#বিবাহ_বন্ধন
#পর্ব_৬
#লেখক_দিগন্ত
বৃষ্টি আরশিকে নিয়ে চলে আসে ড্রইং রুমে।আরশিকে আসতে দেখে সোহেল ছুটে এসে অনবরত তাকে মা*রতে থাকে।বৃষ্টি আরশির ঢাল হয়ে দাঁড়ায়।
সালমা আক্তার সোহেলের এই ব্যবহারে প্রচণ্ড রেগে যান।সোহেলের গালে থা*প্পড় মে*রে বলেন,
-“তোর সাহস কি করে হলো আরশির গায়ে হাত দেয়ার? তোকে কি আমি এই শিক্ষা দিয়েছি? তোর খালামনি সব জানতে পারলে কি মনে করবে একবার ভেবে দেখেছিস?”
সোহেল আজ খুব রেগে আছে।তাই তার মস্তিষ্ক কাজ করছে না।নিজের মায়ের সামনেই সে বলতে থাকে,
-“তোমার বোনের মেয়েকে তো খুব বাড়ির বউ করে এনেছ।আমার জীবন এভাবে ন*ষ্ট করে কি সুখ পেলে? এখন একটা খারাপ মেয়ের সাথে আমায় সংসার করতে হবে।যার ঘরে স্বামী থাকতেও অন্য ছেলেদের সাথে রিলেশন আছে।”
সোহেলের কথাটা শুনে আরশির চোখ টলমল করতে থাকে।সালমা আক্তারও বেশ অবাক হন।তিনি সোহেলকে জিজ্ঞাসা করেন,
-“এসব কি বলছিস তুই? আরশিকে আমি খুব ভালো করেই চিনি।আরশি এমন মেয়েই নয়।”
সোহেল তার মায়ের হাতে কয়েকটা ছবি তুলে দেয় যেগুলো কুরিয়ার করে পাঠানো হয়েছে।ছবিগুলো দেখে সালমা আক্তার যেন নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না।আরশির সাথে অয়ন নামের ছেলেটির ঘনিষ্ঠ অবস্থায় অনেকগুলো ছবি।
সালমা আক্তার ঘৃণার দৃষ্টিতে আরশির দিকে তাকান।আরশি বিস্ময়ের চোখে সালমা আক্তারের দিকে তাকিয়ে থাকে।যেই চোখে এতদিন ভালোবাসা ছিল আজ সেই চোখে নিজের জন্য ঘৃণা যেন সে মেনে নিতে পারছে না।
সালমা আক্তার আরশির দিকে ছবিগুলো ছু*ড়ে দিয়ে বলেন,
-“এই দিন দেখার জন্য তোকে এই বাড়ির বউ করে এনেছিলাম? এখন তো মনে হচ্ছে সোহেলই ঠিক ছিল আমিই তোকে ভুল চিনেছিলাম।সোহেল কখনোই তোকে বিয়ে কররে চায়নি শুধুমাত্র আমার কথায় তোকে বিয়ে করেছে আর তুই….যা এক্ষুনি চলে যা আমার সামনে থেকে আমি তোর মুখ দেখতে চাইনা।”
আরশি আজ আর কিছু বলার মতো অবস্থায় নেই।এতসব যে হয়ে যাচ্ছে ত্র কোনটাই সে মেনে নিতে পারছে না।এতদিন সোহেলের এত অবজ্ঞা স্বত্বেও সালমা আক্তারের অকৃত্রিম ভালোবাসার জন্য সবসময় হাসিমুখে সব সহ্য করেছে আরশি।আর আজ তিনিই কিনা আরশিকে এভাবে বলছেন।আরশির চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রুবর্ষণ হতে থাকে।কোনরকমে সে বলে,
-“বিশ্বাস করো তুমি এসব মিথ্যা।আমাকে ফাসানো হচ্ছে।”
-“তোকে বিশ্বাস করাই আমার জীবনের সবথেকে বড় ভুল।”
বৃষ্টি আর চুপ থাকতে পারে না।তার মনে হয় আর বেশিক্ষণ চুপ থাকলে খুব খারাপ কিছু হয়ে যাবে।তাই বৃষ্টি বলে ওঠে,
-“রাগ মানুষের সবথেকে বড় শত্রু তাই রাগের বসে এমন কিছু করবেন না যাতে ভবিষ্যতে আফসোস করতে হয়।আরশি ভাবিকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে উনি মিথ্যা বলছেন না।আপনি তো ওনাকে এতদিন ধরে দেখছেন।আপনার কি মনে হয় উনি এমন কিছু করতে পারেন?”
সোহেল বিরক্তির সুরে বলে,
-“তাহলে এই ছবিগুলো কি সব মিথ্যা?”
বৃষ্টি অকপটে উত্তর দেয়,
-“সবসময় যা দেখা যায় তাই সত্য হয়না।আজকাল অনেকরকম কারসাজি করা যায়।এডিটিং নামেও একটা কথা আছে।”
-“সেসব নাহয় মানলাম কিন্তু আরশি যে সবসময় ঐ ছেলেটার সাথে কথা বলতে সেটা তো অস্বীকার করা যাবেনা।আমি নিজে ওকে শুনেছি অয়ন নামের ছেলেটার সাথে কথা বলতে।”
বৃষ্টি আরশির দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করে।আরশিও বুঝতে পারে বৃষ্টি কি বলতে চাইছে।সবসময় চুপ থাকলে চলে না কখনো কখনো নিজের জন্য মুখ খুলতে হয়।তাই আরশি আজ আর চুপ না থেকে বলে,
-“অয়নের ব্যাপারে আমি তোমাকে আগেও বলেছি।ছেলেটা সবসময় আমাকে ফোন করে ডিস্টার্ব করে।আমার সাথে ওর কোন সম্পর্ক নেই।আমার তো মনে হয় এসবের পেছনেও ওর হাত রয়েছে।”
সোহেল যেন আজ কোনভাবেই আরশির কাছে মাথা নত করতে প্রস্তুত নয়।তাইতো কোন কথা,কোন যুক্তি মানতে চাইছে না।সোহেল আরশিকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
-“তোমায় একদিন সময় দিলাম এরমধ্যে যদি প্রমাণ করতে পারো যে এই ছবির সবকিছু মিথ্যা, অয়নের সাথে তোমার কোন সম্পর্ক নেই, তাহলেই কেবল আমি তোমাকে এই বাড়িতে থাকতে দেব নাহলে ঘা*ড়ধা*ক্কা দিয়ে বের করে দেব।”
সালমা আক্তারও ছেলের কথায় সায় দেন।সবকিছুর মধ্যে আরশি যেন তাজ্জব বনে যায়।বৃষ্টি আরশিকে বলে,
-“তোমায় কিছু প্রমাণ করতে হবে না।এত অপমান সহ্য করে তুমি কেন বনাক পরে থাকবে।তখন তো আমি শুনলাম তোমার স্বামীও অনেক মেয়ের সাথে রিলেশনে ছিল।তখন তুমি তো তাকে এভাবে বলোনি।তাহলে সে কোন সাহসে তোমায় শুধুমাত্র সন্দেহের বসে এরকম কথা বলবে? নিজেকে যদি সম্মান করতে না পারো তাহলে কেউ তোমায় সম্মান দেবে না মনে রেখো।”
আরশি বলে,
-“আমি এবার নিজেকে সম্মান দেব বৃষ্টি।ওরা আমার কাছে প্রমাণ চেয়েছে তাইতো? আমি দেব প্রমাণ।কিন্তু সোহেলের কথামতো এই বাড়িতে পরে থাকবোনা।ওর মুখে প্রমাণটা ছু*ড়ে মে*রেই আমি চলে যাব এই বাড়ি থেকে।”
___________________
অয়ন ফোনে আরশির ছবি দেখছিল আর হাসছিল।হেসে বলে,
-“কি ভেবেছিলে তুমি আরশি? বিয়ে করেই আমার থেকে মুক্তি পাবে? তাহলে তুমি ভুল ভেবেছ।এখন দেখ তোমাকে ঘুরেফিরে সেই আমার কাছেই ফিরতে হবে।”
-“ফিরে এসেছি আমি তোমার কাছে অয়ন।”
চেনা পরিচিত কন্ঠটি শুনে অয়ন সামনে তাকায়।আরশি এসেছে তাও আবার অয়নের বাড়িতে।অয়ন নিজেকে চি*মটি কে*টে পরীক্ষা করে নেয় সে ঠিক দেখছে কিনা।
আরশি বাঁকা হেসে বলে,
-“একদম ঠিক দেখছ।তোমার বাড়ির ঠিকানা তো ছিল আমার কাছে।একবার তো তোমার বাবাকে নালিশ জানাতে এসেছিলাম।আজ আবার এলাম এতদিন পর।”
অয়ন যেন হাতে চাঁদ পেয়ে যায়।আরশিকে বলে,
-“আমি বলেছিলাম না আমার থেকে ভালো তোমাকে কেউ বাসতে পারবে না।দেখলে তো তোমার ঐ স্বামীর বিশ্বাস কতো ঠুনকো।আমি যদি নিজের চোখেও তোমাকে অন্য ছেলের সাথে দেখতাম তাও তোমাকে অবিশ্বাস করতাম না।”
আরশি অনেক কষ্টে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বলে,
-“তুমি তো খুব ভালোই ছবি এডিটিং করতে পারো।”
অয়ন বিনিময়ে শুধু হাসে।আরশি আর নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।অয়নের গালে খুব জোরে একটা থা*প্পড় মে*রে বলে,
-“ইচ্ছে করছে তোকে এখানেই মে*রে মা*টি চা*পা দিতে শ*য়-তান কোথাকার।”
অয়ন হা করে আরশির দিকে তাকায়।ততক্ষণে সোহেল,বৃষ্টি,সূর্য সবাই ভেতরে চলে আসে।আরশি সবাইকে নিয়েই এসেছিল।সোহেল আর সূর্য দুজনে মিলে অয়নকে ভয় দেখাতেই সে গলগল করে সব সত্য উগড়ে দেয়।সোহেল সব শুনে অয়নকে অনবরত মা*রতে থাকে।
তারপর একবার অসহায় দৃষ্টিতে আরশির দিকে তাকায়।আরশিও সোহেলের দিকে তাকিয়ে ছিল।চোখে চোখ পড়তেই সে চোখ ঘুড়িয়ে নিয়ে বলে,
-“প্রমাণ করার কথা ছিল যেটা আমি করে দেখিয়েছি।এখন আমার আর কিছু বলার নেই।তোমরা সবাই ফিরে যাও আমি আমার বাবার বাড়িতে চলে যাব।”
আরশি যেতে নিতেই সোহেল তার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
-“আমি জানি আমি অনেক ভুল করেছি।তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার কোন ভাষা আমার নেই।তবুও আমি মন থেকে ক্ষমা চাইছি তোমার কাছে।প্লিজ আমাকে এভাবে ছেড়ে যেওনা।আমি কথা দিচ্ছি আর কখনো তোমায় কোন কষ্ট দেব না।”
আরশি মুচকি হেসে বলে,
-“এতদিনে নিজের ভুল বুঝতে পারলে।আগের আমি হলে বোধহয় খুব সহজেই তোমায় ক্ষমা করে দিতাম।সব ভুলে তোমায় আপন করে নিতাম।কিন্তু এখন আমি একজনের কাছে আত্মসম্মানবোধ নিয়ে চলার কথা শিখেছি।বৃষ্টি আমায় শিখিয়েছে নিজের আত্মসম্মানই সবার আগে।আমি ভালোবাসায় অন্ধ ছিলাম তাই তোমার সব ভুল দেখেও দেখিনি, নিজের ভালোবাসার উপর ভরসা রেখেছি।তবে এতকিছু সহ্য করর পর আর আমার ভালোবাসার উপর কোন বিশ্বাস নেই।ভালো থেকো তুমি।”
সোহেল কাদো কাদো গলায় বলে,
-“আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবে তুমি? আমি কিন্তু তোমার স্বামী হই।”
-“বিবাহবন্ধন খুব সুন্দর একটি বন্ধন হতে পারে কিন্তু এই বন্ধন টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব শুধু একজন মেয়ের একার নয়।তুমি একটু চেষ্টা করলে আজ আমাদের সম্পর্ক এত বা*জে অবস্থায় আসত না।কিন্তু বিশ্বাস করো আজ আর তোমায় ভরসা করার সাহস আমি পাচ্ছিনা।আমি তাই আজ চাচ্ছি এইসব থেকে মুক্তি থেকে।”
-“আরশি…”
আরশি কোন কথা না বলে চলে যায়।সোহেল তার পিছনে যায় তাকে ফিরিয়ে আনতে।বৃষ্টি বিড়বিড় করে বলতে থাকে,
-“আরশি ভাবি একদম ঠিক করেছে।এরকম ছেলেদের সুযোগ দেওয়া উচিৎ না।দুই ভাই একদম একইরকম।”
সূর্য কথাটা শুনে অদ্ভুতভাবে বৃষ্টির দিকে তাকায়।বৃষ্টি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বাইরে চলে যায়।
(চলবে)
#বিবাহ_বন্ধন
#পর্ব_৭
#লেখক_দিগন্ত
বৃষ্টি আর সূর্য একসাথে বাড়িতে ফিরে আসে।সালমা আক্তার তাদেরকে ফিরে আসতে দেখে প্রশ্ন করে,
-“আরশি কি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারে নি? কোথায় সে?”
বৃষ্টি সামান্য হেসে বলে,
-“আপনার কি তা জানা আদৌ জরুরি? যাকে এতবছর ধরে চেনেন তাকে ভুল বুঝতে তো এক মিনিটও সময় নেননি।সামান্য কয়েকটা ছবি দেখেই অবিশ্বাস করে নিলেন।আপনার ছেলের কথা নাহয় বাদই দিলাম কিন্তু আপনি কিভাবে এরকম একটা কাজ করলেন? এতকিছুর পরেও আরশি ভাবি এই বাড়িতে ফিরে আসবে আপনি এটাই মনে করেন?”
সালমা আক্তার বৃষ্টির এমন কথা শুনে রেগে যান।তিনি রাগী ভাষায় বলেন,
-“তুমি এই বাড়ির নতুন বউ।এত উঁচু গলায় কথা বলা তোমায় মানায় না।আরশিকে আমি এত ভালোবাসি জন্যই তার উপর এত রাগ হয়েছিল।কারণ আমরা যাদের ভালোবাসি বিশ্বাস করি তাদের থেকে পাওয়া সামান্য আঘাত আমাদের রাগিয়ে তোলে।”
-“তাহলে আপনি কি করে ভাবছেন আপনার ছেলের দেওয়া এত আঘাত সহ্য করার পরেও আরশি ভাবি আবার ফিরে আসবে? আরশি ভাবি এটা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে যে সে নির্দোষ কিন্তু সে এটাও জানিয়েছে এই বাড়িতে সে আর ফিরতে চায়না।আর না চায় আপনার গুণধর ছেলের সাথে সংসার করতে।”
সালমা আক্তার উৎকন্ঠা নিয়ে বলেন,
-“তার মানে আরশি সত্যিই নির্দোষ? অথচ আমি মেয়েটাকে ভুল বুঝে কত কথা শোনালাম।আমি এক্ষুনি যাব ওকে ফিরিয়ে আনতে।আমি জানি আমি গেলে ও ঠিকই ফিরে আসবে।”
তন্মধ্যে সোহেল বাড়িতে ফিরে আসে।সালমা আক্তার তাকে আসতে দেখে বলে,
-“তুই একা এলি কেন? আরশিকে নিয়ে আসতে পারিস নি?”
সোহেল তার মাকে রাগ দেখিয়ে বলে,
-“আমি অনেক বুঝিয়েছি কিন্তু আরশি ফিরে আসেনি।এখন তুমি কি চাও আমি ওর পা ধরে ওকে ফিরিয়ে আনি? সেটা হবে না।ও চলে গেছে যাক।ওরকম জেদি মেয়ের সাথে সংসার করার আমার দরকার নেই।পৃথিবীতে মেয়ের এত অভাব পড়েনি।আমি কালই ওকে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দেব।তখন ওর শিক্ষা হবে।”
সোহেলের কথা শুনে সালমা আক্তারের রাগ মাথায় উঠে যায়।তিনি সোহেলের গালে সপা*টে একটা চ*ড় মে*রে বলেন,
-“মুখ সামলে কথা বল।তোর ভাগ্য অনেক ভালো ছিল যে আরশির মতো একটা মেয়েকে বউ হিসেবে পেয়েছিলি।কিন্তু ঐ যে কথায় আছেনা দাঁত থাকতে দাঁতের মূল্য কেউ দেয়না।তুই ডিভোর্স দিতে চাইছিস তো।দিয়ে দে ডিভোর্স।মেয়েটাকে এই কষ্টের জীবন থেকে মুক্তি দে।আসলে দোষ তো আমারই তোর মতো একটা লম্প*টের সাথে আরশির মতো একটা মেয়েকে বিয়ে দেওয়াই আমার ভুল ছিল।তুই আরশির যোগ্যই না।”
কথাটা বলে সালমা আক্তার হনহনিয়ে নিজের রুমে চলে যান।আলামিন ইসলাম এতক্ষণ দরজায় দাঁড়িয়ে সব শুনছিলেন।এবার তিনি এগিয়ে এসে সোহেলকে উদ্দ্যশ্য করে বলেন,
-“তোমার ব্যাপারে অনেক কথাই আমার কানে এসেছিল।তুমি বিয়ের পরেও অনেক মেয়ের সাথে অবৈ*ধ সম্পর্কে লিপ্ত ছিলে।এতদিন তোমার মা এবং আরশির জন্য আমি চুপ ছিলাম।কিন্তু আজ আর নয়।তুমি সব সীমা অতিক্রম করে ফেলেছ।আমি তোমার বাবা তোমায় আদেশ করছি এক্ষুনি এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যাও আর যতদিন না পর্যন্ত নিজেকে শোধরাতে পাচ্ছ ততদিন এই বাড়িতে আসার দুঃসাহস করবে না।”
-“আব্বু,,,”
-“আমি আর কোন কথা শুনতে চাইনা।”
পুরো ঘটনাটা দেখে সূর্য তাজ্জব বনে যায়।তার মনেও ভয় কাজ করতে থাকে।ভবিষ্যতে বৃষ্টিকে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য তারও কি পরিণতি হবে? বৃষ্টি সূর্যকে কোন চিন্তায় এভাবে বিভোর থাকতে দেখে, সহজেই আন্দাজ করে নেয় সে কি ভাবছে।তাই সূর্যকে ভয় দেখানোর জন্য সে বলে,
-“আর কয়েকদিন পর আপনারো হয়তো এরকম পরিস্থিতিই হবে।”
সূর্য কোন কথা না বলে নিজের রুমে চলে যায়।তবে তার চোখেমুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট ছিল।
__________________
আরশি এককাপড়ে তার বাপের বাড়িতে চলে যায়।আরশিকে দেখে তার বাবা আকরাম হোসেন বিরক্ত হন।ছোটবেলা থেকেই মেয়ের প্রতি তার অনীহা।তিনি মনে করেন মেয়ে সন্তানেরা সংসারের বোঝা ছাড়া কিছু নয়।তাইতো নিজের ছেলে আদনানকে আদরে মানুষ করলেও আরশিকে মানুষ করেছেন অবহেলায়।আরশির খুব ইচ্ছে ছিল অনেকদূর পড়াশোনা করার।কিন্তু ইন্টার পাশ করতেই তিনি আরশির বিয়ে দিয়ে দেন।
আরশি এসে তার বাবাকে সালাম দিলে আকরাম হোসেন খুবই বিরক্তির সাথে বলেন,
-“তুমি হঠাৎ কাউকে কিছু না জানিয়ে এভাবে চলে এলে কেন? আর এভাবে একা এসেছ কেন তোমার স্বামী কোথায়?”
আরশি জানে তার বাবা যদি সব জানতে পারে তাহলে তাকেই বলবে সোহেলের সাথে মানিয়ে চলতে।হয়তো জোরপূর্বক পাঠিয়ে দেবেন ঐ বাড়িতে।কিন্তু আরশি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে সে আর কখনো সোহেলের জীবনে ফিরে যাবেনা।তাই সে বলে,
-“আব্বু আসলে সোহেলের কিছু জরুরি কাজ থাকায় ও আসতে পারেনি।তোমাদের কথা খুব মনে পড়ছিল তাই আমি এসেছি তোমাদের দেখতে।আম্মু,ভাইয়া ওরা কোথায়?”
আকরাম হোসেন তুমি গাম্ভীর্য বজায় রেখে বলেন,
-“তোমার মা রান্না করছে আর আদনান গেছে একটা ইন্টারভিউ দিতে।”
আরশি চলে যায় রান্নাঘরে।আরশির মা সাহেরা তখন রান্নাবান্নায় ব্যস্ত ছিল।আরশিকে দেখে তিনি খুবই খুশি হন।আজ কত দিন পর নিজের মেয়েকে দেখে তাকে বুকে জড়িয়ে নেন।আরশি নিজের মায়ের বুকে মাথা রেখেই কেঁদে দেয়।আর কত অভিনয় করবে সে? তাই এবার মায়ের সামনেই নিজের সব দুঃখ মেলে ধরে।
সাহেরা মেয়েকে এভাবে কাঁদতে দেখেই বুঝতে পারে তার মেয়ের সাথেও নিশ্চয়ই খারাপ কিছু হয়েছে।মায়ের জন্য তার মেয়ের এই কান্না যে কতটা বেদনার সেটা শুধুমাত্র এক মাই উপলব্ধি করতে পারে।
সাহেরা বুকে প্রচণ্ড উৎকন্ঠা নিয়ে আরশিকে জিজ্ঞাসা করেন,
-“কি হয়েছে আরশি? তুই এভাবে কাঁদছিস কেন?”
আরশি তার মাকে সব ঘটনা খুলে বলে।সব শুনে সাহেরা আর নিজেকে সামলে রাখতে পারে না।মেয়ের সাথে তিনিও কাঁদতে থাকেন।কত আশা করে নিজের বোনের ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দিলেন আর তারাই কিনা আরশিকে এত অবজ্ঞা এত অপমান করল।
দুঃখের পাশাপাশি নিজের স্বামীর ভয়েও তদস্থ হয়ে যান তিনি।কারণ সাহেরা খুব ভালো করেই জানে আরশির বাবা কখনো আরশির এই সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না।এতকিছুর পরেও তিনি বলবেন আপোষ করে নিতে।সাহেরা বরাবরই চুপচাপ,শান্তশিষ্ট,স্বামীর মুখের উপর কিছু বলেন না।তাই হয়তো নিজের মেয়ের জন্যও কিছু করতে পারবেন না।কিন্তু চিনি আর চান না যে তার মেয়ে আবার সোহেলের কাছে ফিরে যাক।এখন তার একমাত্র ভাবনা কি করে সবকিছু সামলাবেন তিনি?
___________________
বৃষ্টি সালমা আক্তারের রুমে গিয়ে দেখে তিনি মুখে আঁচল চেপে কাঁদছেন।সালমা আক্তারকে এভাবে কাঁদতে দেখে বৃষ্টির খুবই খারাপ লাগে।সে সালমা আক্তারের পাশে গিয়ে বসে।
বৃষ্টি বলে,
-“এভাবে কাঁদবেন না।কাঁদলেই সবকিছু ঠিক হয়ে যায়না।”
সালমা আক্তার এতক্ষণ একা ছিলেন তাই নিজের মনের দুঃখ প্রকাশ করতে পারেন নি।এখন বৃষ্টিকে পাশে পেয়ে যেন ভরসা পান তিনি।তাই নিজের মনের সব চাপা দুঃখ প্রকাশ করতে থাকেন।
-“জানো বৃষ্টি আমার ভাগ্য সবসময় আমাকে ঠকিয়েছে।অনেক ছোটবেলায় নিজের মাকে হারিয়েছি তারপর আমরা দুই বোন কত কষ্ট করে সৎ মায়ের কর অত্যা*চার সহ্য করে বড় হয়েছি।আমাদের দুই বোনের সম্পর্ক কত ভালো ছিল সবসময়।আমরা ছোটবেলা থেকে আনন্দ,দুঃখ সবকিছু ভাগ করে বড় হয়েছি।সাহেরা আমার ছোট বোন আমার কত আদরের।তাইতো ওর মেয়েকে নিজের ছেলের বউ করে এনেছিলাম।আমার বোনটাকে কথা দিয়েছিলাম যে আরশিকে নিজের মেয়ের মতো আগলে রাখব কিন্তু আমি সম্পূর্ণ ব্যর্থ।আজ সাহেরা আমায় ফোন করে কত কথা বলল।ও তো এটা বলতেও দ্বিধা করল না যে আমি একটা খারাপ মা নিজের সন্তানকে শিক্ষা দিতে পারিনি।আমার এরজন্য ওর উপর কোন রাগ নেই।নিজের তিন ছেলে-মেয়েকে আমি হয়তো সত্যি ঠিকভাবে মানুষ করতে পারিনি।”
সালমার কথাটা শুনে বৃষ্টি অবাক হয়।সে তো জানে সূর্যরা দুই ভাই।তাহলে কি সূর্যর আরো একটা বোন আছে? তাহলে এখনো সে তাকে দেখল না কেন কোথায় সে? নিজের কৌতুহলকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে বৃষ্টি সালমাকে জিজ্ঞাসা করে,
-“আপনার কি আরো একটা মেয়ে আছে? কোথায় সে?”
মেয়ের কথা শুনতেই সালমা আক্তারের বুক ভারী হয়ে আসে।যে যন্ত্রণা এতদিন বুকে চেপে রেখেছেন তা নিমেষেই মেলে ধরেন তিনি বৃষ্টির সামনে,
-“হ্যাঁ আমার একটা মেয়েও আছে।
আমার ছোট মেয়ে স্বর্ণা।যে আজ বেঁচে থেকেও আমাদের কাছে মৃত।”
(চলবে)