#বালির_সংসার(১৫)
.
নিশি কে দেখে অর্থি বেশ খানিকটা চমকে যায়। চিৎকার করে বলে উঠে
– এই মেয়ে, এই তুমি এখানে? এভাবে কি করছো?
.
অর্থির গলার স্বর শুনে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে রুপ।
নিশিও অবাক।
হয়তো কেউ কাউকে এভাবে আশা করেনি।
অর্থির হাত পা কাপছে। সব কিছু তার কাছে জলের মতো পরিস্কার।
– কতদিন যাবত চলছে এসব? কি হলো বলো? আর তোমার লজ্জা করে না এসব করতে.?
.
রুপের দিকে ঘুরে বলে
– তোমার শরীরে এত ঝাজ? আমি কি মরে গেছিলাম? এই তোমার ব্যস্ততা?
.
কিছুটা তর্কবির্তক হয় অর্থি নিশির সাথে।
অর্থির মেজাজ খুব খারাপ হয়ে যায়। রুপ চুপচাপ। মাথাটা ঝিমঝিম করছে।
অর্থি- অন্যের স্বামীর দিকে নজর দিতে তোমার বুক কাপলো না?
নিশি- অর্থি, প্লিজ বি ইন ইউর লিমিটস! ভুলে যেও না তুমি শুধুই রুপের আশ্রিতা
– আমি রুপের আশ্রিতা নই! স্ত্রী! ইউ গট দ্যাট? স্ত্রী থাকতে যে নারী অন্যের স্বামীর সাথে থাকে তাকে রক্ষীতা বলে৷ আর তুমি তাই।
.
.
রুপ কথাটা শেষ হওয়ার আগেই অর্থিকে সজোরে থাপ্পড় মারে। সামলাতে না পেরে অর্থি নিচে বসে পড়ে।
রুপ বুঝে না। কার কথায় ওর রাগ হচ্ছে। নিশি অর্থিকে আশ্রিতা বলেছে এতে না কি অর্থি নিশি কে রক্ষীতা বলেছে এতে।
রুপের প্রচন্ড রাগ হয়৷ অর্থি কে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
নিশি টাওয়াল ছেড়ে ততক্ষণে কাপড় পড়ে বেরিয়ে এসে বলে
– দেখলে তো কার স্থান কোথায়? আশ্রিতা আশ্রিতাই হয় স্ত্রী হতে পারে না।
বলেই নিশি চলে যায়।
অর্থির কষ্ট হচ্ছে খুব। ভেসে উঠছে তিন বছর আগের সেই স্মৃতি গুলো।
.
.
আদিত্য চলে যাওয়ার পর অর্থির একা একা লাগতো। সব জায়গায় আদিত্যর স্পর্শ পেতো।
ছেলেটা সব কিছু গুছিয়ে দিয়ে গেছে। নিয়ম করে বাসার সামনে ফুসকাওয়ালা মামা আসে। ফুলওয়ালী মেয়েটা ফুল দেয়। আরো কত কি।
বেশ ভালোই চলছিলো দিন৷ সারাদিন ক্লাস, এসাইনমেন্ট রাতে আদিত্যর সাথে ফোনে কথা, কথা শেষে ওর বিছানায় গিয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়া।
.
বাসায় ফিরছিলো অর্থি। তখন জানতে পারে ওদের সিনিয়র রুপ ভাইয়ার মা,বাবা দুই জনেই এক্সিডেন্ট করে মারা গেছে। মন খারাপ লাগে ভাইয়ার জন্য।
বাসায় ফিরে আসিতে নিলেই সব বান্ধবীরা বলে যাবে। ও রাজি হয় না। পরে সবাই বলে ওদের বাসায় যাওয়ার সময় গলির প্রথম বাসাটাই রুপের বাসা।
.
অর্থি ভাবে একই রাস্তায় তাহলে একটু যাওয়াই যায়।
বাসায় গিয়ে দেখে লাশ দাফন হয়ে গেছে। রুপ চুপচাপ বসে আছে। বাসায় আর কেউ নেই। ওরা কিছুক্ষণ বসে চলে আসে। কিছুদূর গিয়ে দেখে অর্থি এসাইনমেন্ট ভুলে রেখে এসেছে।
নিতে গিয়ে দেখে রুপ বসেই আছে। কাধে স্পর্শ করতেই রুপ জড়িয়ে ধরে অর্থির বুকে মাথা রেখে প্রচন্ড কান্না করে।
এমন পরিস্থিতিতে কি করা উচিৎ অর্থি জানে না৷ আদিত্যদা জানলে আমাকে মেরে ফেলবে কিন্তু রুপ যেনো ভরসার জায়গা খুজে পেয়েছিলো।
.
সেদিনের মতো অর্থি চলে আসে। ভয়ে ভয়ে সব টা আদিত্য কে বললে আদিত্য কিছু বলে না।
.
.
তিন দিন পরের কথা। অর্থি আদিত্যর রুমে বসে ওদের কিছু ছবি দেখছিলো। হঠাৎ কল আসে। নাম্বার দেখে মনে হয় কানাডার কোড।
রিসিভ করতেই ভেসে উঠে নিশির গলা।
নিশি অর্থির সিনিয়র।
বার বার অনুরোধ করতে থাকে সে যেনো একবার গিয়ে রুপ কে দেখে আসে।
নিশি তখন কেবল কয়েকদিন হলো কানাডা স্কলারশিপ নিয়ে গেছে।
তখন রাত বারোটা। অর্থি রাজি হয় না। কিন্তু নিশির কথাও ফেলে না।
আদিত্যর শাল টা গায়ে জড়িয়ে বেরিয়ে পড়েছিলো।
.
ঈশ সেরাতে যদি না বের হতো! তাহলে হয়তো এমন হতো না।
.
রুপের বাসায় গিয়ে দেখে রুপের খুব জ্বর। যখন আদিত্য কে কল দিবে তখন খেয়াল হলো ফোন আদিত্যর রুমেই রেখে এসেছে৷
তাই নিজে যা পারলো করলো। রুপের জ্বর কিছুটা কমে এলো। এদিকে সকালের সূর্য উঠে গেছে।
অর্থি চলে যাবে এমন সময় হলো আরেক বিপত্তি। রুপ বমি করে সব নষ্ট করে দিলো।
রুপ কে পরিস্কার করে নিজে রুপের মায়ের এক শাড়ি পড়ে রুপের ফোন হাতে নিয়ে বাহিরে এলো।
কিছুতেই কারো নাম্বার মনে করতে পারছিলো না। শুধু আদিত্যর নাম্বার মনে ছিলো। বাসাও কাছে কিন্তু রুপ কে রেখেও যেতে পারছিলো না।
আদিত্যর নাম্বারে কল দিতেই রুশা ফোন ধরলো।
সবটা বলে অর্থি জোড়ে শ্বাস নিলো। যাক বাবা কিছুক্ষণ পর আসছে তাহলে।
সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে রাত হলো। এলো না।
ডক্টর বলে গেলো রাতে জ্বর বাড়তে পারে। সাথে কাউকে থাকতে।
রুপের আত্নীয় মানুষ কাউকে অর্থি চিনে না। তাই বাধ্য হলো থাকতে।
পরদিন রুপের জ্বর কমতেই অর্থি বাসায় ফিরে এলো।
অর্থির বাবা মা কি মনে করে যে তাকে ঘরেই ঢুকতে দিলো না কে জানে? ওর কথা শুনলোই না। দৌড়ে গিয়ে আদিত্য কে কল দিতেই আদিত্য তাকে অনেক কথাই বলেছিলো – শেষ কথাটা ছিলো
– আর যাই হোক! বিয়ে নামক পবিত্র সম্পর্কে কোন অপবিত্র মেয়েকে মেনে নেওয়া যায় না।
.
সেদিন রুশাই ছিলো শেষ ভরসা। কিন্তু ও বলেনি কিছুই। এককান দুই কান করে কথাটা ছড়িয়ে যায়।
রুপ শুনে এগিয়ে যায় সব টা বলতে যে তাদের ভুল হচ্ছে।
কিন্তু গিয়ে দেখে অর্থির মা ওর হাত ধরে টেনে বাহির করে দিচ্ছে আর বলছে
– তুই যেমন আমার বুক খালি করলি আল্লাহ তোর সন্তান তোর থেকে কেড়ে নিবো।
.
.
রুপের প্রচন্ড রাগ হয়৷ অর্থির হাত ধরে টেনে নিয়ে আসে৷
তিনদিন অর্থি রুম থেকে বের হয়নি। রুপ জোর করেনি। সব টা তার জন্যই তো হলো।
আদিত্য কে অনেক কল করে লাভ হয়না।
রুপ নিজ থেকেই অর্থির দায়িত্ব নেয়। কারণ ততদিনে কথাটা অন্য দিকে মোড় নিয়ে নেয়।
.
.
ছয়মাস পর অর্থি রুপের বিয়ে হয়। ভালোই চলছিলো। রুপ অধিকার চায়নি না অর্থি। কিন্তু একটা সময় মনে হয় যে দুজন দুজনকে পরিপূর্ণ করার সামর্থ্য রাখে। ঠিক তখন এগিয়ে যায় সম্পর্ক।
একদিন অর্থি নিজেকে আশ্রিতা বলেছিলো বলে রুপ না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলো!
আর আজ?
অর্থির বেশ জানতে ইচ্ছে করে রুশা কেনো এমন করেছিলো। আর মা বাবা না হয় বাদ আদিত্যদা যদি কথাগুলো শুনতো …..
.
চোখের সামনে সব কিছু ঝাপসা লাগে। গোংরানির আওয়াজ টা ধীরেধীরে কমে যাচ্ছে। অর্থির বড্ড বেশি ইচ্ছে হচ্ছে রুপ কে তার দায়িত্ব থেকে মুক্তি দিতে৷
.
.
চলবে
.
Sabiya moon