#দুষ্টু_মিষ্টি_প্রেমকথণ
#পর্বঃ১৪
#লেখিকাঃফারজানা_তাবাসসুম
!!
কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছি। শরীর অনবরত কাপছে। বৃষ্টিতে ভেজার ফলশ্রুতিতে এমন অবস্থা হয়েছে আমার।রোদ্দুর পাশে বসে মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে।কিছুক্ষন পর পর থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর মেপে যাচ্ছে। কিন্তু হা,হু কোনো শব্দ পর্যন্ত করছে না আমার সাথে। রোবটের মতো বসে আছে। আর যা যা করার প্রয়োজন সব করছেন শুধু কথা বলা ব্যাতিত। কিন্তু আমার যে এই মুহুর্তে সেই জিনিসটারই বেশি প্রয়োজন। তা কি বুঝেন না উনি?
!!
তখন আমাকে পেয়ে জড়িয়ে ধরেছিল কিছুক্ষণ। কিন্তু তখনো কোনো কথা বলেনি। পায়ে ব্যাথার কারনে হাটতে পারছিলাম না তা দেখে কোলে তুলে নেন তবুও জিজ্ঞেস করেননি কিভাবে ব্যাথা পেয়েছি। আর এখানে এসেও একি কাহিনী। সব করতে পারছে কিন্তু কথা বলছে না। হয়তো অভিমানের দেয়ালটা একটু বেশীই উঁচু হয়ে গেলে, মানুষ এমন চুপ করে থাকে। এমনেতেই জ্বর এর জন্য ভালো লাগছে বা,তারউপর রোদ্দুরের এমন ব্যবহার মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে।চোখ দিয়ে দু’ফোটা পানি গড়িয়েই দম নিলাম।
!!
কি করেছি আমি? কথা কেনো বলছেন না?
………
কি হলো?
………
আমার উপর রাগ করে আছেন?
″রোদ্দুর কায়নাতের দিকে তাকালো। জ্বরে মেয়েটার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। দুই চোখের কোনায় পানি টলমল করছে। এই বুঝি তা বাঁধ ভেঙে গড়িয়ে পরবে। ঠোঁটজোড়া ঈষৎ লাল বর্ন ধারন করেছে। চুলগুলো এলোমেলো। কায়নাতের এলোমেলো চুল গুলোই রোদ্দুরের সব থেকে প্রিয়। অনবরত কাপা ঠোঁটজোড়ার রোদ্দুরকে খুব করে টানছে। রোদ্দুরের বুক ও কেপে কেপে উঠছে।
″নাহ্,নিজেকে কন্ট্রোল কর রোদ্দুর জাস্ট কন্ট্রোল ইউরসেলভ্।এইভাবে ঘোরের মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দিলে চলবে না।″ রোদ্দুরের ভাবনার মাঝেই তার গলা কেউ জড়িয়ে ধরলো। ″কায়নাত″ কায়নাত গলা জড়িয়ে ধরে জ্বরের ঘোরে কি যেনো বলে যাচ্ছে।
″তুমি খুব খুব খুব্বি পচা রোদ্দুর। তুমি শুধু শুধু আমাকে এইরকমভাবে কষ্ট দাও। একটু খানিও ভালোবাসো না আমায়।″ বলেই কান্না করা শুরু করে দিলো কায়নাত।
আরে কান্না করছো কেনো…!!! শান্ত গলায় বললো রোদ্দুর।
কায়নাত রোদ্দুরের গলা ছেড়ে দিয়ে তার মুখের সামনে নিজের মুখখানা এনে রোদ্দুরের দিকে ফেল ফেল করে তাকিয়ে থাকলো। রোদ্দুরের এবার নিজেকে সামলাতে বেশ কষ্টই হচ্ছে।
″কায়নাত,,,তোমার জ্বর কমেনি এখনো। শুয়ে থাকো তুমি।″ অন্যদিকে তাকিয়ে বললো রোদ্দুর
………
কায়নাতের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে, তাকালো তার দিকে। কায়নাত তার ভ্রুজোড়া কুচকে রোদ্দুরকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। রোদ্দুর হাসবে নাকি রাগ করবে তা সে বুঝতে পারছে না, কারন কায়নাত তার দিকে একদম বাচ্চাদের মতো তাকিয়ে আছে। রোদ্দুর না পেরে এইবার হেসেই দিলো। আর হাসার সাথে সাথে রোদ্দুরের বাম গালে ঠোঁটের পাশে টোল পড়লো।তা কায়নাতের দৃষ্টিগোচর হয়নি।কিছু না ভেবে কায়নাত রোদ্দুরের ঠোঁটের কাছের জায়গাটায় চুমু দিয়ে,, রোদ্দুরের বুকে নুইয়ে পড়লো।
আচমকা কায়নাতের এমন কাজে রোদ্দুর পুরো ফ্রিজড্ হয়ে গেছে। রোদ্দুরের বুকের চিন চিন ব্যাথা করছে,,এই বুঝি তার প্রাণপাখিটা বাইরে চলে আসবে।
!!
কিছুক্ষন পর রোদ্দুর নিজেকে সামলে নিয়ে,, কায়নাতের দিকে নজর দিলো। মেয়েটা তার বুকের সাথেই লেপ্টে আছে। কিন্তু অনবরত কাপছে। জ্বর এর মাত্রাটা খুব বেশী, তাই এতো কাপছে। রোদ্দুর আলগোছে কায়নাতকে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুইয়ে দিলো,,সাথে নিজেও শুয়ে পড়লো,,, কায়নাতকে একদম নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে।
এ যেনো এক স্বর্গীয় অনুভুতি,,,নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের বুকের মাঝে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শান্তিতে ঘুমানো।
!!
সকালে কায়নাতের আগে রোদ্দুরের ঘুম ভাঙলো। ঘুম থেকে উঠে কায়নাতকে পাশে দেখতে না পেয়ে, বুকটা ধক্ করে উঠলো। চারপাশে একবার চোখ বুলালো। কিন্তু না নাহ্,,কায়নাত নেই আশে পাশে। বুকটা আবার ধরফরিয়ে উঠলো। বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে গিয়ে একবার উকি দিলো।সেখানেও কায়নাত নেই।
হঠাৎ করে রোদ্দুরের খাটের অপর পাশের নিচে, মেঝেতে চোখ গেলো। দেখলো কায়নাত কম্বল পেচিয়ে মেঝেতে পরে আছে। তাতে তার কোনো হুশ্ নেই। বেঘোরে ঘুমুচ্ছে সে। রোদ্দুর বুকে হাত রেখে একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে, কায়নাতের কাছে গেলো। কায়নাতকে কোলে করে নিয়ে আবার বিছানায় শুইয়ে দিলো। কপালে হাত দিয়ে দেখলো জ্বর কিছুটা কমেছে। রোদ্দুর খেয়াল করলো,কায়নাতের গাল আর নাকের ডগা লাল হয়ে আছে। ঠোঁটজোড়ার ও একি অবস্থা। চুলগুলো কিছুটা কপালে ঘারে, মুখে এসে পড়ছে। রোদ্দুর মুখে আসা চুলগুলো এক হাত দিয়ে কানের কাছে গুজে দিলো। তারপর কপালে একটা চুমু দিয়ে,, মুচকি হেসে বললো,,,″পাগলী একটা″। কায়নাত তখনো বেঘোরে ঘুমে আচ্ছন্ন।
!!
কিছুর আলো চোখে এসে পড়ায় আমার ঘুম ভাঙে যায়। চোখ মেলে ভালোভাবে তাকাতেও পারছি না। অসম্ভব পরিমানে জ্বলছে চোখ দুটি। তাও যতোটা সম্ভব চোখ মেলে তাকালাম। ধীরে ধীরে উঠে ওয়াশরুমের দিকে গেলাম। হাত-মুখ ধুয়ে বাইরে বেরিয়ে আসলাম। জানালার পাশে গিয়ে দাড়ালাম। বাইরের মিষ্টি রোদ চোখে মুখে পড়ায় কিছুটা ভালো লাগছে এখন। কিন্তু তাও মাথাটা কিছুটা ঝিম ঝিম করছে। হঠাৎ মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো। পড়ে যেতে নিলে পিছনে কিছুর সাথে লেগে আটকে গেলাম,, পড়ে যায়নি তাহলে। আমাকে ধরে ফেললো কেও। নিজেকে সামলে পিছনে ফিরে দেখি রোদ্দুর। তাকে দেখে মাথাটা এমনেতেই নিচের দিকে নুইয়ে যায় আমার। মনে হাজারটা প্রশ্ন এসে ভীড় জমায়।
উনি কি এখনো আমার সাথে কথা না বলে থাকবেন? রাগ করে আছেন এখনো? এখন আবার রাগ দেখাবেন নাতো? এখানে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য আর মাথা ঘুরে পরে যাওয়ার জন্য।
থতমত খেয়ে যাই আমি। রোদ্দুর কিছু না বলে-কয়েই আমাকে কোলে তুলে নিলেন। তারপর বিছানায় শুইয়ে দিয়ে,,,আমার দিকে না তাকিয়েই বললেনঃ
″এইভাবে হুটহাট,,, বিছানা থেকে উঠে যাওয়ার দরকার নেই। বার বার কোলে নেওয়ার জন্য আমি থাকবো না। সুস্থ হয়ে গেলে যা ইচ্ছা তা করলে কোনো আপত্তি থাকবেনা কারো কিন্তু তা সুস্থ না হওয়ার আগে নয়।″ কথাগুলো বলে চলে গেলো রোদ্দুর।
রোদ্দুরের প্রতিটা কথা,,, বুকে সুচের মতো ফুটেছে। রোদ্দুরের এমন ব্যাবহার আর সহ্য হচ্ছে না আমার। বিছানার চাদর দুই হাতে খামচে ধরলাম।
আমি বুঝে গেছি রোদ্দুরের আমার প্রতি ভালোবাসা, আমার যত্ন নেওয়া, আদর করে তোতাপাখি ডাকা সব, এইসব কিছুতে অভ্যস্ত আমি। আমি তার এমন আচরন এ অভ্যস্ত না। চিৎকার করে এখন তাকে বলতে ইচ্ছে করছে,,,
মি:শাহরিয়ার আমি আপনার ভালোবাসায় অভ্যস্ত, আপনার এমন অবহেলিত আচরনে নয়। ভেবেই ডুকরে কেদে উঠলাম। হাতের উলটো পিঠ দিয়ে নিজের চোখের পানি মুছে কায়নাত নিজেকে নিজেই বললো,,,
″ না,,, না আমি সহ্য করতে পারছি না আর সহ্য করবো ও না। আমি রোদ্দুরকে বলে দিবো কতোটা ভালোবেসে ফেলেছি তাকে। আমি জানি!! আমি জানি আমার রোদ্দুর ভালোবাসি কথাটা আমার মুখে শোনার পর আর রাগ করে থাকতেই পারবে না। পারবে না তার তোতাপাখির সাথে কথা না বলে থাকতে।″ নিজের চোখের পানি মুছতে মুছতেই হাল্কা হাসলো কায়নাত।
!!
″যাক বাবা!! শেষ পর্যন্ত তাহলে আমার কাজটা তার সাফল্য লাভ করলোই। ″আয়নাতে নিজেকে নিজেই নিখুতভাবে দেখছে নীরা। এখন থেকে যে তাকে আরো বেশী মোহনীয় করে তুলতে হবে। তা নাহলে,,,কি করে আটকাবে রোদ্দুরের নজর তার উপর। চুলের বিনুনি ঠিক করছে আর এইসব ভেবে মুচকি মুচকি হাসছে নীরা।
এতো খুশি হওয়ার কারনটা কি জানতে পারি?
আয়নার দিকে ভালোভাবে লক্ষ্য করলো নীরা। পেছনে নেহাল দরজার সাথে হেলান দিয়ে নিজের হাতের নখ দেখছে। নিমিষেই মুখে বিরক্তির ছাপ এসে পড়লো নীরার মুখে। আয়নায় নেহালের দিকে নজর স্থির রেখেই উত্তর দিলো,,,
″সব খুশীর কারন থাকে না।″ নেহাল নিজের নখ দেখা থামিয়ে সামনে নীরার দিকে নজর তাক করে বললো,,,
শুনেছি,,, অকারনে নাকি পাগলরা হাসে। বাকা হাসলো নেহাল। এইবার নীরা গলার স্বরটা একটু উঁচিয়েই বললো,,
″কি বলতে চাইছো তুমি নেহাল?″
-আমি আবার কি বলতে চাইবো? আমার যা জানা আছে তাই শুধু ব্যাক্ত করলাম মাত্র।নীরা কিছু বলতে যাবে তখনি নেহালের ডাক পড়লো।
আচ্ছা!! আসি তাহলে নীরা। আর হা!! যেতে যেতে আরেকটা কথা বলে যাই,,,,, ″কীট হয়ে জেনে বুঝে আগুনের কাছে যেওনা।শেষমেষ ঝলসাবে তুমি ও-ই।″ বলেই চলে গেলো নেহাল।
রাগে হাতে থাকা চিরুনিটা এক ঢীলে মেঝেতে ফেলে দিলো নীরা।
″কে কীট সেটা সময় বলে দিবে″
!!
#চলবে
_______ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে________
#_Farju_💙