#তোর আসক্ত❤
#পর্ব – ৯
#writer_শিফা_আফরিন_মিম
🍁
রাইসা অসহায় মুখ করে রুপসার দিকে তাকায়।
রাইসা – আমিই বা কী করবো বলো। ঐ ছেলেটা এসেই যদি বলে দিতো তোমার দেবর হয় তাহলে কি আমি ওকে এতোখন বাহিরে দাঁড় করিয়ে রাখতাম?
রুপসা – আচ্ছা বাবা হয়েছে। এবার বল পড়াশোনা ঠিকঠাক মতো করছিস তো? নাকি আমি নেই বলে সব কিছুতে অবহেলা শুরু হয়ে গিয়েছে?
রাইসা – না আপু সব ঠিক আছে।
রুপসা আর রাইসা অনেকক্ষন যাবৎ গল্প করে। একসময় রাইসা ঘুমিয়ে পড়ে। আর রুপসা ও নিজের রুমে চলে আসে।
হটাৎ মাঝরাতে রাইসার পানির পিপাসা লাগলে টেবিলে রাখা গ্লাস টায় দেখে এক ফুটাও পানি নেই। বের হতে ইচ্ছে বা থাকা স্বত্তেও পানির পিপাসায় বের হতেই হলো।
পানি নিয়ে নিজের রুমের পাশে আসতেই কেউ রাইসার হাত চেঁপে ধরে…
রাইসা প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়। ভয়ে হাত পা কাঁপছে তার। এত রাতে কে তাকে ধরতে যাবে আবার। রুপসা ত সেই কখন চলে গেছে। তাহলে?
রাইসা ভয়ে ভয়ে পেছন ফিরে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়..
রাইসা – আ আপনি?
আমান – ঐ সময় ভাবির সাথে কী বলছিলে?
রাইসা – ক কী বললাম? (এইরে এই ব্যাটা কী আমাদের কথা শুনে নিলো নাকি? কিন্তু ঘরে ত আমি আর আপু ছাড়া কেউই ছিলো না তাহলে? নিশ্চয় আড় পেতেছিলো। ফাজিল পোলা!…. মনে মনে)
আমান – কথা বলছো না কেনো? (কিছুটা ধমক দিয়ে)
রাইসা – আ আসলে….
আমান – এতোই যদি তোমার প্রবলেম তাহলে যখন দরজা খুলে আমাকে দেখেছিলে তখনই বলতে পারতে আমি চলে যেতাম। ভাবির কাছে আমার সম্পর্কে যা নয় তা বলেছো?
রাইসা – আমি তো এমনি ব বলেছিলাম।
আমান – ওকে আমি কাল সকাল সকালই চলে যাবো ইভেন কেউ ঘুম থেকে উঠার আগেই চলে যাবো। নাউ হ্যাপি? — বলেই আমান হনহন করে নিজের রুমে চলে যায়।
( আসলে রুপসা আর রাইসা যখন কথা বলছিলো আমান ও চেয়েছিলো তাদের সাথে বসে আড্ডা দিতে ভেবেছিলো আয়ান ও হয়তো এখানেই আছে। কিন্তু আমান রুমে ঢুকার আগেই রাইসার কথা গুলো শুনতে পায় তারপর সেখান থেকেই নিজের রুমে ফিরে যায়।)
রাইসার এখন নিজের উপরই অনেক রাগ হচ্ছে। কেনো যে এইসব বলতে গেলো। এখন ত মার কাছেও বকা শুনবে আপুর কাছেও বকা শুনবে আর উনি? উনি তো ভুল বুঝবেই!
রাইসা এক বালতি কষ্ট নিয়ে নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে। এক বালতি কষ্ট পেয়ে বেচারির পানির পিপাসা টা চলে গেছে!
এদিকে রুপসা রুমে এসে দেখে আয়ান সোফায় শুয়ে আছে।
রুপসা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে আয়ান কে দেখে। তারপর আস্তে করে আয়ান কে ডাকতে থাকে….
রুপসা – এইযে ….. উঠুন। বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ুন আমি বরং রাইসার রুমেই চলে যাই। এখানে আপনি ঘুমাতে পারবেন না। উঠুন না….
অনেকক্ষন ডাকার পরও আয়ান কোনো সাড়া দেয় নি। কে জানে রুপসার ডাক কী তার কানে পৌঁছায় নি? নাকি ইচ্ছে করেই রুপসাকে ইগনোর করছে।
রুপসা উপায় না পেয়ে বিছানার এক কোণে গিয়ে শুয়ে পড়ে।
সকালে….
জানালার ফাঁক দিয়ে হালকা রোদের স্পর্শে ঘুম ভাঙে রুপসার। ঘুম ঘুম চোখে উঠে বসে। বিছানার পাশে তাকিয়ে আয়ান কে দেখতে না পেয়ে সোফায় তাকায়।
আয়ান এখনো ঘুমাচ্ছে। তার মানে কাল রাতে আয়ান সোফাতেই শুয়ে ঘুমিয়েছে। বিছানায় আর আসেই নি?
সোফায় ও কি ঘুমানো যায়? আমিও তো একদিন শুয়েছিলাম সোফায় সারা রাত ঘুমাবো কিভাবে ঘন্টাখানেক পরেই তো ধপাস করে ফ্লোরে! আহা কোমড় টায় যে কি ব্যাথাটাই না পেলাম!
আচ্ছা উনিও কি রাতে পড়ে গিয়েছিলো? কি জানি বাবা! ছেলে মানুষ তো সব কিছুই পারে হুহহ।
ইশশ উনি যদিও পড়ে গিয়ে থাকেন তাহলে তো আমাকে বলবেই না লজ্জায়। আমিও তো পড়ে যখন কোমড়ে ব্যাথা পেয়েছিলাম মাকে বলছিলাম না। তখন মা আমায় কি জেরা টাই না করলো! হ্যা… আইডিয়া! উনার কাছ থেকেও জোর করেই সব জানতে হবে। যতোই হোক আমি তো উনার বিয়ে করা বউ!
যেই ভাবা সেই কাজ….
রুপসা ঝড়ের গতিতে আয়ানের কাছে গিয়ে আয়ান কে ধাক্কাতে শুরু করে।
রুপসা – এইযে…. শুনছেন? উঠুন না…
আয়ান রুপসার চিৎকারে আর ধাক্কায় উঠে বসে পড়ে। চোখে মুখে তার বিরক্তির ছাপ!
আয়ান – এভাবে চেঁচাচ্ছো কেনো? ইডিয়ট কোথাকার!
রুপসা – চেঁচাবো না তো কি করবো শুনি? আগে আপনি বলুন কোথায় ব্যাথা পেয়েছেন? বলুন জলদি….
আয়ান – হোয়াট?
রুপসা – আপনি রাতে সোফায় ঘুমিয়েছিলেন তো?
আয়ান – হ্যা তো?
রুপসা – তো মানে? আমিও একদিন সোফায় শুয়েছিলাম। জানেন, কিছুক্ষন পরই ধপাস করে ফ্লোরে পড়ে গিয়ে কী ব্যাথাটাই না পেয়েছিলাম মাগো….
আয়ান রুপসার কথা শুনে রেগে যায়। এতো বড় মেয়ে কী রকম অদ্ভুত টাইপ আচরণ করে দেখো ইচ্ছে করছে ঠাটিয়ে চর বসিয়ে দিই…যত্তোসব!
রুপসা – বলুন কোথায় ব্যাথা পেয়েছেন?
আয়ান – সবাই তোমার মতো ইডিয়ট না বুঝলে? — বলেই হনহন করে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে।
রুপসা – যাহ বাবা! উপকার করতে আসলেও দোষ! হুহহহহ
এদিকে….
রাইসা সকালে উঠেই আমানের রুমে উঁকি মারে…
একি! রুম তো খালি! তার মানে ব্যাটা সত্যিই চলে গিয়েছে? হুহহ যাক যাক আমার তাতে কী?
রুপসা আর আয়ান একসাথে নিচে নামে ব্রেকফাস্ট করতে। খাবার টেবিলে আমান কে দেখতে না পেয়ে রুপসা বলে…
রুপসা – ভাই কোথায়?
রাইসা – তোর মাথাটা কি গেলো নাকি? ভাই আসবে কোথা থেকে আমরা শুধু দুই বোন ভুলে গেলি নাকি?
রুপসা – চুপ কর। যতো আজাইরা কথা। আমি আমান ভাইয়ের কথা বলছি।
রাইসা আমানের কথা শুনেই চুপ মেরে যায়।
রুপসা টেবিল ছেড়ে উঠে আমানের রুমে গিয়ে দেখে আমান নেই।
রুপসা – গেলো কই?
আয়ান ফোন হাতে নেয় আমান কে ফোন দেয়ার জন্য। তার আগেই দেখে আমানের ম্যাসেজ…..
” ভাইয়া আমি বাড়িতে চলে আসছি। আসলে অনেক দিন পর দেশে এসেছি তো তাই সবার সাথে দেখা করতে হবে। অনেক কাজ ও আছে। তোমাদের সাথে তো একদিন কাটালাম। তাই চলে আসছি আজ। ”
আয়ান ম্যাসেজ টা দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে….
রুপসা – আমান ভাই তো নেই রুমে।
আয়ান – আমানের নাকি কিছু কাজ আছে তাই ও চলে গেছে।
রুপসা – ওহহ। কিন্তু খাওয়া দাওয়া করেও তো যেতে পারতো।
আয়ান – কাজ পড়ে গেছে।
রুপসা আর কথা না বাড়িয়ে খেতে বসে।
২ দিন পর…
আয়ান আর রুপসা বাড়ি চলে আসে। সারা বেলা রুপসা তার শাশুড়ি মায়ের সাথে গল্প করেই কাটিয়ে দেয়। বিকেলের দিকে ছাদে যায়।
রুপসা ছাদের এক কোণে গ্রীল ধরে দাড়িয়ে থাকে। আবহাওয়া টাও কেমন হয়ে আছে। মনে হচ্ছে এক্ষুনি বৃষ্টি নামবে।
রুপসার ধারনা টাই ঠিক কিছুক্ষণ পরই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। রুপসা রুমের দিকে পা বাড়িয়ে ও যায় না।
এই মূহুর্তে তার যেতে ইচ্ছে করছে না। বৃষ্টি তে ভিজতে মন চাইছে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই মুষলধারায় বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়।
রুপসার খুশি আর দেখে কে!
দু হাত ছড়িয়ে বৃষ্টি উপভোগ করছে সে! কতো দিন ধরে যে এতো আনন্দ করে বৃষ্টিতে ভেজ উপভোগ করতে পারে না তার কোনো হিসেব নেই। আজও হয়তো পারতো না যদি তার মার কাছে থাকতো।
বৃষ্টিতে ভেজার নাম নিলেই সেই একি কথা…. রুপসা একদম বৃষ্টিতে ভিজতে যাবি না। ঠান্ডা লেগে যাবে তো!
কিছুদিন আগেও এমন শাসনে ছিলো সে কিন্তু আজ মার কাছ থেকে দূরে!
ভাবতেই কষ্ট অনুভব করছে রুপসা। বৃষ্টির আনন্দও পারেনি তার চোখের কোণে আসা পানি টা আটকাতে!
অনেকক্ষন ধরেই আয়ান রুপসাকে খুঁজে যাচ্ছে। কেনো খুঁজছে তার জানা নেই। আয়ান রুম থেকে বের হয়ে নিচে আসে। নিচেও রুপসাকে পায় না।
তারপর তার মায়ের রুমে যায়। কিন্তু সেখানেও রুপসা নেই। আয়ান এবার একটু চিন্তায় পরে যায়। হটাৎ তার মাথায় এলো ছাদের কথা। হ্যা…. রুপসা নিশ্চয় ছাঁদে আছে হইতো। আয়ান দ্রুত পায়ে ছাঁদে পৌঁছে যায়। তার ভাবনাটাই ঠিক।
রুপসা চোখ বন্ধ করে বৃষ্টি তে ভিজছে। পড়নের পাতলা তাঁতের শাড়ি টা ভিজে পুরো লেপ্টে গেছে তার ফর্সা শরীর টার সাথে!
আয়ানের কেমন যেনো ঘোর লেগে যাচ্ছে। এই প্রথম কোনো মেয়ে কে বৃষ্টি তে ভিজতে দেখছে। আয়ান ধীর পায়ে রুপসার দিকে এগিয়ে যায়।
কোমড়ে কারো হাতের স্পর্শ আর ঘাড়ে কারো ঠোঁটের পরশ পেয়ে চমকে উঠে রুপসা!
সাথে সাথেই ছিটকে সরে যেতে চাইলে কেউ তাকে আরও চেঁপে ধরে। বেচারির তো ভয়ে দম যায় যায় অবস্থা। কে এলো এখানে। এভাবে কেউ কাউকে জড়িয়ে ধরে নাকি। বোধহয় নিজের বউ ভেবে জড়িয়ে ধরেছে! আজকাল মানুষের চোখ যে কোথায় রাখে কে জানে।
রুপসা একটু ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে চাইলেই লোকটা বলে….
— এতো নাড়াচাড়া করছো কেনো? (ঘোর লাগা কন্ঠে)
রুপসা যেনো স্তব্ধ হয়ে যায়। এ তো আয়ান! আয়ান তার এতো টা কাছাকাছি! ভাবতেই সে পুরো ফ্রিজড হয়ে যাচ্ছে। রুপসার হার্টবিট টাও যেনো অনেক ফাস্ট হয়ে যায়।
আয়ান রুপসার ঘাড়ে হালকা একটা চুমু দিতেই রুপসা কেঁপে উঠে। দু হাত দিয়ে নিজের শাড়িটা খামচে ধরে রাখে। মুখ দিয়ে যেনো কোনো কথাই নের হচ্ছে না।
হটাৎ আয়ানের ঘোর কাটে। এক ধাক্কায় রুপসাকে দূরে সরিয়ে দেয়। রুপসা ব্যালেন্স রাখতে না পেরে পড়ে যায়। আয়ানের নিজের উপর এখন প্রচন্ড রকমের রাগ হচ্ছে। নিজের চুল টেনে ছিড়তে ইচ্ছে করছে। এসব কি করছিলো সে!
রুপসা ছলছল চোখে আয়ানের দিকে তাকায়। আয়ান সেদিকে পাত্তা না দিয়ে রুপসাকে ছাদে রেখেই নিচে নেমে আসে।
রুপসার চোখের পানি যেনো বাঁধ মানছে না। অনেক কষ্ট হচ্ছে তার। আয়ান কাছে এসেও দূরে ঠেলে দিচ্ছে। একবারও বুঝতে পারছে না আমি আয়ানকে কতো টা ভালোবেসে ফেলেছি!
রুপসা আরও অনেকক্ষন বৃষ্টিতে ভিজে চোখের পানি ফেলে।
আয়ান রুমে এসে ওয়াশরুমে চলে যায়। তারপর চেঞ্জ করে এসে ধপ করে খাটে বসে পড়ে।
বার বার রুপসার সাথে কাটানো ঐ মূহুর্ত টাই আয়ানের চোখে ভাসছে।
আয়ান – এই মেয়েটা আমাকে পাগল করে দিবে। আমি আর ওকে সহ্য করতে পারছিনা। আমি কি ওর আসক্ত হয়ে গেলাম?
না না, তা কখনো সম্ভব না। ভালোবাসতে পারবো না কখনো। শুধু কষ্টই দিয়ে যাবো। তাহলেই ও আমাকে মুক্তি দিয়ে দিবে।
প্রায় অনেকক্ষন পর রুপসা রুমে আসে। ঠান্ডায় পুরো জমে গেছে মেয়েটা। রুমে এসে দেখে আয়ান খাটে উল্টো দিক হয়ে শুয়ে আছে। ঘুমিয়ে আছে কিনা বুঝতে পারছে না রুপসা।
আলমারি থেকে নিজের কাপড় গুলো নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে রুপসা। অনেকক্ষন পর বের হয়ে আসে। চোখ দু’টো লাল হয়ে ফুলে আছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে অনেকক্ষন কান্না করেছে হইতো। রুমে এসেই বেলকনিতে চলে যায়। কেনো জানি অনেক বার বার শুধু কান্না পাচ্ছে তার।
আয়ান কি কোনো দিনই তাকে বুঝবে না?
রাতে…
সবাই ডিনার করে রুমে চলে আসে। রুপসা খেতে চাইছিলো না কিন্তু তার শাশুরি মা জোর করে খাইয়ে দিয়েছে। রুমে এসে দেখে আয়ান খাটে বসে আছে। রুপসার দিকে একবার শান্ত চোখে তাকায়।
রুপসা চাদর টা আর বালিশ টা নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়। আজ আর আয়ান কে জিগ্যেস করে নি সে কোথায় ঘুমাবে!
আয়ান বেশ অবাক হয়। যে মেয়ে দুইদিন আগেও বেলকনিতে ঘুমাতে যেতে চাইতো না ভয় পেতো সে আজ নিজে নিজেই চলে গেলো!
অবশ্য তাতে আয়ানের কিছুই যায় আসে না। আয়ান বিছানায় শুয়ে পড়ে।
রুপসা বেলকনির গ্রীলের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে। মাথা টা প্রচন্ড রকমের ব্যাথা করছে। অনেক শীত শীত ও লাগছে। কিন্তু চাদর তো একটাই এনেছে। যেটা ফ্লোরে বিছিয়ে ঘুমাবে।
রুপসা কিছুক্ষন বসে থেকে বালিশ টা নিয়ে শুয়ে পড়ে। মাথা ব্যাথা আর এরকম শীতে তার ঘুম আসবে কিনা সেও বুঝতে পারছে না।
চলবে…