পাপের পরিনাম পর্ব -০৩ ও শেষ

#পাপের_পরিনাম
#অন্তিম_পর্ব
#Sagor_Islam_Raj

ইশার চিকিৎসা যখন কেউ করতে রাজি হচ্ছিলোনা তখন তাকে হাসপাতালে রেখে কি হবে?ইশাকে বাসায় নিয়ে আসে নির্ঝর সাহেব।তিনি কি করবেন বুঝতে পারছেনা।তার মেয়ের এমন সমস্যা হয়েছে যে কেউ তার চিকিৎসা করতে রাজি হচ্ছেনা।ইশাকে বাসায় নিয়ে আসার পর নির্ঝর সাহেব ডাক্তারের খোজে বের হোন।তার একজন ডাক্তার বন্ধু ছিলো তার কাছে যায় নির্ঝর সাহেব।

তার বন্ধুকে সব খুলে বলে তখন তার বন্ধু বলে
–পেটের মধ্যে যখন সাপের বাচ্চাটা মারা যায়নি মেডিসিনে তখন মনে হয় এর পিছনে অশরীরী কোনো কিছুর হাত রেয়েছে।
–কি বলিস এগুলো। তুই একজন ডাক্তার হয়ে এসব কথা বলছিস?
–দেখ নির্ঝর আমি এমন অলৌকিক ঘটনা দেখেছি তাই তোকে বলছি।আর যদি এমন কিছু না হবে তাহলে সাপের বাচ্চাটা মারা কেন যাচ্ছেনা?আর যে ডাক্তার তার চিকিৎসা করছিলো সে কেন মারা গেলো?
–ঠিক আছে এমন কিছু আজব ঘটনা ঘটেছে তাই বলে?
–দেখ বন্ধু আমার পরিচিত একজন লোক আছে যিনি জ্বীন ভুত নিয়ে অনেক কিছু জানেন।আমি বলি কি তুই তার কাছে একবার যা।
–তুই যখন বলছিস তখন ঠিকানা দে।

তারপর নির্ঝর সাহেব তার বন্ধুর থেকে এক তান্ত্রিকের ঠিকানা নিয়ে তার কাছে যায়।তান্ত্রিকের আস্তানাটা ছিলো জঙ্গলের মাঝে।রাস্তার চারিধার গাছপালাতে ছেয়ে আছে।তান্ত্রিকের আস্তানাতে যখন নির্ঝর সাহেব পৌছায় তখন সেখানে দেখে অনেক মানুষ। আর তাদের মধ্যে কিছু মানুষ অস্বাভাবিক আচরন করছে।

নির্ঝর সাহেব সবকিছু দেখে অনেকটা ভয় পেয়ে যায়।তান্ত্রিকেন প্রধানকে নির্ঝর সাহেব তার পরিচয় দিলে তাকে একটা ঘরে নিয়ে যায়।তারপর বলে
–ডাক্তার জুয়েল আমাকে সব বলেছে।আপনার মেয়ের এমন সমস্যা কতদিন থেকে?
তান্ত্রিক নির্ঝর সাহেবকে জিগ্যেস করে।
–আমার বড় মেয়েটা হঠাৎ মারা যায়।আর তখন ছোট মেয়েটা কিছু দেখেছিলো।তারপর সমস্যা হতে থাকে।হঠাৎ একদিন সকালে পেট ব্যাথা হতে থাকে ডাক্তার দেখালে বলে পেটে সাপের বাচ্চা।
সবকিছু শোনার পর তান্ত্রিক কিছুখন চুপচাপ থাকলো তারপর বললো
–আপনার মেয়েকে আর আপনার বাড়িটাকে দেখতে হবে।
–অবশ্যই চলুন আমার সাথে।

তারপর নির্ঝর সাহেব আর তান্ত্রিক তার বাসায় যেতে লাগেন।রাস্তার মাঝে হঠাৎ ঝড় শুরু হয়।শুধু বাতাস হচ্ছিলো।আর বাতাস গুলো অনেক ঠান্ডা ছিলো।তারা এক সময় লক্ষ্য করে পুরো রাস্তা শুধু সাপ আর সাপ।নির্ঝর সাহেব অনেক ভয় পেয়ে যায়।তান্ত্রিক তাকে ভয় পেতে নিশেধ করে।

তারপর তারা নির্ঝর সাহেবের বাসায় পৌছায়।রাত তখন ১০টা।পুরো বাড়ি অন্ধকার।কোথাও আলোর কোনো চিহৃ নেই।কিন্তু অন্ধকার কেন সেটাই বুঝতে পারছেন না নির্ঝর সাহেব।বাড়ির ভেতর ঢুকে প্রথমে আলো জ্বালায় আর দেখে বাড়ির দারোয়ানের দেহ পড়ে আছে ফ্লোরে।আর পুরো শরীর নীল হয়ে আছে।আর তারও পেটের কাছে একটা ফুটো আর ফুটোর মধ্যে একটা মরা সাপের বাচ্চা।

নির্ঝর সাহেব ভয় পেয়ে যায়।আর দৌড়ে তার মেয়ের ঘরে যায়।আর সেখানে গিয়ে দেখে তার মেয়ে সেখানে নেই।হঠাৎ বিজলী চমকায়।এতখন পুরো আকাশ ভালো ছিলো।কিন্তু হঠাৎ পুরো আকাশ মেঘে ঢেকে যায়।আর বজ্রপাত হতে থাকে।ইশাকে ঘরের মধ্য না পেয়ে অনেক ভয় পেয়ে যায় নির্ঝর সাহেব।তার মেয়ে কোথায় গেলো?

নির্ঝর সাহেব পুরো বাড়ি খুজেও কোথাও যখন পাচ্ছিলোনা তখন কান্নায় ভেঙে পড়ে নির্ঝর সাহেব।আমার মেয়ের সাথে এমন কেন হলো?সে তো কারো কোনো ক্ষতি করেনি।

–বাবা তুমি কান্না করছো কেন কি হয়েছে?
ইশার কথা শুনে নির্ঝর সাহেব চমকে উঠে।তার মানে ইশা ঠিক আছে?
–তুই কোথায় গেছিলি মা?তোকে পুরো বাড়ি খুজে কোথায় পাচ্ছিলাম না।
–আমি তো ছাদে গেছিলাম।একা একা ভালে লাগছিলোনা তাই।

–স্যার অনেক বিজলী চমকাচ্ছে বাসায় আমার বউ অসুস্থ আমি কি বাসায় যাবো?
বাড়ির দারোয়ানের কথা শুনে নির্ঝর সাহেব চমকে উঠে।যার লাশ একটু আগে ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখলো সে এখন কথা বলছে।

ভালো করে খেয়াল করে দেখে ফ্লোরে কোনো লাশ নেই একদম ফাকা।
–আপনার বাড়িতে আত্মা আছে।আর সেই সবকিছু করছে।
তান্ত্রিকের কথা শুনে নির্ঝর সাহেব বলে
–আত্মা?এটা কিভাবে সম্ভব?
–সম্ভব। তার সাথে এমন কিছু ঘটেছে যার কারনে সে এখনো এই বাড়িতে আছে।
–তাহলে কি করতে হবে এখন?

তান্ত্রিক তার ব্যাগ থেকে কিছু কড়ি বের করে।আর ফ্লোরের মাঝখানে একটা স্টার চিহৃ আঁকে।তারপর স্টার চিহৃের মাঝখানে ইশাকে বসায়।দারোয়ানকে বাসায় পাঠিয়ে দেয় নির্ঝর সাহেব।

তারপর তান্ত্রিক বিড়বিড় করে কি সব বলতে থাকে আর কিছুখন পর প্রচুর বজ্রপাত হতে থাকে। আর ঠিক তখন ঘড়ির ঢংঢংঢংঢংঢংঢংঢং আওয়াজ হয়।তার মানে তখন ১২টা বাজে।ইশার মধ্যে তখন অন্যকিছু প্রবেশ করে।ইশা ছটফট করতে থাকে।

–তুই আমাকে আটকাতে পারবিনা তান্ত্রিক।
ইশার কথা শুনে তান্ত্রিক আর নির্ঝর সাহেব দুজনেই অবাক হয়ে যায়।
–কে তুমি আর কি চাও?
–আমি মৃত্যু তাই।আমার সাথে ধোকাবাজির শোধ নিতে এসেছি আমি।
–কিসের প্রতিশোধ নিতে চাও?আর কে তুমি?
–আমি পুতুল।আর আমি আমার প্রতিশোধ নিতে এসেছি।

পুতুল নামটা শুনে নির্ঝর সাহেব পিছে সরে যায়।না এটা হতে পারেনা।এটা কিভাবে সম্ভব?এতদিন পর কোনো মানুষের আত্মা কি করে ফিরে আসতে পারে।

–কিসের প্রতিশোধ নিতে চাও তুমি?
তান্ত্রিকের কথায় হাসতে থাকে ইশা রুপি পুতুল।
–আমি এদের বংশ নির্বংশ করে দিবো।আমার সাথে ধোকাবাজি?
–কিসের ধোকাবাজি?আমাকে খুলে বলো।
ইশা নির্ঝর সাহেবের দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে।
–কি নির্ঝর তুই বলবি???কিসের প্রতিশোধ?

তান্ত্রিক নির্ঝর সাহেবের দিকে তাকায়।
–কি কাহিনী নির্ঝর সাহেব?আমাকে সব খুলে বলুন।
নির্ঝর সাহেব কান্না করতে থাকে।
–পুতুল আমার বসের একমাত্র মেয়ে ছিলো।বস মারা যাবার পর সব সম্পত্তির মালিক হয় পুতুল।আর আমি তখন লোভে পড়ে যাই।আর আমি লোভে পড়ে পুতুল আর তার বাড়ির কাজের লোককে সাপের কামড় দিয়ে মেরে ফেলি।যাতে সবাই ভাবে সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়েছে।আমি ম্যানেজার ছিলাম।তাদের কোনো আত্বীয় ছিলনা।তাই সব সম্পত্তি আমি আমার নামে করে নেই।

–নির্ঝর সাহেব আপনি এমনটা করতে পেরেছেন? আমি আপনাকে কোনো সাহায্য করতে পারবনা।

নির্ঝর সাহেব তান্ত্রিকের পা চেপে ধরে।
–এমনটা করবেননা।আমাকে মেরে ফেলুন কিন্তু আমার নির্দোষ মেয়েটাকে বাঁচান।

–কাওকে বাচাতে পারবিনা তোরা।তোর বড় মেয়েকে আমিই মেরেছি আর একেও মারবো তারপর তোকে।
কথাটি বলেই খিলখিল করে হাসতে থাকে পুতুলের আত্মা

–আমার মেয়ে তো তোমার কোনো ক্ষতি করেনি।তাহলে তাদের কেন শাস্তি দিচ্ছো?আমাকে মেরে ফেলো আর আমার মেয়েকে ছেড়ে দাও।
–না আমি কাওকে ছাড়বনা।সবইকে শেষ করে দেব।

তান্ত্রিক আবার স্টার চিহৃের মধ্যে বসে পড়ে।আর বিড়বিড় করে কিসব পড়তে থাকে।আর তখন ইশা ফ্লোরে পড়ে যায়।আর তার মুখ থেকে একটা সাপ বের হয়ে আসে।

আর লাফ দিয়ে নির্ঝর সাহের কাছে চলে যায়।আর তার মুখের ভিতর ঢুকে যায়।নির্ঝর সাহেব পড়ে যায়।অনেক ছটফট করতে থাকে।হঠাৎ তার পেটে ফুটে হয় আর সেখান দিয়ে বেরিয়ে আসে সাপটি।নির্ঝর সাহেব তখনি মারা যায় আর তার শরীর নীল হয়ে যায়।সাপটি যখন ইশার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে ঠিক তখন তান্ত্রিক সাপের ওপর একটা তরল ছিটিয়ে দেয়।

সাপটা তখন ছটফট করতে থাকে।এক পর্যায়ে সাপটা নির্ঝর সাহেবের দেহের মধ্যে চলে যায়।তখন তান্ত্রিক লাশটাকে টেনে ছাদে নিয়ে যায়।আর সেখানে লাশটা রেখে তান্ত্রিক ছাদে বসে পড়ে আর কি সব বিড়বিড় করে বলতে থাকে।

পুরো আকাশ কালো মেঘে ঢাকা।শুধু ছাদের ওপরের আকাশটা সাদা হয়ে আছে।মনে হচ্ছর সেখান থেকে সাদা রশ্মি বের হচ্ছে।তার চারিপাশে কালে মেঘ ঘুরাঘুরি করছে।বিজলী চমকাতে লাগে।

হঠাৎ কালো মেঘের মাঝখান থেকে সাদা আলোর রশ্মি নেমে আসে।আর তা লা লাশের ওপরে পড়ে।আর তখন লাশটা আসতে আসতে ওপরের দিকে উঠতে থাকে আর এক সময় অন্ধকার আকাশের সাদা আলোর রেখা মিশে যায়।আর আকাশের মেঘ কেটে যায়।আবার সবকিছু ঠিক হয়ে যায় চারিপাশ।

–বাবা তার পর কি হয়েছিলো?
ছেলের কথায় সাগর তখন ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে আসে সাগর।
–তারপর কি হবে।সব সমস্যা সমাধান হয়েগেলো।তোমার মাও ঠিক যায় তারপর।
–হয়েছে আর বলতে হবেনা।এবার খেতে এসো অনেক রাত হয়েছে।
ইশার বলে
–তোমার মা খেতে ডাকছে না গেলে কিন্তু আবার ভুত হয়ে যাবে।
সাগরের ছেলে সাগরে জড়িয়ে ধরে।

আজকেও আকাশটা মেঘলা।বজ্রপাত হচ্ছে।বৃষ্টির শব্দে একটা ভয়ানক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

সমাপ্ত।।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here