নিশির সংসার পর্ব ৫

#নিশির_সংসার
#৫ম_পার্ট
#Shohag_Hasan_Niloy

নিশিতা এবার ভেবে নিলো তার এই বিয়েটাও আর হবে না।কারন নিলয়ের চাচা নিশিতার বাবার কাছে মোটা অংকের যৌতুক দাবি করে চলে গেছে,,আর যাওয়ার আগে বলে গেছে যদি না ৫ লক্ষ টাকা যৌতুক দেন,তাহলে এই বিয়ে হবে না।
এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে নিশিতার পরিবার।বাবা যৌতুক দিতে রাজি হলেও নিশিতার ভাই আর নিশিতা এটা নিয়ে নারাজ,,নিশিতার ভাইয়ের একটাই কথা — আমার বোন কোনো বাজারের পন্য না যে তাকে আমরা টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিবো। আর আমার জানামতে নিলয়ও তেমন ছেলে না যে যৌতুক নিবে!তাই নিশিতার ভাই পরিবারের সবাইকে ধৈর্য ধারন করতে বলে।

ওদিকে নিলয়ের বাসায় নিলয় আর নিলয়ের চাচার মাঝে কথা কাটাকাটি হয়।নিলয় এক টাকাও যৌতুক নিবে না বলে জানায়।কিন্তু নিলয়ের বড় চাচা এ বিষয় মানতে নারাজ!নিলয় একবার মায়ের দিকে তাকায় আরেকবার তাকায় চাচার দিকে।কারন নিলয়ের বাবা মারা যাবার পর সেই ছোট বেলা থেকেই নিলয়ের অভিভাবক বলতে চাচাই দায়িত্ব পালন করে আসছে।এখানে মা কোনো কিছু বলতেও পারছে না। কারন নিলয়ের পরিবারের সব দায়িত্ব তার চাচাই নিয়ে আসছে।এসব নিয়ে নিলয়ের মায়ের কোনো কথাই গ্রহণযোগ্য নয়।

নিলয় তার চাচাকে বলে — শোনেন চাচা,আপনারও তো একটা মেয়ে আছে,তার কি বিয়ে দিবেন না,,সামনে মাসেই না নিলাদ্রীর বিয়ে,,তখন কতো টাকা যৌতুক দিবেন?

নিলয়ের কথা শুনে চাচা হেঁসে বলে — আরে আমার মেয়ে কি রুপে গুনে কম নাকি যে তার বিয়েতে যৌতুক লাগবে,,পাত্র পক্ষ যৌতুক ছাড়াই আমার নিলাদ্রীর কে বউ করে নিতে রাজি হয়েছে।

— নিজের মেয়েরটা তো ঠিকই বুঝলেন,,তাহলে ঐ মেয়ের বেলায় দোষ কোথায়!আমিও তো তাকে বিনা যৌতুকেই বিয়ে করতে চাই,তাহলে আপনার সমস্যা কোথায়?

— ঐ মেয়ে আর আমাদের নিলাদ্রী এক হলো নাকি!

— এক হবে না কেনো?

— কারন ঐ মেয়ের এর আগে বিয়ে হয়েছিল,,আর বর্তমানে সে ডিভোর্সি,, এই মেয়েকে এখন যৌতুক ছাড়া কে বিয়ে করবে শুনি?

— কেনো আমিই বিয়ে করবো,, আর আমিও তো ডিভোর্স প্রাপ্ত,,তাহলে জেনে শুনে আমাকে কোন মেয়ে বিয়ে করবে শুনি?

— আরে তোর জন্য মেয়ের অভাব হবে নাকি!তুই চাইলে তো কুমারি মেয়েও বিয়ে করতে পারিস!তাহলে ঐ মেয়েকে তোর বিয়ে করতে হবে কেনো শুনি!

— হ্যা,আমি চাইলে কুমারি কোনো মেয়েকে বিয়ে করতে পারি,,কিন্তু আমি চাইনা কেও আমার চেয়ে উপরের লেভেলের থাকুক!

— ঊপরের লেভেল বলতে!

— এই যে আমি ডিভোর্স প্রাপ্ত,,সে তো কুমারি মেয়ে হবে,,তখন সে যদি কুমারি বলে নিজেকে আমার চেয়ে বড় মনে করে তখন কি আমার সংসারটা টিকবে!কখনো কি আমি তাকে নিয়ে সুখী হতে পারব?পারব না!আর যদি ঐ ডিভোর্সি মেয়েটাকে বিয়ে করি তাহলে আমি তার কাছে থেকে যে সম্মানটুকু পাবো সেটা হয়তো কোনো কুমারি মেয়েকে বিয়ে করলে পাবো না!আর ঐ মেয়েটা ডিভোর্সি হলেও তার মাঝে দ্বীনদারিতা আছে!তার মাঝে লুকিয়ে থাকা অনেক গুন আছে!
আর –আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নারীদেরকে চারটি কারণে বিবাহ করা হই, তার মাল সম্পদ, তার বংশ গৌরব, তার সৌন্দর্য এবং তার ধার্মিকতা দেখে। তুমি ধার্মিকা নারীকে বিবাহ করে ধন্য হও। ‘তোমার দু’হাত মাটিমাখা হোক।’ (অর্থাৎ বোকামি কর না, বুদ্ধির পরিচয় দাও।)

সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৩২৩০
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

যেখানে রাসুল (সাঃ)ধার্মিকতা কে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে সেখানে আমিও সেটাই গুরুত্ব দিবো।

— ঐ মেয়ে যে দ্বীনদার, ধার্মিক,গুণবতী তা বলল কে?

— মেয়েটার ভাই আর আমি একসাথেই কাজ করি,,আমাদের সম্পর্কটাও অনেক ভাল,,তার কাছে থেকে আর বাকিটা মেয়েটির কাছে থেকে শুনেই অনেকটা বুঝতে পেরেছি।

— আচ্ছা বুঝলাম,,কিন্তু দেশে কি আর ধার্মিক মেয়ে, গুণবতী মেয়ে নাই,,তোর কি রুপ গুন কম নাকি যে ঐ মেয়েকেই বিয়ে করবি।আর মেয়েটা যদি এতই ধার্মিক আর গুণবতী হয় তাহলে ডিভোর্স প্রাপ্ত হলো কেনো? নিশ্চয় কোন খারাপ গুন আছে!

–ভালো খারাপ মিলিয়েই মানুষ।আর আমাদের বর্তমান সমাজে পুরুষদের তুলনায় মেয়েদের দোষটাই বেশি দেখা হয়।মেয়েটার ডিভোর্স হয়েছে বলেই কি মেয়েটা খারাপ!ডিভোর্স এর পিছনে অন্য কোনো কারনও তো থাকতে পারে!ডিভোর্সের কারনে যদি কেও খারাপ হয় তাহলে তো আমিও সেই লেভেলেরই একজন,, আমিও তো ডিভোর্স প্রাপ্ত।তাহলে আমার এমন চরিত্রের কথা জেনে কোন মেয়ে আমাকে স্বাচ্ছন্দ্যে বিয়ে করতে রাজি হবে শুনি?

নিলয়ের কথা শুনে চাচার মুখ কালো হয়ে গেলো!
কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো– আচ্ছা বুঝলাম কিন্তু ৫লক্ষ টাকা দিতে তাদের সমস্যা কোথায়?

— ৫লক্ষ তো দূরে থাক আমি ৫ টাকা যৌতুক নিয়েও বিয়ে করবো না,,কারন ইসলামে যৌতুক দেওয়া নেওয়া হারাম।আর আল্লাহ তায়ালা বলেছেন –সূরা আন নিসা { আয়াত: ৪}
আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশীমনে। তারা যদি খুশী হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর।

কই কোথাও তো যৌতুকে কথা উল্লেখ করনি।উল্টো মোহরানা দিতে বলেছে।যেখানে গর্তে থেকে নারীকে উঠিয়ে এনে ইসলাম দিয়েছে নারীদের সর্বোচ্চ সম্মান আর সেখানে কিনা আমি সেই নারীকে বিয়ে করার জন্য যৌতুক নিব?

নিলয়ের চাচা আর কথা না বলে একরকম রাগ দেখিয়ে চলে গেলেন।

ওদিকে নিলয় নিশিতার ভাইকে ফোন দিয়ে বলে কিছুদিন অপেক্ষা করতে।নিলয় আরও বলে যে- চাচা নিজে এসে আপনাদের সাথে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করবে,আমি সেই ব্যবস্থাই করছি।

দেখতে দেখতে কেটে যায় এক মাস।আজ নিলয়ের চাচাতো বোন নিলাদ্রীর বিয়ে।
বরযাত্রী এসে বসে আছে কিন্তু বিয়ের কাজ শুরু হতে দেরি হচ্ছে,, কারন বিয়ের আগে বর ও বরের বাবা বলেছিল কোনো যোতুক ছাড়াই তারা নিলাদ্রীকে বউ করে ঘরে তুলে নিবে কিন্তু এখন বিয়ের আসরে এসে বরের বাবা বলছে ৩/৪ লক্ষ টাকা যৌতুক না দিলে এই বিয়ে হবে না!

এই কথা শুনে নিলয়ের চাচা আর কিছুই বলতে পারে না,,কারন বরপক্ষের কথা ছিল তারা কোনো যৌতুক নিবে না আর এখন বলছে যৌতুক ছাড়া নাকি তারা নিলাদ্রী কে বউ করে নিবে না,,যৌতুক না দিলে নাকি এই বিয়ে হবে না,বরযাত্রী বর নিয়ে চলে যাবে।এই মূহুর্তে এত টাকাও নেই নিলয়ের চাচার কাছে।

তাই উপায় না পেয়ে নিলয়ের কাছে চলে যায় নিলয়ের চাচা।নিলয় সব শুনে বলে যে — বরপক্ষের প্রস্তাব তো ভালোই,,এই যুগে যৌতুক ছাড়া কারই বা বিয়ে হয়।তাই কোনো চিন্তা না করে যৌতুকে টাকা দিয়ে বিয়ে দিয়ে দিন।

— কিন্তু আমার কাছে তো এখন এত টাকা নেই,,যদি বিয়ের আগে বলতো তাহলে না হয় কোনো না কোনো ভাবে ব্যবস্থা করতাম।

— কারও কাছে থেকে ধার করে দিয়ে দেন,,,যৌতুক বলে কথা,,যত শীঘ্রই দিবেন তত শীঘ্রই বিয়েটা হবে,,আর না দিলে তো বিয়েটাও ভেঙে যাবে,,তখন সবাই বলবে আপনার মেয়ের চরিত্র খারাপ,,পরে দেখা যাবে যে ঐ ডিভোর্সি মেয়ের মতন আপনার মেয়েরও একই অবস্থা হবে।তখন আর কেও বুঝবে না যে,মেয়ের চরিত্র খারাপের কারনে বিয়ে হয়নি নাকি যৌতুকের কারনে।তখন সবাই চরিত্রের দোষই দিবে।

নিলয়ের চাচা মন খারাপ করে বললেন — সবাইকে কত বড় মুখ করে বলেছি যৌতুক ছাড়া মেয়ের বিয়ে দিতেছি আর এখন যদি কারও কাছে টাকা ধার নিতে যাই তাহলে তো মান সম্মান সব শেষ!পরে আমার মেয়েকে কেও বিয়ে করতে চাইবে না,,

— অন্যের মেয়ের জন্য ভাবলে,, আজ আপনার মেয়ের জন্য কেও ভাবতো।

নিলয়ের চাচা এবার নিলয়ের কথা বুঝতে পেরে বললো –তুই কিছু একটা কর,,আমি তোর বিয়েতে কোনো অমত করব না।আমি কয়েকদিনের মধ্যেই ঐ মেয়ের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাব।

নিলয় বর আর বরের বাবাকে গিয়ে বলল — কাজ হয়ে গেছে,,আপনাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ।।

তারা কিছু না বলে শুধু মুচকি হাঁসি দিলো।

অনেকটা আনন্দের সাথে বিয়ে হয়ে যায় নিলয়ের চাচাতো বোনের।

পরের সপ্তাহেই বিয়ের কথা পাকা করতে নিশিতাদের বাসায় যায় নিলয়ের চাচা।

চলবে………………………………???

{

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here