ও আসবেই পর্ব ২

ওঁ আসবেই
.
২য় পর্ব
.
মাইশির অপারেশনের কাপড় সড়িয়ে পেট দেখে তিনি বেশ অবাক হন। পুরো পেটে অপারেশনের কোনো চিহ্ন নেই। এরইমধ্যে হাসপাতালের একজন নার্স এসে ভয়ংকর একটা সংবাদ শুনালেন। যা শুনে আরিফ সাহেবের হৃদপিন্ড যেন থেমে যেতে চাইছে। পায়ের নিচ হতে মাটি সড়ে যাচ্ছে। তার বন্ধু ডাক্তার ইমরান এবং ডাক্তার ইলিয়াস দুজনেই নাকি গতরাতে আত্মহত্যা করে মারা গিয়েছেন।
.
সব ঘটনাগুলো যেন আরিফ সাহেবের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। হচ্ছেটা কী এসব! মাইশির অপারেশনটা কেন করা হলো না! ডাক্তার ইমরান এবং ইলিয়াস শুধু শুধু অপারেশনের নাটক ইবা কেন করল! আরিফ সাহেবের মাথায় কিছুই ঢুকছে না। তিনি রুমের নার্সের কাছে জানতে চাইলেন, মাইশিকে গতকাল ও.টি তে নেওয়া হলেও অপারেশন কেন করেননি তারা। নার্স কথাটা শুনে বেশ অবাক হন। আরিফ সাহেবের কথা মানতে চান না। তিনি বললেন অপারেশন তো হয়েছে। অপারশনের প্রমাণস্বরুপ মাইশির পেটে সেলাইয়ের দাগ যেই দেখাতে যাবেন তখন নার্স আরও বেশি বিস্মীত হলেন। মাইশির পেটে অপারেশনের কোনো চিহ্নই নেই। নার্স বিস্মীত কন্ঠে আরিফ সাহেবকে বললেন, হায় খোদা! এটা কী করে হল। গতকাল অপারেশনের সময় আমি নিজে থিয়েটারে ছিলাম। নিজের চোখে মেয়েটাকে অপারেশন করতে দেখেছি। অপারেশনের মাঝপথে কিসের জন্য যেন আমি সহ বাকি ২ জন নার্সকে ও.টি থেকে বের করে দিলেন স্যাররা। অপারেশন শেষে আবার এসে মেয়েটাকে নিয়ে যেয়ে বেডে শুইয়ে দিতে। মেয়েটার পেট কাটতে আমি নিজে দেখেছি। কিন্তু মেয়েটার অপারেশনের কোনো চিহ্ন নেই কেন!
.
নার্সের কথাতে আরিফ সাহেব বেশ বিরক্ত হলেন। এদের কারোই কথার সাথে কাজের কোনো মিল পাওয়া যাচ্ছে না। অবশ্য আরিফ সাহেব মাইশির বর্তমান অবস্থা দেখে কিছুটা স্বস্তি পেলেন। মেয়েটা যদিও বলছে তার পেটে এখনও যন্ত্রণা হয়। কিন্তু মেয়েটাকে দেখে পুরোপুরি সুস্থ লাগছে। একরাতেই যেন চেহারার মাঝের সব ক্লান্তি মুছে গেছে। আরিফ সাহেব হাসপাতালের বিল মিটিয়ে মাইশিকে বাড়িতে নিয়ে গেলেন। মাইশি সম্পুর্ণ স্বাভাবিক এখন। গায়ে জ্বর নেই, শরীরে দুর্বলতা নেই। অপারেশনটার যদিও কোনো চিহ্ন নেই তবুও এই অদৃশ্য অপারেশনটাই যেন মাইশিকে আবার সুস্থ করে দিয়েছে। যদিও এইরোকম সুস্থ মাইশি এর আগেও অনেকবার হয়েছে। আরিফ সাহেব এখন আর মাইশিকে নিয়ে ভাবছেন না। ভাবছেন ডাক্তার ইমরান এবং ইলিয়াসকে নিয়ে। এরা হঠাৎ একসাথে আত্মহত্যা করল কেন? ও.টি থেকে বের হওয়ার পরইতো তাদের ব্যবহার বেশ অস্বাভাবিক লাগছিল। সেই লাল চোখ , গম্ভীর কন্ঠ! তাহলে কী তাদের আত্মহত্যার পেছনে মাইশির অপারেশনের কোনো যোগসুত্র আছে!
.
মাইশি যেহেতু এখন মোটামুটি সুস্থ তাই তাকে বাড়িতে রেখেই আরিফ সাহেব তার বন্ধু ডাক্তার ইমরানের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সেখানে গিয়ে যানতে পারেন ইমরানের লাশকে পোস্ট মর্টেমের জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ইমরানের পরিবারের সাথে তিনি দেখা করেন। যতটুকু জানতে পারেন তা হলো গতরাতে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরে তিনি পরিবারের কারও সাথে কোনো কথা বলেন না। সোজা তার বেডরুমে ঢুকে ভেতর থেকে দরজা আটকে দেন। ইমরান প্রায়ই যখন কোনো অপারেশনে ব্যর্থ হতো তখন এমনভাবে ঘন্টা খানেক চুপচাপ দরজা বন্ধ করে ঘরে বসে থাকতেন। তাই তার স্ত্রী ছেলে-মেয়েরা তাকে আর বিরক্ত করে না।
কিন্তু কয়েক ঘন্টা কেঁটে যাওয়ার পরেও যখন ইমরানের কোনো সাড়া-শব্দ পাওয়া যায় না। তখন তারা বেশ দুঃশ্চিনায় পড়ে যান। সমানে দরজা ধাক্কাতে থাকেন এবং ইমরানকে ডাকতে থাকেন। কিন্তু ইমরানের কোনো উত্তর পান না তারা। হঠাৎ লক্ষ করলেন ঘরের জানালা খোলা। জানালা দিয়ে তাকাতেই সেই অপ্রত্যাশিত দৃশ্যটি দেখলেন। সিলিংএ ইমরানের ঝুলন্ত লাশ।
.
আরিফ সাহেব ঠিকানা জোগাড় করে ডাক্তার ইলিয়াসের বাড়িতেও যান। ঠিক ইমরানের মতো করেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন। এই দুজনের আত্মহত্যার পেছনের কারণ জানতে পুলিশ তদন্ত করছেন। তাদের প্রাথমিক ধারণা এই দুইজনকে বড় কোনো বিষয় নিয়ে হয়তো ব্লাকমেইল করা হচ্ছিল। তাই তারা চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেন। তবে এটা স্রেফ একটা ধারণা। তারা কোনো সুইসাইড নোট রেখে যান নি। আরিফ সাহেবের মনে একটা পাপবোধ কাজ করছে। তার মনে হচ্ছে মাইশির কারণেই তারা মারা গেছে। আবার ভাবলেন, মাইশি বা তিনি এর সাথে কোনোভাবেই জড়িত নয়। তারা হয়তো অন্য কোনো কারণে আত্মহত্যা করেছেন। এর সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। মাইশির পেটে যে কোনো ভ্রূণ আছে এটা হয়তো তাদের ভূল ধারণা ছিল। ও.টিতে গিয়ে তারা এটা বুঝতে পারে। তাই বাহির থেকে পর্যবেক্ষণ করে অপারেশন না করেই তারা বেড়িয়ে যায় অপারেশন থিয়েটার হতে।
নার্স মহিলাটি ভয়ে বানিয়ে বানিয়ে আজেবাজে কথা বলছিল।
.
আরিফ সাহেব নিজেকে কিছুটা শান্ত করে বাড়িতে ফিরলেন। মাইশিকে স্বাভাবিক আর সুস্থ দেখে তার মনটা এমনিতেই ভালো হয়ে গেল। দুপুরে রোজকার মতো তিনিই রান্না করেন। দুপুরের খাবার শেষে মাইশিকে নিয়ে গল্প করেন, বিকেলে বাড়ির উঠানে ক্রিকেট খেলেন। দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। আরিফ সাহেব ডাক্তার ইমরান এবং ইলিয়াসের কথা ভূলেই যান।
ইমরান যে তার বন্ধু ছিল তার এই অস্বাভাবিক মৃত্যু কোনো এক অজানা কারণে তাকে ভাবায় না আর।
.
রাত ৮টা বাজতেই আরিফ সাহেব মাইশিকে বললেন, আজ বাড়িতে রান্না হবে না। আমরা বাইরে থেকে খাবার এনে খাব। তুমি কী খেতে চাও? মাইশি বেশ উত্তেজিত হয়েই বলল, আমি পিজ্জা খাব। আরিফ সাহেব মোবাইলেই পিজ্জা অর্ডার করলেন। আধ-ঘন্টার মধ্যে পিজ্জা আসার কথা। ৪০ মিনিট পার হয়ে গেল।
.
হঠাৎ ঘরের মেইন দরজায় জোরে কারও ধাক্কানোর আওয়াজ পাওয়া গেল। নিশ্চই পিজ্জা বয়। কিন্তু কলিং বেল না বাজিয়ে দরজা ধাক্কাচ্ছে কেন? মাইশি বেশ ভয় পেয়ে গেল দরজা এত জোরে ধাক্কানোর শব্দ পেয়ে। তাকে বিছানায় বসিয়ে রেখে আরিফ সাহেব ধীরে ধীরে দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন। দরজা খুলে দেখলেন পিজ্জা হাতে টি-শার্ট পড়া একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। মেয়েটার পুরো শরীর ঘামে চিপচিপে হয়ে রয়েছে। তার চোখে মুখে স্পষ্ট ভয় আর বিস্ময়ের ছাপ। মেয়েটা কী দেখে এত ভয় পেল! আরিফ সাহেবের দিকে চেয়ে মেয়েটা শুধু শান্ত স্বরে একবার বলল, আপনার পিজ্জা। আরিফ সাহেব পিজ্জাটা হাতে নিতেই মরা মানুষের মতো দরজার সামনে লুটিয়ে পড়ল মেয়েটা। আরিফ সাহেব বেশ চমকে উঠলেন। পানির জন্য মাইশিকে ডাকতে লাগলেন। মাইশির কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। আরিফ নিজেই পিজ্জাটা টেবিলে রেখে খাবার ঘর থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে আসলেন। পুরো গ্লাস পানি ঢেলে দিলেন মেয়েটার মুখে। মেয়েটা আঁতকে ধড়ফড় করে উঠে বসল। ভয়ে এখনও তার পুরো শরীর থর থর করে কাঁপছে। মেয়েটা বিস্ময় ভরা কন্ঠে আরিফ সাহেবকে প্রশ্ন করল, আপনি কে? আমি কোথায়? আমার কী হয়েছিল? মেয়েটার এই কথা শুনে আরিফ সাহেবের মেজাজ বেশ খারাপ হলো। তিনি তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলেন। মেয়েটা এবার কোনোমতে দাঁড়িয়ে বলতে লাগল, আপনাদের এই বাড়িতে কী ভূত আছে? আমি ভূত দেখে বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আরিফ সাহেব শুকনো গলায় বললেন, বিল কত হয়েছ বলো। টাকা নিয়ে বিদায় হও। মেয়েটা বলল, বিশ্বাস করুণ। আমি যখন এই বাড়িতে ঢুকতে গিয়েছি। হঠাৎ দেখলাম দুটো কালো ছায়া আপনাদের উঠানের পাশের কাঁঠাল গাছটার পেছন থেকে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। দুজনের গায়েই সাদা ডাক্তারী এপ্রোন। কালো ছায়ার গায়ে এপ্রোন দেখে আমি বেশ ভয় পেয়ে যাই। তারা ধীরে ধীরে আমার দিকে এগিয়ে আসে। আমার হাত-পা যেন অবশ হতে থাকে আর আমি ঘামতে থাকি। তারা পুরুষালী কন্ঠে আমাকে বাড়ির ভেতরে যেতে নিষেধ করল! বলতে বলতে মেয়েটা দরজার সামনে থেকে বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেল। এরপর বলল, বিশ্বাস করুণ আমার তখন দৌড়ে পালিয়ে যেতে ইচ্ছা হলো। কিন্তু গত কয়েকদিনে আমি অনেকগুলো পিজ্জা ডেলিভারী মিস করেছি নানান ভেজালে পড়ে। বস বলেছেন আরেকটা মিস করলেই চাকরী শেষ! চাকরিটা আমার ভীষণ প্রয়োজন। তাই ঐ ছায়াগুলো বেদ করেই পিজ্জা নিয়ে এখানে এলাম। ছায়াগুলো এখনও মনে হয় বাহিরে আছে!
.
মেয়েটার আজগুবি কথা শুনে আরিফ সাহেবের মেজাজ ক্রমেই খারাপ হচ্ছে! কিন্তু এপ্রোন পরা ডাক্তারের কথা শুনে ভেতরে ভেতরে বেশ চমকালেন। গম্ভীরভাবে পিজ্জার টাকাটা মেয়েটির হাতে দিয়ে বললেন, তুমি এখন চলে যেত পারো। এইসব গল্প শুনার ইচ্ছা নেই আমার। মেয়েটা আমতা আমতা করে বলল, চলেই যাব। আমার একা যেতে ভয় করছে। আপনি আমাকে একটু বাড়ির বাহির পর্যন্ত পৌছে দিন।
.
আরিফ সাহেব আর কথা না বাড়িয়ে মেয়েটাকে বাড়ির বাইরের তার স্কুটি পর্যন্ত পৌছে দিলেন। মেয়েটা দ্রুত চলে গেল। আরিফ সাহেব উঠানের কাঁঠাল গাছটা ভালো ভাবে দেখলেন। কিছুই নেই এখানে। মেয়েটার কথাশুনে মনে হয়নি যে মেয়েটা কোনো বানোয়াট কথা বলেছে। এই বাড়িতে কোনো একটা রহস্যতো রয়েছেই। নাহলে সবাই ছায়া দেখবে কেন! মেয়ের ছায়ার সাথে আবার যুক্ত হয়েছে এপ্রোণ পরা পুরুষ ছায়া। এই ছায়াগুলোর যদি অস্তিত্ব থেকেই থাকে তাহলে তার সাথে দেখা করছে না কেন! আরিফের ধীরে ধীরে অলৌকিকতার উপর যেন বিশ্বাস জন্মাতে শুরু করল।
.
আরিফ স্বাভাবিক ভাবেই মাইশির ঘরে গিয়ে মানসিক ভাবে একটা বড়সড় ধাক্কা খেল। মাইশি মেঝেতে পড়ে রয়েছে। আরিফ দ্রুত তাকে বিছানায় উঠালেন। গায়ে হাত দিতেই রীতিমত চমকে গেলেন। জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। পুরো শরীর ভরা ক্লান্তী আর দুর্বলতার ছাপ। এইতো কিছুক্ষণ আগেওতো মেয়েটা সুস্থ স্বাভাবিক ছিল। হঠাৎ কেন এমন হলো!
.
সারারাত মাইশির কপালে জলপট্রি দিয়ে রাখা হলো, রাতে কয়েকবার স্পঞ্জ করা হলো পুরো শরীর। বেশ কয়েকবার মাথা ধুইয়ে দিলেন। জ্বর তেমন কমল না। মাইশি হঠাৎ হঠাৎ চোখ খুললেও কথা বলতে পারল না।
.
পরের দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জ্বর কিছুটা কমলো। দুপুর থেকে মাইশির শুরু হলো প্রচন্ড পেট ব্যথা। তার পেটের ভেতর থেকে কিছু একটা নাকি তাকে খোচাচ্ছে। মাইশিকে নিয়ে যাওয়া হলো পাশের একটা ক্লিনিকে। সেখানে বসেন ডাক্তার নাসিমা আক্তার।
.
মেয়েটার পেটে ব্যথা দেখে ডাক্তার নাসিমা আক্তার সিটি স্ক্যান এবং আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করলেন। রিপোর্ট দেখে তিনি ডাক্তার ইমরান এবং ইলিয়াসের মতো হতভম্ব হয়ে বললেন,ওহ মাই গড! এটা কী করে সম্ভব! একটা বাচ্চা মেয়ের গর্ভে ৬ মাসের বাচ্চা! আরিফ সাহেব বেশ রেগেই বললেন, আপনাদের চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর কোনো ব্যাখ্যা নেই? নাসিমা আক্তার স্বাভাবিক
ভাবেই বললেন, অবশ্যই এর ব্যাখ্যা আছে। এটাকে চিকিৎসাশাস্ত্রে বলা হয়, ” ফিটাস ইন ফিটু”। এর মাধ্যমে মায়ের গর্ভের যমজ সন্তানের একটির ভ্রুণের ভেতর অপর একটি ভ্রুণের বিকাশ ঘটে। পরবর্তীতে সেই প্রথম জন্মানো বাচ্চাটির গর্ভে ২য় ভ্রূণটি পাওয়া যায়। তবে এইটা খুব বিরল ঘটে। ৫ লক্ষ শিশুর ভেতর একজনের এমনটা ঘটে। তবে ৮ বছর বয়সে এসে এমনটা হয় বলে আমার জানা নেই। হলে অনেক আগেই বোঝা যেত। তাছাড়া পেটের ভেতর এত বড় একটা ভ্রুণ থাকলে পেটের বাহিরে তা জানান দিবে। কিন্তু ওর পেট দেখেতো তেমন কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। যত দ্রুত সম্ভব একটা অপারেশন করতে হবে। তার আগে মেয়েটার জন্ম ও তার মা সম্পর্কে আমার কিছু জানতে হবে।
.
এই মহিলা ডাক্তারের কথা আরিফ সাহেবের বোধগম্য হয় না। ডাক্তার ইমরান এবং ইলিয়াসের মৃত্যুর পর মাইশির অপারেশনের কথা শুনে তিনি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। তিনি যেন বুঝতে পারছেন এর কোনো লৌকিক ব্যাখ্যা নেই কারও কাছে। পুরোটাই অলৌকিক। তাই তিনি ডাক্তারকে বললেন, এই বিষয়ে তিনি পরে কথা বলবেন। ফিস মিটিয়ে মাইশিকে নিয়ে তিনি আবার বাড়িতে ফিরে এলেন।
.
২ দিন পর: মাইশি বিছানায় শুয়ে আছে। তার জ্বর প্রায় কমে এসেছে। শরীরও আবার আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে! কিন্তু আরিফ সাহেব আর চিন্তা মুক্ত হতে পারছেন না। তিনি জানেন মেয়েটা কিছুদিন পর ঠিক একই ভাবে আবার অসুস্থ হয়ে পড়বে। পৃথিবীর কোনো ডাক্তারের সাধ্য নেই এ থেকে তাকে মুক্তি দিবে। এই রহস্যের শেষ কোথায়? মেয়েটা কী আর কোনোদিন সুস্থ আর স্বাভাবিক হতে পারবে না। এই ভয়ংকর অসুখ কী তাকে ছাড়বে না! আজ যদি শম্মী বেঁচে থাকত তার জায়গায়, তাহলে সে এই পরিস্থিতিতে কী করতো? আচ্ছা শম্মী কেন আত্মহত্যা করল? সেও কি মাইশির বিপদ আঁচ করতে পেরেছিল। তাই সে মাইশিকে সাহায্য করতে চাইছিল আর কোনো এক অজানা অলৌকিক শক্তি তাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করে। হায় খোদা এত প্রশ্ন মাথার ভেতর উত্তর দেওয়ার কেউ নেই!
.
খোদাই যেন তার আফসোসের আর্তনাদ শুনতে পেলেন। একটা প্রশ্নের ঝট যেন ধীরে ধীরে খুলতে লাগল তার মাথায়। মাইশি অসুস্থতা শুরু হয় তার মায়ের মৃত্যুর পর থেকে। এরপর থেকে কিছুদিন পরপর রহস্যজনক ভাবে তার অসুস্থ হওয়ার পেছনের কারণ যেন তিনি এখন স্পষ্ট বুঝতে পারছেন। এসব যেন একটা সহজ সমীকরণের মতো তার সামনে উপস্থিত হলো। এই জিনিসটা এতদিন তার মাথায় আসেনি কেন!
.
শম্মী মারা যাওয়ার বেশ কিছুদিন পর থেকেই তার বাড়ির কাজের লোকেরা সেই কালো ছায়া দেখে ভয় পেয়ে একে একে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে থাকে। তখনও মাইশি সম্পুর্ণ সুস্থ ছিল। কাজের লোকেরা চলে যাওয়ার পর বেশ কয়েক মাস কেটে যায় এই বাড়িতে শুধু তিনি আর মাইশি থাকতেন। তখনও মাইশি সুস্থ ছিল। শম্মী মারা যাওয়ার বছর খানেক পরে আরিফ সাহেব একটা কাজের মহিলাকে এই বাড়িতে রাখেন। তখনই প্রথম বারের মতো মাইশি এইরকম হঠাৎ অসুস্থ হয়। আর সেই কাজের মহিলাটি আরিফ সাহেবকে জানান একটা কালো ছায়া নাকি তাকে এই বাড়ি থেকে চলে যেতে বলছে। মহিলাটি ভয়েই চলে যান। তার কয়েকদিন পরেই মাইশি সুস্থ হয়ে যায়। এর মাস কয়েক পরে মাইশিকে পড়ানোর জন্য একজন শিক্ষিকা রাখেন তিনি। শিক্ষিকা এই বাড়িতে আসার পরের দিনই মাইশি আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে। মাইশি অসুস্থ থাকায় শিক্ষিকা তার পরের কয়দিন আর তাকে পড়াতে আসেননি। তারপর মাইশি আবার সুস্থ হলেও সেই শিক্ষিকা তাকে আর পড়াতে রাজি হননি। কেন রাজি হননি সেটা আরিফ সাহেব জানেন না। শম্মী মারা যাওয়ার পর আরিফ তার সমস্ত আত্মীয়স্বজনের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। তাই তারা আর কেউ এই বাড়ির পথ মারায় না। এছাড়া অন্য কোনো নারীর সাথে তার কোনো জানা-শোনাও নেই যে তারা এই বাড়িতে আসবে। তবে হঠাৎ হঠাৎ কোনো নারী এই বাড়িতে উপস্থি হলেই মাইশি এর এই অস্বাভাবিক অসুস্থতা দেখা দেয়। আরিফ সাহেব এবার বেশ উত্তেজিত অনুভব করছেন। সমস্যাটা যেন তিনি বুঝতে পারছেন। এতদিন কেন এই কথাগুলো তার মাথায় এলো না! কোনো কোনো বার কোনো নারী এই বাড়িতে পা রাখার সাথে সাথেই মাইশি অসুস্থ হয়ে পড়তো। কোনো কোনো দিন নারী বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর। কিন্তু কোনো মেয়েলোক এই বাড়িতে পা রেখেছেন আর মাইশি অসুস্থ হয়নি এমনটা কখনও ঘটে নি। এখন যেন তার কাছে সব পরিষ্কার হচ্ছে। এইতো কিছুদিন আগে সন্ধ্যাঁয় এক অচেনা মহিলা এই বাড়িতে এল। মহিলাটি মূলত এসেছিল আরিফ সাহেবের পাশের বাড়িতে। তাদের ঘর নাকি তালা দেওয়া। তাই আরিফ সাহেবের কাছে জানতে এসেছিলেন তারা কোথায়। আরিফ সাহেব তাদের সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তৎক্ষণাত হঠাৎ বৃষ্টি হওয়াতে মহিলাটি এই বাড়িতে আধ-ঘন্টার মতো আটকা পড়ে ছিল। তখনি মাইশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। বৃষ্টি থামার পর মহিলাটি চলে যায়। নারীদের এই বাড়িতে আসার সাথে যে মাইশির অসুস্থতার সম্পর্ক থাকতে পারে এটা তিনি কল্পনাও করতে পারেননি কখনও। এরপরেইতো মাইশিকে ডাক্তার ইলিয়াসের কাছে নিয়ে যান তিনি। মাইশি যখন প্রায় সুস্থ তখন আবার সেই পিজ্জা গার্ল আসে সেদিন রাতে। তারপরে মাইশি আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে। কোনো নারী যদি এই বাড়িতে প্রবেশ করে তাহলে সেই নারীর কোনো ক্ষতি হচ্ছে না, অসুস্থ হচ্ছে শুধু মাইশি। কোনো নারীর এই বাড়িতে প্রবেশের সাথে মাইশির অসুস্থতার কী সম্পর্ক থাকতে পারে! আরিফ সাহেবের মাথায় কিছুই ঢুকছে না। এর চেয়ে মুক্তির উপায় কী? আর মাইশির পেটে সেই বাচ্চার রহস্যটাই বা কী! এরও কোনো উত্তর তার জানা নেই। জানার উপায়টাও তার জানা নেই।
.
মাইশি ঘুম থেকে উঠে বিছানা থেকে নীচে নেমে আরিফ সাহেবের কাছে এলেন। এখন তাকে একেবারে সুস্থ এবং স্বাভাবিক একটা মেয়ে মনে হচ্ছে। কতো সুন্দর একটা মেয়ে। কে বলবে এই মেয়ে গত দুই দিন ভয়ংকর অসুস্থ ছিল!
.
হঠাৎ করে আরিফ সাহেবের চোখের সামনেই থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ল মাইশি। আরিফ সাহেব আঁতকে উঠে তাকে ধরলেন। জ্বরে তার গা পুড়ে যাচ্ছে। এইতো মেয়েটা সুস্থ ছিল। হঠাৎ ঘরের কলিং বেলটা বেজে উঠল। আবার কোন নারীর প্রবেশ এই বাড়িতে? কবে শেষ হবে এই রহস্যের? কেনই বা কোনো নারী এই বাড়িতে প্রবেশ করলে শাস্তি পাবে মাইশি? …………………………………………………………………………………..
.
.
. . . . . . চলবে . . . . . .
.
.
লেখা:- MasudRana
.
.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here