“তোমার মতো একটা মেয়েকে আমি কিছুতেই বিয়ে করতে পারবো না। তুমি কি ভেবেছো আমার মা-বাবাকে হাত করে আমাকে বিয়ে করতে পারবে ?? That’s not possible. আমি তোমার মতো মেয়েদের সহ্য করতে পারি না সেখানে সারাজীবন একসঙ্গে কোনোভাবেই কাটাতে পারবো না।”
পাত্রের এমন কথা শুনে সোহার কিছুটা হলেও অপমান বোধ হলো তবে সোহা শত চেষ্টা করেও বুঝতে পারলো না ‘তোমার মতো একটা মেয়েকে’ শান এই কথাটা কেনো বলেছে। সোহার মনে প্রশ্নের দানা বইতে থাকে।সময় নষ্ট না করে সোহা ভ্রু কুচকে বলে উঠে
” আমার মতো মেয়ে মানে !! কি বোঝাতে চাইছেন আপনি ?? আমি কি এমন করেছি যে আপনি আমাকে সহ্যই করতে পারেন না !! আর আমি আপনার বাবা, মা কে হাত করতে যাবো কেনো??”
সোহার কথা শুনে শান তাছিল্যের হাসি দিয়ে বলে
” ওহ, কি করেছো, কেনো করেছো সেটাও এখন বুঝতে পারছো না ?? আমার সামনে একদম নাটক করবে না। কি ভেবেছো ?? এসব নাটক করবে আর আমি তোমাকে আবার সাধু ভেবে বিয়েতে রাজি হয়ে যাবো !! সেটা কখনোই হচ্ছে না। তুমি এক্ষনই বিয়েটা ভেঙে দেবে। তোমার মতো খারাপ একটা মেয়ের সাথে আমি কিছুতেই থাকতে পারবো না।”
শানের কথায় সোহা অসহায় ভাবে বলে
” আরে কি সব বলছেন আপনি ?? কিছু বুঝতে পারছি না। আর আপনি যদি বিয়ে না করতে চান তাহলে নিজেই গিয়ে বলে দিন।আমাকে কেনো না করতে বলছেন বিয়ে ভাঙতে ?? আর সবাই বিয়ের কতো কি প্লেন করছে এখন আমরা না কি করে করতে পারি ??আপনিই বলুন !! And At last আমাকে বিয়ে না করার কারণ টা তো বলবেন !!আমি কি এমন করেছি যে আপনার কাছে খারাপ হয়ে গেলাম??”
শান দুই পা এগিয়ে এসে সোহার বাহু চেপে ধরে দাঁতেদাঁত চেপে বলে
” আমি কারোর কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নই। আমি কিচ্ছু জানি না তোমাকে যেই টুকু বলা হয়েছে ততোটুকুই করো। এর চেয়ে বেশি বা কম কিছুই করার কথা মাথায় ও আনবে না। তাড়াতাড়ি নিচে এসে সবাইকে বলবে তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও না। understand !!”
সোহা রাগে ফুসফুসতে মাথা নেড়ে হ্যা বলে। শান কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চলে গেলো সোহার রুম থেকে। সোহা শানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রেগে বিরবির করে বলে
” এবার আমি কি করি সেটা আপনি দেখবেন। আমাকে শুধু শুধু অপমান করে আমাকেই আবার বিয়ে ভেঙে দিতে বলছেন ?? আমি খারাপ মেয়ে !! যতো খারাপ হই না কেনো এবার তো আমি নিজে আপনাকে বিয়ে করেই ছাড়বো।” সোহা বাকা একটা হাসি দিয়ে ধুপধাপ পা ফেলে নিজের গন্তব্যে যেতে থাকে।
সোহাকে আজকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছে। পাত্রপক্ষ বললে কিছুটা ভুল হবে। কারণ সোহার বড় বোন সিমির সাথে শানের মেজো ভাই সামির এর বিয়ে হয়েছে প্রায় ৭ মাস আগে। এরেঞ্জ মেরেজ হলেও সোহার বাবা ইমতিয়াজ রহমান আর শানের বাবা মুসফিক চৌধুরি আগে থেকেই ব্যাবসায়িক ভাবে একে অপরের সাথে একটু আধটু পরিচিত। সিমির বিয়ের সময় সোহাকে দেখে শানের মা-বাবা সোহাকে শানের জন্য পছন্দ করে ছিলো। তাই সোহার কলেজ এর লাস্ট ইয়ার এর এক্সাম শেষ হতেই সোহাকে বাড়ির বউ করার প্রস্তাব নিয়ে চলে এসেছে। যদিও সেটা শানের মা-বাবা ছাড়া বাকি সবার অজানা ছিলো। আজকে আসার পরই সব জানতে পারলো তাই কথা বলার জন্য দুজনকে উপরে পাঠিয়ে ছিলো।
সোহা ধুপধাপ পায়ে সিড়িতে এসে দাঁড়াল। সবাই বিয়ে নিয়ে কথা বলছে। বিয়েটা নিয়ে সবাই খুশি রয়েছে শুধু মাত্র শানই গম্ভীর চেহারায় বসে আছে। সোহা নিজের রাগি ভাবটা নিজের মধ্যেই লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করলো। চুপচাপ চেহারা নিয়ে সবার সামনে দাঁড়াল। সোহাকে আসতে দেখেই সবার দৃষ্টি সোহার দিকে পরলো। সোহা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। পাশে আধ হাত দূড়ের সোফায় শান তার মায়ের পাশে বসে আছে। সোহার এমন ভাবভঙ্গি দেখে সবাই চুপ করে গেলো। শানের মা শাহানাজ বেগম উঠে আসলো। সোহার কাছে এসে জিজ্ঞেসু গলায় বলে
” কি হয়েছে সোহা ?? তোমাকে এমন লাগছে কেনো ?? সব ঠিকাছে তো !! শানও কিছু বললো না। তোমরা কি বিয়েতে রাজি না??”
শান অপেক্ষা করে আছে সোহা কখন বিয়ে না করার কথা বলবে। সোহা শানকে অবাক করে দিয়ে লজ্জামাখা স্বরে বলে
” নাহ আন্টি শান ভাইয়া আর কি বলবে শুধু বলেছে আপনারা বড়রা যা বলবেন তিনি তাতেই রাজি। আমার ও কোনো সমস্যা নেই।” সবার মুখে হাসি ফুটে আর শান হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে সোহার দিকে। সোহার দুষ্টুমি সম্পর্কে শান বেশি একটা পরিচিত নয় তবে সোহার এই ধড়িবাজ চালাকি দেখে শান সোহার দিকে তাকিয়ে আগুনের ফুলকির মতো ফুলতে থাকে। শানের মা গিয়ে সবার সাথে কুশল বিনিময় করতে থাকে। সবার আড়ালে সোহা শানের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো আর শান এমন ভাবে তাকালো যেনো মনে হলো সোহাকে একা পেলে আগুনে পুড়য়ে ছারখার করে দেবে।
শানের মা এগিয়ে এসে শানের মুখের সামনে মিষ্টি ধরতেই শান মুখে মিথ্যা হাসি ফুটিয়ে মিষ্টি মুখে তুলে নিলো। শানকে খাইয়ে শাহানাজ বেগম সোহার কাছে গিয়ে মুখে বড় একটা হাসি হাসি ফুটিয়ে বলে
” নাও মা মিষ্টি খেয়ে নাও। আর আমাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে থাকো।” সোহা হেসে মিষ্টি খেয়ে বলে
” আচ্ছা আন্টি আমি কি আমার শশুড় বাড়ি মানে আপনাদের বাড়িতে যা ইচ্ছে সব নিয়ে যেতে পারবো ??” শাহানাজ বেগম হেসে সোহার থুতনিতে ধরে বলে
” হ্যা রে মা সব নিয়ে যেতে পারবে।” সোহা মিষ্টি একটা হাসি দেয়। সোহার সব কথাবার্তা শুনে শানের শরীরে আগুন ধরে গিয়েছে সেই আগুন কিভাবে নেভানো যাবে সেটাই ভাবছে আর সবার আড়ালে সোহার দিকে তাকিয়ে রাগে ফুঁসছে।
সবাই বসে বসে বিয়ের দিন ঠিক করার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অনেকক্ষণ কথাবার্তা বলে দুজনের বিয়ে দেড় মাস পড় ঠিক করার সিদ্ধান্ত নিলো। শাহানাজ বেগম হন্তদন্ত হয়ে বলে উঠে
” আরে এতো দেড়ি হলে কি করে চলবে?? আমি সোহাকে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব আমার বাড়িতে নিয়ে যেতে চাই তাই তো এতো তাড়াতাড়ি চলে এসেছি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে ।” সোহার মা বাবা একে অপরের দিকে তাকায়। রিয়ানা রহমান শাহানাজ বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে
” কিন্তু বেয়ান এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে সম্ভব ?? আর আমার একটাই মেয়ে এখন ঘরে আছে সেও এতো তাড়াতাড়ি চলে গেলে তো পুরো ঘরই ফাকা হয়ে যাবে ।” শাহানাজ বেগম ভেবে দেখলো সোহার মার কথাও ঠিক। শাহানাজ বেগমের মন খারাপ হয়ে গেলো। ইমতিয়াজ রহমান দুজনের ইচ্ছে রাখার জন্য বলে
” ঠিকাছে তোমাদের দুজনেরই কথা থাকুক !! ২৫ দিন পর যেই শুক্রবার রয়েছে সেইদিন ওদের বিয়ে আর আগের দিন গায়ের হলুদ।” সোহার বাবার কথায় সবাই একমত হলো। ২৫ তারিখে দুজনের বিয়ের দিন নির্ধারত হলো।
শান পরলো আরো চিন্তায় যেখানে সে বিয়ে করতে চাইছে না সেখানে সবাই আরো বিয়ের দিন এগিয়ে নিয়ে এসেছে । শানের চিন্তাকে বিরক্তি আর রাগে পরিণত করার জন্য সেখানে উপস্থিত হলো টমি। টমি এসেই সোহার শরীর ঘেঁষে দাঁড়ালো। টমির দিকে চোখ পড়তেই শান কিড়মিড় করে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকালো। ১২ ইঞ্চির এই ছোট আকৃতির লোমে ভরা বিদেশি জাতের কুকুরটা কে দেখে শান খুবই বিরক্ত হয়। যাকে বলে সহ্য করতে পারে না। প্রথম দিন মানবতার খাতিরে এই কুকুর মেয়েটা কে সহ্য করে নিলেও পড়ে কুকুরের মালিক এবং কুকুর কাউকেই সহ্য করতে পারে না শান।
শানের এমন বিরক্তিকর ভাবে তাকানো দেখে টমি কেমন করে তাকিয়ে রইলো। হুট করে সোহার পায়ের কাছ দূড়ে সড়ে দুই লাফে শানের কোলে এসে বসলো। শান আ করে চিৎকার দিয়ে লাফিয়ে উঠে দাঁড়ায়। টমি শানের কোল থেকে সোজা ফ্লোরে গিয়ে পড়লো। সোহা ছুটে এসে টমিকে কোলে নিয়ে দেখতে লাগলো টমি কোথাও ব্যাথা পেয়েছে কিনা। শানের মা এগিয়ে এসে টমিকে দেখে ভ্রু কুচকে শানের দিকে তাকিয়ে শানকে উদ্দেশ্য করে বলে
” এভাবে কেউ চিৎকার দেয় ?? এতোবড় ছেলে হয়েও এই কুকুর কে ভয় পাস ?? ছিঃ !!” মাকে নাক ছিটকাতে দেখে শান খানিকটা অপমানবোধ অনুভব করলো। বিরক্তিমুখ করে বলে
” আমি ভয় পেতে যাবো কেনো ?? এই সব লোমে ভরা পশু-পাশি আমার একদম পছন্দ না।” সোহা তেতে বলে
” পছন্দ না মানে কি হ্যা ?? পছন্দ না হলেও সারাজীবন ওর সঙ্গেই থাকতে হবে আপনাকে।
আর পছন্দ না বলে কি এভাবে ছুড়ে ফেলে দিবেন ??” শান অবাক হয়ে বলে
” কি !! এই কুকুরটাও যাবে তোমার সঙ্গে ??” সোহা এবার রেগে চেঁচিয়ে বলে
” এই কে কুকুর ?? ওর একটা সুন্দর নাম আছে সেটা হলো টমি বুঝেছেন ?? আর একবার কুকুর বললে টমিকে আপনার পাঞ্জাবির ভেতর ঢুকিয়ে দেবো।” শান দাঁতেদাঁত চেপে সহ্য করে নেয় ।
সোহা, শানের মা-বাবারা অবাক হয়ে ওদের ঝগড়া দেখছে। তারা ভাবছে একটু আগেই সোহা, শান কে বিয়ের জন্য এতো খুশি দেখেছে সেই দুজন আবার এখন এইভাবে ঝগড়া করছে। এই দৃশ্যটা মানতে তাদের কিছুটা কষ্ট হলো। সামির এগিয়ে এসে সোহাকে শানের সামনে থেকে নিয়ে এসে বলে
” থাক শালিকা ঝগড়া করে না। দুইদিন পর তোমাদের বিয়ে এখনি এভাবে ঝগড়া করলে মানুষ কি বলবে ??” সোহা কিছুক্ষণ ভেবে শানের দিকে তীক্ষ্ণ ভাবে তাকিয়ে বলে
” ঠিকাছে ভাইয়া থেমে গেলাম তবে আপনার ভাইকে বুঝিয়ে বলে দেবেন টমিকে নিয়ে যদি কোনো ঝামেলা করে উনি তাহলে আমি উনার নামে মামলা করবো। আর আমার হবু শাশুড়ি মার থেকে আমি অনেক আগেই পারমিশন নিয়ে নিয়েছি। আমার যা ইচ্ছে আমি সব নিতে পারবো শশুড় বাড়িতে। এখন উনি ঝামেলা করলে আমি বিয়ে করবো না।” শান এখানে কিছু না বলে বাড়িতে গিয়ে মার সাথে কথা বলবে ভেবে শান কিছু না বলে গম্ভীর ভাবে বসে রইলো।
শান আর সোহার দুই মা সস্তির নিশ্বাস ফেললো। কারণ বিষয় টা শুধুমাত্র কুকুর নিয়ে আর সেটা এখানেই থেমে গিয়েছে অন্য কিছু নিয়ে হলে হয়তো বিয়েটাই থেমে যেতো। সোহা দুই হাতে টমিকে বুকের সাথে মিশিয়ে ধরে রেখেছে। টমিও শানের এমন নাচুরে ভাব দেখে গুটিসুটি মেরে সোহার কোলেই বসে রইলো তবে তার চোখ গুলো শানের দিকে। সামির সোহাকে শান্ত করার জন্য তাকে নিয়ে বাইরে চলে গেলো।
রাতে বাড়ি ফিরে রেস্ট নিয়ে শান মা-বাবার সঙ্গে কথা বলার উদ্দেশ্যে রুম থেকে বের হয়। লিভিংরুমে এসে দেখে শাহানাজ বেগম হাসি-খুশি চেহারায় সালমা, নিলা, সিমির সাথে কথা বলছে। নিলা শানের বড় ভাই ইশানের বউ। তাদের ৫ বছর হয়েছে বিয়ের। নাইসা সুমি চৌধুরী তাদের একমাত্র ৩ বছরের মেয়ে। আর সালমা তাদের বাড়ির কাজের মেয়ের নাম। বাবা হারা পরিবারের দায়িত্ব তার কাধে। মাধ্যমিক পরীক্ষার পর বাবা মারা যাওয়ায় আর পড়া হয়নি ঢাকায় কাজের খোঁজে চলে এসেছে ছিলো। শানদের পরিবারের সঙ্গে সেই কাজের মাধ্যমেই পরিচিত। তিন বছর ধরে এখানেই রয়েছে।
শান গিয়ে মায়ের সামনে দাঁড়াল। শানকে দেখে ওরা গল্প থেকে বিরতি নিলো। শান শান্ত গলায় বলে
” মা কিছু দরকারি কথা ছিলো একটু রুমে এসো।”
শাহানাজ বেগম ভ্রু কুচকে বলে
” কিসের দরকারি কথা ?? দরকারি কথা হলে এখানেই বলতে থাকো আর অতি দরকারি হলে আমার রুমে পদার্পণ করতে পারো।” শান বিরক্তির নিশ্বাস ফেলে বলে
” মা খুব থেকেও খুব অতি দরকারি কথা। এবার যেতে পারি ??” শাহানাজ বেগম ঘরের দিকে যেতে যেতে বলে
” হ্যা চলো।” শান তার মার পেছন পেছন ঘরে গিয়ে বসে। শাহানাজ বেগম বসেই বলে উঠে
” বলো কি বলবে ।”
শান তার অধর জোড়া ভিজিয়ে নিয়ে শান্ত গলায় বলে উঠে
” মা সোহাকে বিয়ে না করলে হয় না !!” শাহানাজ বেগম কিঞ্চিত ভ্রু জোড়া কুচকে তাকিয়ে থাকে। কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করার পর বলে উঠে
” তুমি কি শুধুমাত্র একটা কুকুরের জন্য বিয়েটা ভেঙ্গে দিতে চাইছো ?? যদি সেটা করে থাকো তাহলে তুমি মনে রেখো এই বিয়ে কখনো ভাঙ্গবে না। সোহা চাইলে বাড়িতে একটা কুকুর কেনো ?? কুকুরের আস্তানা বানিয়ে দেবো আমি। তবু সোহাকে আমি আমার পুত্রবধূ করতে চাই।”
শান অধৈর্য ভাবে বলে উঠে
” মা সোহার মধ্যে কি এমন আছে বলো !! আমি সোহাকে বিয়ে করতে পারবো না, ব্যস।”
শাহানাজ বেগম অবাক হয়ে বলে
” শান !! তুমি একটা কুকুরের কথা ভেবে নিজের ভবিষ্যৎ এর সিদ্ধান্ত নিতে পারো না। আচ্ছা সত্যি করে বলো তো তুমি কি সোহাকে পছন্দ করো না !!” শান নিচু স্বরে বলে
” করি কিন্তু মা সোহার নিজের লাইফের ও একটা সিদ্ধান্ত আছে। ও যদি অন্য কাউকে পছন্দ করে থাকে তাহলে ??” শান সোহাকে পছন্দ করে কথাটা শুনে শাহানাজ বেগমের বুকের উপর থেকে পাথরটা সরে গেলো। তাই হাসি মুখে বলে
” শান আমি তোমার মা হই। আমি নিশ্চই তোমার ক্ষতি চাইবো না !! আমি সব খোঁজ-খবর নিয়ে এবং সোহার সাথে কথা বলে এতোটুকু এগিয়েছি। তুমি আমার উপর ভরসা করতে পারো। তোমার কোনো ক্ষতি হবে না। এখন নিজের ঘরে যাও আর অফিসের কোনো কাজ না থাকলে সোহার সাথে কথা বলো। ওকে বেশি বেশি সময় দাও।” শান অন্য কিছু বলার প্রস্তুতি নেওয়ার আগেই শাহানাজ বেগম সেই রুম প্রস্থান করে। শান হতাশ হয়ে রুমে ফিরে আসে। হঠাৎ খেয়াল আসলো নিজেকে শান্ত করার জন্য সোহাকে কয়েকটা বকা দেওয়া এখন তার অত্যন্ত জরুরি একটা কাজ। দেড়ি না করে ফোন নিয়ে সামিরের ঘরের দিকে পা বাড়ায়। সামিরের ঘরের সামনে এসে দরজায় নক করে কিছুক্ষণ দাঁড়াতেই সামির এসে দরজা খুলে দেয়। শানকে দেখে বলে
” কিরে কিছু বলবি ??” শান শান্ত গলায় বলে
” ভাবি আছে ??” সামির মাথা নেড়ে বলে
” নাহ নেই মা আর ভাবির সাথে গল্প করছে। কি লাগবে তোর ??” শান গম্ভীর গলায় বলে
” সোহার নাম্বার টা লাগবে। কিছু জরুরি কথা আছে।” সামির গলা ঝেড়ে বলে
” ওর তো এক সপ্তাহ আগে মোবাইল পানিতে পড়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আপাতত ওর কোনো ফোন নেই। তবে বলেছে দুই একদিনের মাঝে নতুন ফোন কিনবে। তখন এসে নাম্বার নিয়ে নিস।” শান দাঁত কিড়মিড় করে চলে আসতে নিলেই সামির শানকে ডেকে থামিয়ে দেয়। শান আবার ফিরে তাকাতেই সামির মুচকি হেসে বলে
” তোর জীবনসঙ্গী হিসেবে সোহাই বেস্ট। সোহা সব সময় দুষ্টুমি করলে মন থেকে একদম বাচ্চা।বিয়ের পর তুই নিজেই সেটা বুঝতে পারবি।” শান সৌজন্যতার হাসি দিয়ে রুমে ফিরে আসে।
ব্যালকনিতে এসে বাইরের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলে
” সোহা কতোটা বাচ্চা সেটা আমি অনেক আগেই নিজের চোখে দেখেছি। সোহাকে আমি যতোটা চিনেছি ততোটা হয়তো তোরাও চিনতে পারিসনি। কেনো আমি সোহাকে বিয়ে করতে চাইছি না সেটা একমাত্র আমিই জানি।”
#তুমিময়_ভালোবাসা
#পর্ব: সূচনা পর্ব
#লেখিকা: মার্জিয়া রহমান হিমা