#গল্প-তুমিময়
#Aysha_khan
#part 4
আহিকে বাসরঘরে ঠিকঠাক রেখে যে যার মতো ক্লান্ত শরীর নিয়ে রুমে যাচ্ছিলাম। রুমে ঢুকবো সেই মুহূর্তে কেউ হাত ধরলেন। আমি জানি ইনি কে। আদনান ভাই ছাড়া কেউনা। ক্লান্ত সাথে করুণ চোখে পিছনে ফিরে তাকাতেই উনার হাস উজ্জ্বল মুখ দেখে থমকে গেলাম। আদনান ভাই সুন্দর তেমনি তার হাসি মাত্রাধিক সুন্দর কিন্তু কথা হলো ছেলের হাসিও এতো সুন্দর হতে হয়? আশ্চর্য। যাইহোক উনি চাপা স্বরে ফিসফিস করে বললেন,
‘এখনে একটা স্টল আছে অত্যাধিক মজার ফুচকা খেতে পাওয়া যায়। খেতে চাইলে এখুনি….!’
তার কথা শেষ না হতেই আমি দ্রুত মাথা দুলালাম। অতঃপর উত্তেজিত কণ্ঠে বললাম,
‘একদম লোভ দেখাবেন না! রাত ১ টায় এই মফস্বল শহরে ফুচকা কোথাও পাওয়া যাবেনা। আপনি নিশ্চয়ই ছাঁদে যাওয়ার জন্য শাস্তি দিতে চাইছেন আমাকে ? প্লিজ আমি ক্ষমা চাইছি তো সরি সরি সরি প্লিজ!’
আদনান ভাই আমার কথা কানেও তুললেন না বরং চোখ বুজে কান পরিষ্কার করার মতো করে কানে আঙুল দিয়ে নাড়াতে লাগলেন। অতঃপর আমি চুপচাপ হেটে সামনে এগুতে লাগলাম। নির্দয় লোকটার চালাকি আমি বেশ বুঝতে পারছি কিন্তু কিছুই করতে পারছিনা। হারামি তোর বৌ পালিয়ে যাক।
‘ আমাকে গালি দেওয়া হয়ে গেলে। এইসব আবর্জনা স্তূপ মুখ থেকে কিছুটা পরিষ্কার করেনে প্লিজ। বিচ্ছিরি লাগছে!’
হঠাৎ এহেন কথায় পিলে চমকে উঠলো। শেষের কথাটা মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ সরাসরি পৌঁছে হৃদয়ে আঘাত করে বসলো। যার জন্য সাজলাম সেই বিচ্ছিরি উপাধি দিয়ে দিলো৷ আঘাত পাওয়ারি কথা তাও আমার মতো সোফট হার্টের মানুষের তো কথাই নেই! চুপসে যাওয়া মন নিয়ে হেটে যেতে যেতে লিপস্টিক মুছে নিলাম। আর কিছু করলাম না তাতে আবার ভূত উপাধিতেও উপাধিত হতে পারি কে জানে? হেটে হেটে তার পিছু পিছু চলছি কি আশ্চর্য উনি মেইন গেটের বাইরে গিয়েও হেটেই চলেছে। এদিকে আমার পা চলছে না। আজ আহির বিয়ে ছিলো। বিদায়ের কষ্ট না থাকলেও। দৌড় ঝাপে খুব ক্লান্ত সবাই। এখন তো যে যার মতো ঘুমিয়ে পরেছে আর আমাকে। অকর্মাটা এভাবে হাটাচ্ছে। আদনান ভাই একটা কাজও করেনি। শুধু বড়বড় কিছু আর্টিস্ট নিয়ে এসেছিলেন। ঘর বাড়ি সাজাতে। আর আমরা বোনরা টানা ১ মাস ধরে খাটছি তাও অল ক্রেডিট পাচ্ছে আদনান ভাই সবাই ডেকোরেশন এর জন্য প্রশংসা করছেন উনার। আচ্ছা উনি করেছেন টাকি তাই আমি বুঝলাম না কিছু লোক এনে হাজার প্রশংসা কুড়িয়েছেন এটাই। গাঁ জ্বালা করছিলো। আমাদের বোনদের কিন্ত হজম করা ছাড়া কিছুই করার নেই তো চাই চুপচাপ গিলছি মানে হজম করছি!
কিছু সময় হাটার পর গতি কমিয়ে হাপিয়ে গিয়ে বললাম,
‘ আদনান ভাই আর পারছিনা!’
উনি প্রায় সঙ্গে সঙ্গে বলল,
‘ আমার সাথে কথা বলবে না ভেবেছিলে! এতটুকু শাস্তিতো প্রাপ্য তাই না?’
আপনারা খেয়াল করেছেন। আদনান ভাই আমাকে তুই তুমি দুটোয় বলেন। আসলে আমার সাথে একা থাকা কালিন উনি আমাকে তুমি করেই বলেন। আর নাহলে তুই ভীষণ আশ্চর্য হই আমি কৌতূহল ও জাগে জানার কেন এমন কিন্তু উত্তরের কোঠা শূন্য এতবছর ধরেই। উনার কথার পিঠে বললাম,
‘ এবার বাড়ি চলে যাই শাস্তি তো শেষ! ‘
আদনান ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,
‘ আমার থেকে শাস্তি পেতে দেখছি তোমার খুব ভালো লাগে?’
আমি মেকি হাসলাম উত্তরে কিছু বললাম না। উনি অদ্ভুত হাসলেন আমার হাসির পিঠে। ঠিক তখন প্রান্ত ভাইয়া গাড়ি নিয়ে এলেন পাশের সীটে পিহু আপু বসে। বেশ অবাক হলাম আমি পিহু আপুকে দেখে আপু একটু লজ্জা লজ্জা পাচ্ছে আদনান ভাইকে দেখে। আদনান ভাই সেদিকে পাত্তানা দিয়ে আমাকে বললেন,
‘ গাড়িতে উঠ!’
আমিও চুপ চাপ উঠে বসলাম পিছনে। আমাকে উঠিয়ে আদনান ভাই নিজেও উঠে বসলেন প্রান্ত ভাইয়া গাড়ি স্টার্ট দিলো। পিহু আপুকে দেখলাম আমারা বসতেই আপু কাচুমাচু ভাব বেরে গেলো। আমি মাথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রান্ত ভাইয়া পিহু আপুকে বারবার দেখছি। ঘাপলা লাগছে বেশ। সত্যি বলতে আমি বিস্মিত তাদের মধ্যে কিছু আছে ভাবতেও। আমাকে আরও বিস্ময় করে দিয়ে আদনান ভাই বাহিরে তাকিয়েই বল উঠলেন,
‘ অয়ত্রী এত অবাক হওয়ার কিছু নেই। নেক্সট বিয়ে প্রান্ত পিহুর তুই আবার তিন মাসের জন্য শপিং করতে তৈরী হয়েনে!’
আদনান অতি শান্ত শীতল কণ্ঠে কিছু সাধারণ বাক্য বললেও। আমি বিস্ফোরিত চোখে তার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম। আদনান ভাইয়ের নির্লিপ্ততায় প্রকাশ করে উনি সব জানতেন। আমি এক হাত হাঁ করে পিহু আপুর দিকে তাকিয়ে। সে মুখ লুকাতে ব্যাস্ত। গাড়িতে দুই বন্ধুর নির্লিপ্ততা এই নিয়েই। সত্যি একটা ফুচকা স্টলে গাড়ি থামলো। এত-সময় বিস্মিত আস্মিত হলেও এখন আমি মনে মনে রাগ বড্ড রাগ। তাই চুপচাপ আদনান ভাইয়ের কথা মতো সব করলাম যা উনি আমাদের বললেন। পিহু আপুর সাথে কথা বললাম না একটুও। পিহু আপু কাচুমাচু করছেন শুধু কিন্তু কিছু বলতে পারছেন না তবে বুঝছেন আমি রেগে তার উপর।
ফুচকা আসলেই বেসামাল খেলাম। প্রান্ত ভাইয়া খাওয়া শেষে পিহু আপুকে নিয়ে গাড়িতে চলে গেলেন আমি আদনান ভাই খোলা রাস্তায় হাটছি। গাড়ি আস্তে আস্তে পিছনে পরে যাচ্ছে আমাদের। আদনান ভাই আমাকে একা বের হতে দেন না কোথাও কিন্তু এভাবে হুটহাট কোথাও না কোথাও ঠিকি নিয়ে যাবে সাপ্তাহে দু এক বার। হাটতে হাটতে আদনান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘ অয়ত্রী আমি খুব খারাপ তাই না?’
আমি ফট করেই বলে ফেললাম,
‘ না আপনি খুব ভালো! ‘
আদনান ভাই নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল,
‘ নির্দয় লোকরা ভালো হয়!’
আজ কি যেন হলো আমার। তার এহেন কথায় চেঁচিয়ে উঠলাম,
‘ আপনি নির্দয় নন। কিন্তু আপনি নির্দয় লোকের অভিনয় করেন আমার সাথে। আমি জানি আদৃতা আপুকে ভালোবাসে না আপনি। শুধু শুধু আমাকে কষ্ট দিচ্ছেন। আদনান ভাই সবাই বিয়ে করে ফেলছে আমরা কবে করবো!’
আদনান ভাই আমার কথায় কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেছে সেটা আমি বুঝতে পারলাম। এবং আমি নিজেও লজ্জায় পরে গেলাম তাই দ্রুত ভাড়ি লেহেঙ্গাটা একটু উঁচু করে সামনে হাটা দিলাম। কয়েকপা যেতে আদনান ভাই বললেন,
‘ অয়ত্রী আমি তোকে কখনওই বোন ছাড়া কিছুই ভাবিনি!’
আমি দাঁড়িয়ে গেলাম পিছনে ফিরে রূঢ় কণ্ঠে বললাম,
‘ মিথ্যে কথা এটা, সত্যি এটাই আপনি কখনওই আমাকে বোনের চোখে দেখতে পারেননি! হয়তো সেটা আমাকে এখানে আনার আগ থেকেই। আপনি ফাস্ট্রেট আর জেলাসিতে সব সময় আমাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেন। কিন্তু এখন আমি কষ্ট পাইনা কারণ আপনিও আমার প্রথম অনুভূতি! ‘
আদনান ভাইয়ের ধরা পরে যাওয়া মুখ দেখে আমি কনফার্ম হয়ে গেলাম। এও বুঝলাম তিনি আমার কথা মেনে নিবেনা সহজে। শিকার করবে না উনি আমাকে ভালোবাসে বরং কষ্ট দিবে দিগুণ। আমি নিজেকে প্রস্তুত করলাম সেভাবে!
চলবে!
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন আজকের জন্য অনেক দ্রুততার সাথে লিখেছি!