প্রণয় পর্ব -১৮

#প্রণয়
#পর্বঃ১৮
#তানিশা সুলতানা

সূর্য পূর্ব দিকে ঢলে পড়েছে। গাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে একটু একটু রোদ এসে পড়ছে তানহার মুখে। অবাধ্য কিছু চুল ঝুঁটি থেকে খুলে মুখের সামনে চলে এসেছে। বিকেলের মৃদু বাতাসে চুল গুলো উড়ে উড়ে চোখে এসে পড়ছে। তানহা খুব যত্ন নিয়ে চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে নিচ্ছে।

সূচক গভীর মনোযোগ দিয়ে তানহাকে দেখছে। গুনে গুনে আট বছরের বড় এই মেয়েটার থেকে। কাকিমাকে হাসপাতালে নেওয়া হলো সেটা মনে আছে সূচকের। সূচকও গেছিলো বাবা আর কাকাইয়ের সাথে।

সেই পিচ্চি তানহাকে সর্বপ্রথম সূচকের কোলেই দেওয়া হয়েছিলো। বাবা সাহায্য করেছিলো কোলে নিতে।
সেদিন যত্ন করে কপালে চুমু খেয়েছিলো। সেই চুমুর প্রভাবটা এতোটাই শক্তিশালি যে এখনো চুমু খেতে ইচ্ছে হয়।

সেই পিচ্চি মেয়েটার প্রেমে কি করে পড়লো ও?
তানহার থেকে পাঁচ মাসের ছোট তোহা।
কি এমন জাদু করলো মেয়েটা?

“আমি তো আপনাকে ভালোবাসি। বিয়েও করতে চাই। কিন্তু কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করলে যদি ডিভোর্স করিয়ে দেয়? তখন তো আমি বিধবা হয়ে যাবো। আমার কি হবে? এতোগুলো বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে কোথায় যাবো আমি? ওদের খাওয়াবো কি?

তানহা মাথা নিচু করে চিন্তিত ভঙ্গিতে বলে। সূচক ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে ফোঁস করে শ্বাস টানে।

” গাঁধা বিয়ে হয়ে গেলে কেউ কিছু করতে পারবে না। আর তুই না চাইলে কেউ ডিভোর্স করিয়ে দিতে পারবে না।

দাঁতে দাঁত চেপে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে সূচক। তানহার বোকা বোকা কথায় রাগ হচ্ছে।

“হুমম তাহলে বিয়ে করাই যায়।

বুকে হাত দিয়ে শ্বাস টানে সূচক। যাক বাবা হ্যাঁ বলেছে।

” কিন্তু আমার এতোগুলো শর্ত আছে।

আঙুল তুলে বলে তানহা। সূচক ভ্রু কুচকে তাকায়।

“বল

বাইরের সাথে ঘেসে দাঁড়িয়ে বলে সূচক।

” আমাকে ধমক দেওয়া যাবে না। আমার কথা শুনতে হবে। মেয়েদের সাথে নিকনিক করা যাবে না। ফেসবুক পাসওয়ার্ড দিতে হবে আমায়।
ওয়ালপেপারে আমার পিক দিতে হবে। আমার সাথে ট্যাগ করে God A Married স্টাট্যাস দিতে হবে।

সূচকে কপাল কুচকে ফেলে।

“বললাম না বিয়েটা পাবলিক করতে চাইছি না এখনই।

চোখ পাকিয়ে বলে সূচক।

” হচ্ছে না। এই কথাটাই রোমান্টিক ভাবে বলতে হবে। আমি রসকষহীন মানুষকে বিয়ে করে জীবনটাকে বারোটা বাজাবো না।

বাঁকা হেসে বলে তানহা।

“খুব পেকেছিস না?

ধমক দিয়ে বলে সূচক।

” বিয়ে কেন্সেল করে দিবো কিন্তু।

তানহা উল্টে ধমক দিয়ে বলে। সূচক চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে দুটো শ্বাস টানে। একে কি করে সয্য করবে সারাজীবন?

তারপর তানহার সামনে দাঁড়িয়ে

“তুই কি রাজী?

তানহা গালে হাত দিয়ে খানিকক্ষণ ভাবে। তারপর কাঁধে ঝোলানো ছোট ব্যাগ থেকে ফোন বের করে। তারপর ভিডিও অন করে সূচকের দিকে ধরে।

” এসব কি?

সূচক হকচকিয়ে জিজ্ঞেস করে।

“আপনাকে দিয়ে বিশ্বাস নাই। যখন তখন বলতে পারেন কোনো শর্ত ছিলো না। তাই রেকর্ড করে রাখবো। যাতে অস্বীকার করতে না পারেন।

সূচক কপালে হাত দিয়ে ফোঁস করে ওঠে।

” শুরু কর

” তো প্রথম শর্ত “কথায় কথায় ধমক দেওয়া চলবে না”

“আচ্ছা

” প্রতিদিন একবার করে আই লাভ ইউ বলতে হবে”

“আচ্ছা

” কবুল বলার পরেই ফেসবুক পাসওয়ার্ড দিয়ে দেবেন”

“আচ্ছা

” আমাকে প্রতিদিন পড়াতে হবে”

“আচ্ছা

“প্রতিদিন আমার সাথে খাবার খেতে হবে”

“আচ্ছা

” মেয়েদের সাথে নিকনিক করা যাবে না”

“আচ্ছা

“মাঝেমধ্যে আমার সাথে ঘুমতে হবে”

সূচক বড়বড় চোখ করে তাকায়। তানহা মুখ বাঁ কায়।

“রাজী না থাকলে বলুন? কোনো বিয়ে টিয়ে হবে না।

শ্বা শিয়ে বলে তানহা।

” রাজী আমি।

” শেষ শর্ত হলো আর কিছু শর্ত এড করা হবে।
আপাতত মনে পড়ছে না।

“ওকে

তানহা ভিডিও সেভ করে ফোন রেখে বিশ্ব জয়ের হাসি দেয়।

” এবার চলুন বিয়ে করতে।

তানহা সূচকের হাত ধরে বলে।

“কালকে বিয়ে করবো। আজকে চল তোকে ডাক্তার দেখিয়ে কিছু কেনাকাটা করে নেই।

” ও মা কাল কেন? আমার বিয়ে করার শখ এখনই উতলে উঠেছে। বিয়ে বিয়ে ফিলিং অলরেডি চলে আসছে।

“সূচক আহমেদ বিয়ে করবে। বউয়ের নাক ভরা সর্দি আর এই ফ্যাল ফেলে ড্রেসে?
কখনোই না। একদম লাল টুকটুকে বউ বানিয়েই বিয়ে করবো।

একটু ভাব নিয়ে বলে সূচক। তানহা রেগে গাল ফুলায়। না হয় ওর একটু না একটু না বেশিই সর্দি হয়েছে তাই বলে এভাবে খোটা দেবে?

” দেখুন আমার সর্দি না একদম খোটা দেবেন না।

গাল ফুলিয়ে বলে তানহা।

“কেনো তোর সর্দি কি অমূল্য সম্পদ না কি?

” হ্যাঁ তাই
শর্ত আরও একটা এড করা হলে। আমার সর্দি মুছিয়ে দিতে হবে।

সূচক নাক সিটকায়।

“না সিটকালে হবে না। রাজী না থাকলে বলুন। বিয়ে ভেঙে দিচ্ছি।

হুমকি দিয়ে বলে তানহা।

” বাদ দে
নাক মুছাতে পারলে কেটে দিবোনি। এটা সমস্যা না। সমস্যা হলো যা বলছি পারবি তো?

” কি বলছেন?

তানহা বলে।

“কালকে আমি চিটাগং যাবো। তুই ও যাওয়ার জন্য বায়না ধরবি। ধরবি মানে খুব শক্তপোক্ত হয়ে।
যাতে বাধ্য হয় সবাই যেতে দিতে।
বুঝলি?

তানহা খুশিতে লাফিয়ে উঠে গলা জড়িয়ে ধরে সূচকের।

” ওয়াও বিয়ে সাথে হানিমুন
গ্রেট

একটা গান মনে পড়ে গেলো
“বিয়ের আগেই হানিমুনে যাচ্ছি কক্সবাজার,,,,, সেইখানে সাগরে আমরা পানিতে দিমু সাঁতার

তানহা হেলেদুলে গান শেষ করে পেছনে তাকিয়ে দেখে সূচক নেই। বাইকে বসে হেলমেট পড়ছে। তানহা ভেংচি কেটে পেছনে বসে পড়ে।

” রসকস ছাড়া মানুষ।

বিরবির করে বলে।

“পিচ্চি মানুষ রসকষের কি বুঝিস তুই?

ধমক দিয়ে বলে সূচক।

” বিয়েটা ভাঙতে ইচ্ছে করছে কেনো জানি

হাই তুলে বলে তোহা।

“সরি

কাচুমাচু হয়ে বলে সূচক। তানহা দাঁত কেলায়।

🥀🥀🥀

“তোহা কিছু বলতে চাইছি আমি।

ইরিন শুকনো কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে বলে।

” হুম বলুন

শক্ত গলায় বলে তোহা। ইমন চোখের ইশারায় ইরিনকে বলতে বলছে। ইরিন এনি মিনি করছে। বলতে পারছেনা।

“তোহা তুমি এখানে?

হঠাৎ কারো গলা পেয়ে চমকে ওঠে তোহা। পেছন ঘুরে আবিরকে দেখে এক গাল হেসে দাঁড়িয়ে আছে।

” এই তো ঘুরতে এসেছিলাম।

একটু হেসে বলে তোহা। ইমন ভ্রু বাঁকিয়ে আবিরকে দেখতে থাকে।

“একটু আসবে আমার সাথে?
কথা ছিলো।

মিনতির সুরে বলে আবির। তোহা জানে ইরিন কি বলবে। আপাতত সেটা শোনার ইচ্ছে ওর নেই।

” আপু আসছি হ্যাঁ
পরে শুনবো আপনার কথা।

বলেই ইরিনকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আবিরের সাথে চলে যায়। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে তোহার যাওয়া দেখে ইমন।

“কি বলবেন আবির ভাইয়া?

খানিকটা দুরে গিয়ে চোখ মুখ কুঁচকে বলে তোহা। এই ছেলেটাকে ওর পছন্দ না। আল্লাহর সৃষ্টি সব মানুষই সুন্দর। কিন্তু কেনো জানি ভালো লাগে না তোহার।

” বিজয় স্যার ডাকতে বলেছিলো।

মাথা নিচু করে বলে আবির। চমকে ওঠে তোহা। স্যার কেনো ডাকতে বলবে? নিশ্চয় মিথ্যে বলছে ছেলেটা।

“মিথ্যে কেনো বলছেন?

চোখ মুখ কুঁচকে বলে তোহা।
আবির চোখ তুলে তাকায় এক পলক তোহার দিকে। তারপর আবার মাথা নিচু করে ফেলে।

” আমি মিথ্যে বলতে পারি না তোহা। যদি পারতাম তাহলে তোমাকে ভালোবাসার বেপারটা পাবলিশ হতো না।

শান্ত গলায় বলে আবির। তোহা ফোঁস করে শ্বাস টানে।

“কোথায় স্যার?

ওই তো ওই দিকেই আছে।

তোহা আবিরের দিকে এক পলক তাকিয়ে চলে যায়। আবিরের চোখ দুটো টলমল করে ওঠে।
পৃথিবীতে সব থেকে কষ্টের মুহুর্ত হলো প্রিয় মানুষটির পাশে তার প্রিয় মানুষটাকে দেখা”

তোহা এগিয়ে গিয়ে দেখে সত্যি সত্যিই বিজয় দাঁড়িয়ে আছে। চোখ মুখ দেখে বোঝাই যাচ্ছে ভীষণ রেগে আছে। রাগের কারণটা ধরতে পরে না তোহা।
এক গাল হেসে বিজয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

“স্যার ডেকেছিলেন?

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here