বিচ্ছেদময় সুখ পর্ব -১২

#বিচ্ছেদময়_সুখ — [১২]
মুনিয়া মিরাতুল নিহা
🚫(অন্য কোথাও পোস্ট নিষিদ্ধ)🚫
__________________________

বারান্দায় দাঁড়িয়ে ধোঁয়া ওঠা গরম কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে আশপাশটায় চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে মীরা, সকাল মানেই নতুন একটা দিনের সূচনা, নতুন ঘটনার সম্মুখীন এক কথায় একটা সকাল মানেই নতুন কিছুর আগমন মানব জীবনে। মীরা বেশ ধ্যান সহকারে বাহিরের পরিবেশ দেখছে। সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠেই নিজেকে পরিপাটি করে নিয়েছে বেশ করে। এই নতুন সকালেও তো তার নতুন কিছু করতে হবে।
কালকে তন্ময় আর তরুর বিয়ের পর মীরা যে ঘরে গেছিলো আর নিচে নেমে আসেনি, ঘুমের ওষুধ খেয়ে নিদ্রায় তলিয়ে গেছিলো সারারাত। সকালে ওঠেই ফ্রেশ হয়ে নিয়েছে। তন্ময় তো তরুকে নিয়ে বাড়িতে গেছে আর রুহিন গেছে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে!

তরু ঘুম থেকে ওঠতেই পাশে তন্ময়কে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে পেলো। কপালে এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করে দিলো। হাতের দিক পানে চেয়ে আংটিটায় চোখ বুলিয়ে নিলো। তরুও জানে তন্ময় মীরাকে ভালোবাসে, কিন্তু কালকে রাত্রে যখন তন্ময় তরুর দু হাত ধরে আকড়ে ধরে বলেছিলো,

-‘ তুমি সবটা জানো তাই আমাকে একটু সময় দাও, এক নিমিষেই কোনো কিছু করা সম্ভব নয়, সময়ের প্রয়োজন সেটা আমাকে দিও। কথা দিচ্ছি একটা হাসিখুশি পরিবার হয়ে ওঠবো আমরা। ‘

এই কথাটুকুই তরুর জন্য যথেষ্ট ছিলো। কোনো কিছু তো আর ধরেই করানো যায় না, সবকিছুতেই সময় লাগে। তরু মীরার মতন অতো ছটফটে নয় সে চুপচাপ থাকতে পছন্দ করে। তাই সে সঠিক সময়ের অপেক্ষা করতে লাগলো। মনে এক রাশ আশা জমে আছে
সত্যি ই কোনো দিন হয়তো তারা একটি সুখী পরিবার হয়ে ওঠবে।

মীরা কলেজে যাবে না ঠিক করলো আজকে সে একটু বাড়িতে থাকবে মন খুলে কথা বলবে সবার সঙ্গে। কতোদিন বাড়ির সবার সঙ্গে তার কথা হয়না ভালো করে! নিজেকে সবার থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলো কিন্তু আর নয় মীরা এখন সেই আবার আগের মীরা হয়ে ওঠবে।

তন্ময়ের সঙ্গে মীরার বিয়ে না হলেও হিসেব মতন আজ ওই বাড়িতে তরুর বৌ ভাত। সকাল থেকে সেই তোড়জোড়ই চলছে বেশ করে। কনে বদলে যাবার কারনে কিছু পাড়া প্রতিবেশী দু চার কথা বলেছে বটে কিন্তু সেটা তন্ময় বা তন্ময়ের পরিবার কেউই আমলে নেয়নি সেরকম করে।

-‘ রুহিন বাবা আমি কাজে প্রচুর ব্যাস্ত আছি। মীরার সঙ্গে যা হলো তা তো ঠিক হলো না বল? তবুও উনাদের সঙ্গে আমাদের এতোবছরের সম্পর্ক সেটা নষ্ট করি কি করে? তন্ময়ের রিসেপশনে উনারা থাকবে এটা তো হতে পারে না বল? কাল ওদের সঙ্গে যা হয়েছে মোটেও ভালো হয়নি, তুই নিজে গিয়ে ওদের সঙ্গে কথা বলে আয়।’

রুহিন বাড়ির কাজ করছিলো বাবার কথায় হঠাৎ করে থমকে দাঁড়ায়! ওই বাড়িতে গেলেই তো তাকে মীরার সম্মুখীন হতে হবে আর মীরা কি রকম প্রতিক্রিযা করতে রুহিনকে দেখে? সেটা ভেবেই রুহিন ভ’য় পেয়ে যাচ্ছে! তবুও বাবা যখন বলেছে তখন তো যেতেই হবে। রুহিন মীরাদের বাড়ির উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়লো।
বাড়িতে গিয়ে কলিং বেল বাজাতেই মীরার মাদরজা খুলে দিলো ভেতরে বসতে বললো রুহিনকে।

-‘ আন্টি যদি কিছু মনে না করেন আংকেল কে একটু ডেকে দিবেন?’

।মীরার মা কোনো কিছু না বলে মীরার বাবাকে ডাকতে চলে যায়, ওদিকে সোফায় বসে থাকা রুহিনের চোখ কেবল সারা বাড়িময়ের উপর! বাড়ি দেখতে তার কাঙ্ক্ষিত মানুষটির জন্য। কিন্তু রুহিন হতাশ, মীরার কোনো দেখা মিললো না বাড়িতে।

-‘ বলো কি বলতে চাও?’

-‘ দেখুন আংকেল প্রথমেই জোড় হাত করে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আপনাদের কাছে কালকের ঘটনার জন্য। মানছি আমরা ভূল করেছি আপনাদেরকে কিছু না জানিয়ে সেজন্য গন্ডগোল লেগেছে কিন্তু মীরা তো পারতো কালকে বিয়েটা করতে কিন্তু ও তো বিয়েটা করলো না যদিও বা দোষটা আমারই, আমি আমার ভাইয়ের দিক ভেবেছি শুধু। সেজন্যই শাস্তি পাচ্ছি এখন।

-‘ দেখো যা হবার হয়েছে, আমার মেয়র সুখই সবচেয়ে বড়ো বিষয়। ও যা ইচ্ছে সেটাই করবে। কিন্তু তুমি কি বলতে চাও স্পষ্ট করে বলো?’

-‘ তেমন কিছু না আংকেল আমি চাইছি কালকের ঘটনার জন্য আমাকে মাফ করে দিয়েন আর আজকে তো তন্ময়ের রিসেপশন আপনারা দয়া করে আসবেন?’

-‘ হ্যাঁ সেটা তোমার বাবাও সকালে ফোন করে বলে দিয়েছে, এখন তুমি বলছো। আচ্ছা গেলে তো দেখবেই। চেষ্টা করবো নে।’

-‘ অনেক অনেক ধন্যবাদ আংকেল। আপনারা সবাই আসবেন বুঝেছেন তো? পুরো পরিবার মিলে আসবেন সবাইকে নিয়ে, আমি যাচ্ছি বাড়িতে কাজ আছে।’

রুহিন চলে যেতেই মীরার বাবা হেঁসে যাচ্ছে! তা দেখে মীরার মা প্রশ্ন করলো উনি কেনো হাসছেন?

-‘ আরে হাসবো না? ছেলেটা সপরিবার বলতে আমাদের মেয়েকে বুঝিয়েছে বুঝেছো? আমি এও জানি ওরা এক হবে। শুধু অভিমানটা মেটার পালা, নতুন জীবনে যাবার আগে দু’জনের মধ্যেখানে থাকা অভিমানটা মিটিয়ে নিক ব্যস তারপর ঘটা করে আব্র মেযের বিয়ে দিবো।’
————————————

মীরাকে ওই বাড়িতে যেতে বলায় প্রথমে যাবো না বললেও পরে রাজি হয়ে যায়। তাকেও রুহিনকে দেখিয়ে দিতে হবে এতোদিন রুহিন যেরকম করেছে তখন মীরার ঠিক কিরকম লেগেছিলো! মীরা আজকে মন খুলে উচ্ছাসিত হয়ে সেজেছে, একটা সাদা রঙের সুন্দর লেহেংগা পড়েছে, তার সঙ্গে ম্যাচিং করে গায়ে গয়না, হালকা মেক-আপ দিয়ে সুন্দর করে নিজেকে পরিপাটি করে নিয়েছে।

রুহিন লোকদের দেখাশোনা করছিলো, বিয়ে বাড়িতে হাজারটা কাজ পড়ে থাকে। সেই দেখাশোনা করতে করতে রুহিনের চোখ দরজায় আটকে যায় মীরাকে দেখে! কি সুন্দর লাগছে আর মীরাকেও দেখে বেশ উচ্ছাসিত মনে হচ্ছে, সব মিলিয়ে মীরার দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছে না, মীরা রুহিনের পাশ দিয়েই গেলো কিন্তু এটা বারও রুহিনের দিকে তাকালো নাও না যেটা রুহিন বেশ ভালো করেই বুঝেছে। তবুও অনুষ্ঠানের ভেতর পুরোটা সময় ধরে রুহিনের চোখ শুধু মীরার দিকেই আবদ্ধ রয়েছে বলতে গেলে!
রুহিনের বাবা রুহিনকে একটা কাজে পাঠায় বাহিরে।

ওদিকে মীরা তরুর সঙ্গে আলাপ করেছে বেশ ভালোই মেয়েটা, এখন লিপির সঙ্গে কথা বলছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে, রুহিনের জন্য লিপিকেও এভোয়েড করেছে এতোদিন। ওদের দু’জনের কথা বলার সাঝখানেই একটি ছেলের সঙ্গে ধাক্কা লাগতেও লাগতেও মীরা পরে যায়নি ছেলেটি ধরে ফেলে মীরাকে!

-‘ একি আপনি! এখানে?’

-‘ হ্যাঁ মীরা তোমাকেও তো এখানে আশা করিনি। ‘

-‘ আরে আকাশ ভাইয়া আমার বেস্টুর বাড়িতে আমি থাকবো না এটা কখনো হয় নাকি বলুন তো?, বরং আপনি বলুন আপনি কবে এসেছেন এখানে?

-‘ সেই পুরনো মীরা? বদলাও নি দেখছি হ্যাঁ? আগের মতনই উচ্ছাস নিয়ে কথা বলা।’

আকাশের কথা শুনে মীরা হেঁসে দিলো, ওদিকে রুহিন মীরাকে আকাশের সঙ্গে হাসতে দেখে তার হাসি মুখ নিমিষেই কালো হয়ে গেছে। আকাশ মীরাদেরই এলাকার ছেলে! তবে মীরার চেয়ে বয়সে বড়ো আর রুহিনের চেয়ে একটুখানি ছোটো তন্ময়ের সঙ্গে প্রায়, আকাশও এতদিন বাহিরে ছিলো ওর মা’কে ডাক্তার দেখাতে আরো পারিবারিক ঝামেলার জন্য। মীরা এতো বছর পর আকাশকে দেখতে পাবে ভাবেওনি তাই আকাশের সঙ্গে কথা বলার সময় এতোটা খুশি লাগছে হয়তো। কিন্তু মীরার এই খুশিটা রুহিন মেনে নিতে পারছে না! আসা ইস্তক রুহিন অনেকবার চেষ্টা করেছে মীরার সঙ্গে কথা বলার, সেখানে মীরা তাকে প্রতি পদে পদে এড়িয়ে গেছে অথচ এখন আকাশের সঙ্গে দিব্যি হাসি খুশিভাবে কথা বলছে!

#চলবে?

[ আল্লাহকে স্মরন করুন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করুন, আসসালামু আলাইকুম সবাইকে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here