তবুও তোমায় ভালোবাসি পর্ব ৫+৬

#তবুও ভালোবাসি তোমায়
#লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব -৫

বলেই হাতে থাকা উড়নাটা ফ্যানে ঝুলিয়ে দিতেই লক্ষ্য করলাম রাস্তা থেকে একটা বিকট কান্নার আওয়াজ আসতেছে। আমি কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেলাম। ভাবতে লাগলাম এত বিকট আওয়াজে কারা কাঁদছে। কান্নার উৎসটা খেয়াল করে বুঝলাম কান্নাটা রাস্তা থেকে আসছে।আমি উড়নাটা ফ্যানে ঝুলিয়েই ঘরের জানালা দিয়ে রাস্তার দিকে তাকালাম। খেয়াল করলাম একটা খাটিয়ায় কাফনের কাপড় মুড়িয়ে একটা লাশ রাখা হয়েছে। সেখানে তার প্রিয়জনরা হাহাকার করে কাঁদছে। বিষয়টা লক্ষ্য করতেই আমার মায়ের মুখটা আমার সামনে ভেসে উঠল।ভাবতে লাগলাম আমি যদি এখন মারা যাই আমার মা ও তো এভাবেই কাঁদবে। একজনকে আমি ৬ বছর যাবত ভালোবেসে হারিয়েছি বলে আমার এত কষ্ট হচ্ছে তাই নিজেকে শেষ করে দিতে চাচ্ছি। আর এখন যদি আমি মারা যাই আমাকে হারিয়ে তো মায়ের আরও বেশি কষ্ট হবে। কারণ আমার মা তো আমাকে দীর্ঘ ২৩ বছর যাবত ভালোবাসে। কিসের জন্য মরব আমি? এটা ভাবতেই যেন ভেতরটা কেঁপে উঠল। ভাবতে লাগলাম যার জন্য আমি মরব সে তো বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারবে না। দুই, তিনদিন তার মনে নাড়া দিবে হয়তো, কিন্তু একটা সময় পর সেও ভুলে সংসার করা শুরু করবে। তবে আমি কী জন্য আর কার জন্য মরতে যাচ্ছি?

কথাগুলো মনে বাজতে লাগল। বারবার ভাবতে লাগলাম আমি মরে গেলেও আমার তো কোনো লাভ নেই। পরকাল আছে। সেখানে গিয়েই বা কী জবাব দেবো? এখানে তো কষ্ট পাচ্ছি বলে মরতে চাচ্ছি। কিন্তু পরকালে তো কষ্ট পেলেও মরার উপায় থাকবে না। কারণ সে টা তো দীর্ঘস্থায়ী জীবন। সে জীবনের তো মৃত্যু নেই। তাহলে কেনই বা একটা ছেলের জন্য এত বড় বিপদের দিকে নিজেকে ঠেলে দেবো?

ভাবতেই যেন গা টা শিউরে উঠল। ফ্যানের কাছে গিয়ে ঝুলন্ত উড়নাটা তাড়াতাড়ি করে খুললাম। তারপর দৌঁড়ে মায়ের রুমে গেলাম। মা তখন শুয়ে ছিল। কোনো কথা না বলেই মাকে জড়িয়ে রাখলাম কিছুক্ষণ। মা বুঝতে পারছিল আমি কষ্ট পাচ্ছি। আর কেন পাচ্ছি সেটাও মায়ের অজানা না।মা আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল

– মা রে তুই কাঁদলে আমার কলিজাটা ফেটে যায়।তুই কাঁদিস না। তোর কান্না দেখলে আমার কষ্ট হয়। একদিন তোর ভালো সময় আসবে। তোর কষ্ট টা আমি বুঝি। তবে তোর কষ্টও একদিন কমে যাবে। সব ঠিক হয়ে যাবে দেখিস।

মায়ের কথাটা শোনে মাকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ কাঁদলাম। এখন যেন একটু হালকা লাগছে। নিজেকে বেশ সামলে নিলাম। মায়ের কাছ থেকে এসে আয়ানকে একটা কল দিলাম। কল ধরার সাথে সাথে নিজের মনে থাকা সব রাগ যেন গালি দিয়ে বের করলাম। আয়ান আমার গালি শোনে কলটা কেটে দিল। আয়ানকে একটা মেসেজ দিলাম। যে আয়ানকে সবসময় করুণা করে মেসেজ দিতাম আজকে সে আয়ানকেই হাজার গালি দিয়ে মেসেজ দিলাম। নিজের ভেতরে বেশ শান্তি লাগছে এবার। নিজের শান্তিটা যেন প্রখর হচ্ছে। নিজেকে সামলে নিয়ে ঘরে থাকা তার দেওয়া সব স্মৃতি একে একে মুছে দিলাম। আগে তাকে ভুলার চেষ্টা করতাম না এখন তাকে নিজের শান্তির জন্য না হোক নিজের মায়ের শান্তির জন্য হলেও ভুলতে চাই।

সেদিন রাতে ঘুম হচ্ছিল না। মনে মনে আয়ানের কথায় বাজতে লাগল। কিন্তু আমিও হাল ছাড়লাম না। যতবার আয়ানের কথা মনে হতে লাগল ততবার নিজের সাথে যুদ্ধ করতে লাগলাম। সারারাত ছটফট করতে লগলাম। বুঝতে পারলাম ঘুমানো দরকার। তাই হলকা পাওয়ারের একটা ঘুমের ঔষধ খেলাম। এবার চোখটা বন্ধ করে রাখলাম। মনের সাথে যুদ্ধ করে বুঝাতে লাগলাম আমি ভালো আছি। আমার জীবনে তেমন কিছুই হয়নি যা আমাকে কষ্ট দিতে পারে। আমার জীবনের প্রতিটা অধ্যায় আমার সেখানে কারও অস্তিত্ব ছিল না আর নেই। আমার জীবনের গত ছয় বছরের অধ্যায়ে আয়ান ছাড়াও অনেক ভালো ভালো অংশ ছিল। আমি কেন তাহলে একটা অংশ নিয়েই পড়ে আছি। বাকি অংশগুলো ভাবা শুরু করলাম। নিজেকে সামলে নিলাম।আস্তে আস্তে লক্ষ্য করলাম আমার চোখটা ভারী হয়ে আসছে। বুঝতে পারলাম আমার ঘুম আসছে। আস্তে আস্তে আমি ঘুমিয়ে গেলাম।

পরদিন ঘুম ভাঙ্গলো সকাল ৫ টায়। উঠেই সরাসরি গিয়ে অযু করে নামাজে দাঁড়ালাম। জীবনের সবচেয়ে আবেগ আর সতর্কতা নিয়ে যেন এ নামাজটা পড়েছিলাম। দোআ টা ধরে নিজের ভেতরে থাকা সকল কষ্ট আল্লাহকে বললাম। আরও বললাম

“আল্লাহ সে যদি আমার জন্য উত্তম হয় তাকে আমার জীবনে সহজভাবে ফিরিয়ে দেন আর সে যদি সত্যিই আমার জন্য না হয় তাহলে তাকে চিরতরে ভুলিয়ে দেন। যাতে করে তার নাম মুখে আনলেও আমার কষ্ট না হয়। দোষ আমার ছিল তার জন্য আমি কষ্ট পেয়েছি। তবে তার কর্মফলও তাকে ফরিয়ে দিবেন যাতে করে আমি দুনিয়ায় থেকে তার পরিণতি টা দেখতে পারি।'”

নামাজটা শেষ করে আবার বিছানায় শুয়ে হালকা ঘুমিয়ে নিলাম।ঘুম থেকে উঠলাম সকাল ৯ টায়। হাত মুখ ধুয়েই জোর করে খেতে বসলাম। খেতে ইচ্ছা করছে না। গড়গড়িয়ে চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল তবুও জোর করে খেলাম। খাওয়ার পর আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই চিনতে পারছিলাম না। চেহারার অবস্থাটা বেশ খারাপ হয়ে গেছে। চুলগুলোও শ্যাম্পু না করতে করতে আঠালো হয়ে আছে। হাত পায়ের নখ ঠিক সময় না কাটতে কাটতে বড় হয়ে গেছে।

আয়নার সামনে থেকে নিজেকে সরিয়ে হাত পায়ের নখ কাটলাম। চুলে তেল দিলাম। তারপর সরাসরি চলে গেলাম গোসলে। ভালো করে গোসল করে নিলাম। এবার আয়নায় দাঁড়িয়ে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলাম, আগের থেকে দেখতে একটু ভালো লাগছে।

তবে সে স্বস্তিটায় চিড় ধরে আয়ানের কল পেয়ে। আয়ানের কলটা ধরতে ওপাশ থেকে আয়ান বলে উঠল

– দুনিয়াতে যদি একটা মেয়ে তুমিও থাকো তবুও আমি তোমাকে বিয়ে করব না। তোমার মতো মেয়েকে আমি শুধু ঘৃনা করি। তুমি কী আমার পিছু ছাড়বে না? আমাকে শান্তি দিবে না?

আয়ানের কথার কোনো মানে বুঝতে পারছিলাম না।তাই কিছুটা শক্ত গলায় জবাব দিলাম

– তুমি আমাকে এভাবে কেন বলছো? তোমার পিছু ছাড়ে নি মানে কি? তোমার পেছনে ছিলাম নাকি কখনো যে পিছু ছাড়ব না? তাহলে এভাবে এতগুলো কথা বলতেছ কেন? তোমার কোন পাকা ধানে মই দিলাম আমি?

আমার কথাটা শোনে আয়ান আরও ক্ষিপ্ত হয়ে বলল

– আরশির সাথে আমার ঝামেলা করিয়ে তোমার লাভটা কী হলো বলো?

– আরশির সাথে তোমার ঝামেলা করেছি মানে?

– ঝামেলায় যদি না করবে তাহলে আরশি হুট করে বলল কেন যে আমার সাথে কিছুদিন সে ব্রেক নিয়ে নিজেকে সময় দিবে? নিশ্চয় তুমি তাকে কিছু বলেছ।

– আমার তো আর কোনো কাজ নেই মনে হচ্ছে। সারাদিন তোমাকে আর আরশিকে নিয়ে পড়ে থাকব। আরশি সবসময় সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। তার মনে কখন কী আসে সেটা আরশি ছাড়া আর কেউ বলতে পারবে না। তুমি বরং আরশির কাছ থেকেই জেনে নাও কেন সে এমন বলেছে। অহেতুক আমার উপর আঙ্গুল তোলা বন্ধ করো। আমি তোমাকে ঘৃনা করি। তোমার কথা শোনলে আমার গা জ্বলে। এসব ব্যাপারে আমাকে কল দিবে না দয়াকরে।

বলেই কলটা কেটে ফোনটা বন্ধ করে ফেললাম। বেশ শান্তি লাগছে মুখের উপর কথাগুলো বলে। বড় বড় নিঃশ্বাস নিলাম কয়েকটা। তারপর বই পড়লাম কিছুক্ষণ।

এভাবে কাটল কিছুদিন। বেশ ভালোই কাটল এ কয়দিন। আয়ানকে মনে পড়লেও সামলে নিতাম নিজেকে।কিছুদিন পর ভার্সিটি যাওয়ার জন্য বের হলাম।একটু সামনে এগুতেই আয়ান আর আরশিকে খেয়াল করলাম। আমি আয়ান আর আরশিকে দেখে তাদের মুখোমুখি যেন না হতে হয় তাই ফাঁকি দিয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে হাঁটতে নিলেই আরশি ডেকে উঠে বলল

– আরে আয়রা এদিকে আয়। কোথায় যাচ্ছিস?

যা ভয় পাচ্ছিলাম তাই হলো আবার আয়ান আর আরশির মুখোমুখি হতে হলো। আমি আরশির ডাকে সাড়া দিয়ে বললাম

– আরশি আমার কাজ আছে একটু যেতে হবে এখন।

বলেই যেতে নিলাম। আরশি হাতটা ধরে টেনে বলল

– একটু আয় না এদিকে।

বলেই আয়ানের মুখোমুখি দাঁড় করাল। আয়ানের চোখ বরাবর আমার চোখটা পড়ল। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছি। মনে হচ্ছে আমি আবার আবেগে পড়ে যাচ্ছি। এভাবে আয়ানের দিকে তাকিয়ে থাকলে আমার আবেগ আরও বেড়ে যাবে। তার প্রতি আবার দুর্বলতা তৈরী হবে। কথাগুলো ভেবেই আয়ানের চোখ থেকে আমার চোখ সরিয়ে নিলাম। এর মধ্যেই ঘটে গেল এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা…

চলবে?
#তবুও ভালোবাসি তোমায়
#লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-৬

এর মধ্যেই ঘটে গেল এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। লক্ষ্য করলাম আয়ানের দিক বরাবর একটা গাড়ি এগিয়ে আসছে। এদিকে আরশি ফুটপাতের উপর দাঁড়িয়ে আছে আর আয়ান রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলছে। আমি বুঝতে পারছিলাম না আমার কী করা উচিত? আয়ানকে ধাক্কা দিয়ে দূরে ফেলে দেবো নাকি নিজেই সামনে থেকে সরে পড়ব। ভাবার সময়টা বেশি পেলাম না। কেন জানি না আয়ানের ক্ষতিটা চাইতে পারলাম না। আয়ানকে জোরে ধাক্কা দিয়ে আরশির উপরে ফেলতেই গাড়িটা আমার পা বরাবর চলে গেল। কারণ আয়ানকে ধাক্কা দিয়ে নিজে উঠার সুযোগ আর পাইনি। ডান পা সবে ফুটপাতের উপর দিছিলাম আর বাম পা রাস্তায় রয়ে যায়। ফলে বাম পায়ের উপর দিয়ে গাড়িটা চলে যায়। এতটা আঘাত পেয়েছি গাড়ি যাওয়াতে যে জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলাম। পা টা নড়াতে পারছি না। সারা শরীর কাঁপছে। চোখগুলো ঝাঁপসা হয়ে যেতে লাগল। মনে হচ্ছে আমার জীবনের ইতি এখানেই ঘটছে। আমি হাতটাও নড়াতে পারছি না। ঠোঁটগুলো শত যুদ্ধের পর নাড়িয়ে কথা বলতে পারছি না। ঝাঁপসা চোখে তাকিয়ে দেখলাম আয়ান আমার পাশে বসে আছে। আমার এক হাত আয়ান, আরেক হাত আরশি ধরে আছে। তীব্র যন্ত্রণায় আমি কাতরাচ্ছি। আয়ান আরশির হাত থেকে আমার হাতটা ছাড়িয়ে বুকে জড়িয়ে নিল। এদিকে আমার মনে হচ্ছে আমি আবার আয়ানের প্রতি দুর্বল হয়ে গেলাম। মনে হচ্ছে প্রিয়জনের বুকে মাথা রেখে কত শান্তি। শত যন্ত্রণা যেন মুহুর্তেই ভুলে গেলাম। ঝাঁপসা ঝাঁপসা চোখে আয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখলাম আয়ান কাঁদছে। এর আগে আয়ানকে একবার কাঁদতে দেখেছিলাম। ছয় মাস আগে যখন আয়ান আমার গায়ে হাত তুলেছিল সেদিনও এভাবে কেঁদেছিল আর আজকেও এভাবে কাঁদছে। আমি আয়ানকে বুঝতে পারি না আয়ান কী চায়? এর মধ্যেই পায়ের ব্যথায় কাতরাতে কাতরাতে শরীরটা নেতিয়ে পড়ল। আয়ানের হাতটা তখন আমার হাত দুটোকে মুঠো করে ধরে আছে। আমি ক্লান্ত চোখে আয়ানের দিকে তাকাতেই কী হলো জানি না।

চোখ খুলে দেখলাম আমি হাসপাতালে শুয়ে আছি। আয়ান আমার পাশে বসে আছে। আরশি কোথাও নেই। আমার পা টা প্লাস্টার করা। উঠার মতো শক্তি নেই। মাথাটা আর শরীরটা ঝিমঝিম করছে। ভেবেছিলাম আয়ান হয়তো আমাকে হাজারটা কথা শোনাবে। কিন্তু আয়ান আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার চোখে জল ছলছল করছে। বুঝতে পারছিলাম তার ভেতরে আমার অবস্থানটা আঘাত দিয়েছে।আয়ান আমাকে তার দিকে এভাবে তাকাতে দেখেই হালকা গলায় বলল

– আয়রা তোমার মাকে কল দিয়েছি। হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবে। আমি এর আগেই চলে যাব। আমার সাথে তোমার দেখা হয়ে এমন হয়েছে এটা জানলে তোমার পরিবার রাগ করে বসতে পারে। তুমি চাইলে সত্যিটাও জানাতে পারো চাইলে গুছিয়ে অন্যকিছু ও বলতে পারো। আরশিকে পাঠিয়ে দিয়েছি। কারণ আরশি থাকলে ও বারবার আমার কথা বলবে আর তোমার পরিবার সেটা বুঝতে পারবে। আর আরশিও তোমার আর আমার ব্যাপারটা জানতে পেরে যাবে। আরশি আমাকে অনেক ভালোবাসে। তোমার সাথে যা হয়েছে ভুলে গিয়ে আমাকে ক্ষমা করে দিও। আর আমি আরশিকে নিয়ে সুখে থাকতে চাই। ওর প্রতি যতটা পারি লয়াল হয়ে যাব। আমি আর কাউকে কষ্ট দেবো না। আর আরশিও একদম আমার মনের মতো পারফেক্ট। আমাদের সম্পর্কটাকে তুমি নষ্ট করেছ। তোমার এ পাগলামি গুলো সবসময় তোমার প্রতি থাকা মায়া গুলো শেষ করে দিত। তাই আজকে তোমার এ হাল।

আয়ানের কথাগুলো শোনে বুকে খুব কষ্ট হতে লাগল। নিজের কষ্টটা দমিয়ে আয়ানকে জবাব দিলাম

– আমার পাগলামি গুলো তো ছিল তোমার জন্য। সারাদিন অবহেলা করতে। তোমার অবহেলা পেয়ে সবসময় ভয়ে থাকতাম তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাও কিনা। অসহনীয় কষ্ট লাগত। মাঝে মাঝে তোমার দেওয়া কষ্টগুলো সহ্য করতে না পেরে চিল্লায়ে চিল্লায়ে কাঁদতাম। তুমি সেটা শোনেও হাসতে। আমি শুধু কাঁদতাম। আমাকে যে যন্ত্রণা দিয়েছ সেটা কতটা ভয়ানক ছিল উপলব্ধি কী করতে পার না? জানো সে যন্ত্রণা টা কতটা প্রখর ছিল। মানসিক ভাবে ব্যহত হয়ে গেছিলাম আমি। কি করতাম বুঝতে পারতাম না। সারাক্ষণ যন্ত্রণা আমাকে গ্রাস করত। মনে হত এ জীবনে কিছু নেই আমার। তোমার হালকা সহানুভূতির অপেক্ষায় ছিলাম। সারাদিন কষ্টে বুক ভাসাতাম। আমার শত পাগলামির পেছনে তুমি ছিলে। আমার পর্যায়ে একবার পড়ে দেখো কতটা ভয়ানক জীবন পার করেছি আমি। আছো তো খুব মজায়। যা চেয়েছ পেয়ে গিয়েছ। না পাওয়া তো নেই তোমার। একটা সময় হয়তো আল্লাহ তোমাকে সবটা বুঝিয়ে দিবে। ছয় বছরের ভালোবাসা ঠকিয়ে ছয়মাসের ভালোবাসায় কতটা লয়াল হতে পারবে বলো তো? জীবনের এ পর্যায়ে তুমি নিজেকে সবচেয়ে সুখী দাবি করছো। তবে দুঃখ আসার সময় এখনও বাকি আছে। সবে বয়স ২৬ পার করতেছ। আরও সময় বাকি। ইহকাল আছে পরকাল আছে। আমার কর্মফলের শাস্তি আমি পাচ্ছি। তবে তোমারটা এখনও বাকি। ভালো থেকো দোআ করি। তবে আমার ভেতরের রুহ টার যে কষ্ট হচ্ছে সেটা আমি দমাতে পারি না। আমার আত্মার অভিশাপ লেগে গেলে জীবনে শান্তি পাবে তো? আমার মায়ের চোখের জল ও তো আল্লাহর আরশে পৌঁছে গেছে সেখানে তুমি শান্তি পাবে তো। ভালো থাকো। আমার ভুল আর তোমাকে ধরতে হবে না। আমি বাবা,মাকে কিছু একটা বুঝিয়ে নেব। বুঝতেই দেবো না তোমার সাথে আমার কথা হয়েছে।তুমি এখন চলে যেতে পারো। আরশিকে নিয়ে সুখে থাকো।

আয়ান আমার কথায় একদম নির্বাক। কোনো কথা না বলে আস্তে করে উঠে চলে গেল। আয়ান চলে যাওয়ার পর হুহু করে কেঁদে উঠলাম। হায়রে পাগলামি গুলো কার জন্য করেছিলাম আমি। কত কষ্টটাই না পেতাম। তবুও বেহায়ায় মতো তাকে আকড়ে ধরে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতাম। আর আজকে সব হারিয়ে আমি নিঃশ্ব। কেন জানিনা বিশ্বাসঘাতক গুলো অনেক সুখে থাকে। এসব ভেবেই অনেক কাঁদতে লাগলাম। কাঁদতে কাঁদতে যেন চোখের জল ও শুকিয়ে গেল। এর মধ্যেই মা আসলো। মা এসেই জিজ্ঞেস করলো

– কী হয়েছে তোর? কীভাবে এক্সিডেন্ট করলি?

আমি হালকা দম নিয়ে বললাম

– রাস্তায় হুট করে গাড়ি তুলে দেয় মা। এত চিন্তা করো না। আমি ঠিক আছি। বেড রেস্টে থাকতে হবে আমাকে।

– দেখে শোনে হাঁটবি না। আর কত কষ্ট তোকে আল্লাহ দিবে। সহ্য করিস কীভাবে রে?

বলেই মা হুহু করে কেঁদে উঠল। আমি মায়ের হাতটা ধরে বললাম

– মা আমি ভালো আছি। তুমি শুধু শুধু এমন করছো। আমাকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করো।

মা আমার কথায় একটু শান্ত হয়ে বলল

– তোকে হাসপাতালে কে এনেছে?

– এক লোক এনে দিয়ে গেছে মা। উনার কাজ আছে চলে গেছে। তুমি এখন ডাক্তারের সাথে কথা বলে আমাকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করো।

মা আর কোনো কথা বলল না। ডাক্তারের সাথে কথা বলে আমাকে বাসায় নিয়ে আসলো। বাসায় এসে শুয়ে শুয়ে আগের কথা ভেবে আবার কষ্ট পেতে লাগলাম। এ কয়দিনে নিজেকে যতটা শক্ত করে নিয়েছিলাম আজকের ঘটনাটা ঠিক ততটাই দুর্বল করে দিয়েছে। নিজের ভেতরটা পুড়ে গেছে। এ পুড়া ছারখার জীবনটা যেন নিজেকে আরও কষ্ট দিচ্ছে। যা হচ্ছে সবকিছুই খারাপ হচ্ছে। এমন খারাপ অধ্যায়ে পা দেবো কখনো বুঝতেই পারিনি। জীবনের সব হারিয়ে আজকে একদম নিঃশ্ব হয়ে গেছি।

এসব ভাবতে ভাবতে মাথাটা ঘুরে গেল। সারা শরীর হুট করেই কাঁপতে লাগল। মাথাটা প্রচন্ডরকম ব্যাথা করছে। মাকে ডাকতে লাগলাম। মা কাছে এসে মাথায় হাত বুলাচ্ছে আর কড়া ডোজের একটা ঔষধ দিল আমাকে। খাওয়ার পর ব্যথাটা কমে গেল। সেদিন রাতে অনেক ঘুম হলো। ঘুম ভাঙ্গলো সকাল ১০ টায়। ঘুম থেকে উঠার পর বুঝতে পারলাম আমার শরীরে অনেক জ্বর এসেছে। এর মধ্যেই লক্ষ্য করলাম আরশি আমার পাশে বসে আছে। আরশিকে দেখে অবাক হয়ে গেলাম। কিছুটা ভয় ও কাজ করছিল কারণ মা যদি আরশিকে আয়ানের কথা কোনোভাবে বলে তাহলে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে। ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম

– তুই এসেছিস কখন?

কথাটা জিজ্ঞেস করতেই ফোনটা বেজে উঠল। ফোনটা হাতে নিয়েই দেখলাম আয়ান কল দিয়েছে। আয়ানের কলটা ধরব কী ধরব না বেশ দ্বিধায় পড়ে গেলাম। এর মধ্যে আরশি ফোনটা টেনে বলল

– কী রে কে কল দিয়েছে?

বলেই ফোনটা টেনে নিয়ে গেল। আরশি আয়ানকে কল দিতে দেখে আমার দিকে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলল

– ওহ! আয়ান কল দিয়েছে। কলটা ধরে লাউড দে তো। দেখি আয়ান কী বলে।

আমি ভয়ে ভয়ে কলটা ধরতেই ওপাশ থেকে আয়ান বলে উঠল…

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here