পরিণীতা পর্ব -০৬

#পরিণীতা
#পর্ব_৬
#লেখনীতে_সাবরিনা_সিদ্দিকা_তাবাচ্ছুম

“বিহি তুমি এখনো রেডি হওনি?”

“এইতো শেষের দিকে। একটু বসো”

“পাঁচ মিনিট ধরে এই কথা বলছো”

“আরে তখন তো ব্যাগ গুছাচ্ছিলাম”

আমি আদিবকে কথাটা বলে আয়নায় নিজেকে একবার দেখে নিলাম।
না ঠিক আছে এবার।

“হয়ে গেছে চলো”

আদিব মোবাইল পকেটে ঢুকিয়ে একবার আমাকে পরখ করে নিলো। কালো বোরকা, হিজাব নিকাব সব ঠিক আছে। আদিব চলে যেতে নিলে আমি বললাম,

“কী হলো সব ঠিক আছে বললে না তো?”

আদিব হেসে বলল,

“হুমম”

আমি আর আদিব রুম থেকে বের হলাম। আমি রেডি হওয়ার পর আদিবকে ঠিক আছে কিনা জিজ্ঞাসা করে তারপরই বের হই। ও না বললে কেমন যেন ঠিক নেই ঠিক নেই লাগে। আদিব ও জানে যে ওকে এটা বলতেই হবে।এই কয়েক মাসে অভ্যাস বানিয়ে ফেলেছি। প্রথম প্রথম ও নিজেই বলতো এটা ঠিক নেই। ওইটা নাও পরে আমার অভ্যাস হয়ে গেল। ও হ্যাঁ আমাদের বিয়ের সাত মাস চলছে। আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো আছি আমরা। আমার মাঝে মাঝে নিজেকে খুব লাকি মনে হয় আদিবের কেয়ারিং, তার ব্যবহার।

“চলো গাড়ি ওয়েট করছে”

আদিবের কথায় আমার ধ্যান ভাঙলো। আমরা সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠলাম।

“তা মন বেশ ভালো?”

“হুমম অনেক!”

“তা তো হবেই। আমাকে ছেড়ে থাকবে কিনা”

আমি হেসে দিলাম। আমার হাসি দেখে আদিব ও হাসলো। তারপর তার নাক টেনে দিয়ে বললাম,

“না তোমাকে তো মিস করবো। তুমিই তো থাকতে চাইছো না। তোমার ওই অফিস অফিস করে”

“কী করবো এমন সময় যে খুব চাপ থাকে”

“বুঝতে পেরেছি।”

আমি জানালার বাইরে তাকিয়ে প্রকৃতি দেখতে লাগলাম। আমরা আমার বাড়ি যাচ্ছি মানে বাবার বাড়ি! এজন্যই আমার মন অনেক ফুরফুরে। অনেকদিন পর যাচ্ছি কিনা! প্রতিমাসে অন্তত একবার হলেও আদিব আমাকে ওই বাড়ি থেকে ঘুরিয়ে আনে। ও মনে করে এটা হচ্ছে ওর দায়িত্ব। এটা আর কারো খেয়াল থাকুক আর না থাকুক আদিব খেয়াল রাখবেই। সবসময়ই যাওয়া হয় বলতে গেলে। কিন্তু গত মাসে পুরো একবার ও যাওয়া হয়নি। এতে আমার মন কিছুটা খারাপ হলেও আমি জানি আদিব আমাকে ঠিকই নিয়ে যাবে! আর আমার শাশুড়ি আম্মু তো এক প্রকার জোর করছিলেন আদিবকে। গত মাসে তিনি অনেক অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় আমি যাই নি। আমাকে যেতে বলেছিল কিন্তু আমার শাশুড়ি আম্মু অসুস্থ আর আমি কীভাবে একা রেখে যাই? তাই এবার প্রথমেই পাঠিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আদিব থাকতে পারবে না। কারণ তার অনেক কাজের চাপ। এই কয়েকমাসে আমাদের সম্পর্কটা অনেক গভীর হয়েছে। দুজন দুজনকে অনেকটাই বুঝতে পারে। আমার মনে পড়ে বিয়ের রাতে আদিব আমাকে বলেছিল; সে আমার শখের পুরুষ। এখন হতে না পারলেও ভবিষ্যৎে হয়ে যাবে।
এখন আমার কাছে তাই মনে হয়!

এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম গাড়িতে। আদিব আর আমার বাড়ির দুরত্ব অনেকটাই তাই সকাল সকাল বেরিয়েছিলাম। পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। লম্বা জার্নি করে আমি খুব টায়ার্ড বাট খুশির ভারে চাপা পড়ে গেল ক্লান্তি! গাড়ি থেকে নেমেই আমি দৌড়ে বাড়ির ভেতরে গেলাম। গাড়িতে যে এতগুলো ব্যাগ আদিবকে একা ক্যারি করতে হবে সেটা আমার মাথা থেকে ছুটে গিয়েছিল।
আম্মু আমার আওয়াজ শুনে রান্নাঘর থেকে ছুটে এলেন। আমি গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। আম্মু সবাইকে ডাক দিলো। বড় আম্মু, বড় আব্বু, আব্বু সবাই আসলো। আব্বু আদিবের কথা জিজ্ঞাসা করতে আমার মনে পড়লো সব ব্যাগ সাথে আদিব তো গাড়ির ওখানে।

“কীরে?”

“আব্বু! আদিব আর সব ব্যাগ গাড়িতে রেখে এসেছি ওকে আনতে হবে সব। পুরো ভুলে গেছিলাম।”

বলেই দৌড়ে যেতেই দেখি আদিব দরজার কাছে চলে এসেছে। আমি জিভ কেটে বললাম,

“এই আমাকে দাও কয়েকটা। সরি ভুলে গেছিলাম”

“সমস্যা নাই”

ফিসফিস করে আমার কানের কাছে বলল,

“এজন্যই তো বলছিলাম তুমি আমাকে ভুলে যাবে। বাড়িতে ঢোকার আগেই তো ভুলে গিয়েছো”

আমি তার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাতেই সে ভাব নিয়ে ভেতরে চলে গেল।

“তোর মাথায় কী কিছু নেই? সব ওকে দিয়ে আনিয়েছিস”(আম্মু)

“আমি ভুলে গিয়েছিলাম।”(ঠোঁট উল্টিয়ে)

“হয়েছে আয়”

আমি আর আদিব রুমে গেলাম। অনেকদিন পর এই চিরপরিচিত রুমে আসলাম। সব আগের মতোই আছে। শুধু মানুষ নাই হয়ে গেছে! আমি আশে পাশে দেখছি তখন আদিব বলল,

“কী চেনা চেনা মনে হচ্ছে?”

“হুমমম”

“তবে তোমার রুমটা কিন্তু বেশ বড় এবং সুন্দর”(আশে পাশে চোখ বুলিয়ে)

আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললাম,

“সাদাফ ভাইয়ার মতো কথা বলছো?!”

“কী?”

“এই যে আমার রুম বলে বড়, সুন্দর।”

“ওহ সাদাফ ও এটা বলতো?”(হেসে)

“হুম বিয়ের পর তো আমার রুম নিতে চেয়েছিল”(আনমনা হয়ে)

“ওহ তুমি যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।”

আমি জামা নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। আদিব আজ রাতটা থাকবে। কাল ভোরে রওনা দিবে। আমরা ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে দেখি আব্বু আর বড় আব্বু বসে আছে। আর আম্মুরা কিচেনে। আদিব আব্বুদের কাছে চলে গেল আর আমি কিচেনে।

“কী করছো তোমরা?”

“রান্না করছি”(আম্মু)

“এই বিহি কী খাবি বল তো?”(বড় আম্মু)

“উমম..বড় আম্মু অনেক কিছুই তো খেতে ইচ্ছে হচ্ছে। থাক আমি তো কয়েকদিন আছি এ বাড়িতে তাই যে ক’দিন আছি ততদিন নাহয় একটা একটা করে খাবো।”

“আচ্ছা”

সবাই হেসে উঠলাম।

আমি আব্বুদের কাছে গিয়ে বসার পর দেখি সাদাফ ভাইয়া এসেছে। তার অফিস মনে হয় এখন ছুটি হয়। সে আমাকে দেখে কেমন করে যেন তাকিয়ে ছিল। তারপর চোখ ঘুরিয়ে রুমে চলে যায়। এসেছি পর্যন্ত লিজাকে দেখছি না। ভাবছিলাম জিজ্ঞাসা করবো কিন্তু না দেখি সাদাফ ভাইয়ের পর লিজা ও বাড়িতে ঢুকলো। তারমানে সাদাফ ভাইয়ের সাথে এসেছে। লিজা আমাকে দেখে থ হয়ে রইলো। তবুও হাসার চেষ্টা করে বলল,

“কেমন আছো?”

আমি এক গাল হেসে উত্তর দিলাম,

“আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো। তুমি কেমন আছো? তোমার সংসার কেমন যায়?”

তার মুখটা কেমন যেন মলিন হয়ে গেল। বলল,

“ভালো”

বলে চলে গেল। বিষয়টা বুঝতে না পেরে বললাম,

“কী হয়েছে ওর?”

“সংসার ভাঙতে বসেছে”

“মানে?”(আমি আর আদিব একে অপরের দিকে তাকিয়ে)

“ওরা আর এক সঙ্গে থাকবে না বলে দিয়েছে। লিজা আজকে তোর সামনে ভালো সাজলো। দুজনের মধ্যে সারাক্ষণ ঝ’গড়া, চি’ল্লাচি’ল্লি লেগেই থাকে। বাড়ির সবার সাথে কথা লিজার ব্যবহারে অতি’ষ্ঠ সকলে।”

“বুঝলাম”

রাতে সবাই খেয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। সাদাফ ভাইয়া আর লিজাকে বের হতে দেখলাম না।

———

“তা বিহি তাসনিম, আপনার ভাই ভাবি দেখছি আপনার সাথে ভালো হয়ে গেছে”

আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম। তৎক্ষণাৎ বুঝতে পেরে আদিব হেসে ফেলল। বলল,

“আরে সাদাফ আর লিজার কথা বলছি।”

“ওকে আমি কখন ভাবি বলেছি?”(মুখ বাকিয়ে)

“কেন সাদাফ তো তোমার ভাই। নাকি অন্য কিছু?”(মুখ টিপে হেসে)

আমি বুঝতে পেরে রাগী চোখে তাকালাম।

“আরে রাগছো কেন? ও তো তোমার জামাই হতে গিয়ে হয়নি তাই জিজ্ঞাসা করছিলাম আফসোস আছে কিনা আবার!”( আরো এক দফা হেসে)

আমি আদিবকে একটা ঘু’ষি দিয়ে বললাম,

” তোমার এই বকবক বন্ধ করে ঘুমাও আর আমাকেও ঘুমাতে দাও।”

বলে অন্য পাশ ফিরে শুয়ে পড়লাম। আদিব হাসতে থাকলো।

“আদিব ডি’স্টার্ব করো না ঘুমাতে দাও।”

“রাগ করেছো?”(হাসি চেপে)

“ঘুমাও কাল তোমার তাড়াতাড়ি বেরোতে হবে।”(শান্ত কন্ঠে)

“সেই রাগা রেগেছে রে! আরে আমি তো মজা করছিলাম। তোমার যে সাদাফকে নিয়ে কোনো ফিলিংস নেই সেটা তো আমি জানি। এই আদিব সাদমানকে নিয়েই তো আছে।”

“ঘুমাও”

“আরে!?”

“চুপপ”

আদিব চুপ হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর দেখলো বিহি সত্যি সত্যি ঘুমিয়ে গিয়েছে। আদিব বোকা বনে গেল।

“কী হলো এটা?”

চলবে….?

(1063 শব্দের)

[নাইস,নেক্সট না বলে সুন্দর সুন্দর গঠনমূলক মন্তব্য করবেন নাকি আদিব আর বিহির মধ্যে ঝা’মেলা বাঁ’ধিয়ে দিবো?😒🔪]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here