নিবিদ্রিতা কাহন পর্ব -১৩

#নিবিদ্রিতা_কাহন—-১৩
®মেহরুমা নূর

★পাঁচ মিনিট ধরে নিবিড়ের রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিতা।হাতে খাবারের প্লেট। সীমানা পেরিয়ে দৈত্যের গুহায় প্রবেশ করবে কি করবেনা তাই ভাবছে। তখন নিবিড়ের ওভাবে না খেয়ে চলে আসাটা আদ্রিতার ভালো লাগছিল না। নিবিড়ের না খেয়ে থাকাটা তার কাছে তিন বেলা ভরপেট খাওয়ার মতো অস্বস্তি হচ্ছে। সেই ঘন্টা দুই আগে খাবার টেবিল থেকে চলে এসেছে। তারপর আর যায়নি। রুমের দরজাও আর খোলেনি। শেষমেশ আর থাকতে না পেরে আদ্রিতা নিজেই খাবার নিয়ে চলে এসেছে। কিন্তু ভেতরে যেতে ভয় করছে। নাজানি লর্ড গভর্নরের মেজাজ কেমন তুঙ্গে আছে! শুধু শুধুই আগুন হয়ে যায়। সোনা মা বোধহয় জন্মের সময় কোনো দৈত্য দানবের মুভি দেখতো তাইতো এমন ভয়ানক ছেলে জন্ম দিয়েছে। পশমে পশমে ক্রোধ। আদ্রিতা মনে মনে নিবিড়কে আলিফ-লায়লার দৈত্যের রুপে ইমাজিন করলো। বাপরে! কি ভয়ানক! আদ্রিতা তিনবার আইতাল কুরসি পড়ে বুকে ফু দিলো। ছটাক খানেক জানটুকু হাতের মুঠোয় নিয়ে দরজায় টোকা দিয়ে মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে নিবিড়কে ডাকলো। দরজায় কান ঠেকিয়ে কানের সামনে হাত গোল করে ভেতরের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করলো। কিন্তু না, ভেতর থেকে কোনো আওয়াজই এলোনা।আদ্রিতা দরজায় আবারও টোকা দিতে গিয়ে খেয়াল করলো দরজার লক খোলাই আছে। আদ্রিতা তাই এবার মনে সাহস জুগিয়ে দরজা আস্তে করে ঠেলে ভেতরে উঁকি দিয়ে ধীরে ধীরে ভেতরে প্রবেশ করলো। জানালার সামনে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা নিবিড় দেখা গেল। দুই প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। আদ্রিতা খাবারের প্লেট হাতে নিয়েই বলল,
“নিবিড় ভাইয়া,আপনার জন্য খাবার এনেছি। খেয়ে নিন। ”
নিবিড় একই ভাবে দাঁড়িয়ে থেকেই কড়া গলায় বলল,
“খাবোনা, খাবারসহ নিজেকেও নিয়ে দূর হ।”
আদ্রিতার একটু খারাপ লাগলো, তবে সে হার মানলোনা। খাবারের ট্রে-টা টেবিলের উপর রেখে নিবিড়ের পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
“কেন খাবেন না? খেতে তো হবেই। আমাকে না কতবার জোর করে খাওয়ান। আজ আপনাকেও খেতে হবে। ”
নিবিড়ের অতিষ্ট কন্ঠ শোনা গেল,
“অরি, বিরক্ত করিস না। জাস্ট লিভ।”
আদ্রিতাও হাল ছাড়লোনা৷ সে নিবিড়ের হাত ধরে বলল,
“চলুন না খেয়ে নিন। তারপর পরে সব কথা শুনবো। আগে খাবেন।”
এবার যেন নিবিড়ের ক্রোধের বিস্ফোরণ ঘটলো। রাগে আদ্রিতার হাত ধরে হ্যাঁচকা টানে সামনের দেয়ালে চেপে ধরলো। নিবিড়ের দিকে তাকাতেই আৎকে উঠল আদ্রিতা। ভয়ে অন্তর আত্মা শুকিয়ে গেল তার। নিবিড়ের চোখ দুটো দিয়ে যেন অগ্নির লেলিহান নির্গত হচ্ছে। চোয়াল শক্ত, কপালের রগ ফুলে হয়েছে নীল। ভয়ে আদ্রিতার কন্ঠনালী পাকস্থলীতে চলে গেল। নিবিড় আদ্রিতার মুখের উপর ঝুঁকে চোয়াল শক্ত করে বলল,
“একবার বললে বুঝতে পারিসনা তুই! আই সেড লিভ। তোর খাবার তুই খা। বেশি বেশি করে খা। তোকেতো আবার কারোর আদুরে হতে হবে না তাইনা! তো যা, গিয়ে আদুরে হয়ে মানুষের কোলে উঠে নাচ। আমার মাথা খাস না। যা এখান থেকে।”
আদ্রিতার এবার খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে। দুচোখে নোনাজলে টইটম্বুর হলো। নিবিড়ের এই রুঢ়তা আদ্রিতার কোমল মনকে আহত করলো। সে কি এমন করলো! কেন নিবিড় ভাইয়া তার সাথে এমন করছে! এটাই তার ছোট্ট মস্তিষ্কে প্রবেশ করছেনা। দুচোখের নোনাজল গাল বেয়ে পড়তে সময় নিলোনা৷ তা দেখে নিবিড়ের রাগ বাড়লো বৈ কমলোনা। নিবিড় রাগে আদ্রিতার মাথার পাশে দেয়ালে একটা ঘুষি মেরে ধমকে বলল,
“ডোন্ট ইউ ডেয়ার অরি! ডোন্ট ইউ ডেয়ার টু ক্রাই। নাহলে আমি…..
কথা শেষ হওয়ার আগেই হঠাৎ কারেন্ট চলে গেল। ঘুটঘুটে অন্ধকারে ডুবে গেল পুরো রুম। ভয় পেয়ে গেল আদ্রিতা। অন্ধকারে সে ভীষণ ভয় পায়। এমনিতেও নিবিড়ের আতঙ্কে সে আগে থেকেই আতঙ্কিত ছিলো। তারওপর এভাবে আচমকা অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় আদ্রিতা ভয়ে দিকবিদিকশুন্য হয়ে গেল। আর তার ফলস্বরূপ সে মৃদু চিৎকার দিয়ে ফট করে নিবিড়কে আষ্টেপৃষ্ঠে আঁকড়ে ধরলো। নিবিড়কে জড়িয়ে ধরে তার বুকে মুখ লুকিয়ে আতঙ্কিত গলায় বলল,
” আ… অ…অন্ধকার কেন হয়ে গেল নিবিড় ভাইয়া! আ….আমার ভয় করছে! কিছু করুনা না।”
আদ্রিতা খেয়াল করলো নিবিড় কোনো উত্তর দিচ্ছে না। হঠাৎ যেন স্থির হয়ে গেছে সে। বুকে মাথা রাখায় সে নিবিড়ের হৃদপিণ্ডের তীব্র বেগে বাড়তে থাকা ধুকপুক আওয়াজের ধ্বনি শুনতে পাচ্ছে।সেই ধ্বনি কোনো মধুর সুরের মতোই সুরেলা লাগলো আদ্রিতার কাছে। হঠাৎ করে আদ্রিতা তার ভয় যেন ভুলে গেল। শান্ত হয়ে এলো সে। হারিয়ে যেতে লাগলো নিবিড়ের হৃৎস্পন্দনের সুমধুর ধ্বনিতে। সাথে নাকে পেল সেই মনমাতানো মহুয়া সুবাস। আদ্রিতা আরও হারিয়ে গেল। নিবিড়ের বুকে নাক ঠেকিয়ে লম্বা শ্বাস টেনে সেই সুবাস টেনে নিলো নিজের মাঝে। আদ্রিতা টের পেল নিবিড়ের হৃৎস্পন্দনের গতিবেগ যেন আরও তুমুল বেগে ছুটছে। ইশশ, বুক ফেটে বেড়িয়ে আসবে নাকি! নিবিড় তখন থেকে কেমন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কিছুই বলছেনা। আর না সে আদ্রিতাকে জড়িয়ে ধরেছে। এভাবে কতক্ষণ গেল তা কেউ জানলোনা। যেন দুটো মানব নীরব শ্রোতা হয়ে দুজনের হৃদগুঞ্জনের আলোড়ন শুনছে।
হঠাৎ করে বিদ্যুৎ এসে আবার রুমে আলো ছড়িয়ে দিলো। হুঁশ এলো আদ্রিতার। নিজের অবস্থান টের পেয়ে নিবিড়কে ছেড়ে ছিটকে সরে এলো সে। লজ্জার বহর ছুটলো আদ্রিতার পানে। লজ্জায় তাকাতে পারছেনা নিবিড়ের দিকে। তবুও একবার চোরা চোখে তাকিয়ে দেখলো নিবিড়ের মাঝে এখন আর সেই কঠিনতার ছিটেফোঁটাও নেই। কেমন প্রশান্তি প্রশান্তি ভাব ফুটে উঠেছে। যাক এবার একটু তাও ভয় কমলো আদ্রিতার। তবে লজ্জায় কেমন যেন মিইয়ে গেল সে। তা বুঝতে পেরেই হয়তো নিবিড় বলে উঠল,
“কারেন্ট এসেছে। যা এখন।”
আদ্রিতা খাবারের কথা মনে পড়তেই বলল,
“আর আপনার খাবার।”
“খাবোনা আমি। খেতে ইচ্ছে করছেনা।”
আদ্রিতার কি যেন হলো। সে ফট করে বলে উঠলো,
“আমি খাইয়ে দিলেও?”
চকিত নজরে তাকালো নিবিড়। যেন অভূতপূর্ব কিছু শুনল সে। কথাটা বলে আদ্রিতা নিজেই লজ্জায় পড়ে গেল। কীভাবে বলে ফেলল সে নিজেও জানে না। এবার নিশ্চয় উনি আমাকে আছাড় মেরেই দম নিবেন। কিন্তু আদ্রিতাকে অবাক করে দিয়ে নিবিড় গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
“ঠিক আছে, ঠিক আছে। এতো কান্দাকাটি যখন করছিস তখন আর কি করার! মা দেখলে আবার বলবে আমি তার আদরের রাজকন্যাকে কাঁদিয়েছি। তাই মন না চাইলেও খেতে হবে আর কি করার! তবে তার আগে গিয়ে ওয়াশরুম থেকে ভালো করে হাত ধুইয়ে আয়। তুই যে পিশাচ আমি জানি। তোর হাতের জার্মস গুলো খাইয়ে আমাকে মারার যে প্ল্যান করেছিস তা আমি সফল হতে দিবে ভেবেছিস!”
রাগে আদ্রিতার শরীর টগবগিয়ে উঠলো। মানে কতটা অদ্ভুত হতে পারে লোক! আর আমি কিনা একে খাওয়ানোর জন্য মরে যাচ্ছিলাম।নে অরি,পেলিতো তোর শিক্ষা। আরো যা, খাওয়াতে। কি আর করার! বলে যখন ফেলেছে এখন খাওয়াতেই হবে। নাহলে দেখা যাবে এটা নিয়েও সরাসরি মিথ্যে মামালায় কেস করে দিবে।দৈত্য দানবের কোনো ভরসা নেই। হাত ধুয়ে এসে খাবারের প্লেট নিয়ে বিছানায় নিবিড়ের সামনে বসলো। কেমন যেন ভীষণ লজ্জা কাজ করছে তার মাঝে। তখন কথাটা বলে এখন নিজেই ফেঁসে গেছে। লজ্জায় সংকুচিত হতে হতে মাথা নিচের দিকে রেখেই খাবার মাখিয়ে নিবিড়ের মুখের দিকে এগিয়ে দিলো। নিবিড় বলল,
“খাবার কান দিয়ে খাওয়া আমি শিখিনি এখনো।”
নিবিড়ের কথায় আদ্রিতা মাথা তুলে তাকিয়ে দেখলো সে না দেখে নিবিড়ের ঘাড়ের কাছে খাবারের লোকমা ধরে রেখেছে। নিজের বোকামি দেখে আবারও লজ্জা পেল সে। নিবিড় হঠাৎ আদ্রিতার হাতের কব্জি ধরে নিজেই খাবারসহ হাতের পাঁচ আঙুল নিজের মুখ পুরে নিলো। আঙুলে ধরে রাখা খাবারটুকু মুখের মাঝে নিয়ে আদ্রিতার হাতের আঙুলগুলো শুষে বের করলো। কম্পিত হলো আদ্রিতার স্নায়ুকোষ। লজ্জার শিহরণে চোখ মুদে নিলো সে। অদ্ভুত আলোড়ন তৈরি হচ্ছে তার আপাদমস্তক জুড়ে। নিবিড় আদ্রিতার দেওয়া লোকমা খেয়ে বলল,
“তুই খেয়েছিস?”
ফট করে চোখ খুলে তাকালো আদ্রিতা। নজর লুকাতে লাগলো। সে যে তখন নিবিড়ের চলে আসা দেখে নিজেও খেতে পারেনি এই কথা টা কীভাবে বলবে! কিন্তু আদ্রিতার বলার অপেক্ষায় বসে রইল না নিবিড়। সে হঠাৎ উঠে গিয়ে ওয়াশরুম থেকে হাত ধুয়ে এসে খাবার হাতে নিয়ে আদ্রিতার মুখের সামনে ধরলো। বিনাবাক্যে তা মুখে তুলে নিলো আদ্রিতা। তার তনু মনে ভালোলাগার ঝুম বর্ষণ হচ্ছে। সম্মুখের ব্যাক্তিটিকে ঘিরে বসছে অজস্র অনুভূতির মেলা। যে অনুভূতি নতুন হয়তো নয়, তবে তার বৈষম্য নতুন, মনমোহনীয়।
__

বাইরে এখনো সবার শোরগোলের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। সব কাজিনরা মিলে আজকের রাত ছাঁদে আড্ডা দেওয়ার প্ল্যান করেছে। কিন্তু নূরানের এসবে একদমই ইচ্ছে নেই। তাই সে একটু বই খুলে বসেছিলো। তবে এতো শোরগোলে সে পড়ায় কন্সেন্ট্রেট করতে পারলোনা।বিরক্ত হয়ে অগত্যা বই বন্ধ করে বিছানায় এসে ফোনটা হাতে নিলো। আশা, নীলাম্বরীর সাথে সময় কাটানো। এটা তার আজকালকার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কোনকিছুতেই যখন নূরান একটু অস্বস্তি বা মেজাজ চিড়চিড়ে হয়ে থাকে তখনই নীলাম্বরিকে খোঁজে সে। নীলাম্বরীর সাথে যখনই কথা বলে তার মনটা একদম ফুরফুরে হয়ে যায়। এক শীতল প্রশান্তি ছুঁয়ে যায় তাকে। নূরান খুব করে টের পাচ্ছে সে ধীরে ধীরে মেয়েটার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ছে। অদেখা, অজানা মেয়েটাকে ঘিরে তার মনে অনুভূতির সৃষ্টি হচ্ছে। যা হয়তো ক্রমশই বাড়বে বৈ কমবে না। তবে নূরান নিজের অনুভূতির কথা এখনো মেয়েটিকে জানায়নি। সে চায়না বলতে। যদি তার অনূভুতির প্রগাঢ়তা থাকে তাহলে হয়তো নীলাম্বরী নিজেই বুঝে নিবে। না বুঝলেও ক্ষতি নেই। সবকিছু যে পেতেই হবে তারতো কোনো মানে নেই। সব পেলে নষ্ট জীবন।
ইন্টারনেট কানেকশন অন করে দেখলো নীলাম্বরীর আইডিতে সবুজ বাতি জ্বলছে। নূরানই প্রথমে টেক্সট করলো,
“কি করছ?”
তিন সেকেন্ড পর ম্যাসেজ সিন করলো। রিপ্লাই এলো,
“কিসিং সীন চলছে।”
মোবাইল হাত থেকে পড়তে পড়তে বাঁচল যেন নূরানের। চরম পর্যায়ে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল নূরান। এমন কিছু সে মোটেও আশা করেনি। এই মুহুর্তে কেমন ফিলিংস হচ্ছে তা নিজেও জানে না। এমন টেক্সটের কি রিপ্লাই দিবে তাও ভেবে পাচ্ছে না। তাও নিজেকে একটু স্থির করে লিখলো,
“মানে?”
“মানে, আমার সুইট,কিউট বয়েফ্রেন্ড আমাকে চুমু দিচ্ছে।আর আমিও তাকে দিচ্ছি।, সে যে কি পরিমাণ কিউট কি বলবো! মন চায় গপ করে খেয়ে ফেলি।”
কাশি উঠে গেল নূরানের। মেয়েটা কি পাগল হয়ে গেল নাকি! কিসব আবোলতাবোল বলছে! নীলাম্বরী আবারও টেক্সট এলো,
“আমার বয়ফ্রেন্ড কে দেখবেন? ”
নূরান কি বলবে বুঝতে পারছেনা। তবে তার কিছু বলার আগেই ছবি চলে এলো। আর ছবি দেখে নূরান বেচারা আবারও ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। কারণ ছবিটা ছিলো এক পিচ্চি বাবুর। গুলুমুটু ছোট্ট বাবু। নূরানের ভেতর কোথাও কোনো যেন কোনোকিছু আঁটকে গিয়েছিল। যা এখন ছুটে গেল। লম্বা একটা শ্বাস ছাড়ল সে। পিচ্চি বাবুটার গালে অনেক গুলো লিপস্টিকের দাগ। বেচারাকে চুমুর নিচে তলিয়ে দিয়েছে তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। নূরানের হঠাৎ যেন এই মাছুম বাচ্চাটার উপর হিংসে জাতীয় অনুভূতি হলো। হিংসের মুল কারণ টা বোধহয় তার গালে লেগে থাকা ওই মেয়েটার অধরের চিহ্নগুলো। মনে মনে হাসলো নূরান। কি একট অবস্থা! এই মাছুম বাচ্চাটাকে শেষমেশ হিংসে হচ্ছে নূরানের। এমন দিনও তারও জীবনে আসবে তা যেন অবিশ্বাস্য। নিজেরই হজম করতে কষ্ট হচ্ছে। সেখানে অন্য কেউ জানলেতো নির্ঘাত হার্ট অ্যাটাক করবে।
__

তিন্নির বার্থডে পার্টির আমেজ প্রায় শেষ। বাইরের টুকটাক মেহমানগুলো চলে গেছে। জোহানও চলে গেছে। বাড়ির বড়োরা সবাই শুয়ে পড়েছে। ছাঁদে কাজিনদের আজ আড্ডা জমে উঠেছে। তবে এই আড্ডায় আদ্রিতাদের এন্ট্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি আছে। আর এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে স্বয়ং নিবিড় শাহরিয়ার। আদ্রিতা, তানহা, সানভি এদের কাউকেই আড্ডায় শরিক হতে দিবেনা। কারণ স্বরূপ বলেছে বাচ্চা কাচ্চাদের এসব আড্ডায় থাকা যাবে না। কোনমতেই না। আদ্রিতারা ওদের সাথে হওয়া এই কঠোর অন্যায়ের তীব্র নিন্দা জানাল। তবে সেই নিন্দা গায়ে মাখলোনা কেউই। নির্মম ভাবে তাদের ছাঁদ থেকে নামিয়ে দিলো। আদ্রিতা লিডারের মতো সানভি আর তানহার উদ্দেশ্য প্রতিবাদী কন্ঠে বলল,
“জনগণস..”
তানহা বোকার মতো আশেপাশে তাকিয়ে বলল,
“জনগণস! অরি তুই জনগণস কই পাইলি! এখানেতো আমরা তিনজন ছাড়া একটা মাছিও নেই।”
আদ্রিতা বিরক্তির সুরে বলল,
“আরে ধ্যাৎ! ওয়ার্ডস ধরিস না,ভাবনা দেখ, ভাবনা।”
এবার সানভি বলল,
“ভাবনা! কে ভাবনা? আর ভাবনাকে দেখতে যাবো আমরা কোন দুঃখে! ধুরর! এমনিতেই মুড খারাপ। তুই কি ভাবনার পেছনে পড়লি!”
আদ্রিতা রাগে এবার দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“ওই আবালের দল। আমার কথা কি শেষ করতে দিবি আগে? পুরো ফিলটাই নষ্ট করে দিলি। আরে আমি বলছিলাম আমাদের দমে গেলে চলবেনা। আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। ওরা আমাদের আড্ডায় নিবেনা কিন্তু আমরা আড্ডায় সামিল হয়ই ছাড়বো। বাই হুক অর বাই ক্রুক। আমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়েই ছাপিয়ে পড়বো। এবারের সংগ্রাম আমাদের আড্ডায় সামিল হওয়ার সংগ্রাম।”
সানভি আর তানহা হাত উঁচু করে স্লোগান করলো,
“জয় আদ্রিতা, জয় আড্ডা। ”
তারপর ওরা চুপিচুপি ছাদের দিকে গেল। ছাদের দরজা খোলাই ছিলো। আদ্রিতা হালকা করে মাথা ঢুকিয়ে উঁকি দিয়ে দেখলো সবাই ছাঁদের মাঝে বসে আড্ডা দিচ্ছে। রবি মামা আর অপরাহ্নও ওদের সাথে আছে। সবার হাতে একটা কোল্ড ড্রিংকসের কাচের বোতল। আদ্রিতা লাইন ক্লিয়ার দেখে বাকি দুজনকেও ওর পিছে ডাকলো। এবার তিনজন একসাথে একজন আরেকজনের উপর মাথা লাইন করে ভেতরে ওদের আড্ডা দেখতে লাগলো। অপরাহ্ন এক ঢোক কোল্ড ড্রিংকস গিলে রবি মামার উদ্দেশ্যে বলল,
“তা মামা,বয়সতো কম হলোনা। আমরা কি মামীর দর্শন করতে পারবোনা? কবে করবেন শুভ কাজ?”
রবি বলল,
“মহান পুরুষেরা কখনো বিয়ে করে না বৎস। ওসবতো মূর্খ নাদানদের কাজ। বিয়েতে, বউ, বাচ্চা এগুলো আমার জন্য সব মোহ মায়া। মনের ভ্রম।”
রবির কথায় হাসলো সবাই। তাসান বলল,
“তাহলে মামা তোমার যে ডজন ডজন প্রেমিকা গণ আছে ওগুলো কি?”
“ওসবতো সেবা। দুঃখী, হতাশ নারীদের মাঝে প্রেম বিতরণ করাইতো আমার কাজ৷ তাদের মুখে হাসি ফোটাতে নিজেকে পুরোপুরি বিলিয়ে দিয়েছি আমি। নিঃস্বার্থ সেবা যাকে বলে।”
তাসান হাতে তালি বাজিয়ে বলল,
“বাহ!মামা বাহ! তুমি সত্যিই মহান। তোমার মতো এমন সেবাধর্ম আমিও পালন করতে চাই৷ তোমার দু একটা পেশেন্ট কে আমাকেও ভিক্ষা দিও৷ আমিও মনপ্রাণ দিয়ে তাদের সেবায় নিজেকে উজার করে দিবো।”
তাসানের কথায় আবারও হাসলো সবাই। নিবিড় বলে উঠলো,
“তুই আর ভালো হলিনা তাসাইন্না।”
তাসান তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,
“হ তুমিতো বলবাই। তোমার তো আর আমাদের মতো অনাহারে থাকতে হয় না৷ তুমিতো পুরো ফুল বাগানের মধ্যে বসে মধু খাওয়া লোক। বিদেশের ফুল গুলোকে কি আর অপূর্ণ রেখেছ!”
নিবিড় হালকা হেঁসে বলল,
“আরে ধুরর,ওসব দেখার টাইম আছে নাকি আমার। আমি শুধু আমার বউয়ের। আমার বউ ছাড়া কোন ফুলেই নজর যায়না আমার।”

আগের সবকথা ভালো করে না বুঝলেও নিবিড়ের বউ শব্দটা আদ্রিতার কানে এসে বারবার বারি খাচ্ছে। উনি এমন কেন বলল! তাহলে কি উনার বউ আছে!

চলবে….
(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here