###__ঝরে_যাওয়া_বেলীফুল__###
#পর্ব_২৫
লেখিকা : আফরোজা আক্তার
রাতের খাওয়ার পর ইরফান ড্রইংরুমে বসে কাজ করছিল ল্যাপটপে । বেলী সব গুছিয়ে নিজের রুমে যায় । আজকে বাহিরের আবহাওয়াটা বেশ সুন্দর । চারপাশে ঝিঝি পোকা ডাকছে । রাত বাড়ার সাথে সাথে পরিবেশটা অনেক শান্ত হয়ে যায় । এই শান্ত পরিবেশের মাঝে বিলীন করেও শান্তি পাওয়া যায় । জানালার পাশে এসে বেলী শান্ত আকাশে নিজের দৃষ্টি রেখেছে । এরই মাঝে মিনু রুমে আসে ,
– ভাবী ,,,,,,,
– হু ,
– আইয়েন লুড্ডু খেলি ,
– এখন ?
– হ , আইয়েন ।
– কোথায় পাইলা এইটা ?
– বাইত্তে নিয়া আইছি হিহি , আইজ্জা বাইর করছি আইয়েন খেলি ।
– চলো ,
– হুনেন আগেই কই , আমার গুডি খাইবেন না , মনে করেন আপনেত কানা ফড়লো , কিন্তু কানায় আমার গুটি যাইবো , খাইয়েন না কইলাম ।
– গুটি না কাটলে মজা লাগবে না তো ,
– যা হইয়া যাক , আপনে আমার গুডি খাইবেন না ,
– আচ্ছা ,
মিনুর এই দুষ্টুমিপণা গুলো বেলীকে বেশ আনন্দ দেয় । দুজনে বসে যায় লুডুর ঘর নিয়ে । মিনুর ঘেনর ঘেনর এখনও চলছে ,
– ভাবী আমার গুডি খাইবেন না কইয়া দিলাম ।
– আচ্ছা , শুরু করো ।
দুজনে মিলে প্রায় অনেক্ষন যাবত লুডু খেলেছে । এক পর্যায়ে ইরফানের ডাকে তাদের হুশ আসে । ইরফান তাদের লুডু খেলা দেখছিল অনেক্ষণ যাবত । খেলার শেষ হওয়ার সাথে সাথেই ইরফান বেলীকে আর মিনুকে ডাক দেয় ।
– মিনু,,,,,,,,,,,,,,,,?
– জ্বে ,
– খেলা হয়েছে ?
– হ ভাই , যা ঘুমাতে যা ,
– আইচ্ছা
– এই দাঁড়া , এটা রেখে যা ।
– আপনেও কি খেলবেন নি ভাই ,
– তুই রেখে যা ।
– আইচ্ছা ।
মিনু চলে গেলে ইরফান দরজা লাগিয়ে দেয় । বতারপর বেলীর সামনে এসে বসে সে । তাকিয়ে থাকে বেলীর দিকে । বেলী তখন চুপ করে নিচে তাকিয়ে আছে ।
– তুমি লুডুও খেলতে পারো ?
– না পারার কি আছে , পারি তো ।
– তাহলে আমার সাথে এক গেইম খেলো ,
– আচ্ছা ,
– আগে ডিল ফাইনাল হোক ,
– কিসের ডিল ?
– আমি যদি জিতে যাই তুমি কি কি করবা আর তুমি জিতে গেলে আমি কি কি করবো ।
– এইগুলা সব ভাওতাবাজি ,
– কিহহহ !!!
– নাহ মানে এইসব করার কি দরকার ?
– আছে বলেই বলছি ,
– আচ্ছা বলেন তাহলে ,
– ওকে , যদি আমি জিতে যাই তাহলে তুমি গুনে গুনে ১৫ টা চুমা দিবা আমাকে ।
ইরফানের মুখ থেকে এই কথা শুনে বেলীর প্রাণ যায় যায় অবস্থা । এইটা সে কি বললো ? এইসব কি আদৌ সম্ভব ।
– কি সব বলেন আন্দাজে ?
– হ্যাঁ ,
– আমি খেলবো না ,
– আমি কিন্তু না-ও জিততে পারি ।
পরে দিয়ে বেলী আবার ভাবে , হ্যাঁ সে তো না-ও জিততে পারে । সে একাই যে জিতবে এর কি গ্যারান্টি আছে ? বেলীর ভাবনার মাঝে ইরফান আবারও ডাক দেয় তাকে ,
– এইযে ,,,,,,,?
– হু ,
– কি ভাবেন ?
– কিছু না ,
– তো রাজি কিনা তাই বলো ,
– আচ্ছা রাজি , আর আমি জিতলে ,
– তোমায় জিততে দিলে তো (গুনগুন করে)
– কি বলেন , কাচুমাচু করে ,
– নাহ মানে তুমি জিতলে আমায় ভালোবেসে জড়িয়ে ধরবা । ব্যাস
– একই তো হলো ,
– কি ,
– এইযে , জিতলেও আপনার লাভ আর আমি জিতলেও আমার লস ,
– এটায় লস পাইলা কই ?
– শুরু করেন ।
ইরফান আর বেলী খেলতে বসে যায় । কেন জানি প্রথম শুরুতেই ইরফানের দুই ছক্কা পড়ে । আর তার পর পর ছক্কার উপর ছক্কা তার উপর ছক্কা তার উপর ছক্কা । আর ইরফান ইচ্ছে করে বেলী বেচারির সব গুটি কেটে দিচ্ছে । বহু কষ্ট করে পুরো ঘর ঘুরে যেই পাকাবে তখনই কেটে দেয় । রাগে দুঃখে বেলীর চোখে পানি এসে গেছে । বার বার গুটি কেটে দিচ্ছে । আর সহ্য করতে পারে নি সে ।
ধুম করে এক ধমক দিয়ে ওঠে ইরফানকে ,
– খেলবো নায়ায়ায়া ,
– কেন ?
– আপনার সাথে আমার কোন জন্মের শত্রুতা , এইভাবে গুটি গুলা কাটতেছেন ।
– তো সামনে পড়লে কাটবো না ?
– তাই বলে এইভাবে ? আপনি তিন টা গুটি পাকিয়ে ফেলছেন , আর আমার এখনও দুইটা গুটি কাচা । এইসব কি ?
– তো তোমার ছক্কা না পড়লে আমি কি করবো ?
– খেলবো না আমি ,
– আরে কি আজব , আচ্ছা আর কাটবো না , কথা দিলাম ।
– এখন আর কথা দিয়া কি হবে , সব গুলা গুটি কেটে রেখে দিছেন ।
– বাপ্রে বাপ নিমজ্জিত বেলীফুল হঠাৎ ফাল মেরে উঠলো কেন ?
ইরফানের কথায় বেলী আবার চুপ হয়ে যায় । মাথা নিচু করে বেলী মনে মনেই বলা শুরু করে দেয় ,
– রাগের চোটে ওনার সাথে এইভাবে চেঁচিয়ে ওঠার মানে কি হলো ? ইসসসস , কি ভাববে উনি ।
তারপর কিছুক্ষণ নিরবতার মাঝেই খেলা চলতে থাকে । আর তারপর , খেলার সমাপ্তি হয়ে যায় । বেচারি বেলীটা তিন গুটিয়ে গেইম হেরে যায় ইরফানের সাথে । ইরফান জিতে গিয়ে রাজ্য জয় করা হাসি দেয় । আর বেলীর ভেতরটা রাগে ফেটে যাচ্ছে । বেলী উঠে যেতে নিলে ইরফান তার হাতটা ধরে ফেলে । তারপর টান মেরে নিজের কাছে বসিয়ে নেয় ।
– কিছু বলবেন ?
– হু ,
– বলেন ,
– আমার ১৫ টা চুমা বাকি রয়ে গেছে তো ,
– আপনি ইচ্ছা করে এইভাবে আমার গুটি গুলা কেটেছেন ।
– খেলার কথা বাদ । খেলার আগে যেই ডিল হয়েছে তা পূরণ করার ব্যবস্থা করো ।
– আপনি দুই নাম্বারি করেছেন , মিনু আপনার থেকে অনেক ভালো খেলে ।
– তো এখন কি চুমা মিনুকে দিবা ?
– ধুর , ছাড়েন ।
– আমার ১৫ টা চুমা দিয়ে দেও । আমিও ছেড়ে দেই ।
বেলী কি করবে না করবে বুঝে উঠতে পারছে না । এইদিক দিয়ে ইরফানের ডিলেও সে রাজি হয়েছিল । এখন কথা যখন দিয়েছে রাখতে তো হবেই । কিন্তু বেলীর চোখে মুখে সংকোচনের আভা দেখা দিয়েছে । ইরফান বেলীকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করছে । লজ্জায় মেয়েটা তাকাতে পারছে না । ইরফান বার বার বেলীর চোখ মুখের দিকে তাকাচ্ছে ।
এইবার ইরফান বেলীর একদম কাছে চলে যায় । বেলীর মাথা থেকে দুই পেচ এর ওড়নাটা খুলে দেয় সে । ইরফান তার ওড়না খোলার সময় ভেতরে তার ঝড় বয়ে যাচ্ছিল । গলা থেকে কলিজা অবদি তার সবটা শুকিয়ে যাচ্ছে বেলীর । কিছুই বলে নাই সে । ইরফান বেলীর শরীর থেকে পুরো ওড়নাটা সরিয়ে নেয় । ইরফান তখন আরও কাছে চলে আসে বেলীর । বেলীর চুলের খোঁপার কাটা টা ইরফান খুলে দেয় । লম্বা চুলগুলো তখন খাটে গিয়ে পড়ে । ইরফান যেন ঘোরে আছে , আর তার ঘোরের মাঝেই আটকাতে চাচ্ছে বেলীর ঘোরের বাঁধন । বেলীর বাম গালে তার ডান হাত রেখে বেলীর মুখ নিজের মুখ বরাবর রাখে ইরফান ।
– আমার দিকে তাকাও ,
-,,,,,,,,,,,,,
– আমার চোখের দিকে তাকাও ,
-,,,,,,,,,,,,,,,
– তাকাবা না ?
তখন বেলী বন্ধ মুখে শান্ত নয়নে ইরফানের দৃষ্টিতে তার দৃষ্টি রাখে । ইরফানের চোখ জোড়া কেমন যেনো লাল হয়ে আছে আর চোখের মাঝ বরাবর হাল্কা পানি চিল চিক করছে । ইরফান বেলীর কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলতে শুরু করে ,
– শুরু করো ,
-,,,,,,,,,,,
– কি হলো , এই প্রথম কিছু চেয়েছি তোমার কাছে আমি , দিবে না ?
এমতাবস্থায় বেলী কি করবে না করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না । ইরফানের চাওয়ার মাঝে নোংরামিপণাটা ছিল না । সহ বধ রেখেই সে তার চাওয়া জিনিসটা উপস্থাপন করেছে । এখন শুধু বেলীর এক ধাপ এগুনোর পালা । বেলী তখন সমস্ত লাজ-লজ্জা বিসর্জন দিয়ে ইরফানের কাছে এগিয়ে যায় । বেলী আর ইরফানের চোখের দিকে তাকাতে পারে নি । নিজের চোখ বন্ধ করে প্রথম চুমুটা ইরফানের কপালে বসায় বেলী । বেলীর ঠোঁটের আলতো স্পর্শে ইরফানের পুরো শরীর নড়ে ওঠে । কপাল থেকে বেলীর ঠোঁট তখন ইরফানের গাল বরাবর । ইরফানের ডান গালে আরেকটা চুমু দেয় সে । আর পারেনি সে , লজ্জায় আর এগুতে পারে নি সামনে । বেলী হুরমুড়িয়ে উঠে যেতে নেয় নিলে ইরফান এইবার পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বেলীকে । ইরফানের এরকম এক ঝটকায় উঠে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরায় সে অনেকটা ফ্রিজড হয়ে যায় । ইরফান বেলীর মাঝে এক চিলতে ফারাকও ছিল না তখন । বেলীর কাঁধে নিজের থুতনি লাগিয়ে বেলীর কানে কানে বলে ,
– আরও ১৩ টা বাকি কিন্তু ,
– রাত অনেক হয়েছে ঘুমিয়ে যান ।
– হুসসসস , আগে আমাকে দেয়া কথার মান রাখো ।
– এমন কেন করতেছেন ।
– বললাম আমায় দেয়া কথাটা রাখো ।
বেলীর তখন পুরো শরীরটা অসার হয়ে যাচ্ছিল । আর পারছিল না সে । ইরফান ঠিকই বলেছিল সকাল বেলা ।
– আপনি ঠিকই বলেছেন , এর যন্ত্রণা মা’রের যন্ত্রণা থেকেও বেশি ।
ইরফান তখন আরও শক্ত করে ধরে বেলীকে । আর কোন কথা হয় নি তাদের মাঝে । ইরফান বেলীকে তার দিকে ফিরিয়ে নেয় । তারপর কোলে তুলে নেয় , ইরফানের কোলে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার চড়লো সে ।
– আপ,,,,,,,,
– হুসসসস , চুপ কিছু বলো না ।
-,,,,,,,,,,,,,
ইরফান বেলীকে বিছানায় শুইয়ে দেয় । বিছানায় থাকা লুডুর ঘর সমেত গুটি গুলো নিচে ফেলে দেয় ইরফান । লাইট অফ করে দেয় সে । বেলী তখনও নিশ্চুপ দৃষ্টিতে দেখতে থাকে ইরফানকে । ইরফানও বেলীর পাশে শুয়ে এক হাত দিয়ে নিজের মাথা ঠেকিয়ে বেলীকে দেখতে থাকে । বেলীর গাল গুলোকে আলতো করে ছুয়ে দেয় সে । ইরফানের ছোয়ায় বেলীর পুরো শরীরটা শীতল হয়ে যায় । শরীরের লোমগুলো শির শির করছে বেলীর । বেলী তখন হুট করেই ইরফানকে প্রশ্ন করে বসে ,
– পুরুষের ছোয়া কি এমনই হয় ?
বেলীর এমন প্রশ্নে ইরফানের ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি আসে ।
– এ ছোয়া অনেক মারাত্মক , এই ছোয়া একদম সোজা কলিজায় গিয়ে আঘাত করে ।
– আমার নিঃশ্বাসটা বন্ধ হয়ে যাবে হয়তো ।
– বন্ধ হওয়া এত সহজ না ,
– আমায় ছুয়েন না ,
– তাহলে ভালো থাকবে তো ?
– জানি না ।
– তাহলে আরেকটু ছুয়ে দেই ,
ইরফান তার হাতটা বেলীর গাল থেকে নামিয়ে বেলীর গলায় নেয় । তখনই বেলীর চোখের কোণ দিয়ে এক ফোঁটা পানি পড়ে যায় । ইরফান সেই পানি দেখে বেলীর একদম কাছে এসে বেলীর কপালে আলতো করে এক চুমু দিয়ে দেয় । ইরফান বেলীর নাকের মাঝ বরাবর আরেকটা চুমু দেয় । ইরফান তখন বেলীর হাতের আঙুলের ভাজে নিজের আঙুলগুলো দিয়ে আঁকড়ে ধরে বেলীকে । বেলীর মন তখন একটা কথাই বলছিল ,
– সময়টা থেমে থাক , মুহুর্তটা থমকে যাক । আমার আর তার মাঝে ভালোবাসার বাঁধনটা এভাবেই আটকে থাক ।
.
.
চলবে…………………