# তোমার_নেশায় !
,
,
(০২)
,
কঠিন হৃদয়ের মেয়ে তৃষ্ণা!
.
.
.
.
পশু টা হা করে তাকিয়ে আছে। চুপ করে বুঝার চেষ্টা
করছি ওর তাকিয়ে থাকার মানে। কিছুক্ষন তাকিয়ে
থাকার পর একটা বাকা হাসি দিয়ে এগোতে লাগল আমার
দিকে। আমি কখনও কাউকে ভয়ে পাইনি কিন্তু আজ
আমার অজান্তেই আমার পিছু নামছে। পিছু নামতে
নামতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেল, বুঝতে পারলাম
আমার পালানোর পথ বন্ধ। পশু টা একদম কাছে এসে বলল,
বাহ! তখন লিফটে মিসেস রুপাঞ্জন বলেছি বলে সত্যি
নিজেকে আমার ওয়াইফ ভাবছো?? তা কখন ও হতে
পারেনা… তোমাকে কেন বিয়ে করেছি জানো?
নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছি পশুটার দিকে, আজ জিবনে
প্রথম বার নিজেকে খুব অসহায় লাগছে।
পশু টা আবার হাসি দিয়ে বলল, রিভেঞ্জ!!!!
বলেই ঘর কাপিয়ে হাসতে লাগল। এবার প্রচন্ড উত্তেজিত
হয়ে আমার দুই বাহু ঝাকাতে লাগল, তুমি জানো?? ১৪ মাস
বয়সে ক্যেন্সারে মারা যায় আমার মা!! তখন ও মায়ের
আদর কি বুঝতেও শিখিনি আর আমার মাথা থেকে মায়ের
ছায়া সরে গেল। তখন আমার ফুফু নিজেকে আমার মায়ের
স্থানে বসায়, ফুফু সব রুকম চেষ্টা করতেন যাতে আমি
মায়ের অভাব বুঝতে না পারি। কখন ও চোখের আড়াল
করতেন না আমায়। ফুফি কে পেয়ে ভুলেই গিয়েছিলাম
আমার মায়ের কথা। ধীরে ধীরে ফুফির কোলে বড় হতে
লাগলাম। ফুফি আমায় প্রতিদিন স্কুলে নিয়ে যেত আবার
সাথে করে নিয়ে আসত। আমি যখন ক্লাস থ্রি তে উঠি,
তখন আমার ফুফির মাঝে কেমন যেন পরিবর্তন দেখলাম।
ফুফি একা একা বসে থাকতো কারো সাথে তেমন মিশতো
না, একা একা কাদতো। ফুফি নাকি কাওকে খুব
ভালোবাসত। কিন্তু সেই লোকটা ফুফি কে
ভালোবাসেনা। ওইটুকু বয়সে ভালোবাসা কি বুঝার
ক্ষমতা হয়নি আমার।তবে নিজের ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে এইটুকু
বুঝে নিয়েছিলাম ভালোবাসা মানে কষ্ট, কান্না!
তারপর একদিন স্কুল থেকে বাসায় ফিরে দেখলাম
বাড়িতে অনেক লোক জন জমে আছে। আমার ফুফি ছাদ
থেকে লাফ দিয়ে মরার চেষ্টা করেছে। সময় মতো
হাস্পতালে নিয়ে না গেলে উনি বাঁচতেন না। সেদিন এক
মুহুর্তের জন্য সত্যি অনুভব করতে পারছিলাম আমি এতিম।
বাবা ফুফি কে বিদেশে ট্রিটমেন্ট এর জন্য পাঠিয়ে
দিলেন। কয়েক বছর পর ফুফি কিছুটা সুস্থ হলেও ডাক্তার
রা বলে উনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন।
বাকি জিবন উনি এইভাবেই মরার মত বেচে থাকবেন।
ফুফিকে বাসায় নিয়ে আসার পর আমি দৌড়ে
গিয়েছিলাম সেদিন ফুফির কাছে কিন্তু ফুফি যখন
আমাকে চিন্তে পারেননি, আমার পায়ের নিচ থেকে
মাটি সরে গিয়েছিল। সেদিন ফুফিকে প্রমিস
করেছিলাম যে ফুফির এই অবস্থা তাকে আমি তিলে
তিলে ঝন্ত্রনা দিয়ে মারবো।
এইটুকু বলে ও চোখ মুছল। আমার হাত জোরে চেপে ধরায়
আমি ব্যেথায় ককিয়ে উঠলাম। আমি কাতর কন্ঠে
জিজ্ঞাস করলাম,
এতে আমার কি দোষ??
পশু টা এবার আরো রেগে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে
যেতে লাগল। আমি হাত ছাড়ানোর আপ্রান চেষ্টা
করলাম কিন্তু সে ছাড়লনা। অবশেষে একটা রুমের সামনে
এসে থামলাম। আমি ওর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে
তাকাতেই ও দরজা খুলে ভিতরে ডুকল। রুমে ডুকে আমার
চোখ কপালে উঠল। এই রুম টা ছোট খাটো একটা
হস্পিটাল। আর বেডে শুয়ে আছে এক মাঝ বয়সি মহিলা,
তার দৃষ্টি একদিকে নির্বাক। ইনিই কি মিঃ রুপাঞ্জনের
ফুফি?? মহিলা কে এই অসুস্থ অবস্থায় ও অনেক সুন্দর
দেখাচ্ছে।উনি আমাদের বয়সে নিঃসন্দেহ চোখ ধাদানো
সুন্দরি ছিলেন, আবার ওনার এই পরিনতির কথা মনে
পড়তেই চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল। নিরবতা ভেঙগে
পশুটা বলল,
দেখ এই আমার ফুফি! আমার ফুফি সারাক্ষন তাকিয়ে
থাকে একমনে কিছু বলেনা, নড়তে পারেনা আর ওনার এই
অবস্থার জন্য একমাত্র তোর বাবা আহসান চৌধুরী দায়ী!
উনি আমার ফুফিকে কষ্ট দিয়ে তোর মা কে বিয়ে করে।
আমার ফুফি কি অপরাধ করেছিল হুম?? শুধু
ভালোবেসেছিল। তার বিনিময় কি পেলেন উনি?? তাই
আমি ও আহসান চৌধুরী কে বুঝিয়ে দেব। ভালোবাসা
নামক কষ্ট কেমন হয়! তোকে আমি ভালোবাসা নামক
ঝন্ত্রনা দিয়ে তিল তিল করে মারবো কিন্তু মরতে
দেবনা। তুই মরার জন্য কাঁদবি কিন্তু মরতে পারবিনা
আজিবন তোকে আমার নরকে পুড়তে হবে। কেউ বাচাতে
আসবেনা তোকে! তুই আমার স্ত্রী নয় আমার ছাকরানি
হয়ে থাকবি এই বাড়িতে। I will never spare you, Mrs rupsha
chowdury!!! ……..
এই বলে সে রাগে হন হন করে বেরিয়ে গেল। আমি
মেঝেতে বসে পড়লাম। কি হবে এখন? রুপাঞ্জন খান
আমায় যে ডিলের কথা বলে বিয়ে করেছিল সেটা কি সে
পুরন করবেনা? তাহলে আমাদের বিজনেসের কি হবে? আর
বাবা…….
বাবার কথা মনে পড়তেই গলা শুকিয়ে গেল। পশুটা যদি
বাবার কোনো ক্ষতি করে। no way! এইভাবে হাত গুটিয়ে
বসে থাকলে চলবেনা। পশুটা আমার সাথে যা খুশি করুক
কিন্তু বাবা আর বিজনেসের কোনো ক্ষতি আমি হতে
দেবোনা। আমায় একবার বাবার খবর নিতেই হবে।
এইভেবে উঠে দাড়ালাম তাতে ফুফির দিকে চোখ পড়ল।
আমি ওনার পাশে গিয়ে বসে পড়লাম, ফুফি আপনি কি
আমায় শুনতে পাচ্ছেন?? আম সরি ফুফি, আম সরি! আমি
জানি আপনার সাথে অন্যায় হয়েছে কিন্তু ভাগ্যের
লিখন তো কেউ বদলাতে পারেনা। ডাক্তার রা যা খুশি
বলুক আমি জানি আপনি একদিন ঠিক সুস্থ হয়ে উঠবেন। এই
বলে উঠে আগের সেই রুমে গেলাম। আমার পার্স টা
বিছানার উপরেই পড়ে ছিল। পার্স থেকে ফোন বের
করলাম। আশেপাশে তাকিয়ে দরজা টা লাগিয়ে নিলাম
বাবা কে এক্ষুনি ফোন করা দরকার! কল দিলাম, দুইবার
রিং হতেই রিছিভ হলো,
:– হ্যালো বাবা!
,
:– হ্যা মা! কেমন আছিস তুই?? ওই হারামি টা তোর সাথে
খারাপ কিছু করছেনা তো??
,
বাবার গলা শুনতেই আমার কান্না আসতে লাগল। কিন্তু
পরে নিজেকে সামলে নিলাম মেয়েদের মতো কাদলে
চলবেনা, আমাকে শক্ত হতে হবে”
:– ভালো আছি বাবা! তূমি ঠিক আছো আর মেডিসিন
খাচ্ছো তো তুমি?
,
:– ঠিক আছি ডিয়ার। মেডিসিন ও নিচ্ছি। তুই প্লিস
নিজের খেয়াল রাখিস। আর কোনো দরকার হলে সাথে
সাথে আমায় জানাবি! okk??
,
:– I am fine বাবা! আর এদিকে সব ঠিক আছে। তুমি নিজের
খেয়াল রেখো, রাখছি!
,
তারপর এখন ম্যেনেজার কে কল দিয়ে অফিসের খবর
নেওয়া দরকার। প্রথম রিং হতেই রিছিভ!
,
:– yes Sir! (অফিসের সবাই আমায় sir ডাকে)
,
:– অফিসের কি অবস্থা?? মিঃ খান গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রি
এর সাথে বিয়ে নিয়ে যে ডিল হয়েছিল তারা কি সেটা
পুরন করেছে??
,
:– না স্যার! আমরা খুব টেনশানে আছি! এদিকে ফরেন
ব্যেংক থেকে ফোন আসছে বারবার! আপনি প্লিস
তাড়াতাডি কিছু করুন নাহলে আমাদের কোম্পানি,
অফিস সব যাবে।
,
:- ok relax! আমি দেখছি কি করা যায়! ততক্ষন তুমি ফরেন
ব্যেংক অফিসার দের সামলাও….বাই!
,
পশুটা কে যতটা খারাপ ভেবেছিলাম সে তার চেয়ে ও
নিচ। নিজেদের ডিল ভঙগ করেছে। তারমানে তাদের
একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল প্রতিশোধ নেওয়া।এইসব বাবাকে
জানতে দেওয়া যাবেনা শুধু শুধু টেনশান করবেন। আমায়
কিছু একটা করতে হবে। বাসায় পশুটা নেই বোধ হয় আমায়
এখন বেরোতে হবে! তার আগে অনলাইন কিছু শপিং করে
নিলাম ওই পশুটার পোশাক পরে থাকতে গৃন্না লাগছে।
শপিং আসতেই চটপট সুইট জিন্স পরে বেরিয়ে পড়লাম।
আমাদের পুরোনো বিজনেস পার্টনার মিঃ আজিজ এর
কাছে একবার যাওয়া দরকার! হয়ত কোনো হেল্প পেতে
পারি। আমি গেইট থেকে বেরোতে যাব তখনই কিছু গার্ড
আমায় বাধা দিল। আমি রেগে ওদের দিকে তাকালাম!
,
:–how dare you to stopping me??? তোমরা জানো আমি
কে??
,
:– সরি ম্যেম! স্যার আপনাকে বের হতে নিষেধ করেছেন।
,
:– আমাকে আটকানোর ফল কি হতে পারে তোমরা ধারনা
ও করতে পারবেনা। তোমাদের স্যার এর কোনো ক্ষমতা
নেই রুপশা চৌঃ কে আটকে রাখার। সরে দাড়াও!
,
গার্ড রা সরে গেলে আমি তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়লাম।
আজিজ এম্পায়ার এর দিকে! ওনার অফিসে পৌছাতেই
ওনার পি.এ আমায় বসতে বলল। কিছুক্ষন পর উনি ওনার
কেবিনে ডেকে পাঠালেন আমায়!
,
আমি ওনার কেবিনে ডুকতেই,
:– আরে রুপশা মা যে! কেমন আছো??
,
:– আংকেল অনেক বিপদে পড়ে আপনার কাছে এসেছি।
প্লিস সেইভ আস!
,
:– কি হয়েছে তোমার?
আমি ধীরে ধীরে আংকেল কে সব খুলে বললাম, উনি
কিছুক্ষন ভেবে বললেন,
:– ঠিক আছে আমি তোমাদের ২ কোটি টাকা লোন দেব।
খুশিতে চকচক করে উঠল আমার চোখ! আমি ধন্যবাদ
জানালাম তাকে! হঠাৎ আংকেল এর ফোন বেজে উঠল।
আংকেল ফোন কানে নেওয়ার কিছুক্ষন পর ওনার
চেহেরার রং বদলে গেল। উনি কাকে যেন অকে বলে
ফোন রেখে দিলেন!
,
:– কার ফোন ছিল আংকেল??
,
:– সরি টু সে রুপশা! আমি তোমাদের হেল্প করতে পারব
না।
,
আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। এইত উনি রাজি
ছিলেন, ফোনে কি এমন বলল যে উনি মত বদলালেন।
,
:– কিন্তু আংকেল…।।
,
:– রুপাঞ্জন খান আমায় থ্রেড দিয়েছে আমি যদি
তোমাকে টাকা দেই তাহলে ইনকাম টেক্স কে কল করে
আমার অফিস সিল করিয়ে দেবে। আমি পারবোনা প্লিস
চলে যাও!
,
:– আংকেল আমার কথা….
,
:– স্টপ রুপশা প্লিস এবার তুমি আসতে পারো!
,
আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা পশুটা আমার সাথে এমন
করছে কেন। আমাদের বরবাদ করলে কি ওর ফুফি সুস্থ হয়ে
যাবে?? আজ ওকে আমার ফেস টু ফেস আন্সার দিতে হবে,
আজ এপার নয় ওপার! অফিস থেকে বেরিয়ে রাস্তায়
দৌড়াচ্ছি। ওদিকে রুপাঞ্জন মনিটরে সব দেখছে আর
হাসছে,
:–দৌড়াও!! মিসেস রুপশা! মাত্র তো রেইস শুরু হলো।
তোমার জন্য যে আরো কতো গেইম অপেক্ষা করে আছে
নিজেও জানোনা! হা হা হা হা
,
,
,
,