#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_০৮
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
পরের দিন সন্ধ্যা বেলা।আহানদের বাসা থেকে সবাই আসছে।অধরা কে হলুদ পড়ানো শেষ হলে,হাতে মেহেদী দেওয়া শুরু করলো।তিতির খুব সুন্দর ভাবে সবদিক টা সামলে নিচ্ছে।তিতলি মুখ কালো করে বসে আছে।আশা গিয়ে অধরার পাশে বসলো।পার্লারের মেয়েগুলো দু’হাত ভরে অধরাকে মেহেদী দিয়ে দিলো।আত্নীয়-স্বজন সবাই অধারকে বিভিন্ন রকমের মিষ্টি,পায়েস খাইয়ে দিয়ে যাচ্ছে।কেউ টাকা দিচ্ছে,কেউ উপহার দিচ্ছে।কেউ দোয়া করে দিচ্ছে।অধরাকে মেহেদী পড়ানো শেষ হলে সবাই একটু আড্ডা দিয়ে রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে চলে গেলো।
পরের দিন সকাল বেলা সবাই ঘুৃম থেকে উঠে রান্নার কাজে গেলে পড়েছে।আত্নীয়-স্বজন সবাই আশা শুরু করে দিয়েছে।পুরো বাড়ি মল্লিকা,গোলাপ,রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে।অধরা রুমের মধ্যে বসে আছে।ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাচ্ছে।তবুও কাউকে বলতে পারছে না।তাকে বোঝার মতো আল্লাহ ছাড়া কেউ নেই।তার যদি উপায় থাকতো এখনি বিয়েটা ভেঙে দিতো।
আহান ছাঁদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে।সবাই বাসা নতুন করে সাজাচ্ছে।চারিদিকে বিভিন্ন মানুষের আনাগোনা।এত মানুষ ভালো লাগে না আহানের।কিন্তু একটা সময় আহান এই মানুষের ভিরে গিয়ে মানুষকে হাসাতো।কতই না সুন্দর হতো আজ যদি রুহির সাথে তার বিয়ে হতো।কতটা স্বপ্ন দেখেছিলো রুহিকে বিয়ে করবে।আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো আহান।কষ্টে বুক টা ফেটে যাচ্ছে তার।অনুভূতি প্রকাশ করার মতো না।বাবার খুশির জন্য হলে-ও বিয়েটা তাকে করতে হবে।কাঁধে কারো স্পর্শ পেতেই পেছনে ঘুরে তাকালো আহান।
–আপু কিছু বলবে।
–কান্না করছিস।বলল তিতির।
–না আপু কান্না করবো কেনো।রাতে ঘুম হয় নাই তাই।
–আপুকে মিথ্যা কথা বলছিস।আমি জানি তুই রুহির কথা ভাবছিস।তোর মনে হচ্ছে তুই রুহিকে পাগলের মতো ভালোবাসিস।কিন্তু এটা তোর ভালোবাসা না রে ভাই।রুহি তোর সাথে একবছর রিলেশনে ছিলো।তাই একটা টান তৈরি হয়ে গেছে।প্রথম কাউকে ভালো লেগেছিল তাই তুই ওকে ভুলতে পারছিস না।ওকে ছাড়া ভালো ঠিকি আসিছ।যেদিন তোর জীবনে সত্যি কারের ভালোবাসা আসবে ভাই,তুই ঠিক থাকতে পারবি না।তুই নিজেই বুঝতে পারবি।কোনটা ভালোবাসা আর কোন টা আবেগ।আমি তোকে বলি জীবনে সঠিক মানুষ আসলে প্রথম ভালোবাসা কেনো পুরো অতীত টাই ভোলা যায়।
আহান তার আপুকে জড়িয়ে ধরে নীরবে কান্না করে দিলো।এই মানুষ টা ছাড়া তাকে কেউ বুঝে না।কি করে যে এতটা বুঝে তিতির আহান কে।সে,নিজেও জানে না।আহানের চোখের পানি তিতিরের কাঁধে পড়তেই তিতির আহানকে নিজের সামনে নিয়ে আসে।তারপরে চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে।
–আহান তুই কিন্তু আর ছোট নেই।এভাবে কান্না করলে হবে।তুই একটা কত সুন্দর সুযোগ পেয়েছিস।অধরা তোকে কতটা অপমান করছে।তুইও অধরা কে শিক্ষা দিবি না।বিয়ে করে নিয়ে এসে।ওকে দিয়ে হাত-পা টিপে নিবি।চুল টেনে নিবি।এটা ওটা যখন যা ইচ্ছে কাজ করিয়ে নিবি।দরকার পড়লে দুই ভাইবোন মিলে ওকে জ্বালাবো।তুই হবি দজ্জাল স্বামী।আর আমি হবো দজ্জাল ননদ।
তিতিরের কথা শুনে আহান হেঁসে দিলো।আহান জানে তিতির মোটেও এমন কাজ করবে না।আহান কে হাসানোর জন্যই এমন কথা বলেছে।
–হয়েছে আর মন খারাপ করতে হবে না।আয় তোকে মেক-আপ করে দেই।ছেলে মানুষ বিয়ে করবি মেক-আপ করবি না।
–আমি কি মেয়ে মানুষ নাকি।যে,তোমার মতো আটা ময়দা দিব।তুমি বেশি করে দাও।আমি এমনিতেই সুন্দর।বলল আহান।
–কি বললি আমাদের মেক-আপ কে তুই আটা ময়দা বললি তোকে আজ।আহানকে আর পায় কে ছাঁদ থেকে দৌড়ে নিচে নেমে আসলো।
আহান চলে যাওয়ার পরে তিতির একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল।অধরা অনেক ভালো মেয়ে।একদিন ওর ভালোবাসা দিয়ে ঠিক তোর মন জয় করে নিবে রে আহান।সেদিন তুই অধরা ছাড়া কিছুই বুঝবি না।ওর জন্য পাগল হয়ে যাবি।বলেই নিচের দিকে হাঁটা শুরু করলো।
অধরাকে সুন্দর করে বউ সাজিয়ে দিয়ে গেছে একটু আগে।অনেক সুন্দর লাগছে অধরাকে।সবাই এসে অধরার সাথে ছবি তুলছে।চৌধুরী বাসায় সবাই বউয়ের বাসায় যাওয়ার জন্য তৈরি।তখনি তিতলি এসে হাজির।
–বাবা আহান কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।আহান ওর রুমে নেই।বলল তিতলি।
–তুমি আমার সাথে মজা করছো।ফাজলামি না করে ভাইকে নিয়ে আসো।বললেন আশরাফুল চৌধুরী।
–আমার কথা বিশ্বাস না হলে তুমি আপুকে পাঠাও দেখো আমি সত্যি কথা বলছি নাকি মিথ্যা কথা।
তিতির উপরে গিয়ে দেখলো সত্যি আহান নেই।সবার মুখে ভয়ের ছাপ।ছেলেটা আবার কোথাও চলে গেলো না তো।কিন্তু আহান এমন কিছু করার ছেলেই না।
–তোর মেয়ে বিয়ে করছে রে আপা।নিজের বাবা মায়ের খোঁজ খবর নেই।কিন্তু পালিত বাবা মায়ের জন্য কি দরদ।আশরাফুল চৌধুরী ছোট ছেলে’কে বিয়ে করছে।মনির অসুস্থ।তাই অধরা কম্পানি থেকে দশ লাখ টাকা ঋন করছে।আশরাফুল চৌধুরী শর্ত দিয়েছে।তার ছেলে কে বিয়ে করলে টাকা দিবে।তোর মেয়ে রাজি হ’য়ে গেছে।
–কি বলছিস এসব।আজকে মতো আমাদের ছেড়ে দে বোন।কথা দিচ্ছি কাউকে কিছু বলবো না।আমি শুধু বিয়েটা ভেঙে দিয়ে চলে আসবো।আমাদের শত্রুর ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে আমি কখনো হতে দিব না।আর মা কি করে পারছেন আমার মেয়ের এতবড় ক্ষতি করতে।
–তুলি অধরার সাথে যদি আশরাফুলের ছেলের বিয়ে হয়।তাহলে আমি হেরে যাব আশরাফুলের কাছে।কিছু একটা করো।শারমিন আজকের জন্য আমাদের ছেড়ে দাও।
–আমাকে কি পাগল মনে হয়।এত বছরের সাজানো প্লান একদিনে শেষ করে দিব।মিনারা আমাকে যতটা কষ্ট দিয়েছে।এখন ওর মেয়ে কষ্ট পাক।আমি শুনেছি চৌধুরীর ছেলে অধরাকে দেখতে পারে না।অধরার জীবন টা শেষ হয়ে যাবে।এতেই আমার শান্তি।
–শারমিন তোকে আমি খুন করে ফেলবো বেয়াদব মেয়ে কোথাকার,লজ্জা করে না নিজের ছোট বোনের স্বামীর ওপরে নজর দিস।বেহায়া মেয়ে একটা।নির্লজ্জ মেয়ে।তোর মতো মেয়ের মরে যাওয়া উচিৎ।আমার মেয়ের কিছু হলে তোকে আমি শেষ করে ফেলবো।পৃথিবীর কোনো শারমিন আমাকে ধরে রাখতে পারবে না।যে,সন্তাদের জন্য এতকিছু করছি।সেই সন্তানই যদি ভালো না থাকে।তাহলে তোর কথা শোনার কোনো মানেই হয় না।
–আরে দুলাভাই এত হাইপার হচ্ছেন কেনো।এই দুলাভাইয়ের বড্ড তেজ হয়েছে।একটু তেজ কমিয়ে দে।বলেই চলে গেলো।কয়টা লোক এসে জানোয়ারের মতো মারতে শুরু করলো।
–আহান তো বিয়ে করছে।তুমি কিছু করবে না।
–অসম্ভব আমি বিশ্বাস করি না।আহান শুধু আমাকে ভালোবাসে,ও আমাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবে না।
–কনফিডেন্স ভালো,কিন্তু ওভার কনফিডেন্স একদম ভালো না রুহি।
–তোমার সাহস কি করে হয়।বাসার কাজের লোক হয়ে এইভাবে আমার সাথে কথা বলার।তুমি জানো তোমার এই বেয়াদবি করার জন্য তোমার কি অবস্থা আমি করতে পারি।
–সে তুমি চাইলে যা ইচ্ছে খুশি করতে পারো।আমি’ও দিপালি।কাউকে ভয় পাই না।আমাকে তুমি কি করবে সর্ব জোর মেরে ফেলবে এর থেকে বেশি কিছু করতে পারবে না।তাই আমাকে ভয় দেখাতে এসো না।কাজ করে খাই।এত কথা শুনতে পারবো না।কাজ করলে বাসার অভাব আছে নাকি।বলল দিপালি।
–দিন দিন তোর সাহস খুব বেশি হয়ে গেছে তাই না।আগে দেশে যেতে দে তারপরে তোর একটা ব্যবস্থা আমি করবো।খারাপ সময় পাশে থাকিস জন্য তোর সবকিছু সয্য করি।অনেক হয়েছে।আর না তোকে এবার বিদায় করবো।
–আমি বেঁচে যাব।তাছাড়া এই পাপ পুরিতে কাজ করতে আমারও ভালো লাগে না।বলেই চুল নাচাতে নাচাতে চলে গেলো দিপালি।
রুহি রাগে বিছানায় গিয়ে বসলো।মাথা খারাপ করে দিচ্ছে দিন দিন এই মেয়ে।আর কোনো কথা না বলে নিজের কাজের জন্য বেড়িয়ে পড়ল রুহি।
চৌধুরী বাড়িতে অন্ধকার নেমে আসলো।সবার মুখে চিন্তার ছাপ দিগুণ বেড়ে গিয়েছে।কোথায় খুঁজে পাচ্ছে না আহানকে।আহানের ফ্রেন্ডদেরও ফোন দিয়েছে।তাদের করো বাসায় যায় নাই।তাছাড়া আহানের বেশিভাগ ফ্রেন্ড আহানের বাসায়।তিতলির মাথায় শয়তানি বুদ্ধি আসলো।সে অধরার নানিকে ফোন করে বলল।
–আহান পালিয়েছে।সে,এই বিয়ে করতে চায় না।তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।পাশে অনেক আত্নীয় স্বজন বসা ছিলো।সবাই নিজেদের মধ্যে বলাবলি শুরু করলো।অধরার নানি প্রচন্ড রেগে গেলো।চৌধুরীর সাহস কি করে হয়।এভাবে অপমান করার।অধরার নানি রেগে।আশরাফুল চৌধুরীকে ফোন দিলেন।অধরার নানির কল পেয়ে আশরাফুল চৌধুরী,কিছুটা ঘাবড়ে গেলেন।ফোন তুলে স্বাভাবিক ভাবেই সালাম দিয়ে হ্যালো বললেন।আশরাফুল চৌধুরীর এত স্বাভাবিক আচরণ দেখে তিনি আরো রেগে গেলেন।
–আপনি কি আমাদের সাথে মজা করছেন চৌধুরী সাহেব।এটা বিয়ে কোনো ছেলে খেলা না।আপনার ছেলে বিয়ে করবে না।আপনি আমাকে আগে জানাতে পারতেন।আমি আর এগোতাম না।বিয়ের দিন এভাবে ছেলে পালিয়ে গেলো।এখন আমার অধরার কি হবে।আমি সমাজে কি করে মুখ দেখাবো।
আশরাফুল চৌধুরী স্বাভাবিক ভাবেই বলল।
–আপনি এসব কি বলছেন।আমাদের ছেলে পালাতে যাবে কেনো।আমরা তো সবাই রেডি হচ্ছি।একটু পড়েই আপনাদের বাসায় পৌঁছে যাব।
আশরাফুল চৌধুরী কথায় অধরার নানি কিছু টা অবাক হলেন।সাথে লজ্জাও পেলেন।না জেনে শুনে রেগে গিয়ে এতগুলো কথা বলা ঠিক হয় নাই।
–আমি আসলে সরি।আমি বুঝতে পারি নাই।একটু আগে আমাকে ফোন দিয়ে বলা হয়েছে।আপনাদের ছেলে নাকি পালিয়েছে।
–কেউ হয়তো মজা করেছে আপনি চিন্তা করবেন না।আমরা আসছি।বলেই ফোন কেটে দিলো।ভয়ে হাত কাঁপছে।কতগুলো মিথ্যা কথা বললেন।
আশরাফুল চৌধুরী রেগে বলল কে অধরার বাসায় ফোন করে বলে দিয়েছে।আহানকে পাওয়া যাচ্ছে না।আমি জানতে পারলে কঠিনের থেকে-ও কঠিন শাস্তি দিব।
–বাবা তুমি রাগ করো না।উত্তেজিত হয়ো না।আমি একটু আসছি।তোমরা সবাই বসো।বলেই তিতির বাহিরে চলে গেলো।
চলবে…..