#বালির_সংসার(২৩)
.
.
সকাল হতেই আয়ান এসে হাজির।
হাতে একটা পেপার। কিছু একটা হয়েছে।
চোখেমুখে লেপ্টে আছে হাসি।
আদিত্য কাগজ দেখে আরো খুশি হলো।
অর্থির এডমিশন হয়ে গেছে। সাথে আয়ানের। আদিত্য, আয়ানের সাথে অর্থি পাড়ি দিলো কানাডায়।
.
লেখাপড়া আদিত্য, আয়ান, সংসার নিয়ে বেশ ভালো আছে অর্থি।
মাঝেমধ্যে বাবা মা আসে। প্রথমে তো মায়ের সাথে আয়ান কথাই বলতে দিবে না।।
এখন কেনো মেয়ের প্রতি আহ্লাদ আসছে তার? সবাই বুঝানোর পর সব ঠিকঠাক হয়, মা নিজেও অনুতপ্ত।
রুশার ব্যাপার টা জানার পর অর্থি বেশ রেগে যায়।
এটা আশা করেনি।
কিন্তু আয়ানের সাথে পেরেও উঠেনি।রুশার শাস্তি কমাতে পারেনি।
.
দেখতে দেখতে কেটে গেলো দুই বছর।
অর্থি কে আগের মতো অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। কিন্তু ওই যে দাগ?
অর্থি কে অতীত ভুলতে দেয় না।
আদিত্য অধিকার চায়নি অর্থি ও দেয় নি।
অর্থি আশেপাশে আছে এটাই অনেক।
তাছাড়া কিছু সময় দেওয়া প্রয়োজন।
.
..
ছুটির দিন রান্নায় সবাই অর্থি কে সাহায্য করছিলো।
আটা মাখাতে গিয়ে আদিত্য আয়ানের সাথে অর্থির যাচ্ছে তাই অবস্থা।
অর্থি দুজন কে কিচেন থেকে বের করে দিয়েছে।
অর্থি ইদানীং বেশ জনপ্রিয় লেখিকা।
জীবনে পাওয়া শিক্ষা, অবস্থা, পরিবেশ মেয়েটিকে অনেক শিখিয়েছে। তাছাড়া এখন সে সিরিয়া নিয়ে বেশ লেখালেখি করে আলোচনায় উঠে এসেছে।
.
আয়ান, আদিত্য ওর পি এ এর কাজ করছে।
এত এত মেইল, ম্যাসেজ, ভয়েস ক্লিপ চেক করছিলো দুজন৷
কিচেনের ভিতরে টেবিলে বসে এসব করছিলো।
হঠাৎ একটা ভয়েস ক্লিপ দেখে।
সেন্ড ফ্রম বাংলাদেশ।
হয়তো কোন ফ্যান দিয়েছে৷ অর্থির রান্না শেষ। টেবিলে খাবার দিতেই আদিত্য রেকর্ড অন করে।
.
.
– কেমন আছো অর্থি? আশা করি অনেক ভালো। চিনতে পেরেছো? হয়তো বা হয়তো না।
আমি নিশি। যে তোমার সব কেড়ে নিয়েছিলাম।
জানো তো অর্থি যখন তোমার বাচ্চারা মারা গেলো তখন আমি মনে মনে বেশ খুশি হয়েছিলাম। কেনো হবো না?
রুপ কে যে পিছুটান থেকে মুক্তি দিয়েছে ওরা। হয়তো ওরা বেঁচে থাকলে কখনো রুপ আমার হতো না।
কিন্তু সন্তান হারানোর কষ্ট যে কি! বোন আমি এখন বুঝি।
জানো তো তুমি চলে যাওয়ার পর বুঝতে পারি আমি কন্সিভ করেছি।
জানো তো! খুব খুশি হয়েছিলাম সেদিন। কারণ আমার সব স্বপ্ন পূর্ণ হতে চলেছে।
কিন্তু!
কিন্তু যখন আটমাস চলছে তখন দ্রুত ছুটতে গিয়ে পা ফসকে পড়ে যাই।আমার বাচ্চাটা মরে যায়। ডক্টর বলে আমি আর মা হতে পারবো না।
এক রাতের মধ্যে আমি সব হারিয়ে ফেলেছি৷
কেনো সব বলছি জানো
? পরে বলছি। আগে শুনো।
রুপ তোমার জায়গায় আমাকে কখনো দেয় নি।
আমি যখন দেশে ফিরে এলাম, রুপ কে ছাড়া আমি থাকতে পারছিলাম না। যেকোন মূল্যে হোক আমার ওকে চাই। তাই আমি ওকে প্রতিদিন কফির সাথে একটু একটু ড্রাগ দিতে থাকি।
যখন ও অবচেতন হয়ে যেতো শুধু আমার থাকতো। এছাড়াও তোমার নামে বাজে কথা তো ছিলোই৷
ধীরেধীরে রুপ আমার হলো। যেদিন তুমি এসেছিলে রুপ তোমায় মেরেছিলো সেদিন রুপ হুশে ছিলো না।
যখন সব মনে পড়ে তোমার কাছে যেতে চাইলেও পারেনি।
ডিভোর্স দিয়ে চলে গেলে। রুপ কে একবার ও জিজ্ঞেস করলে না।
অপরাধ বোধ ওকে শেষ করে দিচ্ছিলো।
যখন শুনে তোমাকে পাওয়া যাচ্ছে না, তখন পাগলের মতো খুজতো। আমি তখন আর ড্রাগ দিতাম না। কারণ রুপ তখন লিগ্যালি আমার।
কিন্তু সেটাই হয়তো ভুল ছিলো।
একদিন হঠাৎ জানতে পারে তোমার নাম সিংগাপুর যাওয়ার ফ্লাইটের প্যাসেঞ্জার লিস্টে পাওয়া গেছে।
আগপাছ কিছু না ভেবেই দ্রুত যাওয়ার জন্য বের হয়৷
রাস্তায় এক্সিডেন্টে অবস্থা খুব খারাপ।
আমি দ্রুত পায়ে ছুটতে গিয়ে পড়ে যাই। আমার বাচ্চা মারা যায়।
রুপ এক বছর এগারো মাস কমায় ছিলো।
হঠাৎ একদিন ভালো হয়। এই বুঝি আমার কপাল ফিরলো কিন্তু কথায় আছে না? মানুষ মারা যাওয়ার আগে একদম সুস্থ হয়।
তাই হয়েছিলো।
আজ সাতদিন রুপ মারা গেছে। মারা যাওয়ার আগে তোমার লিখা পড়তো। নামের অংশে যখন লিখা দেখতো
– অর্থি আদিত্য আহমেদ
তখন কেদে উঠতো আর বলতো
রানী সাহেবা তুমি সুখি হও। আদিত্য তোমার পায়ে সব সুখ এনে দিবে। এটা আমার বিশ্বাস।
.
শেষ ইচ্ছে ছিলো অরুনীমা, আরশের পাশে কবর যেনো হয়।
অর্থি মাফ করো বলবো না কারণ যা করেছি আমার ক্ষমা হয় না।
তোমার সাজানো গুছানো সংসার বালির সংসার ছিলো না।
সংসার তো আমি বালির সাজিয়েছিলাম। যা আজ নেই। তোমার সংসার কেড়ে নিলেও তোমার ছিলো কিন্তু আমার সংসারের কোন অস্তিত্ব নেই।
আল্লাহ আমার পাপের শাস্তি হিসেবে সব কেড়ে নিয়েছে।
ভালো থেকো বোন। অনেক অনেক সুখী হও।
.
.
ভয়েস রেকর্ড টা শেষ হয়ে গেলো। অর্থির হাত কাপছে আদিত্য, আয়ান দুজন দুহাত ধরে।
অর্থি বলে আমি ঠিক আছি। অনেকক্ষণ বসে থাকার পর আদিত্য একটু বের হও৷
সিগারেট খেতে হবে। খুব প্রয়োজন।
.
আয়ান- মোনাপাখি ঠিক আছো?
অর্থি- হুম।
– অতীত হাতড়ে বেড়াচ্ছো?
– মানুষটা মরে গেছে আয়ান। ওর কোন দোষ ছিলো না।
– আদিত্য দার কি দোষ?
– মানে?
– আদিত্যদা কে কেনো কষ্ট দিচ্ছো? অতীত ফিরে আসবে না, আদিত্য দা এর মতো কেউ তোমাকে ভালোবাসবে না। রুপের ভুলের শাস্তি তাকে দিও না। আগের পিচ্চি হয়ে যাও। পিছুটান রেখে লাভ নেই। বালি দিয়ে নয় ভালোবাসা দিয়ে সংসার সাজাও।
.
অর্থি আয়ানের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। এই বুঝি কেঁদে দেয়।
আয়ান অর্থির মাথা বুকে নিয়ে বলে
– জানো তো! তোমার মাথা আমার বুকে রাখলেই সব চিন্তা মুক্তো হয়৷ তাহলে আদিত্য দা কতটা শান্তি পায় তুমি যখন তার বুকে মাথা রাখো?
মোনাপাখি! সাজাও না আবার সংসার। দেখে এ দুচোখ জুড়াক।
আর শুনো আমি এখন বের হচ্ছি। রাতে ফিরবো না। কান্না কাটি করলে খবর আছে কিন্তু।
.
আয়ান বেরিয়ে যাওয়ার পর অর্থি চুপচাপ বসে থাকে। সত্যি কি আদিত্য দা কে সে ঠকাচ্ছে?
বিয়ে করে আদিত্য দা আমার উপর দয়া করছে না তো?
না! দয়া করলে আজকের অর্থি কখনো মিসেস অর্থি আদিত্য আহমেদ হতো না।
.
আদিত্য বাসায় ফিরেছে। রাত হয়েগেছে।
রুমে ঢুকে সিগারেট খাচ্ছে।
এখানে আসার পর অর্থি শাড়ি পড়ে না। সালোয়ার-কামিজ পরে কিংবা জিন্সের সাতে লং কামিজ।
আজ হঠাৎ শাড়ি পড়েছে।
আদিত্য কে আরো ভিতরে ভিতরে পুড়াচ্ছে।
.
অর্থি ব্যলকনি তে এসে আদিত্যর সামনে পাশে দাঁড়ায়।
– আচ্ছা আদিত্য দা! তোমার মনে হয় না এখন আমাদের বেবি হওয়া দরকার। বয়স তো কম হলো না। তারপর আবার দেরীতে হলে মানুষ বাবুকে তোমার নাতী নাতনী বলবে।
.
.
আদিত্য অর্থির দিকে তাকিয়ে থেকে আবার সিগারেটে টান দেয়। সে জানে অর্থি কোন রোমান্টিক উপন্যাস লিখছে হয়তো তাই এমন কথা বলছে কারণ এমন উদ্ভট কথা প্রায়ই শোনা যায়। পরে বলে গল্পের প্লট ছিলো।
.
অর্থি জবাব না পেয়ে হুট করে আদিত্য কে টেনে ঠোঁট রাখে ওর ঠোটে।
সিগারেটের সব ধোয়া ওর মুখের ভিতরে যেতেই কাশতে কাশতে ছেড়ে দেয়।
আদিত্য দ্রুত পানি নিয়ে এসে পানি খাওয়ায়।
চোখমুখ লাল হয়ে গেছে। রেগে বলে
– এমন কেউ করে?
– তুমি খাও কেনো?
– চুপ।
– না।
– পানি খাও।
– উহু। তোমার ঠোঁট….
– আমার ঠোঁট? ( ভ্রু কুচকে)
– কিছু না৷ জ্বালাই খুব তাই না? থাকো আমি গেলাম
.অর্থির ব্যবহার যেনো সেই পিচ্চি অর্থির মতো হয়ে গেছে।
হাত ধরে আদিত্য বলে
– ভালোবাসি পিচ্চি।
– মাই গড। ভালোবাসো? আবার বলো? কান কে বিশ্বাস হচ্ছে না। চিমটি দাও। আমি মেবি স্বপ্ন দেখছি। না হলে আদিত্য দি গ্রেট আহমেদ ভালোবাসি বলছে।
দাও দাও চিমটি দাও।
.
আদিত্য অর্থির নাকে কামড় দেয়।
– উহু লাগলো তো।
– লাগুক। এত জ্বালাস কেনো? এত পুড়াস কেনো রে?
– পুড়তে না জানলে পোড়ায় কেনো? পুড়াতে না জানলে পুড়ো কেনো?
– কথা দিচ্ছি আজ থেকে জ্বালাবো ও পুড়াবোও৷
– পারমিশন গ্র্যান্টেড৷
.
আদিত্য অর্থি কে কোলে উঠিয়ে নেয়।
অর্থি বলে
– অতীত সহ মেনে নিতে পারবে আমায় আজ?
– অতীত পাল্টানো যায় না। যদি যেতো তাহলে জীবন থেকে চারটে বছর মুছে দিতাম।
ভবিষ্যৎ হয়ে থাকবো। এত ভালোবাসবো সব ভুলিয়ে দিবো।
.
অর্থি জানে আদিত্য ছাড়বে না। সংসার টা এবার ভালোবাসা দিয়ে শক্ত করে গড়বে। হুম সমুদ্রের তীরে বালি দিয়েই গড়বে কিন্তু ভিত্তি শক্ত থাকবে৷
দমকা হাওয়ায় যেনো ভেংগে না যায়।
আজ থেকে শুরু হবে নতুন এক পথচলা। নতুন করে বেঁচে থাকা।
.
সমাপ্ত
.
Sabiya moon