কলেজে ঢুকতেই কারও সাথে সজোরে ধাক্কা খেলাম।তাল সামলাতে না পেরে নিচে পড়ে যাচ্ছিলাম তখনই কেউ আমাকে কমড় পেঁচিয়ে ধরল।আবার কিছু বুঝে উঠার আগেই আমাকে ছেড়ে দিল।ধপাসস!করে নিচে পড়ে গেলাম।
এমনিতেই হাতের ব্যাথা তার উপর এখন আবার কমড় ভেঙে গেছে মনে হয়।তখনই সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পরল।সবার হাসি শুনে নিজের রাগ কে কনট্রোল করতে পারলাম না।উপরের দিকে না তাকিয়েই কমড়ে হাত দিয়েই বলে উঠলাম কোন কানারে চোখে দেখতে পাস না।আমাকে এভাবে ধাক্কা দিলি চোখে যখন দেখিস না তাহলে কলেজে আসিস কেন?শালা কচ্ছপ, সজারু,।
ছেলে:এই যে মিস আপনি নিজে আন্ধা হয়ে আমাকে বকছেন।নিজে আগে চোখের ডাক্তার দেখান। পেত্নী কোথাকার
কন্ঠটা খুব চেনা চেনা লাগছে তাই উপরের দিকে তাকালাম।(মনে মনে বললাম আরে এ তো রাস্তার সেই বজ্জাতটা। এই বান্দরটা এখানে কি করছে।)
কিছুক্ষণ আগে….
যখন কলেজে আসার জন্য বাসা থেকে রওয়ানা দিয়েছি।তিশাকে ফোন দিলাম কলটা রিং হয়ে কেটে গেল।এই মেয়েটাকে প্রয়োজনের সময় কখনও ফোনে পাওয়া যায় না।হাটতে হাটতে এসব ভাবছি।হঠাৎ একটা গাড়ি এসে পেছন থেকে আমাকে ধাক্কা দিল তখনই নিচে পড়ে গেলাম।হাত কিছুটা ছিলে গেছে।হালকা রক্ত বের হচ্ছে।রক্ত দেখে মাথাটা গরম হয়ে গেল।ছোটবেলা থেকেই আমি খুব চঞ্চল আর প্রতিবাদী। আমি মাটিতে পড়ে যাওয়ার পর একজন গাড়ি থেকে নেমে এল।এসে আমাকে বলল আপনার লাগে নি তো।কথাটা শুনেই মাথায় আগুন ধরে গেল।সামনের লোকটাকে উদ্দেশ্য করে বললাম_আল্লাহ কি আপনাকে চক্ষু দান করেন নি নাকি দিয়েছেন সেটা বাসার আলমারিতে তুলে রেখে এসেছেন।এভাবে একটা নিরীহ পিচ্চি মেয়েকে ধাক্কা দিলেন।উহহ কি ব্যাথা করছে।(ছলছল চোখে)এবার লোকটার দিকে তাকালাম দেখতে হ্যান্ডসাম,ধবধবে সাদা,কালো শার্ট,চোখের সানগ্লাসটাও কালো হাত ফোল্ড করা চুলগুলো স্পাইক করা হাইট প্রায় ৬ ফুট হবে।লুকিং সো কিউট।যে কোনো মেয়েই প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে যাবে।(মনে মনে না রোজা তুই এই ছেলের উপর ক্রাশ খেলে চলবে না।)লোকটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম আমার কথাগুলো শুনে মুচকি হাসছে।এতে আমি আরো ক্ষেপে গেলাম।আবার বলতে লাগলাম আরে আজব তো, আমার এ অবস্থা আর আপনি হাসছেন আপনি কি মানুষ,মনুষত্ববোধ নেই,কুওা,বিলাই,পেত্নীর জামাই,গিরগিটি।এবার লোকটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম। লোকটা বেশ রেগে গেছে।চোখ দুটো লাল হয়ে আছে।
এবার লোকটা আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল:এই মেয়ে(বেশ ধমক দিয়ে)তোমার যখন এতই মরার শখ হয়েছে তাহলে পৃথিবীতে কি আর গাড়ি ছিল না যে আমার গাড়ির নিচেই পড়তে হলো।নিজে আমার গাড়ির নিচে পড়ে আবার আমাকে মেজাজ দোখানো হচ্ছে।কি খুকি বয়ফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকাপ হয়েছে বুঝি তাই মরার খুব ইচ্ছা হইছে।
এবার আমি বলতে লাগলাম:আরে কিসব আজে বসজে কথা বলছেন।মরতে যাব কেন। নিজে ধাক্কা দিয়ে আবার উল্টে আমাকে কথা শোনাচ্ছেন।কি সুন্দরি মেয়ে দেখলেই কথা বলতে ইচ্ছে করে তাই এসব কথা বলছেন।
এবার সে আমার পা হতে মাথা পর্যন্ত দেখল। দেখেই বলল কিহ তুমি সুন্দরী বলেই হেসে উঠলো।(আমি এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছি কি সুন্দর হাসি ছেলেরাও এত সুন্দর হাসতে পারে)হাসি থামিয়ে আবার উনি বলে উঠলেন শোন তুমি যদি সুন্দরী হও তাহলে পেচাঁও নিজেদের সুন্দর বলে দাবি করবে।ইউ নো তোমাকে দেখে আমার পেত্নী ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছে না।আর এই রিহান চৌধুরী কোনো মেয়ের পেছনে হাটে না।মেয়েরাই আমার পেছনে লাইন দিয়ে থাকে।হাহ(বেশ ভাব নিয়ে)
(মনে মনে বললাম ব্যাটা দেখতে খারাপ না বাট রোজা এখন এটা প্রকাশ করা যাবে না।)তার দিকে তাকিয়ে হো হো করে হেসে দিলাম।আর বললাম হ্যা আপনি সত্যিই হ্যান্ডসাম ওই হিরো আলমের মতো।হাসতে হাসতে বললাম। এবার সে বেশ রেগে কিছু বলার আগেই সেখান থেকে কলেজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম।হাতটা প্রচন্ড জ্বলছে আর মনে মনে তার চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করতে করতে কলেজ এসে গেলাম ।আর এসেই আবার রাক্ষস টা আমার সামনে…..
বতর্মানে…..
এবার বললাম আরে আপনি এখানে।আমাকে ফলো করতে করতে আমার কলেজ পর্যন্ত চলে এসেছেন।
ছেলে:আমি করবো তোমাকে ফলো।নিজেকে কি মনে করো বিশ্বসুন্দরী। আরে নাহ তুমি ওরকম কিছু না একদম পেত্নীর মতো দেখতে।কাকও তোমাকে দেখলে দৌড়ে পালাবে।বলেই হো হো করে হাসতে লাগলো সাথে আরে কয়েকটা ছেলে আর একটা মেয়ে।
আর সহ্য হচ্ছে না এবার রেগে কিছু বলতে যাব তার আগেই তিশা এসে আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল।আরে রিহান ভাইয়া আপনি কেমন আছেন?(আমি আস্তে করে আরে তুই এই খচ্ছর টা কে চিনিস।)
তিশা:হুম উনি হলেন রুহান চৌধুরী। কলেজের সব মেয়েদের ক্রাশ।কিন্তু কাউকে পাওা দেয় না।
হুহ এ হবে সবার ক্রাশ শালা উল্লুক।(মনে মনে সত্যি ছেলেটাকে দেখতে বেশ লাগে।ক্রাশ খাওয়ার মতোই কিন্তু ব্যাটা এক নাম্বারের খাডাশ)
রিহান:আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। তা এই পেত্নীটা কে?আর আমাদের কলেজে কেন?
তিশা:ভাইয়া ও আমার বেস্টু।লাবীবা ইসলাম রোজা।আমরা রোজ বলেই ডাকি। আমাদের কলেজে এডমিশন নিয়েছে।অনার্স ফার্স্ট ইয়ার।
রিহান:ওহহ!রেড রোজ,না ব্ল্যাক রোজ, ব্ল্যাক রোজ হলেই ভালো হয় ভ্রুকুচকিয়ে।বলেই সবাই হা হা করতে লাগলো।(সত্যিই তুমি রেড রোজ,আমার রেড রোজ)।
উনার কথা শুনে মাথায় যেন আগুন ধরে গেল তাই……
.
.
চলবে………..
.
গল্প :- বড্ড ভালোবাসি
পর্ব :- ০১
লেখা :- Labiba Islam Roja
.