# তোমার_নেশায় !
.
.
(১২)
,
,
,
কঠিন হৃদয়ের মেয়ে তৃষ্ণা!
.
.
.
.
দেখতে দেখতে যেন ১০ দিন পেরিয়ে গেল সিঙ্গাপুরে।
তবে এই দশদিনে আমি যতটা আশা করেছিলাম তারচেয়েও বেশি
আনন্দ করেছি, ঘুরতে পেরেছি। আজ আমরা দেশে ফিরব!
রুপাঞ্জন ক্যেব বুক করতে গেছে আর আমি বাকি জিনিস গুলা
গুছিয়ে নিচ্ছি। আমার শশুর আর ফুফির জন্য কিছু কেনাকাটা করেছি
তখন বাবার কথা মনে পড়তেই বাবার জন্য এখানকার মিষ্টি নিলাম। বাবা
তো মিষ্টি খেতে খুব ভালোবাসে, রুপাঞ্জন অবশ্যই
দেখেছে কিন্তু কিছু বলেনি। খুব অবাক লাগে ভাবতে, বিয়ে
নিয়ে কোনো ফিলিংস ছিলনা আমার, সবটাই ছিল একটা বিজনেস ডিল,
কখন ও ভাবিনি আমি আমার হাজবেন্ড কে এতোটা ভালোবেসে
ফেলবো, আর এখন যে ও আমার নেশা হয়ে গেছে। আমার
বেচে থাকার প্রতি মুহুর্তে ওকে চাই! গভীর নেশা হয়েছে
ওর মাঝে ডুবে থাকার। আমি যে চাইলেও সেই নেশা থেকে
বেরিয়ে আসতে পারবোনা, আর বেরিয়ে আসার কোনো
ইচ্ছা নেই আমার। এখন যদি ফুফি সুস্থ হয়ে যেতেন তাহলে খুব
সুখের একটা সংসার হতো আমাদের। আমি জানি ফুফি একদিন ঠিক
সুস্থ হবেন। আমি সেইদিনের অপেক্ষায় থাকবো। তখনই
মনের হলো কেউ খুব আস্তে।আস্তে আমার কোমর
জড়িয়ে।ধরেছে।আমি না দেখেই বলতে পারবো এটা আমার
রুপাঞ্জন! ওর গায়ের গন্ধ যে খুব চেনা আমার। ও আমার কানে
কানে বলল,
:– বউ চলো এবার! ফ্লাইটের সময় হয়ে যাচ্ছে।
,
:– আচ্ছা!
,
তারপর সবকিছু নিয়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়লাম।
ক্যেবে করে এয়ারপোর্ট পৌছে গেছি। বিকালের দিকে বাসায়
পৌছে গেলাম। এতোদিন পর বাসায় ফিরে খুব ভালো লাগছে
আমার। আমার কিচেন, ওয়াশরুম, ডাইনিং টেবিল এগুলো কে
অনেক মিস করেছি আমি। ওখানে তো কোনো কাজ করতেই
হয়নি সব তো হাতের কাছে রেডি পেয়েছি। আজ থেকে
আবার পাক্কা হাউজওয়াইফের ডিউটি জয়েন করবো। অনেক
হলো ঘুরাফিরা। এসেই রুপাঞ্জন ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। এই
লোকটার একটাই সমস্যা একটু জার্নি করলেই শুধু ঘুমাবে।
যাক গিয়ে ঘুমাক ও! আমি ততক্ষনে ডিনার বানিয়ে নেবো । তার
আগে এক কাপ কফি করে নিয়ে বাবা কে কল দিলাম।
,
:– হ্যালো বাবা! কেমন আছো??
,
:– ভালো আছি। তোরা কবে ফিরলি??
,
:– এইতো আজকে বিকালেই।
,
:– ওহহ!! তো কেমন ঘুরলি??
,
:– খুব ভালো বাবা! রুপাঞ্জন আমায় খুশি করতে কোনো ত্রুটি
রাখেনি।
,
:– আমি ও তো সেটাই চাই মা! ও তোকে সারাজিবন খুশি রাখুক।
,
:– হুম রাখবে দেখো। আচ্ছা বাবা এখন রাখি ডিনার বানাতে হবে।
,
:– আচ্ছা মা, নিজের খেয়াল রাখিস।
,
;– হুম, তুমি ও বাই!
,
,
কফি টা শেষ করে রান্না করতে শুরু করলাম। রান্না টা যেন অনেক
তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেলো। রুমে উকি দিয়ে দেখি উনি এখন ও
ঘুমাচ্ছেন। আচ্ছা কি আর করার, আমি একটু টিভি দেখি। একটা মুভি
দেখছিলাম তখন রুপাঞ্জন ডেকে বলল, ওর ক্ষিদে
পেয়েছে। আমি ওকে ডাইনিং এ বসতে বলে কিচেনে
গেলাম খাবার আনতে। কিন্ত খাবার টা হাতে নিয়ে সোজা হতে
যাবো তখনই কোথা থেকে একটা বিড়াল এসে লাফিয়ে উঠল
আমি টাল সামলাতে না পেরে খাবারের প্লেট সহ মেঝেতে
পড়ে গেলাম। কোমরে খুব ব্যেথা পেয়েছি। আমার চিৎকার
শুনে রুপাঞ্জন তারাতারি কিচেনে এসে দেখল। আমি
মেঝেতে পড়ে আছি ও আমাকে টেনে উঠাতে গেল কিন্তু
আমি কোমর ব্যথায় দাড়াতে পারছিনা তাই উনি আমাকে কোলে
তুলে নিলেন। তারপর নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিলেন। আমি ব্যথায়
চোখ বন্ধ করে আছি এদিকে রুপাঞ্জন আমাকে একেধারে
বকা দিয়ে যাচ্ছে।
,
:– তোমাকে কে বলেছে এখন রান্না করতে। জার্নি করে
এসেছো একটু রেস্ট করবে তা না উল্টা উনি চলেছেন
রান্নাঘরে। এখন যদি হাত পা ভাঙতো, কি হতো একবার ভেবে
দেখেছো। আচ্ছা এখন কোথায় লেগেছে দেখি।
,
:– কোমরে!!!
,
উনি কিছু না বলে আবার আমাকে কোলে তুলে নিলেন তারপর
রুমে এনে উপড় করে শুয়ে দিলেন। আমি বুঝতে পারছিনা উনি কি
করতে চান। কিছুক্ষন পর দেখলাম উনি আমার কোমরে মুভ
লাগিয়ে ম্যেসাজ করে দিচ্ছেন। কি যে ভালো লাগা এক অনুভুতি
হচ্ছে বুঝাতে পারবোনা। টিভিতে মুভের এডে যখন হাজবেন্ড
এইভাবে ওয়াইফের কোমর ম্যাসেজ করে দিত আমি হাসতাম,
ভাবতাম এমন হাজবেন্ড রিয়েল লাইফে হয় নাকি যে বউয়ের
এতো কেয়ার করবে। আমার অজান্তেই আমার চোখের
কোনে পানি চলে এলো। উনি কতো স্নেহে ম্যস্যেজ
করে দিচ্চেন আমার কোমর। তারপর আমাকে কম্বল পরিয়ে
দিয়ে রেস্টুরেন্টে এ কল দিয়ে খাবার অর্ডার করলেন। ইশশ!
কি যে হয়ে গেল। কত ইচ্ছা ছিল এতোদিন উনি বাইরের খাবার
খেয়েছেন আজ না হয় ঘরের টা খাবেন। কিন্তু বিড়াল টার জন্য
কিছুই হলোনা। কিছুক্ষন পর খাবার চলে এলে উনি রুমে নিয়ে
এলেন। তারপর নিজ হাতে আমাকে খাইয়ে তারপর নিজে খেয়ে
নিলেন। আমি অবাক হয়ে দেখছি ওনাকে, একটা ছেলে নিজের
বউ কে কি করে এতোটা ভালবাসতে পারে। উনি খাওয়া শেষে
আমাকে একটা পেইন কিলার মেডিসিন খাইয়ে দিলেন যাতে ব্যথা
কমে যায়। তারপর আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,
:– এবার ঘুমিয়ে পড়ো তো!!
,
কাল আমাদের বিয়ের ৬ মাস শেষ ওনার জন্য স্পেশাল কিছু
করবো। এইসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলাম।
,
,
,