এন্ড সেলিভ্রেট করি করি এবার না হয় অন্যভাবে তোর বার্ড ডেটা সেলিভ্রেট করবো আরএই আইডিয়াটা কিন্তু অদ্রিয়ান ভাইয়ার।(হাসি দিয়ে বলল মাইশা আর লাষ্টের কথা গুলো আস্তে বলল যাতে সিয়ার পরিবার না জানে)
সিয়া মুচকি হেসে চোখের জল মুছে ফেলল।যখনি তার মা,বাবার দিকে তাকালো ওমনি আবার সব আগের মতো নিস্তব্ধ হয়ে গেলো সব অন্ধকার হয়ে গেলো।সিয়া আবারো ভয় পেয়ে গেলো ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে চারদিকে তাকিয়র তার মা,বাবা,বোন সাথে বন্ধুদের ডেকে উঠলো।
-মা,বাবাই লিয়া,মাইশা,লামিয়া ক্ কোথায় তোমরা।লামু দেখ আমি কিন্তু ভয় পাচ্ছি কো্ কোথায় তোরা দেখ আমার আর সারপ্রাইজ দরকার নেই প্লিজ সামনে আয় আমার ভয় করছে।
…..(নো রেসপন্স)
সিয়া এবারো ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করে দিলো।কিছুক্ষন পর সিয়ার কান্নার গতি বাড়তেই লাইট আবারো জ্বলে উঠলো।সিয়া চটজলদি কান্না অফ হয়ে গেলো সামনে তাকালো দেখলো তার পরিবারের কেউ নেই শুধু চারদিকে ধোঁয়া উরছে।সিয়া আরও গভীর ভাবে ধোঁয়ার দিকে লক্ষ্য করতেই দেখলো কেউ একজন হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে এগিয়ে আসছে।লোকটা সিয়ার সামনেই আসতেই সিয়া হা হয়ে গেলো কারন সামনে অদ্রিয়ান ফুল এ্যাটিটিউড সাথে রেডি হয়ে দাড়িয়ে আছে।
এটা দেখে সিয়ার মুখ অটোমেটেকলি হা হয়ে গেলো।
এদিকে অদ্রিয়ান ফুলের তোড়া নিয়ে মুচকি হেসে সিয়ার দিকে এগিয়ে গেলো।সিয়াকে এক টানে নিজের সামনে দাড় করালো আর তার চোখের জল মুছে দিলো।আর সাথে হাতে আলতো ভাবে শব্দ করে চুমু দিয়ে হাটু গেড়ে তোড়াটা সিয়ার দিকে এগিয়ে বলে উঠলো।
-যেদিন দেখেছি, সেদিন রাত জেগেছি।
যেদিন দেখেনি সেদিন দু চোখের পাতা এক করতে পারিনি।
হৃদয়ের আঙিনায় ফুটলো ফুল
ভালোবাসারা দোলা দিলো মনে।
তখনি ভালোবেসে ফেলেছি আমার মায়াবী,,
শ্যামপরীকে।(মিষ্টি স্বরে বলল অদ্রিয়ান)
সিয়া এখনো ঘোড়ের মধ্যে আছে তার কি করা উচিৎ সে বুঝে উঠতে পারছে না।অদ্রিয়ান আবারো বলে উঠলো।
– I love you my heartqueen sempori💙
চলবে,,