তোমাকে ঠিক চেয়ে নিবো পর্ব ৩

#তোমাকে ঠিক চেয়ে নিবো
লেখা আশিকা
পার্ট ০৩

প্রতিক্ষা ফোনটা হাতে নিতেই
রিংটোন বেজে উঠলো। স্ক্রিণের দিকে তাকাতেই ওর চোখ কপালে উঠে গেল। তিথি প্রতিক্ষার চোখ অনুসরণ করে স্ক্রিণের দিকে তাকালো। যে নামটা ভেসে উঠলো তার জন্য ওরা মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।
প্রতিক্ষা তিথির দিকে নার্ভাস হয়ে তাকালো। তিথি চোখ দিয়ে ইশারা করলো ওকে ফোনটা রিসিভ করার জন্য।
কোনরকমে কাপা কাপা গলায় প্রতীক্ষা
” হ্যালো।”বললো।
” কেমন আছেন?
আমাকে চিনতে পেরেছেন তো ওই যে আপনার এডমিশন টেস্ট এর সময় কথা হলো। ”

প্রতিক্ষা বাধা দিয়ে বললো,

” হ্যা চিনতে পেরেছি আর বলতে হবে না। আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছি। আপনি ভালো আছেনতো?”

” হ্যা এইতো ভালোই। আচ্ছা এখন কোথায় এডমিশন নিয়েছেন?”
” এইতো বাকৃবিতে জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজিতে পড়ছি।”
প্রহর কিছুটা ইতস্ততবোধ করে জিজ্ঞাস করলো,
” আচ্ছা কুয়েটে এসেছিলেন এডমিশন দিতে?”

প্রতিক্ষা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উত্তর দিলো,
” হ্যা এসেছিলামতো।”
মূহূর্তেই প্রহরের মনটা চঞ্চল হয়ে উঠলো।
এত কাছে এসেও মেয়েটির সাথে ওর দেখা হলো আফসোস। হঠাৎ এই সুরেলা কণ্ঠীর মেয়েটিকে দেখতে ওর বড় ইচ্ছে হচ্ছে।
তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
” আচ্ছা আপনার তো আমার সাথে দেখা করার কথা ছিলো। আমার ওখানে এসে অন্তত একটা ফোনতো দিতে পারতেন?”
প্রতিক্ষার চোখদুটো ছলছল করে উঠলো,
” আচ্ছা আপনি সেদিন সত্যিই দেখা করার কথা বলেছিলেন নাকি এমনি এমনি বলেছিলেন তা আমি কি করে বুঝবো। তাছাড়া আপনি যে সত্যিই দেখা করতে চান সেটা আমাকে অন্তত একটিবার ফোন করে জানাতে পারতেন।”
এই পর্যায়ে দুইজনই চুপ করে গেলো।
একটুপর প্রতীক্ষাই বললো,
” আচ্ছা হঠাৎ ছয় মাস পর মানে অনেকটা দিন পর আপনি আমাকে কেন ফোন করেছেন একটু জানতে পারি?”
এইরকম একটা প্রশ্ন শুনে প্রহর ঘাবড়ে গেলো। সত্যিইতো খামোকা এই মেয়েটাকে ও কেন ফোন করতে গেছে। কি দরকার। যত্তসব মিনিংলেস কাজকারবার।
” এমনি, হঠাৎ মনে হলো তাই। নাথিং, এনিথিং এলস।”

” ওহ আচ্ছা। তাহলে আজকে রাখছি। ভালো থাকবেন।”প্রতিক্ষা কিছুটা অভিমানী হয়ে দুম করে ফোনটা কেটে দিলো।
ফোনটা কাটার পর থেকে কিছুতেই শান্তি পাচ্ছে না প্রহর। কি যেন নাই নাই মনে হচ্ছে। না এই মেয়েটার সাথে ওর দেখা করতেই হবে যে করেই হোক। প্রহর মিনিট দশেক পরেই আবার কল করে।
প্রতিক্ষা কিছুটা অবাক হয়েই রিসিভ করে।
” পিউ তুমি জানতে চাইছিলে না আমি কেন ফোন করেছি?

” হ্যা চেয়েছিলাম কিন্তু আপনিতো বললেন না। কোন সমস্যা ভাইয়া।”

” হ্যা খুব গুরুতর সমস্যা। যদি বলি আমি তোমার সাথে মিট করতে চাই? তুমি কি রাজি হবে?”

প্রতিক্ষা নিজের কানকে নিজেই বিশ্বাস করতে পারছে না। প্রহর জেনে হোক আর না জেনেই হোক ওর সাথে দেখা করতে চাচ্ছে। একরাশ ভালোলাগা ওর সমস্ত শরীর মন ছুঁয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পরক্ষনেই ওর মনটা বিষাদময় হতে বেশিক্ষণ লাগলো না। প্রহর যখন ওকে চিনতে পেরে যাবে তখন কি রিএক্ট করবে। নাহ ও আর ভাবতে পারছে না।
” কি হলো চুপ করে আছো কেন? তুমি বিশ্বাস করবে কিনা জানিনা। আমি জীবনে কোন মেয়ের সাথে এইভাবে দেখা করতে চাইনি।
আচ্ছা আমি কি খুব অন্যায় কিছু আবদার করে ফেলেছি?”

প্রতিক্ষা নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে উত্তর দিলো,
” আচ্ছা আপনি আমার মাঝে কি এমন ভিন্নতা দেখলেন?
আর আমার সাথে দেখা করার জন্য এতো উতলা হচ্ছেন কেন।”

” জানিনা এর উত্তর আমার কাছে নেই। শুধু এইটুকুন বুঝতে পারছি মানে, আমার সিক্স সেন্স বলছে তোমার সাথে দেখা না করলে জীবনে অনেক বড় কিছু মিস করে যাবো।”

প্রতিক্ষার চোখদুটো ভিজে উঠলো,
” আপনি কি জানেন আমার সাথে দেখা হলে এইটাই আমাদের শেষ দেখা হবে আর শেষ কথা হবে।”

“তোমার এমনটা কেন মনে হচ্ছে?”

” কারণ আমি জানি আমার সাথে দেখা হলে আপনি কথাবলার আগ্রহটাই হারিয়ে ফেলবেন।”

” ইন ফিউচারে কি হবে তা কি আমরা কেউ বলতে পারি?”
” তা বলতে পারিনা তবে কিছুটা আন্দাজ করতে পারি?”
” তুমি দেখা করবে নাকি করবেনা। প্লিজ ভণিতা না করে সরাসরি উত্তর দাও।”

প্রতিক্ষার কি সাধ্য আছে প্রহরকে না করার। না হয় কালকে সব কিছু শেষ হয়ে যাবে?
তাতে কি? যে কথাটা সে আজো বলতে পারেনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কি তা ভুলতে পারবে?
পারবে নাতো এতোটা আক্ষেপ নিয়ে ও সারাজীবন পার করতে পারবেনা। তার থেকে না হয় সত্যিটাই সামনে আসুক।

প্রহর ব্যাগপ্যাক গুছিয়ে ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলো। বড্ড ঘোরের মধ্যে ছিলো এতক্ষণ। কেন জানি এক অজানা শঙ্কা ওর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়কে তোলপাড় করে দিচ্ছে। ও ডিসিশন নিয়েই ফেলেছে আজকে রাতের বাসেই ময়মনসিংহ যাবে। দিহানকে ফোন করা দরকার। দিহান ওর কলেজের ফ্রেন্ড। এখন এস আই হিসেবে পুলিশে জয়েন করেছে। ওর বাসা ময়মনসিংহে।
না থাক একেবারে পৌছেই ওকে সারপ্রাইজ দিবে।

রিজভীর মেজাজটা একটু ঠান্ডা হয়েছে। সহজ সরল ভোলা ভালা, মায়া মায়া চেহারার অধিকারী প্রতিক্ষার উপর সে বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারেনা। মেয়েটার একটা খোজ নেয়া দরকার।
জ্বর কতোটা কমেছে কে জানে?
হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো।
রিজভী ফোনটা কেটে দিয়ে নিজে কল করে নিলো।
” প্রতিক্ষা, জ্বর কমেছে?”
” জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ”

” আলহামদুলিল্লাহ, তাহলে কালকে ক্লাসে দেখা হচ্ছে তাইতো।”

প্রতিক্ষা কিছুটা ইতস্তত করে জবাব দিলো,
” এইতো কালকে যদি পুরোপুরিভাবে সুস্থ হয়ে যাই, তাহলে অবশ্যই আসবো।”

” তারমানে তোমার জ্বর এখনো আছে। এত পাকনামি করো কেন তুমি?
আমার সাথে ডাক্তারের কাছে গেলে কি আমি তোমাকে খেয়ে ফেলতাম।”
গমগম করে কথাগুলো বলে দিলো রিজভী।

প্রতিক্ষা বুঝে গেছে আবার স্যার রেগে গেছে। ও কি করবে এখন। কালকেতো ওর প্রহরের সাথে দেখা করার কথা। ও নিজে কথা দিয়েছে প্রহরকে । আবার ক্লাসে মিস দিলেও রিজভী স্যারের প্যারা। ওর সহজ সরল জীবনে এত প্যারার মুখোমুখি ও জীবনেও হয় নাই।

” কি হলো চুপ করে আছো কেন?
শোন মেডিসিন নিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকো।
আর আমাকে সকালে আপডেট জানাবে কেমন।”
গলাটা নরম করে কথাগুলো বলে রিজভী ফোনটা কেটে দিলো।

সাড়ে দশটা বাজতে লাগলো দিহানের মা টেবিলে খাবার নিয়ে বসে আছে। এখনো ওর আসার নামগন্ধও নেই। ছেলেটা কি বুঝে না মা ওর জন্য না খেয়ে বসে আছে। আজকালকার ছেলেমেয়েরা সত্যিই কেমন যেন উদাসীন। কলিংবেলের শব্দে দিহানের মা চঞ্চল হয়ে উঠে।মেইন ডোরটা খুলেই অভিমানী হয়ে দিলশাদ বেগম পিছু হটতে লাগলেন।
” মা আ’ম সরি। এইবারের মত ক্ষমা করে দাও।”
ছেলের দিকে না তাকিয়েই দিলশাদ বেগম গালফুলিয়ে বলতে লাগলেন,
” না কোন ক্ষমা টমা নাই।”

” কিন্তু কেন লেইট হলো সেটাতো শোন। তাকিয়ে দেখ কে এসেছে!”

দিলশাদ বেগম ছেলের দিকে ঘুরে তাকালো,
” আরে প্রহর যে কত বড় হয়ে গেছো। মাথা নিচু করে আছো কেন বাবা ভেতরে আসো। ”

প্রহর সালাম দিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো,
” আন্টি কেমন আছেন? সব ভালোতো?”

” সব আর ভালো হয় কি করে? এতোদিনপর তোমার আমার কথা মনে পড়লো। আগে কত আসতা। কত মিস করি তোমায়। দিহানকেতো প্রায়শই তোমার কথা জিজ্ঞাস করি।”

” আসলে আন্টি আমিও অনেক মিস করে কিন্তু সময় করে উঠতে পারি না।
বিশেষ করে আপনার হাতের ইলিশ বিরিয়ানির কথা আমি জীবনেও ভুলবোনা।”

” দিহান ওকে রুমে নিয়ে যা আর ফ্রেস হয়ে খেতে আয়।”

প্রহর দিহানের পিছুপিছু ওর রুমে যায়। ফ্রেস হয়ে খাওয়াদাওয়া শেষ করে দুই বন্ধু ঘুমানোর প্রিপারেশন নিতে থাকে এমনিতেই আজকে অনেক ধকল গেছে।

” প্রহর একটা প্রশ্ন করি ডোন্ট মাইন্ড।
আচ্ছা তুই কি সত্যিই আমার সাথে দেখা করার জন্যই এখানে আসছিস নাকি অন্যকোন কাজ আছে?”

প্রহর দিহানকে এখনি কিছু বলতে চাচ্ছে না। তাই ও বিষয়টা এড়িয়ে গিয়ে বললো,
” মানে তোর সাথে অনেকদিন দেখা নাইতো তাই ভাবলাম মিট করি। আর একটা কাজ আছে। কালকে আমি এক যায়গায় যাবো। আচ্ছা আমি এখন ঘুমাবো। গুড নাইট।”

দিহান বুঝতে পারে প্রহর কিছু একটা লুকোচ্ছে। যাই হোক যতক্ষণ পর্যন্ত ও বিষয়টা নিজে থেকে না বলবে তরক্ষন ওর মুখ কথা কথা বের করা ইম্পসিবল।

ঘুমানোর জন্য প্রিপারেশন নিলেও মনে হয়না প্রহরের আজকে ঘুম আসবে। নানা রকম চিন্তায় ওর মাথাটা ভারী হয়ে উঠলো। আচ্ছা ও কি কাজটা ঠিক করছে?
এইভাবে হুট করে ব্যাকুল হয়ে ছুটে আসার কি কারণ থাকতে পারে। আগের প্রহর আর এই প্রহরের মাঝে যে অনেক তফাৎ দেখা যাচ্ছে।
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here