#খড়কুটোর_বাসা_২
#পর্বঃ২২
#Jhorna_Islam
ইরহান তার বাবার সাথে ফোনে কথা বলার সময় যুথি পাশেই ছিলো।ইরহানের বাবাকে কথা শুনে যুথি বাকশক্তি যেনো হারিয়ে ফেলে।
বাবা এমন হতে পারে? বার বার মনে হচ্ছিল নিজের কানে ভুল শুনেছে যুথি। সামান্য কয়টা টাকার জন্য কি করে বলতে পারে,সব সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করবে। একটু ও মুখে আটকালো না। নিজের র’ক্ত কে কেউ এমন কথা বলতে পারে? অবশ্য দুনিয়ায় এখন সবই সম্ভব। আর ইরহানের পরিবারে এসব কিছু আরো আগে থেকেই সম্ভব। নিজের স্বার্থের জন্য এরা নিজের লোক কে ঠকাতে ও বেঈমানী করতে দ্বিতীয় বার ভাবে না।
ইরহান ফোন টা কান থেকে নামিয়ে বিছানায় ধপ করে বসে পরে। ভিতর টা তার বেদনায় ছারখার। সব কিছু থমকে আছে যেনো। নিজেকে একটা নিকৃষ্ট প্রানী মনে হচ্ছে তার। ঐ লোক টা কে নিজের বাবা ভাবতেও প্রচন্ড রকম ঘৃ’ণা কাজ করছে। ঐ লোকটার র’ক্ত নিজের শরীরে ভাবতেই গা গোলাচ্ছে ইরহানের। ইচ্ছে করছে সব শেষ করে দিতে। নিজের চুল নিজে খা’মচে ধরে।
যুথি এতোক্ষন চুপচাপ সবই দেখে গেছে। ইরহান হাসফাস করছে ভেবে এগিয়ে এসে ইরহানের কাধে হাত রাখে।
ইরহানের কোনো নড়চড় নেই সে একই ভাবে বসে আছে। এমন কি যুথির দিকে তাকাচ্ছে ও না।
যুথি আমতা আমতা করে বলে,,, বাবা হয়তো আপনি টাকা দিবেন না বলায় রেগে গেছে। তাই ঐসব কথা বলেছে। আপনি চিন্তা করবেন না প্লিজ। মাথা ঠান্ডা হলে আপনাকে ঠিক ফোন দিবে।
কিছু রাগের মাথায় বলেনি যুথি।ঐটাই আমার বাবার আসল রূপ। আমার বাবা আর বাবা নেই পরতো সেই মা চলে যাওয়ার আগেই হয়েছে। এখন নে’শা করে নিজেকে একটা নিকৃষ্ট প্রানী হিসেবে গড়ে তুলেছে। উনি আমার বাবা এই পরিচয় দিতেও আমার ঘৃ’ণা হচ্ছে।
এ-এসব কি বলছেন? ঐ পরিবারে ইশান আর উনাকে তো ভালোই মনে হয়েছে।
ভালো না উনি। উনি আসলে একটা খু/নী। আমার মা কে মে’রে ফেলেছে। আমার শৈশব শেষ করে দিয়েছে। আমাকে একা করে দিয়েছে। উনি একদম ভালো না বলেই ইরহান চেচিয়ে উঠে।
যুথি অবাক হয়ে ইরহানের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়।
ইরহান যুথির হাত দুটো মুঠোয় নিয়ে নেয়। তারপর যুথির চোখে চোখ রেখে বলে,,তুমি জানতে চাও ঐ লোকটা কি করেছে?
যুথি হ্যা সূচক মাথা নাড়ায়।
তাহলে শুনো ঐ লোক টা আমার মা কে মে’রে ফেলেছে।
কি- কিন্তু মা তো,,,?
আমার মা কে লোকটা এমন কষ্ট দিয়েছে যেটা সহ্য করতে না পেরে আমাকে একা ফেলে হারিয়ে গেছে। একে একে সব ঘটনা ইরহান খুলে বলে। চিঠির কথা সব বলে।দাদি চিঠিতে তাকে সব জানিয়ে গেছে।
যুথি সব কথা শুনে মাথায় যেন বা/জ পরে। নিজের চোখ দিয়ে আপনা আপনি পানি পরছে। কোনো মেয়েই তার নিজের স্বামীর ভাগ অন্য কাউকে দিতে পারে না। সে যতোই অসুস্থ হোক বা নিজের স্বামী কে অপছন্দ করুক না কেন। কথায় আছে না,,,
“মেয়েরা স্বেচ্ছায় নিজের স্বামী কে বাঘের মুখে তুলে দিবে, তাও অন্য মেয়ের কাছে যেতে দিবে না। ”
যুথি যতটুকু জানে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হলেও ইরহানের মায়ের সাথে বাবার খুব ভালোবাসা ছিলো।সেই ভালোবাসার মানুষ টা এমন ভাবে ঠ’কালো।তার উপর কিনা নিজের বোন ও। যাকে বিশ্বাস করে বাড়িতে আনলো সে কিনা এমন করে সব শেষ করে দিলো। কি ভাবে সহ্য করেছে উনি নিজের চোখের সামনে,নিজের স্বামীকে আর বোনকে?
উহুু সহ্য তো করেনি।সহ্য করতে না পেরেই তো চলে গেলো। টপটপ করে পানি পরছে চোখ দিয়ে যুথির। ঝাপসা দৃষ্টিতে ইরহানের দিকে তাকিয়ে দেখে, ইরহান দুই হাতে মুখ ঢেকে রেখেছে। শরীর টা কেঁপে কেঁপে উঠছে।লোকটা কাঁদছে।
যুথি ইরহান কে ঝাপটে ধরে নিজের বুকের মাঝে। অনবরত পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। স্বান্তনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না তার।
কিছু সময় নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে। যুথিকে ছেড়ে ছুটে ওয়াশরুমের ভিতর ঢুকে যায় ইরহান। যুথি ইরহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে এবার শব্দ করে কেঁদে উঠে।যুথির খুব কষ্ট হচ্ছে।
বারবার মনে হচ্ছে এমন পরিস্থিতি তে পরলে সে কি করতো? সেও শ্বাশুড়ির মতোই হয়তো দুনিয়া ছাড়তো।কারণ আর যাই হোক ইরহান কে অন্য মেয়ের সাথে কিছুতেই সে সহ্য করতে পারবে না। এক বিন্দু ও সহ্য করতে পারবে না।
ইরহান ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে যুথি বিছানায় বসে এখনো কাঁদছে।
এইই তুমি কাঁদছো কেনো? কিছু হয়নি সব ঠিক আছে। দেখো আমিও ঠিক আছি।
‘ আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। ‘
ইরহান যুথির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। যাও গিয়ে হাত, মুখ ধুয়ে আসো আমরা ঘুরতে যাবো।
যুথি উঠে এসে ইরহান কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,, আমিও আপনাকে কারো সাথে দেখতে পারবো না। মায়ের মতো শেষ হয়ে যাবো।
হুঁশশ,, এসব কথা একদম বলবে না। আমি ঐ লোকটার মতো না। আমার জীবনে একমাত্র তুমি ই। আর কেউ নেই। আর না কাউকে চাই।
——————————
দিনা কে ইশান লুকিয়ে লুকিয়ে চোখের পলক দেখে আসে।কাছে যাওয়ার বা একটু কথা বলার সুযোগ নেই। এতটুকু তে কি মন ভরে? একদম না। কিছু একটা করতে হবে। দিনা কে ছাড়া তার একদম চলবে না।
দুই-তিন দিন ভেবে সিদ্ধান্ত নেয় কিছু একটা করবে। ব্যবসা করবে।কারণ এখনকার যোগে ভালো চাকরি পাওয়া খুবই কঠিন কাজ।তার উপরে না আছে ইশানের তেমন পড়াশোনা।
বাড়িতে গিয়ে মা কে জানায় সে ব্যবসা করতে চায়। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে তাকে।নিজের আলাদা পরিচয় গড়তে হবে তা না হলে দিনা কে পাওয়া তার জন্য অসম্ভব ব্যাপার এটা সে বোঝে গেছে।
তাছলিমা বানু কে জানালে তাছলিমা বানু জানায় তার কাছে টাকা নেই।তার বাবা কে যেনো বলে। ইশান বাবা কে বলে,,উনি শুনে যেনো ঘা’বড়ে যায় টাকা চাওয়ায়। আমতা আমতা করে জানায় উনার কাছে ও টাকা নেই। ইশান বি’পাকে পরে ।
আবার মায়ের কাছে এসে জানায় বাবা দিচ্ছে না। তার কাছে কোনো টাকা নেই।তখন লিমা,ইমন ওরাও পাশেই ছিলো খাবার খাচ্ছিলো।
ইশান অনেক ভেবে বলে,,উত্তরের দিকে যে একটা ক্ষেত আছে ঐটার থেকে ইশানের ভাগ টুকু বেঁচে যেন টাকা দেয়।নয়তো ব’ন্ধ’ক রেখে। এটা শুনে ইমন তে’তে উঠে।
কিসের জায়গা বিক্রি বা ব’ন্ধ’কের কথা বলছিস? তোর কোনো জায়গা নেই। শুধু তোর কেন? কারোই কোনো জায়গা নেই। সব জায়গা আমার।তোদের যে দয়া করে থাকতে দিয়েছি এই অনেক। আবার আসছে জায়গা বিক্রি করতে।তাচ্ছিল্য করে বলে ইমন।
ইমনের কথা শুনে ইশান হেঁসে উঠে। দিনের বেলা কি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছো ভাই? তুমি কিন্তু বাবার ছেলে একা না। আমরা আরো দুই ভাই আছি।
ইমন তখন সব বলে,,এখন সব কিছু তার। সব বাবা তাকে দিয়ে দিয়েছে।
ইশান তখন তার বাবা,কে ডেকে আনে।উনিও আমতা আমতা করে বলে,,ইমন যা বলছে সব সত্যি।
তাছলিমা বানু আর ইশান যেনো সব শুনে থমকে গেছে। ইশান মেঝেতে বসে পরে।
ইশান কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। বিরবির করে বলে শেষ আমার সব শেষ। নিঃস্ব হয়ে গেলাম। একূল ও গেলো ও কূল ও গেলো। সব শেষ হয়ে গেলো। আমার সব শেষ।
ইশান বিলাপ করতে করতে নিজের রুমে আসে। ইরহান কে ফোন লাগায়। ইরহান কল রিসিভ করতেই কেঁদে উঠে ইশান।
ইশানের কান্নায় ঘা’বড়ে যায় ইরহান।জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে। ঠিক আছিস তুই? কেন কাঁদছিস?
— ভাই ওভাই। আমার সব কিছু শেষ করে দিলো।আমার ভালোবাসা টা কে পাওয়ার শেষ আশা টুকুও ওরা কেঁড়ে নিলো।
#চলবে,,,,,,,