#প্রণয়ে_তুমি
#পর্ব_২
#writer_nahida_islam
অতসী এক ফাকে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে যায়। যা বলবে পরে রুহির কাছ থেকে জেনে নেওয়া যাবে। কিছুদূর যেতে ই ইফাজ তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে অতসীকে গিরে ধরে। রাস্তার মাঝখানে অতসী আর চার দিকে ইফাজের সাঙ্গপাঙ্গ,
-কী রাজি তো কালকে খবরের কাগজে হেডলাইন হতে।
অতসী ব্যাগ থেকে একটা চাকু বের করতে ই সবগুলো ছেলে দূরে সরে গেলো। অতসী আস্তে করে ইফাজের সামনে গিয়ে চাকুটার দিকে তাকিয়ে বললো,
-কি মিস্টার অসভ্য খান আপনি ও খবরের কাগজের হেড লাইন হতে রাজি তো।
ইফাজ কোনো কথা বলার আগে ই পাশ কাটিয়ে অতসী মারলো এক দৌড় কিছু দূর গিয়ে চিৎকার দিয়ে বললো, এটা খেলনা চাকু যদি রিয়েল হতো না তো এতোক্ষণ মেরে উপরে পাঠিয়ে দিতাম।ইফাজ হাবলার মতো তাকিয়ে আছে,
-এটা কী হলো ইফাজ।
তুষারের দিকে অসহায় দৃষ্টি তাকিয়ে আছে ইফাজ কোনো কথা ই বলছে না।
-কি জিনিয়াস মেয়েরে বাবা এমন নাকানিচুবানি খাইয়ে চলে গেলো বুঝতে ও পারলি না এটা ফেইক ছিলো।
– এ মেয়েকে অন্য ভাবে শায়েস্তা করতে হবে।
বাড়িতে ডুকে ই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। এতোটা পথ হেটে এসেছি শরিরটা খুব ক্লান্ত লাগছে, মাঝখানে আবার যে দৌড় দিছি মনে হচ্ছিল অলিম্পিকে চান্স হবে।
-এসেছিস মা?
বাবার কন্ঠ শুনে ব্যাকটা টেবিলে রেখে বাবার রুমে গেলাম। আমি যেতে ই বাবা আমার হাত চেপে ধরে বললো,
-আমার জন্য তোর অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয় তাই না মা।
হাসি মুখে বাবার কাঁপলে চুমু খেয়ে বললাম,
-কষ্ট কিসের তুমি তো আছো তাই না, যদের বাবা নাই তারা বুঝে কতো কষ্ট। তোমার জন্য আমার কোনো কষ্ট নাই বরং তোমার চোখের পানি আমাকে কষ্ট দিচ্ছে।
– এমন শুয়ে শুয়ে খাওয়ার থেকে মরে গেলে ই ভালো ছিলো রে মা, অন্তর তুই একটু শান্ততি বাচতে পারতি।
-দরকার পরলে সারাজীবন এভাবে থাকবে তাও আমি তোমাকে হারাতে পারবো না। তোমার কিছু হওয়ার আগে যেনো আমি ই বেচে না থাকি।
বাবা আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে, বুকে জড়িয়ে নিলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, যা মা ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নে।
হয়তো বাবা অসুস্থ কিন্তু যখন থেকে মাকে হারিয়েছি বাবা ই আমার মা বাবা দুটোই। বাবা ছাড়া একটা দিন ও কল্পনা করতে পারি না। আমার পুরো পৃথিবীর আমার বাবাকে ঘিরে।
হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো, তাকিয়ে দেখলাম রুহি কল করেছে। কল রিসিভ করতে ই বলে উঠলো,
-কালকে কখন আসছিস, আর লাল রং এর শাড়ি পড়ে আসবি কিন্তু।
-শাড়ি পড়তে আবার কে বললো, তোর ইচ্ছে হলে তুই পরিস আমি পারবো না।
-কলেজ থেকে ই বলে দিয়েছে। মেয়েরা লালা শাড়ি আর ছেলেরা সাদা পাঞ্জাবি। এই রাখছি আমার ফোনে টাকা নাই। পরে প্রয়োজন পরলে তুই কল করে নিস।
চুপটি করে দাড়িয়ে থাকলাম, লালা শাড়ি এখন কোথায় পাবো। এতো কিছু না ভেবে কাজে হাত চালাই। রান্না করে বাবাকে খাওয়াতে হবে।
–একটা মেয়ের খুজ নিতে পারিস না তো আবার এ মুখ নিয়ে আমার সামনে আসলি কেনো।
-বস এই মেয়েটা এখানকার স্থানীয় না। কেউ তো চিনতে পারছে না।
-স্থানীয় না হক হাওয়ায় তো ভেসে আসেনি।
-কিছুটা সময় দেন বস।
-এই মুখ আমাকে আর কখনো দেখাবি না। আমার কাজ আমি নিজে ই করে নিতে পারি।
-বস একটা কথা বলি?
-আমি কী তোর মুখ চেপে ধরে আছি, যা এইখান থেকে।
-বস শুনেন ভাবির ফোন নাম্বর পেয়েছি।
-তোর ভাবির নাম্বর দিয়ে আমি কী করবো..
পরক্ষণেই ই ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ইফাজ বললো,
-কাকে ভাবি বলছিস তুই
-যার ইনফরমেশন নিতে বললেন উনি আমাদের ভাবি না।
-আমার পায়ে জুতা দেখছিস?
ইফাজের কথায় উদয় ইফাজের পায়ের দিকে তাকিয়ে দাতগুলো বের করে হাসি দিয়ে বলে,
-হে ভাই জুতাগুলো তো সুন্দর।
-এই সুন্দর জুতার বারি খেতে না চাইলে যা এখান থেকে।
উদয় দৌড়ে ইফাজের সামনে থেকে চলে যায়। সাথে সাথে ইফাজের ফোনে মেসেজ আসে। মেসেজ চেক করতে ই দেখে, উদয়ের নাম্বার থেকে মেসেজ। মেসেজে লিখা অতসী ভাবির নাম্বার। ইফাজ দাঁতে দাত চেপে তুষারের দিকে তাকিয়ে বলে,
– এ কোন আহাম্মক কে আনলি।
তুষার মুখে হাত চেপে ধরে হাসছে। ইফাজ এটা দেখে আরো বেশি রেগে যায়। সামনে থাকা ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় লাথি মারতে ই গ্লাসগুলে ভেঙ্গে নিচে পড়ে যায়, ইফাজের পায়ে কেডস পড়া ছিলো তাই পায়ে ব্যাথা পয়নি।
অতসী হাতের কাজ শেষ করে বিছানায় বসতে ই ফোনটা বেজে উঠলো, একরাশ বিরক্তি নিয়ে ফোনটা রিসিভ করতে ই,
-কে বলছেন।
-আমরা একটা কোম্পানি খুলতে চাচ্ছি ম্যাম ঐখানে আপনাকে আমারা ম্যানেজারের দায়িত্ব দিতে চাই।
-কীসের কোম্পানি..
-কোম্পানি নাম হচ্ছে “থাপ্পড় ” আপনি শুধু থাপ্পড় দিবেন।
-ফাজলামি পাইছেন।
ইফাজ তুষারের থেকে ফোনটা নিয়ে বললো,
-কেনো থাপ্পড় দিতে তো ভালো ই পারো জবটা তোমার জন্য খুব ই ভালো হবে।
ইফাজের বয়েস শুনে সাথে সাথে অতসী কল কেটে দেয়।
কেটে দেওয়া পর বার বার কল দিতে থাকে অতসী ফোন সাইলেন্ট করে ঘুমিয়ে পড়ে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ই ফোনটা হাতে নিলাম, ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলাম, ১০০+ কল। প্লাস অনেক গুলা মেসেজ। মেসেজ ওপেন করতে ই দেখলাম, থাপ্পড় কোম্পানি ম্যানেজার হিসেবে অতসীকে চাই। সবগুলো মেসেজ শুধু এক ই কথা লিখা।
এই ছেলে তো আমাকে পাগল করে ছাড়বে। আর আমার নাম্বার ই বা কে দিলো। ফোনটা হাত থেকে টেবিলের উপর রাখতে যাবো ঠিক ঐ সময় আবার কল আসলো। এবার একটা বুদ্ধি বের করলাম। দৌড়ে গিয়ে একটা স্টিলের প্লেট আর চামচ নিয়ে আসলাম। কলটা রিসিভ করে প্লেটের নিচে ফোনটা রেখে উপরে চামচ দিয়ে বেশকিছুক্ষন শব্দ করলাম।
-এই অনিকের বাচ্চা তুই এটা কাকে কল দিলি। আমার কানের পর্দা মনে হয়ে ফেটে গেছে।
-আপনি ই তো বলছেব রকল রিসিভ করলে আপনাকে দেওয়ার জন্য।
-রাখ তোর কল, এই মাইয়াকে আর কল দিবি না। আমার কানের বারোটা বাজায় দিছে। যা এখন আমি ঘুমাবো।
-বস আজকে কলেজে নবীন বরণ যাবেন না।
-নবীন বরণের কথা শুনে ইফাজ লাফিয়ে উঠেছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দ্রুত ওয়াশ রুমে চলে গেলো।
অতসী মায়ের শাড়ি হাতে নিয়ে বসে আছে, মায়ের সেই লাল শাড়ি। মা মারা যাওয়ার পর একবারের জন্য ও শাড়ি পড়া হয়নি। আজকে প্রথম শাড়ি পড়বে। চোখের পানি মুছে রুহিকে কল দিলো,
-কলেজে আসবি কখন,
-আমি পার্লারে আছি, তুই ও চলে আস।
-আমার অতো সাজতে ভাল্লাগে না। তুই আমার জন্য কলেজের সামনে দাড়িয়ে থাকিস।
অতসী রেডি হয়ে কলেজের সামনে যেতে ই দেখে, রুহি বেশ সেজেগুজে দাড়িয়ে আছে।
-কী রে তুই এমন সাদামাটা হয়ে আসলি কেন। তোর কী জামাই মরে গেছে। তাও তোকে অনেক সুন্দর লাগছে।
-আমার সাজতে ভালো লাগে না চল তো।
ইফাজ সাদা পাঞ্জাবি পড়া, চুলগুলো স্পাইক করা, হাতে গোল্ডেন কালার ওয়াচ।
ইফাজকে দেখে ই সুমি দৌড়ে আসে,
-হায় বেবি।
ইফাজ হাসি মুখে বললো,
-আর কিছু আটা ময়দা মুখে মাখতে পারতে। নবীন বরণ না মনে হচ্ছে কারো বিয়েতে এসেছো।
-ইফাজ কিছু বললে
ইফাজ হাসি মুখে বললো,
-তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।
-তোমার জন্য ই তো সাজলাম।
হঠাৎ তুষার এসে ইফাজকে নিয়ে অন্য দিকে চলে যায়।
-ইফাজ দোতলার বারান্দায় তাকিয়ে দেখ তো।
ইফাজ দোতলার বারান্দায় তাকাতে ই দেখলো, অতসী দাড়িয়ে দাড়িয়ে রুহির সাথে কথা বলছে। লালা রঙের শাড়িতে বেশ সুন্দর লাগছে সামনের অবাধ্য চুলগুলো বার বার মুখে এসে পড়ছে অতসী বেশ বিরক্ত নিয়ে বার বার চুলগুলো সরাচ্ছে।
-দেখা শেষ হলে আমার দিকে তাকা ইফাজ।
-ধুর এটা দেখার কী আছে আজকে শুধু একবার সুযোগ মতো পেতে দে, আজকে কলেজে আসছি ই ওর জন্য…
দোতলা থেকে অতসী নামতে যাবে সিড়িতে পা ফেলতে ই শাড়ির কুচির সাথে পা লেগে কুচি বেশ কিছুটা খুলে যায়।
রুহি বেশ কিছু সিড়ি নেমে গিয়ে পিছনে তাকাতে ই দেখে অতসী দাড়িয়ে আছে,
-কী রে দাঁড়িয়ে পড়লি কেনো?
-তুই নিচে যা আমি ওয়াশরুম থেকে আসছি।
-একা যেতে পারবি।
-হে
–আচ্ছা তাহলে তুই নিচে যা আমি আসছি।
অতসী ওয়াশরুমে গিয়ে শাড়িটা ঠিক করে বের হতে ই কেউ আচমকা টান দিয়ে দেওয়ালের সাথে হাত চেপে ধরে।
অতসী ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে,
-কী হলো মিস সাহসি এখন চোখ বন্ধ করে আছেন কেনো?এখন আপনাকে কে বাঁচাবে?
চলবে,
[ভুলক্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]