#নীলচে_তারার_আলো
#নবনী_নীলা
#পর্ব_৪১
হিয়া ভাবতে ভাবতে পাশ ফিরে তাকাতেই দেখলো শুভ্র শাওয়ার সেরে বেরিয়েছে, শুধু ট্রাওজার পড়ে। গা বেয়ে বিন্দু বিন্দু মুক্তোর মতন পানি পরছে। ভেজা চুলগুলো এলোমেলো হয়ে সামনে এসে পড়েছে। হিয়া একটা ঢোক গিলে সঙ্গে সঙ্গে চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকালো। উফফ লোকটা এইভাবে বের হয়েছে কেনো? সবাই মিলে তাকে মেরে ফেলার ধান্দা।
হিয়া শুভ্রের দিকে তাকাবে না আর, বইয়ের দিকে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু হটাৎ পানির বিন্দু টপ করে তার কাধে পড়তেই হিয়া কেপে উঠলো। সঙ্গে সঙ্গে পিছনে তাকিয়ে দেখে শুভ্র চেয়ার ধরে হালকা ঝুকে এসে তার বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। আর পানির এই বিন্দু শুভ্রের চুল বেয়ে হিয়ার কাধে এসে পরেছে।
শুভ্র বই থেকে দৃষ্টি সরিয়ে হিয়ার দিকে তাকালো। হিয়াকে এমন হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে বললো,” কি দেখছো?” হিয়া সঙ্গে সঙ্গে ঠোঁট চেপে মুখ বন্ধ করে ফেললো। তারপর জড়ানো কণ্ঠে বললো,” আপনি এইভাবে দাড়িয়ে থাকলে আমি পড়বো কি করে?”
শুভ্র সরে আসতে আসতে বলল,” ইয়াহ, ক্যারি অন।” শুভ্র সরে দাড়াতেই হিয়া হাফ ছেড়ে বাঁচলো। আজকে তার কিছুই পড়া হয়নি। সারাদিন ওই বুড়ির পিছনে সময় চলে গেছে। মুখে তো এত এত বড় কথা বলেছে কিন্তু করতে না পারলে এই মুখ সে দেখাবে কি করে? হিয়া প্রতিদিনের তুলনায় আরো বেশি সময় নিয়ে আজকে পড়লো। হিয়া টেবিল ছেড়ে উঠে দেখে শুভ্র আজও তার অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছে।
হিয়া শুভ্রের পাশে এসে শুয়ে পড়লো। হিয়ার ঘুম আসছে না, চাইলে আরো কিছুক্ষন পড়া যেতো কিন্তু শুভ্র ঘুমিয়ে পড়ায় তার একা একা লাগছে। টেবিল ল্যাম্পের নীল আলোয় শুভ্রের মুখে এসে পড়েছে। হিয়ার খুব ইচ্ছে করছে শুভ্রকে জাগিয়ে তুলে বলে, চলুন রাতের এই শহরের নির্জন রাস্তায় হলুদ ল্যাম্পপোস্টের আলোয় এক সাথে হাঁটবো।
কিন্তু আবার মায়াও লাগছে হিয়া এগিয়ে এসে একদম কাছ থেকে দেখতে লাগলো শুভ্রকে। তারপর একটু সাহস করে এসে শুভ্রের গালে একটা কিস করলো। সঙ্গে সঙ্গে শুভ্র চোখ মেলে হিয়ার দিকে তাকালো। হটাৎ শুভ্রকে চোখ মেলতে তাকিয়ে থাকতে দেখে হিয়া ভয়ে ছিটকে সরে গেলো পরক্ষনেই রক্তিম বর্ন ছেয়ে গেল তার পুরো মুখে।
শুভ্র ভ্রু কুচকে উঠে বসলো, কিছুক্ষণ আগেই তার ঘুম ভেঙেছে। তারপর চোখ বন্ধ করে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করছিল সে। হিয়াকে লজ্জায় জড়সড় হয়ে বসে থাকতে দেখে শুভ্র মনে মনে হাসছে। তারপর ধীরে ধীরে হিয়ার দিকে ঝুঁকে আসতে লাগলো। হিয়া শাড়ির আঁচল খামচে ধরে চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো। শুভ্র কিছুক্ষণ হিয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে গম্ভীর গলায় বললো,” তুমি কি ঐ বৃদ্ধার কথা বেশি সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছো।” হিয়া বিস্ময় নিয়ে চোখ খুললো। তারপর লজ্জায় এদিকে সেদিন তাকালো। শুভ্র এটা কি বললো তাকে? এইবার হিয়ার নিজেকেই মারতে ইচ্ছে করছে কেনো যে সে এই বদ লোকটার কাছে গিয়েছে? লোকটার মুখে যা আসছে সেটাই বলে যাচ্ছে।
হিয়াকে লজ্জা পেতে দেখে শুভ্র আরো বললো,” যদিও বিষয়টা সিরিয়াসলি নিয়ে লাভ নেই, এখন তোমার পড়ার সময়। আর এমনিতেও এই মুহুর্তে আমার পক্ষে দুটো বাচ্চাকে সামলানো সম্ভব না। সো লেট দা মাদার গ্রওন আপ দেন উই উইল টক এবাউট ইট।” বলেই শুভ্র চোখে হাসলো।
হিয়া রাগে চোখ বন্ধ করে করছে। মানে কি বলতে চায় উনি? সে তো একেবারে খুবই অবুঝ বাচ্চা তাই না? তাকে বোঝাচ্ছে। মান সম্মান আর কিছু বাকি রইলো না তারপরও হিয়া ক্ষীণ স্বরে বলল,” একদম আজে বাজে কথা বলবেন না।” তারপর আরো বিড়বিড় করে বললো,” আমি আপনাকে এই মুহূর্ত থেকে বয়কট করলাম। বেশি ভাব দেখায় এই হনুমানটা। নিজের বরকে কিস করেছি, তাতেও তাকে এতো কথা শুনতে হচ্ছে। ঠিক আছে এনার ধারের কাছেও আমি আর যাবো না।” বলেই হুট করে চাদর মুড়িয়ে গুটিসুটি হয়ে একপাশে শুয়ে পড়লো।
শুভ্র হা হয়ে রইলো, হটাৎ করে কি হলো বিড়ালটার? কোনো প্রতিবাদ করলে না,বেশী লজ্জা পেয়েছে নাকি!
⭐ সকালে শুভ্রের ঘুম ভেঙেছে রোদের কারণে। সকালের রোদটা একদম তার চোখের উপর এসে পরেছে। শুভ্র চোখ মুখ কুঁচকে ঘুম থেকে উঠে বসলো। উঠে বসে বিরক্তি নিয়ে জানালার দিকে তাকালো। পর্দা সরিয়েছে কে? পরক্ষনেই হিয়ার কথা মাথায় আসলো তার। শুভ্র পাশ ফিরে তাকালো, হিয়া নেই। শুভ্রের কপালে একটা ভাজ পড়লো। এই মেয়েকে যা করতে নিষেধ করা হবে সে সেটাই করবে। শুভ্র এক রাশ বিরক্তি নিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ালো। তারপর বালিশের পাশ থেকে নিজের চশমাটা পরে ফেললো।
শুভ্র নিজের ফোনটা হাতে নিয়েছিলো কয়টা বাজে সেটা দেখবার জন্যে কিন্তু তার আগে শুভ্রের চোখ পড়লো ড্রেসিং টেবিলের দিকে। শুভ্র এগিয়ে এসে আয়নার দিকে তাকালো, তাকাতেই চোয়াল শক্ত করে ফেললো সে। তার মুখে মার্কার দিয়ে গালের দুপাশে বিড়ালের মতোন তিনটা দাগ আর নাকের উপর একটা গোল আকা। শুভ্রর বিষ্ময়ের সীমা রইলো না। শুভ্র ফোনটা একপাশে রেখে বিরক্তি নিয়ে বলল,” হোয়াট ননন্সেন্স? আচ্ছা এই জন্যে তাহলে সকাল সকাল ঘর ছেড়ে পালিয়েছে!”
শুভ্র চটজলদি ফ্রেশ হয়ে নীচে নেমে এলো। হিয়া রান্না ঘরেই ছিলো শুভ্রের উপস্থিতি বুঝতে পেরে ঠোঁট চেপে হাসলো সে। আচ্ছা শিক্ষা দিয়েছে এই হনুমানটাকে। যদিও বিড়াল একেছিলো কারণ হনুমান কিভাবে আকে সে জানে না। জানলে ঠিকই হনুমান বানিয়ে আসতো।
হিয়ার একপাশে সাহারা খাতুন অন্যপাশে রহিমা খালা। হিয়ার মতে সে একটা সেফ জায়গায় আছে এতো চিন্তার কোনো কারণ নেই। এই লোকটা তার ধারের কাছেও আসতে পারবে না। শুভ্র এগিয়ে এসে তার মাকে কিছু একটা বলতেই সাহারা খাতুন চিন্তিত মুখে দোতলায় উঠে গেলো। হিয়া আড় চোখে তাকালো, কি বললো লোকটা?
শুভ্র আস্তে আস্তে এগিয়ে আসলো তারপর রহিমা খালাকে বলল,” খালা আমার কাপড়গুলো আয়রন করা হয়নি। আমি ক্লিনিকের জন্যে বের হবো, একটু জলদি লাগবে।”
হিয়া কথাটা শুনে ভ্রু কুঁচকে ফেললো। সব জামা তো আয়রন করাই আছে। আবার কিসের জামা আয়রন করবে রহিমা খালা। রহিমা খালা ব্যাস্ত হয়ে উপরে উঠে গেলো। সঙ্গে সঙ্গে হিয়ার বুক ধুক করে উঠলো। সবটা শুভ্রের চালাকি বুঝতে পেরেই হিয়া আড় চোখে তাকালো। শুভ্র এগিয়ে এসে হিয়ার পাশে দাঁড়ালো। তারপর এক দৃষ্টিতে হিয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললো,” রূমে এসো। রাইট নাও ”
হিয়া শুভ্রের দিকে তাকালো পর্যন্ত পা টিপে টিপে এক কোনায় চলে গেলো। তারপর নিজের কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল। হিয়া শুভ্রকে এড়িয়ে যাওয়ায় শুভ্রের রাগ আরো বাড়লো।
হিয়া চিনির বক্সটা নেওয়ার জন্যে পায়ের পাতায় ভর করে হাত উচু করলো। তারপর অনেক কষ্টে বক্সটা নামালো। তারপর চায়ে চিনি দিয়ে বক্সটা উপরে রাখতে যাবে শুভ্র হাত বেড়িয়ে বক্সের ঢাকনা খুলে নিতেই হিয়ার সারা গা চিনিতে ভরে গেছে। হিয়া শুভ্রের এমন ব্যাবহারে দাতে দাত চেপে রাগ সামলালো। শুভ্র বক্সের ঢাকনা একপাশে রেখে নিজের রুমে চলে গেল।
হিয়ার রাগে গা জ্বলছে। অসভ্য লোক একটা। সব সময় যা বলবে সেটাই করতে হবে তার।
রহিমা খালা কোনো জামা না পেয়ে ফিরে এলেন। এসে হিয়ার এই অবস্থা দেখে বললো,” ওমা ওমা, কি হইসে? ব্যাথা পাইলা নাকি?”
হিয়া গা ঝাড়তে ঝাড়তে বললো,” কিছু হয় নাই খালা।তুমি একটু থাকো আমি আসছি।” বলেই হিয়া কিচেন থেকে বেরিয়ে এলো। সারা গা চিটচিটে করছে। অসভ্য ডাক্তার একটা। হিয়া ভ্রু কুঁচকে রুমে এলো। শুভ্রের চোখে বিজয়ের হাসি। শেষমেষ লোকটার ইচ্ছে অনুযায়ী তাকে রুমে আসতেই হলো। হিয়ার রাগে ফুলতে ফুলতে তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। তোয়ালে নেওয়ার সময় হিয়া নিজের জামা নিতে ভুলে গেছে। শুভ্র বিষয়টা খেয়াল করে ঠোঁট চেপে হাসলো।
হিয়া অনেক্ষন সময় নিয়ে গোসল করলো। গোসল ছেড়ে বের হয়ে যেনো তাকে শুভ্রের মুখোমুখি না হতে হয়। হিয়া গোসল সেরে বুঝতে পারলো সে কাপড়ই আনে নি। কি ভয়াবহ অবস্থা! যদিও হিয়ার কেনো জানি মনে হচ্ছে এতোক্ষণে শুভ্রের যাওয়ার সময়ে হয়ে গেছে। হয়তো বেরিয়েও পড়েছে। হিয়া দরজা হালকা খুলে পুরো রুমটায় চোখ বুলিয়ে নিলো। নাহ্ নেই, উফফ বাঁচা গেছে। হিয়া তোয়ালে পেঁচিয়ে বের হয়ে এলো। চুল বেয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে। হিয়া রুমে এসেই দরজাটা বন্ধ করে ফেললো।
তারপর কাবাড খুলে ড্রেস বের করে পিছনে ঘুরতেই দেখলো শুভ্র নিচের স্থির দৃষ্টিতে হিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। হিয়ার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। সে তো দড়জা আটকে দিয়েছিলো তাহলে শুভ্র কি করে ভিতরে এলো। তাহলে কি শুভ্র বারান্দায় ছিলো?
হিয়া একটা ঢোক গিলে কাবাডের সাথে মিশে দাড়িয়ে রইলো। শুভ্র আস্তে আস্তে হিয়ার দিকে এগিয়ে আসতেই হিয়ার বুকের ভেতরটা ধুক করে উঠলো। শুভ্র হিয়ার কাছে এসে ঝুকে দাড়ালো। হিয়া তোয়ালে শক্ত করে ধরে মাথা নিচু করে রইলো। শুভ্র দূরত্ব কমিয়ে হিয়ার কাছে চলে আসতেই হিয়ার নিশ্বাস ভারী হয়ে এলো। শুভ্রের তপ্ত নিশ্বাসে তার শরীর শিউরে উঠছে। এমন নিরবতায় প্রচুর অসস্তি হচ্ছে হিয়ার।
হিয়া কিছু বলার আগেই শুভ্র একদম কাছে চলে এলো। দুজনের মাঝে ছিটে ফোঁটা দুরত্ব নেই। হিয়া একবার শুভ্রের চোখের দিকে তাকিয়ে, চোখ সরিয়ে নিলো। শুভ্র যেনো এক ঘোরের মধ্যে আছে। শুভ্রের চোখে সেটা স্পষ্ট। শুভ্র হিয়ার মুখের কাছে মুখ আনতেই হিয়া চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেললো। কিন্তু হটাৎ শুভ্রের ফোন বেজে উঠলো।
শুভ্র ভ্রু কুচকে পকেট থেকে ফোনটা বের করে কানে ধরলো। হিয়া আস্তে করে একটা চোখ খুলে তাকালো শুভ্রের দিকে। শুভ্র ফোনের ওপাশে থাকা লোকটাকে বললো,” আই উইল বি লেট টুডেয়।”
শুভ্রের কথাটা কর্নগচর হতেই হিয়া চোখ বড় বড় করে তাকালো। লেট হবে মানে? কি করতে চাইছে এই লোকটা? শুভ্র হিয়ার দিকে তাকিয়ে কল কেটে ফোনটা পকেটে ভরে কাবাডের দুপাশে হাত রেখে ঝুকে এলো।
#নীলচে_তারার_আলো
#নবনী_নীলা
#পর্ব_৪২ + [বোনাস]
শুভ্র ভ্রু কুচকে পকেট থেকে ফোনটা বের করে কানে ধরলো। হিয়া আস্তে করে একটা চোখ খুলে তাকালো শুভ্রের দিকে। শুভ্র ফোনের ওপাশে থাকা লোকটাকে বললো,” আই উইল বি লেট টুডেয়।”
শুভ্রের কথাটা কর্নগচর হতেই হিয়া চোখ বড় বড় করে তাকালো। লেট হবে মানে? কি করতে চাইছে এই লোকটা? শুভ্র হিয়ার দিকে তাকিয়ে কল কেটে ফোনটা পকেটে ভরে কাবাডের দুপাশে হাত রেখে ঝুকে এলো।
হিয়া নিজের হৃদ স্পন্দন যেনো নিজেই শুনতে পাচ্ছে। তোয়ালে পড়ে এইভাবে উফফ কি একটা অবস্থা! শুভ্র আবার তার এতো কাছে চলে এসেছে। হিয়া কাবাডের সঙ্গে লেপ্টে দাড়িয়ে থেকে বললো,” কি করছেন কি? একদম আমার কাছে আসবেন না। আপনাকে আমি বয়কট করেছি আর আজকে সারাদিন এই কাজ অব্যাহত থাকবে। বুঝতে পেরেছেন?”
শুভ্র ভ্রূ কুচকে তাকালো তারপর হিয়ার হাত থেকে টান দিয়ে জামাটা নিয়ে বিছানায় ছুঁড়ে দিয়ে বললো,” তোমার মাথায় সারাদিন কি ঘুরে এইগুলো?” হিয়া দুই কাধ আড়াআড়ি করে ধরে নিজেকে ঢেকে রাখার ক্ষুদ্র একটা চেষ্টা করে আড় চোখে শুভ্রের দিকে তাকালো। মানে কাপড় গুলোও নিয়ে গেলো, লজ্জায় মরে যাচ্ছে সে। আবার কিভাবে তাকিয়ে আছে দেখো।
হিয়া এগিয়ে এসে হাত দিয়ে শুভ্রের দুই চোখে ধরে বললো,” আমার মাথা ঠিকই আছে। আপনার মাথায় সমস্যা হয়েছে। এখন তো মনে হচ্ছে বুড়ির কথা আপনি বেশি সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছেন। কাল রাতে আমাকে কি বললেন ভুলে গেছেন? নিজের বেলায় সাত খুন মাফ, তাই না?”
শুভ্র চোখ বন্ধ রেখেই দুই হাতে হিয়ার কোমড় জড়িয়ে ধরে কাছে নিয়ে এলো। হিয়া খেয়াল করলো শুভ্রের ঠোঁটের কোনে হাসি। হিয়া রেগে গিয়ে বললো,” হাসছেন কেনো আপনি?”
” তোমার মনে হচ্ছে না তুমি আমার বড্ড কাছে চলে এসেছ। আমি বেসামাল হয়ে পড়লে পারবে তো আমায় সামলাতে?”, শুভ্রের শীতল কণ্ঠে এমন কথা শুনে হিয়ার মুখ হা হয়ে গেলো।
সঙ্গে সঙ্গে শুভ্রের চোখ থেকে হাত নামিয়ে তোয়ালে শক্ত করে ধরে শুভ্রের চোখ খোলার আগেই শুভ্রের হাতের নিচে দিয়ে বেরিয়ে গেলো। তারপর বিছানা থেকে চটজলদি জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। দড়জা আটকে সস্থির নিশ্বাস ফেললো সে। তারপর নিজের গাল দুটো দুট হাত দিয়ে ধরলো। তাপ বের হচ্ছে গাল দুটো দিয়ে। তারপর একবার নিজের দিকে তাকালো। তাকিয়েই লজ্জায় দুহাতে চোখ ধরলো।
শুভ্রের কেনো জানি হিয়াকে এমন লজ্জায় ফেলতে ভালোই লাগে। যেমনটা এখন লাগছে। হিয়ার চোখে মুখ সবটা কেমন অগোছালো হয়ে যায়। তখন খুব মিষ্টি লাগে।
শুভ্র রেডি হয়ে বেড়িয়ে পড়েছে, আজ সে একবার তার কলেজের প্রফেসরের সাথে দেখা করবে তাই ক্লিনিকে পৌঁছাতে দেরী হবে। সেই একটা কথায় হিয়ার চোখে মুখে যে বিস্ময় শুভ্র দেখেছে সেটা মনে পড়তেই ঠোঁট চেপে হাসছে সে।
⭐ কয়েকদিনের মাথায় হিয়ার কলেজ বন্ধ হয়ে গেলো। সবার এখন বাড়ি বসে প্রিপারেশন নেওয়ার সময়। হিয়ার জন্যে বাসায় ভার্সিটির একজন ছেলেকে রাখা হয়েছিলো, যে যদি হিয়ার কোনো জায়গায় সমস্যা হলে সেটায় হেল্প করতে পারে।
প্রথমে স্যার রাখার বিষয়টা হিয়ার একদমই পছন্দের ছিলো না। কিন্তু পরে তার বেশ মজাই লাগতো। স্যার পড়াতো নিচের ডাইনিং টেবিলে। প্রতিদিন শুভ্র স্যার আসার আগে বাড়ি ফিরতো আর হিয়ার সাথে বসে থাকতো। বসে থাকতো বললে ভুল হবে নজর রাখতো।
ছেলেটা বসতো মাঝের চেয়ারটায় হিয়া তার এক চেয়ার পরে বসতো আর শুভ্র ঠিক সামনে বরাবর সোফাটায় বসে টিভি দেখার নাম করে আড় চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতো। হিয়া প্রায় শুভ্রকে জ্বালাতন করতো। একদিন ছেলেটাকে বলল,” আমি কি পারবো ভালো রেজাল্ট করতে। কি হবে আমার?”
” তোমার ব্রেইন তো মাশাল্লাহ ভালো। নিশ্চয়ই পারবে। চেষ্টা করে যেতে হবে।”, স্যারের মুখে এমন কথা শুনে হিয়া ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে বলল,” আপনি অনেক ভালো। আপনার কথা শুনলে অনেক আত্মবিশ্বাস বাড়ে।”
শুভ্র সঙ্গে সঙ্গে চোয়াল শক্ত করে ফেললো। ব্যাস এরপর আর সেই ছেলেকে বাড়ির আশেপাশেও কোনোদিন দেখেনি হিয়া। এমন মারাত্মক কি বলেছে সে যাতে একেবারে লোকটাকেই বিদেয় করে দিতে হলো। যদিও এক দিক দিয়ে ভালো হয়েছে। শুভ্র আগের থেকে আরো সময় দিচ্ছে হিয়াকে, হোক না সেটা পড়ালেখার জন্যেই। হিয়া তো খুশিই, শুভ্র যেভাবে তার খেয়াল রাখছে।
দেখতে দেখতে বোর্ড এক্সাম চলে এসেছে। আজ শেষ পরীক্ষা। শুভ্র হিয়াকে পরীক্ষার কেন্দ্র নিয়ে এলো। গাড়িতে চোখ বন্ধ করে তখন থেকে হিয়া কি কি যেনো বির বির করছে। তারপর বইটা খুলে একবার দেখেছে আবার চোখ বন্ধ করে বির বির করছে। শুভ্র কিছুই বলছে না। প্রতি পরীক্ষায় কতবার যে বলেছে একটু শান্ত থাকতে, এই মেয়ে ততই অস্থির হয়ে থাকে।
গাড়ী কেন্দ্রের সামনে এসে দাড়াতেই হিয়ার চোখ মুখে ভয় স্পষ্ট ফুটে উঠলো। হিয়া এলোমেলো কণ্ঠে বললো,” আপনি গাড়িটা একটু আস্তে চালাতে পারলেন না? এতো তাড়াতাড়ি নিয়ে এসেছেন কেনো? উফফ এইখানে এলেই ভয়ে হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যায় আমার।”
শুভ্র মলিন চোখে হিয়ার দিকে তাকালো। প্রতিদিন এক কথা বলতে বলতে হাপিয়ে যায় না মেয়েটা?
শুভ্র আর হিয়া গাড়ি থেকে নামলো। শুভ্র হিয়ার হাত থেকে জোর করে বইটা নিয়ে নিলো। রাতেও এক ফোঁটা ঘুমায় নি। সকালে তো বই হাতেই টেবিলে ঘুমিয়ে পড়েছে। হিয়া বই আনতে যাবে তার আগেই শুভ্র হিয়ার হাত ধরে বললো,” হয়েছে অনেক পড়েছ। এখন ব্রেইনে এতো চাপ দিতে হবে না।”
হিয়া চিন্তিত সুরে বলল,” আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে আমি সব ভুলে গেছি।”
শুভ্র হিয়ার হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এসে বললো,” এতো ভাবতে কে বলেছে, তোমাকে? রিলাক্স।” তার কিছুক্ষণ পরই পরীক্ষার কেন্দ্রের গেট খুলে দিলো। ততক্ষনে দিবাও এসে পৌঁছে যায়। তারপর দুজনে একসাথে ভিতরে প্রবেশ করে।
প্রতিদিন শুভ্র হিয়াকে পৌঁছে দিয়ে ক্লিনিক যেতো। আজ আর সে ফিরলো না। এই কয়েক ঘন্টা গাড়িতেই সিটে গা হেলিয়ে বসে রইলো। শেষ বেল বাজার শব্দে শুভ্র গাড়ি থেকে নেমে দাড়ালো।
তারপর গাড়ির সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে হিয়ার জন্যে অপেক্ষা করতে লাগলো। এমন সময় হটাৎ একটা মেয়ে হাসি মুখে শুভ্রের দিকে এগিয়ে এলো। কিন্তু শুভ্রের খেয়াল সামনের ভিড়ের দিকে। শুভ্র চশমাটা হাতে নিয়ে রুমালে চশমা পরিষ্কার করে রুমালটা পকেটে রাখতেই মেয়েটা এগিয়ে এসে বলো,” ভাইয়া আপনি এইখানে?”
শুভ্র ভ্রু কুঁচকে মেয়েটার দিকে তাকালো। তারপর চশমা চোখে দিয়ে বললো,” কে তুমি?”
” ভাইয়া আমি শ্রাবণী। আপনি আমাকে চিনতে পারেন নি হয়তো। না চেনারই কথা। কিন্তু আমি আপনাকে চিনি।”, হেসে উঠে বললো মেয়েটা। শুভ্রের মাথায় অন্য চিন্তা ঘুরছে। তার হিংসুটে বউটা এসে, একে দেখে আবার কি করে। শুভ্র প্রসঙ্গ বদলাতে বললো,” ওহ, তা তুমি এইখানে কি করছো?”
” আমি আমার বোনকে নিতে এসেছি। আর এসেই দেখুন আপনার সাথে দেখা হয়ে গেলো। এতো দিন পর আপনাকে দেখে ভালো লাগছে। কিন্তু আপনি কেনো এসেছেন?”, শুভ্র প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগেই পিছন থেকে হিয়া এসে বললো,” উনি ওনার বউকে নিতে এসেছেন।” শুভ্র নিচের ঠোট ভিজিয়ে পিছনে ঘুরলো। হিয়ার চোখ মুখ বিষণ্ণ। শুভ্র কি বলবে খুঁজে পেলো না। হিয়া তীক্ষ্ণ চোখে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে। কি লম্বা এই মেয়ে! শুভ্রের কাছাকাছি দাড়ানোর কারণে দুজনে সুন্দর লাগছে।
আর সে? কোনো রকম শুভ্রের কাধ পর্যন্ত মাথাটা পৌঁছায়। পরীক্ষা ভালো হওয়ার খুশিটা তার এদের দেখেই মুহুর্তে কর্পূরের মত উড়ে গেলো। শ্রাবণী বিস্ময় নিয়ে হিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। এতে হিয়ার আরো রাগ লাগছে কেনো? এইভাবে তাকিয়ে থাকবে কেনো?
তাকে কি শুভ্রের বউ হিসাবে মেনে নিতে অসুবিধে হচ্ছে?
শুভ্র হিয়ার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,” শ্রাবণী আমাদের একটু তাড়া আছে। তোমার সাথে পড়ে দেখা হবে।”
হিয়া মুখ ভার করে শুভ্রকে পাশ কাটিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। শুভ্র একটা তপ্ত নিশ্বাস ফেললো। তারপর নিজেও গাড়িতে উঠে বসলো। সিট বেল্ট পড়তে পড়তে হিয়াকে জিজ্ঞেস করলো,” এক্সাম কেমন হয়েছে?”
হিয়া মুখ ভার করে শুধু বললো,” ভালো। ” তারপর গাড়ীর ড্রয়ার খুলে জুসের বোতলটা নিলো। শুভ্র পরীক্ষা শেষে তার জন্যে এইগুলো আনিয়ে রাখে। আজও তাই। একটু জুস খেয়েই হিয়া ঘুমিয়ে পড়লো। অন্যদিন ইচ্ছাকৃত ভাবে গাড়িতে ঘুমালেও, আজ ইচ্ছাকৃত নয়। ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে হিয়া। হিয়াকে দেখেও সেটা বোঝা যাচ্ছে।
গাড়ি বাড়ির সামনে থামতেই শুভ্র গাড়ি থাকে নেমে খুব সাবধানে হিয়ার সিটবেল্ট খুলে হিয়ার মাথা নিজের বুকে রেখে হিয়াকে কোলে তুলে রুমে নিয়ে এলো। উপরে উঠার সময় রহিমা খালা তাদের দেখেছেন কিন্তু পরক্ষনেই তিনি না দেখার ভান করে পাশ কাটিয়ে চলে গেছেন।
শুভ্র রুমে এসে হিয়াকে বিছানার শুইয়ে দিতেই ঘুমের ঘোরে হিয়া শুভ্রকে জড়িয়ে ধরলো। সঙ্গে বির বির করে বললো,” আমি আরেকটু লম্বা হলাম না কেনো?”
বলেই শুভ্রের হাতে কামড় বসিয়ে দিলো। শুভ্র ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল।
ঘুমের মধ্যে কামড় দেওয়ার অভ্যাস আছে হিয়ার। আগেই ছিলো নাকি ইচ্ছে করে দেয় শুভ্র জানে না। এর আগেও একবার এমন করেছে ঘুমের মাঝে। কিন্তু আজ হটাৎ ঘুমের মধ্যে হিয়ার লম্বা হওয়ার ইচ্ছে জাগলো কেনো?
হিয়া শুভ্রকে যেভাবে জড়িয়ে রেখেছে ছাড়বে বলে তো মনে হচ্ছে না। কিন্তু শুভ্রকে তো যেতে হবে। শুভ্র হাত বাড়িয়ে একটা বালিশ এনে হিয়ার কোলে দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে আনলো। হিয়া বালিশটাকে জড়িয়ে আরামে ঘুমাচ্ছে। মনে হচ্ছে,হিয়া আজকে সারা মাসের ঘুম ঘুমিয়ে নিবে। শুভ্র যাওয়ার আগে হিয়ার কপালে অধর ছুয়ে দিয়ে তারপর বেড়িয়ে এলো।
হিয়ার ঘুম ভাঙলো বিকেলে। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে চোখ ফুলে উঠেছে তার। এলো মেলো চুলের অবস্থা নাজেহাল। হিয়া ঘুম ঘুম চোখে সারা রুম দেখলো। শুভ্র কোথাও নেই। তাহলে কি চলে গেছে ?
হিয়া বিছানা থেকে উঠে গোসল সেরে নীচে নেমে এলো। রবীউল সাহেব সোফায় বসে চা খাচ্ছিলেন। হিয়াকে দেখে বললেন,” ঘুম ফুরিয়েছে তোর?”
হিয়া হেসে উঠে মাথা নেড়ে বললো,” হুম।” রবীউল সাহেব হাতের ঈশারায় পাশের সোফায় বসতে বললেন। হিয়া তাই করলো। রবীউল সাহেব চায়ের কাপটা একপাশে রেখে বললেন,” পরীক্ষার এই কয়দিন তোর সাথে তো ভালো করে কথাও হয় নি। তা পরীক্ষা গুলো কেমন দিলি? ”
হিয়া মাথা নেড়ে বললো,” ভালো দিয়েছি। বাকিটা জানি না।”
হিয়ার কথায় রবীউল সাহেব হেসে উঠে বললেন,” তোর মা আবার কোথায় গিয়েছে। এই বুড়ো বয়সে তার আবার কোন বন্ধুবির সাথে দেখা করা লাগবে। মোহনাটাকেও বলি এসে ঘুরে যা। আসার নাম নেই। তাই ভেবেছি আমি আজ সন্ধায় বেড়িয়ে পড়বো।”
হিয়া সঙ্গে সঙ্গে ভ্রু কুঁচকে বললো,” বেড়িয়ে পড়বে মানে?”
” তোর মায়ের বান্ধুবি আছে আর আমার কি বন্ধু নেই। আমিও গিয়ে আড্ডা দিয়ে আসবো।”, বাবার কথায় হিয়া না হেসে থাকতে পারলো না।
রবীউল সাহেব ঠিক সত্যি সত্যি বেড়িয়ে পড়েছেন। এই বুড়ো বয়সে মা বাবার খুনসুটি দেখতে তার ভালোই লাগে। আচ্ছা বাবা কি মাকে মিস করছিলো? সবাই তাহলে তার মতনই। ভেবেই হিয়ার খুব হাসি পাচ্ছে।
[ বোনাস ]
হিয়া সারা বাড়িতে একা একা। তার আর ভালো লাগছে না। আজ এক্সাম শেষ কত মজা করার কথা তা না সবাই ব্যাস্ত। হিয়া আয়নার সামনে এসে কয়েকবার নিজের দিকে তাকালো। তারপর চুলটা সুন্দর করে আঁচড়ে নিল।
এইভাবেই তার সময় কাটছে, ইউভিটাও নেই। পরিক্ষার কারণে শুভ্র ইউভিকেও মোহনা আপুর কাছে রেখে এসেছে। ইউভি ওনাকে খুব ডিস্টার্ব করে তো। এখন যে সে একা একা বসে আছে তার কি হবে? হিয়া এইভাবে পায়চারি করতে করতে হঠাৎ ইউভির আওয়াজ শুনতে পেয়ে হিয়া চমকে তাকালো।
তারপর পাশে তাকিয়ে দেখে ইউভি ছুটতে ছুটতে আসছে। হিয়া এগিয়ে গিয়ে ইউভিকে কোলে তুলে নিতেই দেখলো শুভ্র সিড়ি বেয়ে উপরে উঠছে। তারমানে শুভ্র ইউভিকে আপুর বাসা থেকে নিয়ে এসেছে। হিয়া খুশি হয়ে গেলো। এবার হিয়ার ভালো লাগছে। আর শুভ্র মনে মনে সস্থি ফিরে পেলো।
⭐ শুভ্র শাওয়ার সেরে বেরিয়েছে অনেক্ষন হলো। কিন্তু হিয়ার কোনো হদিস নেই। ইউভিকেও কোথাও দেখতে পাচ্ছে না। শুভ্র সারা বাড়ি খুঁজে শেষমেষ ছাদে উঠে এলো। ছাদে এতো রাতে কি করছে হিয়া? কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে শুভ্রের চোখ গেলো খোলা আকাশের দিকে অসংখ্য ফানুস উড়ছে চারিপাশে।
শুভ্র এগিয়ে গিয়ে হিয়ার পাশে রেলিং ধরে দাড়ালো। হিয়া শুভ্রের উপস্থিতি বুঝতে পেরে পাশে তাকালো। শুভ্র খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,” একা একা ছাদে কি করছো?”
হিয়া আকাশের দিকে হাত দেখিয়ে বললো,” সুন্দর না?”
শুভ্র চুপ করে কিছুক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর হিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো হিয়া পায়ের উপর ভর দিয়ে তার কাঁধের সমান হওয়ার চেষ্টা করছে। শুভ্র ভ্রু কুচকে হিয়ার দিকে তাকাতেই হিয়া অপ্রস্তুত হয়ে হাসলো তারপর বললো,” না মানে দেখছিলাম আরেকটু লম্বা হলেই আমি আপনার কাধ পর্যন্ত হয়ে যাবো।”
” হটাৎ লম্বা হওয়ার ভুত চেপেছে কেনো তোমার মাথায়?”, বুকের কাছে হাত ভাজ করে বললো শুভ্র।
হিয়া আড় চোখে তাকালো তারপর বললো,” এমনেই। কেনো আমি আরেকটু লম্বা হলে আপনার ভালো লাগতো না।”
শুভ্র বিরক্তির নিশ্বাস ফেলে বললো,” একদমই লাগতো না।”
” হ্যা, আমাকে তো আপনার ভালো লাগবে না।”, ঠোঁট উল্টে বললো হিয়া। শুভ্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,” তোমার এক কথা বার বার বলতে বলতে টায়ার্ড লাগে না।”
হিয়া যেনো শুভ্রের সে কথা শুনতেই পেলো না, সে নিজের মতন বলে যাচ্ছে,” আমাকে দেখে কোনোদিন হেসেছেন? সেখানে তো ঠিক হেসে হেসে কথা বললেন।”
” তুমি কি জোকার যে তোমার দিকে তাকিয়ে হাসবো?”, বিরক্তি নিয়ে বললো শুভ্র।
হিয়া আড় চোখে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে সামনে তাকালো। শুভ্র খেয়াল করলো বাতাস বাড়ছে, শুভ্র নিচের ঠোঁট ভিজিয়ে বললো,” অনেক ঝগড়া হয়েছে। এবার নিচে চল। এইখানে থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে।”
” আমি যাবো না। আপনি যান, আমি আপনাকে আসতে বলেছি এইখানে? আর ঠান্ডা লাগলে আপনি আছেন কি করতে। ওষুধ দিলেই ঠিক হয়ে যাবে।”, গর গর করে বললো হিয়া।
শুভ্রর এইখানে দাড়িয়ে থেকে হিয়ার সাথে ঝগড়া করার ধৈর্য্য নেই। শুভ্র এগিয়ে এসে হিয়াকে কোলে তুলে নিতেই হিয়া চেঁচিয়ে উঠে বললো,” ছাড়ুন। ছাড়ুন। আমি এইখানে থাকবো কিছুক্ষণ। আমি এখন যাবো না।”
শুভ্র হিয়াকে রেলিংয়ের কাছে নিয়ে গিয়ে একটু এগিয়ে দিয়ে বললো,” আর একটা কথা বললে এইখান থেকে ফেলে দিবো। চুপ করে থাকো একদম। ”
হিয়া ভয় পেয়ে শুভ্রের কলার চেপে ধরে চোখ বড় বড় তাকালো শুভ্রের দিকে। কি সাংঘাতিক ! হিয়া ভয়ে চুপসে গেলো। শুভ্র হিয়াকে কোলে করে ঘরে ঢুকে বিছানায় বসিয়ে দিলো। হিয়া গাল ফুলিয়ে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। তারপর করুন কণ্ঠে বললো,” আপনি সত্যি সত্যি আমাকে ফেলে দিতেন।”
শুভ্র তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো তারপর ঝুকে এসে হিয়ার দুপাশে হাত রেখে এগিয়ে এক হাত হিয়ার গালে ডুবিয়ে মুহূর্তেই ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলো। হিয়া হকচকিয়ে তাকালো।
হিয়া শুভ্রকে সরিয়ে দেওয়ার চেস্টা করতেই শুভ্র অন্য হাতে হিয়ার দুই হাত ধরে আরো কাছে নিয়ে এলো। হিয়া বিছানার চাদর শক্ত করে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেললো। হিয়া কিছুক্ষন পর মুখ ঘুরিয়ে জোরে জোড়ে নিশ্বাস ফেলতে লাগলো।
শুভ্র তর্জনী দিয়ে হিয়ার মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে শীতল কণ্ঠে বললো,” আমার তোমাকে ভালো লাগে না এই সব স্টুপিড কথাগুলো নিজের মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। তারপর তোমাকে আরো লম্বা হতে হবে। এইসব কে বলে তোমাকে? তুমি এমন পিচ্চি না হলে এই অনুভূতিটা আমি পেতাম কি করে? এইভাবে ঝুকে এসে তোমার অধর দুটো ছোঁয়ার ?”, শুভ্রের কথায় মুহূর্তেই হিয়ার কান দুটো লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো।
[ চলবে ]
[ চলবে]