#বৈবাহিক_চুক্তি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্বঃ২৩
“স্যার আপনি সব জেনেও চুপ করে আছেন কেন?”
“আমিও দেখতে চাই আমার কাছের মানুষটি আমাকে কত আঘাত করতে পারে ”
“কিন্তু এভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে তো অনেক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে”
“ক্ষতিটা যতক্ষণ পর্যন্ত আমার উপর থাকবে আমি টু শব্দটুকু ও করবো না কিন্তু আই সয়ার যদি আমার ফেমিলির উপর একটা আচড়ও আসে তাহলে এই দুনিয়ায় তার শেষ মুহুর্ত হবে সেটি ”
“আপনার বোনতো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে, তাকে সাবধান করে দেয়া উচিৎ নয় কি?”
“আমার বোন সেই মানুষটিকে খুব বিশ্বাস করে তাই তার সেই বিশ্বাস ভাংতে চাই না, ওর জীবন থেকে এই মানুষটি চলে গেলে ও এই ধাক্কা সামলাতে পারবে না। বাবা মায়ের ধাক্কা অনেক কষ্টে সামলে উঠেছে ও। তাইতো ওকে চোখে চোখে রেখেছি আমি। সবচেয়ে মজার বিষয় কি জানো?
তুমি জানো সামনের মানুষটি মিথ্যা বলছে, যেটা দেখাচ্ছে সে আসলে সেটা না তবুও তার সাথে তুমি হাসি মুখে কথা বলছো। কারণ আমি দেখতে চাই আমার প্রান প্রিয় বন্ধু ঠিক কতোটা নিচে নামতে পারে। এটা দেখার মজাই আলাদা বুজছো!”
“স্যার তাহলে আগে কি করবেন? এভাবে চলতে থাকলে তো কোম্পানির স্টক মার্কেট অনেক লো হয়ে যাবে তাছাড়া একটার পর একটা কন্ট্রাক্ট আমাদের হাত ছাড়া হচ্ছে ”
“আমাদের একটা কোম্পানির কন্ট্রাক্ট হাতছাড়া হচ্ছে কিন্তু বাকিগুলো তো ঠিকই আছে। তাছাড়া এই ব্রাঞ্চ ছাড়া বাকি ব্রাঞ্চ গুলোর খবর তেমন কারো জানা নেই তাই এই কোম্পানি হাত ছাড়া বিশেষ কোন ক্ষতি হবে। গেম তো মাত্র শুরু হয়েছে, এখনো তো অনেক দেখার বাকি। নিজের লেভেলের কারো সাথে খেলার মজাই আলাদা বুঝলে! আর সে যদি হয় নিজের কেউ! তুমি সব কিছুর দিকে নজর রাখো আর আমাকে আপডেট করতে থাকো”
“ইয়েস স্যার, সেদিক থেকে নিশ্চিন্তে থাকুন ”
“ও আমাকে হারিয়ে যে আনন্দ পাচ্ছে তাতে আমিও খুব মজা পাচ্ছি, আমি লাগাম ছেড়ে দিয়েছি ও যা করার করুক, যখন লাগাম ধরে টান দিবো তখন বুঝতে পারবে সায়ান জামিল খান কি করতে পারে” পেপার ওয়েট ঘুরাতে ঘুরাতে
তখনি সায়ানের ফোন বেজে উঠে,আর অপরপাশ যা শুনলো তা শুনার জন্য ও মোটেও প্রস্তুত ছিলো না
“আমি বলেছি ইনান তুই আমাকে যাই করিশ আমি কিছু বলবো না কিন্তু আমার ফেমিলির কিছু হলে ছেড়ে কথা বলবো না। তুই কাজটা ঠিক করিশ নি এবার আমি যা করবো তা করতে তুই আমাকে বাধ্য করেছিস ”
বলেই পেপার ওয়েটটি সজোরে ফ্লোরে আঘাত করলো, মুহুর্তেই সেটি বিভিন্ন খণ্ডে পরিণত হলো, সায়ান দ্রুত পায়ে বের হলো, খুব দ্রুত গাড়ি ড্রাইভ করছে, গন্তব্য সিটি হসপিটাল। একটু আগেই রুশি ফোন করেছে যে রুহান অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে আর তাকে হসপিটালে নেয়া হয়েছে। আজ কয়েকদিন ধরেই রুহান কেমন জানি করছলো, সারাক্ষণ শুয়ে থাকে আর কিছু খেতে চায় না, খেলেও বমি করে দেয়। সায়ান গাড়িটা পার্ক করে ছুটলো ২০৩ নং কেবিনের দিকে, কেবিনে পৌঁছেই দেখলো রুহান বেডে অচেতন অবস্থায় শুয়ে আছে, মুখে অক্সিজেন মাস্ক আর হাতে ক্যানেলা লাগানো। পাশেই রুশি যেন পাথর হয়ে বসে আছে, কিন্তু থেকে থেকে কেপে উঠছে আর চোখ গড়িয়ে জল পড়ছে। সামু পাশে বসেই শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছে। রুশির দিকে এগিয়ে যাবে তখনি দাদাজি কেবিনে ঢুকলো, সায়ান দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলো তার কাছে
“কি বলেছে ডাক্তার? কি হয়েছিলো ওর আর এখন কেমন আছে?”
“ডক্টর ভেবেছিলো ফুড পয়জনের কারণে এমন হয়েছে কিন্তু ওয়াশ করার পর বুঝতে পেরেছে যে ড্রাগস এর কারণে এই অবস্থা। ওর পেটে হাই ডোজের ড্রাগ ছিলো কিন্তু বমি হওয়ায় অধিকাংশ বের হয়ে গেছে তাই ততটা ক্রিটিকাল অবস্থা হয়নি। হি ইজ আউট অফ ডেঞ্জার নাও কিন্তু অনেকটা দুর্বল তাই রেস্টের প্রয়োজন”
সায়ান হাত মুঠো করে ফেললো, ওর ছোট্ট ছেলেটাকে ছাড় দেয়নি ও, যদি এখন চোখের সামনে পেতাম তাহলে খুন করে ফেলতাম ইউ রাসকেল,বেরিয়ে যেতে নিয়েও কিছু একটা ভেবে ফিরে আশে।
“দাদাজি ওইযে চকলেট আপনি আনতেন রুহানের জন্য সেটা কোথা থেকে আনতেন? ”
“আমি তো জানি না, ওইযে তুমি যে বডিগার্ড নিয়ে এসেছিলে না? কি নাম যেন!ওকেই আনতে বলতাম আমি। কেন কি হয়েছে? ”
“নাহ কিছুনা, আপনি এই দিকে থাকেন আর ওদের খেয়াল রাখেন আমি বডিগার্ডদের বলে যাচ্ছি সুরক্ষা বাড়িয়ে দিতে ”
সায়ান গাড়ি ড্রাইভ করে ঢাকার দিকে যাচ্ছে, অনেক হিসাব বাকি আছে যা আজ চুকাতে হবে, তুই জানিসনা তুই আমার কোথায় হাত দিয়েছিস ইনান, তোর সব কিছু ক্ষমা করলেও এর হিসাব তোকে দিতেই হবে।
“বস ইনান স্যার এখন ময়মনসিংহে আছে আর আপনার বাড়ির দিকেই আসছে ”
“হুম আসছি আমি। তুমি আসলে যাতে না যেতে পারে সেই ব্যাবস্থা করো ”
“শিকার নিজেই হাতের কাছে ধরা দিচ্ছে, তাকে ছিঁড়ে খাওয়ার মজাই আলাদা” স্টেয়ারিং এ হাত রেখে বাকা হাসি দিয়ে।
🌸🌸🌸
সায়ানের সাথে হিসাব মিলানোর বাকি আছে এখনো, ও জানে এখন সায়ান বাড়ির দিকেই আসছে তাই বসে আছে ওর জন্য। আজ অনেক প্রশ্নের জবাব চাই ওর সাথে বদলাও। যেই প্রতিশোধের আগুন ছয় বছর ধরে পুষছে তা এতো সহজে নিভে যায় কি করে? যেদিন জানতে পেরেছে ওর ভালোবাসার মানুষ ওরই শত্রুর বোন তখন খুব কষ্ট লেগেছিল। একবার মনে হচ্ছিলো সব শেষ করে দেই কিন্তু কি করে শেষ করবে সব? যাকে ছাড়া নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হয় তাকে ছাড়া থাকা সম্ভব নয় তাই প্লেন বদলে ফেলেছে। যেখানে এটাক করতে এসেছিলো সেটা বদলে অন্য জায়াগায় এটাক করার চিন্তা করলো আর তা করেছেও। বাংলাদেশে “এসকে গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিস” এখন এক থেকে তিন এ নেমে এসেছে আর কয়েকদিনে টপ টেন থেকে বের হতে সময় লাগবে না। আর অন্য ক্ষেত্রে তো…
মেইনডোর খুব শব্দ করে খুললো সায়ান ও জানে ইনান ভেতরে আছে, ঢুকেই ইনানের রিল্যাক্স মুডে সোফায় বসে থাকাটা হজম হলো না ওর। কাছে এসেই কলার চেপে ধরে দাড় করালো ওকে আর শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে মারা শুরু করলো,ইনান মার খেয়েও হাসছে যা দেখে সায়ানের রাগ আরো বেশি বাড়ছে আর ও আরো বেশি মারছে ওকে। সায়ানের এই আহত বাঘের ন্যায় গর্জন দেখে ইনান ভালোই বুঝতে পারছে তীর নিশানা বরাবর গিয়ে লেগেছে।
যখন ইনানকে মারছিল তখনি হুট করে একজন সায়ানকে সামনে ফিরিয়ে ঘুষি মারলো আর একজন এসে ওর হাত পেছন থেকে ধরলো। সামনে থাকা মানুষটিকে দেখে সায়ান অবাক হলো, “ঘরের শত্রু বিভীষণ” বলে একটা উক্তি রয়েছে আর সেটার জলন্ত প্রমাণ চোখের সামনে দেখতে পেলো। সায়ানের চাচা জাহিদ খান স্বয়ং দাঁড়িয়ে আছে ওর সামনে, চাচার সাথে ওর ভালো সম্পর্ক কোনকালেই ছিলো তাই বলে ওর চাচা শত্রুপক্ষের সাথে হাত মিলিয়ে সত্যিই মিরজাফর হয়ে গেলো, নিজেকে সত্যি মেঘনাদ ভাবতে ইচ্ছে হচ্ছে ওর আর বলতে ইচ্ছে করছে
“হায় তাঁত তব কর্মে ইচ্ছে মরিবারে”
কিন্তু যে তার হাত ধরেছে তাকে দেখে মোটেও অবাক হলো না, ওরই এসিসট্যন্ট ধরে রেখেছে ওকে। ওর এই অবাক চাহনি দেখে ইনান হাসলো আর আঙুল দিয়ে নিয়ে ঠোটের কোনে লেগে থাকা রক্ত মুছছে।তারপর সায়ানের চুল মুঠ করে ধরলো, আঁহ নামক অস্ফুট শব্দ বের হলো সায়ানের মুখ থেকে।
“কেমন লাগছে মি.সায়ান জামিল খান,নিজের বাসায় নিজের সবচেয়ে বড় শত্রুর সামনে হাটু গেড়ে এইভাবে বসে থাকতে? কোথায় গেলো সেই সায়ান জামিল খান যার ইশারায় পুরো আন্ডারওয়ার্ল্ড কাঁপতো?আন্ডারওয়ার্ল্ড এর বাদশা ওফফফ স্যরি সাবেক বাদশাহকে এইভাবে নিজের সামনে নত শীরে বসিয়ে রাখতে আমার কিন্তু সেই লাগছে। ”
বলেই নিজের মনের সাধ মিটিয়ে মারছে ওকে, সায়ান যখন কিছুটা দুর্বল হয়ে গেলো তখন বললো
“কিরে বললি নাতো কেমন ফিল হচ্ছে তোর নিজেরই বন্ধুর এত বড় ধোকার সম্মুখীন হতে?”
সায়ান শান্ত চাহনিতে তাকালো তারপর বললো
“কেন করলি এটা তুই আমার সাথে?” বলতে কষ্ট হচ্ছে তবুও বলছে
“আমারো একি প্রশ্ন কেন করলি এটা আমার সাথে?, ছয়টা বছর শুধু এটাই ভেবে এসেছি আমার ফ্রেন্ড আমার সাথে এটা কি করে করতে পারলো! আর প্রত্যকটা মুহুর্তে ভেবেছি তোকে সামনে পেলেই তোর এই বা গুলি করে ঝাজরা করে দিবো যাতে তুই তোর বোন, বউ আর বাচ্চাকে রাখিস”
“কি করেছি আমি?বল কি করেছি?”
“সাহিল ছেড়ে দাও ওকে, ও এমনিতেই আর আমাকে এটাক করার পজিশনে নেই ”
ইনানের কথামতো সাহিল ওকে ছেড়ে দিলো কিন্তু পকেট থেক গান বের করে ওর মাথায় ঠেকালো,
“জানতে চাচ্ছিলি না কি করেছিস? লয়ার এহসান চৌধুরীকে মনে আছে? যাকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছিলি তুই কারণ তোর লোকের বিরুদ্ধে লড়ছিল সে আর তোর কথামতো লড়া বন্ধ করেনি তাই! জানিস সে কে ছিলো? আমার বাবা ছিলো সে, তার মৃত্যুতে আমার যতোটা না বেশি কষ্ট হয়েছে তার থেকে বেশি কষ্ট হয়েছে এটা জেনে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আমার বাবার খুনি ”
“জানিস বিশ্বাস করতাম না আমি যে তুই এতো নিকৃষ্ট যদি না এটা দেখতাম ” বলেই কতোগুলো ছবি ছুড়ে মারে সায়ানের দিকে, যাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে একজন মাঝ বয়সী লোকের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে ধরে আছে সায়ান, সায়ান বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে,
সায়ান স্থির ভাবে তাকিয়ে আছে ওই ছবিটির দিকে, ছবিটির ঘটনা সম্পুর্ণ সত্যি, বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটি ওই ছিলো। ও ভাবতেও পারেনি অতীত এভাবে হানা দিবে ওর লাইফে, যে অতীতের ভয় ও প্রত্যকটা দিন পায় যার নিজের সন্তানকে রক্ষা করার চেষ্টা করছে সেই অতীত ওর দ্বারপ্রান্তে।
“কি মনে পড়েছে? মনে পড়ারই কথা এতবড় খুন করে ভুলে যাওয়ার কথা না, আচ্ছা তোর বউ তোকে ক্ষমা করতে পারবে এটা জানার পর যে তুই একটা খুনি, হাজারো মানুষের রক্তে তোর এই হাত লাল হয়ে আছে?”
সায়ান ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকালো, রুশি ওকে কখনোই মেনে নিবে না যদি জানতে পারে ও আন্ডারওয়ার্ল্ড মাফিয়া ছিলো। কখনোই হয়তো ক্ষমা করবে না।
#চলবে
#বৈবাহিক_চুক্তি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্বঃ২৪(শেষ)
#প্রথমাংশ
“ইচ্ছে তো করছে মেরে ফেলি তোকে কিন্তু না এত সহজে তোকে মরতে দেয়া যাবে না, এখনো আরো অনেক কিছু বাকি আছে ”
“হাহাহা হাহাহা “হাসিতে ফেটে পড়লো সায়ান, হাসতে কষ্ট হচ্ছে তবুও হাসছে, তারপর উঠে দাঁড়াল আর শার্ট ঠিক করে চুলে হাত দিয়ে বললো
“কেমন লাগে যখন মনে হয় সবকিছু তোর অনুযায়ী চলছে অথচ তোকেই অন্য একজন নাচাচ্ছে, বুঝলিনা তো?সাহিল… ”
তখনি সায়ানের দিকে পয়েন্ট করা গান সাহিল ইনানের মাথায় ঠেকালো, ইনান অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাহিলের দিকে
“তোর সবচেয়ে বড় ভুল কি জানিস, তুই আমাকে সায়ান জামিল খানকে আন্ডারেস্টিমেট করেছিস। ভুলে গেছিস তুই আমার এক আঙুলের ইশারায় পুরো আন্ডারওয়ার্ল্ড হেলে যেতো, আর তুই আমাকে আন্ডারওয়ান্ড কিং কে বোকা বানাচ্ছিলি?আমি ওই জগত ছেড়ে দিয়েছি তবে মানুষটি কিন্তু আমিই আছি। এই যে তোর আশেপাশের যাদের ভাবছিলি যে তোর কাজ করেছিলো! ওরা আসলে আমার কথায় তোর সাথে ছিলো। তাকিয়ে দেখ ভালো করে সব আমার লোক আর আমার ইশারায় তোকে মেরে গেড়ে রেখে দিবে ”
“সেই আমি এত সহজে ভুলে গেলাম কি করে যে তুই একটা খুনি, দ্যা গ্রেট ভিলেন সায়ান জামিল খান ” ইনান ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিলো।
“আমি আন্ডারওয়ার্ল্ড এর কিং ছিলাম কথাটা সত্য কিন্তু আমি কখনো কোন নির্দোষ মানুষকে মারিনি, যারা আমাকে মারতে এসেছে আমি তাদের মেরেছি ”
“তাহলে ছবিগুলো মিথ্যে, এইখানের মানুষটি তুই নস? ”
“আমি তা বলিনি, এইছবির সিন সম্পুর্ণ সত্যিই তবে তুই যা জানিস তা পুরোটা সত্যি নয় ”
“হুহ পুরোটা সত্যি নয়! তুই যতই নির্দোষ প্রমাণ করতে চাসনা কেন তুই খুনি ছিলি আর থাকবিও। আমাকে মেরে ফেললেও সত্য মিথ্যে হয়ে যাবে না”
“তুই জানিস তোর বাবা কার পক্ষ হয়ে কেস লড়ছিলো? লরেন লিউস এর হয়ে যে কিনা রেপ, উইমেন ট্রাফিকিং, মার্ডার, কিডন্যাপ এমন কোন কাজ নেই যে করেনি, ক্যালিফোর্নিয়ার ডন ছিলো সে। একটা মেয়েকে রেপ করার ট্রাই করেছিলো তার লোক কিন্তু করতে না পারায় মেয়েটিকে মেরে ফেলে ও আর আমার দলের লোক সেটাই দেখেছিল। যেহেতু ওকে ওইখানে শেষ করতে পারেনি তাই ওর নামে মিথ্যে রেপিং এর কেস দিয়ে দিয়েছে আর এমেরিকা এই ব্যাপারে কত স্ট্রিক্ট তা তো জানিসই তুই। আমি তোর বাবাকে বারবার বলেছি লরেন লিউস এর হয়ে কেস লড়তে না কিন্তু সে শুনে নি।তাই তাকে কিডন্যাপ করে এনে বুঝাচ্ছিলাম কিন্তু সে বুঝেনি ”
“আর তাই তাকে মেরে দিয়েছিস? তাইনা!”
“নাহ মারিনি বরং বুঝাচ্ছিলাম তবে আমার হাতে গান ছিলো যেটা দিয়ে ভয় দেখিয়ে তাকে পিছু হটতে বলছিলাম কিন্তু সে সরেনি। পরে লরেন লিউসের বিরুদ্ধে তথ্য তাকে দিয়েছি সাথে প্রমাণও আর সে কেস বন্ধ করে দিতে রাজি হয়ে গিয়েছিলো। আমাকে বলেছিলো লড়বেনা তাই আমি নিজে তাকে তার অফিসের নিচে নামিয়ে দিয়ে এসেছি”
“এই মিথ্যে কাহিনী বানাতে কতক্ষণ সময় লেগেছে তোর?”
“আমি মিথ্যে বলছি! সব স্বিকার করে নিলাম যদি এটা করতাম তাহলে এটাও স্বিকার করতাম ” বলেই ইনানকে ঘুষি মারলো সায়ান,ইনানের কলার চেপে ধরে বললো
“কিন্তু তুই, তুই কি করেছিস? আমার বদলা আমার ছেলের উপর নিচ্ছিলি? ওকে ড্রাগস দিয়ে মেরে ফেলতে চাইছিলি?তোর যা বদলা তুই আমার উপর নিতি, আমাকে মেরে ফেলতি কিন্তু আমার ছেলের দিকে নজর দিলি কেন?”
বলেই পাল্টাক্রমে দুজন দুজনকে মারতে লাগলো, সাহিল এগিয়ে এসেও থামাতে পারেনি তাই রুশিকে ফোন দিয়েছে আসার জন্য, কারণ সায়ানকে একমাত্র রুশিই থামাতে পারবে।
“আর ইউ মেড আমি তোর ছেলেকে কেন টার্গেট করবো? হ্যা মানছি অনেক আগে আমি তোর ছেলে সন্তানকে খুজে তোকে শাস্তি দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু তাদের ক্ষতি করার ইচ্ছা আমার কখনোই ছিলো না। তাছাড়া আমি প্লেন অনেক আগেই চেঞ্জ করে তোর কোম্পানিকে টার্গেট করেছি যা তুই নিশ্চয় টের পেয়েছিস ”
“তাহলে তুই আসার পর থেকে আমার ছেলের এই অবস্থা কেন হয়েছে?আর ওর শরীরে ড্রাগস কোথা থেকে আসলো? ”
“সেটা আমি কি করে জানবো? আমি তোর উপর প্রতিশোধ নিতে চেয়েছি কিন্তু তোর ফেমিলিকে কখনো টার্গেট করিনি। তুই ভাব যদি ফেমিলিকে টার্গেট করারই থাকতো তাহলে তোর একমাত্র বোনকেই তো টার্গেট করতে পারতাম আমি কিন্তু আমি এতোটাও নিকৃষ্ট নই। তাছাড়া আমি সামুকে ভালোবাসি অনেক টাই বেশি ওর কিছু হওয়া কল্পনাও করতে পারিনা। আর ভাবি আর রুহানকে তো কখনোই টার্গেট করবো না, ও ছোট একটা বাচ্চা সায়ান। এত নির্দয় আমি নই ” সায়ান ওকে মারার জন্য হাত উঠিয়েও নামিয়ে ফেললো, কারণ ওকে দেখে মনে হচ্ছে ও যা বলছে সত্যি বলছে আর ওর কথা ঠিক। চাইলেই ও সামুকে টার্গেট করতে পারতো কিন্তু ও তা করেনি এর মানে অন্যদেরও টার্গেট করবে না। তাহলে এসব করছে কে?
“ইনান আমার মনে হচ্ছে কেউ ইচ্ছে করে আমাদের মধ্যে মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং ক্রিয়েট করছে, আমি তোর বাবাকে সত্যিই মারিনি ” শান্ত স্বরে বললো সায়ান।
“তাহলে কে মেরেছে বল আমার বাবাকে? বল?”সায়ানের দিলে তেড়ে এসে বললো।
“ইনান স্যার, বস যা বলছে সত্যি বলছে, বস তার যে লোকের কথা বলেছে সেই লোকটি আমিই ছিলাম। আমার বিরুদ্ধে আপনার বাবা কেস লড়ছিলো কিন্তু শেষ মুহুর্তে উনি বলেছিলেন যে এই কেস উনি লড়বেন না। আমরা নিজে ওনাকে সেখানে নামিয়ে দিয়ে এসেছি”
“আচ্ছা এইটা বল তোর বাবা কিভাবে খুন হয়েছে?”
“তাকে গুলি করা হয়েছিলো আর শরীরে অনেক আঘাত ছিলো ”
“দেখ এই ছবিতে আমি গান হাতে ছিলাম কিন্তু আমি মেরেছি এমন কোন প্রমাণ আছে?”
“ওয়েট বস… স্যার আপনার বাবা কত তারিখে খুন হয়েছে? মনে আছে আপনার? ”
“ওই তারিখ আমি কি করে ভুলতে পারি, ২৭ আগস্ট ছিলো সেই দিন”
“দেখুন এই ছবির এইখানে ২৫/৮ দেয়া, মানে এটা ২৫ আগস্টের ঘটনা, মানে তার দুইদিন পর আপনার বাবা খুন হয়েছে। এই দুইদিন আপনার বাবা বাসায় যায়নি? ”
“হুম এসেছে আর ২৬ তারিখ আমরা ঘুরতেও গিয়েছিলাম ”
“তাহলে আপনি জানেন আপনার বাবা ওই কেস থেকে সরে গিয়েছিলো, তাই আমাদের তাকে মারার কোন রিজনই ছিলো না তাছাড়া আমরা নির্দোষ মানুষকে কখনো মারিনি”
“তাহলে আর কে মারবে আমার বাবাকে? তুই যদি না মারিস ”
“বাকি কে থাকে তাহলে যার হয়ে তোর বাবা কেস লড়েনি?”
“লরেন লিউস?”
“হুম, তুই জানিস! আমি আন্ডারওয়ার্ল্ড এর সাথে জড়িয়ে গিয়েছিলাম ক্লাবে ফাইটিং করার পর থেকে, আমাকে বলেছিলো ফাইট শিখাবে কিন্তু কখন যে জড়িয়ে গিয়েছি বুঝতেই পারিনি। আর দুই বছরের মধ্যেই আন্ডারওয়ার্ল্ড কিং হয়ে গিয়েছি কিন্তু তবে আমি কোন পাপকাজে নিজেকে জড়াইনি ”
“যদি তুই নির্দোষ হয়ে থাকিস তাহলে ছেড়েছিস কেন?”
“কারণ ওইযে ওই কর্ণারের ছেলেটি আছেনা? ওর নাম হচ্ছে এমরে, ও একটা মেয়েকে পছন্দ করতো কিন্তু আন্ডারওয়ার্ল্ড এ থাকার কারণে তাকে মেরে ফেলেছে শত্রুরা, এটা দুই বছরে প্রথম ভয় হয় আমার সামুকে নিয়ে, কারণ ওইমেয়েটির জায়াগায় আমি সামুকে দেখতে পাচ্ছিলাম তাই ছেড়ে দিয়েছি কারণ আমি চাই আমার ভুলের মাশুল আমার বোন দিক। ছাড়াটা সহজ ছিলো না কিন্তু আমি জোর করে চলে এসেছি
ওই জগতে ঢুকা যত সহজ কিন্তু বের হওয়া ঠিক ততটাই কঠিন। আমার অতীত আমার পিছু ছাড়েনি। তুই জানিস কতবার মৃত্যুর দ্বার থেকে বেচে ফিরেছি আমি?”
“তারমানে তুই বাবাকে মারিস নি তাহলে আমাকে এমন ছবি পাঠিয়ে তোর বিরুদ্ধে খেপালো কেন?”
“কেউ একজন চায় আমরা নিজেরাই নিজেদের মেরে ফেলি আর সে এক ঢিলে দুই পাখি মেরে ফেলুক ” বলেই দুজন সায়ানের চাচার দিকে তাকালো তখনি দেখে ওর চাচা ওদের দিকে বন্দুক তাক করে দাঁড়িয়ে আছে আর সাহিল ওর চাচার দিকে বন্দুক তাক করে আছে।
“চাচাজান বলে দিন কেন এসব করেছেন? ”
“অবশ্যই সম্পত্তির জন্য, তোর দাদা তোদের বেশির ভাগ সম্পদ দিয়েছে কিন্তু আমাকে ফিফটি পার্সেন্ট বলে মাত্র ৩০% দিয়েছে।ওই লোককে তো আমি প্রায় মেরেই ফেলেছিলাম কিন্তু বেচে ফিরলো কি করে কে জানে! কিন্তু আমি তোর একা শত্রু না আরো…”
আর কিছু বলার আগেই সে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো, রক্তে মেঝে লাল হয়ে গেলো, সায়ান ইনান দুজনেই ভরকে গেলো। সায়ান গুলির উৎস খুজতে লাগলো তখনি পরিচিত কন্ঠ ভেসে উঠলো
সায়ান অস্ফুট স্বরে বললো “লরেন লিউস”
#চলবে
(রাত্রে ফাইনাল পার্ট দিবো)
(কালকেই হয়তো লাস্ট পার্ট দিবো, আর কালকেই সব রহস্যের জট খুলে যাবে)