#জোর_করে_ভালোবাসবো_তোকে
#পর্ব – ১৩
#শিফা_আফরিন
.
🍁
আঁচল রেহানের ফেইস দেখে না হেসে পারেনা। কেমন বাচ্চা দের মতো আচরণ করছে দেখো। দেখলে তো মনেই হবেনা উনি এক নাম্বারের ডেভিল।
আঁচল – আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন প্লিজ।
এর মধ্যেই দরজায় কেউ নক করে। আঁচল রেহান কে ছাড়িয়ে উঠে দরজা খুলে দেখে রিমি দাঁড়িয়ে আছে।
রিমি – লেবুর রস এনেছিলাম। তুমি খাইয়ে দিতে পারবে ভাইয়াকে? নাকি আমিই খাইয়ে দিবো? (শক্ত গলায়)
আঁচল রিমির কথায় বেশ অবাক হয়ে যায়। এতো কঠিন ভাবে কথা বলছে কেনো রিমি! আগে তো কোনো দিন এমন ভাবে কথা বলেনি।
রিমি – কি হলো পারবে নাকি তোমার সমস্যা হবে?
আঁচল – না না সমস্যা কেনো হবে? আমি পারবো। দিয়ে যাও।
রিমি আঁচলের হাতে গ্লাস টা দিয়ে চলে যায়। আঁচল দরজা লক করে রেহানের কাছে আসে….
আঁচল – এইযে শুনুন… এই পানি টা খেয়ে নিন।
আঁচলের কথায় রেহানের কোনো হেলদোল নেই। রেহান বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে আছে।
আঁচল – একি ঝামেলায় পড়লাম রে বাবা… ইচ্ছে করছে এই অসভ্য টার মাথায় পানি টা ঢেলে দিই।
আঁচল গ্লাস টা টেবিলে রেখে রেহান কে সোজা করে।
আঁচল – আপনি উঠবেন নাকি না? (রেগে)
রেহান উঠে বসে…..
আঁচল – নিন এটা খেয়ে নিন। (গ্লাস টা এগিয়ে দিয়ে)
রেহান – উহুম… এটা খাবো না।
আঁচল – তো কি আমার মাথাটা খাবেন… যত্তোসব। (রেগে)
রেহান – না তো। আমি তোমাকে খাবো বেইবি।
আঁচলের মাথাটা এবার পুরো গরম হয়ে যায়। আঁচল রেহানের মুখ চেপে ধরে কিছুটা লেবুর রস মুখে ঢেলে দেয়।
রেহান মুখ খিচে ফেলে। আঁচল একি ভাবে গ্লাসের পুরোটা লেবুর রস খাইয়ে দিয়ে রেহান কে ধাক্কা দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকিয়ে দেয়।
প্রায় অনেকখন পর রেহান শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে।
আঁচল বিছানায় বসে ছিলো। হটাৎ রেহান কে দেখে আঁচল অবাক হয়ে যায়। খালি শরীরে রেহানের সুন্দর্য টা আরও বেড়ে গেছে। আঁচল এক দৃষ্টিতে রেহানের দিকে তাকিয়ে আছে।
রেহান ধীরে ধীরে আঁচলের কাছে চলে আসে কিন্তু আঁচল আগের মতোই হা করে তাকিয়ে আছে৷
রেহান – কি গো বউ এভাবে তাকিয়ে আছো যে। আমাকে বেশি হট লাগছে বুঝি! (মুচকি হেসে)
রেহানের কথা শুনে আঁচলের ধ্যান ভাঙ্গে। আঁচল তারাতারি করে চোখ নামিয়ে নেয়।
রেহান আঁচলের সামনে এসে হাত ধরে টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে।
রেহানের শরীরে হালকা পানি লেগে থাকায় আঁচল ও কিছুটা ভিজে যায়।
আঁচল – কি শুরু করলেন? ছাড়ুন আমায় ভিজে যাচ্ছি তো আমি।
রেহান – তো কি হয়েছে ভিজে গেলে যাবা। (আঁচলের ঘাড়ে নাক ঘসে)
আঁচল – আপনার কি নেশা কাটেনি নাকি? (রেগে)
রেহান – হুম কেটেছে তো। এখন যে তোমার নেশা ধরেছে।
আচ্ছা বেইবি একটা কথা বলো তো?
আঁচল – কি?
রেহান – আজ তো তোমার বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিলো তাই না? তো গেলে না কেনো?
আঁচল রেহানের কথা শুনে তেলে ভাজা বেগুন হয়ে যায়।
আঁচল – আপনার জন্যই তো আমার যাওয়া হয়নি। আপনি যে সকালে বেরিয়েছেন আর এখন রাত ১১ টার উপরে বাজে এতোখনে এসেছেন। তো আমি কিভাবে যেতাম শুনি। আমি বাড়িতে ফোন দিয়ে না করেছি যেতে পারবো না শরীর ভালো লাগছে না।
মা অনেক টা চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। আর এটা নাকি নিয়ম। তাও না করে দিয়েছি।
রেহান – আমি নেই তো কি হয়েছে তুমি একাই তো চলে যেতে পারতে তাইনা। অবশ্য আমাকে তো তুমি কেয়ার ও করো না। আমি না থাকলেই তো তোমার জন্য মঙ্গল তাইনা সোনা।
আঁচল – হ্যা যেতে পারতাম কিন্তু এটা তো হয়না। নিয়ম তো নিয়ম ই। তাছাড়া মাও আমাকে কথা শুনাতো। তাই যাইনি।
রেহান – তাই? নাকি আমাকে ছাড়া থাকতে পারতে না। তাই যাওনি। নিশ্চয় আমাকে মিস করতে তাইনা বেইবি।
আঁচল – আগ্গে না। আমার বয়েই গেছে আপনার মতো ডেভিল কে মিস করবো। ছাড়ুন আমায়।
আঁচল চলে যেতে নিলেই রেহান আঁচলের কোমড়ে আরও শক্ত করে চেঁপে ধরে।
রেহান – জানি তো আমার জন্যই তো যাওনি। (মুচকি হেসে)
আঁচল – ওকে বাবা আপনার জন্যই যাইনি। এবার ছাড়ুন।
রেহান – বাবা না তো সোনা বর বলো বর।
আঁচল বিরক্ত হয়ে রেহান কে হালকা ধাক্কা দিয়ে সরে আসে।
আঁচল – দিলেন তো ভিজিয়ে। আপনি আসলে মারাত্মক অসভ্য।
এবার চলুন খেয়ে নিবেন।
রেহান – খাবো না বেইবি। তুমি খাওনি নিশ্চয়। আমি এসে তো তোমাকে বেলকনিতে পেলাম।
আঁচল – আমার ক্ষিদে নেই। আপনি খেয়ে নিবেন চলুন। এমনিতেও সারা দিন খান নি মনে হই।
রেহান – ওয়েট আমি এখনি আসছি।
আঁচল – আবার কোথায় যাচ্ছেন?
রেহান – ওহ মাহহ আমাকে কাছে না পেলে কষ্ট হবে বুঝি?
আঁচল – আপনি আসলে একটা…..
রেহান – কি গো? (চোখ মেরে)
আঁচল – যান তো। যেখানে যেখানে যেতে চাইছিলেন গিয়ে আমাকে রক্ষে করুন প্লিজ যান।
রেহান মুচকি হেসে চলে যায়।
আঁচল বিছানায় বসে বক বক করেই যাচ্ছে।
আস্ত একটা অসভ্য। এ তো আমাকে পুরো জালিয়ে মারবে সারা টা জীবন।
কিছুক্ষণ পরই রেহান হাতে প্লেট নিয়ে রুমে আসে।
আঁচল – এসব কি? (অবাক হয়ে)
রেহান – খাবার এনেছি।
আঁচল – কিন্তু কেনো? আর আপনি খাবার পেলেন কোথায় বলুন তো
রেহান – আরে বেইবি মা তোমার আর আমার খাবার রেখে দিয়েছিলো। আমি নিয়ে আসলাম।
আঁচল – আমি খাবোনা বললাম তো। আপনি খেয়ে নিন।
রেহান বিছানায় এসে বসে….
রেহান – নাও হা করো।
আঁচল – আপনি কি খাবেন?
রেহান – চুপচাপ হা করো (ধমক দিয়ে)
আঁচল কথা না বলে হা করে। রেহান আঁচলের মুখে খাবার তুলে দেয়।
আঁচল ও বাধ্য মেয়ের মতো খেয়ে নেয়।
রেহান – নাও এবার আমাকে খাইয়ে দাও।
আঁচল রেহানের কথা বলে হা করে রেহানের দিকে তাকিয়ে থাকে।
রেহান – এভাবে হা করে তাকিয়ে না থেকে খাইয়ে দাও।
আঁচল – আমি পারবো না।
রেহান – ওকে ফাইন। তাহলে আমিও না খেয়ে থাকি। যদিও খুব ক্ষিদে পেয়েছিলো বাট কি আর করার। (অসহায় ভাবে)
আঁচল বিরক্ত হয়ে রেহানের মুখের সামনে খাবার তুলে ধরে।
রেহান – ( বেইবি দেখি আর কতো দিন তুমি আমার থেকে দূরে দূরে থাকতে পারো। আমি ঠিক আমার ভালোবাসা দিয়ে তোমাকে নিজের করে নিবো দেখে নিও…. মনে মনে)
খাওয়া শেষ করে রেহান বলে….
রেহান – বেইবি চলো এক জায়গায় যাই। তোমার খারাপ লাগবে না বরং অনেক খুশি হবে দেখে। চলো….
আঁচল – কোথায়? (অবাক হয়ে)
রেহান – আহা চলো তো আগে। গেলেই বুঝবে।
আঁচল – এতো রাতে কোথায় যাবো? আপনার মাথা ঠিক আছে তো?
রেহান – চুপ করে আমার সাথে চলো। আর হ্যা কোনো শব্দ যেনো না হই। আই মিন কেউ যেনো না জেগে যায়। সবাই বোধহয় ঘুমাচ্ছে।
আঁচল – কিন্তু কোথায় যাবো সেটা তো বলুন।
রেহান – ছাঁদে যাবো। (মুচকি হেসে)
আঁচল – এত রাতে ছাঁদে যাওয়ার কোনো দরকার নেই। তার চেয়ে বরং কাল সকালে যাবেন ওকে।
রেহান আঁচলের কথা শুনে হেসে দেয়।
রেহান – সকালের আকাশ আর রাতের আকাশ অনেক পার্থক্য আছে সোনা। চলো না।
আঁচল আর কথা না বারিয়ে রাজি হয়ে যায়।
রেহান – আমার গুলুমুলু বউ টা। (ঢ্যং করে)
আঁচল – কিহহ! আমি কি এতোটাই মোটা যে গুলুমুলু বলেছেন?
রেহান – আরে বাবা এমনিই বললাম। চলো এবার।
রেহান আর আঁচল চুপিচুপি ড্রয়িং রুম দিয়ে বের হয়ে আসে।
মেইন দরজার কাছে আসতেই রেহান আঁচলকে কোলে তুলে নেয়।
আঁচল – আরেহহ আমার কি পা নেই নাকি। আমি হেটে যেতে পারবো নামান বলছি।
রেহান – কথা বললে কোল থেকে ফেলে দিবো। সো চুপ থাকো।