#নীলাম্বুর_গহীনে
লেখা – জান্নাতুল ফেরদৌস মাটি
পর্ব – ৪
( কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।)
.
.
” তোরা হয়তো ভুলে গিয়েছিস, আমার উনি এখনো দেশে আসেনি। আসলেই আমাকে লাথি মেরে বের করে দিবে বাসা থেকে ।কম তো ঘরে বসে অন্ন ধ্বংস করিনি। আর কত?”
ওসমান বলল,
” ও হ্যাঁ, তোর উনার কথা তো ভুলেই গিয়েছিলাম। আর ইউশরা…. তোর? তোর কী খবর? বাসায় কী বিয়েসাদির কথা বলে না?”
আমি তখন মুচকি হেসে প্রশ্নটি বাতাসের বেগে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওসমান এতটাই জোরাজুরি করেছিল যে অবশেষে আমার মুখ খুলতেই হলো। বললাম,
” ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও এই নিয়ে অসংখ্য ছেলের পক্ষের সম্মুখে বসেছি। হাতে ১০০ কী ২০০ টাকা গুঁজেছি। শাড়ি পড়ে, চুল ছেড়ে তাদের সম্মুখে হেলে দুলে হেঁটেছি। কিন্তু গায়ের রঙ তো ময়লা তাই কারো নজর কাড়তে পারি নি। এ নিয়ে কমবেশি সবাই মা-বাবাকে অবশ্য কথাও শুনিয়েছে। তবে তার প্রভাব বাবার উপর পড়লেও মায়ের উপর পড়েনি কখনোই। মাঝে মাঝে তো গায়ের রঙ নিয়ে মনের কোণে বেশ দুঃখও জমে আমার।তবে পরক্ষনেই সুখ অনুভূত হয়। ভাগ্যিস গায়ের রঙ ময়লা! তাই তো আজও কারো অপেক্ষার আশায় বুকে বাসা বাঁধতে পারি। ”
বলেই থেমে গিয়েছিলাম। চোখের কোণে চিকচিক করা পানিগুলো ভারী হয়ে আসছিল। ভারী নিঃশ্বাস বুকে চেপে সবার দৃষ্টি ছিল আমার উপরে। এর মধ্যে আচমকাই সমুদ্র আমার সামনে এসে দু হাত পকেটে ঢুকিয়ে স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
” তুই কারো নজর কাড়তে পারিসনি কে বলেছে? আন্দাজের উপর কখনো কথা বলবি না বুঝলি? আর হ্যাঁ , বাসায় গিয়ে আজই বলে দিস তোর পাত্র ঠিক হয়ে গিয়েছে……..”
_________________
এরই মাঝে কলিংবেল বেজে উঠল। আর সেই সাথে বারোটা বেজে গেল রুবাইয়ার কাহিনী শোনার। মনমেজাজ তিরিক্ষি করে বলল,
” ধ্যাৎ! বাল……এখন আবার কে এলো? এত সুন্দর একটা মোমেন্টে এলাম আর এখনই….”
ইউশরা চোখ পাকিয়ে বলল,
” রুবাইয়া! তোমার মুখ থেকে এরকম বাজে শব্দ কিন্তু আমি মোটেও বরদাস্ত করব না। বন্ধু হিসেবে ব্যবহার করি বলে এই না যে, সব দোষ গুণে পরিণত হবে।”
” সরি মা। ” মাথা নিচু করে বলল রুবাইয়া।
ইউশরা শাড়ি আঁচল ঠিক করে রুম থেকে বের হতে হতে বলল,
” আমি দরজা খুলতে গেলাম। তোমার বাবা হয়তো চলে এসেছে। আর এই ফাঁকে তুমি গিয়ে ইয়াসিন কে ঘুম থেকে উঠাও। ঘুম থেকে উঠতে দেরি হলে পরে আবার বিছানাতেই প্রস্রাব করে দিবে। ”
” আচ্ছা মা।”
রুবাইয়া চলে গেল তার মা-বাবা’র রুমে। ৫ বছরের ভাই ইয়াসিনকে ঘুম থেকে উঠানোর উদ্দেশ্যে। আর এদিকে ইউশরা চলে গেল মেইন দরজার দিকে। দরজা খুলেই আশরাফকে ভেজা শরীরে হাতে কেকের বক্স নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,
” ভিজে তো দেখছি একাকার অবস্থা। এই সন্ধ্যা বেলা এভাবে ভিজলে কেউ সুস্থ থাকবে? রেইনকোট কোথায় তোমার? ”
কেকের বক্স ইউশরার হাতে দিয়ে জুতো খুলে দ্রুত পায়ে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
” আরে বলো না, গাড়িতে উঠার পর রেইনকোটের কথ মনে পড়েছে। যেটা কি-না অফিসে রেখে এসেছি। তখন তো আর বৃষ্টি ছিল না, তাই ভেবেছিলাম কাল গিয়েই নিয়ে নেব। কিন্তু অর্ধ রাস্তা আসতেই তো ঝুম বৃষ্টি।তখন আর কী করব বলো।”
” কোনো কালেই তোমার হুশ ছিল না, আর থাকবেও না। যাও গোসলটা সেরে ফেল। বেশিক্ষণ মাথা ভেজা থাকলে সমস্যা হবে।”
বলেই কেকের বক্সটির ভেতর দেখল। বেলুনের প্যাক না দেখে বলল,
” এই শুনছ, তুমি বেলুন আনো নি? ”
” না, আনিনি তো। যে দোকানে মোমবাতি কিনতে গিয়েছিলাম সেই দোকানে বেলুন শেষ হয়ে গিয়েছে। এদিকে ঝুম বৃষ্টি। রাস্তায় পানি জমে গিয়েছে। এর মাঝে আরেক দোকানে যাবো….তাই আর কেনা হয়নি। বাসায় চলে এসেছি। ”
” ও…কিন্তু ওদিকে যে তোমার ছেলে সারাদিন বেলুনের জন্য লাফিয়েছে। ওকে কী করব?”
” কিছু একটা বলে বুঝিয়ে দিও। বাচ্চা মানুষ, যেভাবে বুঝাবে সেভাবেই বুঝবে।”
বলেই আশরাফ ওয়াশরুমে চলে গেল। ইউশরা কেকের বক্স ডাইনিং টেবিলের মাঝ বরাবর রেখে তারউপর মোমবাতি দিয়ে সাজাতে লাগল। তারপর ঘরে রান্না করা অন্যান্য খাবার এনে কেকের চারপাশে সাজাতেই ছোট ছেলে ইয়াসিন চোখ কচলাতে কচলাতে এসে ইউশরাকে ঝাপটে ধরে বলল,
” আম্মু, কোলে। ”
” আজ আপুর জন্মদিন তুমি ভুলে গিয়েছ বাবা? আম্মুর না আজ অনেক কাজ।”
” একটু আম্মু।”
ছেলের মায়াভরা কন্ঠে এবার আর না করতে পারল না ইউশরা। ইয়াসিনকে কোলে তুলে গালে চুমু খেল। ইয়াসিন ইউশরাকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা ফালিয়ে ঘুম ঘুম গলায় বলল,
” আব্বু এসেছে? কেক এনেছে? বেলুন, মোমবাতি সব এনেছে? ”
” হ্যাঁ বাবা, তোমার আব্বু এসেছে। কেক এনেছে, মোমবাতিও এনেছে। কিন্তু বেলুন তো আনতে পারেনি। দোকানে বেলুন শেষ হয়ে গিয়েছে। কীভাবে আনবে বলো।”
ইয়াসিন রাগ করে কোল থেকে নেমে ইউশরার থেকে কিছু দূরে গিয়ে দু হাত বুকে ভাজ করে দাঁড়ালো। গাল ফুলিয়ে বলল,
” তোমাদের সাথে আমার আর কথা নেই। বেলুন ছাড়া জন্মদিন হয় না-কি? আপু বড় হবে কী করে যদি বেলুন না আনে? আপু তো ছোটই থেকে যাবে। কেক কাটার সময় বেলুন ফুটালেই তো আপু বড় হবে।”
ছেলের কথা শুনে ইউশরার বুক ফেটে হাসি আসছে। কিন্তু সে এই মুহূর্তে কিছুতেই হাসতে পারবে না। ইয়াসিনের রাগের সময় কেউ হাসলে ইয়াসিন কেঁদেকেটে হয়রান হয়ে যায়। মাথা দিয়ে আগুনের ফুলকির ন্যায় গরম তাপ বের হতে থাকে। যা ইউশরা কখনোই হতে দিবে না। স্বাভাবিক ভাবেই বলল,
” এরকম করে না বাবা। তুমি না আমার সোনা বাবা। তুমি তো এখন বড় হয়েছ। এরকম রাগ করা কি তোমায় মানায়? তুমি না স্মার্ট বয়, ক্লেভার বয়।”
” তো? তাতে কী হয়েছে? আমি স্মার্ট বয় বলে বুঝি বেলুন লাগে না? কিন্তু আমার তো লাগে। এটাই কী আমার দোষ? ”
” না না, কীসের দোষ? কে বলেছে এটা দোষ? এটাই তো মজা। দেখো না তোমার আব্বু বেলুন এনে দিলে আমিও খেলা করি তোমার সাথে। এটা দোষ হলে কী আমি খেলতাম? ”
” তাহলে? ”
” আচ্ছা যাও, আমি তোমাকে প্রমিস করছি, আজ তো বৃষ্টি কাল আমি তোমাকে দশটা বেলুন এনে দেব। তুমি নিজে ফুলিয়ে নিজে ফোটাবে। তবুও রাগ করে না সোনা।”
ইয়াসিনের রাগটা যেন কিছুটা কমে এলো। ইউশরার দিক ঘুরে ভ্রু কুচকে বলল,
” দশটা না, এগারোটা লাগবে। আমার বেশি বেলুন লাগবে। অল্প বেলুন আমি নিব না।”
ইউশরার এবারও হাসি পেলেও নিজেকে কন্ট্রোল করল। ইয়াসিনের কাছে গিয়ে কোলে তুলে বলল,
” ওকে বাবা এগারোটাই দিব। খুশি?”
ইয়াসিন তাঁর সবগুলো ফোঁকলা দাঁত বের করে, দু হাত দু’দিক ছড়িয়ে বলল,
” এত্তগুলা খুশি আম্মু।”
” ওরে…আমার ছেলের কথা গুলো কত্ত মিষ্টি।আল্লাহ এত মিষ্টি কোত্থেকে দিল!”
ইয়াসিন হাসির রেখা আরও বড় করে বলল,
” চকলেট যে খাই। চকলেট খেলে সবার কথাই মিষ্টি হয় জানো না আম্মু?”
” চকলেটের জন্য? ”
বলেই হাসতে লাগল ইউশরা।
.
রাত ১১ টার উপরে। ইয়াসিনকে ঘুম পাড়িয়ে রুবাইয়াকেও শুয়ে পড়তে বলে সবেই এলো ইউশরা তাঁদের রুমে। আশরাফ বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে আছে। ইউশরা সোজা চলে গেল ওয়াশরুমে। হাতমুখ ধুয়ে বের হলো। তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে ক্রিম নিয়ে মুখে লাগাতে লাগাতে এগিয়ে গেল জানালার দিকে। পর্দা টেনে বেলকনির দরজা ভিড়িয়ে শাড়ি খুলতে খুলতে বলল,
” কী ব্যাপার? ঘুমোওনি এখনো? রাত ক’টা বাজে দেখেছ?”
আশরাফ বিছানা ছেড়ে উঠতে উঠতে বলল,
” ক’টা বাজে তুমি দেখেছ? এত দেরি করলে কেন আসতে? তুমি জানো না, এ সময়টা আমি তোমার পথ চেয়ে বসে থাকি?”
” আমার জীবনের গন্ডি কি এখনো শুধু তোমায় ঘিরে? আরও দুটো প্রাণ সংযোজন হয়েছে। আর তাঁরাই এখন সবচেয়ে বড় দূর্বলতা আমার। তোমার থেকেও বেশি। তাঁদের না সামলিয়ে তোমার কাছে কীভাবে আসি? ”
“সে কী জানি না……. কিন্তু তাই বলে এতো দেরি? ”
” কোথায় দেরি? সবসময় যে সময়ে আসি আজ তো ওই একই সময়েই এসেছি। ”
” কচু! ভালো করে সময়ের দিকে তাকিয়ে দেখো ১১ টার উপরে বাজে। সবসময় আসো ১০:৩০ টার মাঝে আর আজ ১১ টার পরে এসেছ। আবার বলছ একই সময়ে এসেছ। হুহ…”
” বাব্বাহ! আজ সময়ের এত গোণাগুনি হচ্ছে যে? ”
” তো গুণব না? তুমি গুণে দেখেছ কতদিন হলো কাছে ঘেঁষতে দাও না? ”
” বয়স হয়েছে তোমার। দু ছেলেমেয়ের বাবাও হয়ে গিয়েছে। এখনো এত রোমান্স আসে কী কোত্থেকে? ”
” রোমান্সের আবার বয়স আছে না-কি? জানা ছিল না তো!”
” তাই? ”
” হুম, আমার মতে রোমান্স তো বয়স দেখে বাড়ে কমে না। ভালোবাসার গভীরতায় বাড়ে কমে। ”
বলেই ইউশরার হাত ধরে হেঁচকা টানে বুকে টেনে নিল আশরাফ। ইউশরা তাল সামলাতে না পেরে হাতে থাকা শাড়িটি ছেড়ে দিতেই মেঝেতে শাড়ি বিছিয়ে পড়ল। পরনে কেবল ব্লাউজ আর পেটিকোট। ইউশরা মুচকি হেসে দু হাত দিয়ে আশরাফের গলা জড়িয়ে বলল,
” প্রেম জেগেছে বুঝি?”
” একটু না, অনেকক্ষানি। প্রায় মাস ছুঁই ছুঁই হলো ভালবাসতে দাও না। কষ্ট হয় না বুঝি?”
” আহা রে….কত কষ্ট! ”
” কষ্টই তো। তুমি আমাকে একটুও বুঝো না হুহ..”
” বয়স হয়েছে। শরীরের ভারসাম্যেরও পরিবর্তন হয়েছে। সত্যি বলছি আগের মত শরীর কুলায় না। কী করব বলো।”
ভ্রু উঁচু করে আশরাফ বলল,
” যেভাবে বলছ মনে তো হচ্ছে ছেলেমেয়ে বিয়ে দিয়ে ৬০ বছরের বুড়ি হয়ে গিয়েছ। ”
ইউশরা মুচকি হাসল। বলল,
” ৬০ বছরের বুড়ি না হলেও কম বয়সও কিন্তু হয় নি। দেখতে দেখতে বেলা অনেক হয়েছে। ৪৬ বছর প্রায় শেষের পথে। ৬০ হতে আর কতদিন!”
” তাই বলে মাস?”
” এখন তো মাস…..সেইদিন বেশি দূরে নেই যখন বছর যাবে। তখন কী করবে?”
” কী আর করব? তখন তো আমিও বুড়ো হবো। হা হা…. ”
ইউশরা মুচকি হেসে আলতো করে আশরাফকে ছাড়িয়ে আলমারি থেকে মেক্সি নামাতে গেলেই আশরাফ আবার পেছন থেকে ধরে ফেলল। বলল,
” কোথায় যাচ্ছো?”
” কোথায় আবার মেক্সি নামাতে। রাতে আমি মেক্সি ছাড়া ঘুমাতে পারি না, জানো না? ”
” জানি তো। কিন্তু এখন মেক্সি দিয়ে কী করবা? ”
” কী করব মানে কী? ঘুমোবো না? অনেক রাত হয়েছে তো। তারউপর সারাদিন আজ কোমরের উপর দিয়ে বড্ড চাপও গিয়েছে। একা হাতে কত কাজ করেছি খেয়াল আছে? এখন না ঘুমোলে কাল আর উঠা লাগবে না।”
” না উঠতে পারলে না উঠবে। কিন্তু আজ তোমার ওই কোমরের ব্যাথা আমি আরও বাড়াতে চাই। প্রয়োজন হলে ঘুমের আগে মলম লাগিয়েও দেব। কিন্তু আমি আর পারছি না গো। কষ্ট হচ্ছে বড্ড।”
বলেই ইউশরাকে পাজ কোলে নিয়ে বিছানায় ছেড়ে দিল আশরাফ।
.
রাত ১ টা। বিছানায় শুয়ে একবার বা’পাশ তো একবার ডান পাশ এভাবেই ছটফট করছে রুবাইয়া। ঘুম কিছুতেই আসছে না। রাগ হচ্ছে তাঁর। প্রচন্ড রাগ হচ্ছে বাবার উপর। এমন একটা সময়ে কেন আসতে হলো বাবাকে? একটু পরে আসলে কী হতো? উফ…..অসহ্য লাগছে সব। সমুদ্র তারপর কী বলেছিল? মা’কে প্রপোজ করেছিল না-কি অন্যকিছু বলেছিল? পাত্র হিসেবে নিজেকে মেলে ধরেছিল না-কি অন্যকোনো ছেলের আবির্ভাব ঘটিয়েছিল? ভাবতেই মাথা ধরে আসছে তাঁর। না, আজ আর কিছুতেই তাঁর দু চোখের পাঁপড়ি তে ঘুম ভর করবে না। অগত্যা শুয়ে থেকে পিঠ বিষিয়ে তোলার কোনো মানে নেই।
দু’হাতে ভর দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লো রুবাইয়া। পা টিপে টিপে করে এগুলো খোলা বেলকনির দিকে। ফ্লোর ছিপছিপে ভেজা। সেই সাথে বেলকনিতে থাকা চেয়ারটির মাঝ বরাবর পানি জমে কিছু অংশ বিশেষ ভেজা। আর এটাই হলো প্লাস্টিকের চেয়ারের অপকারিতা। মাঝ টা একটু ঢালু আর চারিপাশ উঁচু হওয়ায় বৃষ্টি হতে না হতেই পুরো চেয়ার পানিতে টইটুম্বুর হয়ে যায়। তবে উপকারিতাও আছে। সামান্য সুতি কাপড় দিয়ে মুছে নিলেই শুকিয়ে কাঠ। রুবাইয়া ফের রুমে গিয়ে মোছার কাপড় এনে চেয়ার মুছে কাপড়টি ছুঁড়ে মারল রুমের মেঝে বরাবর। চেয়ারে বসে পা দুটো টানটান করে একটার উপর আরেকটা রেখে বিছিয়ে দিল বেলকনির মোটা কার্নিশের উপর। দু’হাত নিজ কোলে মুষ্টিবদ্ধ করে চেয়ারের উঁচু মাথায় ঘাড় এলিয়ে চোখ মেলে ধরল মেঘলা আকাশ পথে। ঘুটঘুটে অন্ধকার আকাশে সাদা ভারী মেঘমালা গুলো যেন একেকটা দানবের আকার ধারণ করেছে। দেখেই বুক কেঁপে উঠছে রুবাইয়ার। তবে নিজের জন্য নয়, মায়ের জন্য। এরকম দানবীয় মেঘ হয়তো অসংখ্য বার মায়ের জীবনে এসেছে। প্রাপ্তি গুলো মুছে অপ্রাপ্তি গুলো ভরিয়ে দিতে। মায়ের অনুভূতি গুলো ভেঙে চূর্ণ বিচূর্ন করতে। ভেবেই বুকভরা দীর্ঘশ্বাস আপনা আপনি বেরিয়ে এলো রুবাইয়ার।
.
.
চলবে……