চন্দ্রাণী(১৮)

0
275

#চন্দ্রাণী(১৮)
চন্দ্র দুপুরে খেতে বসে বললো, “আব্বা,কাদের খানের ছেলেটারে তো পুলিশ খুঁজতেছে শুনছেন? ”

শাহজাহান তালুকদার চিন্তিত হয়ে বললেন,”হ্যাঁ, শুনছি রে মা।কি যে হচ্ছে এলাকায় এসব কিছুই বুঝি না।সামনে নির্বাচন এরই মধ্যে দেখ কতো ভেজাল। একের পর এক ঝামেলা লেগেই আছে। কি হবে কে জানে!”

শর্মী বললো, “আপনি এতো চিন্তা কইরেন না আব্বা।গ্রামের সব মানুষ জানে আপনি কেমন মানুষ। আপনি চেয়ারম্যান হইলে সবার কতো সুবিধা তা কি মানুষের অজানা না-কি!
আপনার মতো কয়জন আছে যে গ্রামের মানুষের কথা এতো চিন্তা করে। রাতে হইলে আপনি বাবুল কাকাকে নিয়ে গ্রামে পরিদর্শনে যান।কোনো দিন তো দেখি নি সরকারি কোনো জিনিস বাড়িতে আমাদের জন্য রাখতে।সবই তো মানুষের জন্য করেন।”

শাহজাহান তালুকদার মুচকি হেসে বললো, “আমার ছোট মেয়েটা বড় বেশি সহজ সরল। মা রে,এখন যুগটাই এরকম যে কারো হাতে যদি ১হাজার টাকার একটা নোট ধরিয়ে দেয় কেউ,মানুষ তাকেই ভোট দিবে যে টাকা দিয়েছে। ১৫ বছর ধরে আমি কি করেছি একটা ১হাজার টাকার নোটের কাছে আমার সব পরিশ্রম বিক্রি হয়ে যাবে।মানুষ এটা ভাববে না এরপর কি হবে,আজকের ১হাজার টাকাই সবকিছুর উর্ধ্বে চলে যাবে। ”

চন্দ্র বললো, “আব্বা,এতো চিন্তার কি আছে আপনার? ”

শাহজাহান তালুকদার শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বললেন,”আল্লাহ আমারে একটা ছেলে দিছে অথচ তার খেয়াল রাখা লাগে অন্যদের।এই যে আমার নির্বাচন, ও যদি সুস্থ থাকতো ও নিজেই তো আমার নির্বাচনের কাজে সাহায্য করতো। নিজের মানুষ বাহিরের মানুষ দিয়ে কাজ করানোর অনেক ফারাক রে মা।”

চন্দ্রর মুখ মলিন হয়ে গেলো বাবার কথা শুনে। শুভ্র আপনমনে খেয়ে যেতে লাগলো।
নরম সুরে চন্দ্র বললো, “আপনি চিন্তা কইরেন না আব্বা।আপনার ছেলে হতে পারি নি হয়তো কিন্তু মেয়ে বলে যে হাতে চুড়ি পরে ঘরে বসে থাকবো তেমন মেয়ে হই নি।
এই হাতে যেমন ১০০ মানুষের জন্য রাঁধতে পারি তেমনি এই হাতেই ১০০ মানুষকে কন্ট্রোল করতে পারি।
এই মুখ দিয়ে যেমন মানুষের সাথে মিষ্টি করে কথা বলতে পারি তেমনি এই মুখেই আবার প্রতিবাদ করতে পারি আব্বা।”

শাহজাহান তালুকদার অবাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন।এই মেয়েটাকে কেমন অচেনা লাগছে তার আজ।কেমন শান্ত কণ্ঠ, দৃঢ়তা, আত্মবিশ্বাসে ভরপুর।
এই মেয়ের মধ্যে কার ছায়া দেখতে পাচ্ছেন যেনো তিনি!
বহু বছর ধরে যাকে ভুলে থাকতে চেয়েছেন তাকেই কেনো বারবার মনে পড়ছে!

চন্দ্র খাওয়া শেষ করে নিজের রুমে গেলো। শুভ্র কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো বোনের চলে যাওয়ার দিকে।রেহানা আড়চোখে স্বামীর দিকে তাকিয়ে রইলো।

দুপুরের খাবারের বেশ খানিক পরে চন্দ্র,শর্মী,শুভ্র বের হলো গ্রামের রাস্তায়। ঠিক করলো গ্রামের শেষ প্রান্ত থেকে শুরু করবে।হাঁটতে হাঁটতে গ্রামের শেষ মাথায় গেলো। এক বাড়ি এক বাড়ি করে তিন ভাই বোন ঢুকছে আর লিফলেট বিতরণ করছে।
চন্দ্র মিষ্টি মুখে সবার সাথে হেসে কথা বলছে।বৃদ্ধাদের সাথে বসে পান সুপারি খাচ্ছে।
শর্মী তাকিয়ে ভাবতে লাগলো ও কখনো আপার মতো এরকম সাহসী হতে পারবে কি-না! ওর মনের বল কখনো এরকম হবে কি-না! আপা কি সুন্দর করে সব ম্যানেজ করতে পারে।

এক দিনেই ওরা ১০ বাড়িতে যাবে বলে ঠিক করলো। ১০ টা বাড়িতে যাওয়ার পর ক্লান্ত হয়ে আবার বাড়ির দিকে পা বাড়ালো তিন জন।এক এক বাড়িতে প্রায়৭-৮ টা,১০-১২ টা করে ঘর আছে।এতো মানুষের সাথে কথা বলতে অনেক এনার্জি লাগে।শর্মী কথা না বলেও ক্লান্ত হয়ে গেলো অথচ চন্দ্র কেমন ফিট এখনো। কোনো ক্লান্তির ছাপ নেই তার মধ্যে।
শর্মী বললো, “আপা আজকে আর না।আবার আগামীকাল। ”

চন্দ্র হেসে বললো, “আচ্ছা অসুবিধা নেই।শোন,আমি একটা প্ল্যান করেছি কিন্তু।”

শর্মী জিজ্ঞেস করার আগেই চন্দ্র বললো, “গ্রামে একটা খেলাধুলার প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করবো ।নির্বাচন তো চলে এলো।”

শর্মী জিজ্ঞেস করলো, “কেমন প্রতিযোগিতা? ”

চন্দ্র বললো, “আরে,ইউটিউবে, ফেসবুকে দেখিস না গ্রামের মানুষদের নিয়ে নানা ধরনের খেলার ব্যবস্থা করা হয়। আমাদের টার্গেট হবে ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সী মহিলাদের আর অপশনাল হিসাবে হবে বাচ্চাদের। ”

শর্মী জিজ্ঞেস করলো, “পুরুষরা বাদ যাবে কেনো?”

চন্দ্র হেসে বললো, “পুরুষ মানুষ যেকোনো মুহূর্তে রঙ বদলে ফেলতে পারে তাই।তাছাড়া, পুরুষেরা মোটামুটি মাথায় সেট করেই রাখে কাকে ভোট দিবে তারা।মহিলারা যেহেতু এসব পলিটিক্স কম বুঝে তাই ওরা যেখানে আনন্দ পায়,ভালো কোনো উপহার পায়,তাদের বাচ্চাদের মুখে হাসি দেখতে পায় সেদিকে ঝুঁকে যায়।
আমরা এদের টার্গেট করে প্ল্যান করবো বসে কেমন ধরনের খেলার ব্যবস্থা করা যায় আর উপহার কি হবে।”

শর্মী হেসে বললো, “আপা,তুই আসলেই জিনিয়াস। আমার গোবর মাথায় এতো বুদ্ধি নেই।”

চন্দ্র হাসলো।টগরের সাথে দেখা করতে হবে একবার তার।

টগর চিন্তিত হয়ে নিয়াজের সাথে কথা বলছে।নিয়াজের নামে সার্চ ওয়ারেন্ট বের হয়েছে। নিয়াজ আছে আপাতত টগরের সাথে এক গোপন আস্তানায়।

টগর টেবিলে আলতো করে চাপড় দিয়ে বললো, “এটা ঠিক কিভাবে হলো আমি এখনো বুঝতে পারছি না। আমরা ঠিক যেখানে যেখানে গিয়েছি ঠিক সেখানে সেখানেই গেলো ওই সাংবাদিক।
অন্য কোনো কাউকে কিন্ত দেখায় নি, আবার আমাদের লিস্টের কেউ বাদ ও যায় নি।
কেউ কি আমাদের পিছু নিয়েছিলো তাহলে?
নিয়াজ চমকে উঠে। আসলেই তো!
তার তো শত্রুর অভাব নেই।হতেও তো পারে।

চলবে…..
রাজিয়া রহমান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here