কিডন্যাপার (পর্ব :৪)
#S_A_Priya
আর এক মুহূর্ত দেরী করা ঠিক হবে না।যা করার এক্ষুণি করতে হবে।জোর গলায় বললাম,
_দেখুন বিয়েটা আমি করছি না।মি.আরহান চৌধুরী একজন কিডন্যাপার। ফার্স্টলি উনি আমাকে কিডন্যাপ করেছেন।সেকেন্ডলি ব্ল্যাকমিল অর্থাৎ চাচাকে মৃত্যু ভয় দেখিয়ে,,,, অটোম্যাটেকলি মুখটা স্টপ হয়ে গেল।ব্যাটা কিডন্যাপারের চোঁখে অগ্নি দৃষ্টি। মনে হল এই প্রথম লোকটাকে ভয় পেলাম।না ভয় পেলে চলবে না।এবার কিডন্যাপারের চোঁখের দিকে তাকিয়ে বললাম,
_ বিয়েটা হচ্ছে না তাহলে?
লোকটা প্রচন্ড রেগে গেছে। তারপরেও শান্ত রিয়্যাকশান দিচ্ছে।বলল,
_কল দিতে জাস্ট দেরী হবে,আপনার চাচাকে শুট করতে সময় নিবে না।
কথাগুলো সবার সামনেই বলল।হাউ স্ট্রেঞ্জ। কেউ কিচ্ছু বলল না।বুঝে গেলাম আর কিছুই করার নেই।যা হবার হোক।
কাজি সাহেবের একটা কথায় চমকে উঠলাম।১ কোটি টাকার দেনমোহর।লোকটার দিকে তাকিয়ে রইলাম।দেনমোহর ১কোটি? হোয়াট ইজ দ্যা রিজন?জানিনা।ভেতরটা আটকে আসছে।সাইন করতে ও একি অবস্থা।শেষমেস কবুল বলতেই হল।এরই মধ্যে লোকটা বলল,
_’ম্যাম আপনার জন্য একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে!!!
মুহূর্তেই চোঁখ দুটি বড় হয়ে গেলো।কি সারপ্রাইজ দেবে লোকটা?ভাবতেই গাঁ শিউরে উঠলো।বলল,
_’ডিভোর্স। ৬ মাস পর আপনার মুক্তি। আর ইউ সেটিস্ফাইড?
কথাগুলো শুনা মাত্রই মনে হলো ভেতরে কেউ হাতুঁড়ে দিয়ে পেঠাচ্ছে।কথা বলার অবস্থায় নেই। মনে হচ্ছে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছি।লোকটা কথাগুলো আবারো সবার সামনেই বলল।আবারো কেউ কিচ্ছু বলল না।কুমিরটা ফটোগ্রাফারকে উদ্দেশ্য করে ফটো তুলার জন্য বলল।লোকটা এগিয়ে এসে ডান পাশে বসলো।বাম হাতে ফিঙ্গার রিং পড়িয়ে দিলো।লোকটার হাতের স্পর্শ ঘৃণা লাগছে।শেষমেশ লোকটার সাথে ক্যামেরা বন্দী হলাম।সার্ভেন্টকে উদ্দেশ্য করে বলল,
_’ম্যামকে রুমে দিয়ে আসো।
কথা না বাড়িয়ে লিভিং রুম থেকে সোজা চলে আসলাম বেডরুমে।দরজাটা লকড করে দিলাম।একগ্লাস পানি খেয়ে বেডে বসলাম।চোঁখ বন্ধ করে কথাগুলো ভাবছি।দুটাই বেস্ট সারপ্রাইজ। এক’ই দিনে বিয়ে আবার ডিভোর্স পেপার ও রেডি করে নিলো।এসি থাকতেও ঘাম ঝড়ছে।চোঁখ খুলে দেখলাম শাড়িটা এখনো পরে আছি।কয়েক সেকেন্ড শাড়িটার দিকে তাকিয়ে রইলাম।থ্রি-পিচের উপর শাড়িটা কোনোরকম পেঁচিয়ে ছিলাম।শান্ত হতে পারছি না।গলাটা ধরে আসছে। এক ঝটকায় শাড়িটা খুলে ফ্লোরে ছুড়ে ফেললাম।রাগের মাত্রা চরমে।এই মুহূর্তে আমি ঠিক নেই।টোটালি আউট অফ সেন্স।নিজেকে ঠিক নেই জেনেও কন্ট্রোল করতে পারছি না।টেবিলের উপর থেকে কাঁচের গ্লাসটা ফ্লোরে ছুড়ে মারলাম।কাঁচের টুকরো গুলি দেখে অটোম্যাটিকলি পা থেকে জুতা খুলে গেলো। ধীরেধীরে কাঁচের টুকরো গুলির দিকে এগুতে লাগলাম।আর মাত্র দু পা হেঁটে গেলে নাগালের আয়ত্তে আসবে।মুহূর্তেই কেউ একজন বলল,
_”স্টপ” স্টপ দিস ননসেন্স।
‘মিস্টার আরহান চৌধুরীর ধমকে আর এক পা ও এগুচ্ছে না।তার মানে কি ধরে নিবো?আমি ব্যাটাকে ভয় পাই?হয়তো!দরজাটা লক করেই এসেছিলাম। ডুকলো কিভাবে?এমন ও না যে,দরজা ভেঙে এসেছে।খেয়াল করলাম সার্ভেন্টদের ইঙ্গিত করে কি যেনো বলছে।মুহূর্তেই দুজন সার্ভেন্ট বেডে বসিয়ে বেশ শক্ত করে দুহাত চেঁপে ধরলো।কিছু বুঝে উঠার আগেই লোকটা হাতে ইঞ্জেকশন পোষ করলো।মিনিট পাঁচেক যেতে না যেতেই মাথাটা টলছে।সম্ভবত ঘুমের ইঞ্জেকশন। যাইহোক এটাই চেয়েছিলাম।ধন্যবাদ জানাতে হয় ব্যাটাকে। কোনোরকম মাথাটা বালিশে এলিয়ে দিলাম।লোকটা দরজার দিকে পা বাড়াতেই বললাম,
_’থ্যাংকস মিস্টার আরহান চৌধুরী।
লোকটা পেছন ফিরে কয়েক সেকেন্ড তাকালো। দ্যান অ্যান্সার না দিয়ে রুম ত্যাগ করলো।
।
।
পরদিন সকাল ১১টায় ঘুম ভাঙলো।রাতের ঘটনাগুলো মনে পড়তেই লাফ দিয়ে শুয়া থেকে উঠে বসলাম।যাইহোক অধিকার ফলাতে আসেনি।স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।৬ মাস পর মুক্তি। অন্তত কুমিরটার হাত থেকে রেহাই পাবো।খেয়াল করলাম পিচ্চি মেয়েটা বারবার দরজায় উকি দিচ্ছে।একদম ফর্সা।লোকটার মেয়ে আছে অথচ ওয়াইফ? সময় হলে জিজ্ঞেস করবো।আপাততঃ থাক।আজ থেকে আমি মি.আরহান চৌধুরীর ওয়াইফ মিসেস আরহান।আর আজ থেকে ৬মাস পর একজন ডিভোর্সি।সব শেষে যেটা বলতে হয় সেটা হলো, আজ থেকে আমি কারও সতিন।আচ্ছা আমার সতিন বেঁচে আছে?জানিনা।মন ভালো করার জন্য শাওয়ার নেয়া দরকার।
।
প্রায় ১ঘন্টা পর বেড়িয়ে আসলাম।পেটে ইঁদুর দৌঁড়াচ্ছে।রুম থেকে বের হয়ে র্যালিং ধরে দাঁড়ালাম।বিশাল অট্টালিকায় সার্ভেন্ট ছাড়া মাত্র দুজন মানুষ? হয়তো!তাছাড়া সতিন কে এখনো পর্যন্ত দেখলাম না।ডাইনিং টেবিলে সার্ভেন্ট খাবার রেডি করছে।চোঁখে চোঁখ পরতেই ইঙ্গিত করলো টেবিলে আসার জন্য।
মা,বাবা চলে যাওয়ার পর থেকে একা খাওয়ার অভ্যাস।তবে অন্যের বাড়িতে একা খেতে অস্বস্তি ফিল হচ্ছে।কুমিরটাকে দেখছি না।সার্ভেন্টকে জিজ্ঞেস করায় বলল,
_’চেম্বারে।
ব্যাটা বাহিরে যখন বেড়িয়েছে নিশ্চিত পালিয়ে না যাওয়ার ব্যাবস্থা করে রেখেছে। বললাম,
_’আচ্ছা এ বাড়িতে গার্ড কেয়ারটেকার ক’জন?হিসেব পাবো?
প্রশ্নটা শুনে সার্ভেন্ট কয়েক সেকেন্ড চোঁখের দিকে তাকিয়ে রইল।কিছু হয়তো আঁচ করতে পেরেছে।বলল,
_’ম্যাম এ বাড়িতে আগে ৬ জন সার্ভেন্ট ছিলো। ৩ জন মহিলা ৩জন পুরুষ। তবে কাল থেকে আরো ৪ জন যোগ হয়েছে।নিজ নিজ দায়িত্বে নিয়োজিত। আর সন্ধ্যা ৬টার পর গেটের দারোয়ানের সাথে ডগি পাহারায় থাকে।ডগি স্যারের পারমিশন ছাড়া অপরিচিত কাউকে এ বাড়িতে এলাও করে না, এমনকি যেতে পর্যন্ত দেয় না।
ডগি নাম শুনে মনে হল ভয় পেলাম।আর সার্ভেন্ট মোট ১০জন। ব্যাটা পালিয়ে যাওয়ার পথ খোলা রাখেনি।
খাওয়া শেষ হতেই বলল,
_’ম্যাম রুমে গিয়ে ম্যাডিসিন নিন।পরে না হয় বাড়িটা ঘুরে দেখবেন।
মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিয়ে উপরের দিকে পা বাড়ালাম। মনে হলো পিচ্ছি মেয়েটার গলার আওয়াজ শুনলাম।কৌতূহল নিয়ে যে রুম থেকে আওয়াজ আসছে সেই রুমের দিকে এগিয়ে গেলাম। সাদা রঙের ম্যাচিং করা পর্দাটা বাতাসে দুলছে।দরজার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আবারো শব্দ শুনলাম “তুমি খুব খারাপ সুপারস্টার, তুমি খুব খারাপ”। মনে হলো মেয়েটার গলা।আচ্ছা লোকটা তো বাড়িতে নেই তাহলে সুপারস্টার কাকে বলল?আর বাবাকে সুপারস্টার বলবে?মনে হয় না।অনুমতি না নিয়ে ভেতরে যাওয়া ঠিক হবে না।অস্বস্তি নিয়ে দরজায় থাবা দিলাম।পর্দাটা সরিয়ে মেয়েটা চোঁখের দিকে তাকিয়ে রইল।নিরবতা ভেঙে বললাম,
_বেবি ডল আসবো?
মাথা নেড়ে সম্মতি দিল।বলল,
_বেবি ডল না মেমি।
মেয়েটার কথা শুনে খানিকটা হাসলাম।রুমের ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখলাম মেয়েটা দূরন্ত চ্যানেলে “বেবি জিনিয়াসেস” দেখছে।আজকালের বাচ্চারা টিভি,আইপড, মোবাইল ফোন নিয়েই ব্যাস্ত থাকে।এটাই স্বাভাবিক।মেয়েটা বেডের একপ্রান্তে টেডিবিয়ারটাকে জড়িয়ে ধরে টিভি দেখছে।স্টাডি টেবিলের চেয়ারটায় বসলাম।টেবিলের উপরে ড্রয়িং খাতা।খাতাটা ভাঁজ করা না।ছবিগুলো জোস।ভাবতে হয় মেয়েটা এই বয়সে পেন্সিল স্কেচ করে।মেয়েটার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে পৃষ্টা উল্টাতে লাগলাম।যত উল্টাচ্ছি ততই অবাক হচ্ছি।মেয়েটা হেব্বি আর্ট করে।চোঁখ যেন আবারো চড়কগাছ।একটা মেয়ে হাতে স্যালাইন লাগানো অবস্থায় বেডে শুয়ে।বুঝতে বাকি রইলো না যে,মেয়েটা কে।মুহূর্তেই মেয়েটার দিকে একনজর তাকালাম।টিভির দিকে মনোযোগ। আবারো পৃষ্টা উল্টাতে লাগলাম।একটা লোক গাড়িতে ড্রাইভ ধরে বসে আছে।জাস্ট ওয়াও। আমার সিক্সথ সেন্স বলছে,লোকটা মি.আরহান চৌধুরী।লোকটার লাইফ স্টাইল তাই প্রমান করে।মনে হচ্ছে লোকটার প্রেমে পড়ে যাচ্ছি।তবে আমার এই ফিলিংস বুঝতে দেয়া যাবে না।
চলবে,,