তুমিময় পর্ব ৩

#গল্প-তুমিময়
#Aysha_khan
#পার্ট ৩
আদনান ভাইয়ের রুম থেকে তার বলা কথা গুলো ভাবতে ভাবতে বের হচ্ছিলাম। তখন আহি সহ হুরমুর করে সব কাজিন রুমে ঢুকে আমার আহি আমার ব্লাশ করা গাল টিপে ধরে আমি হতভম্ব! হচ্ছেটা কি এখানে? ওর চোখেও পানি। পিছনে আদৃতা আপু। আদনান ভাইয়ের ছোট বোন অনু, পাশে আহির বোন মাইশা আপু দাঁড়িয়ে! আদনান ভাইয়ের বন্ধু আশিক, প্রান্ত, অভি ভাইয়ারা দাঁড়িয়ে দরজার কোণায় তার পিছনে আয়াত ভাইয়া হায়াদ দাঁড়িয়ে এবং তাদের এক মাত্র বড় বোন পিহু আপু উজ্জ্বল মুখে আমার দিকে তাকিয়ে!

সবাই হুট করে কেন এই নির্দয় লোকটার রুমে হামলা চালিয়েছেন জানি না। হুট করেই আহি কাঁদো কাঁদো স্বরে দিগুন জোরে কান চেপে ধরে বলল,

‘ তুই সত্যি আমার ফুপ্পির মেয়ে অয়ত্রী তো? আমি আজ সন্দিহান প্রচণ্ড সন্দিহান, সব নিজ হাতে করে তুই আমাকে হলুদটা পর্যন্ত ছোঁয়াতে নিচে নামলিনা আদনান এত ডাকার পরেও? কি করে পারলি আমার এতো সুন্দর দিনটা মাটি করে দিতে? বল?’

আমি হত বিস্মিত আহির কথায়! কী বলছে কী এই মেয়ে? আমাকে আর আদনান ভাই ডেকেছেন ফাংশনে যেতে! যেকিনা আমাকে অনুষ্ঠান থেকে তাড়ানোর ধান্দায় কত কিছুই না করলো। এদিকে কান ব্যাথা নিয়েই আমি আদনান ভাইয়ের দিকে তাকালাম। এতো লোক তার ঘরে তবুও সে ঘুমের ভঙিমায় শুয়ে এই কাজটাও এই পাষণ্ডটাই পারে। আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে সে দিব্বি শুয়ে শুয়ে মজা নিচ্ছে!

‘ অয়ত্রী আহি কষ্ট পেয়েছে। এবং আমরা সকলেই কষ্ট পেয়েছি। তুমি নিচে গিয়েও কেন চলে এলে! আর এলেই যখন আদনান ডাকার পরেও কেন গেলে না!’

প্রান্ত ভাইয়ার এহেন কথায়। এবার আমি বুঝলাম ব্রেকফাস্ট টেবিলে কেউ কেন আমার সাথে কথা বলেনি। আহিতো সেই মুখ ভার করে ছিলো। ওর কষ্ট কমাতেও মনে হলো একটু প্রতিবাদ করা প্রয়োজন। এদিকে সবার মুখে একি প্রশ্ন তারা আদনান ভাইয়ের রুম ভর্তি করে এদিক ওদিক বসলেন। আদি তখনও আমার কান ছেড়ে বসছেনা। তাই পিহু আপু তাকে ছাড়িয়ে বসাতেই আহি ক্ষেপে বলল,

‘ ছাড়ো আপু ওকে বলতে হবে কেন ও নিচে গিয়েও এভাবে না বলে চলে এলো কি করে বোন হয়ে এ কাজ ও করলো? আমি এর উত্তর চাই?’

এবার আমি ঘুমের নাটক করা আদনান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে রেগে বললাম,

‘ আমাকে তোদের নির্দয় ভাই আসতে দেয়নি!’

হায়াদ এবার কক্ষাট্ট করে বলে উঠলেন,

‘ আমি জানতাম এমনি কিছু, আদনান ভাই তোমাকে নিচে যেতে দেয়নি তাইনা? ‘

এবার ভয় পেলাম। তাই কিছু বলাম না। আহি আমার এবং হায়াদের কথায় জ্বলে উঠলো। এতো সময় কেউ ভুলেও ডাকেনি আদনান ভাইকে। আহি একবার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে! আদনান ভাই এর সামনে গিয়ে আদি চিৎকার করে বলল,

‘ অয়ত্রীর উপর কী শুধুই তোমার অধিকার ভাই? ও কি আমার বোন না ও কেন থাকবেনা আমার মেহেদীতে? আমার উত্তর চাই কেন দিলেনা ওকে আসতে? তুমি কি করে পারলে এটা?’

আমি সহ সবাই আহির কান্ডে হতবিহ্বল! কেউ ঘুনাক্ষনেও বুঝিনি ও এমন করে বসবে। আদনান ভাই তার সাথে কেউ চেঁচামেচি করুক সেটা একদম পছন্দ করে না। বড় মামা পর্যন্ত নরম স্বরে তার সাথে কথা বলে সেখানে আহি বাসার পুচকে। আর ও এই প্রথম এত দূর সাহস দেখাচ্ছে আদনান ভাইয়ের থেকে উত্তর চাইছে তাও চিৎকার করে। শুধু মাত্র আমার জন্যে মেয়েটা সত্যি আমি বলতে পাগল। কাজিনদের মধ্যে আমি সব থেকে সবার পছন্দের কেন সেটা জানিনা শুধু জানি ওরা আমাকে জান দিয়ে ভালোবাসে আগলে রাখে হ্যাঁ আদনান ভাইয়ের থেকেও বাঁচিয়ে রাখতে চেষ্টার ত্রুটি রাখেনা। ভাবতে ভাবতে চোখ দুটো জ্বল জ্বল করে উঠলো। আমি দ্রুত গিয়ে আহির হাত চেপে ধরলাম। বাকি সবাই ওকে শান্ত হতে বলছে কিন্তু আহি যেন আজ আগুনে পরিনত হয়েছে। যে কেউ এই মুহূর্তে ওকে দেখলে বলবে আসলেই মেয়েটা আদনান শুভ্রের কাজিন!

আমার যখন আহিকে নিয়ে ব্যাস্ত। আদনান ভাই হুট করেই শোয়া থেকে উঠে বসলেন! সোজা আমার দিকে তাকিয়ে শীতল কিন্তু শক্ত চোয়ালে বলে উঠলেন,

‘আমি রাতে তোর রুমে নক করিনি অসংখ্য বার?’

উনি রেগে গেছেন বুঝতে বাকি নেই। আমি ফ্যাল ফ্যাল করে তার দিকে তাকিয়ে মাথা দুলালাম। সেটা দেখে আহি রেগে বলল,

‘ ভাই আমি তোমার বোন বলে মিথ্যে বলবোনা তুমি সব সময় আপুকে ভয় দেখাও! এমন কেন? কই আমাদের সাথে তো এমন করোনা? ‘

আমি শক্ত করে আহির হাত খাঁমচে ধরলাম। যার অর্থ চুপ কর আর আমার কপালে শনি বারাস না। তুই তো চলে যাবি আমাকে কুয়োয় ধাক্কা দিয়ে ফেলে কেন যাবি? আদনান ভাই ভ্রু কুঁচকে আবারও বললেন,

‘ অয়ত্রী আমি তোকে ভয় দেখাই?’

আমি বোবার মতো আবারও মাথা নাড়ালাম দ্রুত! আদনান ভাই ভ্রু নাচিয়ে আহির দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘ আমাকে মিথ্যে অপবাদ দিতে বোন হয়ে তোর বিবেকে বাধলোনা? আমি ওকে ডেকেছি ও যদি না বের হয়। নাক ডেকে ঘুমিয়ে পরে তাতে আমার দোষ কী? আমার তো মনে হয় যার জন্য আমার সাথে বেয়াদবি করছিস সে তোর থেকে বেশি ঘুমকে ভালোবাসে!’

উপস্থিত সবাই মিটমিট হাসছেন। আহি কটমট করে আমার দিকে একবার তাকিয়ে রুম ত্যাগ করলো। বাকি সবাই হু হা করে হেসে উঠলো। কিভাবে আমার অসহায়তার মজা নেওয়া হচ্ছে দেখে আমি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে! করুণ চোখে আদনান ভাইয়ের দিকে তাকাতেই সে আমাকে চোখ টিপ মারলেন। রেগে রুম থেকে বেরুনোর সময় দেখলাম আদৃতা আপু আমার দিকে এখনও রেগে তাকিয়ে মনে হচ্ছে মেরে ফেলবে আমাকে! আমি রেগে ছিলাম বলে হুদ্দাই মুখ ভেঙচিয়ে বের হয়ে গেলাম তার রুম থেকে। পিছনে আদৃতা আপু বের হলো। রুমে পিহু আপু অনু আপু আর মাইশা রয়ে গেলেন। সাথে পান্ত ভাইয়া আশিক ভাইয়া অভি ভাইয়া। আয়াত, হায়াদ এক সাথে কিছু একটা বলে হু হা করে হাসছিলেন! সেটা কি আমি বুঝলাম না।

তার আগেই আমি আহির রুমের দিকে ছুটে চলে গেলাম। কিন্তু এই মুহূর্তে আদনান ভাইয়ের রুমে যে কটা আছে সব গুলো লুচ্চামিতে পি এচ ডি প্রাপ্ত! আস্ত বজ্জাত সব গুলো। এদের পাশে অপরিচিত কেউ বসলে লজ্জায় জ্ঞান হারাবে তাতে আমার কোনও সন্দেহ নেই!

আহির রুমে ঢুকেই দেখলাম ও কাঁদছে আর এক হাতে মেহেদীর দিকে তাকিয়ে আছে। রুমে এক কোণায় পরে থাকা রাতে মেহেদী ঢালা থেকে একটা মেহেদী কোন নিয়ে নিশব্দে আমি ওর মুখোমুখি বেডে বসে হাত টেনে আমার কোলে রাখতেই ঝটকায় ছাড়িয়ে নিলো। চিৎকার করে বলল,

‘ আমার কারোর দোয়া চাই না। দিয়ে দেওয়ার হলে রাতেই আসতি!’

আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম ওকে কী করে বলি? নির্দেয় লোকটার আসল কাহিনী যদিও আহি সবি বুঝেছে! তাই তো আমার উপর রেগে আমি কেন কিছু বললাম না আদনান ভাইকে! কিন্তু তাকে বলে যে কিছুই হতো না সেটা কি করে বলি আহিকে? আমি আবার ওর হাতটা টেনে নিজের কোলে রেখে মিনতির স্বরে বললাম,

‘ ঠিকাছে তুইই আমাকে দোয়া কর। দিতে দে আমাকে! ‘

এবার হাত নরালোনা আহি। চুপচাপ ফ্যাচ ফ্যাচ করতে লাগলো! ফর্সা মুখ ওর লাল হয়ে গেছে কাঁদতে কাঁদতে। আমি ওর এই অবস্থা দেখে করুণ স্মিত কণ্ঠে করে বললাম,

‘ প্লিজ কাঁদিস না। তুই তো সবি জানিস তবুও এই অহেতুক জেদ কেন করছিস!’

আহি আমার দিকে তাকালো, রুক্ষ কণ্ঠে বলল,

‘ তোমার মনে হয় না কাল ভাই বাড়াবাড়ি করেছেন! ভাই জানে তুমি আমার কত কাছের। সেই তুমি একি বাড়িতে থেকে! আমার মেহেদী অনুষ্টানে নেই এটা কেমন হলো।আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। কখনও ক্ষমা করবোনা ভাইকে! ‘

আমি আর কিছু বলাম না। আহি এখন ভীষণ রেগে। তাই সব জেনেও রাগে সব ভুলে যাচ্ছে। যে আদনান ভাই কারো রাগের পরোয়া করেনা। তাই উনার উপর রাগ করা বোকামি ছাড়া কিছুই না! যতটা সম্ভব ওকে বুঝিয়ে কান্না থামালাম। তারপর বড়মা এসে হলুদের গোসলের জন্য ওকে কুচকুচে হলুদ শাড়ি পরিয়ে নিচে নিয়ে গেলেন। একদম হলুদ পরি লাগছিলো ওকে। গোসলে পুরোটা সময় আমি ওর পাশে ছিলাম। সবাই ওর কান্নার কারণ ততক্ষণে যেনে গিয়েছে তাই আমাকে প্রথমেই দিলো ওকে হলুদ ছোঁয়াতে। আমি হলুদ ছোঁয়াতেই আহির মুখে হাসি ফুটলো। রাগ,জেদ ভুলে গেলো। আমি মনে মনে হাসলাম। এই ভাই বোন গুলো আস্তো জেদি! মনে মনে বোনের ভালোবাসা মনটা একদম ফুরফুরে হয়ে গেলো। কালকের জন্য আমার মনেও একটা সুক্ষ্ম কষ্ট ছিলো। সেটা আহির হাসি আর আমার জন্য ভালোবাসা দেখে চলে গেলো।

তারপর হলুদ লাগানো নিয়ে হইচই পরে গেলো বাগান জুরে। সেই হইচইয়ে কোথাও আদনান ভাইকে দেখলাম না। আয়াত ভাই আমার দিকে হলুদ পানি ছুড়লেন আচমকাই। সবাই যখন হেসে কুটিকুটি আমিও কম যাইনা এক গাদা হলুদ হাতে নিয়ে উনার মুখে মেখে দিলাম। আমার দেখা দেখি। বাকি সবাই সেই মহান কাজে যোগ দিলেন। অতঃপর উনা সেই বিভৎস রকমের ফেইস দেখে আমি খিলখিল করে হেসে উঠলাম। ঠিক তখন হঠাৎ কী মনে করে ছাঁদে তাকাতেই দেখলাম আদনান ভাই সেই অদ্ভুত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তার উদাম শরীরে এক হাত জুরে ট্যাটু গুলো কিছুটা দেখা যাচ্ছে। দুপুরের তীক্ষ্ণ রোদের উত্তাপে তার ফর্সা মুখ পরায় রুক্তিম হয়ে গিয়েছে। কেন যেন বুকটা কেঁপে উঠলো। উনার এই দৃষ্টি আমাকে চিৎকার করে বলে উনি আমাকে ভালোবাসে অতিরিক্ত সেটা। কিন্তু উনার ব্যাবহার আমাকে বুঝিয়ে দেয় উনি ঠিক আমাকে কতটা অপছন্দ করেন কিন্তু আসলেই কি তাই?

নাকি তার মধ্যেই লুকিয়ে আছে আরও অজানা সত্য? আমার সাথে করা তার ব্যাবহারের সত্য? কিছুই জানিনা আমি শুধু জানি আমি নিজেও অদ্ভুত যন্ত্রণা ভুগছি!

চলবে!

“ঈদ কাল তাই আজ হয়তো ছোট হয়ে গিয়েছে তার জন্য দুঃখিত। কাল হয়তো গল্প দিবোনা ব্যাস্ত থাকবো তাই। পরশু যথা সময়ে গল্প পেয়ে যাবেন।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here