#কলঙ্কিনী
#পর্ব_3_4
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার
,
সন্ধ্যার দিকে, সারা মেইন রোডের ধার দিয়ে হেটে চলেছে। খুব কষ্ট করে হাটছে কিন্তু দেহ দুর্বল হওয়ার কারণে যখন তখন মাথা ঘুরে পড়ে যেতে পারে।
পাশ কাটিয়ে একটা গাড়ি যাওয়ার সময় দাড়ালো।
,
-আপু আপনার কি কোনো হেল্প লাগবে?
,
-না আমি ঠিক আছি।
,
কথাটা বলার সাথে সাথে সারা তার আশে-পাশে আরো দুইজন মানুষের উপস্থিতি টের পেলো। এই লোকগুলো ঐ গাড়ির ভিতরেই ছিলো।
রাতে এমন একটা সুন্দর মেয়েকে দেখে তাদের মনের ভিতর অন্য কিছু কাজ করছে।
,
সারা লোকগুলোর কাছ থেকে একটু দুরে গিয়ে দাড়ালো। মানুষ গুলোকে কেন জানি ওর একটুও ভালো লাগছেনা। কথার ভিতর একটা অন্য ভাব আছে যেগুলা প্রকাশ করা যায়।
,
গাড়ির চালক লোকটা সারাকে চুপ থাকতে দেখে আবার বলল,
,
-কি ব্যাপার সোনামণি, কথা বলছোনা কেন? আবার আমাদের থেকে দুরেও সরে যাচ্ছো।
,
সারা লোকগুলোর মতলব ভালো ভাবেই বুঝে গেছে। কিছু না ভেবেই পালাতে গেলো। কিন্তু পুরুষ মানুষের সাথে দৌড়িয়ে পেরে ওঠে না সারা। তাদের হাতে ধরা পড়ে যায়। চিল্লাচিল্লি করতে থাকে কিন্তু আশেপাশে সাহায্য করার মত কেও ছিলো না। লোকগুলো সারাকে জোর করে গাড়িতে তুলে ফেলে।
,
কাপড় দিয়ে চোখ আর মুখ বেধে ফেলে।
,
,
সারাকে বিছানায় ফেলে একে একে নিজেরদের শার্টের বোতাম খুলতে থাকে লোকগুলো।
,
-আপনাদের দোহায় লাগে আমাকে ছেড়ে দিন।
,
এক খ্যাকখ্যাক করে হেসে বলে,
,
-ছেড়ে তো দেবোই সুন্দরী। তার আগে….. হাহহা।
,
সারার বুক কেপে ওঠে। এই জানোয়ার গুলো থেকে নিজেকে বাচাবে কিভাবে। কলঙ্কিনীর গায়ে আর কত কলঙ্ক লাগবে। সারা শেষ বারের মত অনুনয় করতে থাকে।
,
-আপনাদের পায়ে পড়ি, আমাকে ছেড়ে দিন। আমার গর্ভে সন্তান আছে। আপনারা এতো বড় পাপ করবেন না।
,
-সুন্দরী, তোমাকে দেখে তো ক্লাস নাইনের মেয়ে মনে হচ্ছে। তা পেটের বাবুটার বাবা ঠিকঠাক আছে নাকি আমরা স্বীকৃতি দেব।
,
লোকগুলোর হাসি সারার দেহে ঘিন ঘিন লাগিয়ে দিচ্ছে। খারাপ মানুষের ভাষা কোনোদিন ভালো হতেই পারে না। এদের থেকে বাচার কোনো উপায় নেয় সারার।
সারার উপর যেই না ঝাপিয়ে পড়বে অমনি সেই সময় দরজা ভেঙে পুলিশ প্রবেশ করে।
,
-আজকে তোরা আমাদের হাত থেকে বাচতে পারবিনা। ইয়াবা বিক্রি করে অনেক টাকা কামিয়েছিস। আর এখন মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করছিস!
বাইরের আলো আর কোনোদিন দেখতে পারবি না।
,
সারা পুলিশকে দেখে দেহে যেন প্রাণ ফিরে পায়। তাড়াতাড়ি লোকগুলোর পাশে কাটিয়ে দৌড়ে পুলিশের কাছে চলে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে হাওমাও করে কাদতে লাগে আর বলে,
,
-আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ। আজকে যদি আপনারা না আসতেন তাহলে হয়তো…….
,
অতিরিক্ত কান্না করার ফলে সারা ঠিক মত কথা বলতে পারছেনা।
,
পিছন থেকে লোকগুলোর ভিতর থেকে একজন বলে উঠলো,
,
-তোমাকে যে ৫০০০ টাকার চুক্তি করে একরাতের জন্য নিয়ে আসলাম। আর এখন পুলিশকে পেয়ে সাধু সাজার চেষ্টা করছো।
,
সারা যেন আকাশ থেকে পড়লো। ওদের এহেন কথাই সারা নিজের কথাই হারিয়ে ফেলেছে।
মানুষ নিচে নামতে নামতে কোথায় চলে গেছে? একটা নিরীহ মেয়েকে তুলে এনে তার নামে এমন কলঙ্ক লাগিয়ে দেবে?
নিরীহই বা কোথায় সারা তো কলঙ্কিত আরেকটু বেশি কলঙ্ক লাগলো।
কিন্তু এই কলঙ্ক কি এখানেই থেমে থাকবে নাকি আরো বাড়তে থাকবে?
,
একজন মেয়ে পুলিশ সারার চুলের মুঠি ধরে,
,
-এই পতিতার বাচ্চা। এতো ভালো সাজার নাটক কিভাবে করিস?
,
-বিশ্বাস করুন। এই লোক গুলো আমাকে তুলে এনেছে। এখন নিজেরা ধরা পড়ে আমাকে মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করছে।
,
,
পুলিশ আর কোনো কথায় শোনেনা। সারা আর বাকি আসামিদের থানায় নিয়ে চলে যায়।
,
এদিকে এলাকার বড় ইয়াবা ব্যাবসায়ীরা পাকড়াও হয়েছে সেটা মিডিয়ার কানে পৌছে যায়। তারা সাথে সাথেই থানায় চলে আসে।
পুলিশের কাছে সমস্ত ঘটনা শুনে তারা সারাকে বাজারে মেয়ে বলে মিডিয়ার সামনে তুলে ধরে।
,
অনেক মিডিয়ার কাজ শুরু থেকে কিছু না জেনেই মুখের কথা প্রচার করা। যার জন্য সারার গায়ে নতুন কলঙ্কের কালী লেগে গেলো।
,
নেহা আর নাসরিন বেগম টিভিতে শুধু বানোয়াট একটা প্রচারণা দেখে। যেখানে না দোষ আছে, সাংবাদিকদের, না সারার আর নাই বা পুলিশদের।
,
ঐ মানুষ রুপি জানোয়ার গুলোর জন্য সব আজ অপবাদের উপর অপবাদ সারার ঘাড়ে এসে পড়লো
,
,
সবাইকে জেলের ভিতর ঢুকাতে গেলে সারা বারবার আকুতিমিনুতি করতে থাকে আর কথা একবার শোনার জন্য।
,
ওসি মিসেস রেহেনার সামনে বসে আছে সারা, (পুলিশের পদ সম্পর্কে আমার কোনো আইডিয়া নেই ভুল হলে মাফ করবেন)
,
-হ্যা বলো তুমি কি বলতে চাও।
,
সারার সাথে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা খুলে বলে।
,
-তুমি ইচ্ছা মত বানিয়ে বানিয়ে সব কিছু বলবা আর আমি বোকার মত মেনে নেবো?
,
-আমার পেটের সন্তানের কসম খেয়ে বলছি। আমার কোনো অপরাধ নেই। আপনি যাচাই করতে পারেন।
,
মিসেস রেহেনা লকাপের ভিতর গিয়ে ঐ তিন জনকে ভয় দেখায় যে সত্য কথা না বলে ক্রসফাইয়ারে দেবে।
মৃত্যু ভয় সবাই পায় তারাও পেয়ে স্বীকার করে যে তারা মেয়েটাকে জোর করে তুলে এনেছে।
,
মিসেস রেহেনা , যে মানুষটা পুলিশের চাকরি জীবনে কোনোদিন মাথা নিচু করেনি সে আজকে সারার হাত ধরে মাথা নিচু করে বসে আছে।
,
-আমাকে তুমি মাফ করে দাও মা। আমার আগেই তোমার কথা শোনা উচিৎ ছিলো। আমার এই অপরাধের যে কোনো ক্ষমা নেই!
,
-আপনি এমন বলবেন না। আপনি যেটা ভালো মনে করেছে সেটাই হয়েছে। তাছাড়া লোকগুলো সেই সময় যে ভাবে কথাগুলো বলছিলো সেটা বোঝার ক্ষমতায় ছিলো না যে সেগুলো মিথ্যা, বানোয়াট কথা। কলঙ্ক তো আমার গায়ে লেগেই আছে আরো একটু লাগলো এই আরকি।
,
-তুমি তোমার শ্বাশুড়ি কে কেন বলোনি আসল সত্যটা?
,
-তার যে সত্যটা হজম করার মত দেহের অবস্থা নেই। যদি বলি তাহলে তিনি মারা যাবে। আমি কি করে তাকে মেরে ফেলি। যেই বুকে আমাই আশ্রয় দিয়েছে আমি কিভাবে সেই বুকটাকে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিই।
#কলঙ্কিনী
৪র্থ পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার
,
থানাতে সারা এবং মিসেস রেহেনার কথোপকথন,
,
” আমার বাবা কে মা কে এসবের কিছুই জানতাম না।
যখন জ্ঞান বুদ্ধি হয়েছে তখন থেকেই নিজেকে অনাথ হিসেবেই জেনেছি।
একটা অনাথ আশ্রমে জীবনের ২০/২১ বছর পার করেছি।
আশ্রমটি ছিল আমার মা আশ্রমটিই ছিলো আমার বাবা।
,
কিন্তু এলাকার প্রভাবশালী এক লোকের ছেলে, নাম শিহাব, আমার উপরে কুনজর পড়ে। সে আমামে আমার মা-বাবার কাছে থাকতে দেয়না।
,
সে বারবার আমাকে কুপ্রস্তাব দেওয়ার চেষ্টা করে।
আমি অনেকবার পুলিশ কমপ্লেন করেছি এবং আশ্রমের পরিচালক কেও বলেছি, কিন্তু ক্ষমতা তাদের হাতে থাকায় আমার কোনো লাভ হয়নি।
,
,
একদিন রাতে আমার ঘরে বসে বসে কবিতা লিখছিলাম।
হঠাৎ দিয়া নামের একটা মেয়ে এসে বলল,
,
-সারাপু সারাপু তুমি এখনি পালিয়ে যাও, বিপদ আসছে।
,
মেয়েটার বয়স ছিল ৮/৯ বছর।
তার গালটা একটু টেনে দিয়ে আদর করে বললাম,
,
– আমার আবার কিসের বিপদ?
,
-জানো সারাপু! আমি যখন বাথরুমের দিকে যাচ্ছিলাম তখন অফিস রুম থেকে কিছু মানুষের ফিসফিসানি শুনতে পাই। তএই রাতে অফিস রুমে তো কেও থাকে না। তাই আমি দরজায় কান পেতে শোনার চেষ্টা করি।
তাদের মধ্যে কেউ একজন বলে, ‘সারা মেয়েটার খুব সাহস হয়েছে। ওকে রেপ করে মেরে পুঁতে ফেলবো।’
জানো আপু কথাটা শুনে আমি খুব ভয় পেয়েছি। তাই বাথরুমে না গিয়েই তোমার এখানে কথাটা বলতে চলে এসেছি।
,
দিয়ার কথাটা শুনে আমার বুকটা কেঁপে ওঠ যেখানে এত বছর ভালবাসার সাথে বেড়ে উঠেছি আজ সেই জায়গা আমার থাকবেনা। নিষ্ঠুর দুনিয়ায় সব কষ্ট যেন আমার উপর লেগেই আছে।
,
দিয়া মেয়েটা জিজ্ঞাসা করে,
,
– আচ্ছা সারাপু রেপ জিনিসটা কি? আর সেটা করলে মেরে ফেলবে কেন?
,
ছোটো মেয়েটাকে এই বিষয়টা বুঝানোর মত কন্ডিশন ছিলো না। আমার হাত পা থরথর করে কাপছিলো। কিছুই মুখ দিয়ে বের হচ্ছিলো না। শেষমেশ মেয়েটাই বলল,
,
– তুমি তাড়াতাড়ি পালিয়ে যাও না হলে ওরা তোমাকে মেরে ফেলবে।
,
মাথায় তখন একটা জিনিসই কাজ করছিলো আর সেটা হলো, বাচতে হবে।
,
তখনই নিজের জামা কাপড় নিয়ে জীবনের মতো আশ্রম থেকে পালিয়ে বের হয়ে যাই।
,
রাতের বেলা কোথায় যাবো কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।
হঠাৎ মনে পড়ে পরিচিত একটা বান্ধবী আছে তাই সেই রাতে তার কাছে চলে যাই।
,
সকাল বেলা আমি সেখান থেকেও পালিয়ে আসি। যেই জায়গায় আমি ২০/২১ বছর ধরে থেকে এসেছি সেই জায়গা আমার ক্ষতি করতে চেয়েছিলো আর মাত্র দুইবছরের বন্ধুত্ব কিভাবে আমাকে রক্ষা করবে।
,
,
গন্তব্যহীন ভাবে সারাদিন ঘুরতে থাকি। কোথায় যাচ্ছি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।
,
ক্ষুধার তাড়নায় একপা ফেললে সেটা তোলার ক্ষমতা ছিল না। কি করবো কোথায় যাবো এই ভেবে আমার পৃথিবী ভেঙে কান্না আসছিলো।
‘ আল্লাহ তুমি আমাকে কোন পরীক্ষায় ফেললে? এই পরীক্ষায় পাশ করব কিভাবে, টিকে থাকব কিভাবে? নাকি আমার জীবনের অন্তিম মুহূর্ত চলে এসেছে?
,
হাটতে হাটতে হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যাই।
,
যখন চোখ খুলি নিজেকে হাস্পাতালে আবিষ্কার করি। একজন মহিলা পাশে বসে হাত পাখা দিয়ে আমাকে বাতাশ করছিল। তিনি আমাকে জানান যে তার ছেলে পাশের শহর থেকে ফেরার সময় রাস্তার মাঝে আমাকে পড়ে থাকতে দেখে। কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় না তাই সে নিজেই আমাকে এই হাসপাতালে ভর্তি করে। তারপর ওনাকে খবর দেয় আমার সেবা যত্ন নেওয়ার জন্য।
,
মহিলাটি আমার কাছে আমার ঠিকানা জিজ্ঞাসা করে, কিন্তু এতিমের যে একটাই ঠিকানা, খোলা আকাশ।
,
আমি আমার সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা ওনাকে বলি।
,
আমার কথা শুনে আমার উপরে খুব মায়া হওয়ার কারণে আমাকে ফেলে যায়নি, তার বাড়িতে স্থান দিয়েছিলো তাও একজন আশ্রিতার জায়গায় না, তার পুত্রবধু করে। ভেবেছিলাম আল্লাহর দেওয়া পরীক্ষায় হয়তো আমি পাশ করেছি। বাকি জীবনটা হয়তো প্রিয় মানুষটার সাথে সুখে কাটিয়ে দেবো। কিন্তু হাই!
হতভাগী সারাজীবন কষ্টই পেয়ে থাকে। তার জীবনে সুখ বলতে কিছুই নেই, শুধু স্বপ্নই সুখ পাবে, বাস্তবে শুধু দুঃখ আর দুঃখ।
,
বিয়ের ২ মাস পর আমান বাইরের দেশে যাবার তোড়জোড় লাগিয়ে দেয়। বলেছিল ৫ বছর বিদেশ থাকবে, কিন্তু একজন স্ত্রী জানে স্বামীর থেকে দূরে থাকা কতটা কষ্টের, তার ভালবাসার পরশ গুলো থেকে দূরে থাকা কতটা কষ্টের, তার বুকে মাথা না রেখে রাত কাটানো কতটা কষ্টের!
,
২ মাস পর আমানের সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে যায়। যাওয়ার সময় আমার কপালে একটা ভালোবাসা দিয়ে বলেছিলো। মা বাবা আর নেহাকে দেখে রাখতে। আমি মুখ দিয়ে কিচ্ছু বলিনি কিন্তু আমার চোখ সেদিন আমার কথা শোনেনি।
,
এয়ার্পোরটে ওয়েটিং জোনে বসে ছিলো হঠাৎ এসে পুলিশ ওকে ধরে নিয়ে যায়। কেও ওর পাশের চেয়ারে একটা ব্যাগ রেখে ওকে একটু দেখে রাখতে বলে। সেটাই ওর কাল হয়ে দাড়াই। ৫ বছরের জেল হয়।
,
একজন পুলিশের সাহায্য ও বাড়িতে নিয়মিত কথা বলতো। ইন্টারনেট কল দেওয়াতে মাবাবা বা নেহা কেওই বুঝতে পারতোনা ও বিদেশ আছে নাকি দেশেই জেলে আছে। আর আমি অভিনয় করেই যেতাম সবার সাথে।
,
আড়াই বছর পর কুরবানী ঈদের একদিনের জন্য ওকে বাড়িতে আসার অনুমতি দেওয়া হয়। কারণ এতো দিনে প্রমান ওর বিপক্ষে গেলেও পুলিশ ভালোই বুঝতে পেরেছিলো ও দোষী না।
,
বাড়িতে আসার আগে আমাকে ফোন দেয়। এবং বলে যে রাতে যাবো আবার ভরে চলে আসবো। মাবাবা আর বোনটার ঘুমন্ত মুখ গুলো দেখেই চলে আসবো। আমি জেলে আছি ওরা মা জানলে তাকে বাচানো যাবে না।
,
সেদিন রাতেই বাড়িতে আসে আমান। প্রিয় স্বামীকে আড়াই বছর পর কাছে পেয়ে, আর তার ভালোবাসার ডাকে সাড়া দেওয়ার ফলেই আমার এই সন্তান গর্ভে আসে।
,
ভোরে আমান চলে যায়।
,
আমি আমার প্রেগ্ন্যাসির কথা প্রায় ৪/৫ মাস লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করি। পেট একটু একটু বাড়তে থাকে তবুও যতটা সম্ভব নিজেকে লুকিয়ে রাখি।
,
কিন্তু হঠাৎ একদিন আমার ফোনে কল আসে যে সর্টকার্টিকে আমানকে যেই জেইলে থাকবো সেখানে আগুন লেগে ৩ জন পুলিশ ও যে ৫ জন কয়েদি ছিলো তারা সবাই পুড়ে মারা যায়।
,
আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়। আমার পৃথিবী যেন অন্ধকার হয়ে যায়। আমি কোনো রকম ভাবে বলি তার লাশ যেন বাড়িতে না পাঠানো হয়। মা দেখলে তাকে বাচাতে পারবোনা।
,
ফোনটা কোনোরকমে রেখেই আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। ডাক্তার এসে চেকাপ করে জানায় আমি প্রেগন্যান্ট।”
,
তারপর একে একে সারা সব কিছু ওসি মিসেস রেহেনাকে বলে।
-তুমি তোমার শ্বাশুড়ি কে কেন বলোনি আসল সত্যটা?
,
-তার যে সত্যটা হজম করার মত দেহের অবস্থা নেই। যদি বলি তাহলে তিনি মারা যাবে। আমি কি করে তাকে মেরে ফেলি? যেই বুকে আমাই আশ্রয় দিয়েছে আমি কিভাবে সেই বুকটাকে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিই?
,
,
,
চলবে…