কেন মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে
লেখনীতে—ইলোরা জাহান ঊর্মি
৭.
তিন অক্ষরের অপেক্ষা শব্দটায় যে কত লক্ষ-কোটি ডেল ব্যথা জমে থাকে, তা কেবল অপেক্ষারত মানুষটাই জানে। এই তো দু-দুটো দিন কেটে গেল। দুটো দিনে রৌদ্রুপের মনের অবস্থা প্রায় বিশৃঙ্খল। এ দুদিনে নৈঋতা স্বেচ্ছায় তার সামনে আসেনি। কখনও হুট করে মুখোমুখি হলে সঙ্গে-সঙ্গে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। পিছু ডাকলে সাড়া নেই, কথা বলতে চাইলে প্রত্যুত্তর নেই। আগের দিনগুলোতে রৌদ্রুপ কখনো নৈঋতা বা কখনো নসিবের সাথে সারা গ্রাম ঘুরে বেড়িয়েছে, গল্প করেছে। কিন্তু এখন সবকিছুই পানসে লাগছে। নৈঋতা নামক অদ্ভুত প্রশান্তিটা মিইয়ে পড়েছে যে। নসিবের সাথেও এখন বাইরে বেরোতে ইচ্ছে করে না রৌদ্রুপের। নৈঋতার নীরবতা অ’স্ত্রে’র মতো আঘা’ত হা’নে তার বুকে। তবু সে অপেক্ষা করে কবে নৈঋতা তার সাথে মনখুলে কথা বলবে, কবে তার ডাকে সাড়া দিবে, কবে হাসিমুখে তার সাথে পা মিলিয়ে হাঁটবে। গতকাল বিদ্যুৎ আসার পর বাজারের এক দোকান থেকে রৌদ্রুপের ফোন চার্জ দিয়ে এনেছে নসিব। এতদিন পর বাবা-মায়ের সাথে কথা বলে অন্তত মনটা একটু শান্ত হয়েছে। তার পরিবার খুবই দুশ্চিন্তায় ছিল। মা কেঁদেকে’টে একাকার করেছেন। মূল কারণ হচ্ছে রৌদ্রুপ আর সামসুদ্দীন, দুজনের ফোনই বন্ধ থাকায় সবার মনে খারাপ ভাবনা জট পাকিয়েছিল। পাগলপ্রায় মা ছেলের সাথে কথা বলে তবেই শান্ত হয়েছেন। রৌদ্রুপের পরিবার জানিয়েছে রিয়াদের আসল হ’ত্যাকারীকে খুঁজে পাওয়া গেছে। খুব শীঘ্রই হয়তো মা’মলার নিষ্পত্তি হবে। নিষ্পত্তি হলেই তারা রৌদ্রুপকে জানাবেন। তবেই রৌদ্রুপ বাড়ি ফিরতে পারবে। খুব শীঘ্রই তাকে বাড়ি ফিরতে হবে কথাটা মাথায় আসতেই রৌদ্রুপের বুকটা মৃদু কেঁপে ওঠে। তার হুট করে উড়ে এসে বুকের ভেতর জুড়ে বসা অনুভূতি কি বৃথা যাবে? নৈঋতা? মেয়েটাকে তো সে সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছে। ঢাকায় ফিরে যাওয়ার পর মেয়েটার সাথে যোগাযোগ করার উপায় নেই। আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যেই হয়তো তাকে ঢাকায় ফিরে যেতে হবে। যাওয়ার আগেও কি মেয়েটা তার সাথে কথা বলবে না? তবে এখন কী করবে সে? আকাশে আজ ভরপুর চাঁদ উঠেছে। কিন্তু বেচারা চাঁদকে বারংবার মেঘেদের কাছে হার মানতে হচ্ছে। মেঘেদের দল তার সামনে দেয়াল তৈরি করছে। চাঁদ সেই দেয়ালের ওপর দিয়ে মাঝে মাঝে উঁকিঝুঁকি মা’রছে। কিন্তু মেঘেদের দল বরাবরের মতোই পুনরায় তাকে ঘিরে ফেলছে। যেন অতি সন্তর্পণে তাদের মধ্যে নীরব যুদ্ধ চলছে। মেঘেদের দল যেন আজ পণ করেছে চাঁদকে আলো ছড়াতে না দেওয়ার। চাঁদের সামনে মেঘেদের দেয়ালের দিকে তাকিয়ে রৌদ্রুপ ভাবে, নৈঝতা আর তার মাঝেও চাঁদ আর মেঘেদের মতো এমন একটা অদৃশ্য দেয়াল তৈরি হয়েছে। মেঘেরা যেভাবে একসময় তার দেয়াল ভেঙে সরে পড়বে, সেভাবে কি তার আর নৈঋতার মধ্যকার দেয়ালও ভাঙবে? রৌদ্রুপ দুচোখ বুজে লম্বা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। নিশুতি রাতের নিস্তব্ধতা ছাপিয়ে রৌদ্রুপের দীর্ঘশ্বাসের শব্দ নিজের কানেই প্রতিধ্বনিত হলো। একাকী পরিবেশে তার মনে হলো বক্ষ পিঞ্জরে নিদারুণ র’ক্তক্ষ’রণ হচ্ছে। মস্তিষ্কের নিউরনে টনটন করে ব্যথা জাগছে। ভেতরের সত্ত্বা ছটফট করছে অনিশ্চয়তার য’ন্ত্র’ণায়। কিন্তু বাইরে গম্ভীর মুখে, শান্তশিষ্ট ভঙ্গিতে রৌদ্রুপ নামক এক প্রেমিক নীরবে, নিভৃতে পু’ড়ে চলেছে। দুটো রাত ধরে নৈঝতা নামক সর্বগ্রা’সীনি কিশোরী তার ঘুম নামক প্রশান্তিটা কেড়ে নিয়েছে। দুদিনই অর্ধেকটা রাত সে উঠানের কোণের মাচার ওপর বসে, বিপরীত দিকের ঘরটার দরজার পানে গভীর উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে। যদি কোনোভাবে বহু আকাঙ্ক্ষিত মুখটা দেখা যায়। কিন্তু দুদিনই সে অপেক্ষা বিফলে গিয়েছে। পা’ষাণ কিশোরীটি না দেখা দিয়েছে, না অপেক্ষার অবসান ঘটিয়েছে। আজও তার বিপরীত হলো না। রৌদ্রুপ ক্ষণে-ক্ষণে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। ইশ্! এই দীর্ঘশ্বাসের শব্দগুলো যদি নৈঋতা নামক নীরব ঘা’তকের কানে পৌঁছাত, তবে হয়তো সে বুঝত এই একেকটা দীর্ঘশ্বাস কতশত ব্যথায় জর্জ’রিত। মাচায় বসে ঝিমানো রৌদ্রুপ হঠাৎ অনুভব করল, পাশে কারো উপস্থিতি টের পাওয়া যাচ্ছে। রাতের শেষ প্রহরে কারো এখানে আসার কথা না। গ্রামের অনেক মানুষ ভূ’তপ্রে’তে বিশ্বাসী। রৌদ্রুপ কোনোকালেই এসবে বিশ্বাস করে না। দুচোখে অলসতারা এসে ভর করেছে। খুলতেও ইচ্ছে করছে না। পরক্ষণেই নাকে একটা মিষ্টি ঘ্রাণ এসে তীব্রভাবে লাগল। এবারে রৌদ্রুপের মন বেশ কৌতূহলী হয়ে উঠল। ভূ’তপ্রে’ত হলেও এবার চোখ মেলে দেখা উচিত। চোখ খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সঙ্গে-সঙ্গেই পাশ থেকে উদাসীনতা মাখা মিষ্টি কন্ঠস্বর ভেসে এল,
“প্রেম-ভালোবাসা কি ভ’য়ঙ্ক’র কোনো ব্যা’ধি?”
রৌদ্রুপ ভীষণভাবে চমকে উঠল। ঝট করে চোখ খুলে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই অতি আকাঙ্ক্ষিত মানবীর মলিন, শান্ত মুখটা দৃশ্যমান হলো। সে কি চোখ দুটোতে কোনো লুকায়িত ব্যথা জমিয়ে রেখেছে? রৌদ্রুপের তো তাই মনে হচ্ছে। কন্ঠে বিস্ময় নিয়ে রৌদ্রুপ অস্ফুট স্বরে ডাকল,
“নৈঋ!”
সহসা নৈঋতা কোনো কথা বলতে পারল না। কন্ঠনালিতে হঠাৎ খরা নামল। রৌদ্রুপের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকেই তার চোখ দুটো ছলছল করে উঠল। রৌদ্রুপ থমকাল। পরমুহূর্তে রৌদ্রুপ কিছু বলার আগেই নৈঋতা হঠাৎ চাপা স্বরে ফুঁপিয়ে উঠল। দুহাতে মুখ চেপে ধরে সে তার কান্নার আওয়াজ আটকানোর চেষ্টা চালাল। রৌদ্রুপ হতবুদ্ধি হয়ে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। কিছু সময়ের জন্য যেন তার উপস্থিত বুদ্ধি লোপ পেল। পরমুহূর্তেই ব্যস্ত হয়ে শুধাল,
“নৈঋ? কাঁদছো কেন? কান্না থামাও প্লিজ। নৈঋ?”
নৈঋতা নিজেকে ধাতস্থ করল। কিছু সময় নিয়ে কান্না থামাল। তারপর মাথানত করে নাক টেনে ধরা গলায় বলল,
“নিজের লগে আমার ঘুমডাও কাইড়া নিলেন আপনে। এমন জ্বা’লাইতাছেন ক্যান আমারে?”
রৌদ্রুপ হতবিহ্বল হয়ে ভ্রু জোড়া কুঞ্চিত করে ফেলল।
“আমি কী করলাম?”
“অনেক বড়ো অপরাধ করছেন।”
“যেমন?”
“আমি যে আপনের কারণে দুইডা রাইত ধইরা বুকের ব্যথায় ঘুমাইতে পারি না। চোখ জ্বা’লাপো’ড়া করে। শত চেষ্টা কইরাও দূরে সইরা থাকতে পারি না। এইগুলান কি অপরাধ না?”
রৌদ্রুপের বুঝি আজ শুধু অবাক হওয়ার পালা। কিছু সময় সে এক ধ্যানে নৈঋতার মুখের অভিব্যক্তি লক্ষ্য করে কিছু একটা বুঝার চেষ্টা চালাল, আর সফলও হলো। ওই মলিন মুখের বি’ষাদমাখা কথাগুলোর অর্থ উদ্ধার করতে তার বেশি সময় লাগল না। ঠোঁটের কোণে হঠাৎ দারুণ এক প্রাপ্তির হাসির রেখা ফুটে উঠল। পুনরায় এক গভীর দীর্ঘশ্বাসের সাথে গত দুদিনের সমস্ত দীর্ঘশ্বাসগুলোর ইতি টানল। একটু স্বস্তিতে পা দুটো দোলাতে-দোলাতে আকাশের পানে চেয়ে বলল,
“ভালোবাসা সত্যিই ভ’য়ঙ্ক’র ব্যা’ধি। একবার ধরা পরলে আর রক্ষা নেই। এই যে আমাকে দুটো দিন ধরে অনলে পো’ড়া’চ্ছে, দিন-রাত সব এলোমেলো করে দিয়েছে। একই অনলে তুমিও পু’ড়েছ, এটা আগে বললে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যেত নৈঋ? তুমি জানো চারদিকের চিন্তায় আমার মাথা ধরে যাচ্ছিল?”
“আপনের লগে আমারে মানায় না। কই আপনে, আর কই আমি! আমি জীবনেও আপনের যোগ্য হইতে পারমু না। এইডা ভাইবাই তো দূরে থাকতে চাইছি। পারলাম কই? বেহায়া মন তো টাইনা নিয়া আইল আবার আপনের কাছে। আমার মনডারে আপনে কেমনে তাবিজ করছেন কন তো?” নত হয়েই চোখের পানি মুছতে-মুছতে বলল নৈঋতা।
রৌদ্রুপ মৃদু হেসে বলল,
“বুঝলে নৈঋ? ভালোবাসা শব্দটাই হচ্ছে জাদুর মতো। হুট করে এসে তোমার মস্তিষ্কের নিউরনে-নিউরনে জেঁকে বসবে, অথচ তুমি টেরও পাবে না। আস্তে-আস্তে ভেতরের অনুভূতিগুলো প্রবল থেকে প্রবলতর হয়ে ক্রমশ বেড়েই চলবে। সত্যিকারের ভালোবাসায় তা এড়িয়ে যাবার সাধ্য নেই, একদমই নেই।”
এবার নৈঋতা মুখ তুলে তাকাল। কন্ঠে আকূলতা নিয়ে বলল,
“আমি তো এমনডা চাইনাই। যেইহানে অপূর্ণতা নিশ্চিত, ওইহানে ভালোবাসা বাড়াইয়া কী লাভ?”
রৌদ্রুপ নৈঋতার দিকে ফিরে তাকাল। নৈঋতার ছলছল দৃষ্টিতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বলল,
“তুমি বোধ হয় ভুলে গেছ নৈঋ। আমি বলেছিলাম তোমার হাতটা আমার হাতের মুঠোয় এলে, মৃ’ত্যুর আগ পর্যন্ত আমি তা মুঠোবন্দী করে রাখব। আমি আমার প্রতিশ্রুতি রাখতে জানি। একবার সুযোগ দিয়েই দেখ না।”
প্রায় সঙ্গে-সঙ্গেই নৈঋতা তার হাত দুটো রৌদ্রুপের সামনে তুলে নিষ্পাপ বাচ্চাদের মতো মুখ করে বলল,
“ধরবেন? কোনোদিন কোনো পরিস্থিতিতেই কিন্তু ছাড়তে পারবেন না। ভাইব্বা ধরবেন।”
নৈঋতার শিশুসুলভ কথায় রৌদ্রুপ ক্ষীণ আওয়াজে হেসে ফেলল। চটজলদি নৈঋতার হাত দুটো নিজের দুই হাতের মুঠোয় আবদ্ধ করে বলল,
“মেঘবতীর পছন্দের ওই মেঘেদের সাক্ষী রেখে কথা দিলাম, ওই মেঘেরা বৃষ্টি ঝরানো ছেড়ে দিলেও, এই বর্ষণরাজ তার মেঘবতীকে ছাড়বে না।”
নৈঋতার চোখের কার্নিশ বেয়ে দু ফোঁটা আনন্দ অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। রৌদ্রুপ ঝুঁকে পড়ে নিজের হাতের মুঠোয় বন্দী নৈঋতার হাত দুটোতে কপাল ঠেকাল। সঙ্গে-সঙ্গে নৈঋতার চিবুকে জমায়িত অশ্রু কণা টুপ করে গড়িয়ে পড়ল রৌদ্রুপের মাথায়। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে সে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে ব্যথিত কন্ঠে বলল,
“আমার এই পো’ড়া কপালে এত সুখ সইব?”
রৌদ্রুপ মাথা তুলে তাকাল। হাতের বন্ধনী শক্ত করে দৃঢ় গলায় বলল,
“আজ এই মুহূর্ত থেকে তোমার তুমিটা শুধুই আমার। তুমি আমার মানে তোমার সুখও আমার। আর আমি আমার সুখ এত সহজে ছেড়ে দিব ভাবছো? পৃথিবীর কোনো মানুষ কোনোকিছুর মূল্যেই নিজের সুখ ছাড়তে চায় না, আমিও তো মানুষ।”
নৈঋতা মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রৌদ্রুপের কথা শোনে। লোকটা এত গুছিয়ে কথা বলে কীভাবে? এই মনোমুগ্ধকর কথাগুলো শুনে-শুনেই তো সে নিজের অজান্তে এই লোকের কাছে মন হারিয়ে বসে আছে। বড়ো করে দম নিয়ে নৈঋতা মিনমিনে গলায় বলল,
“আপনে তো শহরেই ফিররা যাইবেন।”
“তো? ফিরলে তোমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে, তাই তো?”
নৈঋতা ভী’ত মুখে ওপর-নিচে মাথা ঝাঁকাল। রৌদ্রুপ নৈঋতার এক হাত মুঠো থেকে মুক্ত করে আরেক হাত নিজের কোলে টেনে নিল। আঙুলগুলো নাড়াচাড়া করতে-করতে বলল,
“আমি নিজেও এটা নিয়ে ভেবেছি নৈঋ। তখন তো আমি ভেবেছিলাম তুমি বুঝি আর আমার সামনেই আসবে না। হয়তো চলে যাবার আগেও তোমার সাথে একবার কথা বলতে পারব না। এসব ভেবে ধরে নিয়েছিলাম তোমার সাথে আমার যোগাযোগ হওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই। ঢাকায় ফিরেও এ হঠাৎ পাওয়া অনুভূতির অনলে পু’ড়তে হবে। এখন যখন আমার ভাবনাগুলো মিথ্যে হয়ে গেছে, তখন তো অন্য ব্যবস্থা করতেই হবে। আচ্ছা শোনো। আমি তোমাকে একটা ফোন কিনে দিয়ে যাব, ফোনেই আমাদের যোগাযোগ হবে সবসময়। আমি নিজেই প্রতিদিন সময় করে কল করব তোমাকে। তোমার ইচ্ছে হলে তুমিও করবে।”
“আব্বায় যদি রাগারাগী করে?”
“তাকে বলার দরকার নেই।”
“আমার ডর লাগে।”
“কিচ্ছু হবে না, সাহস রাখো। আমি আছি তো।”
“আপনের লগে আর সামনা-সামনি দেখা হইব না আমার?” অসহায় মুখ করে শুধাল নৈঋতা।
রৌদ্রুপ ভরসা দিয়ে বলল,
“অবশ্যই হবে। আমারও তো তোমাকে সামনে থেকে দেখতে ইচ্ছে হবে। সময় বুঝে আমি আবার আসব এখানে।”
“সত্যিই আইবেন তো?”
“আসব, কথা দিলাম।”
“কিন্তু আপনের আব্বা-আম্মায় মানবো?”
“ওসব নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। সময়মতো আমি ঠিক মানিয়ে নিব।”
নৈঋতা মাথা দোলাল। রৌদ্রুপ বড়ো করে দম নিয়ে ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসির রেখা ঝুলিয়ে বলল,
“আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ে এভাবে আমার মন গলাতে সক্ষম হয়ে ওঠেনি। অথচ এটা কী হলো? আমার সাতাশ বছরের রেকর্ড কি না এটুকু একটা পুঁচকি মেয়ে ভে’ঙে গুঁড়িয়ে দিলো!”
নৈঋতা ভ্রু জোড়া কুঞ্চিত করে বলল,
“আমি পুঁচকি?”
“হুঁ।”
“আমারে কোন দিক থিকা পুঁচকি মনে হয়? কত্ত বড়ো হইয়া গেছি, আর উনি কয় আমি পিচ্চি। আপনের চোখে ছানি পড়ছে।”
“তুমি পুঁচকি না তো কী? আঠারো বছরের আগ পর্যন্ত সবাই শিশু, জানো না? সুতরাং তুমিও শিশু।”
“আমি মোটেও শিশু না। মাত্র দেড় মাস বাকি আঠারো বছর পূর্ণ হওয়ার,” নিজের কথায় অনড় থেকে বলল নৈঋতা।
“ও, দেড় মাসের আগেই তুমি বুড়ি হয়ে গেছ?”
“না।”
“তাহলে?”
“জানি না।”
নৈঋতার গাল ফুলানো দেখে রৌদ্রুপ শব্দ তুলে হেসে উঠল। নৈঋতা কপাল চাপড়ে ব্যস্ত হয়ে বলল,
“আরে! রাইত-বিরাইতে এমন জোরে হাসেন ক্যান? থামেন, থামেন।”
“কেন? রা’ক্ষ’সের মতো লাগে?”
“না, কেউ টের পাইয়া গেলে?”
“সেটা তো বেশ ভালো হবে। কেউ টের পেলে আমাদের দুজনকে সন্দেহ করে বসবে। আমাদের কোনো কথা বিশ্বাস করবে না। সেই সুযোগে আমি তোমাকে বিয়ে করে ফেলব।”
নৈঋতা নিজেও এবার নিঃশব্দে হেসে ফেলল। রৌদ্রুপ মুখ এগিয়ে চাপা স্বরে বলল,
“তোমার এই দুর্লভ হাসিটা একটু বেশিই সুন্দর মেঘবতী।”
নৈঋতা লজ্জায় নত হয়ে লাজুক হাসল। রৌদ্রুপ বলল,
“এই লাজুক মুখটা দেখার জন্য হলেও আমি স্বেচ্ছায় তোমাকে লজ্জায় ফেলব। তুমি লজ্জায় লাল হবে, আমি মুগ্ধ হয়ে দেখব।”
নৈঋতা এবারেও হাসল। মিনিট খানেক পর প্রশ্ন করল,
“ঘুমাইবেন না?”
“হুম, দুটো রাত ঘুমাতে দাওনি। এবার শান্তির ঘুম দিবো, আর স্বপ্নে মেঘবতীকে দেখব। তুমিও তো ঘুমাওনি বললে। ঘুম আসছে না এখন?”
“আপনে গিয়া ঘুমান। আমিও চইলা যাইতাছি।”
“আচ্ছা যাও।”
রৌদ্রুপ মাচা থেকে নেমে দাঁড়াতেই নৈঋতাও তাই করল। তার হাত এখনও রৌদ্রুপের মুঠোয় বন্দী। কয়েক পা এগিয়ে রৌদ্রুপ নৈঋতার হাত ছেড়ে দিলো। সস্নেহে নৈঋতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মৃদু হেসে বলল,
“যাও। শুভ রাত্রি।”
নৈঋতা মাথা দুলিয়ে হাসিমুখে নিজের ঘরে চলে গেল। প্রেয়সীর চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে রৌদ্রুপ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। আজ আর তাকে পিছু ডাকা হলো না। কেন জানি সব কথা গুলিয়ে গেল। তৃপ্তির হাসি হেসে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়িয়ে সে বিড়বিড় করে আওড়াল,
“আমি তোমায় পেয়ে গেছি মেঘবতী।”
চলবে, ইন শা আল্লাহ্।
(একে তো এক বছর আগের লেখা, তার ওপর সময়ের স্বল্পতার কারণে খুব ভালোভাবে এডিটও করতে পারছি না। পর্বগুলোও একটু ছোটো হচ্ছে। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ। ভালোবাসা প্রিয় পাঠকমহল।🖤)