প্রণয়ের রং,পর্ব:১১

0
216

প্রণয়ের রং
পর্ব – ১১

রাতে বেলকনিতে বসে রবীন্দ্র সংগীত শুনছে নিমিতা। ওর যখন খুব চিন্তা হয় তখন এভাবে গান শোনে। মাথায় এখনও সকালের ঘটনা ঘুরপাক খাচ্ছে।

___ ” নিতুর থেকে লুকোতে পারবো না। ও যদি পরে অন্যকারোর থেকে শুনতে পায়, তখন আরও বেশি কষ্ট পাবে। কিন্তু কি করে বলবো ওকে…”

আনমনে এসব ভাবছিল নিমিতা। হঠাৎ তার ফোন বেজে ওঠে। ফোন হাতে নিয়ে দেখে শুভ্র ফোন দিয়েছে। ওভাবেই ফোনটা রেখে দেয় আবার। রাগটা এখনও যায়নি উনার উপর থেকে।

ওদিকে শুভ্র বারবার ফোন করেই যাচ্ছে। পরপর ৬ বার রিং যাওয়ার পর ৭ম বারে ফোন উঠায় নিমিতা।

ফোন কানে নিতেই গান শুনতে পায়। নবীন বরণে যে গানটি ও গেয়েছিল সেই গান। কে যেন গাইছে। গানের গলা শুনে মনে হচ্ছে শুভ্র গাইছে। চোখ বন্ধ করে গানের প্রতিটি লাইন অনুভব করতে লাগলো সে। পুরো গানই চোখ বুজে মন দিয়ে শুনে গেল।

___ ” আপনি এত ভালো গাইতে পারেন বলেন নি তো।”

___ ” তুমি জানতে চেয়েছো কখনও?”

___ ” নিজের থেকেই বলতেন।”

___ ” তুমিতো রাগ করেছো। আমার সাথে কথা বলতে চাও না।বলবো কিভাবে?”

___ “এখনও রেগে আছি।”

___ ” রাগ ভাঙাবো কি করে?”

___ ” আমায় সাহায্য করে। নিতুকে বলতে চাই সব। একা পারবো না। সাথে থাকতে পারবেন আমার?”

___ ” সবসময় তোমার সাথে, তোমার পাশে থাকবো। থাকতে দিবে আমায়?”

নিমিতা লজ্জা পেয়ে যায়।
___ ” এখন রাখছি। কাল সকাল ১০ টায় আপনার অপেক্ষা করবো লেক সাইডে।
বলেই জলদি জলদি ফোন কেটে দেয় নিমিতা।

নিতুকেও ফোন দেয় সে। কাল সকালে দেখা করতে বলে। দেখা করার কারণ বলার সাহস পায় না।”

পরেরদিন সকালে সাড়ে ন’টায় নিমিতা চলে আসে লেক সাইডে। মিনিট দশেক পরে শুভ্রও চলে আসে। নিমিতার পাশে এসে বসে।

___ ” নিতু আসছে?”
___ ” হুম।”
___ ” কিছু বলেছো ওকে?”
___ ” উহু। শুধু আসতে বলেছি।”

___ ” চিন্তা করো না। দুজনে মিলে ঠিক বুঝাতে পারবো ওকে। আমি আছি তো।”

একটু পরে নিতুও চলে আসে। ওদের দুজনকে একসাথে দেখে খুব খুশি হয় নিতু। নিতু কাছে আসতেই নিমিতা জরিয়ে ধরে ওকে। আচমকা কাঁদতে শুরু করে। নিতু ভয় পেয়ে যায়__

___ ” নিম্মি। এভাবে কাঁদছিস কেন? তাকা আমার দিকে।”

নিমিতা ওকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাড়ায়। কিন্তু কান্নার দমকে একটু রা ও করতে পারছে না। উপায় না পেয়ে শুভ্র নিজেই গতকালকের ঘটনা বলা শুরু করে।

সবশুনে নিতু কেমন থমকে আছে। পাথরের মূর্তির মতো। সে কি বলবে, কি রিয়্যাক্ট করবে জানে না।

___ ” নিতু আমায় মাফ করে দে। আমার জন্যই আবির তোকে ভালোবাসে না। আমি আগে জানলে অনেক আগেই তোদের থেকে দূরে চলে যেতাম। ”

নিতু আচমকা দুহাতে মুখ চেপে কাঁদতে থাকে। নিমিতা ও শুভ্র আটকায় না ওকে। ওর মনের কষ্ট গুলো ঝরে যাওয়ার সুযোগ দেয়।

মিনিট দশেক পরে নিতু স্বাভাবিক হয়। নিমিতা ওর চোখ মুখ মুছে দেয়।

বিকেল অব্দি ওরা তিনজন একসাথেই ছিলো। শুভ্র একমুহূর্তের জন্যেও ওদের একা রেখে যায় নি। নিতুকে ওই সামলিয়েছে। নয়তো নিমতা একা ওকে সামলাতে পারতো না।

রাতে খাওয়ার পর ছাদে বসে কফি খাচ্ছে শুভ্র। আজকে সত্যিই অনেক কঠিন দিন ছিলো। একজন নয়, দুটো মানুষ তাদের ভালোবাসা হারালো। আবিরেরও দোষ নেই। সেও তো ভালোবেসেছে। নিয়তি কখন কোনদিকে জীবনের পথ পাল্টে দিবে কেউ জানে না।

নিতু আবিরকে হারালো। গল্পটা এমন না হলেও পারতো। সবকিছু কত সুন্দর হতো যদি আবিরও নিতুকে চাই তো। ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসতো।

সবকিছু ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো শুভ্র। আনমনেই একটা খেয়াল আসলো _ ” ওর ভালোবাসাকে পাবে তো? নিয়তি ওর ভালোবাসাকে কেড়ে নিবে না তো?”

চলবে….
নিমিতা আনাম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here