ফিলোফোবিয়া পর্ব -৩১

ফিলোফোবিয়া

ঊর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনির )

৩১.

( কার্টেসি ছাড়া কপি নিষেধ )

ভোরের আকাশে মেঘের পালকের ছড়াছড়ি। কুয়াশার চাদর কে*টে এক ফালি রোদ্দুর এসে ভুবন ছুঁইছে। ভারী পর্দার আড়াল হতে উজ্জ্বল আলো এসে প্রিয়’র মুখ ছুঁইছে। ভ্রু যুগল কুঁচকে নিলো। যেন প্রচন্ড বিরক্ত হলো সে। সরু ঠোঁটের কোণে ক্ষুব্ধতার আভাস। হরিণটানা আঁখিজোড়া পিটপিট করে কাঁপছে। মসৃণ গালে গোলাপি র*ক্তিম আভা ছড়িয়ে। অবাধ্য কেশে কপাল ঢেকে। শতাব্দের এক হাত জড়িয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন সে।
হাত বাড়িয়ে প্রিয়’র কপালে পড়ন্ত কেশ গুছিয়ে দিলো শতাব্দ। গতরাতে ঘুমাতে পারেনি সে। অনেক বছর আগের ফোবিয়াটা প্রিয়’র এখনো আছে। সারারাত ছটফট করে, ভোরের দিক ঘুমিয়েছে। ঘুমের ঘোরে গভীর গোঙানির আওয়াজ। বিড়বিড় করে বলেছে,’আমাকে নিওনা আপা…আমি বাঁচতে চাই। একটু প্রাণ খুলে বাঁচতে চাই।’ এতবছরেও কোন পরিবর্তন আসেনি। সেই ফোবিয়া থেকে পরিত্রাণ পায়নি। গতরাতে প্রিয়কে দেখে তার মনে হলো, পুরানো ভয়টা কমেনি বরং বেড়েছে আরো। ধীরেধীরে অন্ধকারের দিক টেনে হিঁচড়ে জড়িয়ে নিচ্ছে। প্রিয়’র দিক ঝুকে এলো শতাব্দ। তার মসৃণ গালে, ঠোঁটে আঙ্গুলের পিঠ ছুঁয়ে আলতো আদর করে দিলো। কপালে গভীর চুমু দিয়ে ফিসফিস করে বলল,
‘ একদিন সব অন্ধকার কাটিয়ে। উজ্জ্বল ভোর নামবে। তুমি হাসবে, প্রাণ খুলে বাঁচবে আবার।’
নিমিষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। আচমকা দরজার কড়া নড়ল। দৃষ্টি সরিয়ে গম্ভীর হয়ে তাকালো শতাব্দ। ময়না এসেছে। হাতে চায়ের কাপ। রাশভারি আওয়াজে শতাব্দ বলল,
‘ রেখে যাও।’
চায়ের ট্রে রাখতে রাখতে মৃদু স্বরে বলল ময়না,
‘ ভাইজান। আম্মা বড় ভাবিরে নিচে ডাকছে।’
‘ মাকে বল, প্রিয় অসুস্থ। ঘুমাচ্ছে।’
মাথা নাড়িয়ে চলে গেল ময়না। বাহিরে শোরগোলের আওয়াজ। পিছনের বাগানে লোক জড় হতে শুরু করেছে। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে ঘড়ির দিক তাকালো একবার। আটটা বাজতে পনের মিনিট বাকি। দশ মিনিটে বেরিয়ে যেতে হবে এইবার। চা শেষ করে উঠে দাঁড়ালো শতাব্দ। প্রিয়’র দিক এক পলক চেয়ে বেরিয়ে গেল। যাওয়ার আগে সবাইকে কড়া ভাবে বলে গেল, প্রিয়’র খেয়াল রাখে যেন।

বাহিরে প্রচন্ড শোরগোল কথার আওয়াজে ঘুম ভাঙ্গল প্রিয়’র। মাথা ধরছে খুব। মাথা চেপে উঠে বসতেই ময়না ছুটে আসলো। অস্থির হয়ে বলল,
‘ কিছু লাগবো ভাবিজান।’
ঘুম জড়ানো পিটপিট দৃষ্টিতে সামনে তাকালো প্রিয়। দুইদিক আলতো মাথা নাড়িয়ে ‘না’ সূচক ইঙ্গিত দিলো। কর্ণার টেবিল থেকে মোবাইল তুলে তাকাতেই আঁতকে উঠল। নয়টা বিশ। তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে উঠতে উঠতে বলল,
‘ এত দেরি হয়ে গেছে ডাকোনি কেন আমাকে?’
‘ ভাইজান মানা করছে। বলছে, আপনার খেয়াল রাখি যেন।’
ময়নার মৃদু আওয়াজ। বুক ফুলিয়ে স্বস্তির শ্বাস ফেলল প্রিয়। শ্বশুরবাড়ি সকাল সকাল উঠা নিয়ে বিন্দুমাত্র আগ্রহ মাথা ব্যথা নেই তার। বাড়ি ভর্তি মানুষজন সবার সামনে ঘুম নিয়ে কেউ কিছু বলবে তা শুনতে রাজি না সে।
বাহিরে অনেক মানুষের কিচিরমিচির আওয়াজ। মনে হচ্ছে শত শত মানুষজন এক সাথে জড় হয়েছে। প্রিয়’র সন্দিহান চাহনি। শঙ্কিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
‘ বাহিরে আওয়াজ কিসের?’
‘ আইজ শনিবার। শুক্রবার ভাইজান বাড়ি আইলে ।প্রতি শনিবার পেছনের বাগানে সভা, সালিশ বসে। বড় ভাইজানের কাছে গ্রামের মানুষ বিচার আচার, গ্রামের বিভিন্ন সমস্যা নিয়া আলাপ-আলাপ-আলোচনা করে।’
কপাল কুঁচকে এলো প্রিয়’র। বলল,
‘ বড় ভাইজান? শতাব্দ?’
ময়না হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল। প্রিয় সন্দিহান কন্ঠে আওড়াল,
‘ তাহলে চেয়ারম্যান সাহেব?’
‘ চাচাজান এসব এখন আর দেখেনা। বছর কয়েক আগে পাশের গ্রামের লগে বড় মা*রামা*রি হইছিল। খু*নাখু*নি পর্যায় গেছিলো। সেই বিচারে বিরাট ঝামেলা বাঁধছিল। সবটা বড় ভাইজান সামলাইছে তখন। তারপর থাইকা গ্রামের লোকজন সবাই ভাইরে চাচাজান থাইকা বেশি মান্যগণ্য করে। চেয়ারম্যান চাচাজান হইলেও ভাইয়ের কথায় গ্রামের লোকজন চলে।’
রাজনীতিতে তেমন কোন কৌতূহল ছিলনা শতাব্দের। বরাবরই এড়িয়ে চলতে চাইত। পড়াশোনা সেড়ে ঢাকাতেই শিফট হওয়ার ইচ্ছা ছিল। তাহলে হঠাৎ কেন রাজনীতিতে জুড়ে গেল? গম্ভীর হয়ে ভাবছিল প্রিয়। ময়না ডাকল। কিন্তুকিন্তু করে জিজ্ঞেস করল,
‘ মাথা ব্যথা কমছে? কড়া লিগার দিয়া চা কইরা দিমু ভাবি!’
গহিন ভাবনায় ডুবে থাকা প্রিয় মাথা নাড়াল। মৃদু স্বরে বলল,
‘ আচ্ছা।’

উষ্ণ চায়ের কাপে গরম ধোঁয়া উড়ছে। সূরের উজ্জ্বল নরম আলো চোখেমুখে পড়ছে। কানে ইয়ারফোন গুজে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে প্রিয়। দৃষ্টি দূর বাগানে। কাঠে ভারী চেয়ারে বসে আছে শতাব্দ। গায়ে কালো পাঞ্জাবি। শীত থেকে পরিত্রাণ পেতে মোটা শাল মুড়িয়ে। চুল গুলো ব্যকব্রাশ করে গোছানো। ফরসা চেহারায় চাপ দাঁড়ি। গম্ভীর চোখমুখ। চেহারায় গভীর পরিবর্তন। এত বছরে অনেক কিছু পরিবর্তনের সাথে শতাব্দের ব্যাক্তিত্বেও বিরাট পরিবর্তন এসেছে। আগের মত হুটহাট রেগে যায় না এখন। অনেক পরিবর্তন এসেছে। শান্ত হয়ে সামনের জনের সমস্যা শুনছে। ভেবেচিন্তে তারপর প্রতিক্রিয়া করছে। যদিও আগের থেকে আরো বেশি গম্ভীর আর রাশভারি হয়েছে সে। শক্ত চোয়াল, রাগ এখনো আগের মত নাকের ডগায়। নিখাঁদ দৃষ্টিতে দেখছে প্রিয়।

‘ বিয়ে করে এনেছে বলে তুমি রাজরানি হয়ে গেছ এমন না। পুরুষ মানুষের মন বদলাতে সময় নেয় না। একবার ছেড়েছিল তোমাকে, আবারো ছাড়বে।কথায় আছে না যে থাকার সে কখনো ছাড়েনা।’
কানের ইয়ারফোন খুলে পেছন ফিরে তাকালো প্রিয়। লুবনা এসেছে। সরু দৃষ্টিতে পরখ করল প্রিয়। র*ক্তিম ফোলা চোখের নিচে কালি জমেছে তার। খোলা উষ্কখুষ্ক চুল। হ্যাংলা শরীর। কালচে ফ্যাকাসে ঠোঁট।
প্রিয় ঠোঁটের কোণে চমৎকার হাসি টেনে বলল,
‘ ঘুরেফিরে বারবার সেই আমার কাছেই আসে। অনেকবছর তো দূরে ছিলাম। কি হলো! কোনকিছু কি বদলালো? তার নজর আমাতেই আবদ্ধ এখনো।’
লুবনা কিড়মিড়িয়ে বলল,
‘ আমাদের বিয়ে হচ্ছিলো।’
কপাল কুঁচকে নিলো প্রিয়। খানিক অবাক হলেও চোখেমুখে ফুটে উঠতে দিলো না তা। আগের মত স্পষ্ট কন্ঠে বলল,
‘ হয়নি তো! আমার জন্য তোমাকে রিজেক্ট করেছে। ভীষণ বেদনা দায়ক তাইনা?’
‘ এতো অ*হংকার! কি আছে তোমার?’
‘ কেন করবো না অহংকার? আমার জন্য সে তোমাকে রিজেক্ট করেছে এই কারণটা কি যথেষ্ট না!’
‘ রূপের অহংকার করছ? চোখেমুখে এসিড পড়লে এই রূপ থাকবে তো?’
লুবনার ঠান্ডা হু*মকিতে এক চিলতে হাসল প্রিয়। হাসি থামিয়ে গম্ভীর হয়ে বলল,
‘ শতাব্দের কাছে আমি ভীষণ দামী। ভীষণ! আমার দিক হাত বাড়ালে তুমি আস্ত থাকবে তো?’
লুবনা দমে গেল। ফুসফুস রাগী শ্বাস ফেলল। কানে ইয়ারফোন গুজলো প্রিয়। লুবনার দিকে তীর্যক দৃষ্টিতে তাকিয়ে চমৎকার হেসে ভ্রু নাচিয়ে ডার্ক হর্স গানের সুর টেনে বলল,
‘ ডোন্ট মেক মি ইউ’র এনিমি।’
লুবনা আরো ক্ষেপে গেল। প্রিয়’র দিক ঝুকে এলো। কালসিটে দাঁত বের করে কিড়মিড়িয়ে বলল,
‘ বিচ’
বলেই হনহন করে বেরিয়ে গেল।

লুবনা যেতেই প্রিয় ফোন বের করে কাউকে টেক্সট করল,
‘ আমরা যা খুঁজছিলাম আই থিংক পেয়ে গেছি। শোয়েব হক আর ছবি বেগমের দুর্বলতা।’
সাথে সাথেই অপর পাশ হতে উত্তর এলো,
‘ কি?’
‘ লুবনা হক।’
‘ লুবনা?’
‘ হ্যাঁ। আমাদের গন্তব্যে লুবনা নিয়ে যাবে।’
‘ বি কেয়ারফুল। টেক কেয়ার।’
মুচকি হাসলো প্রিয়। সব টেক্সট ডিলিট করে দিলো।

বিকালের শেষ প্রহর। চারদিকে ঝিমিয়ে থাকা আলো। প্রকৃতিতে মৃদু হিম হাওয়া বইছে। সবাই ঘুরতে বেরিয়েছে। বেড়াতে বের হবার বুদ্ধি মূলত প্রভা এঁটেছে। গ্রাম ঘুরে দেখবে বলে। সমুদ্রকে ছলছুতা দিয়ে রাজি করিয়েছে। দুপুরের পরপর সমুদ্র সবাইকে নিয়ে বেরিয়েছে। পশ্চিমের বড় পুকুর পাড়ের ছাউনির নিচে বসে আছে প্রিয়। বাকি সবাই ছবি তুলতে, ঘুরে দেখতে ব্যস্ত। পুকুরটা বোধহয় নতুন খোড়া হয়েছে। পাড়ে বেশ সুন্দর ছোট ছোট ছনের ছাউনি ঘর তোলা আছে। বসার জন্য সিমেন্টের চেয়ার টেবিল বানানো। বিকালে চায়ের আড্ডার জন্য জায়গাটা মন্দ নয়। বাঁধানো পুকুর পাড়ে রঙিন নকশা গুলো নজর কাড়ছে বেশ। পানির কলকল আওয়াজ প্রিয়কে টানছে খুব। উঠে দাঁড়ালো সে। পা বাড়াল সেদিক। কয়েক সিড়ি ডাঙ্গাতেই কেউ বলল,
‘ শেওলা জমেছে, সিড়ি পিচ্ছিল। সামনে পা বাড়িও না।’
পেছন ফিরে তাকালো প্রিয়। শতাব্দ এসেছে। গায়ে লেদার জ্যাকেট। পায়ে ক্যাডস। পকেটে হাত ঢুকিয়ে এদিকটাতেই তাকিয়ে। সাথে আরো দুজন লোক। ভ্রু কুঁচকে নিলো প্রিয়। শতাব্দের কথা উপেক্ষা করে সামনের দিক পা বাড়াল। দুইধাপ নামতেই পা পিছলে পড়লো। ছুটে এলো শতাব্দ। প্রিয়’কে টেনে তুলল। ছাউনি নিয়ে চেয়ারে বসালো। শাড়িতে কাঁদা মাটি লেগে একাকার। সিড়ির ধাপে ব্যথা পেয়ে হাত চিঁ*ড়ে র*ক্ত ঝরছে। ক্ষেপে গেল শতাব্দ। রাগী গর্জন করে বলল,
‘ সবসময় সবকিছু নিয়ে ত্যাড়ামো করাটা কি জরুরি?’
উত্তর দিলো না প্রিয়। রাশভারি মুখ করে বসে আছে সে। গাড়ি থেকে ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ আনিয়ে লাগিয়ে দিলো প্রিয়’র হাতে। গম্ভীর কন্ঠে আওড়াল,
‘ খুব ব্যথা করছে?’
দুদিকে মাথা নাড়াল প্রিয়। শতাব্দ আবার বলল,
‘ বাড়ি ফিরব। চলো।’
নাচক করল প্রিয়। কপাল কুঁচকে রাশভারি গম্ভীর মুখ করে উত্তর দিলো,
‘ উহু, সামান্য লেগেছে। সবার সাথে যাবো।’
ফস করে শ্বাস ফেলল। শতাব্দ বেশ ভালো করে জানে প্রিয়’কে যা বলবে তার উল্টোটা করবে সে। কিছু বললে শুনবেনা। বরং জেদ ধরে কাঁদা মাটি নিয়ে এখানে বসে দেরি করবে আরো। পানি টিস্যু নিয়ে তার দিক এগিয়ে যেতেই পিছিয়ে গেল প্রিয়। হাত পা গুটিয়ে নিলো। প্রিয়’র আরোধ শুনল না শতাব্দ। এক প্রকার টেনে হাত বের করে। পরিষ্কার করে দিতে লাগল। মুখ ভার করে অন্যদিকে ফিরিয়ে নিলো প্রিয়। শতাব্দ বলল,
‘ পুকুরে মানুষ খে*কো আফ্রিকান মাগুর আছে। যদি পা পিছলে পড়তে কি অবস্থা হতো! ভেবেছ?’
প্রিয় দমলো না। নাক উঁচু করে জবাব দিলো,
‘ সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড লাগানো উচিত ছিল।’
‘ লাগনো আছে। তোমার হয়তো চোখে পড়েনি।’
আশেপাশে তাকাল প্রিয়। পুকুরের সামনে বড় বড় অক্ষরে লিখা ‘পুকুর হতে সাবধান’।
শতাব্দের সামনে নত হতে প্রিয় নারাজ। গলা উঁচু করে বলল,
‘ আফ্রিকান মাগুর চাষ নি*ষিদ্ধ। এটা ক্রা*ইম।’
‘ আমার শখ আমি করেছি। কোন সমস্যা? বাজারে বিক্রি না করলেই হয়।’
‘ তাহলে এগুলো দিয়ে কি করেন?’ প্রিয়’র প্রশ্নবিদ্ধ আওয়াজ।
‘ মানুষ হ*ত্যা করি।’ শতাব্দের সোজাসাপ্টা উত্তর।
‘ আচ্ছা? তাই! এখন অবধি কতজন মা*রলেন?’
‘ একজন। নতুন তো!’
তাচ্ছিল্য হাসলো প্রিয়। বলল,
‘ কেন মারলেন! আপনাদের কথা মত চলেনি, তাই?’
শতাব্দের স্পষ্ট আওয়াজ,
‘ উহু, এক রাক্ষস প্রেমনগরের রাজকন্যার দিক হাত বাড়িয়েছিল। রাজকন্যার মায়ের কাছে কুপ্রস্তাব দিয়েছিল। সারা রাজ্যের মানুষের সম্মুখে তাদের অপদস্ত করেছে। পুরো অঞ্চল অপকর্মে জড়িয়ে নিয়েছিল। তাই তাকে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়াটা জরুরী ছিল।’
শতাব্দের কথার আগাগোড়া না বুঝলেও, সবটা যে বানানো বেশ ভালো করেই বুঝল। তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
‘ বাহ! বেশ দারুণ গল্প তো। ডাক্তারী, রাজনীতির পাশাপাশি এত ভালো গল্পকার আপনি জানতাম না তো।’
উত্তর এলো না কোন। পানির দিক থেকে চোখ সরিয়ে পেছনে তাকাতেই থমকে গেল প্রিয়। হিম শীতল অদৃশ্য এক অনুভূতিতে জমে গেল। শতাব্দের চাহনিতে কেমন জানো অদ্ভুত এক হিং*স্রতা। কোনো অজানা নেশা। দৃষ্টিতে কিঞ্চিত কোন পরিবর্তন নেই। দৃঢ়ভাবে প্রিয়’র দিক চেয়ে এখনো।
তবে, কি সত্যিই এমন কিছু ঘটেছে! সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকাল প্রিয়। বলল,
‘ সত্যি কি কারো খু*ন করেছেন?’
শতাব্দ তখনো আগের মত দৃঢ়ভাবে চেয়ে। প্রিয় ঘামছে। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে সে। চোখেমুখে স্পষ্ট ভয়ের ছাপ। খেয়াল করল শতাব্দ। ফিক করে হাসল। চোখ মুখ স্বাভাবিক করার চেষ্টা করল। বলল,
‘ উহু, মজা করছিলাম।’
বুক চিড়ে স্বস্তির শ্বাস ফেলল প্রিয়। বিরক্তির চাহনি নিক্ষেপ করে উঠে দাঁড়াল। হন হন করে গাড়ির দিক চলে গেল।

প্রভা দূর থেকে পুরো ঘটনা ঠাহর করল। প্রিয় চলে যেতেই প্রভা শতাব্দের মুখোমুখি বসল। তখনো প্রিয়’র যাওয়ার দিকে তাকিয়ে শতাব্দ। প্রভার আওয়াজে হুঁশ ফিরল।
প্রভা বলল,
‘ কিছু মনে করবেন না ভাইয়া। অনেক বছরের রাগ-জেদ চেপে রাখতে রাখতে আপার এমন রুখা স্বভাব।’
তাচ্ছিল্য হাসল শতাব্দ। ভারী কন্ঠে বলল,
‘ অধিকার আছে তার!’
প্রিয় গাড়িতে চড়ে বসেছে ততক্ষণে। রাগ তখনো তার নাকের আগায়। সেদিকে তাকিয়ে মলিন হাসল শতাব্দ। উদাসীন কন্ঠে বলল,
‘ কাঙ্ক্ষিত মানুষটা্র চোখের সামনে থেকেও তাকে না ছুতে পারার যন্ত্রণা কতটা কঠিন হয়! তা বেশ ভালো করে জানে তোমার আপা। তাইতো ক্ষণে ক্ষণে পো*ড়াচ্ছে আমায়।’
খানিক নীরবতা। নীরবতা ভেঙ্গে প্রভা বলল,
‘ অনেক কিছু সহ্য করেছে আপা। অনেক রাত নির্ঘুমে ফুঁপিয়ে কেঁদে কাটিয়েছে। হাউমাউ চিৎকার করে বারবার একটা কথাই জিজ্ঞেস করতো, ‘যারা ভালোবাসার বদলে ভালোবাসা পায় তারা দেখতে কেমন হয়? তাদের ভাগ্য কি সোনার কলমে লেখা হয়?’
শতাব্দের বুক কেঁপে উঠল। রক্তিম চোখের আ*হত চাহনি।
অন্ধকার নেমে আসছে। সমুদ্রের হাঁক ডাকে উঠে গেল প্রভা। প্রিয়’র গম্ভীর রুখা মুখখানায় তখনো চেয়ে আছে শতাব্দ। বিরবির উদাসীন আওয়াজে বলল,
‘ আমি ছেড়ে যাইনি প্রিয়। দৃষ্টির আড়ালে থেকেও সর্বদা তোমাতে নজর ছিল।’

চলবে……..

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাই সবার মতামত জানাবেন।

টাইপোগ্রাফি : মুগ্ধ তা আপু🌺❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here