#বালির_সংসার(১০)
.
.
দেখতে দেখতে কেটে যায় আরো তিনটে বছর।
অর্থির প্রশ্নের উত্তর আজো আদিত্য দেয়নি। একবারে দিবে। ভালোবাসি বলেও নি। অর্থি এখন আর জিজ্ঞেস করে না। সংসারের মাঝেই ছোট্ট একটা সংসার সাজিয়েছে অর্থি।সব আদিত্য কে নিয়েই। ভার্সিটি আদিত্য নিয়ে যায়। নিয়ে আসে। ওদের মেলামেশা তে দুই পরিবার দ্বিমত করেনি। দুই বন্ধু সম্পর্কে জড়াবে এতে সবাই খুশি কিন্তু এখনো কোন কথা হয়নি। সবাই বুঝে তাইতো এত দিনেও কোন ঝামেলা হয়নি। আদিত্য অর্থি কে নিজের মতো করে গড়ে নিয়েছে। খুব ভালোবাসে কিন্তু কখনো বলেনা। ভালোবাসি কথাটা বলতেই হবে এমন তো নয়।
আগামীকাল রাতের ফ্লাইটে আদিত্য ২ বছরের জন্য অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছে।
এই বিষয়ে আগ্রহ বেশি ছিলো অর্থির কিন্তু এখন সব থেকে চুপচাপ সে নিজেই৷
মাঝের তিনটি বছর অনেক কিছু হয়েছে কিন্তু পালটায় নি আদিত্য।
অর্থির নিস্পাপ ঘুমন্ত চেহারার কাছে বার বার পরাজিত হয়েছে ভিতরের কামুক পুরুষ টা।
বারান্দায় রকিং চেয়ারে বসে সিগারেট খাচ্ছিলো।
আদিত্য দেখতে আগের থেকে আরো বেশি সুঠাম সুন্দর দেখতে।
অর্থি কম যায় না। একটু লম্বা হয়েছে। কিন্তু বুদ্ধি আগের মতই।
আদিত্যর পিচ্চিই আছে।
এলোমেলো চুলে এসে আদিত্যর সামনে দাঁড়ায়।
বুঝাই যাচ্ছে কান্না করেছে।
কিছু না বলেই চুপচাপ আদিত্য কোমর জড়িয়ে কোলে উঠিয়ে নেয়।
অর্থির পুরোভর আদিত্য উপর। চুপচাপ আছে।
– সিগারেট টা ফেলো।
.
আদিত্য বাধ্য ছেলের মতো তাই করে। আদিত্যর বুকে মাথা রেখে
অর্থি বা হাতের বড় বড় নখ দিয়ে আদিত্যর হাতে কিছু একটা লিখছে।
-অর্থি?
– হুম!
– আজ রাত পরেই চলে যাবো।
অর্থি এবার শক্ত করে ওর হাত ধরে।
– আজ রাতে যদি আমি একটু স্বার্থপর হই মেনে নিবি?
অর্থি কিছু বলেনা। আদিত্য ওকে উঠিয়ে দিয়ে হাতে শপিং ব্যাগ দেয়।
অর্থি দেখে শাড়ি।সেদিনের পর থেকে আর শাড়ি পড়েনি।আদিত্যর আবদার দেখে সেইদিনের কথা মনে পড়ে গেলো। কি বাচ্চামি টাই না করেছিলো।
– আজকেও কি আমার সামনেই চেঞ্জ করবি?
– সেদিন করেছিলাম তুমি কিছু দেখেছিলে?
– আমার চোখ বন্ধ ছিলো।
– আয়নাতে আমি সব দেখেছি। কিন্তু সেদিন শুধু শাড়ি পাল্টেছি। আজ পারবো না।
.
কিছুক্ষণ পর অর্থি এলো। আদিত্য আবার সিগারেট হাতে নিয়েছে। অর্থি ছাড়া থাকতে কষ্ট হয়।
– আবার?
– সরি। খুব সুন্দর লাগছে।
– পেত্নীরা সুন্দর হয় না।
– কিছু চাইলে দিবি?
– কি?
– তোর ওই ঠোঁটের অধিকার।
অর্থি কিছু বলেনা। অবাক বেশি হয়। আদিত্যদা কখনো এমন কথা বলেনি৷ কখনো না। ঘুমন্ত অর্থি নিজেকে কতবার আদিত্যর বুকে পেয়েছে। হিসেব নেই৷
কিন্তু আজ কি হলো?
.
.আদিত্য কিছু না বলেই কোমর জড়িয়ে নেয়।
অর্থি আদিত্যর পায়ের উপর দাড়াতেই আদিত্য দেরি করেনা। অর্থির ঠোঁটে যাদু নয় নেশা আছে। সিগারেটের থেকেও অধিক।
কিছুক্ষণ পর আদিত্য ছেড়ে দেয়।
আদিত্যর বুকের উপর ঘুমন্ত অর্থি কে দেখে পার হয়েছিলো সারা রাত।
.
.
.
অর্থির ঘুম ভেঙে গেলে দেখে আদিত্য হাত ধরে বসে আছে।
ঘুমন্ত চেহারায় বারবার অর্থি প্রেমে পড়ে।
কিন্তু এখন আর এসব মানায় না।
আদিত্যদা! কেনো তুমি আমাকে সেদিন ফিরিয়ে দিয়েছিলে? কেনো সেদিন আমার কথা বিশ্বাস করোনি!
.
বাচ্চা টা কেদে উঠে। আদিত্যর ঘুম ভাংগে। এতক্ষণ তাহলে সে অতীত হাতড়ে বেড়াচ্ছিলো যা শুধুই মরীচিকা।
.
.
সারা রাতেও রুপ নিশি কে বুঝাতে পারেনি।
কিন্তু এখন আর হয় না। অর্থি যে তার দায়িত্ব। আজ রুপের জন্য মেয়েটার এই অবস্থা।
ভালোবাসা ত্যাগ করা যায় কিন্তু দায়িত্ব যায় না।
পুরুষ মানুষ পৃথিবীতে এমন এক প্রাণী যারা চাইলেও মন খুলে কাদতে পারে না।
নিশি তার প্রথম ভালোবাসা। সব ঠিকঠাক চললে আজ অর্থির জায়গা তে নিশি থাকতো।
কিন্তু কেনো এমন হলো? নিশির প্রশ্নের উত্তর রুপের কাছে নেই৷
বিধাতা না নিয়তি কে খেলছে এই জীবন গুলো নিয়ে?
.
ফোনের রিংটোন বাজছে। রুপ ফোন হাতে নিয়ে দেখে আদিত্যর কল।
– হ্যালো! ডক্টর। অর্থি ঠিক আছে?
– জ্বী। কিন্তু আপনি পারলে আসুন। কিছু কথা ছিলো।
– এনিথিং সিরিয়াস!
– বলতে পারেন।
– প্লিজ বলুন।
– সামনাসামনি বলবো।
– যতটা দ্রুত সম্ভব আমি আসছি। প্লিজ অর্থি কে দেখে রাখবেন।
.
আদিত্য কল কেটে কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো। এই ১০ দিন সে বাসার দিকে যায়নি। অর্থিকে নিয়েই বাসায় ফিরছে।
.
অর্থি কে বাসায় নিয়ে আসা হয়।
দোতলায় অর্থির রুমে যেতে হলে সিড়ি বেয়ে উঠতে হবে। তাই আদিত্য চুপচাপ অর্থি কে উঠিয়ে নেয়। আজো অর্থি আদিত্যর স্পর্শে কেপে উঠে। ইচ্ছে করছিলো চিৎকার করে কেদে আদিত্য কে জিজ্ঞেস করতে
– কেনো তার সাথে এমন করলো? এই সে তার পিচ্চি কে চিনেছিলো?
.
কি রে অর্থি? আদিত্যদার কোলে উঠার অভ্যেস টা এখনো গেলো না? রুপ ভাইয়া কে বলতি কোলে নিতে। এবার তো আমার স্বামীকে ছাড়। এই সিড়ি বেয়ে উঠতে মরে যাবি না।
.
.
চলবে( টুইস্ট 😉)
.
.
Sabiya moon