#কাশফুলের_ভালোবাসা
#পর্বঃ২৩
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
ক্যান্টিনে বসে বই পড়ছে অথৈ।সে আজ তাড়াতাড়ি এসে রিফা আর মেহেকের জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু দুজনের আসার কোন নামগন্ধই নেই।অথৈ বইয়ের পাতায় চোখ বুলাতে থাকে।তবে অথৈয়ের সিক্স সেন্স বলছে কেউ তাকে দেখছে,খুব সূক্ষ্মভাবে তাকে পড়ক করছে।অথৈ অনেক চালাকি করে আশেপাশে দুই-তিন বার চোখ বুলিয়ে নেই কিন্তু কাউকেই তার নজরে পড়েনা।অবশেষে বিরক্ত হয়ে সে সেই ব্যক্তিকে খোঁজা বন্ধ করে বই পড়তে থাকে।
এদিকে গাছের আড়াল থেকে অথৈকে দেখছিল শান্ত।সে অথৈয়ের চালাকি ঠিকই ধরে ফেলেছিল তাই তো লুকোতে সফল হয়ছে।অথৈয়ের বিরক্ত দেখে মিটিমিটি হাসে শান্ত।
” আহ্…..অবুঝ পরী কবে তুমি বুঝবে আমায়?কেন বোঝোনা বলো তো?তুমি কি জানোনা তোমার বিরহে কেউ কষ্ট পাচ্ছে?” নিজে নিজে বলে শান্ত।
এদিকে,
ক্যাম্পাসের মাঝামাঝি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেহেক আর রিফা।একটা ছেলে হাঁটু গেঁড়ে বসে আছে মেহেকের সামনে,হাতে একটা ফুল।ছেলেটার ভাবগতি দেখে মেহেক আর রিফা দুজনেই বুঝতে পেরে যায় ছেলেটার উদ্দেশ্য।মেহেকের তো ভয়ে কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গিয়েছে।রিফা কঠিন গলায় জিজ্ঞেস করে—
” কি চাই?এভাবে পথ আঁটকে রেখেছেন কেন?”
” আসলে আমার ওর(মেহেক) সাথে কিছু কথা আছে।”
” তো সেটা সোজাসুজিও তো বলা যায়।এভাবে সিংগ্রেট করার মানে কি?”
” আমি সিংগ্রেট করছিনা।আচ্ছা আমি সোজাসুজি বলছি ‘ আই লাভ ইউ এন্ড আই ওয়ান্ট ইউ।”
” এসব কি বাজে কথা বলছেন?” রেগে বলে রিফা।
” আমি বাজে কথা বলছিনা।আই এম সিরিয়েস।আই রিয়েলি লাভ ইউ।”
মেহেক কিছু বলছেনা,সে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
” আপনি প্লিজ এখন যান।”
” প্লিজ ট্রাস্ট মি,আই রিয়েলি লাভ ইউ।আমি তোমার খুব খেয়াল রাখবো,ট্রাস্ট মি।”
মেহেকের চোখে অলরেডি পানি জমে গিয়েছে।যেকোন সময় টুপ করে পড়বে।মেহেকের দৌড়ে সেখান থেকে ওয়াশরুমের দিকে চলে যায়।মেহেকের এই কান্ডে রিফা আর ছেলেটা দুজনেই অবাক।রিফা প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে ছেলেটা দিকে তাকাই।
” আপনি প্লিজ এখন যান।দয়া করে আর কোন কিছু করবেন না।”
ছেলেটা মাথা নিচু করে চলে যায়।রিফা সেখান থেকে ওয়াশরুমের দিকে যেতে থাকবে তখনই তার ফোন বেজে উঠে।রিফা তাড়াতাড়ি ফোনটা বের করে দেখে অথৈ ফোন দিয়েছে।সে তাড়াহুড়ো করে ফোনটা রিসিভ করে।
” কিরে রিফু কোথায় তোরা?আমি কতক্ষণ ধরে তোদের জন্য অপেক্ষা করছি।”
” অথু তুই ভার্সিটির ফার্স্ট ফ্লোরের ওয়াশরুমে আয়।” তাড়াহুড়ো করে বলে রিফা।
” কিন্তু ওখানে কেন?তোরা ক্যান্টিনে আয়।”
” তুই আয় তারপর বলছি।”
রিফা ফোন কেটে দিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যেতে থাকে।রিফার কথা অথৈ কিছু বোঝেনা তাই সেও তাড়াহুড়ো করে ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে পড়ে।
অন্যদিকে,
ওয়াশরুমে এসে অজোরে কান্না করছে মেহেক।তার কান্না যেন কোন বাঁধই মানছেনা।
” কেন?কেন আমি যেটা থেকে পিছু ছাড়াতে চাইছি তা বারবার আমার কাছে চলে আসছে?কেন?আমি তো ওই শহর ছেড়ে চলে এসেছিলাম এই কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া জন্য তাহলে কেন সেটা এখানেও আমার পিছু পিছু চলে এসেছে?কেন আমি এই অসহ্য যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাচ্ছিনা কেন?'”
অঝোরে কান্না করতে থাকে মেহেক।ততক্ষণে রিফা আর অথৈ দু’জনেই সেখানে চলে এসেছে।
” মেহু,এই মেহু কি হয়েছে তোর?এভাবে ছুটে এলি যে।আর কান্না করছিস কেন?” মেহেক কাঁধে হাত দিয়ে বলে রিফা।
মেহেক কিছু না বলে রিফাকে জরিয়ে কান্না করতে থাকে।মেহেকের কান্না দেখে রিফা আর অথৈ দুজনেই বেশ চিন্তিত হয়ে যায়,তবে তারা এখন কিছু বলেনা।মেহেককে শান্ত হওয়া সময় দেয়।কিছুক্ষণ পর রিফাকে ছেড়ে দিয়ে মেহেক নিজেকে সামলে নেয়।মুখে পানি দিয়ে চলে যেতে নিলে অথৈ তাকে থামিয়ে দেয়।
” কিরে?কি হয়েছে তোর?এভাবে কান্না করছিলি কেন?”
” কিছুনা।” ভাঙা ভাঙা গলায় বলে মেহেক।
” কিছু না এটা মোটাও বিশ্বাসযোগ্য নয়।কিছু তো হয়েছে।এবার তাড়াতাড়ি বল কি হয়েছে।” রিফা বলে।
” আরে কিছু…..”
” আমাদের কসম তুই সত্যি সত্যি সব বলবি।” অথৈ বলে।
মেহেক হতাশ হয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস নেই।তারপর বলতে থাকে তার জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল পদক্ষেপটা।অতিতের কথা বলতে বলতে মেহেক আবারো কান্না করে দেয়।মেহেকের কথা শুনে রিফা আর অথৈও ইমোশনাল হয়ে পড়ে।মেহেকের কথা শেষ হলে দু’জনেই তাকে জরিয়ে ধরে।
” শোন মেহু,মন খারাপ করিস না যা হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে।” রিফা বলে।
” হুম,এখন কষ্ট পেয়ে কোন লাভ নেই।তোর সাথে খারাপ হয়নি বরং আল্লাহ তোকে খারাপ লোকের হাতে পড়া থেকে বাঁচিয়ে।” অথৈ বলে।
” ঠিক।সে তোর যোগ্য নয় তাই তোর সাথে তার মিল হয়নি।তোর জীবনে ওই চিটার থেকেও ভালো কেউ আসবে দেখেনিস।”
” তোর আপু জানে এসব?” গম্ভীর ভাবে বলে অথৈ।
” না আপুনি কেন আমি আজকের আগে এসব কাউকে বলিনি।আমার রিকুয়েষ্ট তোরা এসব কাউকে বলিসনা।আপুনিকে তো একদমই না।আপুনি এসব জানলে ভেঙে পড়বে আর নিজেকে দোষ দেবে।”
” এভাবে বলছিস কেন?আমরা কাউকে বলবোনা।আর ভাবীও জানতে পারবেনা।”
” তুই একদম চিল পাখি থাক।আর ওই মদনটার কথা ভুলে যায়।বেটা আসলেই মদন হীরা ছেড়ে কাঁচের পেছনে গিয়েছে।দেখবি একদিন ওই কাঁচ ভেঙেই সে ক্ষতবিক্ষত হবে।”
” আচ্ছা আর এই বিষয় নিয়ে কথা হবেনা।আর মেহু তুই শোন তোর তার কথা মনে পড়বে কারণ প্রথম ভালোবাসা কখনই ভোলা যাইনা।তবে তোকে শক্ত থাকতে হবে।তার কথা মনে পড়লে তুই ভেঙে পড়বি না বরং আরো শক্ত হয়ে দাঁড়াবি।এটাকে তোর ওইক পয়েন্ট নয় বরং স্ট্রং পয়েন্ট বানাতে হবে।”
” আই লাভ ইউ বান্ধবী।” মেহেক রিফার আর অথৈকে জরিয়ে ধরে বলে।
” এন্ড উই হেইট ইউ।” রিফা আর মেহেক একসাথে বলে।
___________________________________________
ভার্সিটি থেকে আজ রিফা আর মেহেক একসাথে ফিরে এসেছে।বাড়িতে দরজার কাছে এসে মেহেক খেয়াল করে কতগুলো বাড়তি জুতো দেখা যাচ্ছে।হঠাৎই তার মনে পড়ে সৃষ্টি তাকে বলেছে কাজ বাড়িতে কেউ আসবে।
” আচ্ছা রিফু তুই কি জানিস আজ কে আসবে?”
” না তো।”
মেহেক আর কিছু না বলে বেল দেয়।কয়েক সেকেন্ড পর সৃষ্টি দরজা খুলে দেয়।
” আরে মৃদু তুই চলে এসেছিস।আয় আয় তাড়াতাড়ি ভেতরে আয়।”
সৃষ্টি মেহেকে তাড়াতাড়ি করে ভেতরে নিয়ে যায়।ভেতরে গিয়ে মেহেক যাদের দেখে তাদের দেখে তো সে আকাশ থেকে পড়েছে।
” মামা-মামী!তোমরা?”
” আরে আমার মেহেক বাচ্চা চলে এসেছিস।আয় আয় আমার পাশে বস।আজ কতদিন পর তোকে দেখেছি।” মেহেকের মামী বলে।
” কেমন আছিস মেহেক?” মেহেকের মামা বলে।
” হ্যাঁ মামা আমি ভালো আছি।তোমরা কেমন আছো?”
” আলহামদুলিল্লাহ আমরাও ভালো আছি।”
” তুই কত শুকিয়ে গিয়েছিস।খাবার খাসনা নাকি?সৃষ্টি ওকে বেশি বেশি খাবার খাওয়াবি।”
” ঠিক আছে মামী যতদিন আমার কাছে আছে আমি ওকে খাইয়ে বেলুনের মতো ফুলিয়ে দেবো।এরপর তোমার দায়িত্ব।” হাসতে হাসতে বলে সৃষ্টি।
” মামা-মামী তোমরা হঠাৎ এখানে?”
” কেন?আসতে পারিনা নাকি?” মেহেকের মামী বলে।
” আরে না না আমি তা কখন বললাম।আমি বলতে চেয়েছি হঠাৎ এলে।কোন কাজে এসেছো নাকি?”
” হুম কাজে তো এসেছি।আর কাজটা কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে পারবি।এবার ফ্রেশ হয়ে আয়,যা।সৃষ্টি ওকে নিয়ে যা।”
সৃষ্টি মেহেককে নিয়ে তার রুমে চলে যায়।ফ্রেশ হয়ে এসে মেহেক দেখে সৃষ্টি শাড়ি নিয়ে বসে আছে।মেহেক বের হলেও সৃষ্টি তাকে শাড়ি পারাতে থাকে।
” কিরে আপুনি?শাড়ি পড়াচ্ছিস কেন?”
” কাজ আছে তাই।এবার চুপ করে থাকতো।”
মেহেক আর কিছু না বলে চুপ করে থাকে তবে তার মাথায় হাজারো চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।শাড়ি পড়ানো শেষ হলে সৃষ্টি মেহেককে সাজিয়ে গুজিয়ে দেয়।
” মাশাল্লাহ,কারো নজর যেন না লাগে।মৃদু তোর কোন পছন্দ নেই তো?”
” এসব কি জিজ্ঞেস করছিস আপুনি?”
” যেটা জিজ্ঞেস করছি সেটাই বলনা।”
” না নেই।”
” শোন আমরা যেটা করছি তোর ভালোর জন্য আর সেফ থাকার জন্য করছি।আর আমরা কখনোই তোর উপর কিছু চাপিয়ে দেবোনা,এটা মনে রাখিস।” মেহেককে ঘোমটা দিতে দিতে বলে সৃষ্টি।
সৃষ্টির কথা শুনে মেহেকের ভয় হতে থাকে।সে বুঝতেই পারছেনা তার সাথে সামনে কি হতে চলেছে।
#কাশফুলের_ভালোবাসা
#পর্বঃ২৪
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
শাড়ি পড়ে মামা-মামীর সামনে বসে আছে মেহেক।সে পুরোপুরি বুঝতে না পারলেও কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে তার সাথে কি হতে যাচ্ছে।
” মাশাল্লাহ আমার মামুনিটাকে খুব সুন্দর লাগছে।কি বলো তুমি?” মেহেকের মামী বলে।
” হুম ঠিক বলেছো।এখন কথা আগানো যাক?”
” হ্যাঁ হ্যাঁ সৃষ্টি কি বলিস তুই?তোর কোন আপত্তি আছে?”
” আরে মামী কি বলছো?আমার আপত্তি থাকবে কেন?বাবা-মার পর তোমরাই আমাদের খেয়াল রেখেছো।তোমরা যে সিদ্ধান্ত নেবো আমরা তাতেই খুশি।”
” তাহলে তো ভালোই।আগামী সপ্তাহেই তাহলে নক্ষত্র আর মেহেক এনগেজমেন্টটা সেরে ফেলা যাক।” মেহেকের মামী বলে।
এদিকে নক্ষত্রের নাম শুনে মেহেক মাথায় পুরো পৃথিবী ভেঙে পড়ে।মেহেক ফট করে সৃষ্টির দিকে তাকাই।সে চোখ বড় বড় করে সৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থাকে।
” কি হচ্ছে এগুলো?” চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করে মেহেক।
সৃষ্টি তাকে শান্ত থাকতে বলে।” ঠিক আছে মামী।”
তারা সবাই নিজেদের মধ্যেই মেহের আর নক্ষত্রের এনগেজমেন্টের এর কথা ফাইনাল করে ফেলে।মেহেকের রাগে গা কাঁপছে।সে শুধু অপেক্ষা করছে কবে সে সৃষ্টিকে একা পাবে।
” আপুনি এসব কি হচ্ছে?” রেগে সৃষ্টিকে জিজ্ঞেস করে মেহেক।
” কেন?কি হয়েছে?”
” কি হয়েছে মানে?নিচে এসব কি ছিল?”
” তুই তো বলেছিস তোর কোন পছন্দ নেই।”
” হ্যাঁ আমি বলেছি আমার কোন পছন্দ নেই।কিন্তু তাই বলে নক্ষত্র ভাই।আর ইউ সিরিয়েস?”
” এখানে সমস্যা কোথায়?নক্ষত্র ভাই দেখতে শুনতে ভালো,ভালো জব করে,তার আচরণও বেশ মার্জিত।”
” হ্যাঁ আমি জানি সেসব।কিন্তু তাকে আমি শুধুই আমার ভাইয়ের চোখে দেখি।তার সাথে কিভাবে…..”
মেহেককে পুরো কথাটা বলতে না দিয়ে সৃষ্টি বলে, “তো কি হয়েছে?এটা কোন সমস্যা নয়।আমিও প্রথমে তোকে সেখানে বিয়ে দিতে চাইনি কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম নক্ষত্র ভাইয়ের সাথে তোর বিয়ে হলে তুই সেভ থাকবি।মামা-মামীর সাথে থাকলে তোর কনফাটেবল ফিল হবে।তোকে নতুন পরিবেশ গিয়ে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবেনা।তাই তুইও প্লিজ রাজি হয়ে যা।দেখ আমি তোর ভালোর জন্য,তোর সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
মেহেকের মন তাও মানছেনা।সে সৃষ্টিকে বলে তাকে একটু একা থাকতে দিতে।সৃষ্টিও আর মেহেকে জোর না করে চলে যায়।
বিকেলবেলা,
ছাদে আনমনা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেহেক।
” সত্যিই কি সামনের সপ্তাহে তোমার আর তোমার মামাতো ভাইয়ের এনগেজমেন্ট?”
হঠাৎ কারো কন্ঠস্বর শুনে মেহেক জলদি পাশে ফিরে তাকাই।মেহেকের পাশে স্পর্শ প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
” হ্যাঁ।” স্পর্শের দিকে না তাকিয়ে উত্তর দেয় মেহেক।
স্পর্শও আর কোন প্রশ্ন না করে নিচে চলে যায়।
রাতে অল্প কিছু খেয়ে রুমে চলে আসে মেহেক।সে শুতে যাবে তখনই তার মনে পড়ে আরে আজ তো সে সৌন্দর্যকে একবারের জন্যও দেখেনি।তবে মেহেক বিষয়টাকে তেমন একটা পাত্তা না দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
পরেরদিন সকালে,
” কিরে আপু আজ এতো কিসের প্রিপারেশন চলছে?”
” ও তুই চলে এসেছিস।ভার্সিটিতে যাবি?” সৃষ্টি প্রশ্ন করে।
” হ্যাঁ যাবো তো।”
” আজ যেতে হবেনা,আজ বাড়িতেই থেকে যা।”
” কেন?আজ তোদের বাড়িতে কোন অনুষ্ঠান আছে নাকি?”
” আরে না অনুষ্ঠান নেই তবে আজ একজন স্পেশাল মানুষ আসবো?”
” কে আসবে?” গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে প্রশ্ন করে মেহেক।
” আসবে আসবে,একটু সবুর কর।”
মেহেক আর কিছু বলবে তার আগেই বেল বেজে উঠে।
” যা গিয়ে দেখ হয়তো সে স্পেশাল ব্যক্তি চলে এসেছে।”
” এতো সকাল সকাল আবার কোন স্পেশাল ব্যক্তি এলো?” বিরবির করে বলতে বলতে দরজা খুলে দেয় মেহেক।দরজার বাইরে ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়ে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মেয়েটাকে দেখে তো মেহেক হা।মেয়েটা স্টাইল করে নিজের চশমাটা খোলে।
” হেই গার্ল,হু আর ইউ?”
মেহেক এতোটাই অবাক হয়ে আছে সে কোন কিছু তার মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না।
” ওয়াট এভার,সাইট প্লিজ।”
মেয়েটা মেহেককে আর কিছু না বলতে দিয়ে এটিটিউট নিয়ে ভিতরে চলে আসে।মেহেকের হুশ আসতেই সেও দৌড়ে ভিতরে চলে আসে।
মেয়েটা দিয়ে সৃষ্টিকে জরিয়ে ধরে।
” তুই এতো তাড়াতাড়ি চলে আসবি আমি ভাবতেই পারিনি।”
” সারপ্রাইজ কেমন দিলাম?”
” আমি মোটেও সারপ্রাইজ হয়নি,আমি আগেই আন্দাজ করেছিলাম।কিরে মৃদু এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”
মেহেক এখনো চোখ বড় বড় করে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে।
” আরে আপু বোঝোনা ওতো এখনো শকে আছে।কিরে মেহু এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?খেয়ে ফেলবি নাকি?” হাসতে হাসতে বলে মেয়েটা।
” নাইরা আপু তুমি এখানে!এই সময়।”
” আরে আমার ভাইয়ের এনগেজমেন্ট বলে কথা আর আমি আসবোনা এটা কি হয় নাকি?”
” তা না বলে…..”
” না বলে কোথায়?সবাই জানে শুধু তুই জানিস না।”
” ও আচ্ছা।” মন খারাপ করে।
” ভাবী আমাকে ব্রেকফার্স্ট দাও।আমার……” নামতে নামতে কথাটা বলে স্পর্শ।কিন্তু নাইরাকে দেখে তার কথা মাঝপথেই বন্ধ হয়ে যায়।
স্পর্শও চোখ বড় বড় করে নাইরার দিকে তাকিয়ে আছে।নাইরাও স্পর্শকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
” ভাবী এটা….. ”
” এ হচ্ছে নাইরা।আমার মামাতো বোন।সিওলে পড়াশোনার জন্য গিয়েছে।ভাইয়ের এঙ্গেজমেন্টের জন্য এসেছে।”
” হুম।আচ্ছা আমি আসছি।”
” আরে ব্রেকফার্স্ট করে যাও।”
” না আমার পেট ভরে গিয়েছে।” নাইরার দিকে তাকিয়ে বলে স্পর্শ।নাইরার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই স্পর্শ বেরিয়ে যায়।আর এদিকে নাইরা চুপ করে কিছু একটা ভাবছে।
___________________________________________
এনগেজমেন্টের শপিং করে সবাই বাড়িতে ফিরে এসেছে।সবাই এনগেজমেন্ট নিয়ে অনেক বেশি এক্সাইটেড থাকলেও মেহেকের মনে কোন ফিলিংস নেই।সে রোবেটের মতো সবকিছু পালন করে চলেছে।আজ ২/৩ দিন ধরে সৌন্দর্য কেমন যেন চুপচাপ থাকছে।মেহেকের সাথেও কথা বলা কমিয়ে দিয়েছে অনেকটা।তবে মেহেক এসবকিছু তেমন একটা গুরুত্ব দেয়না।
কিছুদিন পর,
আজ মেহেক আর নক্ষত্রের এনগেজমেন্ট।সবাই বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত।মেহেক তৈরি হয়ে চুপচাপ তার রুমে বসে আছে,নাইরা আর রিফা তার পাশে বসে গল্প করছে।কিছুক্ষণ পর সৃষ্টি এসে মেহেককে নিচে নিয়ে যায়।এনগেজমেন্ট অনুষ্ঠান সৌন্দর্যদের বাড়িতেই হচ্ছে।মেহেকের মামা-মামীরাও কাছেরই একটা হোটেলে উঠেছে।মেহেক এককোণে রিফার আর অথৈ এর সাথে দাঁড়িয়ে আছে।
” কিরে মেহু মুখটা এরকম বাংলার পাঁচের মতো করে রেখেছিস কেন?আজ তোর এনগেজমেন্ট কই তুই খুশিতে লাফাবি তা না তুই গোমরা মুখ করে বসে আছিস।”
মেহেক কিছু না বলে মুচকি হাসে।মেহেকের হাসি দেখে রিফা আর অথৈয়ের মন খারাপ হয়ে যায়।কারণ তারা বুঝতে পেরেছে এই হাসির পেছনে লুকিয়ে আছে একরাশ অভিমান আর কষ্ট।
” মেহেক মা দেখ কে এসেছে।”
মামার কথা শুনে মেহেক পেছনে ফিরে কিছু যাদের দেখে তাদের দেখে মেহেক ঘাবড়ে যায়,তার বুক কেঁপে উঠে।মেহেকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে মুগ্ধের বাবা-মা।
” কেমন আছো মেহেক?” মুগ্ধের মা জিজ্ঞেস করে।
” জ্বি আন্টি আলহামদুলিল্লাহ।” নিচু স্বরে জবাব দেয় মেহেক।
” তা তুমি হঠাৎ এখানে চলে এলে যা?আমার মুগ্ধরের বিয়েতেও আসোনি।তোমার বান্ধবীর সাথেই তো মুগ্ধের বিয়ে হয়েছে।শুনলাম রিয়া নাকি তোমার খুব ভালো বন্ধু ছিল।তাহলে বিয়েতে এলেনা কেন?”
মেহেককের কথাগুলো শুনে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে ” কি করে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে অন্য কারো হতে দেখবো?কি করে সহ্য করবো নিজের ভালোবাসার মানুষ হারিয়ে যাওয়া কষ্ট?”
মেহেক কিছুনা না বলে রিফা আর অথৈয়ের দিকে তাকাই।তাদের কথা শুনে রিফা আর অথৈও বুঝতে পেরে গিয়েছে এনারা আসলে কারা।
” মেহু চল এনগেজমেন্টের সময় হয়ে গিয়েছে।মামা চলো।” সৃষ্টি বলে।
” হ্যাঁ হ্যাঁ চল চল,শুভ কাজে দেরি করতে নেয়।ভাবি,বন্ধু চল।”
মেহেককে স্টেজে নিয়ে আসা হয়।মেহেক কাঁপা কাঁপা হাতে হাতটা বাড়িয়ে দেয় আর নক্ষত্রও চুপচাপ রিংটা পড়িয়ে দেয়।এবার মেহেকের পালা।কিন্তু সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।এদিকে সবাই তাড়া দিতে থাকে।অবশেষে নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে মেহেক যখন নক্ষত্রকে রিংটা পড়াতে যাবে তখন কেউ চিৎকার করে বলে উঠে—
” বন্ধ করো এসব।এই এঙ্গেজমেন্ট হবেনা।”
#কাশফুলের_ভালোবাসা
#পর্বঃ২৫
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
” কেন মেয়েটার জীবন নিয়ে এরকম ছিনিমিনি খেলা খেলেছো?”
” কিসব বলছো তুমি?” ঘাবড়ে গিয়ে বলে মেহেকের মামা।
” আমি যা বলছি ঠিক বলছি।এমনিতেই তুমি মেয়েটার জীবন অনেক কষ্টদায়ক করে তুলেছো।তাহলে কেন আরো কষ্টকর করে তুলছো?”
” সোজাসুজি বলো কি বলবে।”
” তুমি এমনিকেই মেহেকের ফুলের মতো জীবনটাতে অন্ধকার করে দিয়েছে।ওর বাবা-মাকে কেড়ে নিয়েছো।তাহলে কেন আবার নক্ষত্রের সাথে বিয়ে দিয়ে ওর জীবনটা নষ্ট করছো?”
” কিসব বলছো তুমি?”
” ঠিকই বলছি।আমি জানি মেহেকের বাবা-মাকে তুমিই মেরেছো আর ওনাদের সব সম্পত্তি পাওয়ার জন্যই তুমি মেহেকের বিয়ে নক্ষত্রের সাথে ঠিক করেছো।”
মেহের মামীর কথা শুনে মেহেকের মামা চুপ করে থাকে তারপর হুট করেই মেহেকের মামীর গলা চেপে ধরে।এতো শক্ত করে ধরে যে উনি কোন কথাই বলতে পারছেন না।
” প্রয়োজন থেকে অনেক বেশি কিছু জেনে ফেলেছো তুমি।চাইলেই আমি কিন্তু তোমাকেও মেরে ফেলতে পারি তবে আমি সেটা করবোনা।এখন তোমার কাজ চুপচাপ থাকা,যা ইচ্ছে মুখ বুজে তা সহ্য করা।নয়তো এর পরিণাম কিন্তু তোমার ছেলে-মেয়েকে ভুক্ততে হবে।বুঝতে পেরেছো?”
মেহেকের মামী মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ ইশারা করে।মেহেকের মামাও উনার মুখ ছেড়ে দেয়।
” তুমি কেন আপু আর দুলাভাইকে মেরেছো?” ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করে মেহেকের মামী।
” তুমি যখন সত্যিটা জেনেই গিয়েছো তাহলে কারণটাও শুনো।আমি ময়ূরীকে(মেহেকের মা) মেরেছি কারণ ওকে আমার হিংসা হয়,ছোটোবেলা থেকে আমার সবকিছুতে ও ভাগ বসাতো।জামা-কাপড়,খেলনা নামকি বাবা-মার ভালোবাসাও ওর ভাগটা বেশি থাকতো।বাবা-মা আমার থেকে ওকে বেশি ভালোবাসতো,আমার থেকে ওকে বেশি গুরুত্ব দিতো।আমি যদি কিছু জিনিস চাইতাম তারা নানা বাহানা দিতো কিন্তু ময়ূরীর একবার বলায় ওনারা সব এনে দিতো।এমনকি সম্পত্তির মধ্যেও ওর ভাগটা বেশি ছিল।ছোটবেলা থেকে ও আদরে আদরে বড় হয়েছে আর আমি অনাদরে।বিয়ের পরেও ও খুব সুখি ছিল।আমিও সব ভুলে নিজের সংসারে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম কিন্তু যখন জানতে পারলাম মরা যাওয়ার আগে বাবা সম্পত্তিতে ওকে ভাগটা বেশি দিলো তখন আর সহ্য করতে পারিনি।মেরে দিয়েছি ওকে।সেদিন ওর সাথে গাড়িতে ওর হাজবেন্টও ছিল,তাই সেও গেলো।হাহাহা……” কথাগুলো বলো পাগলের মতো হাসতো শুরু করলো মেহেকের মামা।মেহেকের মামার হাসি দেখে মেহেকের মামীর গায়ের লোম খাঁড়া হয়ে যায়।
এতোক্ষণ এসব চলছিল সাউন্ড বক্সে,অডিও ক্লিপ ছিল এটা।ক্লিপটা শুনে সবাই অবাক দৃষ্টিতে মেহেকের মামার দিকে তাকিয়ে আছে আর মেহেকের মামা তাকিয়ে আছে সৌন্দর্যের দিকে কারণ এই ক্লিপটা সেই প্লে করেছে।উনার মনে একটাই প্রশ্ন আসছে যে ” সৌন্দর্য কিভাবে ওনাদের কথা রেকর্ড করলো?”
মেহেকের নানী এসে সজোরে মেহেকের মামাকে একটা থাপ্পড় মারে।
” কোন পাপ যে করেছিলাম যে তোর মতো একটা জানোয়ার আমার পেট থেকে জন্ম হলো।হে আল্লাহ তুমি আমাকে আমার কোন পাপের সাজা দিলে?আমি যদি জানতাম এসব হবে তোকে জন্মের সময় মেরে ফেলতাম।কেমন ভাই তুই যে নিজের বোনকে মেরে ফেললি।তোর কি একটুও বিবেকে বাঁধলোনা।তুই একবারের জন্যও ভাবলিনা যে ওরা মারা যাওয়ার পর এই মেয়ে দুটোর কি হবে।কিভাব তারা বাঁচবে।”
” না মনে হয়নি।কেন হবে?কেন বিবেকে বাঁধবে আমাকে বলো।ও হওয়ার পর থেকে তুমি আর বাবা সবসময় ওকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতে।আমার দিকে তো তোমাদের কোন খেয়ালই ছিলনা।সব আদর-যত্নতো ওকেই করতে,আমি খেলাম কি মরলাম তোমাদের তো কিছুই যায় আসতোনা।এমনকি ময়ূরীও আমার জিনিসে ভাগ বসাতো।তোমরা কি কেউ আমার কথা ভেবেছিলে?ভাবোনি তো,তাই আমিও ভাবিনি।মেরে দিয়েছি ওকে,মেরে দিয়েছি,মেরে দিয়েছি…..।” এরপর তিনি নিজে নিজেই কিসব বিররব করতে থাকে।
সত্যিটা জানার পর সৃষ্টি আর মেহেক প্রচুর ভেঙে পড়ে।নক্ষত্র আর নাইরা বিশ্বাসই করতে পারছেনা তাদের সহজ-সরল বাবার পেছনে এতদিন লুকিয়ে ছিল একটা খুনি।ইতিমধ্যে আশেপাশের সবাই বিভিন্ন কানাঘুষা শুরু করে দিয়েছি।ছেলের কথা শুনে মেহেকের নানী তার ভুল বুঝতে পারে।এখানে আসলে তাদেরও দোষ কম নয়।তাদের উচিত ছিল দুই ছেলে মেয়েকে সমানভাবে দেখার কিন্তু তারা তা করেনি।আজ তাদের ভুলে জন্য একটা সুন্দর পরিবার নষ্ট হয়ে গেলো।
কিছুসময় পর পুলিশ আসে আর মেহেকের মামাকে ধরে নিয়ে যায়।কেউ পুলিশকে আটকাইনি।
মেহেকের নানী পাগলের মতো বিলাপ করে কান্না করছেন,তবে কেউ উনাকে আঁটকাছেন না।স্বচ্ছ সৃষ্টিতে একটা চেয়ারে বসিয়ে দেয়।এই সময় এরকম একটা কথা শুনে মেয়েটা অনেক কষ্ট পেয়েছে।আর মেহেক সেতো পাথরের ন্যায় এখনো স্টজেই দাঁড়িয়ে আছে।সে এখনো বিশ্বাস করতে পারছেনা যে মামাকে সে এতো শ্রদ্ধা করতো,সম্মান করতো,নিজের আপন ভাবতো সেই মামাই তাকে বাবা-মা হারা করে দিলো।মেহেকের নানী এসে মেহেকের কাছে দাঁড়ায়।তিনি মেহেকের হাত ধরে কান্না করতে করতে বললেন—
” আমাকে ক্ষমা করে দে নাতি ক্ষমা করে দেখে।আমি এতোদিন আমার মেয়ের মৃত্যুর জন্য তোকে দায়ী করেছিলাম,তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিলাম।কিন্তু কে জানতো আমার জানোয়ার ছেলেটাই আমার ফুলের মতো মেয়েটাকে খুন করেছে।আমাকে মাপ করে দে নাতি,মাপ করে দে।”
মেহেক নিজেকে শক্ত করে শান্তি গলায় বলে—
” না নানী তুমি ক্ষমা চাইছো কেন?আমি জানি তুমি মাকে খুব ভালোবাসো।তাই মায়ের এই হঠাৎ চলে যাও মেনে নিতে পারিনি।তোমার জায়গায় আমি হলে আমিও এরকমটাই ভাবতাম।তুমি আর নিজেকে দোষি মনে করোনা।”
” আমাকেও ক্ষমা করিস মা।আমি সব জেনে শুনেও এতোদিন চুপ ছিল।আমি যদি নিজের সন্তানদের কথা না ভেবে আগেই মুখ খুলতাম তাহলে হয়তো আজ এসব কিছু হতোনা।” মেহেকের মামী বলে।
” মামী তুমিও নিজের জায়গায় ঠিক ছিলে।আমি তোমাদের কাউকেই দোষ দিচ্ছিনা।”
” কিন্তু সৌ তুমি এসব জানলে কি করে?” মাঝ থেকে সৃষ্টি সৌন্দর্যকে প্রশ্ন করে।এতোক্ষণ সৌন্দর্য শুধু চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলো,একটা কথাও সে বলে।এবার সৌন্দর্য সামনে এসে দাঁড়ায়।
” ভাবী এবার আমি নয় বরং ও আমাকে বলেছো।” স্পর্শের দিকে ইশারা করে বলে সৌন্দর্য।সবাই বড় বড় চোখ করে স্পর্শের দিকে তাকাই।
” স্পর্শই আমাকে এই অডিও ক্লিপটা দিয়েছে।আমিতো শুধু প্লে করেছিম।বাকিসব ওই জানে।”
” আদু,তুমি?তুমি আগে থেকেই জানতে?।”অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে সৃষ্টি।
” আরে সবাই এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?” বিরক্ত নিয়ে বলে স্পর্শ।” আচ্ছা বাবা বলছি বলছি।আমি যখন কাল গেস্ট রুমের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম তখনি শুনতে পাই ওনাদের কথা আর রের্কড করে নিয়
কারণ আমি জানতাম কেউ আমার মুখের কথায় বিশ্বাস করবেনা।”
মেহেক এবার স্টেজ থেকে নেমে ধীর পাশে স্পর্শের সামনে এসে দাঁড়ায়।সে কিছু না বলে চুপচাপ স্পর্শের দিকে তাকিয়ে থাকে।
” কি?” ভ্রু-কুচকে প্রশ্ন করে স্পর্শ।
” থ্যাঙ্ক ইউ।” শান্ত কন্ঠে বলে মেহেক।
” কেন?”
” সবকিছু্ জন্য।আজ আপনি না থাকলে হয়তো সত্যিটা কোনদিনই সামনে আসতোনা।”
” ওকে ওকে,এতো থ্যাঙ্ক ইউ বলতে হবেনা।” এটিটিউট নিয়ে বলে স্পর্শ।তারপর মুচকি হেসে মেহেকের মাথায় হাত রেখে বলে —- ” তোমার মতো আমারো একটা বোন আছে।আজ যদি তোমার জায়গায় রিফু থাকতো তখনো কি আমি চুপ করে থাকতে পারতাম?পারতাম না।তাহলে তোমার বেলায় কেন মুখ বুজে থাকবো?রিফার মতো তুমিও আমার একটা মিষ্টি বোন।”
স্পর্শের কথা শুনে মেহেকের চোখে পানি জমে যায়।
” আরে পাগলি মেয়ে কান্না করছো কেন?”
” জানেন আমার না সবসময় একটা বিষয় নিয়ে খুব আপসোস হতো।কেন আমার একটা বড় ভাই নেই।সবাই যখন তার বড় ভাইয়ের কাছে আবদার করতো তখন আমার খুব কষ্ট হতো।তবে আজ আমিও একটা বড় ভাই পেয়েছি।হবে আমার বড় ভাই?”
” হুম অবশ্যই হবো পুচকি।তোমার মতো একটা মিষ্টি মেয়ের ভাই হতে কে না চাই।” মেহেকের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে স্পর্শ।স্পর্শের কথা শুনে মেহেক আর নিজেকে আঁটকে রাখতে পারেনা,স্পর্শ জরিয়ে ধরে কান্না করে দেয়।এই কান্না যেমন সুখের তেমনি দুঃখেরও।মেহেকের কান্না দেখে বাকি সবাইও ইমোশনাল হয়ে পড়ে।
চলবে…..
(