#জোয়ার_ভাটা
#পর্ব-২৩
#সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
ঝিরিঝিরি বৃষ্টির শীত শীত ভাবটা বাড়িয়ে চলে যাচ্ছে। রাতের নিস্তব্ধতায় ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির শব্দ কখনো গায়ের রোমশ দাঁড়িয়ে যাবার মতো। কিন্তু ঠিক ওই পথ দিয়ে হেটে যেতে ভয় লাগছে না মার্জানের। বাড়ির ধারে আসতেই দাঁড়িয়ে গেলো মার্জান। পিছনে না ফিরেই সপ্তপর্ণ শ্বাস ছাড়লো। বলল,
” মি: গ্রীষ্ম? হোয়াই আর ইউ ফলোইং মি?”
পিছনের মানুষটিও মুচকি হাসলো,
” তোমাকে দেখতে।”
মার্জান এবার তাচ্ছিল্য হাসলো। তীর্যক দৃষ্টি মেলে বলে উঠলো,
” আচ্ছা? কে হই আমি আপনার? ”
গ্রীষ্ম খনিক চুপ রইলো। কিছু বলবে এর আগেই মার্জান পায়ের গটগট আওয়াজ তুলে বাড়ির ভিতর চলে গেলো। মার্জানকে এভাবে যেতে দেখে কষ্ট হলো খুব ওঁর। তবে চুপ রইলো। গুরু গম্ভীর হয়ে হেটে চলল গাড়ির দিকে। ওঁ গাড়িতে বসতেই একটি অবয়ব বলে উঠলো,
” কাজ হয়ে গেছে স্যার। ”
“তোমাকে চিন্তে পারেনিতো ওঁ?”
“নাহ্ স্যার।”
” মিডিয়াতে দিয়েছো তো? ”
” হ্যাঁ স্যার। কাল পুরো শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়বে নির্ঝরের ঘটনা।”
গ্রীষ্ম গাড়ির সিটে হেলে পড়লো। ভাবহীন কন্ঠে বলে উঠলো,
” এবার যাও, আমি ঘুমাবো।”
অবয়বটি অবাক হয়ে বলে উঠলো,
” স্যার আপনি গাড়িতে ঘুমাবেন?”
গ্রীষ্মর তরফ থেকে কোনো উত্তর এলো না। তাই সময় নষ্ট না করে চলে গেলো ওঁ।
গ্রীষ্ম পরপরই চোখ খুললো। গাড়ির ভিতর থেকে মার্জানের ঘরের জালানা দিকে তাকিয়ে রইলো। এভাবেই বুঝি আজকের রাত টুকুও কেঁটে যাবে?
_________________
” নির্ঝোর তুই এসব কিভাবে করতে পারিস?”
” কেনো? ভালোবাসি ওঁকে আমি। সেই প্রথম থেকেই তাহলে কেনো পারবো না আমি?”
” তুই ভুল করছিস বড্ড বড় ভুল। তুই মার্জানের কথা একবারো চিন্তা করলি না? যে মার্জান তোর আর তোর মায়ের জন্য এত কিছু করলো।”
” আমি কারো জন্য আমার ভালোবাসা ছাড়তে পারি না।”
” তুই গ্রীষ্মকে চিনিস না, ওঁ তোর সাথে খেলছে।”
এবার মুখ খুললো মার্জান। সঙ্গে সঙ্গে হো হো করে হেসে উঠলো নির্ঝর। শীপ্রা আজ সকালে পেপারের খবর দেখেই থমকে গেছে। নির্ঝরের সাথে এক পুরুষের অন্তরঙ্গ ছবি বের হয়েছে। অবশ্যি ফেইস দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু পেপারে বলা হয়েছে এঁটা গ্রীষ্ম। কিন্তু মার্জানকে এই কথা জিগ্যেস করতেই মার্জান বলে উঠে,
” এটা নির্ঝোর নয়। ওঁর কাঁধে কোনো তিল নেই। আর এই ছবিতে এত বড় এক তিল।”
এর পরপরই বোঝা গেলো। নির্ঝর বড় কোনো পাঁদে পা দিয়েছে। তাই শীপ্রা মিট করে বোঝাতে চায়। কিন্তু নির্ঝর যেন অহংকারে পা মাটিতে ফেলতে চায় না। নির্ঝর এবার বলল,
“গ্রীষ্মের সাথে আমাকে দেখে হিংসে হচ্ছে না তোদের? তোরা আমার ভালো চাস না তাই তো? ওঁকে যা। লাগবে না তোদের আমার।”
বলেই চেয়ার ছেড়ে দিলো। এবং উঁচু হিলের গটগট পায়ের শব্দ করে চলে গেলো। যাবার পানে তাকিয়ে রইলো শীপ্রা আর মার্জান। ওঁরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে, ধংসের পথে যাচ্ছে ছুঁটে নির্ঝর।
————————
শীতের দুপুর। হালকা রোদ খেলা করছে ঘর ময়। মার্জান ওঁর মায়ের পাশেই বসে আছে। ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছেন তিনি। তবে ডাক্তার জানিয়ছেন বিদেশে নিয়ে গিয়ে ট্রিটমেন্ট করালে ভালো হবে দ্রুত, চলতে ফিরতে পারবে খুব তাড়াতাড়ি। তাই খুব জলদি সব পেপার ওয়ার্ক করে ফেলছে ওঁ। মার্জান মায়ের মুখ পানে হাত রেখে বলল,
” মা ঠিক হয়ে যাবে খুব দ্রুত।”
টগর রেসপন্স করলো না। ঘুমিয়ে আছে সে নিশ্চিন্ত। মার্জান এবার নিজের ব্যাগ নিয়ে বের হতেই পাশের টেবিলের সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যায়। এবং ব্যাগের ভিতর থাকা সব বেড়িয়ে পড়ে। মার্জান নিচে বসে তুলতে থাকে। তখনি ওঁর নজর যায় একটি প্লাস্টিকের ছোট্ট প্যাকেটে। এবং মার্জান তা তুলতেই মনে পড়ে এইটি গ্রীষ্মের চুল। মার্জান কিছুক্ষণ থম মেরে বসে রয়। পরক্ষণেই ভাবে,
“আমার কমপক্ষে জানা থাকা উচিত মৃণালের বাবাকে?”
তাই ওঁ প্যাকেটটি হাতে নিয়ে মৃণালের কেবিনে গেলো। ঘুমন্ত মৃণালের চুলে হাত বুলিয়ে ছিঁড়ে নিলো কিছু চুল। মৃণালের ঘুম ভেঙ্গে গেলো এবং সঙ্গে সঙ্গে চেঁচালো,
” মম ইট’স হার্টিং।”
” সরি বাচ্চা ঘুমাও তুমি।”
মৃণাল পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো। আর মার্জান পা বাড়ালো রাফির রুমে। ওঁর পা ভারি মনে হতে লাগলো। প্রতিটি কদম ওঁর কেমন অচল মনে হচ্ছে। বার বার গলা শুকিয়ে আসচ্ছে।
মার্জান রাফির কাছে সব খুলে বলল। রাফি ডি এন এ টেষ্টের জন্য দিলো। ওঁরর হাত-পা কাঁপছে। ভীষণভাবে কাঁপছে। রাফি জানালো কয়েক ঘন্টার মাঝে পেয়ে যাবে ওঁ রেজাল্ট। তাই মার্জান অফিসে চলে এলো। সায়ান জানালো,
” খুব একটা সময় নেই তোমার হাতে মার্জান ফাংশনের জন্য।”
” আমি আমার বেষ্ট দিবো।”
” গুড। এর পর ক’দিনের ছুটি চাই তোমার? ”
” দু’মাস।”
” ওকে ডান।”
——————————
সন্ধ্যায় সমুদ্র সৈকতের ধারে চেয়ার শুয়ে আছে গ্রীষ্ম। ঠান্ডার মাঝেও ওঁর গায়ে ক্যাসুয়াল ড্রেস আপ। তখনি পিছন থেকে একটি গার্ড এসে হাতের গরম কাপরটি এগিয়ে দিলো ওঁর হাতে। গার্ডটিকে দেখে হাসলো গ্রীষ্ম,
” তো ডেট কেমন চলছে তোমাদের?”
গার্ডটি লজ্জিত ভঙ্গিতে বলে উঠলো,
” স্যার কখনো হিরোইনদের সাথে ডেটে যাবো ভাবিনি। তবে মেয়েটি বড্ড ধুরন্ধর। খালি বলে, চল বিয়ে করি।”
গ্রীষ্ম আরামে চোখ বুঝে চওড়া হাসলো,
” তো চলো ওঁর শখ পুরণ করি?”
গার্ডটি বুঝতে পেরে নিজেও হাসলো। এই গার্ডটি মুলত গ্রীষ্মের মতো দেখতে। শত্রুদের বিভ্রান্ত করার জন্যই ওঁকে রাখে সব সময় সাথে। এবং নির্ঝরকে শিক্ষা দিবার জন্যই এই পদক্ষেপ। গ্রীষ্ম গরম কাপড় পড়ে এবার উঠে পড়লো,
” যাও ইনজয় করো। আমি চলি আমার জানের কাছে।”
বলেই বড় বড় পা ফেলে জায়গা ত্যাগ করলো ওঁ। পিছন থেকে গার্ডটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। মনে মনে ভাবলো,
” কখন কার সাথে কি করা লাগে, স্যার ভালোই জানে। একমাত্র এই লোকটির সাথে দুশমনি ভালো না আবার বন্ধুত্ব ওঁ।”
——————
মার্জান ওঁর অফিস রুমে বসে কাজ করছিলো। সোফিয়া এসে বসলো ওঁর পাশে,
” মার্জান আমার বিয়ে, তোমাকে আসতেই হবে আমার বিয়েতে।”
মার্জান বলল,
” যদি দেশে থাকি অবশ্যই। ”
সোফিয়া অবাক হয়ে বলে উঠলো,
” তুমি চলে যাচ্ছো?”
মার্জান মাথা নাড়লো হ্যাঁ বোধক,
” ফাংশনের পরের দিন আমার ফ্লাইট। ”
সোফিয়া মুখ গুমরে গেলো। তা দেখে মার্জান বলল,
” আমার ছেলের আর মায়ের ট্রিটমেন্টের জন্য যাচ্ছি।”
এটা শোনার পর নরম হলো কিছুটা সোফিয়া,
” ঠিক আছে তাহলে ছেঁড়ে দিলাম।”
ওঁদের কথার মাঝেই ফোন বাজতে লাগলো এবার মার্জানের।রাফির ফোন দেখে হার্ট বিট বেড়ে গেলো ওঁর। ফোন তুলতেই ওঁপাশ থেকে রাফি জানালো, রেজাল্ট চলে এসেছে।
মার্জান তাই হন্তদন্ত হয়ে বেড়িয়ে গেলো। রাফির কেবিনে পৌঁছাতেই গ্রীষ্ম রিপোর্ট এগিয়ে দিলো। মার্জান কাঁপা কাঁপা হাতে তুলতেই থম মেরে গেলো। এঁটা কি আসলেই সত্যি??
মার্জান কোনো রকম কথা বলে নিজের এপারমেন্ট এর দিকে ছুটল। কোনো রকম দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই একটি কন্ঠ ভেসে এলো,
” হাউ আর ইউ?”
মার্জান সামনে একটি অভয়বকে সোফায় বসে থাকতে দেখে ঘাবড়ে গেলো ওঁ।হাতে থাকে ডি এন এ রিপোর্ট নিচে পড়ে গেলো। অভয়বটি এবার আলোর কাছে আসতেই মার্জান আরেক দফা চমকে গেলো। পরে যাওয়া কাগজটি তুলে নিয়ে পিছনে লুকিয়ে ফেললো। ঘাবড়ে যাওয়া কন্ঠে বলে উঠলো,
” তুমি… তুমি কেনো এসেছো এখানে? যাও বের হও।”
মার্জানের হাতের কাগজে গ্রীষ্মের নজর পড়ে গেছিলো ভালোভাবেই, ওঁর উপর লিখা ডি এন এ টেস্ট আর মার্জান এহেন কান্ড, যে মেয়ে গ্রীষ্মকে মি. ছাড়া কথা বলে না? সে তুমি বলছে, এবস ভেবেই বুঝে গেলো ওঁ কিছু লুকচ্ছে।গ্রীষ্ম এবার ধীরে গতিতে মার্জানের কাছে এগিয়ে গেলো,গুরু গম্ভীর কন্ঠে বলল,
” কি লুকাচ্ছো মার্জান? ”
মার্জান পিছনে যেতে যেতে বলে উঠলো,
” কিছু.. কিছু না। তোমার কোনো কাজের কিছু না।”
কিন্তু গ্রীষ্ম নাছড় বান্দা। ওঁ খুব কাছে চলে আসতেই মার্জান ধাক্কা দিয়ে নিজ ঘরে দৌড়ে যেতে নিতেই কাগজটা কেঁড়ে নেয় গ্রীষ্ম কালবিলম্ব না করে খুলতেই চোখ দু’টো বড় হয়ে যায়। অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে উঠে,
” তুমি আমার আর মৃণালের ডি এন এ টেষ্ট করিয়েছো? ”
মার্জান হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লো। গ্রীষ্ম অধির কন্ঠে বলল,
” কিন্তু কেনো??”
মার্জান চোখ বুঝে নিলো। মার্জান কি করবে এখন? সব সত্যি বলে দিবে? নাকি নতুন কোনো বাহানা করবে??
চলবে,
তো কি ধারণা আপনাদের? কি রেজাল্ট বেড়িয়েছে? গ্রীষ্ম কি সত্যি মৃনালের বাবা????
গল্পের রেসপন্সের উপর পরবর্তী পর্ব দিবো। রেসপন্স ভালো হরে কাল আবার দিবো।