বিচ্ছেদময় সুখ পর্ব -১১

#বিচ্ছেদময়_সুখ –[১১]
মুনিয়া মিরাতুল নিহা
🚫(অন্য কোথাও পোস্ট করা নিষিদ্ধ)🚫
___________________________

বিয়ে বাড়ির সমস্ত কোলাহল, আনন্দ এক নিমিষেই থমকে দাঁড়ালো মীরার কথা শুনে! তন্ময় কিছু বলছে না, তার নিজেকে ছোটো মনে হচ্ছে! তার নিজের স্বার্থপরতার জন্য আজকে মীরার জীবনে এই অবস্থা! কিন্তু ভূল শুধরাতে চেয়েও তো কিছু করতে পারছে না। এক বিশ্রী অবস্থায় পড়েছে তন্ময়

-‘ দেখো তন্ময় তোমাদের এসব আগেই বলা উচিত ছিলো এখন এই অবস্থায় এসব কিছু বলা ঠিক নয়, আমার মেয়ে রুহিনকে ভালোবাসে রুহিনও মীরাকে ভালোবাসে এটা বলতেই পারতে। আমাদের কারো কাছে তো রুহিন বা তুমি আলাদা নও? ছোটো থেকে দেখে আসছি তোমাদের তাই রুহিনও যদি মীরাকে বিয়ের কথা বলতো আমরা কেউ আপত্তি করতাম না, কিন্তু এখন এই বিয়ের আসরে তোমাদের মনে হচ্ছে এটা ঠিক নয়?’

মীরার বাবার কথায় তন্ময় নিজেকে আরো ছোটো মনে করলো! সত্যিই তো আজকে তার নিজের জন্যই এতোকিছু হচ্ছে!

-‘ আংকেল আমি বুঝিনি তখন, কিন্তু এখন তো ভূল শুধরাবার সুযোগ দেওয়া যায় না বলুন? ওরা এক অপরকে ভালোবাসে ওরা একসঙ্গে থাকলে সুখী থাকবে!’

-‘ সবই বুঝলাম। আমি তো বললাম আমার কাছে তোমরা দু’জনই সমান, কিন্তু কথা হলো আমার মেয়ের সঙ্গে তোমরা দু ভাই মিলে যা করেছো তা নিতান্তই কেউ মেনে নিবে না। আমার মেয়েটা যদি একটাবার আমাকে মুখ ফুটে যদি বলতো! সবশেষে আমার মেয়ের সুখই আমার কাছে বড়ো। আমার মেয়ে চাইলে এই বিয়ে হবে আর না হলে নয়। বাবা মা হিসাবে আমার মেয়ের সুখই আমার কাছ বড়ো। ওর যা ইচ্ছে হয় ও যেটা ভারো মনে করে সেটাই হবে। ‘

রুহিন এতোক্ষণ ধরে সব কথা চুপচাপ শুনে গেছে। সে যে কোনো কথা বলবে তারও কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছে না বাধ্য হয়ে চুপচাপ হয়ে গেছে। রুহিনও বেশ ভালো করেই জানে তন্ময় যখন বলেছে সে বিয়ে করবে না তো বিয়ে করবে না! তাহলে সত্যিই কি আজকে মীরার সঙ্গে রুহিনের বিয়ে হবে? তন্ময় আবারো মীরার কাছে হাত জোর করে গেলো।

-‘ দেখো মীরা আমি ভুল করেছি, নিজের কথা ভেবে তোমার আর ভাইয়ের জীবনটা নষ্ট করে দিয়রছি আমি তাই আমাকে ভূল শুধরাবার সুযোগ তো দেও?’

-‘ বিয়েটা কি ছেলেখেলা পেয়েছেন আপনারা দু ভাই মিলে? ধরুন আমি রুহিনের সঙ্গে বিয়ে করলাম কিন্তু এই এতোগুলা লোকজন এরা সবাই জানে আজকে আপনার বিয়ে লোকে যখন এগুলা জিগেস করবে তখন আপনার পরিবারকে কতোটা অসম্মানিতো হতে হবে জানেন তো?’

-‘ কোনো কিছু হবে না, বিয়ে সে পাত্রী আমি রেডি করে রেখেছি বুঝেছো? ‘

উপস্থিত সবার চোখ গিয়ে পগলো তন্ময়ের উপর! এ যেনো সবাই বিস্ময় কাটিয়েই ওঠতে পারছে না! একের পর এক ঝ’টকা দিয়ে যাচ্ছে তন্ময়।

-‘ পাত্রী রেডি মানে? কি বলছিস কি এসব? তোর কি মা’থা গেছে তন্ময়? এতোক্ষণ ধরে চুপচাপ ছিলাম কিন্তু এখন আর চুপ করে থাকতে পারছি না বুঝলি? তোর বিয়ে মীরার সঙ্গেই হবে। অতো ভাবতে হবে না আমার কথা, আমি আমার জীবনটা ঠিক গুছিয়ে নিবো।’

-‘ তুই চুপ করবি ভাইয়া! বড়ো ভাই হয়েছিস কিন্তু ছোটো ভাইয়ের জন্য আত্নত্যাগী হতে পেরেছিস দিব্যি নিজের ভালোবাসাকে ভূলে! তোকে কি বলবো বল সব দোষ আমার, আমিই তো তোদের দু’জনের মাঝখানে বাঁধা হয়ে ছিলাম, আমি দূরে সরে যাচ্ছি তো সবটা ঠিক হয়ে যাবে। তোরাও এক হবি সুখে থাকবি। আর আমাকে নিয়ে অতো চিন্তা করিস নে, বিয়ে হবে আজকে আমরা দু’জনই বিয়ে করবো!’

-‘ এই তোরা দুই ছেলে মিলে কি শুরু করেছিস হ্যাঁ? বিয়ে হবে মানে কি? এইজন্যই এতো কষ্ট করে কি তোদের মানুষ করেছি আমি? আমার মান সম্মান নি টানাটানি শুরু করছিস দু ভাই মিলে! একজন বলছে তুই বিয়ে কর আরেকজন বলছে আমরা দু’জনই বিয়ে কবো?’

-‘ বাবা তুমি রে’গে যেও না, তুমি তো চাইতে ছোটো চাচ্চু মানে তরুর সঙ্গে যাতে আমার বিয়ে হয়? আমার কথায় মীরার সঙ্গে বিয়েতে রাজি হয়েছো। এইতো আমার বিয়ে উপলক্ষ্য তরুরা সবাই এসেছে, আমার জানা মতে তরুও আমাকে অপছন্দ করে না হয়তো, এখন আমি যদি তরুকে বিয়ে করতে চাই বোধহয় চাচ্চু বা তরু দুজনের কারোরই আপত্তি থাকবার কথা না বলো?’

এবার সবার আগ্রহ গিয়ে পড়লো তরুর উপর! যে তন্ময়ের প্রিয় রং লাল শাড়ি পড়ে বিয়েতে এসেছিলো। তরু তন্ময়কে ভালোবাসো কি-না জানে না তবে তন্ময়ের সঙ্গে সময় কাটাতে তরুর বেশ ভালো লাগে।

-‘ তুই সত্যি বলছিস তো তরুকে বিয়ে করতে চাস তুই?’

-‘ হ্যাঁ বাবা আমার মনে কোনো সংশয় নেই। আমি তরুকে বিয়ে করতে চাই। তুমি একটু চাচ্চুর সঙ্গে কথা বলে দেখো।’

তন্ময়ের কথায় তন্ময়ের বাবা চলে যায় তরুর বাবার সঙ্গে বিয়ে নিয়ে আলাদা করে কথা বলতে, এদিকে রুহিন পুতুলের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে! সে কি বলবে? বেশ বুঝেছে তন্ময় এখন মীরাকে নয় তরুকেই বিয়ে করবে। কিন্তু তার মীরা কি তাকে বিয়ে করবে? তার মনে যে অভিমানের পাহাড় জমেছে প্রতিনিয়ত একটু একটু করো যেটা এতো সহজে ভাংবার নয়।

-‘ আলহামদুলিল্লাহ, সাহিলের কোনো আপত্তি নেই বিয়েতে। এবার তরুর সঙ্গে তোর বিয়েটা নিশ্চিন্তে হতে পারে। ‘

সময়ের অভাবে তরুকে গায়ের শাড়ি খানি ভালো করে মা’থায় দিয়েই বউয়ের আসনে বসতে হলো। সমস্ত নিয়ম কানুন সবকিছু মেনে পবিত্র শব্দ তিন কবুলের মাধ্যমে তন্ময় তরুর হয়ে গেলো! তরুর মুখে হাসি, তন্ময়ের মনের মধ্যেখানে মীরা থাকলেও সেও তরুর দিকে চেয়ে মুচকি হাসি দিলো। কি দরকার এই মেয়েটাকে দূরে সরিয়ে? কে বলতে পারে এর কাছে তন্ময়ের শান্তি মিলবে।

-‘ তোমরা যদি এখন ভেবে থাকো তন্ময়ের বিয়ে শেষ তো আমার সঙ্গে রুহিনের বিয়ে দিবে তাহলে তোমাদের ভাবনা একেবারেই ভূল! আমি আমার কথায়ই অটুট থাকবো। আমাকে নিয়ে কোনো পুতুল খেলা আমি সহ্য করবো না মানে না বুঝেছো সবাই? আর এই যে রুহিন সাহেব? আপনার কাছে আমি বারংবার ফিরে গেছিলাম না আপনিই তো আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন? আপনার পিছু পিছু ঘুরেছিলাম আমি তবুও আপনি আমাকে গ্রহন করেননি! এবার দেখুন কেমন লাগে? এখন আমি আপনাকে প্রত্যাখান করেছি বলে আপনার যেরকম লাগছে না? ঠিক একই রকম কষ্টের মধ্যে দিয়ে আমিও গেছিলাম। এবার বুঝুন আগে কষ্ট ঠুক কি রকম হয়?’

মীরা বউয়ের বেশ নিয়েই নিজের রুমে চলে গেলো! রুহিন থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ভাবতেই পারছে না এই মেযেটা কাল কেও তার কাছে এসেছিলো আর আজকে যখন তাদের একে হবার সুযোগ এসেছে তখন সেই মেয়েটা এতোটা কঠিন হয়ে গেলো? মীরা কি বুঝছে না রুহিনেরও কতোটা কষ্ট হয়েছিলো মীরাকে এড়িয়ে যেতে,,কিন্তু রুহিনও তো অপারগ ছিলো, পরিস্থিতির শিকার ছিলো, সেও তো নিজের মনে মনে ভূগছে! এখন মীরার এই অভিমান! তাহলে কি আর মীরা সত্যিই রুহিনের কাছে আসবে না?

#চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here