#বেস্টু
#Extra_Part
#Ariyana_Nur
হাসপাতালে ওটির বাইরে বসে আছি সবাই।অনেকক্ষন ধরে আহাদকে ওটিতে ঢুকানো হয়েছে।সবাই কান্না করছে আর আল্লাহ্ এর কাছে দোয়া করছে।একটা দমকা হওয়া এসে কিসের থেকে কি করে গেল।তখন আমি কথা বলায় এতোই ব্যস্ত ছিলাম যে আমার পিছনে যে একটা গাড়ি আসছে তা খেয়ালি করি নি।আহাদ আমাকে ধাক্কা দিয়ে নিজে গাড়ির সামনে পরেছে।
আমি তখন থেকে একটা কথাও বলিনি।আমার চোখ দিয়ে শুধু অঝরে পানি পরছে।মামুনি তাহিয়াকে ধরে কান্না করছে।ভাবিকে জানানো হয়নি।কেননা এই সময় তার চিন্তা করা ঠিক হবে না।
আমি মাথা নিচের দিকে দিয়ে কান্না করছি আর আল্লাহ্ কাছে দোয়া করছি।আমার পাশে কে যেন বসে আমার কাধে হাত রাখলো।তারপরেও আমি মাথা উঠিয়ে দেখলাম না।
একটু পর তিনি কাপা কাপা গলায় বললেন….
—মা..হু…
তার এই ডাক শুনে আমার আর বুঝতে বাকি রইল না কে।আমি তাকে জরিয়ে ধরে কাদতে কাদতে বললাম…
—সব দোষ আপনার।আপনি কেন ওকে আমাকে দেখে রাখতে বলেছেন।দেখেন আমার জন্য ও আজ মৃত্যুর সাথে লরছে।ওর যদি কিছু হয় আমি নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবো না।আর আপনাকে তো কখনো না।চলে যান আপনি কাউকে লাগবে না আমার কাউকে না।আমি তাকে জরিয়ে ধরেই কান্না করছি।
তিনি চুপচাপ আমাকে জরিয়ে ধরে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।কিছুক্ষন ওইভাবে বসে থাকার পর বললেন….
—সব ঠিক হয়ে যাবে।আল্লাহ্ কাছে দোয়া কর।
আমি আর তাহিয়া অঝরে কান্না করছি।আমাদের কান্না কেউ থামাতে পারছে না।
_____________________
মা বুড়ি আর ভাই এখনো আসছেনা কেন??
নিধির কথা সুনে মা কিছুটা তোতলাতে তোতলাতে বলল…
—আ..আসলে মা ওদের আসতে একটু দেরি হবে।তুই চিন্তা করিস না।
—আমি কখন চিন্তা করলাম।আমি তো এমনি বললাম।
—হয়েছে আর কথা বলতে হবে না।যা গিয়ে রেস্ট নে।আমি কিছু খাবার পাঠাচ্ছি তোর রুমে খেয়ে নিস।
নিধি মুচকি হেসে সেখান থেকে চলে গেলো।নিধির আজ সকাল থেকেই মনটা বেশি ভালো না।কেন যেন মনটা কু ডাকছে।
আসলেই আমাদের কাছের কারো কোন বিপদ হলে মনে হয় আমাদের মন আগেই যেনে যায়।
________________________________
আজকেও মিস হয়ে গেল।ঐ মানহাকে আজও ঐ ইডিয়েট টার জন্য মারতে পারলাম না।সময় মত মানহাকে ধাক্কা না দিলে তাহলে ওর জায়গায় মানহা থাকতো।আর আমি আমার বদলা নিতে পারতাম।এই বলে সমনের টি টেবিলে একটি লাথি দিল।
(এতক্ষনে আপনারা সবাই বুঝে গেছেন লোকটা কে)
—বদলা এবার শশুর বাড়ী গিয়ে নিয়েন মিঃ।
সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে পুলিশ দাড়িয়ে আছে।তাদের দেখেই রেগে বলল….
—আপনাদের এতো বড় সাহস আপনারা আমাকে এরেস্ট করতে এসেছেন।আপনি জানেন আমি কে???
—আরে আপনার মতো কালো টাকার মালিককে কে না চিনে।যাই হোক আপনার নামে এরেস্ট ওয়ারেন্ট আছে।
—কিসের জন্য আপনারা আমাকে এরেস্ট করতে এসেছেন???
—একটু আগেই তো আপনিই সব বললেন আবার নতুন করে আমি কি বলব।আর বাকিটা না হয় থানায় গিয়ে জানতে পারবেন।
ও যখন বুঝলো এখন আর কিছু বলে লাভ হবে না।তাই পালাতে নিলেই একজন ওর পায়ে গুলি করল।ও পা ধরে বসে রইল।
—আরে এতো সহজ পুলিশের চোখ ফাকি দেওয়া।এই এটাকে নিয়ে যাও।
ওকে নিয়ে যেতেই লোকটা একজনকে ফোন করল।ফোন রিসিভ করতেই বলল…
—আরহাম বলছিস??
—হুম।কাজ হয়েছে???
—একেবারে শশুর বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি।
—কিছু করিস না।সুধু ভালো করে খাতির যত্ন করিস।আর বাকিটা আমি দেখে নিব।
—তুই চিন্তা করিস না।আর আহাদ আর ভাবি কেমন আছে।
—আহাদ এখনো ওটিতে আর মাহু কান্না করছে।দোয়া করিস ভাই।আর tnx…
—ধুর শালা tnx বলতে হবে না।এটা তো আমার কর্তব্য।আর আমার অর্ধেক কাজ তো তুই করে দিয়েছিস।আচ্ছা রাখি টেক কেয়ার আর ভাবির খেয়াল রাখিস।বাই…
—বাই…
___________________________________
দীর্ঘ দুই ঘন্টা অপরেশনের পর অটির লাইট অফ হল।আমরা সামনে এগিয়ে গেলাম।উনি ডাঃ কে দেখে জিগ্গেস করলেন আহাদ কেমন আছে??পিছন থেকে একজন নার্স বলল…
—স্যার….
ডাঃ কিছুক্ষন চুপ করে থেকে ঘারটা একটু বাকিয়ে বলল…
—আই এম সরি….
আমার কান দিয়ে শুধু ডঃ এর এতটুক কথাই ঢুকলো। আর কিছু শুনার আগে আমি ঢলে পরে গেলাম।
#বেস্টু
#শেষ_পর্ব
#Ariyana_Nur
৫বছর পর……
মানুষের জীবন পরিবর্তনশীল।সময়ের সাথে সাথে মানুষের জীবনে অনেক কিছুই পালটিয়ে যায়।সময়ের সাথে সাথে নতুন নতুন অনেক কিছুই পায়।শুধু পায় না হারিয়ে ফেলা সেই অতীত।
দেয়ালে টানানো একটা ছবির ফ্রেমের দিকে তাকিয়ে আছি।ছবিটা আমাদের কলেজ লাইফের।যেখানে আমরা তিনজন কাধে হাত রেখে বসে আছি।ছবিটা দেখতে দেখতে আমার চোখে পানি চলে আসলো।আর পিছনের সেই খুনশুটি দুষ্টুমি গুলো মনে হতে লাগলো।
হঠাৎ কাধে কারো হাতের স্পর্শ পেলাম।আমাকে কাদতে দেখে উত্তেজিত হয়ে বলল….
—ঠাটিয়ে দিব এক।এখন আবার কাদছো কেন।তোমাকে না বলেছি আমার সামনে কান্না করবে না।
আমি কান্নারত অবস্থায় মুচকি হেসে বললাম….
—আমি তোমার সামনে কান্না করছিলাম না।তুমিই আমার সামনে এসেছো।
তিনি আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল…
—সে যাই হোক।তা মেডাম কান্না কেন করছিলেন???
—এমনেই।আচ্ছা ওরা কখন আসবে।আর সব ঠিক মত রেডি করেছ তো।যদি সব ঠিকমত না পাই তাহলে কিন্তু তোমার খবর আছে।
—আরে বাহ্ কি সুন্দর থ্রেড দিচ্ছে আমাকে।তুমি ভুলে গেছো আমি কে???
—জ্বী না মশাই আমি ভুলি নি।আপনি মনে হয় ভুলে গেছেন আমি কে???সমস্যা নাই আমি মনে করিয়ে দিচ্ছি আমি হচ্ছি শিকদার বাড়ির একমাএ পুএবধু মিঃ খচ্চর থুক্কু মিসেস শিকদার মানহা খান।(ভাব নিয়ে)
—বাহ্ বাহ্ খান শিকদার দোনটাই লাগাবে।শুধু শুধু কি আর ঘাস ফড়িং বলি।
—তুমি আবার আমাকে ঘাস ফরিং বললে তোমাকে তো আমি…..
আপনাদের এই টম এন্ড জেরি লড়াই শেষ হলে আমি কি আসতে পারি।
সামনে তাকিয়ে দেখি আহাদ দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে।
আমি ওকে দেখে ন্যকা কান্না করে বললাম….
—দেখ কেমন খচ্চর এর সাথে আমাকে বিয়ে দিয়েছিস।সরাদিন আমার সাথে লেগে থাকে।
আহাদ আমার মাথায় গাট্টা মেরে বলল….
—ঢং বাদদে।আমার সহজ সরল ভাইটারে যে তুই জ্বালাইয়া ভাজা ভাজা করতাছোস তা কি আমি জানি না।
আমি ওর পিঠে কতগুলো তাল ফালিয়ে বললাম….
—কুত্তা,হারামী তুই জীবনেও মানুষ হবি না।দেখিস এইবার আর আমার ননদরে তোর কাছে দিতাছি না।হুহ….
—ঐ তোর ননদ এখন আমার বউ।শুধু শুধু ভয় দেখাইয়া লাভ নাই।
—আমরা যদি না করি তাহলে তুই সারাদিন কানলেও সুমু তর সাথে যাইবোনা।
পিছন থেকে কথাটা বলে তাহিয়া সামনে আসলো।আমি তাহিয়াকে দেখে দৌড়ে গিয়ে ওকে জরিয়ে ধরলাম।নিহাদ ভাইয়া পিছন থেকে বলল…
—দেখ আরহাম দেখ এমন একটা ভাব করতাছে মনে হয় কতো বছর পর দেখা হইছে।হুহ দুদিন আগেও কিন্তু ওদের দেখা হইছে।
তাহিয়া ভেংচি কেটে বলল….
—হিংশুটে তোমার বন্ধু তো সামনেই আছে।যাও তাকে জরিয়ে ধর না করলো কে।
—তোমাদের মত তো আমরা আর কুয়ারা করি না।
তাহিয়া রাগি চোখে তাকিয়ে বলল….
—আমরা কুয়ারা করি।দাড়াও আজ বাসায় যেয়ে নেই।
তাহিয়ার কথা সুনে ভাইয়া চুপসে গেলো।আর ভাইয়ার চুপসে যাওয়া মুখ দেখে আমরা হাসতে লাগলাম।
সুমু আমাদের সামনে এসে বলল….
—এখনো কি গল্প করবে নাকি নিচে আসবে।সবাই কিন্তু এসে গেছে।আর ভাবি তুমি…মামুনি তোমার রুমে একটা ড্রেস রেখেছে তোমাকে ওটা পরে নিচে যেতে বলেছে।
আমি মুচকি হেসে বললাম…
—ঠিক আছে।তোমরা নিচে যাও আমি আসছি।
কি ভাবছেন🤔কিসের থেকে কি হয়ে হয়ে গেল।তাহলে চলেন ৫বছর আগে একটু ঘুরে আসি।
আমি জ্ঞান হারানোর একটু পর তাহিয়াও অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল।আমাদের এমন অজ্ঞান হতে দেখে ডাঃ জিগ্গেস করলো আমাদের কি হয়েছে।তখন উপস্থিত একজন বলল যে,আপনি না বললেন পেসেন্টের অবস্থা খারাপ তা শুনেন এমন হয়েছে।তখন ডাঃ অবাক হয়ে বলল….
—আমি কখন বললাম এমন।
—তাহলে আপনি পেশেন্টের কথা জিগ্যেস করায় অই এম সরি কেন বললেন।
—আরে আমি আপনাদের বলি নি।আমি আমাদের নার্সকে এ কথা বলেছি।যাই হোক আপনাদের পেশেন্ট আল্লাহ্ এর রহমতে ভালো আছে।মাথায় বেশি চোট পায় নি।টেক কেয়ার।
আমার জ্ঞান ফিরতেই আমি পাগলামি শুরু করে দেই।তারপর অনেক কষ্টে সবাই মিলে আমাকে ঠান্ডা করে।আহাদের জ্ঞান ফিরার পর সবাই মনে করে আমি কান্না কাটি করবো।সবাইকে অবাক করে দিয়ে আমি আহাদের সামনে গিয়ে বলি….
—মরার খুব সখ না তোর।তুই একবার সুস্থ হ দেখিস তোর কি অবস্থা করি।তোর হাত পা ভেঙ্গে আমি যদি তোরে চৌরাস্তার মোরে না বসাইছি দেখিস তুই।
আহাদ কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়ে সেদিন শুধু মুচকি হেসেছিল।
সেদিনের কথা মনে পরলে আজও ভয়ে কেপে উঠি।বন্ধুত্বের জন্য যে কেউ নিজের জীবনের ঝুকি নিতে পারে তা আমার কল্পনার বাহিরে ছিল।
ও আপনাদের কে তো জানাতে ভুলেই গেছি আমার আর তাহিয়ার ৩বছর পূর্বে বিয়ে হয়ে গেছে।আমার বিয়ের ১৫দিন পর ওদের বিয়ে হয়েছে।আর আহাদ আর সুমুর বিয়ের ৬মাস চলছে।আজ বাসায় ছোট করে গেট টু গেদারের আয়োজন করা হয়েছে।যাতে সবাই মিলে এক সাথে সময় কাটাতে পারি।
এতোদিনে অনেক কিছু পাল্টে গেছে শুধু পাল্টায় নি আমাদের বন্ধুত্ব।হয়তো আগের মত এক সাথে বেশি করে কেউ সময় কাটাতে পারি না।তারপরেও যতটুকু কাটাই তাতে আমাদের খুনশুটি লেগেই থাকে।আল্লাহ এর কাছে শুকরিয়া আদায় করি যে,তিনি আমার জীবনে দুজন এমন বন্ধু দিয়েছেন।যারা আমাকে বড় বোন আর বড় ভাইয়ের মত স্নেহ করে।আমাকে এগিয়ে যাওয়ার পথে উৎসাহিত করে।
দোয়া করবেন আমাদের বন্ধুত্ব যেন সব সময় অটল থাকে।কোন বাধা বিপত্তি যেন আমাদের বন্ধুত্বের গাট খুলতে না পারে।
__________________সমাপ্ত__________________
(ধন্যবাদ)