বালির সংসার পর্ব ২০

#বালির_সংসার(২০)
.
.
সময় প্রবাহমান। কেটে গেছে দুই মাস।
দুই মাস সময়ের মধ্যে একটা দিন ও রাতে ঘুমের মেডিসিন ছাড়া ঘুমাতে পারেনি অর্থির বাবা।
মাইনর এট্যাক হয়েছে দুইবার। মুঠো ভর্তি মেডিসিন বাঁচিয়ে রেখেছে তাকে।
ছেলে মেয়ে দুটো কই আছে জানে না সে।
বেশি চিন্তা হয় মেয়ের জন্য।
আচ্ছা সত্যি কি মেয়েটা মরে গেছে?
চোখ বন্ধ করলেই ভেসে উঠে সেই রাতের স্মৃতি……
.
.
কিছুক্ষণ পর শুরু হবে আদিত্য রুশার বিয়ে। সামাজিক ভাবে বেশ কয়েকজন মানুষ এসেছে বিয়েতে।
আদিত্য আজ অফ হোয়াইট পাঞ্জাবী পড়েছে আর রুশা অফহোয়াইট লাল পাড়ের শাড়ি। বেশ মানিয়েছে দুজন কে।
সারাদিন আয়ান বাসায় ছিলো না।
বাসায় ঢুকেই চিৎকার শুরু করে।
রেগে অস্থির হয়ে যাচ্ছে সে।
মায়ের কাছে গিয়ে হাতে শক্ত করে ধরে টেনে নিয়ে আসে ড্রয়িং রুমে
– তুমি যদি আমার মা না হতে না? তাহলে আমি ঠাটিয়ে তোমার দুগালে দুটো থাপ্পড় মারতাম। নিজেকে কি মনে করো? দায়িত্ব? দায়িত্ব দেখাচ্ছো রুশার প্রতি? নিজের মেয়েকে ওসব বলতে বাধলো না?
আমার মোনাপাখির যদি কিছু হয় আমি তোমাদের সবাই কে জেলের ভাত খাওয়াবো বলে রাখলাম।
.
শান্তশিষ্ট আয়ানের এই রুপ দেখে সবাই অবাক। আদিত্য থামাতে গেলে আদিত্য কে বলে
– উহু স্পর্শ করবে না। তোমার বিয়েতে ব্যাঘাত ঘটানোর জন্য সরি। বিয়ে করে নাও। আমি একাই যাবো মেয়ে টাকে খুজতে। তুমি বিয়ে করো। আর হুম! শুনো তোমরা! গুড নিউজ আছে।
অর্থি কে খুজে পাচ্ছি না। আমাদের সোকল্ড মা তোমার বিয়েতে ঝামেলা না হয় সেজন্য ওকে চলে যেতে বলেছে আর রুপ কে ডিভোর্স দিয়ে ওর বাসর সাজিয়ে কোথায় গেছে আমি জানি না। আমি ওকে পাচ্ছি না।
আল্লাহর কাছে দোআ করো। ও যেনো মরে যায়। ওর লাশ যেনো না পাই।
আদিত্যর রুশা আছে রুপের নিশি। ওর তো কেউ নেই৷ অলক্ষী কুলক্ষী মরাই ভালো।
.
সেই যে আয়ান চলে গেলো আজ অবধি আসেনি। মেয়েটা ছেলেটাকে আগলে রাখতো কিন্তু ভাই যে বোন কে এভাবে ভালোবাসতে পারে জানা ছিলো না। হুম্ভ রুশা তাদের দায়িত্ব। কোন দিন তফাৎ করেনি ভাতিজি আর মেয়ের মাঝে৷ ভাইটা অকালে মরে গেলো। দায়িত্ব দিয়ে৷ দায়িত্ব কি ফেলে দেওয়া যায়?
.
.
চোখ লেগে এসেছিলো অর্থির বাবার। হঠাৎ কারো চিৎকারে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে ড্রয়িং রুমে ।
আয়ান চুলের মুঠি ধরে টেনে হিচড়ে নামাচ্ছে রুশা কে।
চোখে মুখে রাগ।
কোমর থেকে বেল্ট খুলে ইচ্ছামতো পেটাচ্ছে, রুশা চিৎকার করছে কিন্তু লাভ হয়নি।
.
আয়ান জোড়ে জোড়ে বলতে থাকে
– ঠিক এইভাবে রুপ আমার বোন কে মেরেছিলো। কষ্ট হচ্ছে? আরো হবে। তুই তো সুস্থ, আমার বোন অসুস্থ ছিলো। দেখ কেমন লাগে।
.
আদিত্য বাইরে থেকে এসে থামাতে চাইলে বলে
– আয়ান কি হচ্ছে কি ছাড় ওকে।

– ওহ মিঃ আদিত্য আহমেদ! আপনার স্ত্রী কে মারছি বলে লাগছে? হ্যাঁ লাগবেই তো। যতই হোক পবিত্র মেয়ে বলে কথা৷ কিন্তু কি জানেন? শরীর কখনো পবিত্র হয় না। পবিত্র হয় মন। আজকে ওর জন্য আমার বোনের এই অবস্থা। এতটা হিংসে?
যে আমার বোনের সম্মান নিয়ে এত কিছু৷
.
.
ততক্ষণে পুলিশ এসে গেছে। রায়ান কে ধরে নিয়ে আসা হয়েছে। রায়ানের ল্যাপটপ ঘেটে জানা গেছে রায়ান সব ফেক ভিডিও, ছবি বানিয়েছিলো। কিন্তু রুশার বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ নেই।
তখন আয়ান ল্যাপটপে ফুটেজ চালু করে।
যেখানে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে রুশা কাউকে বলছে যে আদিত্য আয়ান সব জেনে গেছে যে ভিডিও ছবি ফেক ছিলো।
.
রুশা অনেক মাফ চাইলেও এবার আর মাফ করলো না অর্থির বাবা। ভাগ্যিস আয়ান টা ছিলো। না হলে এসব জানতো না৷ কাল রাতে কি মনে করে যেনো ফুটেজ চেক করছিলো আয়ান । তখন এসব চোখে পড়ে। রুশা ভাইয়া কেবল রায়ান কেই বলে। রায়ানের ফ্ল্যাটে যেতেই দেখে নেশায় টাল হয়ে পড়ে আছে। ল্যাপটপ ঘেটে সব পায়।
এতটা রাগ হয়েছিলো না? সব প্রমাণ নিয়ে সকাল অবধি অপেক্ষা শুধু।
.
.
বাবা- মা কে খুজে পেয়েছিস আয়ান?
আয়ান- তাতে তোমাদের কি? আদিত্য, রুশা আছে তো তোমাদের ছেলে মেয়ে। আমরা মরি বাঁচি তোমাদের কি? আর হ্যাঁ মিঃ আদিত্য আহমেদ আপনি যতই চেষ্টা করুন না কেনো আপনার স্ত্রী কে আমি সহজে ছাড়বো না। আপনি দেখেন আমিও দেখে নিবো।
আগে তো মেয়েটাকে খুজে পাই তারপর কাউকে ছাড়বো না। না আপনাকে, না রুপ কে। গুনেগুনে হিসেব নিবো ভালো থাকবেন৷
.
.
আদিত্য – দাড়াও আয়ান। অনেক কথা বললে জানি রাগ করে। যে ছেলে এত কিছু জানে সে কি এটা জানেনা আমি রুশা কে বিয়ে করিনি? জানে কিন্তু রাগের দৃষ্টিতে বলছো কি না।
তুমি যেমন তোমার মোনা পাখি কে খুঁজছো আমিও আমার পিচ্চিকে দিন রাত খুঁজতেছি। আমরা সবাই ওকে ছাড়া অসম্পূর্ণ।
.
আয়ান তাচ্ছিল্যের সাথে হাসে আর বলে
– অসম্পূর্ণ হলে সেদিন ওকে অবিশ্বাস করতে না।
.
.
দেখতে দেখতে কেটে যায় আরো চার মাস।
এখনো কেউ জানে না মেয়েটা কোথায় আছে। কিন্তু মনের কোথাও একটা আশা নিয়ে আছে হয়তো মেয়েটা ফিরে আসবে। কিন্তু যদি মরে যায়? না বিশ্বাসে মেলায় বস্তু তর্কে বহুদূর।
.
.
চলবে
.
.
Sabiya moon

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here