#চারুলতা
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-৪
বিষয়টা এখানেই থেমে থাকল না বরং আরও ভয়ংকর পরিস্থিতির রূপ নিল। চারদিকে আচমকা কুকুর ডাকতে লাগল। সাথে শিয়ালের হাক। কুকুর আর শিয়ালের ডাক যেন কানে বাজতে লাগল প্রখর ভাবে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি খারাপ দিকে মোড় নিচ্ছে সেটা ভালো করেই বুঝতে পারছিলাম। বিড়ালের কাটা মাথাটা আমার ঘাড়ের উপর এসে আঁচড়ে পড়ল। পরপরই বিড়ালের মাথাটা আমার গলার দিকটায় কামড়ে ধরল। ব্যথায় আমার শরীর মুচড়ে যাচ্ছে। শরীর বিহীন বিড়ালের মাথাও এতটা জীবন্ত কী করে হয় সেটা মোটেও বোধগম্য হচ্ছে না। আমি হাতটা উপরে তুলে বিড়ালের মাথাটা ধরে টানার শক্তিটুকুও পাচ্ছিলাম না। কিন্তু মৃধা বিড়ালটার মাথাটা ধরে আমার গলা থেকে ছুটিয়ে দূরে ঢিল দিল। আমার গলার দিকটায় হালকা মাংস উঠে আসলো আর টপ টপ করে রক্ত পড়তে লাগল। কোনোরকম জামার এক অংশ টেনে ছিড়ে গলার দিকটায় বেঁধে নিলাম। এদিকে মৃধা আমার হাত ধরে সরাসরি দেয়ালের ভেতর দিকে চলে গেল।
দেয়ালের ভেতরে যেতে প্রথমেই চোখ পড়ল ভাঙা কতগুলো রুমের উপর। মনে হচ্ছে এটা কারও বাড়ি ছিল। অনেকদিন বাড়িতে কেউ না থাকায় বাড়িটা পরিত্যক্ত হয়ে নড়বড়ে হয়ে আছে। অন্ধকারে সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম বিষয় গুলো চক্ষু কোঠরে ধরা পড়ছে না। বাড়িটার ভেতর দিকে মৃধার সাথে যেতে লাগলাম। বাইরের কুকুরের আওয়াজ মৃদু হতে হতে থেমে গেল। তবে শুশু বাতাসের শব্দ কানে এসে ঝাঁপটা দিচ্ছে আমার। মৃধা আর আমি কোনো কথায় বলছি না শুধু দুজনেই হেঁটে সামনের দিকে এগুতে লাগলাম। কিছুক্ষণ হাঁটার পর দুজনের চোখেই একটা সুরঙ্গ চোখে পড়ল। সুরঙ্গটা দেখে কেন জানি না একটু ভয় কাজ করলো মনে। আমি কিছুটা ভয়ার্ত গলায় মৃধাকে বললাম
– এটা কিসের সুরঙ্গ? এ সুরঙ্গ দিয়ে কী ঢুকবে নাকি অন্য রাস্তা দেখবে।
– এখানে কিছুই চিনি না। সুরঙ্গ দিয়ে ঢুকতে ভয়ও করছে আবার ঢুকারও একটা ইচ্ছা জাগছে। কী করব বুঝে উঠতে পারছি না।
– এ সুরঙ্গ দিয়ে ঢুকলে নিশ্চয় ভালো হবে না মৃধা। কারণ জঙ্গলের বিষাক্ত সাপ হয়তো দলা পাকিয়ে বসে আছে। যদি কামড়ে দেয় তো প্রাণ নাশ হবে।
মৃধা আমার কথা শুনে হালকা হাসলো। হাসির শব্দটা প্রখর না তবে মৃদু শব্দ কানে আসলো। সে হাসিটা কিছুক্ষণ স্থায়ী রেখে বলল
– চারুলতা আমি নাগিন হয়ে সাপ ভয় পাব। আর আমি থাকতে তুমি সাপে কামড়ে মরার ভয় পাচ্ছ? এমন কিছুই হবে না। তবে আমার ভয় অন্য জায়গায়।
আমি বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম
– তুমি আমার নাম জানলে কীভাবে? আর ভয় অন্য কোন জায়গায়?
– নাম জানা খুব একটা কঠিন বিষয় না। আমার ভয়টা হলো এ সুরঙ্গ পথ বেয়ে সামনে এগুতে লাগলে অক্সিজনের পরিমাণ কমে গেলে কী হবে। আমি তো বেঁচে যাব তবে তোমার বিপদ হবে তাই সুরঙ্গ পথ বেয়ে সামনে এগুব কি’না ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছি।
আমি সংশয় নিয়ে উত্তর দিলাম
– যেখানে কিন্তু কাজ করছে সেখানে না এগুনোই ভালো।
আমার কথাটা শেষ হওয়ার সাথে সাথে সে শরীর বিহীন বিড়ালের মাথাটা উড়ে এসে দুজনের সামনে পড়ল। আমার ভয়ে হাত পা কাঁপতে লাগল। কেনো রকম দিশা না পেয়ে আমি সুরঙ্গ পথের দিকেই দৌড়ে গেলাম। মৃধাও আমার পেছনে দৌড়ে গেল।
সুরঙ্গ পথে ঢুকার সাথে সাথে একটা বিশাল কপাট সুরঙ্গ পথের প্রবেশ মুখটা আটকে দিল। আমার ভয়ে বুকটা কেঁপে গেল। কিছুই দেখতে পারছি না। মৃধা শুধু আমার হাতটা চেপে ধরে বলল
– বড় কোনো বিপদের সম্মুখীন হতে যাচ্ছি। নিজেকে প্রস্তুত রেখো।
একে তো অন্ধকার তার উপর কোনো বাতাস নেই সব মিলিয়ে দম বন্ধ হয়ে যেতে লাগল। গড় গড়িয়ে বমি করতে লাগলাম। মৃধার তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না তবে আমার যেন সমস্যা পিছুই ছাড়ছে না। শ্বাসকষ্ট যেন আমাকে গ্রাস করে নিচ্ছে। ক্রমশেই শরীরটা নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। শক্তি যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেল আমার। মৃধা আমার হাতটা ভালো করে ধরে কিছুটা টেনে আমাকে নিয়ে সামনের দিকে এগুতে লাগল। আমি পাঁ টা হেঁচরাতে হেঁচরাতে এগুতে থাকলাম।
এভাবেই অনেকটা পথ পার করলাম। দমটা যেন বারবার আটকে যাচ্ছিল। অনেকটা পথ পাড় হওয়ার পর লক্ষ্য করলাম একটা আলোকরশ্নি সুরঙ্গে এসে প্রতিফলিত হয়েছে। আলোক রশ্নিটা দেখে মনে হলো হয়তো সুরঙ্গের শেষ দিকে চলে এসেছি। তবে আমার ধারণা পুরোপুরি মিথ্যা প্রতীয়মান হলো। কারণ আলোর রশ্নির কাছে যেতেই দেখলাম সুরঙ্গটা তিনটা রাস্তায় বিভক্ত হয়েছে। এখন দুজনেই দ্বিধায় পড়ে গেলাম কোন রাস্তা দিয়ে গেলে এ সুরঙ্গের শেষটা পাব। আমি আমতা আমতা করে বললাম
– মৃধা এ কোন জায়গায় এসে পড়লাম এখানে আলো আছে তবে আলোক উৎস নেই। রাস্তাও তিন খন্ডে বিভক্ত। কোন দিক দিয়ে গেলে ভালো হবে বুঝতে তো পারছি না।
মৃধাও বেশ দুটানা নিয়ে জবাব দিয়ে বলল
– একটা পথ ধরে এগুতে থাকি দেখি কী হয়।
আমরা ডানে বা বামের কোনো পথ ধরে এগুলাম না। এগুনোর জন্য সামনের পথটায় বেছে নিলাম। এখন আমার শ্বাসকষ্টটা আগের চেয়ে কমেছে। দুজন একটু সামনে এগুতেই একটা মাথাবিহীন লাশ হেঁটে আসতে লাগল আমাদের দিকে। ভয়ে আমার হাত পা কাঁপতে লাগল। পেছন দিকে দৌড়াতে নিতে গিয়ে দেখলাম সুরুঙ্গটার পেছনের দিকটা একদম সংকীর্ণ হয়ে গেছে। যার দরুণ পেছনে ফিরে যাওয়া দুজনের পক্ষে সম্ভব না। এদিকে মাথাবিহীন লাশটাও আমাদের সামনে। লাশটার দেহটা উলঙ্গ। কোনো নারীর লাশ এটা। আমাদের দুজনের মুখ ভয়ে চুপসে গেল। তবুও সাহস করে স্থির দাঁড়িয়ে রইলাম। লাশটা ঠিক আমাদের কাছে আসলো। এসেই দুজনের গলায় চেপে ধরল। দমটা আটকে যেতে লাগল দুজনের। তবুও হাতটাকে নাড়িয়ে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে লাশটার হাতটা ধরে মুচড়ে দিলাম। মুচড়ে দেওয়ার কিছুক্ষণ পর লাশটার হাত খুলে আমাদের হাতে চলে আসলো আর লাশটা থুবরে মাটিতে পড়ে গেল। চিৎকার দিতে চেয়েও যেন গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হচ্ছে না। হাতে থাকা লাশটার হাতটা মাটিতে ফেলে দুজনেই সামনের দিকে দৌড় লাগলাম। একটু সামনে যেতেই গা টা শিউরে উঠল।
পর্ব ছোট হওয়ার জন্য দুঃখিত।
কপি করা নিষেধ