#খোলা_জানালা
#২য়_পর্ব
#অনন্য_শফিক
‘
‘
‘
রাতে কাঁদতে কাঁদতে হঠাৎ করে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম।আর হঠাৎ করে বিছানার পাশে জানলায় ঠকঠক শব্দ শুনে ঘুম থেকে উঠলাম প্রচন্ড ভয় নিয়ে। তারপর ভাবলাম কী করবো আমি!ভয় লাগছিলো প্রচন্ড! যদি জানলার কাছে নতুন ফাঁদ পেতে রাখে আমার শাশুড়ি!
তাই জানলা না খুলে জড়োসড়ো হয়ে বসে রইলাম খাটের উপর। এখনও নাক আর কান দুটো প্রচন্ড ব্যথা করছে।মনে হচ্ছে সেই ব্যাথায় আমি পাগল হয়ে যাবো। ঠিক এই সময় বাবা মার কথাও খুব মনে পড়লো। আমার বাবাকে আমি যতটুকু চিনি তিনি খুব সৎ এবং সাহসী পুরুষ।জীবনে কখনো তাকে কোনকিছু নিয়ে সামান্য অবহেলা করতে দেখিনি। দেখিনি কারোর দু পয়সা মেরে খেতে। কারোর উপর মিথ্যে চাপিয়ে দিতে।বাবা কোনো সিদ্ধান্ত নিলে একশোবার ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেন। এবং এই বিয়ের সিদ্ধান্তটাও তিনি খুব ভেবেচিন্তেই নিয়েছিলেন।বাবা বলেছিলেন তার ছাত্রীর ছেলের কাছে মেয়ে বিয়ে দিলে এতো বাছ বিচারের কী প্রয়োজন! তাছাড়া আমার শাশুড়ি আমার মায়েরও বান্ধবী। স্কুল জীবনে মার সাথে খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল আমার শাশুড়ির। তবে এটা সত্য আমার মা বাবার সাথে পালিয়ে গিয়েছিলেন। পালিয়ে গিয়েছিলেন এই জন্য যে বাবা স্কুল মাস্টার হলেও তার ধন সম্পদ কিংবা বংশ-গৌরব অতটা উন্নত ছিল না। কিন্তু আমার নানা তৎকালীন সময়ের এলাকার প্রভাবশালী ব্যাক্তিদের একজন ছিলেন।অগাধ ধনসম্পদের মালিকও ছিলেন তিনি।নানা বাবা মার প্রেমের সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি বলেই বাবা মা পালিয়েছিলেন।বিয়ে করেছিলেন বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে। তারপর ফিরে এলে নানা মেনেও নিয়েছিলেন সেই বিয়ে। আমি এতো কিছু জানলে ওই বিষয়টা কেন জানবো না যে আব্বার সাথে আমার শাশুড়ির বিয়ে ঠিক ছিল!
‘
জানলায় এখনও শব্দ হচ্ছে। বিরতিহীন।ঠক ঠক ঠক। ভাবলাম জানলাটা একবার খুলেই দেই!
আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এটা নাঈম ছাড়া আর কেউ না। নাঈমের প্রতি আমার প্রচন্ড রাগ আছে। এই রাগটা অন্তত ঝেড়ে নেয়া যাবে এখন।আর কোনভাবে এখান থেকে বাড়ি পর্যন্ত যেতে পারলে এদের প্রত্যেকটার নাকে বড়শি দিয়ে ঘুরিয়ে ছাড়বো!
মনে প্রচন্ড সাহস নিয়ে জানলা খুলতেই দেখি সারা শরীরে চাদর আবৃত কেউ দাঁড়িয়ে আছে
দেখে আমার হৃৎপিণ্ড কেমন কেঁপে উঠলো। এই গরমের সময় আবার চাদর পরে আসবে কে!এ এক নতুন ষড়যন্ত্র না তো?
আমি তড়িঘড়ি করে জানলাটা লাগিয়ে দিতে চাইতেই চাদরের ভেতর থেকে একটা হাত বেরিয়ে এসে খপ করে আমার হাতটা ধরে ফেললো। ভয়ে আমি চিৎকার করতে গিয়েও চিৎকার করতে পারলাম না। শুধু বড় বড় চোখে তাকালাম।আর তখন দেখি চাদরের ভেতর থেকে নাঈমের মুখটা বেরিয়ে আসছে। আমি তখন শব্দ করেই বলে উঠলাম,’হাতটা ছাড়ুন।হাত ধরেছেন কেন?’
নাঈম ফিসফিস করে বললো,’আস্তে।কেউ দেখে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যাবে।’
‘কী দেখলে সর্বনাশ হয়ে যাবে?’
‘তোমার সাথে কথা বলতেছি এইটা। আম্মা জানে আমি এখন ঘুমিয়ে গেছি। কিছুক্ষণ আগে মিছেমিছি নাক ডেকে প্রমাণ করেছি যে আমি এখন ঘুমে বিভোর। আমি ঘুমিয়ে গেছি এটা প্রমাণ হবার পর আম্মাও ঘুমিয়ে গেছে। আমি আসার সময় দেখে এসেছি আম্মা নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে।’
আমার ঘেন্না হচ্ছিল ওর প্রতি। আমি ভাবতেও পারছিলাম না একটা ছেলে কী করে এমন কাপুরুষ হয়!
আমি তখন রাগের গলায় বললাম,’আপনার মতন এমন কাপুরুষ আমি জীবনেও দেখি নাই। আপনি আমার হাত ছাড়ুন।যান এখান থেকে। নাইলে আপনার মুখের উপর আমি বমি করে দিবো!’
আমি একটানে নাঈমের হাত থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নিলাম।নাঈম তখন কাচুমাচু করে বললো,’প্লিজ! তুমি আমায় ভুল বুঝো না। আমি আম্মাকে ম্যানেজ করে ফেলবো এক দুই দিনের ভেতর। আম্মা কোন কারণে তোমাদের উপর রাগ। সেই রাগ থাকবে না দেখো!’
আমি ওর কথা শুনে জানলার কপাটটা ঠাস করে লাগিয়ে দিতে চাইলাম। কিন্তু এর আগেই ঘরের দরজা খুলে ঘরের ভেতর ঢুকে গেলো আমার শাশুড়ি।তার সাথে আরো একজন কম বয়সী মেয়ে। আমার শাশুড়ি এসেই আমার চুল টেনে ধরে বললেন,’কার সাথে পিরিত করস হারামজাদি? আমি আগেই সন্দেহ করছিলাম তোরে! ছিঃ ছিঃ ছিঃ!’
বলে আমার মুখের উপর তিনি একদলা থুথু ছিটিয়ে দিলেন।
আমি তখন চিৎকার করে বললাম,’আপনি এমন অসভ্যতামি করছেন কেন আমার সাথে? আমি আপনার ছেলের সাথে কথা বলছিলাম। নিজের স্বামীর সাথে কথা বলাও কী অপরাধ?’
আমার শাশুড়ি তখন বললেন,’তুই বললেই হইলো আমার ছেলের সাথে কথা বলছস! আমার ছেলে ঘরে ঘুমাচ্ছে।’
আমি তখন আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বললাম,’ওই দেখুন,জানলার বাইরে দেখুন আপনার ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।’
কিন্তু আমার শাশুড়ি যখন তাকালেন তখন দেখা গেল নাঈম আর ওখানে নাই।
আমার শাশুড়ি তখন রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে আমার গালে ক্রমাগত চড় বসিয়ে দিতে শুরু করলেন।আর ওই মেয়েটি বাড়ির সকলকে ডেকে তুলতে লাগলো এই বলে যে,’আপনারা উঠেন। সবাই ঘুম থেকে উঠেন। উঠে দেখেন নতুন বউ তার প্রেমিকের সাথে দেখা করতে গিয়ে খালাম্মার হাতে ধরা খাইছে !’
‘
#চলবে