প্রেমের পরশ পর্ব -১৮

#প্রেমের_পরশ
#পর্বঃ১৮(বোনাস পর্ব)
#লেখিকাঃদিশা_মনি

আমান উপস্থিত হয়েছে তার মায়ের সামনে। নিজের বাবার অতীত তাকে নিজের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটা সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে।

জান্নাতুল খাতুন আমানের দিকে তাকিয়ে আছেন উত্তরের আশায়৷ কিছুটা সময় চলে যাওয়ার পরেও আমান চুপ থাকে। আমানের এই নীরবতা জান্নাতুল খাতুন আর সহ্য করতে পারলেন না। অধৈর্য হয়ে বলে উঠলেন,
‘তোমার কি সিদ্ধান্ত জলদি আমাকে জানাও। আমি আদরের মা-বাবা মানে আমার ভাইয়া ভাবিকে আগামী সপ্তাহে আসতে মানা করে দিবো? নাকি বলব তুমি বিয়েতে রাজি আছ তারা যেন আসেন?’

দীর্ঘ সময়ের নীরবতা ভেঙে আমান বলে উঠল,
‘তুমি ওনাদের মানা করে দাও,,,’

জান্নাতুল খাতুন হতাশ হলেন প্রচুর। কত আশা নিয়ে ছিলেন নিজের ভাইয়ের মেয়েকে ছেলের বউ করে আনবেন। কিন্তু তার ছেলেই যখন বিয়েটা করতে নিজের অমত প্রদান করল তখন তারও আর কিছু করার নেই৷ তাই তিনি বলে উঠলেন,
‘ঠিক আছে। তুমি যা ভালো মনে করো। আমি শুধু এটুকুই বলবো আদর তোমার জন্য বেস্ট ছিল।’

জান্নাতুল খাতুন রুম থেকে বের হতে যাবেন এমন সময় আমান বলে উঠল,
‘আমার পুরো কথাটা তো শুনে যাও আম্মু।’

জান্নাতুল খাতুন থেমে গেলেন৷ পেছন ফিরে নিজের ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘যা বলার বলে ফেলো।’

আমান শান্ত গলায় বলে,
‘আমি কিন্তু বলিনি আমি এই বিয়েতে রাজি নই। আমি বলেছি ওনাদের মানা করে দিতে যেন ওনারা এক সপ্তাহ পর না আসেন। বরং তুমি ওনাদের কালকেই আসতে বলো। কাল এই বাড়িতে বিয়ের ফাইনাল কথা বলা হবে এবং সবকিছু ঠিক ঠাক থাকলে কালকেই আমি আদরের সাথে আংটি বদল করে নেবো।’

জান্নাতুল খাতুনের গোমড়া মুখ মুহুর্তের মধ্যেই খুশিতে ভড়ে ওঠে। তিনি এসে আমানকে হালকা ভাবে মে’রে বলেন,
‘ফাজিল ছেলে, মায়ের সাথে মজা হচ্ছে। আগে বললে কি হতো? আমার তো মনে হয়েছিল তুই এই বিয়েটা করতেই চাস না।’

‘আমার কি দোষ বলো আম্মু? তুমিই তো পুরোটা না শুনে চলে যেতে নিয়েছিলে।’

জান্নাতুল খাতুন খুশি হয়ে গেছেন প্রচুর৷ তিনি বললেন,
‘তোর যে এত তাড়া আমি কিভাবে বুঝব? আচ্ছা আমি তোর আব্বুকে আর মামাকে বলছি সব এরেঞ্জমেন্ট করতে।’

জান্নাতুল খাতুন প্রসন্ন চিত্তে বিদায় নিলেন। তিনি চলে যাওয়ার পর আমান চোখ বন্ধ করে আনমনে বলল,
‘যার কাছে আমার কোন মূল্য নেই, তার জন্য আমি সময় নষ্ট করবো না। ছোয়া আমাকে চায়না, তাই আমিও আর ওকে নিয়ে ভাববো না। আব্বুর জীবনের গল্প থেকে আমি এটা বুঝলাম যে অনেক সময় দুই তরফা ভালোবাসাও পরিস্থিতির জন্য পূর্ণতা পায়না। সেখানে আমার একতরফা ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে এটা ভাবাও বোকামি।’

৩৫.
পেরিয়ে গেলো গোটা একটা দিন। আজকে আমানের সাথে তার মামাতো বোন আদরের আংটি বদল হওয়ার কথা। সাথে অবশ্য বিয়ের কথাবার্তাও চূড়ান্ত হবে। মানে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা হবে আরকি।

ছোয়ার পরীক্ষা ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। তাই সে বাড়িতেই আসে। আমানের বিয়ের কথা শুনে সেও প্রথমে অবাক হয়েছিল। কেননা, গতকালই আব্দুল হোসেন তাকে এমন একটা কথা বলল। আর এরমধ্যেই কিনা আমানের বিয়েও ঠিক হয়ে গেলো! ব্যাপারটা সত্যিই খুব তাজ্জব লাগল ছোয়ার কাছে। তবে বরাবরের মতো সে নিজের মনের অনুভূতি বুঝতে অক্ষম।

আলিয়ার সাথে একই রুমে আছে ছোয়া। আলিয়ার দিকেই নজর তার। আলিয়া সেই কখন থেকে একটার পর একটা ড্রেজ দেখেই চলেছে নিজের ভাইয়ের আংটি বদলে পড়ার জন্য। কত কিছু প্ল্যানিং করছে। কত খুশি লাগছে তাকে। অথচ ছোয়া খুশি হতে পারছে না৷ কোথায় যেন একটু খারাপ লাগা থেকেই যাচ্ছে তার। ছোয়া কিছু সময় নিয়ে ভাবল, তার কি খুশি হওয়া উচিৎ?! ইতিবাচক বা নেতিবাচক কোন ধরনের উত্তরই তার মস্তিষ্কে এলো না। অগত্যা আর বেশি না ভেবে চুপচাপ বসে রইল সে। যথাসম্ভব চেষ্টা করতে লাগল স্বাভাবিক থাকার।

ঠিক এরকম সময়েই সেই স্থানে আগমন ঘটল আমানের। আমান রুমে এসেই ছোয়ার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল,
‘আজ আমার বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হবে সাথে আংটি বদলও আছে। আর আমার বোনেরা এখানে বসে আছে। ছোয়া,আলিয়া উঠে পড় তোরা৷ আম্মু আর চাচি একা কত কাজ করবে? তোরাও একটু হাত লাগা। স্পেশালি ছোয়া তুই, আমার বিয়ের প্রত্যেকটা অনুষ্ঠানে কিন্তু আমি তোকে দেখতে চাই। মাইন্ড ইট।’

ছোয়া তাকালো আমানের দিকে। ফলশ্রুতিতে দুজনের চোখাচোখি হলো। আমান দ্রুত দৃষ্টি অন্যদিকে নিক্ষি’প্ত করল।

আমানের বুকে চিনচিনে ব্যথা অনুভব হতে লাগল ছোয়ার কথা ভেবে। মেয়েটাকে যে বড্ড ভালোবাসে সে! কিন্তু ঐ যে কথায় আছে না যে, মনে থাকে সে ভাগ্যে থাকে না। আমানের সাথেও কি এমন হতে চলেছে? সেই উত্তরটা সময়ই বলে দেবে।

৩৬.
পুরো বাড়ি মেহমানে পরিপূর্ণ। আমানের মামার বাড়ি থেকে কমপক্ষে ৮-১০ জন এসেছে। তাদের আতিথিয়েতায় ব্যস্ত সময় পার করছেন জান্নাতুল খাতুন এবং মতিয়া বেগম।

ছোয়া নিজের ঘরে বসে ছিল। আজ তার মন ভীষণ পরিমাণে খারাপ। এই মন খারাপের কারণ হয়তো তার নিজেরও অজানা। অথবা সে জেনেও না জানার ভান করে আছে।

নিজের কল্পনাতে মগ্ন ছোয়ার ধ্যান ভাঙল আলিয়ার ডাকে। আলিয়া এসে ছোয়াকে বলল,
‘তুমি একা এখানে বসে কি করছ আপুনি? নিচে চলো আমার সাথে। একটু পরেই ভাইয়ার সাথে আদর আপুর আংটি বদল হবে।’

ছোয়ার মন খারাপের পরিমাণ বৃদ্ধি পেল। যদিও তার যাওয়ার কোন ইচ্ছা ছিল না কিন্তু আলিয়ার জোরাজুরিতে সে বাধ্য হলো উঠে আসতে।

বসার ঘরে উপস্থিত হতেই ছোয়া দেখল আমান সোফায় বসে আছে। তার পাশেই বসে আছে একজন অতি সুদর্শনা রমণী। ছোয়া ভালো করে লক্ষ্য করে দেখল সেই রমণীর দিকে। ফর্সা গায়ের রং এবং চিকন শরীর। লাল গ্রাউনে যেন সৌন্দর্য আরো বেশি ফুটে উঠেছে। ছোয়া অপলক তাকিয়ে রইল। এই হয়তো আদর। আমানের সাথে বড্ড মানিয়েছে অবশ্য।

ছোয়ার মনে হঠাৎ একটি প্রশ্ন এলো। তার সাথেও কি আমানকে এমন মানাতো? হয়তো না, কারণ সে এত বেশি সুন্দরী নয়। হলদেটে ফর্সা গায়ের রং তার, কিঞ্চিৎ গোলগাল সে।

আচমকাই ছোয়া নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে নিজেই নিজেকে তিরস্কার করে বলল,
‘এসব কি ভাবছি আমি? বড় আব্বু কালকে ঐ কথাটা হয়তো এমনিই বলেছেন। আমান ভাইয়ার প্রতি তো আমার তেমন কোন অনুভূতি নেই। তাহলে এসব কেন ভাবছি আমি?’

অতঃপর ছোয়া মনযোগ দেয় সকলের কথায়৷ আব্দুল হোসেন আদরের বাবা জহির উদ্দিনকে বললেন,
‘তাহলে ঐ কথাই রইল। আগামী সপ্তাহেই বিয়েটা হোক তাহলে।’

জহির উদ্দিন বলেন,
‘আমার একমাত্র মেয়ে। ওর বিয়েটা আমি বড় পরিসরেই দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু,,,আমান যখন চাইছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়েটা করতে তখন আমার মনে হয় বিয়েটা তাড়াতাড়িই হোক। আমরা এখন থেকেই প্রস্তুতিতে লেগে যাই।’

বিয়ের কথাবার্তা সম্পূর্ণ হতেই এবার উঠল আংটি বদলের কথা। জান্নাতুল খাতুন একটি আংটি আমানের হাতে দিয়ে বললেন,
‘নে এই আংটিটা আদরকে পড়িয়ে দে।’

আমান আংটিটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ স্থির রইল। অতঃপর এক পলক তাকালো ছোয়ার দিকে। ছোয়া চোখ৷ বন্ধ করে রেখেছিল। আমান বুঝলনা ছোয়ার এরূপ আচরণের কারণ।

এদিকে সবাই আমানকে আংটি পড়ানোর জন্য তাড়া দিতে লাগল। ছোয়া এতক্ষণে চোখ মেলে তাকালো। যেই দৃশ্য এড়ানোর জন্য এতক্ষণ চোখ বুজে ছিল সেটা যাতে না ঘটে সেই দোয়া করতে থাকে ছোয়া! আমান আংটি নিয়ে এগোতে যতো থাকে আদরের দিকে ছোয়ার চঞ্চলতাও ততো বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে তার ইচ্ছা করে চিৎকার করে আমানকে থামতে বলতে। নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারাতে থাকে ছোয়া। কি হবে এর পরিণাম!

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here