প্রণয়ের রং
পর্ব – ০৭
” আমাদের জীবনে কখনও কখনও এমন কোনো মানুষ আসে যারা আসায় আমাদের জীবন বদলে যায়.. তারা আমাদের বদলে দেয়। নয়তো তাদের জীবন বদলে যায় আমাদের কারণে… ”
ভরা পূর্ণিমার রাতে ছাদের এক কোণে পা ঝুলিয়ে বসে কথাগুলো নিজে নিজেই আওড়াচ্ছিলো শুভ্র। সত্যিই তার জীবন আজ অন্যরকম লাগছে। কে জানতো কখনও তার জীবনেও ভালোবাসার স্নিগ্ধ বাতাস এসে ওর মন ছুঁয়ে যাবে। ওকে রাঙিয়ে যাবে প্রণয়ের রঙে….
___” ভালোবেসে ফেলেছি তোমায় নিমপাতা.. অনেকটা ভালোবেসে ফেলেছি। চুপি চুপি এসে আমার মনের কুঠিরে আসন পেতে বসে গেছো আমি টেরও পাইনি। ”
আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে চলেছে শুভ্র।
………………….
ভাঙা-গড়ার খেলায় সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সময়। সময় নিজের সাথে নতুন সম্পর্কের বন্ধন বয়ে আনে। তেমনি আবার অনেকসময় পুরনো সম্পর্কে পঁচন ধরায়।
নিমিতা ও শুভ্রের মাঝে দিনে দিনে দূরত্ব কমে আসছিলো। ছোট্ট ছোট্ট বিশেষ মুহুর্তগুলি তাদের অনুভূতিগুলোকে গাঢ় করে তুলছিল…
ওদের দুজনের কাছে আসা নিতু ও মেধার কাছে আনন্দের হলেও আবিরের মনকে বিষিয়ে তুলেছে। ওর মনের মানুষ অন্যকারোর দিকে ধাবিত হচ্ছে এটা সে মানতে চায় না।
___” তুই আমার নিমিতা। অন্যকারো কাছে তোকে যেতে দিবো না আমি। আমার মনের কথা খুব জলদি জানাবো তোকে। ”
___” এই বাদড়.. কি ভাবছিস এত মন দিয়ে? ”
নিতুর প্রশ্নে বাস্তবে ফিরে এলো আবির।
___” কিছু না। নিমিতা কই? ”
___” শুভ্র ভাইয়া ডেকে পাঠিয়েছে ওকে। উনার কাছে গেছে। ”
___” ওর সাথে নিমিতার এত কি কথা বলবি আমায়? ”
___” এত রেগে যাচ্ছিস কেন? কোনো দরকারেই ডেকেছে হয়তো। ”
___” শোন.. এসব আমায় বোঝাতে আসবি না। দরকার.. হাহ্..”
বলেই নিমিতাকে খুঁজতে চলে গেল আবির। কিন্তু ওর এমন ব্যবহার নিতুর মনে কু গাইছে। আজ সে আবিরের চোখে অন্যকিছু দেখছে..
___” নিয়তি কোন পথে নিয়ে যাচ্ছে আমায়? যাকে আমি মনের আসনে বসিয়েছি সেই মানুষটা কি আমারই বেস্ট ফ্রেন্ডকে… ”
নাহ্.. আর ভাবতে পারছে না নিতু।
আবির কিছুদূর যেতেই দেখলো নিমিতা আসছে এদিকটায়। আবিরকে দেখে ওর সামনে আসতেই সে কাঠ কাঠ গলায় প্রশ্ন করলো__
___” কই ছিলি? ”
___” শুভ্র ভাইয়া ডেকেছিল। ”
___” কেন? ”
___” এমনিতেই পড়াশোনার খবর, ক্লাস কেমন চলছে এসব শুনতে। ”
___ ” ওর এসব নিয়ে চিন্তা কেন? তোর সবকিছুই ওকে বলতে হবে? ”
___” এভাবে কেন বলছিস? সিনিয়র হয় তাই হয়তো.. ”
___” সিনিয়র বলেই? আদিখ্যেতা দেখাতে আসবি না আমায়। ”
কথাটা বলেই চলে গেল আবির। নিমিতা ওর এমন ব্যবহারের আগা-গোড়া কিছুই বুঝলো না। নিতুকে ফোন করে ওর কাছে চলে গেল সে।
কাল নিমিতাদের ডিপার্টমেন্টে ছোট্ট একটা পার্টি আছে। সব মেয়েরা ঠিক করেছে তারা শাড়ি পরবে। নিমিতা কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।
___” নিতু রে.. তোর মনে আছে অরিয়েন্টেশনের কথা? শাড়ি পরাতে কি কান্ডটা হলো। ”
___” হ্যাঁ। তাই বলে আর শাড়ি পরবি না? ”
___” ওই খচ্চর লোক আমার শাড়িকে তেনা বলছে। আর পরতে না করছে। ”
___ ” কিচ্ছু হবে না। ভালোভাবে সেফটিপিন লাগায় দিবো তোরে এবার। ”
___” না রে.. ভয় হচ্ছে খুব। ”
___” আচ্ছা শুভ্র ভাইয়ার পছন্দের রং জানিস? ”
___” হুম। শুনেছিলাম একবার। সাদা। ”
___” তাহলে কাল সাদার ছোঁয়ায় রাঙিয়ে নিবি নিজেকে। ভাইয়া চোখই ফেরাতে পারবে না। ”
___” বাহ্ রে.. উনার পছন্দ মতো কেন সাজতে যাবো?”
___” এহহ্.. শোন মেয়ে.. নাটক কম করো। কিছু বুঝিনা মনে হয় তাই না? ”
___” না রে। যা ভাবছিস তা মোটেও না। ”
___” হ..হ.. পুরো ক্যাম্পাস এই কথা জেনে যাবে আর তুই না না করেই যাবি.. ”
মগ ভর্তি চা নিয়ে বেলকনিতে বসেছে নিমিতা। গালে হাত দিয়ে চিন্তার পুকুরে খাবি খাচ্ছে। নিতুর কথা শুনবে সে? সত্যিই সাদা শাড়ি পরবে? ফের ওই খচ্চর তান্ডব শুরু করলে? এসব ভাবতে ভাবতেই বিছানায় এসে গা এলিয়ে দিলো…
চলবে…
নিমিতা আনাম